রাষ্ট্রপতিরসচিবালয়
azadi ka amrit mahotsav

সংসদের উভয় কক্ষের যৌথ অধিবেশনে ভারতের রাষ্ট্রপতি শ্রী রামনাথ কোবিন্দের ভাষণ

Posted On: 31 JAN 2022 12:14PM by PIB Kolkata

নয়াদিল্লি, ৩১ জানুয়ারি, ২০২২

 

মাননীয় সদস্যগণ,

করোনা ভাইরাসের ফলে উদ্ভূত বিশ্বব্যাপী মহামারীর এটি তৃতীয় বর্ষ। এই সময়ে আমরা ভারতের জনগণের গণতান্ত্রিক মূল্যবোধের ওপর অগাধ আস্থা, অনুশাসন, কর্তব্য-পরায়ণতাকে আরও শক্তিশালী হতে দেখেছি। আজ যখন ভারত তার স্বাধীনতার ৭৫ বর্ষপূর্তি উপলক্ষে অমৃত মহোৎসব পালন করছে, তখন প্রত্যেক ভারতবাসীর এই সঙ্কল্পশক্তি ভারতের উজ্জ্বল ভবিষ্যতের জন্য অসীম বিশ্বাসের জন্ম দিচ্ছে। এই বিশ্বাস নিয়ে আমি সংসদ ভবনের এই ঐতিহাসিক সেন্ট্রাল হল থেকে প্রত্যেক ভারতবাসীকে অভিনন্দন জানাই।

আমি আজ সংসদের এই সমবেত অধিবেশনে দেশের সেই লক্ষ লক্ষ স্বাধীনতা সংগ্রামীদের প্রণাম জানাই যাঁরা নিজেদের কর্তব্যগুলিকে সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার দিয়েছিলেন আর ভারতকে তার অধিকার এনে দিয়েছিলেন। স্বাধীনতার এই ৭৫ বছরে দেশের উন্নয়ন যাত্রায় নিজেদের অবদান রাখা সকল সম্মানিত ব্যক্তিবর্গকেও আমি শ্রদ্ধা সহকারে স্মরণ করছি। অমৃত মহোৎসবের এই কালখণ্ডে দেশের মনীষীদের সঙ্গে যুক্ত হওয়ার বিশেষ সুযোগ এসেছে। এই সুযোগ সমস্ত দেশবাসীকে প্রেরণা যোগাবে। গুরু তেগ বাহাদুরজির ৪০০তম প্রকাশ পর্ব, শ্রী অরবিন্দজির ১৫০তম জন্মজয়ন্তী, শ্রী ভি.ও.চিদম্বরম পিল্লাইজির ১৫০তম জন্মবর্ষ এবং নেতাজী সুভাষ চন্দ্র বসুর ১২৫তম জন্মজয়ন্তীর পূণ্য অবসরকে আমার সরকার সম্পূর্ণ শ্রদ্ধা ও উৎকর্ষতার সঙ্গে পালন করছে। সরকার এই বছর থেকে সাধারণতন্ত্র দিবস সমারোহকে নেতাজী জয়ন্তী, ২৩ জানুয়ারি থেকেই উদযাপন শুরু করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে।

আমার সরকার মনে করে, অতীতকে মনে রাখা এবং তা থেকে শিক্ষা নেওয়া দেশের সুরক্ষিত ভবিষ্যতের জন্য অত্যন্ত প্রয়োজনীয়। সাহিবজাদাদের আত্মবলিদানের স্মৃতিতে ২৬ ডিসেম্বর তারিখটিকে ‘বীর বাল দিবস’ রূপে ঘোষণা করা হয়েছে, আর ১৪ আগস্টকে ‘বিভাজন বিভীষিকা স্মৃতি দিবস’ রূপে পালনের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। সরকার ভগবান বিরসা মুন্ডাকে শ্রদ্ধাঞ্জলি জানিয়ে তাঁর জন্ম দিবস ১৫ নভেম্বরকে ‘জনজাতীয় গৌরব দিবস’ রূপে পালনেরও সিদ্ধান্ত নিয়েছে।

মাননীয় সদস্যগণ,

স্বাধীনতার অমৃত মহোৎসব আমাদের সকলের জন্য আগামী ২৫ বছরের সঙ্কল্পগুলিকে আকার দেওয়ার পবিত্র সুযোগ আমার সরকার ‘সবকা সাথ, সবকা বিকাশ, সবকা বিশ্বাস অউর সবকা প্রয়াস’-এর মন্ত্র অনুসরণ করে আগামী ২৫ বছরের জন্য শক্তিশালী ভিত্তি রচনার কাজ দ্রুতগতিতে করে চলেছে। এই ভিত্তি রচনার সবচাইতে গুরুত্বপূর্ণ সঙ্কল্প একটি সর্বসমন্বয়ী, সর্বহিতকারী, শক্তিশালী ভারত নির্মাণ এবং দেশের আত্মনির্ভরতা। করোনার এই কঠিন সময়ের চ্যালেঞ্জগুলি দেশবাসীকে তাঁদের লক্ষ্যগুলি দ্রুত বাস্তবায়নের জন্য প্রেরণা যুগিয়েছে।

মাননীয় সদস্যগণ,

করোনা মহামারী গোটা বিশ্বকে প্রভাবিত করেছে, আর ভারতেও আমরা অনেক আপনজনদের হারিয়েছি। এই পরিস্থিতিতে কেন্দ্রীয় সরকার থেকে শুরু করে বিভিন্ন রাজ্যে আমাদের সমস্ত সরকার, স্থানীয় প্রশাসন, আমাদের চিকিৎসক, আমাদের সেবিকারা এবং স্বাস্থ্যকর্মীরা, আমাদের বৈজ্ঞানিকরা এবং শিল্পপতিরা সকলেই একটি টিম রূপে কাজ করেছেন ও করছেন। সরকার এবং নাগরিকদের মধ্যে এই পারস্পরিক বিশ্বাস, সমন্বয় এবং সহযোগিতা গণতন্ত্রের শক্তির অভূতপূর্ব উদাহরণ। সেজন্য আমি দেশের প্রত্যেক স্বাস্থ্যকর্মী  এবং অগ্রভাগে থাকা করোনা যোদ্ধাদের প্রত্যেক দেশবাসীর পক্ষ থেকে অভিনন্দন জানাই।

কোভিড-১৯-এর বিরুদ্ধে এই লড়াইয়ে ভারতের সামর্থ্যের প্রমাণ কোভিড টিকাকরণের ক্ষেত্রে পরিলক্ষিত হয়েছে। আমরা এক বছরেরও কম সময়ে ১৫০ কোটিরও বেশি টিকার ডোজ দেওয়ার রেকর্ড অতিক্রম করেছি। আজ আমরা গোটা বিশ্বে সবচাইতে বেশি টিকার ডোজ দেওয়া অগ্রণী দেশগুলির অন্যতম। এই অভিযানের সাফল্য দেশকে একটি এমন রক্ষাকবচ দিয়েছে যা থেকে আমাদের নাগরিকদের সুরক্ষা বৃদ্ধি পেয়েছে আর তাঁদের মনোবলও বেড়েছে।

আজ দেশের ৯০ শতাংশেরও বেশি বয়স্ক নাগরিকরা টিকার ডোজ পেয়ে গেছেন আর ৭০ শতাংশেরও বেশি মানুষ উভয় ডোজ পেয়ে গেছেন। ‘হর ঘর দস্তক অভিযান’ অর্থাৎ, প্রত্যেক বাড়িতে কড়া নাড়ার অভিযানের মাধ্যমে সরকার বাকি থেকে যাওয়া সবার কাছে পৌঁছচ্ছে। এই মাসেই টিকাকরণের ক্ষেত্রে ১৫ থেকে ১৮ বছর বয়স পর্যন্ত কিশোর-কিশোরীদেরও সামিল করা হয়েছে। পাশাপাশি, অগ্রভাগে থাকা করোনা যোদ্ধা এবং রোগগ্রস্থ বরিষ্ঠ নাগরিকদের জন্য সতর্কতামূলক ডোজের সূত্রপাতও করা হয়েছে।

এখনও পর্যন্ত দেশে মোট আটটি টিকাকে ‘ইমার্জেন্সি ইউজ’-এর জন্য স্বীকৃতি দেওয়া হয়েছে। ভারতে উৎপাদিত তিনটি টিকাকে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংগঠন (হু)-এর পক্ষ থেকে বিপর্যয় মোকাবিলার জন্য ব্যবহারের স্বীকৃতি দিয়েছে। ভারতে উৎপাদিত এই টিকাগুলি গোটা বিশ্বকে মহামারীমুক্ত করে তুলতে এবং কোটি কোটি জনগণের জীবন রক্ষায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে।

মাননীয় সদস্যগণ,

করোনা মহামারীর বিরুদ্ধে লড়াইয়ে আমাদের দেশের প্রচেষ্টা শুধুই তাৎকালিক সমস্যা নিরসনের মধ্যে সীমাবদ্ধ নয়। সেজন্য আমার সরকার এমন সব দূরদর্শী সমাধানের পথ খুঁজে বের করছে যা ভবিষ্যতের জন্য কার্যকরী এবং উপযোগী হবে। সরকারের পক্ষ থেকে ৬৪ হাজার কোটি টাকা বিনিয়োগে শুরু করা ‘প্রধানমন্ত্রী আয়ুষ্মান ভারত হেলথ ইনফ্রাস্ট্রাকচার মিশন’ একটি প্রশংসনীয় উদাহরণ। এটি শুধু বর্তমানের স্বাস্থ্য সমস্যা সমাধান করবে না, ভবিষ্যতের সঙ্কটের মোকাবিলার জন্যও দেশকে প্রস্তুত রাখবে।

আমার সরকারের সংবেদনশীল নীতিগুলির ফলে দেশে এখন স্বাস্থ্য পরিষেবা জনগণের কাছে সহজেই পৌঁছচ্ছে। ৮০ হাজারেরও বেশি হেলথ অ্যান্ড ওয়েলনেস সেন্টার এবং কোটি কোটি আয়ুষ্মান ভারত কার্ড জারি করার ফলে গরীবদের চিকিৎসায় অনেক সুবিধা হয়েছে। সরকার ৮ হাজারেরও বেশি জন ঔষধি কেন্দ্রের মাধ্যমে সুলভ মূল্যে ওষুধ পৌঁছে দিচ্ছে। এভাবে চিকিৎসার খরচ হ্রাস করেছে। সুলভ এবং সুগম স্বাস্থ্য পরিষেবার জন্য আয়ুষ্মান ভারত ডিজিটাল মিশন একটি অনেক বড় পদক্ষেপ।

মাননীয় সদস্যগণ,

করোনাকালে ভারতীয় ফার্মা সেক্টরও তার শ্রেষ্ঠত্ব প্রমাণ করেছে। বর্তমান সময়ে ভারতীয় ফার্মা কোম্পানিগুলির উৎপাদিত পণ্য ১৮০টিরও বেশি দেশে পৌঁছে দেওয়া হচ্ছে। কিন্তু এক্ষেত্রে ভারতের জন্য সম্ভাবনা অনেক বেশি ব্যাপক। ফার্মা ইন্ডাস্ট্রির জন্য আমার সরকার দ্বারা ঘোষিত একটি পিএলআই স্কিমের মাধ্যমে এই সম্ভাবনাগুলিকে বিস্তারিত করা হবে আর গবেষণার ক্ষেত্রেও গতি আসবে।

সরকারের এই প্রচেষ্টাগুলির পরিণামে যোগ, আয়ুর্বেদ এবং পারম্পরিক চিকিৎসা পদ্ধতিগুলির জনপ্রিয়তা ক্রমাগত বৃদ্ধি পাচ্ছে। ২০১৪ সালে দেশে ৬,৬০০ কোটি টাকার আয়ুষ পণ্য বিদেশে রপ্তানি হত, যা পরবর্তী সময়ে ১১ হাজার কোটি টাকারও বেশি হয়েছে। বিশ্বে সর্বপ্রথম ‘হু গ্লোবাল সেন্টার ফর ট্র্যাডিশনাল মেডিসিন’ ভারতে স্থাপিত হতে চলেছে।

মাননীয় সদস্যগণ,

আমাদের সংবিধানের প্রধান শিল্পী বাবাসাহেব ভীমরাও আম্বেদকর বলেছিলেন, “আমার আদর্শ এমন একটি সমাজ গঠনের যা স্বাধীনতা, সাম্য এবং সৌভ্রাতৃত্বের ভিত্তিতে স্থাপিত হবে …। সাধারণতন্ত্র, সরকারের একটি স্বরূপ মাত্র নয়, প্রজাতন্ত্রের গোড়ায় রয়েছে আমাদের সহ-নাগরিকদের প্রতি আদর এবং সম্মানের ভাবনা।”

বাবাসাহেবের এই আদর্শগুলিকে আমাদের সরকার নিজের জন্য ধেয় বলে মনে করে। আমার রাষ্ট্রের আস্থা অন্ত্যোদয়-এর মূলমন্ত্রের মধ্যে রয়েছে, যার সামাজিক ন্যায়ও থাকবে, সাম্যও বজায় থাকবে, সম্মানও করা হবে, আর সমান সুযোগও সৃষ্টি হবে। সেজন্য আজ সরকারের নীতিগুলিতে গ্রাম, গরীব, পিছিয়ে পড়া মানুষ, তপশিলি জাতি এবং জনজাতিগুলিকে সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার দেওয়া হচ্ছে। সাম্প্রতিক বছরগুলিতে পদ্ম পুরস্কারের নির্বাচনেও ভারতের এই ভাবনার ঝলক খুব ভালোভাবে পাওয়া যায়। বৈচিত্র্যপূর্ণ ভারতে দেশের কোণায় কোণায় সমর্পিত জীবন নিয়ে বেঁচে থাকা মানুষেরা এবার রাষ্ট্রসেবায় যুক্ত হয়েছেন। তাঁদের মধ্যেই ভারতের শক্তি পরিলক্ষিত হচ্ছে।

মাননীয় সদস্যগণ,

করোনার এই মহাসঙ্কটে আমরা বড় বড় দেশে খাদ্যশস্যের সঙ্কট এবং ক্ষিদের কষ্ট দেখতে পেয়েছি। কিন্তু আমার সংবেদনশীল সরকার প্রাণপণে চেষ্টা করেছে যাতে শতবর্ষকালের মধ্যে আসা এই বৃহৎ সঙ্কটে কোনও গরীব ক্ষুধার্ত না থাকে। ‘প্রধানমন্ত্রী গরীব কল্যাণ অন্ন যোজনা’র অন্তর্গত সকল গরীবদের আমাদের সরকার বিনামূল্যে রেশন দিচ্ছে। ৮০ কোটি সুবিধাভোগীর কাছে ১৯ মাস ধরে খাদ্যশস্য বিতরণ করার জন্য ২ লক্ষ ৬০ হাজার কোটি টাকা খরচ করে ভারত আজ বিশ্বের বৃহৎ ‘ফুড রি-ডিস্ট্রিবিউশন প্রোগ্রাম’ সঞ্চালনা করছে। বর্তমান পরিস্থিতির দিকে তাকিয়ে, সম্পূর্ণ সংবেদনশীলতা নিয়ে আমার সরকার এই যোজনাকে ২০২২ সালের মার্চ মাস পর্যন্ত বাড়িয়ে দিয়েছে।

করোনাকালে গরীবদের আত্মাভিমান এবং তাঁদের কর্মসংস্থান রক্ষা করার জন্য সরকার ‘প্রধানমন্ত্রী স্বনিধি যোজনা’ও শুরু করেছে। এই যোজনায় আমাদের সরকার রেললাইনের দু’পাশে পসরা সাজিয়ে বসা ভাই-বোনেদের এবং হকারদের জন্য ২,৯০০ কোটি টাকারও বেশি অর্থ বরাদ্দ করেছে। সরকার এখন এই স্ট্রিট ভেন্ডারদের ‘অনলাইন ফুড ডেলিভারি’ করা কোম্পানিদের সঙ্গে যুক্ত করার প্রক্রিয়াও চালু করেছে। শ্রমিকদের হিতে সরকার ‘ই-শ্রম পোর্টাল’ও চালু করেছে যার সঙ্গে এখনও পর্যন্ত ২৩ কোটিরও বেশি শ্রমিক যুক্ত হয়েছেন।

জন ধন-আধার-মোবাইল অর্থাৎ, জ্যাম ট্রিনিটিকে আমার সরকার যেভাবে নাগরিকদের ক্ষমতায়নের সঙ্গে যুক্ত করেছে তার প্রভাবও আমরা ক্রমাগত দেখতে পাচ্ছি। ৪৪ কোটিরও বেশি গরীব দেশবাসী ব্যাঙ্কিং সিস্টেমের সঙ্গে যুক্ত হওয়ার ফলে মহামারীর সময়ে কোটি কোটি সুবিধাভোগীদের সরাসরি ক্যাশ ট্রান্সফার করা হয়েছে।

ডিজিটাল ইন্ডিয়া এবং ডিজিটাল ইকনমির ক্রমবর্ধমান প্রসারের প্রেক্ষিতে দেশে ইউপিআই প্ল্যাটফর্মের সাফল্যের জন্যও আমি সরকারের এই দূরদৃষ্টির প্রশংসা করব। ২০২১ সালের ডিসেম্বরে দেশে ৮ লক্ষ কোটি টাকারও বেশি ডিজিটাল লেনদেন ইউপিআই-এর মাধ্যমে হয়েছে। এটা একথা প্রমাণ করে যে আমাদের দেশের সাধারণ মানুষ পরিবর্তন এবং অত্যাধুনিক প্রযুক্তিকে অত্যন্ত দ্রুত আপন করে নিতে পারেন।

মাননীয় সদস্যগণ,

আমার সরকার মৌলিক সুবিধাগুলিকে গরীবদের ক্ষমতায়ন এবং গরীবদের গরিমা বৃদ্ধির মাধ্যম হবে বলে মনে করে। গত বছর অনবরত প্রচেষ্টার মাধ্যমে ‘প্রধানমন্ত্রী আবাস যোজনা’য় ইতিমধ্যেই ২ কোটিরও বেশি পাকা বাড়ি গরীবদের হাতে তুলে দেওয়া গেছে। ‘প্রধানমন্ত্রী আবাস যোজনা (গ্রামীণ)’-এর মাধ্যমে বিগত তিন বছরে প্রায় ১ লক্ষ ৫০ হাজার কোটি টাকার বিনিয়োগের মাধ্যমে ১ কোটি ১৭ লক্ষ গৃহ নির্মাণ মঞ্জুর করা হয়েছে। ‘হর ঘর জল’ পৌঁছনোর উদ্দেশ্যে শুরু করা ‘জল জীবন মিশন’ জনগণের জন্য অনেক বড় পরিবর্তন আনা শুরু করেছে। মহামারীর বাধাগুলি থাকা সত্ত্বেও প্রায় ৬ কোটি গ্রামীণ বাড়িতে নলের মাধ্যমে পানীয় জলের সংযোগ এর সঙ্গে যুক্ত করা হয়েছে। এর থেকে সবচাইতে বেশি লাভবান হয়েছেন আমাদের গ্রামের মহিলা - বোন ও মেয়েরা।

গ্রামীণ এলাকাগুলিতে জনগণকে তাঁদের সম্পত্তির দলিল তুলে দিতে যে ‘স্বামীত্ব যোজনা’ আন্দোলন শুরু করা হয়েছে তা একটি অত্যন্ত অসাধারণ প্রচেষ্টা। এই যোজনার মাধ্যমে এখনও পর্যন্ত ২৭ হাজার গ্রামে ৪০ লক্ষেরও বেশি পরিবারকে ‘প্রপার্টি কার্ড’ দেওয়া হয়েছে। এই ‘প্রপার্টি কার্ড’ শুধু যে প্রতিবেশীর সঙ্গে বা ভাইয়ে-ভাইয়ে বিবাদ দূর করতে সহায়ক হবে তা নয়, এর মাধ্যমে গ্রামের মানুষেরা ব্যাঙ্কগুলি থেকে সহজেই ঋণও নিতে পারবেন।

মাননীয় সদস্যগণ,

আমার সরকার গ্রামীণ অর্থনীতি এবং দেশের কৃষকদের শক্তিশালী করে তোলার জন্য ক্রমাগত ভালো কাজ করে চলেছে। বিশ্বব্যাপী মহামারী সত্ত্বেও ২০২০-২১-এ আমাদের কৃষকরা ৩০ কোটি টনেরও বেশি খাদ্যশস্য এবং ৩৩ কোটি টনেরও বেশি বাগিচা উৎপাদিত ফল ও শাকসব্জি উৎপন্ন করেছে। সরকারের রেকর্ড উৎপাদনকে মাথায় রেখে এ বছর রেকর্ড পরিমান সরকারি ক্রয়ও করা হয়েছে। রবি ফসলের সময় ৪৩৩ লক্ষ মেট্রিক টন গম কেনা হয়েছে। এর ফলে প্রায় ৫০ লক্ষ কৃষক সরাসরি উপকৃত হয়েছেন। খরিফ ফসলের সময় রেকর্ড পরিমাণ, প্রায় ৯০০ লক্ষ মেট্রিক টন ধান কেনা হয়েছে যার মাধ্যমে ১ কোটি ৩০ লক্ষ কৃষক লাভবান হয়েছেন।

সরকারের বিভিন্ন প্রচেষ্টার মাধ্যমে দেশের কৃষি রপ্তানিও রেকর্ড স্তরে পৌঁছে গেছে। ২০২০-২১ সালে কৃষি রপ্তানিতে ২৫ শতাংশেরও বেশি বৃদ্ধি হয়েছে। এই রপ্তানি প্রায় ৩ লক্ষ কোটি টাকায় পৌঁছে গেছে।

হর্টিকালচার এবং মধু উৎপাদন কৃষকদের জন্য আয়ের উৎস,  আর বাজার পর্যন্ত তাঁদের ক্রমবর্ধমান অধিকার বৃদ্ধির গুরুত্বপূর্ণ মাধ্যম। মধু উৎপাদনকে উৎসাহ যোগানোর ফলে ২০২০-২১-এ দেশে মধু উৎপাদন ১ লক্ষ ২৫ হাজার মেট্রিক টনে পৌঁছে গেছে যা ২০১৪-১৫-র তুলনায় প্রায় ২৫ শতাংশ বেশি। ২০১৪-১৫-র তুলনায় মধুর রপ্তানির মাত্রায়ও ১০২ শতাংশেরও বেশি বৃদ্ধি পরিলক্ষিত হয়েছে।

কৃষকরা যাতে তাঁদের ফসলের অধিক দাম পান তা সুনিশ্চিত করতে তাঁদের পণ্যগুলি সঠিকভাবে বাজারে পৌঁছে দেওয়ার প্রয়োজন পড়ে। এই লক্ষ্যে সরকার কিষাণ রেল পরিষেবা শুরু করে কৃষকদের জন্য সৌভাগ্যের নতুন নতুন পথ খোলার কাজ করেছে। করোনাকালে ভারতীয় রেল অনেক সব্জি, ফল এবং দুধের মতো উচ্চপচনশীল খাদ্যদ্রব্য পরিবহণের জন্য ১৫০টিরও বেশি পথে ১,৯০০-রও বেশি কিষাণ রেল চালিয়েছে, আর প্রায় ৬ লক্ষ মেট্রিক টন কৃষিপণ্য বহন করেছে। এটা এই সাফল্যের উদাহরণ যা আগে কেউ ভাবতেই পারেনি। পুরনো সম্পদ থেকেই নতুন নতুন পথ খুঁজে বের করা যেতে পারে।

মাননীয় সদস্যগণ,

কৃষিক্ষেত্রে দেশের ক্রমাগত সাফল্য এবং ক্রমবর্ধমান সামর্থ্যের বড় কৃতিত্ব আমি দেশের ক্ষুদ্র কৃষকদের দিতে চাই। দেশের ৮০ শতাংশ কৃষক হলেন ক্ষুদ্র কৃষক। আমার সরকার সর্বদাই তাঁদের হিতকে কেন্দ্রে রেখে সমস্ত পরিকল্পনা রচনা করেছে। ‘প্রধানমন্ত্রী কিষাণ সম্মান নিধি’র মাধ্যমে ১১ কোটিরও বেশি কৃষক পরিবারকে ১ লক্ষ ৮০ হাজার কোটি টাকা দেওয়া হয়েছে। এই বিনিয়োগের ফলে কৃষিক্ষেত্রে আজ বড় পরিবর্তন পরিলক্ষিত হচ্ছে। ফসল বিমা যোজনার ক্ষেত্রে নতুন পরিবর্তন দ্বারা দেশের ক্ষুদ্র কৃষকরা অনেক লাভবান হয়েছেন। এই পরিবর্তনগুলি হওয়ার পর থেকে এখনও পর্যন্ত ৮ কোটিরও বেশি কৃষকদের ভর্তুকি হিসেবে ১ লক্ষ কোটি টাকারও বেশি দেওয়া হয়েছে।

চাষের খেতের কাছেই ফসল সংরক্ষণ, গুদামজাতকরণ, ও খাদ্য প্রক্রিয়াকরণের  জরুরি পরিকাঠামো বিকশিত করার জন্য আমার সরকার অভূতপূর্ব বিনিয়োগ করছে। ১ লক্ষ কোটি টাকার কৃষি পরিকাঠামো তহবিলের মাধ্যমে হাজার হাজার প্রকল্পকে মঞ্জুর করা হয়েছে। আমার সরকার ভোগ্যতেলের ক্ষেত্রে আত্মনির্ভরতার কথা মাথায় রেখে ১১ হাজার কোটি টাকা বিনিয়োগে ‘ন্যাশনাল মিশন অন এডিবল অয়েলস – অয়েল পাম’ প্রকল্প শুরু করেছে। সরকার জৈব চাষ, প্রাকৃতিক কৃষি এবং ক্রপ ডাইভার্সিফিকেশন-এর মতো বিশেষ প্রচেষ্টাও করছে। আপনারা সবাই জানেন যে রাষ্ট্রসঙ্ঘ ২০২৩ সালটিকে ‘ইন্টারন্যাশনাল ইয়ার অফ মিলেটস’ রূপে ঘোষণা করেছে। আমার সরকার ‘ইন্টারন্যাশনাল ইয়ার অফ মিলেটস’কে দেশের কৃষকদের সঙ্গে, স্বনির্ভর গোষ্ঠীগুলির সঙ্গে, এফপিও-গুলির সঙ্গে, ফুড ইন্ডাস্ট্রি এবং জনসাধারণের সঙ্গে মিলেমিশে ব্যাপক স্তরে উদযাপন করবে।

আমার সরকার বর্ষার জল সংরক্ষণের জন্যও গভীর প্রত্যয় নিয়ে কাজ করছে। দেশে সুপরিকল্পিত  ‘রেইন ওয়াটার হার্ভেস্টিং ইনফ্রাস্ট্রাকচার’ তৈরি করা এবং পারম্পরিক জলের উৎসগুলির পুনরুদ্ধারের জন্য বিশেষ অভিযান শুরু করা হয়েছে। ‘প্রধানমন্ত্রী কৃষি সিচাঁই যোজনা’র মাধ্যমে বিভিন্ন প্রকল্প এবং ‘অটল ভূ-জল যোজনা’র মাধ্যমে দেশে ৬৪ লক্ষ হেক্টর সেচ ক্ষমতা বিকশিত করা হয়েছে। নদীগুলিকে পরস্পরের সঙ্গে যুক্ত করার পরিকল্পনা মাথায় নিয়েও সরকার অনেক কাজ এগিয়েছে। সম্প্রতি ৪৫ হাজার কোটি টাকা বিনিয়োগে কেন-বেতওয়া লিঙ্ক প্রকল্পকে মঞ্জুর করা হয়েছে। এই প্রকল্প বুন্দেলখন্ডে জলের সমস্যা দূরীকরণে অত্যন্ত সহায়ক হবে।

মাননীয় সদস্যগণ,

গ্রামীণ অর্থনীতিকে গতি দেওয়ার ক্ষেত্রে মহিলাদের ভূমিকা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠছে। ২০২১-২২-এ ২৮ লক্ষ স্বনির্ভর গোষ্ঠীকে ব্যাঙ্কগুলি থেকে ৬৫ হাজার কোটি টাকা ঋণ দেওয়া হয়েছে। এই টাকা ২০১৪-১৫-র তুলনায় চারগুণ বেশি। সরকার হাজার হাজার মহিলা স্বনির্ভর গোষ্ঠীর সদস্যদের প্রশিক্ষণ দিয়ে তাঁদেরকে ‘ব্যাঙ্কিং সখী’ রূপে অংশীদার করে তুলেছে। এই মহিলারা গ্রামীণ ক্ষেত্রে ব্যাঙ্কিং পরিষেবাকে বাড়িতে বাড়িতে পৌঁছে দেওয়ার মাধ্যম হয়ে উঠছেন।

মহিলা ক্ষমতায়ন আমাদের সরকারের উচ্চ অগ্রাধিকারগুলির মধ্যে অন্যতম। ‘উজ্জ্বলা’ যোজনার সাফল্যের সাক্ষী আমরা সবাই রয়েছি। ‘মুদ্রা’ যোজনার মাধ্যমে আমাদের দেশের মা ও বোনেদের শিল্পোদ্যম এবং দক্ষতা নতুন উৎসাহ পাচ্ছে। ‘বেটি বাঁচাও বেটি পড়াও’ উদ্যোগের অনেক ইতিবাচক পরিণাম সামনে এসেছে আর স্কুলগুলিতে ভর্তির ক্ষেত্রে মেয়েদের সংখ্যা উৎসাহজনকভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে। মেয়ে ও ছেলের মধ্যে সাম্য সুনিশ্চিত করতে আমাদের সরকার মেয়েদের বিয়ের ন্যূনতম বয়স ১৮ বছর থেকে বাড়িয়ে পুরুষদের সমান ২১ বছর করার বিলও সংসদে পেশ করেছে।

সরকার তিন তালাককে আইনে অপরাধ ঘোষিত করে সমাজকে এই কু-প্রথা থেকে মুক্ত করার চেষ্টা করেছে। মুসলিম মহিলাদের ওপর শুধু মেহরমের সঙ্গে হজ যাত্রা করার মতো বাধা-নিষেধও হটানো হয়েছে। ২০১৪ সাল থেকে প্রায় ৩ কোটি সংখ্যালঘু ছাত্রছাত্রীদের ছাত্রবৃত্তি দেওয়া হয়েছিল, কিন্তু আমার সরকার ২০১৪ থেকে এখন পর্যন্ত ৪ কোটি ৫০ লক্ষেরও বেশি ছাত্রছাত্রীদের ছাত্রবৃত্তি দিয়েছে। এর ফলে মুসলমান বালিকাদের স্কুলছুট হওয়ার হার গুরুত্বপূর্ণভাবে হ্রাস পেয়েছে আর তাদের ভর্তির ক্ষেত্রে বৃদ্ধি পরিলক্ষিত হয়েছে।

দেশের মেয়েদের শেখার ক্ষমতাকে উৎসাহ যোগানোর জন্য ‘জাতীয় শিক্ষানীতি’তে ‘জেন্ডার ইনক্লুশন ফান্ড’এর ব্যবস্থা রাখা হয়েছে। এ বছর দেশের ৩৩টি সৈনিক স্কুলের সবক’টিতেই মেয়েদের ভর্তির ব্যবস্থা চালু করা হয়েছে। সরকার ‘ন্যাশনাল ডিফেন্স অ্যাকাডেমি’তেও মহিলা ক্যাডেটদের ভর্তি মঞ্জুর করেছে। মহিলা ক্যাডেটদের প্রথম ব্যাচ ২০২২-এর জুন মাসে এনডিএ-তে প্রবেশ করবে। আমার সরকারের নীতিগত সিদ্ধান্ত এবং উৎসাহে বিভিন্ন পুলিশ বাহিনীতে মহিলা পুলিশকর্মীর সংখ্যা ২০১৪ সালের তুলনায় দ্বিগুণেরও বেশি বাড়ানো হয়েছে।

মাননীয় সদস্যগণ,

মহান সন্ন্যাসী থিরুভল্লুভর বলেছিলেন,

“কক্করক কসিডর কর্বওয়ি কট্রপিন,

নির্ক্ক অদর্ক্ক তগ।”

অর্থাৎ, এক ব্যক্তি যা কিছু শেখেন তাই তাঁর আচরণে পরিলক্ষিত হয়।

আত্মনির্ভর ভারতের সঙ্কল্প এবং সামর্থ্যকে সাকার করার জন্য আমার সরকার দেশে নতুন জাতীয় শিক্ষানীতি চালু করছে। এর মাধ্যমে স্থানীয় ভাষাগুলিকেও উৎসাহ দেওয়া হচ্ছে। স্নাতক পাঠ্যক্রমে গুরুত্বপূর্ণ প্রবেশিকা পরীক্ষায় ভারতীয় ভাষাগুলিতে পরীক্ষা নেওয়ার দিকে জোর দেওয়া হয়েছে। এ বছর ১০টি রাজ্যের ১৯টি ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজে ছয়টি ভারতীয় ভাষায় পড়াশোনা শুরু হচ্ছে।

‘স্কিল ইন্ডিয়া মিশন’-এর মাধ্যমে আইটিআই, জন শিক্ষণ সংস্থান এবং প্রধানমন্ত্রী কৌশল কেন্দ্রগুলির মাধ্যমে গোটা দেশে ২ কোটি ২৫ লক্ষেরও বেশি যুবক-যুবতীকে প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়েছে। তাদের দক্ষতা উন্নয়ন করা হয়েছে। এই দক্ষতাকে উচ্চশিক্ষার সঙ্গে যুক্ত করার জন্য ইউজিসি-র নিয়মগুলিতে বেশ কিছু পরিবর্তনও করা হয়েছে।

করোনার বিরুদ্ধে লড়াইয়ের জন্য ‘স্কিল ইন্ডিয়া মিশন’-এর মাধ্যমে হেলথ কেয়ারের সঙ্গে যুক্ত ছয়টি বিশেষ প্রশিক্ষণ কর্মসূচি শুরু করা হয়েছে। এগুলির মাধ্যমে স্বাস্থ্য পরিষেবার ক্ষেত্রে অনেক সাহায্য পাওয়া যাচ্ছে।

সরকার দ্বারা জনজাতীয় যুবক-যুবতীদের শিক্ষার জন্য প্রত্যেক জনজাতিবহুল ব্লকে ‘একলব্য আবাসিক মডেল স্কুল’ সম্প্রসারণের কাজ চলছে। এই বিদ্যালয়গুলি প্রায় ৩ লক্ষ ৫০ হাজার জনজাতি যুবক-যুবতীদের ক্ষমতায়ন করাবে।

মাননীয় সদস্যগণ,

টোকিও অলিম্পিকে আমরা সবাই এবার ভারতের যুবশক্তির ক্ষমতা দেখেছি। এই আন্তর্জাতিক প্রতিযোগিতায় ভারত এবার সর্বকালের শ্রেষ্ঠ প্রদর্শন দেখিয়ে সাত-সাতটি মেডেল জিতেছেন। টোকিও প্যারালিম্পিকেও ভারতীয় প্যারা-অ্যাথলিটরা ১৯টি পদক জিতে রেকর্ড সৃষ্টি করেছেন। অলিম্পিক প্রতিযোগিতায় ও খেলাধূলায় ভারতের উপস্থিতি সশক্ত করতে কেন্দ্রীয় সরকার রাজ্য সরকারগুলির সঙ্গে মিলেমিশে দেশে শত শত ‘খেলো ইন্ডিয়া কেন্দ্র’ স্থাপন করছে। প্যারা-স্পোর্টসের ক্ষেত্রে দিব্যাঙ্গ যুবক-যুবতীদের প্রশিক্ষণের জন্য সরকার গোয়ালিয়রে আধুনিক পরিষেবাসম্পন্ন ‘সেন্টার ফর ডিজেবিলিটি স্পোর্টস’-এর স্থাপন করেছে।

মাননীয় সদস্যগণ,

দেশে দিব্যাঙ্গজনদের চলাফেরাকে আরও সুগম করে তুলতে, সাম্য এবং সম্মানপূর্ণ জীবনের সুযোগ প্রদান করা একটি সমাজ রূপে আমাদের সকলের দায়িত্ব। এই লক্ষ্যে আজ ‘সুগম্য ভারত অভিযান’ দেশে জাতীয় সংবেদনার পরিচয় প্রতিষ্ঠা করছে। দিব্যাঙ্গজনদের পরিচয় প্রদানের জন্য দেশে শুল্কহীন সহায়ক সরঞ্জাম থেকে শুরু করে ‘কোকলিয়র ইমপ্ল্যান্ট সার্জারি’র মতো প্রোগ্রাম শুরু করা হয়েছে। এই প্রকল্পগুলির মাধ্যমে ইতিমধ্যেই ২৫ লক্ষেরও বেশি দিব্যাঙ্গ ব্যক্তিকে সহায়ক সরঞ্জাম প্রদান করা হয়েছে, আর প্রায় ৪ হাজার সফল ‘কোকলিয়র ইমপ্ল্যান্ট’ করা হয়েছে। এই সকল প্রচেষ্টাকে এগিয়ে নিয়ে যেতে সরকার মধ্যপ্রদেশে ‘ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অফ মেন্টাল হেলথ রিহ্যাবিলিটেশন’ও স্থাপন করেছে। দিব্যাঙ্গ যুবক-যুবতীদের ভবিষ্যৎ উজ্জ্বল করতে ১০ হাজার শব্দের ‘ইন্ডিয়ান সাইন ল্যাঙ্গুয়েজ ডিকশনারি’ও তৈরি করা হয়েছে।

মাননীয় সদস্যগণ,

আমাদের স্টার্ট-আপ ইকো-সিস্টেম আমাদের যুবকদের নেতৃত্বে দ্রুতগতিতে আকার নেওয়া নতুন ও অনন্ত সম্ভাবনার উদাহরণ। ২০১৬ সাল থেকে আমাদের দেশে ৫৬টি ক্ষেত্রে ৬০ হাজার নতুন স্টার্ট-আপ চালু হয়েছে। এগুলির মাধ্যমে ৬ লক্ষেরও বেশি কর্মসংস্থান হয়েছে। ২০২১-এ করোনাকালের মধ্যেই ভারতে ৪০টিরও বেশি স্টার্ট-আপ ইউনিকর্ন-এ পরিণত হয়েছে যেগুলির মূল্য ৭,৪০০ কোটি টাকারও বেশি।

আমার সরকারের নীতির কারণে আজ ভারত সেই দেশগুলির অন্যতম যেখানে ইন্টারনেটের দাম সবচাইতে কম, স্মার্ট ফোনের দামও সবচাইতে কম। এর ফলে, নবীন প্রজন্ম বেশি করে উপকৃত হচ্ছে। ভারত ৫জি মোবাইল কানেক্টিভিটি নিয়ে দ্রুতগতিতে কাজ করছে। এর ফলে অনেক নতুন সম্ভাবনার দরজা খুলবে। সেমি-কন্ডাক্টর নিয়ে ভারতের প্রচেষ্টা আমাদের স্টার্ট-আপ ইকো-সিস্টেমকে উপকৃত করবে। ভারতের যুব সম্প্রদায় দ্রুতগতিতে পরিবর্তিত প্রযুক্তির দ্বারা যাতে উপকৃত হতে পারেন, সেদিকে লক্ষ্য রেখে সরকার অনেক নীতিগত সিদ্ধান্ত নিচ্ছে। অনেক ক্ষেত্রে আমাদের যুব সম্প্রদায়ের প্রবেশের দরজা খুলে যাচ্ছে। সরকার ‘স্টার্ট-আপস ইন্টেলেকচুয়াল প্রপার্টি প্রোটেকশন প্রোগ্রাম’-এর মাধ্যমে পেটেন্ট এবং ট্রেডমার্ক সংক্রান্ত প্রক্রিয়াকে সহজ করে তুলেছে। এর ফলে, এই অর্থবর্ষে পেটেন্টের জন্য প্রায় ৬ হাজার এবং ট্রেডমার্কের জন্য ২০ হাজারেরও বেশি আবেদন জমা পড়েছে।

মাননীয় সদস্যগণ,

আমার সরকারের ক্রমাগত প্রচেষ্টায় ভারত আরও একবার বিশ্বের সর্বাধিক দ্রুতগতিতে বিকশিত অর্থনীতির দেশ হয়ে উঠেছে। দেশে জিএসটি কালেকশন বিগত কয়েক মাসে ক্রমাগত ১ লক্ষ কোটি টাকারও বেশি। এই অর্থবর্ষের প্রথম সাত মাসে ৪৮ বিলিয়ন ডলার বিদেশি বিনিয়োগ আসা থেকে প্রমাণিত হয় যে আন্তর্জাতিক বিনিয়োগকারীরা ভারতে বিনিয়োগের ক্ষেত্রে অত্যন্ত আশ্বস্ত। ভারতের বিদেশি মুদ্রা ভাণ্ডার এই সময় ৪৩০ বিলিয়ন ডলারেরও বেশি। আমরা রপ্তানিতে দ্রুতগতিতে এগিয়ে যাচ্ছি, আগের সমস্ত রেকর্ড ভাঙছি। ২০২১-এর এপ্রিল থেকে ডিসেম্বর পর্যন্ত ভারত ৩০০ বিলিয়ন ডলার বা ২২ লক্ষ কোটি টাকারও বেশি মূল্যের পণ্য রপ্তানি করেছে যা ২০২০-র এই সময়ের তুলনায় দেড়গুণ বেশি।

আমার সরকার ম্যানুফ্যাকচারিং সেক্টরের সমস্ত সম্ভাবনাগুলিকে বাস্তবায়িত করতে আর নবীন প্রজন্মকে নতুন সুযোগ দিতে ১ লক্ষ ৯৭ হাজার কোটি টাকারও বেশি বিনিয়োগের মাধ্যমে ১৪টি গুরুত্বপূর্ণ পিএলআই স্কিম শুরু করেছে। এই পিএলআই স্কিমগুলি ভারতকে গ্লোবাল ম্যানুফ্যাকচারিং হাব রূপে স্থাপিত করতে সাহায্য করবে। এর ফলে ৬০ লক্ষেরও বেশি মানুষের কর্মসংস্থান হবে। দেশে মোবাইল ফোন উৎপাদনের সাফল্য ‘মেক ইন ইন্ডিয়া’র একটি বড় উদাহরণ। আজ ভারত বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহত্তম মোবাইল ফোন উৎপাদনকারী দেশ হয়ে উঠেছে। এর ফলে দেশে লক্ষ লক্ষ যুবক-যুবতীর কর্মসংস্থান হয়েছে।

আমাদের দেশ ইলেক্ট্রনিক এবং টেকনলজি হার্ডওয়্যারের ক্ষেত্রে যাতে গ্লোবাল লিডার হয়ে উঠতে পারে তা সুনিশ্চিত করতে সরকার সিলিকন এবং কম্পাউন্ড সেমি-কন্ডাক্টর ফেব্রিকেশন, ডিসপ্লে এফএবি, চিফ ডিজাইন ও সংশ্লিষ্ট সকল ভেঞ্চারের জন্য সম্প্রতি ৭৬ হাজার কোটি টাকার প্যাকেজও ঘোষণা করেছে।

আমার সরকার নতুন ক্ষেত্রগুলির পাশাপাশি ওই পারম্পরিক ক্ষেত্রটিকে ও দেশের পরিস্থিতিকে আবার মজবুত করে তুলছে যে বিষয়গুলিতে আমাদের হাজার হাজার বছরের অভিজ্ঞতা রয়েছে। যেমন বস্ত্রশিল্পের উন্নয়নে প্রায় ৪,৫০০ কোটি টাকা বিনিয়োগের মাধ্যমে সাতটি মেগা ইন্টিগ্রেটেড টেক্সটাইল রিজিয়ন এবং অ্যাপারেল পার্ক নির্মাণ করছে। এতে দেশে ইন্টিগ্রেটেড টেক্সটাইল ভ্যালুচেন তৈরি হবে। এই মেগা টেক্সটাইল পার্ক ভারতীয় তথা বিদেশি বিনিয়োগকারীদেরও আকর্ষণ করবে, আর লক্ষ লক্ষ কর্মসংস্থানের সুযোগও তৈরি করবে।

মাননীয় সদস্যগণ,

ভারতের সমৃদ্ধিতে বড় শিল্পোদ্যোগগুলির পাশাপাশি অতিক্ষুদ্র, ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্পোদ্যোগগুলির ভূমিকা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। আমাদের অতিক্ষুদ্র, ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্পোদ্যোগগুলি আমাদের অর্থনীতির মেরুদণ্ড, আত্মনির্ভর ভারতকে রেখে এসেছে। করোনাকালে অতিক্ষুদ্র, ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্পোদ্যোগগুলিকে সঙ্কট থেকে বাঁচাতে সরকার  ৩ লক্ষ কোটি টাকা কোল্যাটারাল-ফ্রি লোনের ব্যবস্থা করেছে। সাম্প্রতিক গবেষণায় এটা স্পষ্ট হয়েছে যে এই প্রকল্পের সাহায্যে ১৩ লক্ষ ৫০ হাজার অতিক্ষুদ্র, ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্পোদ্যোগের জীবন রক্ষা পেয়েছে, আর ১ কোটি ৫০ লক্ষ মানুষের কর্মসংস্থানও সুরক্ষিত হয়েছে। ২০২১ সালের জুন মাসে সরকার ৩ লক্ষ কোটি টাকার এই গ্যারান্টিকে বাড়িয়ে এখন ৪ কোটি ৫০ লক্ষ টাকা করে দিয়েছে।

অতিক্ষুদ্র, ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্পোদ্যোগগুলিকে বিস্তারিত করতে, এই ক্ষেত্রের সুযোগ বৃদ্ধি করতে আমার সরকার অনেক নীতিগত সিদ্ধান্ত নিয়েছে। আমার সরকার অতিক্ষুদ্র, ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্পোদ্যোগগুলিকে নতুন পরিভাষা দিয়েছে এবং ক্ষুদ্র শিল্পগুলিকে এগিয়ে নিয়ে যেতে সাহায্য করেছে। সরকার পাইকারি ও খুচরো ব্যবসায়ীদের এবং স্ট্রিট হকারদের ‘উদ্যোগ’ পোর্টালে রেজিস্টার করার অনুমতি দিয়েছে, যাতে তাঁরা অগ্রাধিকারের ভিত্তিতে ঋণ লাভ করতে পারেন।

আমি খাদির কথা বিশেষভাবে উল্লেখ করতে চাইব। স্বাধীনতা সংগ্রামে ‘বাপু’র নেতৃত্বে দেশের চেতনার প্রতীক হয়ে উঠেছিল খাদি। আমাদের দেশের অতিক্ষুদ্র, ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্পোদ্যোগগুলি আরও একবার খাদির সাফল্যকে তুলে ধরেছে। সরকারের প্রচেষ্টায় ২০১৪-র তুলনায় দেশে খাদির বিক্রি এখন তিনগুণ বৃদ্ধি পেয়েছে।

মাননীয় সদস্যগণ,

যে কোনও দেশের উন্নয়নের ভিত্তি হয় সে দেশের পরিকাঠামো। আমার সরকারের দৃষ্টিতে পরিকাঠামো সামাজিক অসাম্য নিরসনের সেতুও। পরিকাঠামো ক্ষেত্রে যত বিনিয়োগ আসবে তা কেবল লক্ষ লক্ষ নতুন কর্মসংস্থান সৃষ্টি করবে না, এর একটি ইতিবাচক প্রভাবও রয়েছে। এক্ষেত্রে ব্যবসা করা সহজ হয়, পরিবহণের গতি বাড়ে, প্রত্যেক ক্ষেত্রে অর্থনৈতিক গতিবিধি বাড়ে।

আমার সরকার পরিকাঠামো উন্নয়নের কাজকে আরও গতি প্রদান করার জন্য ভিন্ন ভিন্ন মন্ত্রকের কাজের সমন্বয় করতে ‘প্রধানমন্ত্রী গতি শক্তি – ন্যাশনাল মাস্টার প্ল্যান’ তৈরি করেছে। এই পরিকল্পনা ভারতে মাল্টি-মডেল ট্রান্সপোর্টের একটি নতুন যুগ শুরু করতে চলেছে। ভবিষ্যতের ভারতে রেলওয়েজ, হাইওয়েজ, এয়ারওয়েজ ভিন্ন ভিন্ন এবং স্বতন্ত্র পরিকাঠামো হবে না। এর বিপরীতে দেশের ঐক্যবদ্ধ সম্পদ হিসেবে কাজ করবে।

গ্রামীণ ক্ষেত্রে সড়ক, সম্পদ এবং পরিকাঠামো নির্মাণের মাধ্যমে দেশের সেই সম্ভাবনাগুলি ডানা মেলতে পারছে, যেগুলি অনেক দশক ধরে উপেক্ষিত ছিল। ‘প্রধানমন্ত্রী গ্রাম সড়ক যোজনা’র সাফল্যগুলি গর্ব করার মতো। ২০২০-২১ অর্থবর্ষে গ্রামীণ এলাকাগুলিতে দিনে ১০০ কিলোমিটারেরও অধিক গতিতে মোট ৩৬,৫০০ কিলোমিটার সড়ক নির্মাণ করা হয়েছে আর কয়েক হাজার দুর্গম অঞ্চলকে ‘অল ওয়েদার রোড কানেক্টিভিটি’র মাধ্যমে যুক্ত করা হয়েছে।

আজ দেশের ন্যাশনাল হাইওয়েজ পূর্ব থেকে পশ্চিম, উত্তর থেকে দক্ষিণ, গোটা দেশকে একসঙ্গে জুড়ছে। ২০১৪ সালের মার্চ মাসে আমাদের দেশে মোট জাতীয় সড়কের দৈর্ঘ্য ছিল ৯০ হাজার কিলোমিটার। আজ তা বৃদ্ধি পেয়ে ১ লক্ষ ৪০ হাজার কিলোমিটার অতিক্রম করেছে। ‘ভারতমালা’ পরিযোজনার মাধ্যমে প্রায় ৬ লক্ষ কোটি টাকা বিনিয়োগে ২০ হাজার কিলোমিটারেরও বেশি দীর্ঘ মহাসড়কের কাজ চলছে। এতে ২৩টি ‘গ্রিন এক্সপ্রেসওয়ে’ এবং ‘গ্রিনফিল্ড করিডর’-এর উন্নয়নও সামিল রয়েছে।

দিল্লি-মুম্বাই এক্সপ্রেসওয়ে সম্পূর্ণ হওয়ার পথে, যা ভারতের দীর্ঘতম এবং দ্রুততম এক্সপ্রেসওয়ে হবে। আমার সরকারের পন্ধরপুর তীর্থকে যুক্ত করা ‘সন্ত জ্ঞানেশ্বর মার্গ’ এবং ‘সন্ত তুকারাম পালকি মার্গ’-এর প্রশস্তিকরণের কাজ শুরু করার সৌভাগ্য হয়েছে।

দেশে আধুনিক পরিকাঠামোর উন্নয়নে আজ যেখানে একদিকে উন্নয়নের পথ খুলে যাচ্ছে, অন্যদিকে দেশের নিরাপত্তা ব্যবস্থ অনেক শক্তিশালী হচ্ছে। বর্ডার রোডস অর্গানাইজেশন বা বিআরও লাদাখে উঙলিংগ লা-তে ১৯ হাজার ফুট উচ্চতায় বিশ্বের সর্বোচ্চ পরিবহণযোগ্য সড়ক নির্মাণ করেছে। লাদাখের দেমচোক, উত্তরাখণ্ডের জোলিংগ কোংগ এবং অরুণাচল প্রদেশের হুরীর মতো দেশের সর্বাধিক দুর্গম গ্রামগুলিকেও আধুনিক সড়কপথের মাধ্যমে যুক্ত করা হয়েছে।

আমার সরকার ভারতীয় রেলকে দ্রুতগতিতে আধুনিকীকরণ করছে। নতুন ‘বন্দে ভারত’ ট্রেন এবং নতুন ভিস্টাডোম কোচ ভারতীয় রেলের দ্যুতি বাড়াচ্ছে। বিগত সাত বছরে ২৪ হাজার কিলোমিটার রেলরুট বৈদ্যুতিকীকরণ হয়েছে। নতুন রেল লাইন পাতা এবং ডবল লাইন পাতার কাজও দ্রুতগতিতে এগিয়ে চলেছে। গুজরাটের গান্ধীনগর রেলওয়ে স্টেশন এবং মধ্যপ্রদেশের রানি কমলাপতি রেলওয়ে স্টেশন আজ আধুনিক ভারতের নতুন ছবি তুলে ধরছে। কাশ্মীরের চেনাব নদীর ওপর নির্মিত রেলওয়ে আর্চ ব্রিজ আকর্ষণের কেন্দ্র হয়ে উঠছে।

আমার সরকার গরীব এবং মধ্যবিত্তদের জীবন সহজ করে তোলার জন্য গণ-পরিবহণের সুবিধা বৃদ্ধির কাজ করছে। দেশে ১১টি নতুন মেট্রো লাইন পরিষেবা শুরু করেছে। এর দ্বারা আটটি রাজ্যের লক্ষ লক্ষ মানুষ প্রতিদিন উপকৃত হচ্ছেন। ভারত আজ বিশ্বের চারটি বৃহত্তম চালকবিহীন ট্রেন নেটওয়ার্কসম্পন্ন দেশের মধ্যে অন্যতম হয়ে উঠেছে। আমরা দেশে ‘ইন্ডিজিনাস অটোমেটিক ট্রেন সিস্টেম’ও বিকশিত করেছি যা ‘মেক ইন ইন্ডিয়া’র ক্রমবর্ধমান ক্ষমতার প্রতীক। সরকার দেশে ২১টি ‘গ্রিনফিল্ড এয়ারপোর্ট’ নির্মাণ প্রকল্প মঞ্জুর করেছে। এতে দেশের সর্ববৃহৎ এয়ারপোর্ট উত্তরপ্রদেশের গৌতমবুদ্ধ নগর জেলায় তৈরি হচ্ছে।

দেশের গুরুত্বপূর্ণ বাণিজ্যিক ক্ষেত্রগুলিকে সমুদ্রবন্দরের মাধ্যমে যুক্ত করার জন্য ‘সাগরমালা’ কর্মসূচির অন্তর্গত ৮০টিরও বেশি যোগাযোগ প্রকল্পের কাজ চলছে। এখনও পর্যন্ত ২৪টি রাজ্যে বর্তমানে পাঁচটি জাতীয় জলপথ এবং ১০৬টি নতুন জলপথ সহ মোট ১১১টি জলপথকে জাতীয় জলপথ বলে ঘোষণা করা হয়েছে। এগুলির মধ্যে ২৩টি জলপথে পণ্য পরিবহণ সম্ভব হবে। আধুনিক পরিকাঠামো নির্মণের লক্ষ্যে সরকার ২৭ হাজার সার্কিট কিলোমিটারেরও বেশি ট্রান্সমিশন লাইনও পাতছে।

মাননীয় সদস্যগণ,

বিগত সময়ে আমরা দেশে আত্মনির্ভর ভারতের নতুন সঙ্কল্পকে সাকার হতে দেখেছি। এই সঙ্কল্পকে সংস্কারের প্রাণশক্তির মাধ্যমে দ্রুতগতিসম্পন্ন করা হচ্ছে। শ্রম আইনে নতুন সংস্কার থেকে শুরু করে ‘ব্যাঙ্কিং রিফর্মস’ এবং ‘ইনসলভেন্সি অ্যান্ড ব্যাঙ্করাপ্টসি কোড’ পর্যন্ত সংস্কারের কাজ ক্রমানুসারে চলছে। গত বছর কেন্দ্র এবং রাজ্যগুলির ভিন্ন ভিন্ন বিভাগে ২৬ হাজারেরও বেশি কমপ্লায়েন্সেস-এর প্রয়োজনীয়তা হ্রাস করা হয়েছে। দেশের মহাকাশ ক্ষেত্রকে বেসরকারি বিনিয়োগের জন্য উন্মুক্ত করার সম্ভাবনার অনন্ত আকাশও তৈরি করা হয়েছে। গত বছর ভারতের মহাকাশ অভিযান ও গবেষণার ক্ষমতা বৃদ্ধির জন্য অভিনব ‘ইন-স্পেস’ গঠন করা হয়েছে।

দ্রুতগতিতে বিকশিত ড্রোন টেকনলজি এবং এই সংক্রান্ত সম্ভাবনাগুলি নিয়ে আমার সরকার সজাগ এবং সক্রিয়। এই লক্ষ্যে সরকার ‘সিমপ্লিফায়েড ড্রোন রুলস, ২০২১’ অধ্যাদেশ জারি করেছে, আর ড্রোন এবং ড্রোনের সরঞ্জাম দেশে উৎপাদনের জন্য পিএলআই প্রকল্প চালু করেছে। এ থেকে দেশ ভবিষ্যতে এই গুরুত্বপূর্ণ প্রযুক্তি ক্ষেত্রে নিজের ক্ষমতাকে আরও শক্তিশালী করতে পারবে।

মাননীয় সদস্যগণ,

আমার সরকার দেশের সুরক্ষা সুনিশ্চিত করতে দৃঢ়সঙ্কল্প নিয়ে কাজ করছে। সরকারের নীতি রূপায়ণে প্রতিরক্ষা ক্ষেত্রে বিশেষ করে, প্রতিরক্ষা উৎপাদনে দেশের আত্মনির্ভরতা ক্রমে বাড়ছে।

২০২০-২১ অর্থবর্ষে সেনাবাহিনীর আধুনিকীকরণের জন্য যত প্রস্তাব মঞ্জুর করা হয়েছে, তার মধ্যে ৮৭ শতাংশ পণ্যের ক্ষেত্রে ‘মেক ইন ইন্ডিয়া’কে অগ্রাধিকার দেওয়া হয়েছে। তেমনই ২০২০-২১-এ ৯৮ শতাংশ অ্যাক্সেসরি উৎপাদন সংক্রান্ত চুক্তিতে ‘মেক ইন ইন্ডিয়া’কে অগ্রাধিকার দেওয়া হয়েছে। আমাদের সেনাবাহিনীগুলি ২০৯টি এমন সমরসজ্জার তালিকা প্রকাশ করেছে যেগুলি এখন আর বিদেশ থেকে কেনা হবে না। প্রতিরক্ষা দপ্তরের মাধ্যমে ২,৮০০টিরও বেশি এমন উপকরণের তালিকা প্রকাশ করা হয়েছে যেগুলি দেশেই উৎপাদন করা যাবে।

হিন্দুস্তান এরোনটিক্স লিমিটেডের সঙ্গে ৮৩টি এলসিএ ‘তেজস’ যুদ্ধবিমান উৎপাদনের জন্য চুক্তি করা হয়েছে। সরকার অর্ডন্যান্স ফ্যাক্টরিগুলিকে সাতটি ‘ডিফেন্স পিএসইউস’ বা রাষ্ট্রায়ত্ত প্রতিরক্ষা সংস্থার রূপ দেওয়ার জন্য গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ নিয়েছে। তাছাড়া, প্রতিরক্ষা ক্ষেত্রে বেসরকারি কোম্পানিগুলি এবং স্টার্ট-আপগুলিকে দ্রুতগতিতে অংশগ্রহণে উৎসাহ যোগানোর ক্ষেত্রেও সরকার দায়বদ্ধ। আমাদের লক্ষ্য হল আমাদের সেনাবাহিনীর প্রয়োজনীয় সাজসরঞ্জাম ভারতেই বিকশিত ও উৎপাদিত হোক।

মাননীয় সদস্যগণ,

দ্রুতগতিতে পরিবর্তিত আন্তর্জাতিক পরিবেশে ভারত নিজের কূটনৈতিক সম্পর্কগুলিকে ক্রমে উন্নত করে নিজের স্থানকে শক্তিশালী করেছে। ২০২১ সালের আগস্টে ভারত রাষ্ট্রসঙ্ঘের নিরাপত্তা পরিষদে সভাপতিত্ব করেছে আর সেই সময় বেশ কিছু অভূতপূর্ব সিদ্ধান্ত নিয়েছে। ভারতের সভাপতিত্বেই রাষ্ট্রসঙ্ঘের নিরাপত্তা পরিষদ প্রথমবার সামুদ্রিক নিরাপত্তাকে নিজেদের ‘এজেন্ডা আইটেম’-এর অন্তর্গত করে সামগ্রিকভাবে আলোচনা করেছে। রাষ্ট্রসঙ্ঘের নিরাপত্তা পরিষদ এই বিষয়ে প্রথমবার একটি ‘প্রেসিডেনশিয়াল স্টেটমেন্ট’কে সর্বসম্মতিক্রমে ‘অ্যাডপ্ট’ও করেছে।

আমরা আমাদের প্রতিবেশী দেশ আফগানিস্তানে অস্থিরতার সংবেদনশীল পরিস্থিতিকেও দেখেছি। ভারত এই পরিস্থিতিতে মানবতাকে সর্বোপরি রেখে ‘অপারেশন দেবী শক্তি’ পরিচালনা করেছে। আমরা অনেক প্রতিকূলতা সত্ত্বেও আমাদের আমাদের অনেক নাগরিক এবং অনেক আফগান হিন্দু, শিখ সংখ্যালঘুদের কাবুল থেকে সাফল্যের সঙ্গে এয়ারলিফট করেছি। আমরা সেই কঠিন পরিস্থিতির মধ্যেও আফগানিস্তানের পবিত্র গুরুগ্রন্থ সাহিব-এর দুটি ‘স্বরূপ’কেও সুরক্ষিতভাবে ভারতে নিয়ে এসেছি। মানবিকতার দৃষ্টিতে ভারত আফগানিস্তানে মেডিকেল সাপ্লাই এবং খাদ্যশস্য সরবরাহের মাধ্যমে সাহায্য করছে।

মাননীয় সদস্যগণ,

বর্তমান সময়ে জলবায়ু পরিবর্তন গোটা বিশ্বের সামনে অনেক বড় প্রতিকূলতা হয়ে দাঁড়িয়েছে। ভারত এই বিষয়ে একটি দায়িত্বশীল আন্তর্জাতিক স্বর হয়ে উঠেছে। সিওপি-২৬ শীর্ষ সম্মেলনে আমার সরকার ঘোষণা করেছে যে ২০৩০ সালের মধ্যে ভারত তার কার্বন নিঃসরণকে ১ বিলিয়ন টনেরও কম করবে। ভারত ২০৭০ সালের মধ্যে ‘নেট জিরো’ কার্বন নিঃসরণসম্পন্ন অর্থনীতির দেশ হিসেবে নিজেকে গড়ে তোলার লক্ষ্য রেখেছে। ভারত আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে সঙ্গে নিয়ে ‘গ্রিন গ্রিড ইনিশিয়েটিভ : ওয়ান সান-ওয়ান ওয়ার্ল্ড-ওয়ান গ্রিড’-এর উদ্যোগও নিয়েছে। এটি ‘গ্লোবাল ইন্টারকানেক্টেড সোলার পাওয়ার গ্রিড’-এর প্রথম আন্তর্জাতিক নেটওয়ার্ক হিসেবে গড়ে উঠছে। পরিবেশ নিয়ে আমাদের বড় লক্ষ্য এবং সাহসী সঙ্কল্প, প্রকৃতির প্রতি আমাদের সংবেদনশীলতাকে তুলে ধরে।

মাননীয় সদস্যগণ,

আমার সরকার ভারতের প্রাচীন ঐতিহ্যকে সংরক্ষিত, সমৃদ্ধ এবং শক্তিশালী করা নিজের দায়িত্ব বলে মনে করে। এটা গৌরবের কথা যে ধৌলাভিরার হরপ্পা সাইট আর তেলেঙ্গানার ত্রয়োদশ শতাব্দীর কাকতীয় রুদ্রেশ্বর রামপ্পা মন্দিরকে ইউনেস্কো ওয়ার্ল্ড হেরিটেজ সাইট হিসেবে ঘোষণা করা হয়েছে। প্রয়াগরাজে কুম্ভ মেলার পর ইউনেস্কোর ‘অ্যাবস্ট্রাক্ট কালচারাল হেরিটেজ’-এর তালিকায় কলকাতার প্রতিষ্ঠিত দুর্গাপূজাকেও সামিল করা হয়েছে।

সরকার ভারতের অমূল্য ঐতিহ্যগুলিকে দেশে ফিরিয়ে আনাকেও অগ্রাধিকার দিয়ে এসেছে। ১০০ বছর আগে ভারত থেকে চুরি হওয়া মা অন্নপূর্ণা দেবীর মূর্তিকে ফিরিয়ে এনে কাশী বিশ্বনাথ মন্দিরে স্থাপন করা হয়েছে। বিশ্বের ভিন্ন ভিন্ন দেশ থেকে এরকম অনেক ঐতিহাসিক ঐতিহ্য আজ ভারতে ফিরিয়ে আনা হচ্ছে।

আমরা সবাই জানি যে ঐতিহ্য এবং পর্যটনের মধ্যে পারস্পরিক গভীর সম্পর্ক রয়েছে। সেজন্য আজ একদিকে যেমন ভারতের আধ্যাত্মিক ঐতিহ্যকে আরও একবার সঞ্জীবিত করা হচ্ছে, অন্যদিকে তেমনই তীর্থযাত্রীদের এবং পর্যটকদের জন্য অত্যাধুনিক পরিষেবা এবং পরিকাঠামো উন্নয়নের কাজ চলছে। আমার সরকারের ‘স্বদেশ দর্শন’ এবং ‘প্রসাদ’ প্রকল্পগুলি এক্ষেত্রে বড় ভূমিকা পালন করছে।

গোয়ার ৬০তম মুক্তি দিবস উপলক্ষে ফোর্ট অগুয়াদা জেল পরিসরের স্মারকগুলি পুনরুদ্ধার করে সেগুলির উদ্বোধন করা হয়েছে। এটি গোয়া মুক্তি সংগ্রামের সেনানীদের অবিস্মরণীয় সংঘর্ষের স্মারক।

মাননীয় সদস্যগণ,

স্বাধীনতার অমৃতকালে ‘এক ভারত শ্রেষ্ঠ ভারত’-এর আমাদের সঙ্কল্পগুলির ভিত্তিতে আজ গণতান্ত্রিক মূল্যবোধগুলির পাশাপাশি উন্নয়নের নতুন অধ্যায়ও লেখা হচ্ছে। যে রাজ্য এবং অঞ্চলগুলি উপেক্ষিত থেকে গেছে, আজ দেশ সেগুলির উন্নয়নের জন্য বিশেষ প্রচেষ্টা চালাচ্ছে।

জম্মু-কাশ্মীর এবং লাদাখ এলাকার উন্নয়নের নতুন যুগের সূত্রপাত এর একটি বড় উদাহরণ। আমার সরকার জম্মু-কাশ্মীরের শিল্পোদ্যোগ উন্নয়নের জন্য প্রায় ২৮ হাজার কোটি টাকা বিনিয়োগে নতুন ‘সেন্ট্রাল সেক্টর স্কিম’ চালু করেছে। গত বছর কাজিগুন্ড-বানিহাল সুড়ঙ্গটিকেও যাতায়াতের জন্য উন্মুক্ত করে দেওয়া হয়েছে। শ্রীনগর থেকে শারজা পর্যন্ত আন্তর্জাতিক বিমান পরিষেবা চালু হয়েছে। জম্মু-কাশ্মীরের জনগণকে শিক্ষা, স্বাস্থ্য এবং কর্মসংস্থানের উন্নত সুযোগ প্রদান করার জন্য অনেক গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে। এই সময়ে সেখানে সাতটি মেডিকেল কলেজ ছাড়াও দুটি এইমস হাসপাতাল গড়ে তোলার কাজ দ্রুতগতিতে এগিয়ে চলেছে। এর মধ্যে একটি এইমস তৈরি হচ্ছে জম্মুতে আর অন্যটি কাশ্মীরে। আইআইটি জম্মু এবং আইআইএম জম্মু গড়ে তোলার কাজও দ্রুতগতিতে এগিয়ে চলেছে।

লাদাখ কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলে পরিকাঠামো এবং আর্থিক উন্নয়নকে দ্রুতগতিতে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার জন্য ‘সিন্ধু ইনফ্রাস্ট্রাকচার ডেভেলপমেন্ট কর্পোরেশন’ স্থাপন করা হয়েছে। লাদাখে এই উন্নয়ন যাত্রায় আরও একটি সাফল্য ‘সিন্দু সেন্ট্রাল ইউনিভার্সিটি’ রূপে প্রতিষ্ঠিত হতে চলেছে।

মাননীয় সদস্যগণ,

আমার সরকার উত্তর-পূর্বাঞ্চলের সকল রাজ্যে – অরুণাচল প্রদেশ, আসাম, মণিপুর, মেঘালয়, মিজোরাম, নাগাল্যান্ড, সিকিম এবং ত্রিপুরার ক্রমউন্নয়নের জন্য দায়বদ্ধ। এই রাজ্যগুলিতে প্রত্যেক স্তরে বুনিয়াদি এবং আর্থিক সুযোগগুলির উন্নয়নও করা হচ্ছে। রেল এবং বিমান যোগাযোগ ব্যবস্থার মতো পরিষেবার স্বপ্ন উত্তর-পূর্ব ভারতের জনগণের জন্য এখন বাস্তবায়িত হচ্ছে। এটা দেশের জন্য অত্যন্ত গর্বের বিষয় যে উত্তর-পূর্ব ভারতের রাজ্যগুলির সমস্ত রাজধানীকে আমার সরকারের প্রচেষ্টায় এখন রেলের মানচিত্রে আনা হচ্ছে।

ইটানগরের হোলোংগি-তে একটি নতুন বিমানবন্দর স্থাপন করা হচ্ছে। সম্প্রতি ত্রিপুরার মহারাজ বীর বিক্রম বিমানবন্দরে একটি নতুন এবং আধুনিক টার্মিনাল খোলা হয়েছে। উত্তর-পূর্ব ভারতের এই উন্নয়ন ভারতের উন্নয়ন যাত্রার একটি সোনালী অধ্যায় হয়ে উঠবে। কিছুদিন আগেই ২১ জানুয়ারি তারিখে মেঘালয়, মণিপুর এবং ত্রিপুরার পূর্ণ রাজ্য হিসেবে স্বীকৃতি পাওয়ার ৫০ বছর পূর্তি উৎসব পালিত হয়েছে। স্বাধীনতার ৭৫ বছর পূর্তির পাশাপাশি এই রাজ্যগুলির যাত্রাপথও আমাদের উন্নয়নের নতুন সঙ্কল্পগুলির জন্য প্রেরণা যোগাচ্ছে।

উত্তর-পূর্বাঞ্চলে শান্তি স্থাপনের জন্য আমার সরকারের প্রচেষ্টাগুলি ঐতিহাসিক সাফল্য পেয়েছে। এখন কয়েক মাস আগেই কার্বি আংলং-এর অনেক দশক পুরনো বিবাদ সমাপ্ত করার জন্য কেন্দ্রীয় সরকার, আসাম রাজ্য সরকার এবং কার্বি আংলং-এর গোষ্ঠীগুলির মধ্যে একটি নতুন চুক্তি হয়েছে। এর ফলে এই এলাকায় শান্তি এবং সমৃদ্ধির একটি নতুন অধ্যায় শুরু হয়েছে। সরকারের বিভিন্ন প্রচেষ্টার মাধ্যমে আজ দেশের নকশাল প্রভাবিত জেলাগুলির সংখ্যাও ১২৬ থেকে হ্রাস পেয়ে ৭০টি জেলায় সীমিত রয়েছে।

মাননীয় সদস্যগণ,

আমার সরকার নাগরিকদের প্রয়োজনগুলির প্রতি সরকারি বিভাগগুলিকে যত বেশি সম্ভব জবাবদিহি করে তুলতে কৃতসঙ্কল্প। স্থগিত মামলাগুলি সমাধানের জন্য এবং পরিচ্ছন্নতার জন্য কেন্দ্রীয় সরকারের প্রত্যেক বিশেষ অভিযান চালাচ্ছে। ‘মিশন কর্মযোগী’র অন্তর্গত সিভিল সার্ভেন্টদের ক্ষমতা বাড়াতে সরকার ‘ক্যাপাসিটি বিল্ডিং কমিশন’ স্থাপন করেছে। ‘মিশন কর্মযোগী’, সিভিল সার্ভেন্টদের কেরিয়ার গড়তেও সহায়ক হবে আর দেশ নির্মাণের নতুন দায়িত্বগুলি পালন করতে তাঁদেরকে প্রস্তুতও করবে।

বিচার পাওয়াকে সরল এবং সুগম করে তুলতে দেশ বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ নিচ্ছে। ‘টেলি-ল প্রোগ্রাম’-এর মাধ্যমে মোকদ্দমার আগেই প্রস্তুতি নেওয়ার জন্য একটি প্ল্যাটফর্ম তৈরি করা হয়েছে। বিবাদ নিষ্পত্তির ক্ষেত্রে গতি আনতে আমার সরকার রাজ্যসভায় ‘মেডিয়েশন বিল, ২০২১’ পেশ করেছে।

মাননীয় সদস্যগণ,

আজ দেশের সাফল্যের অনুভব এবং সামর্থ্য ও সম্ভাবনাগুলির মতোই অসীম। এই সাফল্য কোনও এক সংস্থা কিংবা প্রতিষ্ঠানের নয়, দেশের কোটি কোটি নাগরিকদের। এতে কোটি কোটি দেশবাসীর শ্রম এবং ঘাম রয়েছে। এই সমস্ত সাফল্য আমাদের উচ্চাকাঙ্ক্ষী লক্ষ্যগুলিকে দীর্ঘ পথ অতিক্রম করার এক প্রকার মাইলফলক আর এগিয়ে যাওয়ার জন্য আমাদের প্রেরণাও।

২০৪৭ সালে দেশ তার স্বাধীনতার শতবর্ষ পূরণ করবে। সেই সময়ের অনিন্দ্যসুন্দর, আধুনিক এবং উন্নত ভারত গড়ে তোলার জন্য আমাদের এখন থেকেই কঠিন পরিশ্রম করতে হবে, আমাদের নিজেদেরকে পরিশ্রমের শিখরে নিয়ে যেতে হবে এবং এটা সুনিশ্চিত করতে হবে যাতে এই পরিশ্রম থেকে লাভজনক পরিণাম পাওয়া যায়। এক্ষেত্রে যেন আমাদের সকলের অংশীদারিত্ব থাকে এবং সমান অংশীদারিত্ব থাকে।

করোনাকালে আপনারা সকলে দেশের সমস্ত সাংসদ যেভাবে নিজেদের দায়িত্ব পালন করেছেন,  আর যেভাবে সমস্ত রকম সতর্কতা অবলম্বন করে উভয় কক্ষের অধিবেশন সঞ্চালনায় নিয়মিত সাহায্য করেছেন, সেজন্য আপনারা সকলেই প্রশংসার অধিকারী। উভয় কক্ষের সমস্ত সাংসদরা কোটি কোটি দেশবাসীর আশা-আকাঙ্ক্ষার সারথী। এই ভাবনা নিয়ে আমাদের ভবিষ্যতেও কাজ করে যেতে হবে।

আমার পূর্ণ বিশ্বাস, আমরা সবাই মিলেমিশে নিজেদের মহান ভারতকে গৌরবের শিখর পর্যন্ত নিয়ে যাব। এই ভাবনা নিয়ে আপনাদের সবাইকে আরও একবার অভিনন্দন। আপনাদের সবাইকে অনেক অনেক ধন্যবাদ!

জয় হিন্দ!

 

CG/SB/DM/



(Release ID: 1794334) Visitor Counter : 502