প্রধানমন্ত্রীরদপ্তর

রাইসিনা ডায়ালগ, ২০২১-এর উদ্বোধনী অধিবেশনে প্রধানমন্ত্রীর ভাষণ

Posted On: 13 APR 2021 8:33PM by PIB Kolkata

নয়াদিল্লি, ১৩ এপ্রিল, ২০২১

 

মহামহিম!

বন্ধুগণ, নমস্কার!

মানব ইতিহাসের এক আমূল পটপরিবর্তনের সময়ে এবারের রাইসিনা ডায়ালগ আয়োজন করা হয়েছে। বিশ্বব্যাপী মহামারী গত এক বছর ধরে সমগ্র জগতকে প্রায় বিধ্বস্ত করে রেখেছে। এক শতাব্দী আগে শেষবার এ ধরনের বিশ্ব মহামারীর পরিস্থিতি তৈরি হয়েছিল। যদিও সমগ্র মানবজাতি শতাব্দী প্রাচীন সেই মহামারীর পর থেকে একাধিক সংক্রামক ব্যাধির মুখোমুখি হয়েছে। কিন্তু আজ কোভিড-১৯ মহামারীর মোকাবিলায় সমগ্র দুনিয়া প্রত্যাশা অনুযায়ী প্রস্তুত নয়। 

আমাদের বিজ্ঞানী, গবেষক এবং শিল্প সংস্থাগুলি একাধিক প্রশ্নের উত্তর দিয়েছে। 

এই ভাইরাস কি?

এই ভাইরাস ছড়ায় কিভাবে?

কিভাবে আমরা সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণ করতে পারি?

কিভাবে আমরা টিকা তৈরি করতে পারি?

কিভাবে আমরা ব্যাপকভাবে দ্রুতগতিতে টিকাকরণ করতে পারি?

উপরোক্ত প্রশ্নগুলি ছাড়াও এমন অনেক প্রশ্ন ও তার উত্তর আমাদের কাছে উঠে এসেছে। তাই এতে কোনও সন্দেহ নেই যে এরকম প্রশ্নোত্তর অব্যাহত থাকবে। কিন্তু বিশ্ব-চিন্তক ও নেতৃবৃন্দ হিসেবে আমরা আমাদের কাছেই কয়েকটি প্রশ্ন করতে পারি। 

এক বছরেরও বেশি সময় ধরে আমাদের সমাজ চিন্তকরা মহামারীর বিরুদ্ধে লড়াইয়ে নিজেদের নিরন্ত্রর যুক্ত রেখেছেন। বিশ্বের সমস্ত দেশের সরকার তৃণমূল স্তর থেকে সর্বোচ্চ পর্যায় পর্যন্ত এই মহামারী সংক্রমণ প্রতিরোধ ও নিয়ন্ত্রণে নিরলস কাজ করে চলেছে। কিন্তু তা সত্ত্বেও এরকম হল কেন? এটা সম্ভবত মানবজাতির কল্যাণের বিষয়গুলিকে উপেক্ষা করে আর্থিক উন্নয়নের গতি অব্যাহত রাখতেই আজকের এই পরিস্থিতি। 

এটা সম্ভবত বর্তমান সময়ের প্রতিযোগিতা, পরস্পরকে সহযোগিতার মানসিকতা বিস্মৃত হওয়ার পরিণাম। এরকম অনেক প্রশ্নের উত্তর সাম্প্রতিক অতীতে আমরা নিশ্চয়ই খুঁজে পাব। বন্ধুগণ, প্রথম ও দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের বিভীষিকা আমাদেরকে এক নতুন বিশ্ব শৃঙ্খল গড়ে তুলতে বাধ্য করেছিল। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ শেষ হওয়ার পর বেশ কয়েক দশক ধরে এমন অনেক প্রতিষ্ঠান ও কাঠামো তৈরি করা হয়েছিল, যেগুলির উদ্দেশ্যই ছিল কিভাবে তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধ প্রতিহত করা যায় সে ব্যাপারে পরিকল্পনা প্রণয়ন করা।

আমি আপনাদের সামনে আমি যে কথা বলেছি হয়তো তা আপেক্ষিক দিক থেকে সঠিক নয়। কিন্তু সমগ্র বিশ্বজুড়ে গৃহীত একাধিক পদক্ষেপের পরিণাম ছিল মূল কারণ না জেনেই কেবল উপসর্গের ওপর ভিত্তি করে একজন রোগীর চিকিৎসার মতো। অথবা, অন্যভাবে ব্যাখ্যা করলে যাবতীয় পদক্ষেপ গত দশকগুলিতে গ্রহণ করা হয়েছিল যাতে পরবর্তী বিশ্বযুদ্ধের সম্মুখীন মানবজাতিকে না হতে হয় সেই লক্ষ্যে। আসলে, মানবজাতি যদিও তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধের সম্মুখীন হয়নি, তবুও মানুষের জীবন থেকে হিংসার ভীতিও দূর হয়নি। এখনও ছায়াযুদ্ধ লাগাতার চলছে এবং জঙ্গি আক্রমণ শেষ হওয়ার কোনও বিরাম নেই। স্বাভাবিকভাবেই হিংসার পরিবেশ এখনও বর্তমান। 

সুতরাং, এই প্রেক্ষাপটে সঠিক বা যুক্তিগ্রাহ্য প্রশ্ন কি হতে পারে? এ প্রসঙ্গে যে বিষয়গুলি অন্তর্ভুক্ত করা যায়, তা এরকম: 

কেন এখনও আমাদের কাছে এখনও দুর্ভিক্ষ ও ক্ষুধা থেকে গেছে?

কেন এখনও আমাদের কাছে দারিদ্র্য বর্তমান?

অথবা খুব মৌলিক একটা প্রশ্ন এবং তা হল

কেন আমরা এখনও সেই সমস্ত সমস্যার নিরসন করতে পারছি না যা এখনও সমগ্র মানবজাতির কাছে বিপদের?

আমি নিশ্চিত যে যদি আমাদের চিন্তাভাবনা উপরোক্ত বিষয়গুলির ভিত্তিতে নিজেদের আরও বেশি নিয়োজিত করতে পারতাম, তাহলে বোধহয় জটিল হলেও তার সমাধান সূত্র পাওয়া যেত।

বন্ধুগণ!

তবে এখনও অনেক দেরী হয়ে যায়নি। তাই গত সাত দশকের ভুল-ভ্রান্তিগুলি আমাদেরকে এখনও ভবিষ্যতের জন্য চিন্তাভাবনা করতে কোনও বাধা দেয়নি। বর্তমান কোভিড-১৯ মহামারী পরিস্থিতি সমগ্র বিশ্ব শৃঙ্খলকে নতুন রূপে সাজানোর এক সুযোগ এনে দিয়েছে। আমাদের চিন্তাভাবনায় পরিবর্তন আনার সুযোগও তৈরি হয়েছে। তাই আমাদের এমন এক ব্যবস্থা গড়ে তুলতে হবে যা কেবল বর্তমান সমস্যাগুলিই নয়, আগামীর চ্যালেঞ্জগুলিও মোকাবিলায় সক্ষম হয়ে উঠবে। এমনকি আমাদের সমগ্র মানবজাতিকে নিয়ে চিন্তা করতে হবে, যাঁরা আমাদের পাশে বা সীমান্তের ওপারে আছেন, কেবল তাঁদের নিয়ে নয়। সর্বোপরি আমাদের চিন্তাভাবনা ও কর্মপরিকল্পনার মূল কেন্দ্রে থাকবে মানবতাবাদ। 

বন্ধুগণ!

মহামারীর সময় আমরা নিজেদের প্রচেষ্টাতে, আমাদের সীমিত সম্পদ সত্ত্বেও দেশে আমরা অঙ্গীকার অনুযায়ী কাজ করতে পেরেছি। আমরা এই মহামারী থেকে আমাদের ১৩০ কোটি মানুষকে সুরক্ষিত রেখেছি। একইসঙ্গে আমরা অন্যান্য দেশগুলিকেও মহামারীর মোকাবিলায় যথাসাধ্য সাহায্য করেছি। আমাদের প্রতিবেশী দেশগুলিকে আমরা এই সঙ্কটের মোকাবিলায় আঞ্চলিক সমন্বয় গড়ে তুলতে উৎসাহিত করেছি। গত বছর আমরা ১৪০টির বেশি দেশকে ওষুধ ও আত্ম-সুরক্ষার সরঞ্জাম সাহায্য হিসেবে পাঠিয়েছি। আমরা এটা পুরোপুরিভাবে উপলব্ধি করি যে, মানবজাতি কখনই মহামারীকে পরাজিত করতে পারবে না যদি আমরা ক্ষেত্র নির্বিশেষে, আমাদের পাসপোর্টের বর্ণ নির্বিশেষে সমবেত হয়ে এগিয়ে আসতে না পারি। আর এ কারণেই বিভিন্ন বাধা-বিপত্তি সত্ত্বেও আমরা ৮০টির বেশি দেশে টিকা সরবরাহ করেছি। আমরা জানি যে যদিও টিকার সরবরাহ ছিল খুবই নগণ্য। আমরা এটাও জানি যে টিকার চাহিদাও ব্যাপক। আমরা এও জানি সমগ্র মানবজাতির টিকাকরণে আরও অনেক সময় লাগবে। কিন্তু একইসঙ্গে আমাদেরকে এটাও জানতে হবে যে মানুষের আশা-আকাঙ্ক্ষার বিষয়টিও প্রাধান্য পায়। তাই, সমৃদ্ধ ও ধনবান দেশের একজন মানুষের যেমন প্রত্যাশা রয়েছে, তেমনই স্বল্প উন্নত দেশের মানুষেরও প্রত্যাশা সমান। তাই আমরা আমাদের অভিজ্ঞতা, আমাদের বিশেষজ্ঞ, আমাদের সম্পদ মহামারীর বিরুদ্ধে লড়াইয়ে, সমগ্র মানবজাতির স্বার্থে কাজে লাগিয়ে যাব। 

বন্ধুগণ!

এ বছর আমরা রাইসিনা ডায়ালগে ভার্চ্যুয়াল পদ্ধতিতে একত্রিত হয়েছি। আমি আপনাদের সকলকে মানবকল্যাণ-কেন্দ্রিক সমস্ত বিষয়ে আরও জোড়ালো সওয়াল করার আহ্বান জানাই। এটা আমাদের বিবেচনায় রাখতে হবে যে আমাদের কাছে একাধিক পরিকল্পনা থাকতে পারে কিন্তু আমাদের বিকল্প কোনও গ্রহ নেই। আমাদের এটা অবশ্যই স্মরণে রাখতে হবে যে আমরা আমাদের ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্য এই গ্রহের স্বেচ্ছাসেবক হয়ে উঠতে পারি না।

আমি আপনাদের সামনে আমার এই চিন্তাভাবনা তুলে ধরার পাশাপাশি আগামী কয়েকদিন এই অধিবেশনে বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ বিষয় নিয়ে ইতিবাচক আলোচনা হবে বলে আশা করছি। আমার ভাষণ শেষ করার পূর্বে আমি সমস্ত প্রতিনিধি যাঁরা এই অধিবেশনে যোগ দিয়েছেন এবং বিভিন্ন বিষয়ে নিজেদের মত প্রকাশ করেছেন, তাঁদেরকে ধন্যবাদ জানাই। আমি বিশেষভাবে ধন্যবাদ জানাই রোয়ান্ডার রাষ্ট্রপতি এবং ডেনমার্কের প্রধানমন্ত্রীকে এই অধিবেশনে যুক্ত হওয়ার জন্য। আমি আমার বন্ধু ও অস্ট্রেলিয়ার প্রধানমন্ত্রী এবং ইউরোপীয় কাউন্সিলের সভাপতিকেও রাইসিনা ডায়ালগে যোগ দেওয়ার জন্য অভিনন্দন জানাই। 

পরিশেষে, সমস্ত আয়োজকদের এই অধিবেশনের জন্য আমার আন্তরিক অভিনন্দন ও কৃতজ্ঞতা জানাই। বিভিন্ন চ্যালেঞ্জ সত্ত্বেও এবারের রাইসিনা ডায়ালগ আয়োজন করার ক্ষেত্রে তারা বড় ভূমিকা নিয়েছে।

ধন্যবাদ। আপনাদের অনেক অনেক ধন্যবাদ।

 

CG/BD/DM/


(Release ID: 1712440) Visitor Counter : 263