প্রধানমন্ত্রীরদপ্তর

আইআইটি দিল্লি-র ৫১তম সমাবর্তনে বক্তব্য রেখেছেন প্রধানমন্ত্রী


গ্র্যাজুয়েটদের দেশের চাহিদা চিহ্নিত করে পরিবর্তনের সঙ্গে তাল মিলিয়ে চলার আহ্বান জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী

Posted On: 07 NOV 2020 2:19PM by PIB Kolkata
নতুন দিল্লি, ০৭ নভেম্বর, ২০২০
 
প্রধানমন্ত্রী শ্রী নরেন্দ্র মোদী আইআইটি থেকে সদ্য উত্তীর্ণ আই আই টি গ্র্যাজুয়েট ছাত্র ছাত্রীদের দেশের চাহিদাগুলি শনাক্ত করতে বলেছেন এবং পরিবর্তনের সঙ্গে তাল মিলিয়ে চলার আহ্বান জানিয়েছেন। তিনি আত্মনির্ভর ভারত অভিযানের প্রেক্ষিতে সাধারণ মানুষের চাহিদাগুলিকে চিহ্নিত করার  পরামর্শ দিয়েছেন। প্রধানমন্ত্রী আজ আইআইটি দিল্লি-র ৫১ তম বার্ষিক সমাবর্তন অনুষ্ঠানে  প্রধান অতিথি হিসেবে বক্তব্য রেখেছেন।     
 
এই সমাবর্তনে ২,০০০-এর বেশি আইআইটি ছাত্র ছাত্রীদের অভিনন্দন জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, দেশের যুব সম্প্রদায়, প্রযুক্তি বিশারদ এবং প্রযুক্তির মাধ্যমে নতুন নতুন উদ্যোগ গড়ে তুলতে যাঁরা উৎসাহী তাঁদের জন্য আত্মনির্ভর ভারত অভিযান বিরাট একটি সুযোগ এনে দিয়েছে। তিনি বলেছেন আজ প্রযুক্তি বিশারদদের উদ্ভাবন এবং বিভিন্ন ধারণার বাস্তবায়নের জন্য উপযুক্ত পরিবেশ গড়ে তোলা হয়েছে, এর ফলে তাঁরা সহজেই তাঁদের উৎপাদিত সামগ্রি বাজারজাত করতে পারবেন। তিনি বলেছেন, আজকের ভারত সহজে ব্যবসা করার বিষয়ে অঙ্গীকারবদ্ধ। যার মাধ্যমে ভারতের যুব সম্প্রদায় তাঁদের উদ্ভাবনের মাধ্যমে কোটি কোটি দেশবাসীর জীবনে পরিবর্তন নিয়ে আসবেন। “দেশ আপনাদেরকে সহজে ব্যবসা করার পরিবেশ দিচ্ছে,  যার মধ্য দিয়ে আপনারা এদেশের মানুষদের সহজ জীবনযাত্রা নিশ্চিত করবেন।” তিনি আরও ব্যাখ্যা করে জানিয়েছেন, প্রতিটি ক্ষেত্রে বর্তমানে বড় বড় সংস্কার বাস্তবায়িত হচ্ছে। উদ্ভাবন এবং নতুন উদ্যোগগুলির জন্য বিভিন্ন সুযোগের কথা তিনি তাঁর ভাষণে তুলে ধরেন যেগুলি সংস্কারের ফলেই সম্ভব হচ্ছে। 
 
প্রধানমন্ত্রী বলেছেন ‘আদার সার্ভিস প্রোভাইডার’ (ওএসপি) নীতি নির্দেশিকার সরলীকরণ করা হয়েছে এবং বিভিন্ন বিধিনিষেধ প্রত্যাহার করা হয়েছে। এর ফলে বিপিও শিল্প নানা বাধ্যবাধকতা থেকে মুক্তি পেয়েছে। তিনি বলেছেন, ব্যাঙ্ক গ্যারান্টির মতো বিভিন্ন শর্ত থেকে বিপিও শিল্প এখন মুক্ত। যার ফলে  প্রযুক্তি নির্ভর শিল্পে বাড়ি থেকে কাজ করা বা যে কোনো জায়গা থেকে কাজ করার মতো সুযোগ  তৈরি হয়েছে। দেশের তথ্য প্রযুক্তি ক্ষেত্র আন্তর্জাতিক স্তরে প্রতিযোগিতার সঙ্গে তাল মিলিয়ে চলতে পারছে, যার মাধ্যমে যুব সম্প্রদায় নানা ধরণের  সুযোগ পাচ্ছেন।  
 
প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, আজ ভারতের কর্পোরেট করের হার বিশ্বের অনেক দেশের তুলনায় কম। দেশে ৫০,০০০ বেশি নতুন উদ্যোগ বা স্টার্টআপ শুরু হয়েছে। স্টার্টআপ-কে উৎসাহিত করার জন্য সরকারের বিভিন্ন উদ্যোগের কথা উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, এর ফলে গত ৫ বছরে মেধাসত্ত্বের আবেদন চার গুণ বৃদ্ধি পেয়েছে এবং ট্রেড মার্কের জন্য নিবন্ধীকরণ পাঁচ গুণ বেড়ে  গেছে। শ্রী মোদী বলেছেন, ২০টির বেশি ভারতীয় ‘ইউনিকর্ণ’  গড়ে  উঠেছে এবং আগামী ১-২ বছরের মধ্যে এই সংখ্যা আরও বৃদ্ধি পাবে।  
 
প্রধানমন্ত্রী এই প্রসঙ্গে নতুন উদ্যোগের তহবিল যোগানোর  বিভিন্ন প্রয়াসের কথা উল্লেখ করেছেন। তিনি বলেছেন, ১০,০০০ কোটি টাকার একটি তহবিল গড়ে তোলা হয়েছে, যেখান থেকে এইসব নতুন উদ্যোগী সংস্থাগুলিকে সাহায্য করা হবে। এছাড়াও এই সমস্ত প্রতিষ্ঠানকে তিন বছরের জন্য কর ছাড়, শংসাপত্র প্রদান সহ বিভিন্ন সুবিধে দেওয়া হচ্ছে।
 
প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, আজ জাতীয় পরিকাঠামো ব্যবস্থার আওতায় ১ লক্ষ কোটি টাকা বিনিয়োগের পরিকল্পনা করা হয়েছে। দেশের বর্তমান ও ভবিষ্যতের চাহিদার কথা বিবেচনা করে অত্যাধুনিক পরিকাঠামো গড়ে তোলা হচ্ছে। প্রতিটি ক্ষেত্রে দেশ সর্বোচ্চ সম্ভাবনাগুলিকে কাজে লাগানোর জন্য উদ্যোগী হয়েছে। 
 
প্রধানমন্ত্রী ছাত্র ছাত্রীদের তাঁদের কর্মস্থলে চারটি মন্ত্র মেনে চলার পরামর্শ দিয়েছেন। এগুলি হলো :
১) গুণমানের সঙ্গে কখনও আপোষ করা যাবে  না। 
২) উদ্ভাবনমূলক কাজকর্ম প্রচুর পরিমাণে করতে হবে যাতে এগুলির সহজলভ্যতা নিশ্চিত করা যায়।
৩) বাজারে দীর্ঘ মেয়াদী বিশ্বাস অর্জনের জন্য উদ্যোগী হতে হবে। 
৪) জীবনের অনিশ্চয়তাকে মনে রেখে যে কোনো পরিবর্তনের সঙ্গে খাপ খাইয়ে চলতে হবে।
 
শ্রী মোদী বলেছেন, এই মন্ত্রগুলি অনুসরণ করলে যে কোনো ব্যক্তি নজরকাড়া পরিচিতি গড়ে তুলতে পারবেন,  একই সঙ্গে ব্র্যান্ড ইন্ডিয়ার ভাবমূর্তি উজ্জ্বল হবে কারণ ভারতের সব থেকে বড় ব্র্যান্ড অ্যাম্বাসেডর হলেন আমাদের ছাত্র ছাত্রীরা। দেশে উৎপাদিত পণ্যের আন্তর্জাতিক স্বীকৃতির জন্য ছাত্র ছাত্রীদের সচেষ্ট হতে তিনি পরামর্শ দিয়েছেন। এর মাধ্যমে দেশের বিভিন্ন উদ্যোগ ত্বরান্বিত হবে। 
 
প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, কোভিড পরবর্তী বিশ্বের পরিস্থিতি যথেষ্ট আলাদা হবে। প্রযুক্তি এক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে। আগে কখনো ভার্চুয়াল বাস্তবতার বিষয়ে ভাবনা চিন্তা করা হতো না। কিন্তু এখন এটিই আরও বেশি করে কার্যকর হয়ে উঠছে। প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, বর্তমান ছাত্র ছাত্রীরা নতুন নতুন বিষয়ে জানবার অনেক সুযোগ পাচ্ছেন। এর ফলে তারা তাদের কর্মস্থলে বাড়তি সুবিধে পাবে। তিনি তাদের এই সুযোগগুলির সদ্ব্যবহারের আহ্বান জানিয়েছেন। কোভিড-১৯ বিশ্বায়নের গুরুত্ব যেমন বুঝিয়েছে, একই সঙ্গে আত্মনির্ভরতার প্রয়োজনও উপলব্ধি করিয়েছে। 
 
প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, সম্প্রতি দেশ দেখেছে প্রশাসনিক কাজে প্রযুক্তির গুরুত্ব কতটা। প্রযুক্তির মাধ্যমেই সমাজের দরিদ্রতম মানুষদের কাছে পৌঁছানো যাচ্ছে। শৌচালয় নির্মাণ, রান্নার গ্যাসের সংযোগ ইত্যাদির মতো প্রকল্প বাস্তবায়নে প্রযুক্তি ব্যবহার করা হচ্ছে। দেশ ডিজিটাল পদ্ধতিতে বিভিন্ন পরিষেবা প্রদানের কাজ দ্রুতহারে করছে। এর ফলে সাধারণ মানুষের জীবনযাত্রা সহজ হচ্ছে। প্রযুক্তি যে কোনো প্রকল্পের সুফল শেষ পর্যন্ত পৌঁছে দিতে পারছে এবং এর ফলে দুর্নীতির সুযোগ কমে যাচ্ছে। ডিজিটাল পদ্ধতিতে লেনদেনের কথা উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, বিশ্বের অনেক দেশের চাইতে ভারত এক্ষেত্রে অনেকটাই এগিয়ে আছে। উন্নত দেশগুলিও ইউপিআই-এর মতো ভারতীয় প্ল্যাটফর্ম ব্যবহার করতে চাইছে।   
 
প্রধানমন্ত্রী এই প্রসঙ্গে স্বামীত্ব যোজনায় প্রযুক্তির বিপুল ব্যবহারের কথা উল্লেখ করেছেন। সম্প্রতি শুরু হওয়া এই যোজনার মাধ্যমে প্রথমবারের মতো বাড়িঘর এবং জমিজমার মানচিত্র করা হচ্ছে। তিনি  বলেছেন, এই কাজ আগে হাতে-কলমে করা হতো আর তার ফলে বিভিন্ন দ্বন্দ্ব এবং বিতর্ক তৈরি হওয়াটা স্বাভাবিক ছিল। আজ ড্রোন প্রযুক্তি ব্যবহার করে মানচিত্র তৈরির কাজ করা হচ্ছে। গ্রামবাসীরা এই কাজে সম্পূর্ণভাবে সন্তুষ্ট। এর মাধ্যমে প্রমাণিত , ভারতের সাধারণ নাগরিকরা প্রযুক্তির প্রতি কতটা আস্থাবান। প্রধানমন্ত্রী আরও বলেছেন, বিপর্যয় পরবর্তী ব্যবস্থাপনা, ভূগর্ভস্থ জলের পরিমাণ বজায় রাখা, টেলি মেডিসিন প্রযুক্তি, রিমোট সার্জারি, বিগ ডেটার মাধ্যমে মূল্যায়ন ইত্যাদির জন্য প্রযুক্তিকেই ব্যবহার করা হয়।    
 
ছাত্র ছাত্রীরা এত কম বয়সে এরকম কঠিন পরীক্ষায় পাশ করায় তিনি তাদের ব্যতিক্রমী ক্ষমতার প্রশংসা করেছেন। একই সঙ্গে তাদের ক্ষমতার ব্যবহারের জন্য তিনি ছাত্র ছাত্রীদের নম্র ও বিনয়ী হওয়ার পরামর্শ দিয়েছেন। নম্র হওয়ার  মানে তিনি এটা বোঝাচ্ছেন না, যে কেউ নিজের ব্যক্তিসত্ত্বাকে বিসর্জন দেবেন,  আবার দলগত কাজে নিজেকে যুক্ত করার ক্ষেত্রেও দ্বিধান্বিত হবে না। বিনয়ী অর্থে তিনি বোঝাতে চেয়েছেন নিজের সাফল্যে সবাই গর্বিত হবে ঠিকই কিন্তু মাটির কাছাকাছি তাকে থাকতে হবে।  
 
ছাত্র ছাত্রী, তাদের অভিভাবক অভিভাবিকা, পরামর্শদাতা এবং শিক্ষক শিক্ষিকাদের এই সমাবর্তনে প্রধানমন্ত্রী শুভেচ্ছা জানিয়েছেন। আইআইটি দিল্লি-র হীরক জয়ন্তী উদযাপনেও তিনি অভিনন্দন জানান এবং এই প্রতিষ্ঠানের সাফল্য কামনা করেছেন।
 
***
 
 
 
CG/CB/SKD


(Release ID: 1671044) Visitor Counter : 217