প্রধানমন্ত্রীরদপ্তর

বিহারে বিভিন্ন পরিকাঠামো প্রকল্পের উদ্বোধন অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রীর ভাষণ

Posted On: 21 SEP 2020 3:53PM by PIB Kolkata

নয়াদিল্লি, ২১ সেপ্টেম্বর, ২০২০

 

 

বিহারের রাজ্যপাল শ্রী ফাগু চৌহানজি, বিহারের মুখ্যমন্ত্রী শ্রী নীতিশ কুমারজি, কেন্দ্রীয় মন্ত্রিসভায় আমার সহযোগী শ্রী পীযূষ গোয়েলজি, শ্রী রবিশঙ্কর প্রসাদজি, শ্রী বি কে সিং-জি, শ্রী আর কে সিং-জি, বিহারের উপ-মুখ্যমন্ত্রী শ্রী সুশীল কুমার মোদীজি, অন্যান্য মন্ত্রীগণ, সাংসদ ও বিধায়কগণ এবং আমার প্রিয় ভাই ও বোনেরা।

 

বন্ধুগণ আজ বিহারের উন্নয়ন যাত্রায় একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ দিন। এই কিছুক্ষণ আগেই বিহারে যোগাযোগ ব্যবস্থা উন্নয়নের স্বার্থে নয়টি প্রকল্পের শিলান্যাস হয়েছে। এই প্রকল্পগুলির মধ্যে রয়েছে মহাসড়কগুলিকে চারলেন এবং ছয়লেনে পরিবর্তিত করা এবং নদীগুলির ওপর তিনটি বড় সেতু নির্মাণের কাজ। এই প্রকল্পগুলির জন্য আমি বিহারের জনগণকে অনেক অনেক শুভেচ্ছা জানাই।

 

বন্ধুগণ, আজকের দিনটি বিহারের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ তো বটেই, গোটা দেশের জন্যও অনেক বড় দিন। যুব ভারতের জন্যও অনেক বড় দিন। আজ ভারত তার গ্রামগুলিকে আত্মনির্ভর ভারতের গুরুত্বপূর্ণ ভিত্তি করে তোলার জন্য একটি বড় পদক্ষেপ নিচ্ছে। আর আমি অত্যন্ত আনন্দের সঙ্গে বলছি, গোটা দেশের জন্য এই কর্মসূচির সূত্রপাত আজ এই বিহারের মাটি থেকে হচ্ছে। এই প্রকল্পের মাধ্যমে আগামী এক হাজার দিনের মধ্যে দেশের ৬ লক্ষ গ্রামকে অপটিক্যাল ফাইবারের মাধ্যমে যুক্ত করা হবে। আমার দৃঢ় বিশ্বাস যে নীতিশজির সুশাসনে, দৃঢ় নিশ্চয়তার সঙ্গে এগিয়ে বিহারে এই প্রকল্পের কাজ দ্রুতগতিতে সম্পন্ন হবে।

 

বন্ধুগণ, ভারতের গ্রামে গ্রামে ইন্টারনেটের ব্যবহারকারীর সংখ্যা যে কখনও শহরের ইন্টারনেট ব্যবহারকারীর সংখ্যা থেকে বেশি হয়ে যাবে, এটা কয়েক বছর আগেও কল্পনা করা যেত না। গ্রামের মহিলা, কৃষক এবং গ্রামের যুবকরাও এত সহজে যে ইন্টারনেট ব্যবহার করতে শুরু করবে, এটা অনেকে ভাবতেই পারতেন না। সেজন্যে গোড়ার দিকে অনেকেই এ ব্যাপারে সন্দেহ প্রকাশ করেছেন। কিন্তু এখন পরিস্থিতি অনেক বদলে গেছে। আজ ভারত ডিজিটাল লেনদেনের ক্ষেত্রে বিশ্বের সর্বাধিক অগ্রগণ্য দেশগুলির অন্যতম। গত আগস্ট মাসের পরিসংখ্যান যদি দেখেন, তাহলে সেই একমাসে প্রায় ৩ লক্ষ কোটি টাকা লেনদেন ইউপিআই-এর মাধ্যমে হয়েছে। অর্থাৎ, মোবাইল ফোনের মাধ্যমে হয়েছে। এই করোনার সঙ্কট সময়ে ‘ডিজিটাল ভারত অভিযান’ দেশের সাধারণ মানুষকে অনেক সাহায্য করেছে।

 

বন্ধুগণ, ইন্টারনেটের ব্যবহার বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে এখন এটাও জরুরি যে দেশের গ্রামগুলিতে ভালো মানের দ্রুতগতিসম্পন্ন ইন্টারনেট দরকার। সরকারের প্রচেষ্টার ফলে দেশের প্রায় ১ লক্ষ ৫০ হাজার পঞ্চায়েতে অপটিক্যাল ফাইবার আগেই পৌঁছে গিয়েছিল। শুধু তাই নয়, বিগত ছয় বছরে সারা দেশে ৩ লক্ষেরও বেশি কমন সার্ভিস সেন্টার অনলাইনে যুক্ত করা হয়েছে। এখন এই কানেক্টিভিটি দেশের প্রত্যেক গ্রামে পৌঁছে দেওয়ার লক্ষ্য নিয়ে দেশ এগিয়ে চলেছে। যখন গ্রামে গ্রামে দ্রুতগতিসম্পন্ন ইন্টারনেট পৌঁছবে, তখন গ্রামগুলিতে পড়াশোনা সহজ হবে। গ্রামের শিশুরা, আমাদের গ্রামীণ যুবক-যুবতীরাও এক ক্লিকে বিশ্বের যে কোনও গ্রন্থ পড়তে পারবেন, যে কোনও প্রযুক্তি সহজভাবে ব্যবহার করতে পারবেন। শুধু তাই নয়, টেলি-মেডিসিনের মাধ্যমে এখন দূর-দুরান্তের গ্রামেও সুলভে গরীবরা বাড়িতে বসেই কার্যকরী চিকিৎসা পেতে পারবেন।

 

আপনারা জানেন, আগে রেলযাত্রার জন্য আসন সংরক্ষণ করতে হলে গ্রাম থেকে শহরে যেতে হত। লাইনে দাঁড়াতে হত। আর রেলে যেতে হলে এটা করতেই হত। এখন গ্রামে গ্রামে কমন সার্ভিস সেন্টার পৌঁছে যাওয়ার ফলে গ্রামের মানুষ নিজের গ্রামে বসেই রেলের আসন সংরক্ষণ করাতে পারেন। কোথাও যেতে হলে সহজেই আপনার আসন সংরক্ষণ করাতে পারবেন, কারণ আপনার কাছে এখন ইন্টারনেট পরিষেবা রয়েছে। এর ফলে সব থেকে বেশি লাভবান হবেন আমাদের কৃষকরা। কৃষকদের চাষবাসের সঙ্গে যুক্ত প্রতিটি আধুনিক প্রযুক্তি নতুন ফসল, নতুন বীজ, নতুন চাষের পদ্ধতি এবং পরিবর্তিত ঋতুর সম্পর্কে তথ্য, 'রিয়েল টাইম' তথ্য পাওয়া সম্ভব হবে। শুধু তাই নয়, নিজেদের উৎপাদিত ফসলের বিক্রির জন্য গোটা দেশের এবং বিশ্বের ক্রেতাদের কাছে পৌঁছনো অনেক সহজ হবে। একদিক থেকে দেখতে গেলে এখন শহরের মতো সমস্ত পরিষেবা গ্রামের মানুষেরা যাতে ঘরে বসেই পেতে পারেন তার জন্য প্রয়োজনীয় পরিকাঠামো গড়ে তোলা হচ্ছে।

 

বন্ধুগণ, ইতিহাস সাক্ষী যে সারা পৃথিবীতে সেই দেশগুলিই সবচেয়ে দ্রুত উন্নতি করেছে, যারা তাদের পরিকাঠামো ক্ষেত্রে গুরুত্ব দিয়ে বিনিয়োগ করেছে। কিন্তু ভারতে দশকের পর দশক এমন ছিল যে পরিকাঠামো ক্ষেত্রে কোনও বড় কিংবা ব্যাপক পরিবর্তন আনার প্রকল্পকে তেমন গুরুত্ব দেওয়া হয়নি। বিহার তো এক্ষেত্রে সবথেকে বড় ভুক্তভোগী। বন্ধুগণ, সবার আগে অটল বিহারী বাজেপেয়ীজির নেতৃত্বাধীন সরকারই পরিকাঠামো ক্ষেত্রে গুরুত্ব দিয়ে উন্নয়নকে রাজনীতির ওপরে স্থান দিয়েছিলেন। নীতিশজি তখন তাঁর সরকারের রেলমন্ত্রী ছিলেন। এই উন্নয়ন যাত্রার ক্ষেত্রে তাই তাঁর অভিজ্ঞতা অনেক বেশি। তিনি শাসনকে সুশাসনে পরিবর্তনের সেই প্রচেষ্টাকে অত্যন্ত কাছ থেকে দেখেছেন।

 

বন্ধুগণ, পরিকাঠামো সংক্রান্ত প্রকল্পগুলি নিয়ে এখন যে মাত্রায় কাজ হচ্ছে, যে গতিতে কাজ হচ্ছে, তা অভূতপূর্ব। ২০১৪ সালের তুলনায় আজ প্রতিদিন দ্বিগুণের থেকেও বেশি গতিতে মহাসড়ক নির্মাণের কাজ হচ্ছে। মহাসড়ক নির্মাণের খরচও ২০১৪-র আগের তুলনায় প্রায় পাঁচগুণ বেড়েছে। আগামী চার বছরে পরিকাঠামো ক্ষেত্রে ১১০ লক্ষ কোটি টাকারও বেশি খরচ করার লক্ষ্য রাখা হয়েছে। এই ক্ষেত্রেও ১৯ লক্ষ কোটি টাকার বেশি প্রকল্প শুধু মহাসড়কগুলির উন্নয়নে খরচ করা হবে।

 

বন্ধুগণ, সড়কপথ এবং যোগাযোগ ব্যবস্থা উন্নয়নের সঙ্গে জড়িত পরিকাঠামো উন্নয়নকে বিস্তারিত করার জন্য এই প্রচেষ্টাগুলির মাধ্যমে বিহার অত্যন্ত লাভবান হচ্ছে। আমার বিশেষ লক্ষ্য, পূর্ব ভারতের উন্নয়ন ২০১৫ সালে ঘোষিত 'পিএম প্যাকেজে'র মাধ্যমে ৩ হাজার কিলোমিটারেরও বেশি জাতীয় মহাসড়ক প্রকল্প ঘোষণা করা হয়েছিল। ভারতমালা প্রকল্পের মাধ্যমেও প্রায় ৬৫০ কিলোমিটার জাতীয় মহাসড়ক নির্মাণ করা হয়েছে। আজ বিহারে জাতীয় মহাসড়ক গ্রিডকে গতি প্রদান করা হচ্ছে। পূর্ব এবং পশ্চিম বিহারকে যুক্ত করার জন্য চারলেন বিশিষ্ট পাঁচটি মহাসড়ক প্রকল্প এবং উত্তর ভারতকে দক্ষিণ ভারতের সঙ্গে যুক্ত করছে এরকম ছয়টি প্রকল্পের কাজ চলছে। আজ যে মহাসড়কগুলি প্রশস্তিকরণ প্রকল্পের শিলান্যাস করা হল সেগুলি বিহারের সমস্ত বড় শহরগুলির মধ্যে সড়ক যোগাযোগ আরও শক্তিশালী করবে।

 

বন্ধুগণ, বিহারের যোগাযোগ ব্যবস্থার সব থেকে বড় বাধা হল বড় বড় নদীগুলি। সেজন্য যখন 'পিএম প্যাকেজ' ঘোষণা করা হয়েছিল, তখন সেতু নির্মাণকে বিশেষ গুরুত্ব দেওয়া হয়েছিল। 'পিএম প্যাকেজ'-এর মাধ্যমে শুধু গঙ্গাজির ওপর মোট ১৭টি সেতু নির্মাণের কাজ শুরু হয়েছিল। এগুলি সম্পর্কে একটু আগেই আমাদের সুশীলজি বিস্তারিতভাবে বলেছেন। এই ১৭টির মধ্যে অধিকাংশই ইতিমধ্যে বাস্তবায়িত হয়ে গেছে। তেমনই, গন্ডক ও কোসী নদীর ওপরও বেশ কিছু সেতু নির্মাণের কাজ চলছে। এই পর্যায়ে আজ চারলেন বিশিষ্ট মহাসড়ক এবং তিনটি নতুন সেতুর শিলান্যাস হল। এগুলির মধ্যে দুটি সেতু গঙ্গানদীর ওপর আরেকটি কোসী নদীর ওপর নির্মিত হবে। এগুলি নির্মিত হলে গঙ্গা ও কোসী নদীর ওপর চারলেন বিশিষ্ট সেতুর ক্ষমতাও আরও বৃদ্ধি পাবে।

 

বন্ধুগণ, বিহারের লাইফলাইন রূপে বিখ্যাত মহাত্মা গান্ধী সেতুর বর্তমান অবস্থা আমরা দেখেছি। এই গুরুত্বপূর্ণ সেতুটি কতটা দুর্দশাগ্রস্ত তা আমরা দেখেছি। আমরা সেই সেতুকেও সারিয়ে নতুন রূপে পরিষেবার জন্য প্রস্তুত করে তুলছি। কিন্তু ক্রমবর্ধমান জনসংখ্যা আর ভবিষ্যতের প্রয়োজনগুলির দিকে তাকিয়ে এখন মহাত্মা গান্ধীর সেতুর সমান্তরালে আরেকটি চারলেনের নতুন সেতু গড়ে তোলা হচ্ছে। এই নতুন সেতুটির পাশাপাশি, আটলেনের একটি অ্যাপ্রোচ রোডও হবে। এভাবে গঙ্গা নদীতেই বিক্রমশিলা সেতুর সমান্তরালে নতুন সেতু গড়ে তোলার মাধ্যমে আর কোসী নদীর ওপর নতুন সেতু নির্মাণের মাধ্যমে বিহারের যোগাযোগ ব্যবস্থা আরও উন্নত হবে।

 

বন্ধুগণ, যোগাযোগ ব্যবস্থা একটা এমন বিষয় যাকে আলাদা আলাদা করে ভাবার বদলে সমগ্রতা নিয়ে ভাবতে হয়। এখানে একটি সেতু তৈরি করলেন, ওখানে একটি সড়কপথ তৈরি করলেন, আরেকটি রেলপথ তৈরি করলেন, একটি রেল স্টেশন এখানে বানিয়ে দিলেন, এভাবে ভেবেই দেশের অনেক ক্ষতি করা হয়েছে। আগে সড়কপথের সঙ্গে রেল নেটওয়ার্কের কোনও সম্পর্কই ছিল না। রেলের সঙ্গে বন্দরের, বন্দরের সঙ্গে বিমানবন্দরের খুব কমই যোগাযোগ তৈরি করা হয়েছিল। একবিংশ শতাব্দীর ভারত, একবিংশ শতাব্দীর বিহার এখন এসব পুরনো ত্রুটিকে পেছনে ফেলে এগিয়ে চলেছে। আজ দেশে মাল্টি-মডেল কানেক্টিভিটির ওপর জোর দেওয়া হচ্ছে। এখন মহাসড়ক এভাবে গড়ে তোলা হচ্ছে যা রেলপথ এবং বিমানবন্দরের সহায়ক হয়ে উঠবে। রেলপথ এভাবে পাতা হচ্ছে যাতে সমুদ্রবন্দর এবং বিমানবন্দর পরস্পরের সঙ্গে যুক্ত থাকে। অর্থাৎ, যাতায়াতের বিভিন্ন মাধ্যমকে পরস্পরের সহায়ক করে তোলার একটি প্রচেষ্টা। এভাবে মাল পরিবহণেও ভারতের যেসব সমস্যা ছিল তা অনেকটাই দূর করা সম্ভব হবে।

 

বন্ধুগণ, পরিকাঠামো উন্নয়নের ফলে সব থেকে বড় লাভ সমাজের সবচাইতে দুর্বলতর অংশের হয়, গরীব মানুষের হয়। এর ফলে আমাদের কৃষকদেরও অনেক লাভ হয়। ভালো সড়কপথ, নদীর ওপর ভালো সেতু পেলে কৃষকদের চাষের খেতের সঙ্গে শহরের বাজারের দূরত্ব কম হয়ে যায়। বন্ধুগণ, গতকাল দেশের সংসদ ভবনে দেশের কৃষকদের নতুন অধিকার প্রদানকারী অত্যন্ত ঐতিহাসিক আইনগুলি পাশ করা হয়েছে। আমি আজ যখন বিহারের জনগণের সঙ্গে কথা বলছি এই সময় গোটা ভারতের কৃষকদেরও, আর যাঁরা ভারতের উজ্জ্বল ভবিষ্যতের জন্য আশাবাদী মানুষ, তাঁদের সকলকে  আমি অনেক অনেক শুভেচ্ছা জানাই। এই সংস্কার একবিংশ শতাব্দীর ভারতের প্রয়োজন অনুসারে হয়েছে।

 

বন্ধুগণ, আমাদের দেশে এখন পর্যন্ত উৎপাদিত ফসল বিক্রির যে ব্যবস্থা চালু করেছে, যে আইন রয়েছে তাতে কৃষকদের হাত-পা বাঁধা রয়েছে। এই আইনগুলির অন্তরালে দেশে একটি শক্তিশালী মধ্যস্বত্ত্বভোগী গড়ে উঠেছে, যারা কৃষকদের অসহায়তার সুযোগ নেয়। এই অন্যায় কতদিন চলবে? সেজন্যই এই ব্যবস্থায় পরিবর্তন আনা অত্যন্ত প্রয়োজন ছিল। আর আমাদের সরকার এই পরিবর্তন এনে দেখিয়েছে। নতুন কৃষি সংস্কারের মাধ্যমে দেশের প্রত্যেক কৃষককে এই স্বাধীনতা দিয়েছে যাতে তাঁরা যেখানে খুশি, যাকে খুশি নিজেদের ফসল, নিজেদের ফল, সব্জি, নিজেদের শর্তে বিক্রি করতে পারেন। এখন তাঁদের সামনে স্থানীয় মান্ডি ছাড়াও আরও অনেক বিকল্প খুলে গেছে। যদি স্থানীয় মান্ডিতে তাঁরা ফসল বিক্রি করে বেশি লাভ পান, তাহলে সেখানেই বিক্রি করবেন। আর না হলে অন্য যেখানে তাঁরা বেশি টাকা পাবেন, বেশি লাভ পাবেন, সেখানে নিয়ে গিয়ে বিক্রি করবেন। তাঁদেরকে এইসব বন্ধন থেকে মুক্তি দেওয়ার ফলেই এটা সম্ভব হবে। এখন প্রশ্ন হল, এতে কৃষকদের কী লাভ হবে? এই সিদ্ধান্ত কি কৃষকদের আর্থিক অবস্থা পরিবর্তনে সহায়ক হয়ে উঠবে? এই প্রশ্নগুলির জবাবও এখন তৃণমূলস্তর থেকে পাওয়া যাচ্ছে।

 

কৃষকরা এই স্বাধীনতা থেকে অনেক লাভ দেখতে পাচ্ছেন। কারণ, এই আইনের অধ্যাদেশ কয়েক মাস আগেই প্রকাশিত হয়েছিল। তখন থেকেই যে রাজ্যগুলিতে বেশি আলু উৎপন্ন হত, সেখান থেকে রিপোর্ট এসেছে যে জুন-জুলাই মাসেই পাইকাররা কৃষকদের বেশি দাম দিয়ে সরাসরি কোল্ড স্টোরেজ থেকেই আলু কিনে নিয়েছে। বাইরে কৃষকরা আলুর বেশি দাম পাবেন একথা জেনেও যে কৃষকরা মান্ডিতে আলু নিয়ে পৌঁছেছিলেন, বাইরের চাপের ফলে এবং বাইরের বাজারে চাহিদা বেশি থাকায় মান্ডি থেকেও কৃষকরা বেশি দাম পেয়েছেন। এভাবে মধ্যপ্রদেশ এবং রাজস্থান থেকে রিপোর্ট এসেছে, সেখানকার তেল কলগুলি কৃষকদের থেকে সরাসরি ২০-৩০ শতাংশ বেশি টাকা দিয়ে সর্ষে কিনেছে। মধ্যপ্রদেশ, উত্তরপ্রদেশ, ছত্তিশগড় এবং পশ্চিমবঙ্গের মতো রাজ্যগুলিতে অনেক ডাল উৎপন্ন হয়। এই রাজ্যগুলিতে গত বছরের তুলনায় ১৫-২৫ শতাংশ বেশি দামে সরাসরি কৃষকদের কাছ থেকে ডাল কেনা হয়েছে। ডাল কলগুলি সেই রাজ্যগুলিতে সরাসরি কৃষকদের সঙ্গে যোগাযোগ করেছে এবং টাকা দিয়ে কিনে নিয়েছে।

 

এখন দেশবাসী আন্দাজ করতে পারেন, হঠাৎ কিছু মানুষের এত সমস্যা কেন শুরু হয়েছে? তাঁরা কেন কান্নাকাটি করছেন? অনেক জায়গায় এই প্রশ্ন ওঠানো হচ্ছে, এখন কৃষি মান্ডিগুলির কী হবে? কৃষি মান্ডিগুলি কি বন্ধ হয়ে যাবে? সেখানে বিকিকিনি কি বন্ধ হয়ে যাবে? একদমই না! এরকম কখনই হবে না। আমি স্পষ্ট করে বলে দিতে চাই, এই আইন, এই পরিবর্তন কৃষি মান্ডিগুলির বিরুদ্ধে নয়। কৃষি মান্ডিগুলিতে আগে যেভাবে কাজ হত, এখনও সেভাবেই কাজ হবে। বরঞ্চ, আমাদের এনডিএ সরকার গোড়া থেকেই দেশের মন্ডিগুলিকে আধুনিক করে তোলার কাজ নিরন্তর করে চলেছে। কৃষি মান্ডিগুলির কার্যালয়গুলিকে সুচারুভাবে কাজ করার জন্য প্রস্তুত করে তোলা, সেগুলিতে কম্পিউটারাইজেশনের কাজ গত ৫-৬ বছর ধরে সারা দেশে একটি বড় অভিযানে পরিণত হয়েছে। সেজন্য তাঁরা যে বলছেন, যে নতুন কৃষি সংস্কারের পর কৃষি মন্ডিগুলি বন্ধ হয়ে যাবে, তা কৃষককে ভ্রমিত করার, মিথ্যা বলার আরেকটি পর্যায় মাত্র।

 

বন্ধুগণ, অনেক পুরনো একটি প্রবাদ আছে, সংগঠনেই শক্তি থাকে। কৃষি সংস্কারের সঙ্গে যুক্ত দ্বিতীয় আইনটি এই প্রবাদ থেকে প্রেরণা নিয়েই রচিত হয়েছে। আজ আমাদের দেশে ৮৫ শতাংশেরও বেশি কৃষক এমন যাঁদের কাছে সামান্য একফালি জমি আছে, কারোর এক একর তো কারোর কাছে দুই একর, কারোর কাছে এক হেক্টর, কারোর কাছে দুই হেক্টর। তাঁরা সবাই ক্ষুদ্র কৃষক। এই ছোট জমিতে চাষ করেই তাঁরা তাঁদের জীবন চালান। সেজন্য তাঁদের খরচও বেড়ে যায়। আর তাঁরা যখন নিজেদের উৎপাদিত ফসল সঠিক দামে বিক্রি না করতে পারেন, তখন তাঁদের অবস্থা আরও খারাপ হয়। যখন কোনও অঞ্চলের কৃষকরা সংগঠন তৈরি করে এই কাজ করেন, তখন তাঁদের প্রত্যেকের খরচ কমে এবং সঠিক দাম পাওয়াও সুনিশ্চিত হয়। বাইরে থেকে আসা ক্রেতারা এই সংগঠনগুলির সঙ্গে সমঝোতা করে, চুক্তি স্বাক্ষর করে সরাসরি তাঁদের উৎপাদিত ফসল কিনতে পারে। এক্ষেত্রে কৃষকদের স্বার্থ রক্ষার জন্যই দ্বিতীয় আইন রচিত হয়েছে। এটা এমন একটি অভিনব আইন, যেখানে কৃষকদের কোনও বন্ধন থাকবে না, তাঁদের কৃষিক্ষেত্রের সুরক্ষা, তাঁদের জমির মালিকানার নিরাপত্তা, তাঁদের ভালো বীজ, ভালো সার, প্রত্যেকের দায়িত্ব কৃষকের সঙ্গে চুক্তি স্বাক্ষর করার পর ফলনের ক্ষেত্রে যে ঝুঁকি হবে, সেই ঝুঁকির দায়ভার ক্রেতাকেও নিতে হবে।

 

বন্ধুগণ, এই সংস্কারের মাধ্যমেই কৃষিতে বিনিয়োগ বাড়বে, কৃষকরা আধুনিক প্রযুক্তির সুযোগ নিতে পারবেন, তাঁদের উৎপাদিত ফসল সহজেই আন্তর্জাতিক বাজারে পৌঁছবে। আমাকে বলা হয়েছে যে, সম্প্রতি বিহারে পাঁচটি কৃষি উৎপাদন সংগঠন একসঙ্গে মিলে চাল রপ্তানিকারী একটি বিখ্যাত কোম্পানির সঙ্গে চুক্তি স্বাক্ষর করেছে। এই চুক্তির মাধ্যমে সেই কোম্পানি বিহারের এই এফপিও-গুলি থেকে ৪ হাজার টন ধান কিনবে। এখন এই এফপিও-গুলির সঙ্গে যুক্ত কৃষকদের আর মান্ডিতে যেতে হবে না। তাঁদের উৎপাদিত ফসল এখন সরাসরি জাতীয় এবং আন্তর্জাতিক বাজারে পৌঁছে যাবে। এই উদাহরণ থেকে এটা স্পষ্ট, এই সংস্কারের পর কৃষিক্ষেত্রের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট আরও ছোট-বড় শিল্পোদ্যোগ গড়ে তোলার অনেক বড় পথ খুলে যাবে। এই গ্রামীণ শিল্পোদ্যোগগুলির মাধ্যমে দেশ দ্রুতগতিতে এগিয়ে যাবে। আমি আপনাদের আরেকটি উদাহরণ দিতে চাই। মনে করুন কোনও নব্য যুবক কৃষিক্ষেত্রে কোনও স্টার্ট-আপ শুরু করতে চায়, সে চিপসের কারখানা খুলতে চায়। এখনও পর্যন্ত অধিকাংশ ক্ষেত্রেই যাঁরা চিপসের কারখানা খুলতে চান, তাঁদেরকে মান্ডিতে গিয়েই আলু কিনতে হত। এই নব্য যুবক এখন নতুন নতুন স্বপ্ন নিয়ে এসেছে এবং সরাসরি গ্রামের কৃষকের কাছ থেকে আলু কেনার জন্য চুক্তিপত্র স্বাক্ষর করতে পারবে। সে কৃষককে বলবে, আমার এই রকম মানের আলু চাই, আর এই পরিমাণ আলু চাই। আর, এই উৎকৃষ্ট পরিমাণ আলু উৎপাদনের জন্য সে কৃষকদের প্রযুক্তিগত সাহায্যও করবে।

 

বন্ধুগণ, এভাবে চুক্তির আরেকটি দিক রয়েছে। আপনারা দেখেছেন, যেখানে ডেয়ারি থাকে তার চারপাশে পশুপালকদের দুধ বিক্রি সহজ হয়। ডেয়ারিগুলিও পশুপালকদের এবং গৃহপালিত পশুগুলির স্বাস্থ্যের দিকে লক্ষ্য রাখে। পশুগুলির যাতে সঠিক সময়ে টিকাকরণ হয়, তাদের জন্য যেন উন্নতমানের গোয়াল থাকে, তারা যেন ভালো খাবার পায়, তাদের যেন কোনও রোগ না হয়, নিয়মিত পশু-চিকিৎসক যেন প্রতিটি পশুর দেখাশোনা করে, সেসব বিষয় সুনিশ্চিত করে ডেয়ারি। আমি গুজরাটের অভিজ্ঞতা থেকে বলছি। আমি দেখেছি, ডেয়ারি কেমনভাবে গোটা এলাকার পশুগুলির স্বাস্থ্যের দায়িত্ব পালন করে। বড় ডেয়ারি দুগ্ধ উৎপাদক কৃষকদের বাড়িতে বাড়িতে গিয়ে তাঁদের সাহায্য করে। তার থেকেও গুরুত্বপূর্ণ কথা হল, ডেয়ারি তো দুধ কিনে নেয়, কিন্তু গৃহপালিত পশুর মালিকানা তারা নেয় না, পশুগুলি পশুপালকদেরই থেকে যায়। তেমনভাবেই আপনাদের ফসলের জন্য চুক্তিবদ্ধ হলেও, জমির মালিক সেই কৃষকরাই থাকবেন। এই পরিবর্তন এখন চাষের ক্ষেত্রেও নতুন নতুন পথ খুলে দেবে।

 

বন্ধুগণ, এটাও সবাই জানে যে যাঁরা কৃষি উৎপাদিত পণ্য নিয়ে ব্যবসা করেন, তাঁদের সামনে অত্যবশ্যকীয় পণ্য আইনের কিছু প্যাঁচ প্রতিবন্ধক হয়ে ওঠে। পরিবর্তিত সময়ে আমরা এক্ষেত্রেও পরিবর্তন এনেছি। ডাল, আলু, ভোজ্য তেল, পেঁয়াজের মতো কৃষিজ ফলনকে এখন এই আইনের আওতা থেকে বের করে দেওয়া হয়েছে। এখন দেশের কৃষকরা বড় বড় গুদামে, কোল্ড স্টোরেজে এই ফলনের গুদামীকরণ সহজেই করতে পারবেন। যখন গুদামীকরণের সঙ্গে যুক্ত আইনি জটিলতা দূর হবে, তখন আমাদের দেশের কোল্ড স্টোরেজগুলির নেটওয়ার্কও আরও উন্নত হবে, তাঁদের আরও বিস্তার হবে।

 

বন্ধুগণ, কৃষিক্ষেত্রে এই ঐতিহাসিক পরিবর্তনগুলির পর, এত বড় ব্যবস্থায় পরিবর্তন আনার পর, কিছু মানুষের হাত থেকে নিয়ন্ত্রণ চলে যাচ্ছে বলে তাঁরা স্পষ্টভাবে অনুভব করছেন। সেজন্য তাঁরা ন্যূনতম সহায়ক মূল্যে নিয়ে কৃষকদের ভ্রমিত করার চেষ্টা করে যাচ্ছেন। এঁরাই বছরের পর বছর ধরে ন্যূনতম সহায়ক মূল্য নিয়ে স্বামীনাথন কমিটির সুপারিশকে ফাইল চাপা দিয়ে বা নিজেদের পায়ের নিচে লুকিয়ে বসেছিলেন। আমি দেশের প্রত্যেক কৃষককে এ ব্যাপারে আশ্বস্ত করছি, ন্যূনতম সহায়ক মূল্যের ব্যবস্থা আগে যেমন চলছিল, তেমনই চলবে। এভাবে প্রত্যেক ঋতুতে সরকারি ক্রয়ের জন্য যে ধরনের অভিযান চালানো হত, তাও আগের মতোই চলতে থাকবে।

 

বন্ধুগণ, কৃষকদের ন্যূনতম সহায়ক মূল্য প্রদান এবং সরকারি ক্রয়ের জন্য আমাদের সরকার যত কাজ করেছে, তা আগে কোনও সরকার করেনি। বিগত পাঁচ বছরে যত সরকারি ক্রয় হয়েছে, আর ২০১৪ সালের আগের পাঁচ বছরে যত ক্রয় হয়েছে, এই দুটি পরিসংখ্যান তুলনা করলে বুঝবেন কারা সত্যি কথা বলছে। কারা কৃষকদের জন্য কাজ করতে চায়, কারা কৃষকদের ভালোর জন্য কাজ করছে তার সাক্ষী এই পরিসংখ্যান। আমি যদি শুধু ডাল আর তিলের কথাই ধরি, তাহলে ২০১৪ পূর্ববর্তী পাঁচ বছরের তুলনায় পরবর্তী পাঁচ বছরে সরকার ২৪ গুণ বেশি ফসল কিনেছে। এ বছর করোনা সংক্রমণের সময়ও রবি ফসলের ক্ষেত্রে কৃষকদের কাছ থেকে রেকর্ড পরিমাণ গম কেনা হয়েছে। এ বছর রবি ফসলে গম, ধান, ডাল এবং তিল মিলিয়ে কৃষকদের ন্যূনতম সহায়ক মূল্য রূপে ১ লক্ষ ১৩ হাজার কোটি টাকা দেওয়া হয়েছে। এই অর্থ গত বছরের তুলনায় ৩০ শতাংশ বেশি। অর্থাৎ, করোনার সঙ্কটকালেও শুধুই সরকারি ক্রয় বেশি হয়নি, কৃষকদের হাতে রেকর্ড পরিমাণ টাকাও পৌঁছেছে।

 

বন্ধুগণ, একবিংশ শতাব্দীর ভারতের দায়িত্ব হল দেশের কৃষকদের আধুনিক ভাবনা নিয়ে নতুন ব্যবস্থা গড়ে তুলতে সাহায্য করা। দেশের কৃষকদের, দেশের কৃষিতে আত্মনির্ভর করে তুলতে আমাদের নিরন্তর প্রচেষ্টা জারি থাকবে। আর এতে নিশ্চিতভাবেই যোগাযোগ ব্যবস্থার ভূমিকা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। অবশেষে, আমি আরেকবার যোগাযোগের ক্ষেত্রে এই সকল প্রকল্পের জন্য বিহারবাসীকে এবং দেশবাসীকে অনেক অনেক শুভেচ্ছা জানাই। আমি আরেকবার সবাইকে অনুরোধ জানাই যে এই করোনার বিরুদ্ধে লড়াই জারি রাখতে হবে। আমাদের করোনাকে হারিয়ে দিতে হবে। আমাদের পরিবারের সদস্যদের করোনা থেকে বাঁচাতে হবে। আর সেজন্য যে নিয়মগুলি আপনাদের সবাইকে বলা হয়েছে, সেগুলি সবাইকে পালন করতে হবে। একজনও যদি নিয়ম না মানেন, তাহলে অনেকের সমস্যা হয়ে যাবে। আমাদের সবাইকে নিশ্চিতভাবে নিয়ম পালন করতে হবে। আমি আরেকবার আমার প্রিয় বিহারের ভাই ও বোনেদের অনেক অনেক ধন্যবাদ জানাই।

 

নমস্কার!

 

 

CG/SB/DM



(Release ID: 1657500) Visitor Counter : 331