রাষ্ট্রপতিরসচিবালয়

ভারতের মাননীয় রাষ্ট্রপতি শ্রী রামনাথ কোবিন্দ কর্তৃক ৭২তম সাধারণতন্ত্র দিবস উপলক্ষে জাতির উদ্দেশে প্রদত্ত ভাষণের বাংলা রূপান্তর

Posted On: 25 JAN 2021 7:41PM by PIB Kolkata

নয়াদিল্লি, ২৫ জানুয়ারি, ২০২১

 

আমার প্রিয় দেশবাসীগণ,

নমস্কার!

 

১. বিশ্বের সবচেয়ে বড় এবং প্রাণবন্ত গণতন্ত্রের সমস্ত নাগরিককে দেশের বাহাত্তরতম সাধারণতন্ত্র দিবসের প্রাক-সন্ধ্যায় আন্তরিক অভিনন্দন জানাচ্ছি। বৈচিত্র্যে সমৃদ্ধ আমাদের দেশে অনেক উৎসব পালন করা হয় কিন্তু আমাদের দেশের সমস্ত মানুষ দেশপ্রেমের ভাবনায় জাতীয় উৎসবগুলি উদযাপন করে থাকেন| সাধারণতন্ত্র দিবসের জাতীয় পার্বনও আমরা জাতীয় পতাকা এবং সংবিধানের প্রতি সম্মান জানিয়ে সোৎসাহে উদযাপন করি

 

২. আজকের দিনটি দেশে ও দেশের বাইরে অবস্থানরত সমস্ত ভারতীয়দের জন্যও খুবই গুরুত্বপূর্ণ। আজকের দিনেই ৭১ বছর আগে আমরা ভারতের জনগণ, আমাদের অনন্য সংবিধানকে গ্রহণ, বিধিবদ্ধকরণ ও নিজেদের সমর্পণ করেছিলাম। এ কারণে এটা আমাদের সবার জন্যই সংবিধানে বর্ণিত জীবনের মূল্যবোধকে গভীরভাবে বিচার-বিশ্লেষণেরও সুযোগ সংবিধানের প্রস্তাবনায় উল্লিখিত ন্যায়, স্বাতন্ত্র, সাম্য এবং সৌভ্রাতৃত্বের মূল্যবোধ আমাদের সবার জন্য আদর্শ স্বরূপ। এটা আশা করা যেতে পারে, শুধুমাত্র প্রশাসনিক দায়িত্ব পালনকারী ব্যক্তিই নন, দেশের সমস্ত সাধারণ নাগরিকেরই উচিৎ হবে দৃঢ়তার সঙ্গে নিষ্ঠাভরে সেগুলি মেনে চলা

 

৩. আমাদের সংবিধানের প্রাজ্ঞ রচয়িতারা অনেক ভাবনা চিন্তা করেই সাধারণতন্ত্রের ভিত্তিস্তম্ভস্বরূপ এই চারটে আদর্শকে সূচনাতেই গুরুত্ব সহকারে উল্লেখের সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন এই আদর্শগুলি আমাদের স্বাধীনতা সংগ্রামকেও এগিয়ে নিয়ে গিয়েছিলো। বালগঙ্গাধর তিলক, লালা লাজপত রায়, মহাত্মা গান্ধী এবং সুভাষচন্দ্র বোসের মত অনেক মহান জননেতা এবং চিন্তাবিদ আমাদের স্বাধীনতা সংগ্রামকে অনুপ্রাণিত করেছিলেন। মাতৃভূমির সোনালী ভবিষ্যৎ নিয়ে তাঁদের ভিন্নধারার পরিকল্পনা সত্ত্বেও ন্যায়বিচার, স্বাধীনতা, সাম্য ও সৌভ্রাতৃত্বের মূল্যবোধই সবাইকে এক সুতোয় গেঁথে রাখার কাজটা করেছিলো

 

৪. আমি ভাবি যে, আমাদের সবাইকে অতীত থেকে আরও পিছিয়ে গিয়ে এটা জেনে নেওয়ার চেষ্টা করতে হবে, এই মূল্যবোধের বিষয়গুলি কেন আমাদের দেশনির্মাতাদের আদর্শ হয়ে উঠেছিলো? এর স্পষ্ট উত্তর এটাই যে, অনাদিকাল ধরে এই পৃথিবী এবং এখানকার সভ্যতা এই মূল্যবোধের সংযোজন ঘটিয়ে আসছে ন্যায় বিচার, স্বাধীনতা, সাম্য এবং সৌভ্রাতৃত্বের যে জীবন দর্শন আমাদের রয়েছে, তা শাশ্বত এর নিরন্তর প্রবাহ আমাদের সভ্যতার সূচনা থেকেই সবার জীবনকে সমৃদ্ধ করে আসছে। প্রত্যেক নতুন প্রজন্মে সময়ের সঙ্গে সঙ্গে এই মূল্যবোধের সার্থকতা প্রমান করার দায়িত্ব রয়েছে আমাদের স্বাধীনতা সংগ্রামীরা নিজেদের সময়ে এই দায়িত্ব খুব ভালোভাবেই পালন করেছেন। একভাবে আজকের দিনেও এই মূল্যবোধকে সার্থক এবং কার্যকর করে গড়ে তুলতে হবে। সেই সিদ্ধান্তের আলোকিত পথেই আমাদের বিকাশের অভিযাত্রাকে প্রতিনিয়ত এগিয়ে নিয়ে যেতে হবে

আমার প্রিয় দেশবাসীগণ,

 

৫. এতো বিশাল জনসংখ্যার এই দেশকে খাদ্য এবং দুগ্ধজাত সামগ্রী উৎপাদনে আত্মনির্ভর করে তোলার জন্য আমাদের কৃষক ভাই-বোনেদের সমস্ত দেশবাসী হৃদয়ের গভীর থেকে অভিনন্দন জানাচ্ছে বিরূপ প্রাকৃতিক পরিস্থিতি, অনেক সমস্যা সংকুলতা এবং কোভিড বিপর্যয় সত্ত্বেও আমাদের কৃষক ভাই-বোনেরা কৃষি উৎপাদন কম হতে দেননি এজন্য কৃতজ্ঞ দেশ আমাদের অন্নদাতা কৃষকদের কল্যাণে পরিপূর্ণভাবে দায়বদ্ধ

 

৬. যেভাবে আমাদের পরিশ্রমী কৃষকরা দেশের খাদ্য সুরক্ষা সুনিশ্চিত করতে সফল হয়েছেন, তেমনি আমাদের সেনাবাহিনীগুলির বাহাদুর জওয়ানরা, কঠোরতম পরিস্থিতিতে, দেশের সীমান্তগুলির নিরাপত্তা সুনিশ্চিত করে আসছেন। লাদাখের সিয়াচেন এবং গলওয়ান উপত্যকায়, মাইনাস পঞ্চাশ থেকে ষাট ডিগ্রি সেন্টিগ্রেড তাপমাত্রায়, সবকিছু জমিয়ে দেওয়া শীত থেকে শুরু করে জয়সলমীরে, পঞ্চাশ ডিগ্রি সেন্টিগ্রেডেরও বেশি তাপমাত্রায়, ঝলসে দেওয়া গরমে মাটি, আকাশ এবং বিশাল সমুদ্রউপকূলবর্তী এলাকায় আমাদের সেনারা প্রতি মুহূর্তে ভারতের সুরক্ষার দায়িত্ব পালন করছেন। আমাদের সৈনিকদের বীরত্ব, দেশপ্রেম এবং আত্মবলিদানের জন্য আমরা সমস্ত দেশবাসী গর্বিত।

 

৭. খাদ্য নিরাপত্তা, সৈন্য নিরাপত্তা, নানা বিপর্যয় ও রোগ থেকে সুরক্ষা এবং উন্নয়নের বিভিন্ন ক্ষেত্রে আমাদের বৈজ্ঞানিকেরা তাঁদের অবদানের মাধ্যমে জাতীয় প্রচেষ্টাকে শক্তি জুগিয়েছেন। মহাকাশ থেকে শুরু করে ফসলের ক্ষেত পর্যন্ত, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান থেকে শুরু করে হাসপাতাল পর্যন্ত, বৈজ্ঞানিক সমাজ আমাদের জীবন এবং কাজকর্মকে উন্নত করেছেদিন-রাত পরিশ্রম করে করোনা ভাইরাসকে ডি-কোড করে অনেক কম সময়ে ভ্যাক্সিন বিকশিত করে, আমাদের বৈজ্ঞানিকেরা সমগ্র মানবতার কল্যাণে একটি নতুন ইতিহাস রচনা করেছেন। দেশের মধ্যে এই অতিমারীকে বাগে আনতে, আর উন্নত দেশগুলির তুলনায় মৃত্যুর হার নিয়ন্ত্রণের ক্ষেত্রেও আমাদের বৈজ্ঞানিকেরা, চিকিৎসকরা, প্রশাসন এবং অন্যদের সঙ্গে মিলে অপরিসীম অবদান রেখেছেন। এভাবে আমাদের সমস্ত কৃষক, জওয়ান ও বৈজ্ঞানিকেরা বিশেষ অভিনন্দনের পাত্র। সাধারণতন্ত্র দিবসের  শুভ অবকাশে কৃতজ্ঞ দেশ তাঁদের অভিনন্দন জানাচ্ছে।

 

প্রিয় দেশবাসীগণ,

 

৮. গত বছর যখন সমগ্র মানবতা একটি ভয়ানক বিপর্যয়ের সম্মুখীন হয়ে একরকম থমকে দাঁড়িয়েছিল, সেই সময় আমি ভারতীয় সংবিধানের মূল ধারাগুলি নিয়ে ভাবনাচিন্তা করছিলাম। আমার মনে হয়, আমাদের সংবিধানের বন্ধুত্বের আদর্শের জোরেই এত কার্যকরীভাবে এই সংকটের মোকাবিলা করা সম্ভব হয়েছে। করোনা ভাইরাসরূপী শত্রুর সামনে দেশবাসী একটি পরিবারের মতোই ঐক্যবদ্ধ হয়ে, অনুকরণীয় ত্যাগ, সেবা ও আত্মবলিদানের নিদর্শন রেখে পরস্পরকে রক্ষা করেছেন। আমি এখানে সেই ডাক্তার, নার্স, স্বাস্থ্যকর্মী, স্বাস্থ্য পরিষেবার সঙ্গে যুক্ত প্রশাসকগণ এবং সাফাই কর্মীদের কথা উল্লেখ করতে চাই যারা নিজেদের জীবন বিপন্ন করে পীড়িতদের সেবা করেছেন। অনেকেই প্রাণ হারিয়েছেন। এর পাশাপাশি এই অতিমারী দেশের প্রায় দেড় লক্ষ নাগরিকের জীবন কেড়ে নিয়েছে। তাঁদের সবার শোকসন্তপ্ত পরিবারের প্রতি আমি সমবেদনা জানাই। করোনা মোকাবিলায় সামনের সারির যোদ্ধা হিসেবে আমাদের সাধারণ নাগরিকরাও অসাধারণ অবদান রেখেছেন। আগামী প্রজন্মের মানুষ যখন এই সময়ের ইতিহাস জানবে, তখন এই আকস্মিক সংকট প্রতিরোধে আপনারা সবাই যে সাহসিকতায় লড়াই চালিয়েছেন, তা জেনে শ্রদ্ধায় কুর্নিশ জানাবে

 

৯. ভারতের জনসংখ্যার ঘনত্ব, সাংস্কৃতিক পরম্পরার বৈচিত্র এবং প্রাকৃতিক ও ভৌগোলিক সমস্যাসংকুলতায় কোভিড থেকে সুরক্ষার উপায় বের করা, আমাদের সকলের জন্যই অনেক বেশি চ্যালেঞ্জের বিষয় ছিল। চ্যালেঞ্জগুলি থাকা সত্ত্বেও, এই ভাইরাসের সংক্রমণ প্রতিরোধে, আমরা অনেকটাই সফল হয়েছি।

 

১০. এই ভয়ানক বিপর্যয় সত্ত্বেও আমরা, অনেক ক্ষেত্রে নিজেদের গতিবিধিকে সাফল্যের সঙ্গে এগিয়ে নিয়ে গেছি। এই অতিমারীর ফলে, আমাদের শিশু-কিশোর ও নবীন প্রজন্মের পড়াশোনা বিঘ্নিত হয়েছিল। কিন্তু আমাদের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান এবং শিক্ষক-শিক্ষিকাগণ দ্রুত নতুন প্রযুক্তি ব্যবহারের মাধ্যমে ছাত্রছাত্রীদের শিক্ষাপ্রক্রিয়া চালু করেছেন। বিহারের মতো ঘনবসতিপূর্ণ রাজ্য এবং জম্মু-কাশ্মীর ও লাদাখের মতো দুর্গম ও প্রতিকূল এলাকায় অবাধ, নিরপেক্ষ এবং শান্তিপূর্ণ নির্বাচন সম্পন্ন করানো আমাদের গণতন্ত্র এবং নির্বাচন কমিশনের প্রশংসনীয় সাফল্য। প্রযুক্তির সাহায্যে বিচার বিভাগ সুবিচার প্রদানের প্রক্রিয়া জারি রেখেছে। এইরকম সাফল্যের তালিকা অনেক দীর্ঘ।   

 

১১। আর্থিক গতিবিধি চালু করার জন্য, আন-লকিং এর প্রক্রিয়া সতর্কভাবে, ধাপে ধাপে কার্যকর হয়েছে। এই প্রক্রিয়া সুফলদায়ক হয়েছে এবং অর্থ-ব্যবস্থা আরেকবার শক্তিশালী হয়ে ওঠার সংকেত দেখাতে শুরু করেছে। সম্প্রতি জিএসটি-তে রেকর্ড বৃদ্ধি আর প্রত্যক্ষ বিদেশি বিনিয়োগের জন্য আকর্ষণীয় অর্থ-ব্যবস্থা হিসেবে ভারতের সাফল্য, আমাদের দ্রুত অর্থনৈতিক পুনরুদ্ধারপ্রক্রিয়ার সূচক। সরকার মাঝারি এবং ক্ষুদ্র শিল্পকে উৎসাহ জোগাচ্ছে; সহজ শর্তে ঋণদান করে শিল্পোদ্যোগকে উৎসাহ জুগিয়েছে এবং বাণিজ্যে উদ্ভাবনকে প্রেরণা জোগানোর জন্য অনেক পদক্ষেপ নিয়েছে।

 

আমার প্রিয় দেশবাসীগণ,

 

১২। গত বছরের প্রতিকূল পরিস্থিতিগুলি আমাদের সেই সংস্কারগুলি জাগিয়ে তুলেছে যেগুলি আমাদের হৃদয়ে সর্বদাই ছিল। সময়ের চাহিদা অনুসারে, আমাদের দেশের মানুষ প্রত্যেক ক্ষেত্রে, আমাদের ক্ষমতাগুলি প্রদর্শন করেছেন এবং নিজের আগে, অন্যদের কল্যাণকে অগ্রাধিকার দিয়েছেনসমস্ত মানবতার জন্য সহানুভূতি, সেবা এবং বন্ধুত্বের এই গভীর ভাবনাগুলিই হাজার হাজার বছর ধরে আমাদের ঐক্যবদ্ধ রেখেছে। আমরা ভারতবাসী, মানবতার স্বার্থে বাঁচি আর মরিও। এই ভারতীয় আদর্শকে মহান হিন্দি কবি মৈথিলী শরণ গুপ্ত এই শব্দগুলির মাধ্যমে বলেছেনঃ

‘সর্বদাই উদারতার সজীব কীর্তির কূজন শোনা যায়;

আর সেই উদারতাই, সমস্ত সৃষ্টির পূজা পায়

যে অখণ্ড আত্মীয়তার ভাব, আছে অসীম বিশ্বজুড়ে;

সে-ই মানুষ, যে মানুষের জন্য প্রাণত্যাগ করে’

আমার বিশ্বাস, যে কোনও মানুষের জন্য অসীম প্রেম এবং আত্মবলিদানের এই ভাবনা আমাদের দেশকে উন্নতির শিখরে নিয়ে যাবে।

 

১৩. আমার মতে, ২০২০ সালটিকে আমাদের শেখার বছর হিসেবে দেখতে হবে। গত বছর প্রকৃতি খুব কম সময়ের মধ্যেই নিজের স্বচ্ছ আর নির্মল স্বরূপ ফিরে পেয়েছিল। এ ধরনের নির্মল ও পরিচ্ছন্ন প্রাকৃতিক সৌন্দর্য, অনেক দিন পরে দেখার সুযোগ পাওয়া গেছে প্রকৃতি এইভাবে স্পষ্ট বার্তা দিয়েছে যে, ছোট ছোট প্রচেষ্টা শুধুমাত্র বাধ্য হয়ে গ্রহণ করার বিষয় নয়, বরং এগুলি বড় আকারের প্রয়াসের পরিপূরক। আমার বিশ্বাস, ভবিষ্যতে এ ধরনের অতিমারির ঝুঁকি হ্রাসের লক্ষ্যে বিশ্বজুড়ে জলবায়ু পরিবর্তন প্রতিরোধের  বিষয়টিকে অগ্রাধিকার দেওয়া হবে।

 

১৪. প্রিয় দেশবাসী, সংকটকে সুযোগে পরিবর্তন করে প্রধানমন্ত্রী ‘আত্ম-নির্ভর ভারত অভিযান’-এর ডাক দিয়েছেন আমাদের প্রাণবন্ত গণতন্ত্র, আমাদের পরিশ্রমী ও প্রতিভাবান দেশবাসী, বিশেষ করে আমাদের যুবসমাজ ‘আত্মনির্ভর’ ভারত নির্মাণের ক্ষেত্রে আমাদের প্রচেষ্টাকে শক্তি প্রদান করছে| পণ্য ও পরিষেবার ক্ষেত্রে আমাদের দেশবাসীর চাহিদা পূরণ করার ক্ষেত্রে দেশীয় প্রচেষ্টা এবং এই প্রয়াসে আধুনিক প্রযুক্তির প্রয়োগের মাধ্যমেও এই অভিযান শক্তিশালী হচ্ছে এই অভিযানের মাধ্যমে অতিক্ষুদ্র, ক্ষুদ্র ও মাঝারি উদ্যোগ গুলিকে এগিয়ে নিয়ে গিয়ে এবং স্টার্ট-আপ ব্যবস্থাকে আরও বেশি মজবুত করে আর্থিক বিকাশের সঙ্গে সঙ্গে কর্মসংস্থান সৃষ্টি করার ক্ষেত্রেও পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয়েছে আত্ম-নির্ভর ভারত অভিযান একটা গণ-আন্দোলনের রূপ নিয়েছে।

 

১৫. এই অভিযান আমাদের সেইসব জাতীয় সংকল্পগুলোকে সম্পূর্ণ করার ক্ষেত্রেও সহায়ক হবে, যেগুলোকে আমরা নতুন ভারতের পরিকল্পনার মাধ্যমে দেশের স্বাধীনতার ৭৫তম বর্ষ অর্থাৎ ২০২২-এর মধ্যে পূরণ করার লক্ষ্য নির্ধারণ করেছি প্রতিটি গৃহহীন পরিবারকে প্রাথমিক সমস্ত সুবিধাযুক্ত পাকা ঘর তৈরি করে দেওয়া থেকে শুরু করে কৃষকদের আয়কে দ্বিগুণ করা পর্যন্ত নানা গুরুত্বপূর্ণ লক্ষ্য বাস্তবায়নের মাধুমে এগিয়ে যেতে যেতে আমরা স্বাধীনতার ৭৫তম জয়ন্তীর ঐতিহাসিক মুহূর্তে গিয়ে পৌঁছাবো। নতুন ভারতীয় সমাজ নির্মাণের ক্ষেত্রে আমরা শিক্ষা, স্বাস্থ্য, পুষ্টি, পিছিয়ে পড়া মানুষের উন্নয়ন আর নারী কল্যাণের উপরই বিশেষ জোর দিচ্ছি।

 

১৬. আমাদের বিশ্বাস, প্রতিকূল পরিস্থিতি থেকে আমরা কিছু না কিছু শিখতে পারি সেই প্রতিকূলতার মুখোমুখি হয়ে আমাদের শক্তি আর আত্মবিশ্বাস বাড়ে এই আত্মবিশ্বাসের সঙ্গে ভারত নানা ক্ষেত্রে ব্যাপক পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে পূর্ণ গতিতে এগিয়ে চলা আমাদের আর্থিক সংস্কারের পরিপূরক হিসেবে নতুন আইন তৈরি করে কৃষি ও শ্রমের ক্ষেত্রে এমন সব সংস্কার করা হয়েছে, যেগুলি দীর্ঘদিন ধরে প্রত্যাশিত ছিল। এইসব সংস্কারের সূচনা লগ্নে উদ্বেগ তৈরি হতে পারে কিন্তু এটা নিয়ে কোনো সন্দেহ নেই যে, আমাদের কৃষকদের ভালোর জন্য সরকার সম্পূর্ণ রূপে সমর্পিত।

 

১৭. সংস্কারগুলি নিয়ে যদি বলি,  শিক্ষার ক্ষেত্রে হওয়া ব্যাপক সংস্কার উল্লেখযোগ্য এই সংস্কার দীর্ঘদিন ধরে প্রত্যাশিত ছিল এটাও কৃষি এবং শ্রমের সংস্কারের মতোই সমান গুরুত্বপূর্ণ। কিন্তু এটা আরও অনেক বেশি করে মানুষের জীবনকে সরাসরি প্রভাবিত করবে ২০২০ সালে ঘোষিত নতুন ‘জাতীয় শিক্ষা নীতি’-তে প্রযুক্তির পাশাপাশি ঐতিহ্য এবং পরম্পরাকেও গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে এর মাধ্যমে এমন এক নতুন ভারতের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করা হয়েছে, যা আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রেও জ্ঞান-কেন্দ্র হিসেবে উঠে আসার আকাঙ্ক্ষা রাখে নতুন শিক্ষা পদ্ধতি শিক্ষার্থীদের সুপ্ত প্রতিভাকে বিকশিত করবে এবং তাঁদেরকে জীবনের প্রতিকূলতার মুখোমুখি হওয়ার ক্ষেত্রে সক্ষম করবে।

 

১৮. প্রতিটি ক্ষেত্রে সংকল্প আর দৃঢ়তার সঙ্গে এগিয়ে যাওয়ার সু-পরিণাম সামনে আসছে করোনা সংকটে প্রায় এক বছরের অপ্রত্যাশিত অগ্নি-পরীক্ষা সত্বেও ভারত হতাশ হয়নি, বরং আত্মবিশ্বাসে ভরপুর হয়ে উঠে এসেছে। আমাদের দেশে আর্থিক মন্দা খুব অল্প সময়ের জন্যই ছিল এখন আমাদের অর্থব্যবস্থা পুনরায় গতিশীল হয়ে গেছে আত্ম-নির্ভর ভারত করোনা ভাইরাস থেকে রক্ষার জন্য নিজেদের টিকা তৈরি করে নিয়েছে। এখন বিশাল আয়োজনের সঙ্গে টিকাকরণের যে অভিযান চলছে, সেটা ইতিহাসে এ ধরনের সবচেয়ে বড় অভিযান  হয়ে উঠবে এই প্রকল্পকে সফল করার জন্য প্রশাসন এবং স্বাস্থ্য পরিষেবার সঙ্গে যুক্ত সবাই অত্যন্ত তৎপরতার সঙ্গে কাজ করে চলেছেন আমি দেশবাসীকে অনুরোধ করছি, আপনারা সবাই নির্দেশাবলী ও পদ্ধতি মেনে নিজেদের স্বাস্থ্যের স্বার্থে এই টিকারূপী সঞ্জীবনীর সুবিধে অবশ্যই গ্রহণ করুন এবং এই টিকা নিন। আপনার সুস্বাস্থ্যই আপনার উন্নতির রাস্তা খুলে দেয়

 

১৯. আজ ভারতকে সঠিক অর্থেই ‘ফার্মেসি অফ দ্য ওয়ার্ল্ড’ বলা হচ্ছে। কারণ আমরা অনেক দেশের মানুষের কষ্ট কম করার জন্য এবং অতিমারির উপর নিয়ন্ত্রণ পাওয়ার জন্য ওষুধ এবং স্বাস্থ্য পরিষেবার অন্যান্য উপকরণ বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্তে পৌঁছে দিচ্ছি এখন আমরা অন্য দেশগুলোকে টিকাও সরবরাহ করছি।

 

২০. প্রিয় দেশবাসীগণ, গত বছর বিভিন্ন ক্ষেত্রে অনেক ধরনের প্রতিকূলতা আমাদের সামনে এসেছে আমাদের সীমান্তে আগ্রাসনের মুখোমুখি হতে হয়েছে। কিন্তু আমাদের বীর সৈনিকরা সেই প্রচেষ্টা বিফল করে দিয়েছে। এটা করতে গিয়ে আমাদের ২০ জন জওয়ান শহিদ হয়েছেন। গোটা দেশ সেই অমর জওয়ানদের প্রতি কৃতজ্ঞ আমরা যদিও শান্তির প্রতি দায়বদ্ধতায় অটল, তবু আমাদের স্থলসেনা-বায়ুসেনা-নৌসেনা আমাদের সুরক্ষার বিরুদ্ধে হওয়া যেকোনো দুঃসাহসিক কাজকে বিফল করার জন্য সম্পূর্ণ প্রস্তুতির সঙ্গে সদা সতর্ক। যে কোন পরিস্থিতিতেই আমাদের জাতীয় স্বার্থকে রক্ষা করার জন্য আমরা সম্পূর্ণ রূপে সক্ষম। আমাদের সুদৃঢ় ও নীতিগত অবস্থান সম্পর্কে আন্তর্জাতিক মহল বিশেষভাবে অবগত

 

২১. ভারত অগ্রগতির পথে এগিয়ে যেতে যেতে বিশ্বের দরবারে নিজের যোগ্য স্থান তৈরি করে নিচ্ছে গত কয়েক বছরে ভারতের প্রভাব আরও অনেক বেশি বিস্তারীত হয়ে ইতিমধ্যেই বিশ্বের আরও বিস্তৃত ক্ষেত্র শামিল হয়েছে। যে অসাধারণ সমর্থন পেয়ে এই বছর ভারত সুরক্ষা পরিষদের অস্থায়ী সদস্য হিসেবে প্রবেশ করেছে, তা এই ক্রমবর্ধমান প্রভাবেরই সূচক আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রে রাষ্ট্রনেতাদের সঙ্গে আমাদের সম্পর্কের গভীরতা অনেক গুণ বৃদ্ধি পেয়েছে। আমাদের প্রাণবন্ত গণতন্ত্রের শক্তিতে ভারত এক দায়িত্ববান ও বিশ্বাসী দেশ হিসেবে সম্মান অর্জন করেছে।

 

২২. এই প্রেক্ষাপটে আমাদের সকলের ভালোর জন্য, আমরা যেন  সবসময় আমাদের সংবিধানে নিহিত আদর্শকে মূল মন্ত্র হিসেবে মনে রাখি! আমি একথা আগেও বলেছি, আর আজ আমি আবারও সেই কথা পুনরুচ্চারিত করছি, জাতির জনক মহাত্মা গান্ধীর জীবন ও চিন্তাধারা নিয়ে চর্চা করা আমাদের দিন যাপনের একটা অংশ হওয়া উচিত আমাদের চেষ্টা করতে হবে যাতে সমাজের একজন সদস্যও দুঃখী বা অভাবগ্রস্ত না থাকেন সাম্যই হচ্ছে আমাদের গণতন্ত্রের মহান নীতিবাক্য। সামাজিক সাম্যের আদর্শ প্রত্যেক ব্যক্তির মর্যাদাকে সুনিশ্চিত করে। যার মধ্যে আমাদের গ্রামবাসী, মহিলা, তপশিলি জাতি ও তপশিলি উপজাতি সহ অপেক্ষাকৃত পিছিয়ে পড়া মানুষ, দিব্যাঙ্গ-জন, বৃদ্ধরা সবাই আছেন। আর্থিক সাম্যের আদর্শ, সবার জন্য সমান সুযোগ এবং পিছিয়ে পড়া মানুষদের সহায়তা সুনিশ্চিত করার ক্ষেত্রে আমাদের সাংবিধানিক দায়িত্বকে সুস্পষ্ট করে সহানুভূতির ভাবনা পরোপকারের কাজের মাধ্যমেই আরও অধিক মজবুত হয়ে থাকে পারস্পরিক ভ্রাতৃত্ববোধের নৈতিক আদর্শই আমাদের পথ-প্রদর্শক হিসেবে আমাদের ভবিষ্যতের পথকে সুদৃঢ় করবে আমাদের সবাইকে সাংবিধানিক নৈতিকতার এই পথে সবসময় চলতে হবে, বাবাসাহেব ডক্টর ভীমরাও আম্বেদকর সংবিধানের অবয়ব তৈরির সময় ১৯৪৮ সালের ৪ নভেম্বর সংবিধান সভায় নিজের ভাষণে একথা উল্লেখ করেছিলেন তিনি স্পষ্ট উল্লেখ করে বলেছিলেন, ‘সাংবিধানিক নৈতিকতা’র অর্থ হচ্ছে, সংবিধানে নিহিত মূল্যবোধকে সবার উপরে স্থান দেওয়া।

 

২৩. আমার প্রিয় দেশবাসী, আমাদের গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার এই উৎসব উদযাপনের মুহূর্তে আমার মনোযোগ বিদেশে থাকা আমাদের ভাই-বোনেদের দিকেও যাচ্ছে প্রবাসী ভারতীয়রা আমাদের দেশের গৌরব অন্য দেশে থাকা ভারতীয়রা বিভিন্ন ক্ষেত্রে সাফল্য অর্জন করেছেন তাঁদের মধ্যে কিছু মানুষ রাজনৈতিক নেতৃত্বের উচ্চপদে পর্যন্ত পৌঁছেছেন। অনেকে বিজ্ঞান, সংস্কৃতি, শিক্ষা, সমাজসেবা ও বাণিজ্যের ক্ষেত্রে তাঁদের মূল্যবান অবদান রাখছেন আপনারা, প্রবাসী ভারতীয়রা আপনাদের বর্তমান কর্মভূমিরও গৌরব বৃদ্ধি করছেন আপনাদের সকলের পূর্বপুরুষদের ভূমি ভারত থেকে আমি আপনাদের সবাইকে গণতন্ত্র দিবসের আন্তরিক শুভকামনা জানাচ্ছি। আমাদের সামরিক বাহিনী, আধা-সামরিক বাহিনী আর পুলিশের জওয়ানরা প্রায় সময়েই নিজেদের প্রিয়জনদের কাছ থেকে দূরে উৎসব উদযাপন করে থাকেন সেইসব জওয়ানদের আমি বিশেষ ভাবে অভিনন্দন জানাচ্ছি।

 

২৪. আমি আরও একবার সমস্ত দেশবাসীকে সাধারণতন্ত্র দিবসের শুভকামনা জানাচ্ছি।

 

ধন্যবাদ

জয়হিন্দ! জয়হিন্দ! জয়হিন্দ!

***

 

 

CG/SB


(Release ID: 1692317) Visitor Counter : 627