প্রধানমন্ত্রীরদপ্তর

জাতির উদ্দেশে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর ‘মন কি বাত ২’০, (১৩তম পর্ব) অনুষ্ঠানের বাংলা অনুবাদ

Posted On: 28 JUN 2020 11:39AM by PIB Kolkata

নতুনদিল্লি, ২৮শে জুন, ২০২০ 

 



আমার প্রিয় দেশবাসী, নমস্কার। ২০২০তে ‘মন কী বাত’ অর্ধেক সফর সম্পূর্ণ করল। এপর্যন্ত আমরা অনেক বিষয়ে আলোচনা করেছি। স্বাভাবিকভাবেই যে ভয়ংকর মহামারী উপস্থিত, মানব সভ্যতার উপর যে সংকট ছেয়ে আছে, স্বাভাবিকভাবেই সেই বিষয়ে কথা বেশী হয়েছে। কিন্থ ইদানীং দেখছি, লোকজন ক্রমাগত এটাই আলোচনা করছে যে কবে এই বছরটা শেষ হবে। কাউকে ফোন করলেও কথাবার্তা শুরুই হচ্ছে এই বলে এই বছরটা যেন তাড়াতাড়ি কাটে। কেউ কেউ লিখছে বা বন্ধুদের সাথে কথা বলছে, সেখানেও একই কথা - এই বছরটা ভাল নয়, ২০২০ শুভ নয়। সকলে এটাই চায় এই বছরটা যত তাড়াতাড়ি সম্ভব কেটে যাক।     


বন্ধুরা, আমি মাঝে মাঝে ভাবি যে, এরকম কেন হল, কেন হচ্ছে। হতে পারে এসবের পেছনে কোনো কারন আছে। ৬-৭ মাস আগেও কি আমরা জানতাম যে করোনার মত ভয়ংকর মহামারী আসবে আর তার বিরুদ্ধে আমাদের লড়াইটা এত লম্বা হবে। এই সংকট তো আছেই, তার উপর আরও তিন তিনটি সমস্যার মোকাবিলা করতে হল আমাদের। কিছুদিন আগে দেশের পূর্বাঞ্চলে সাইক্লোন উমপুন এল, পশ্চিম প্রান্তে সাইক্লোন নিসর্গ। বহু রাজ্যে চাষী ভাইরা পঙ্গপালের আক্রমণে ব্যতিব্যাস্ত। আবার দেশের বিভিন্ন প্রান্তে ছোট ছোট ভূমিকম্প হয়েই চলেছে। আর এ সবের মধ্যেই আমাদের প্রতিবেশীরা যা করছে, দেশকে সেইসব সমস্যারও মোকাবেলা করতে হচ্ছে। সত্যি, একসঙ্গে এতগুলো বিপদ, তাও এইমাপের,  খুব কমই দেখা বা শোনা যায়। এখন এমন অবস্থা হয়েছে যে সামান্য কিছু ঘটলেও এখন মানুষ তাকে এই সমস্ত বিপদের সাথে জুড়ে দিচ্ছে।


বন্ধুরা, সমস্যা আসে, সংকট আসে কিন্তু প্রশ্ন হলো এইসব কারনে কি ২০২০কে খারাপ ভাবা উচিত?  প্রথম ছয় মাস খারাপ কেটেছে মানে বাকি বছরটাও সেরকমই কাটবে এইটা মেনে নেওয়া কি ঠিক?  না নয়। আমার প্রিয় দেশবাসী, একেবারেই নয়। বছরে একটা বিপদ আসুক বা পঞ্চাশটা, সংখ্যার তারতম্য এটা কখনই প্রমান করেনা যে গোটা বছরটা খারাপ। ভারতের ইতিহাস সাক্ষী যে আমরা সব বিপদ আপদের সাথে মোকাবিলা করতে সক্ষম হয়েছি, বরং আরও শক্তিশালী হয়েছি। বহু বছর ধরে ভারতে বহু আক্রমণ হয়েছে, তখন মনে হয়েছে যে ভারতের সভ্যতা ও সংস্কৃতি সম্পূর্ণ নষ্ট হয়ে যাবে। কিন্তু তেমনটা আদৌ হয়নি। ভারত এ সবের মোকাবিলা  করে আরও উন্নত রাষ্ট্র হয়ে উঠেছে।


বন্ধুরা, আমাদের এখানে বলা হয় সৃজন শাশ্বত, সৃজন নিরন্তর। আমার একটা গানের কয়েকটি কথা মনে পড়ছে-


কুলকুল ছলছল করে বয়ে চলে কি বলে গঙ্গার ধারা?


যুগ যুগ ধরে চলে আসছে আমাদের পুণ্য প্রবাহধারা।


এই গানটিতে পরের কথাগুলি হল -


আপনি কি পারবেন রুখে দিতে,
রইবার যেটা সেটাই রবে,
নুড়ি-পাথরের মানুষ সব,
কী বাধা হয়ে দাঁড়াবে।   


ভারতেও যেখানে একদিকে বিশাল বিশাল সংকট এসেছে, একই সঙ্গে সমস্ত বাধা অপসারণ করে নিত্য নতুন সৃষ্টিও হয়েছে। নতুন সাহিত্য সৃষ্টি হয়েছে, নতুন গবেষণাধর্মী কাজ, নতুন তত্ত্ব তৈরি হয়েছে। অর্থাৎ সংকটের সময়ও প্রতিটি ক্ষেত্রেই সৃষ্টির প্রক্রিয়া অব্যাহত আছে এবং সংস্কৃতির প্রসার হচ্ছে যাতে দেশ প্রগতির পথে এগিয়ে যেতে পারে। ভারত সবসময় সংকটকে সাফল্যের সিঁড়িতে রূপান্তরিত করেছে। এই বিষয়টি মাথায় রেখে, আমাদের এই সঙ্কটের মাঝে এগিয়ে যেতে হবে। যদি আপনি এই ধারণাটি নিয়ে এগিয়ে যান, আর ১৩০ কোটি দেশবাসী এগিয়ে যায়, তবেই, এই বছরটি দেশের জন্য একটি ফলপ্রদ বছর হিসাবে প্রমাণিত হবে। এই বছরটি, দেশের সাফল্যের নতুন নজির গড়বে। এই বছরেই দেশ নতুন লক্ষ্যে পৌঁছাবে, নতুন উচ্চতা স্পর্শ করবে। ১৩০ কোটি দেশবাসীর সম্মিলিত শক্তির ওপর, আপনাদের ওপর, এবং এই দেশের গৌরবময় ঐতিহ্যের উপর আমার পূর্ণ বিশ্বাস আছে। আমার প্রিয় দেশবাসী, সংকট যত বড়ই হোক না কেন, ভারতের সংস্কৃতি নিঃস্বার্থভাবে সেবা করার অনুপ্রেরণা জাগায়। ভারত যেভাবে কঠিন সময়ে বিশ্বকে সাহায্য করেছে, আজ তা শান্তি ও উন্নয়নে ভারতের ভূমিকাকে আরও জোরদার করেছে। এই সময়কালে বিশ্ব ভারতের ভ্রাতৃত্বের চেতনাকে অনুভব করেছে এবং এর পাশাপাশি নিজের সার্বভৌমত্ব ও সীমান্ত রক্ষায় ভারতের শক্তি এবং ভারতের প্রতিশ্রুতিও দেখেছে। লাদাখে, ভারতের মাটির দিকে যারা কুদৃষ্টি দিয়েছিল, তারা উপযুক্ত জবাব পেয়েছে। ভারত কীভাবে বন্ধুত্ব বজায় রাখতে হয় জানে, আবার তার দিকে ধেয়ে আসা বক্রদৃষ্টিকে কীভাবে প্রতিহত  করতে হয় সেটাও জানে। আমাদের সাহসী সৈনিকরা দেখিয়েছে, তারা কখনও ভারত মায়ের গৌরবকে ক্ষুন্ন হতে দেবে না।   


বন্ধুরা, লাদাখে শহীদ হওয়া আমাদের সাহসী সৈন্যদের বীরত্বের প্রতি গোটা দেশ শ্রদ্ধা নিবেদন করছে। পুরো দেশ তাদের প্রতি কৃতজ্ঞ। এই শহীদদের পরিবারের মতো, প্রতিটি ভারতীয় তাদেরকে হারানোর বেদনা অনুভব করছে। এই বীর সন্তানদের আত্মত্যাগে তাদের পরিবার যে গর্বের অনুভব করছে, দেশের জন্য যে আবেগ রয়েছে তাদের মধ্যে, এটিই দেশের শক্তি। আপনি নিশ্চয়ই দেখেছেন সেই সব বাবা-মা, যাদের ছেলেরা শহীদ হয়েছিল, তারা তাদের অন্য ছেলেদের, বাড়ির অন্যান্য বাচ্চাদেরও সেনাবাহিনীতে পাঠানোর কথা বলছেন। বিহারের বাসিন্দা শহীদ কুন্দন কুমারের বাবার কথা কানে প্রতিধ্বনিত হচ্ছে। তিনি বলছিলেন, আমি আমার নাতি-নাতনিদের দেশ রক্ষার জন্য সেনাবাহিনীতে পাঠাব। প্রতিটি শহীদ পরিবারেই এই সাহস পরিলক্ষিত। বাস্তবে এই আত্মীয়দের ত্যাগ প্রণম্য। ভারত মায়ের রক্ষার যে সংকল্পকে তুলে ধরতে আমাদের সৈনিকরা মৃত্যুবরণ  করলেন, সেই সংকল্পকে আমাদের জীবনের লক্ষ্য তৈরি করতে হবে, প্রতিটি দেশবাসীকে একই সংকল্প গ্রহণ করতে হবে। আমাদের সর্বাত্মক প্রচেষ্টা এটাই হওয়া উচিত, যাতে সীমান্ত রক্ষায় দেশের শক্তি বাড়ে, দেশ আরও সক্ষম হয়  স্বাবলম্বী হয় আরো - এটিই আমাদের শহীদদের প্রতি সত্যিকারের শ্রদ্ধাঞ্জলি হবে। আমাকে আসামের রজনীজি লিখেছেন, পূর্ব লাদাখের ঘটনাটি দেখে তিনি স্থির করেছেন, তিনি কেবল স্থানীয় জিনিষ কিনবেন, কেবল ‘ল্যোকাল’-এর পক্ষে সোচ্চার হবেন। দেশের প্রতিটি প্রান্ত থেকে এ ধরনের বার্তা অনেক আসছে। অনেক লোক আমাকে চিঠি লিখছেন যে, তারা এই পথেই এগিয়ে যাচ্ছেন। একই ভাবে তামিল নাডুর মাদুরাই থেকে মোহন রামমূর্তি বাবু লিখেছেন উনি ভারতবর্ষের প্রতিরক্ষা ক্ষেত্রটিকে আত্মনির্ভরশীল রুপে দেখতে চান।     


বন্ধুরা, স্বাধীনতার আগে আমাদের দেশ প্রতিরক্ষা ক্ষেত্রে বহু দেশের আগে ছিল। আমাদের এখানে সেই সব দেশের অর্ডন্যান্স ফ্যাক্টরি ছিল౼এমন অনেক দেশ, যারা তখন আমাদের পিছনে ছিল, তারা এখন আমাদের ছাড়িয়ে চলে গেছে। স্বাধীনতার পরে প্রতিরক্ষা ক্ষেত্রে আমাদের যে সব পদক্ষেপ নেওয়া উচিৎ ছিল, যেসব উদ্যোগ নেওয়া প্রয়োজনীয় ছিল, আমাদের যে ভাবে পুরনো অভিজ্ঞতা কাজে লাগানো দরকার ছিল, সেই অভিজ্ঞতা আমরা ব্যবহার করতে পারিনি। কিন্তু আজ প্রতিরক্ষা ক্ষেত্রে, প্রযুক্তির ক্ষেত্রে, ভারত এগিয়ে চলার নিরন্তর চেষ্টা করছে, ভারত আত্মনির্ভর হওয়ার পথে এগিয়ে চলেছে। 


বন্ধুরা, কোন মিশনই, ‘পিপলস পারটিসিপেশন’౼ সাধারণ মানুষের অংশগ্রহণ, ছাড়া সম্পূর্ণ হতে পারে না, সফল হতে পারে না, এই জন্যে, আত্মনির্ভর ভারতের দিশায়, দেশের নাগরিক হিসেবে আমাদের সবার প্রতিজ্ঞা, সমর্পণ এবং সহযোগিতা আবশ্যক। আপনি ‘ল্যোকাল’ কিনবেন, ‘ল্যোকাল’-এর জন্য ভোকাল হবেন, তাহলেই বুঝবেন আপনি দেশকে মজবুত করার ক্ষেত্রে আপনার ভূমিকা পালন করছেন। এটাও এক রকম দেশ সেবাই বটে। আপনি যে পেশায়ই থাকুন না কেন, প্রত্যেক ক্ষেত্রেই দেশের সেবা করার প্রচুর সুযোগ আছে। দেশের প্রয়োজনগুলি বুঝে যারাই কাজ করেন, তারা দেশেরই সেবা করেন। আপনার এই সেবাই, কোনও না কোনও ভাবে দেশ কে মজবুত করছে এবং, আমাদের এটাও মনে রাখতে হবে, আমাদের দেশ যত শক্তিশালী হবে, পৃথিবীতে শান্তির সম্ভাবনাও তত বাড়বে। কথায় বলে-


বিদ্যা বিবাদায় ধনং মদায়, শক্তিঃ পরেশান পরিপীডনায়।


খলস্য সাধোঃ বিপরীতম এতত, জ্ঞানায় দানায় চ রক্ষনায়।।


অর্থাৎ, যদি কেউ দুষ্ট স্বভাবের হয়, তাহলে সে বিদ্যার প্রয়োগ ব্যক্তি বিবাদে, ধনের প্রয়োগ অহংকারে এবং শক্তির প্রয়োগ অন্যদের কষ্ট দিতে করে। কিন্তু সজ্জনের বিদ্যা জ্ঞানের হেতু, ধন সাহায্যের জন্য এবং শক্তি রক্ষার হেতু ব্যবহৃত হয়। ভারত তার শক্তি সর্বদা এই চিন্তার দ্বারা প্রভাবিত হয়ে ব্যবহার করেছে। ভারতের অঙ্গীকার তার আত্মসম্মান  এবং সার্বভৌমতাকে রক্ষার। ভারতের লক্ষ্য আত্মনির্ভর ভারত। ভারতের পরম্পরা বিশ্বাস এবং মিত্রতা। ভারতের মনভাব বন্ধুতার, আমরা এই আদর্শগুলোকে নিয়েই আগে এগোতে থাকব।     


আমার প্রিয় দেশবাসী, করোনার সংকটময় সময়ে দেশ লকডাউন থেকে বেরিয়ে এসেছে। এখন আমরা ‘আনলক’ পর্যায়ে রয়েছি। ‘আনলক’-এর এই সময়ে দুটো জিনিসে ভীষণ খেয়াল করে চলতে হবে- করোনাকে পরাজিত করা এবং আর্থিকব্যবস্থাকে মজবুত বানানো, তাকে শক্তিশালী করা। বন্ধুরা, লকডাউনের থেকেও বেশি সতর্কতা আমাদের আনলকের সময় নিতে হবে। আপনার সতর্কতাই আপনাকে করোনার হাত থেকে বাঁচাবে। এই কথাটা সবসময় মনে রাখবেন যে যদি আপনি মাস্ক না পরেন, দু গজের দুরত্ব না রাখেন, কিংবা বাকি আবশ্যক সাবধানতা বিধিগুলি পালন না করেন, তাহলে আপনি নিজের পাশাপাশি অন্যদেরও বিপদের মুখে ফেলছেন। বিশেষ করে বাড়ির বাচ্চা ও বয়স্কদের, এই জন্য প্রত্যেক দেশবাসীর কাছে আমার নিবেদন হল, এবং এই আবেদন আমি বার-বার করি, এবং আমার নিবেদন হল আপনারা এই বিষয়টাকে অবহেলা  করবেন না, অসতর্ক হবেন না, নিজেরও খেয়াল রাখুন এবং অন্যদেরও খেয়াল রাখুন।   

               
বন্ধুরা, আনলক এর সময় এমন অনেক জিনিস আনলক হচ্ছে যাতে ভারত বহুদিন আবদ্ধ ছিল। বহু বছর আমাদের খনিশিল্প লকডাউনে বন্ধ ছিল। বাণিজ্যিক নিলামকে অনুমতি দেবার একটা সিদ্ধান্ত, সেই অবস্থায় পরিবর্তন এনে দিয়েছে। কিছুদিন আগেই মহাকাশ ক্ষেত্রে ঐতিহাসিক সংশোধন করা হয়েছে। এই সংশোধনের মাধ্যমে বহু বছর যাবত লকডাউন-এ জর্জরিত এই সেক্টর স্বাধীনতা লাভ করেছে। ফলে আত্মনির্ভর অভিযানে শুধু গতিই আসেনি, উপরন্তু দেশ  প্রযুক্তিগত দিক দিয়েও এগিয়ে যাচ্ছে। আমাদের কৃষি ক্ষেত্রকেই দেখুন, এখানেও অনেকগুলি জিনিস বহু দশক ধরে আটকে ছিল। এই ক্ষেত্রকেও এখন আনলক করা হয়েছে। ফলস্বরূপ, কৃষকরা যেমন নিজেদের ফসল যে কোন জায়গায়, যে কোন ব্যক্তিকে, বিক্রি করার স্বাধীনতা পেয়েছে, অন্যদিকে তাঁদের বেশি ঋণ পাওয়াটাও সুনিশ্চিত করা গেছে।এরকম অনেক ক্ষেত্র আছে যেখানে আমাদের দেশ এইসব সংকটের মধ্যেই, ঐতিহাসিক সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে বিকাশের নতুন পথ উন্মুক্ত করছে।   


আমার প্রিয় দেশবাসী, প্রত্যেক মাসে, আমরা এমন এমন খবর পড়ি আর দেখি যা আমাদের ভাবিয়ে তোলে।যা আমাদের মনে করিয়ে দেয়, যে কিভাবে প্রত্যেক ভারতীয় একে অপরের সাহায্যের জন্য সদাতৎপর,তাঁরা যা যা করতে পারেন, তা করতে প্রস্তুত। অরুণাচল প্রদেশের এরকমই এক প্রেরণাদায়ক কাহিনী আমি মিডিয়ায় পড়েছিলাম। যেখানে সিয়া়ং জেলার মিরেম গ্রাম এমন অনন্য কাজ করেছে, যা সমগ্র ভারতের জন্য একটি উদাহরণ স্থাপন করেছে। এই গ্রামের কিছু লোক বাইরে থাকেন, চাকরি সূত্রে। গ্রামবাসীরা দেখলেন যে, করোনা মহামারির সময়, ঐ সমস্ত মানুষ গ্রামে ফিরে আসছেন। এসময় গ্রামবাসীরা আগেভাগেই, গ্রামের বাইরে কোয়ারান্টাইনের  ব্যবস্থা করার সিদ্ধান্ত নেন। তারা সবাই মিলে গ্রাম থেকে একটু দূরে ১৪টি অস্থায়ী ঝুপড়ি তৈরি করেন আর ঠিক করেন যখন গ্রামবাসীরা ফেরত আসবেন তখন তাদের ওই ঝুপড়িতে কিছুদিন কোয়ারান্টাইনে থাকতে হবে। ওই ঝুপড়িতে শৌচালয়,বিদ্যুৎ,জলসহ দৈনিক ব্যবহারের যাবতীয় সুবিধা ছিল। স্পষ্টত মিরেম গ্রামের সমষ্টিগত প্রয়াস আর সচেতনতা সবার মনোযোগ আকর্ষণ করে।


বন্ধুরা আমাদের এখানে বলা হয়ে থাকে-


স্বভাবং ন জহাতি এব,  সাধুঃ আপদ্রতোপী সন।
কর্পূরঃ পাবক স্পৃষ্টঃ সৌরভং লভতেতরাম।।


অর্থাৎ, যেভাবে আগুনে পুড়েও কর্পূর নিজের সুগন্ধ বিস্তার করতে ভোলে না, তেমনই ভালো মানুষ বিপদের মধ্যেও নিজের গুণ, নিজের স্বভাবত্যাগ করে না। আজ আমাদের দেশের যে শ্রমশক্তি আছে, যে শ্রমিক বন্ধু আছে তারাও এর বাস্তবিক উদাহরণ। আপনারা দেখুন, এই সময়ে আমাদের পরিযায়ী শ্রমিকদের এরকম কত কাহিনীই না শোনা যাচ্ছে যা পুরো দেশকে প্রেরিত করছে। উত্তরপ্রদেশের বারাবাঁকি গ্রামে ফিরে আটজন শ্রমিক কল্যাণী নদীর স্বরূপ ফেরানোর কাজে হাত লাগিয়েছেন। নদীর উদ্ধারকাজ দেখে, আশেপাশের কৃষকরা, আশেপাশের মানুষজন উৎসাহিত। গ্রামে আসার পর কোয়ারান্টাইন সেন্টার, আইসোলেশন সেন্টারে থাকাকালীন আমাদের শ্রমিক বন্ধুরা যেভাবে নিজের দক্ষতা কাজে লাগিয়ে, নিজেদের আশপাশে পরিস্থিতি বদল করেছেন, তা অভাবনীয়। কিন্তু বন্ধুরা, দেশের লক্ষ লক্ষ গ্রামের এরকম কত গল্প আছে, যা আমাদের কাছে পৌঁছতেই পারেনি। আমাদের দেশ এমনই বৈশিষ্ট্যপূর্ণ  যে, বন্ধুরা, আমার বিশ্বাস আপনার গ্রামে, বা আপনার আশেপাশেও এরকম অনেক ঘটনাই হয়তো ঘটে। কখনো যদি এরকম কোন বিষয় আপনার নজরে এসে থাকে, তাহলে এইধরনের উৎসাহমূলক ঘটনার কথা আমায় অবশ্যই লিখে জানাবেন। এরকম সংকটজনক অবস্থায় এই ধরনের ইতিবাচক বৃত্তান্ত বা ঘটনাবলী অন্যদেরও অনুপ্রেরণা যোগাবে। 


আমার প্রিয় দেশবাসী, এই করোনা ভাইরাস নিশ্চিত রূপেই আমাদের জীবনধারণের পদ্ধতি বদলে দিয়েছে। আমি লন্ডন থেকে প্রকাশিত "ফিন্যান্সিয়াল টাইমস"এ এই বিষয় নিয়ে একটি দারুন সুন্দর লেখা পড়ছিলাম। ওখানে বলা ছিল, করোনা ভাইরাস সংক্রমণের সময়ে, আদা, হলুদ সমেত অন্যান্য মশলাপাতির চাহিদা শুধু এশিয়াতেই নয়, এমনকি আমেরিকাতেও বৃদ্ধি পেয়েছে। সারা বিশ্বের লক্ষ্য এখন রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করা, আর রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে সাহায্য করা এই জিনিসগুলোর ব্যবহার আমাদের দেশের সঙ্গে সম্পর্কিত। আমাদের সমগ্র বিশ্ববাসীকে এগুলোর গুনাগুন খুব সাধারণ ও সরল ভাষায় বোঝানো উচিত, যাতে খুব সহজেই বিষয়টা তাদের বোধগম্য হয় আর এভাবে একটা সুস্থ  পৃথিবী তৈরি করার লক্ষ্যে আমরা অবদান করতে পারি। 


আমার প্রিয় দেশবাসী, করোনা ভাইরাস সংক্রমণের মত সংকটের মুখোমুখি না হলে হয়তো এই জীবনের অর্থ কি, কেমন তার রূপ, তার মাহাত্ম্যই বা কেমন,এসব হয়তো আমাদের মনেই পড়তো না। কত মানুষ এই কারণে মানসিক অশান্তিতে বেঁচে আছেন। অন্যদিকে অনেক মানুষ আমার সঙ্গে তাদের এই চিন্তা ভাবনা ভাগ করে নিয়েছেন যে, কিভাবে এই লকডাউনের সময়ে তারা আনন্দের ছোট ছোট মুহূর্তকে নিজেদের জীবনে নতুন করে খুঁজে পেয়েছেন। অনেকেই পরিবারের লোকজনের  সঙ্গে পম্পরাগত ইনডোর গেম খেলার আনন্দ উপভোগ করেছেন, তাদের সঙ্গে সুন্দর সময় কাটিয়েছেন, এইসব অনুভূতির কথা তারা আমায় জানিয়েছেন। আমাদের দেশ এই ধরনের ঐতিহ্যময় খেলার বিষয়ে সমৃদ্ধ। যেমন আপনারা একটা খেলার নাম হয়তো শুনে থাকবেন "পচিসি"। এই খেলাটি তামিলনাড়ুতে "পল্লাঙ্গুলি", কর্নাটকে "অলি গুলি মেণ" আর অন্ধ্রপ্রদেশে "বামণ গুণ্টলু" নামে পরিচিত। এটা এক ধরনের কৌশলমূলক খেলা যেখানে একটি বোর্ডের ব্যবহার করা হয়। ওই বোর্ডে অনেকগুলো  খোপ বা ঘর কাটা থাকে যার মধ্যে উপস্থিত ঘুঁটি গুলোর মাধ্যমে খেলোয়াড়দের পরাজিত করতে হয়। শোনা যায়, এই খেলাটি নাকি দক্ষিণ ভারত থেকে দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়া হয়ে সারা বিশ্বে ছড়িয়ে পড়েছিল।


বন্ধুরা, আজ প্রায় প্রতিটি বাচ্চাই সাপ - লুডো খেলার সম্বন্ধে জানে। এটা কি আপনারা জানেন যে , এই খেলাটিও একটি ভারতীয় ঐতিহ্যপূর্ণ খেলারই রূপ, যাকে মোক্ষ পাটম বা পরমপদম বলে। আমাদের আরও একটি এরকম ঐতিহ্যপূর্ণ খেলার নাম ড্যাঙগুলি। বড়রা ড্যাঙগুলি খেলে, আবার ছোট বাচ্চারাও খেলে। একই আকৃতির পাঁচটি ছোট পাথর সংগ্রহ করতে পারলেই আপনি ড্যাঙগুলি খেলার জন্য তৈরি। একটি পাথরকে হাওয়ায় ছুঁড়ে দিয়ে, মাটিতে রাখা বাকি পাথরগুলোকে তুলে নিতে হয়, ওই পাথরটি হাওয়ায় ভেসে থাকার সময়টুকুর মধ্যেই। সাধারণত এই ধরনের ইনডোর গেমগুলো খেলার জন্য বিশেষ কোন সাধনার দরকার হয়না। একটি চক বা পাথর নিয়ে এসে সেটা দিয়ে মাটিতে কিছু দাগ কাটলেই খেলা শুরু হয়ে যায়। যে সমস্ত খেলায় ডাইসের প্রয়োজন হয়, সেখানে কড়ি বা তেঁতুলের বীজ দিয়েও কাজ চলে যায়। 


বন্ধুরা, আমি জানি, আজ যখন আমি এই কথাগুলো বলছি, অনেকেই নিজের ছোটবেলায় ফিরে গেছেন, বা অনেকের হয়ত নিজের ছোটবেলার দিনগুলোর কথা মনে পড়ে যাচ্ছে। আমি এটাই বলব যে সেই দিনগুলো আপনারা ভুলে যাচ্ছেন কেন? সেই খেলাগুলিকে আপনারা ভুলে যাচ্ছেন কেন? বাড়ির দাদু, দিদা, ঠাকুরদা, ঠাকুমা, বাড়ির প্রবীণদের প্রতি আমার আবেদন, এই খেলাগুলিকে নতুন প্রজন্মের কাছে আপনারা যদি পৌঁছে না দেন তবে কারা দেবে! এখন অনলাইন পড়াশোনার কথা চলছে। তাই ভারসাম্য বজায় রাখতে অনলাইন গেম এর হাত থেকে মুক্তি পাওয়ার জন্যও আমাদের এমনটা করতেই হবে. আমাদের তরুণ প্রজন্মের জন্য, এবং আমাদের স্টার্টআপগুলির জন্যও এক্ষেত্রে একটা নতুন, শক্তিশালী  এবং প্রতিশ্রুতি সম্পন্ন সুযোগ রয়েছে। আসুন, আমরা ভারতের পরম্পরাগত ইনডোর গেমসগুলিকে নতুন ও আকর্ষণীয়় রূপে প্রস্তুত করি। তার সঙ্গে যুক্ত জিনিসপত্রের যোগান বা সাপ্লাই যারা দেবে সেই সব স্টার্টআপগুলিও জনপ্রিয় হবে।  আর আমাদের এটাও মনে রাখতে হবে যে আমাদের ভারতীয় খেলাও তো লোকাল আর আমরা লোকাল এর জন্য ভোকাল হওয়ার ব্রত প্রথম থেকেই নিয়েছি। আর আমার ছোট্ট বন্ধুদের, প্রতিটি ঘরের বাচ্চাদের, আমার ছোট্ট সঙ্গীদের  প্রতিও আজ আমি বিশেষ একটি আবেদন করছি। বাচ্চারা, তোমরা আমার  অনুরোধ শুনবে তো? দেখো আমার অনুরোধ, আমি যেটা বলছি, সেটা তোমরা অবশ্যই কোরো। একটা কাজ করো, এখন একটু সময় পাওয়া গেছে, তাই বাবা মাকে জিজ্ঞাসা করে মোবাইল হাতে নিয়ে নিজের দাদু, দিদা, ঠাকুরদা, ঠাকুমা বা বাড়ির যেকোনো প্রবীণ মানুষের ইন্টারভিউ রেকর্ড করো। নিজেদের মোবাইল ফোনেই রেকর্ড করো। যেমন তোমরা টিভিতে দেখেছো কিভাবে সাংবাদিকরা ইন্টারভিউ নেয়। ব্যাস তেমনি ইন্টারভিউ তোমরা করো। আর তাতে তোমরা কী প্রশ্ন করবে? আমি তোমাদের একটা পরামর্শ দিচ্ছি। তোমরা তাঁদের অবশ্যই জিজ্ঞেস করো ছোটবেলায় তাঁরা কীভাবে জীবন কাটাতেন, কোন কোন খেলা তারা খেলতেন। কী কী নাটক দেখতে যেতেন, সিনেমা দেখতে যেতেন। ছুটিতে কখনো মামাবাড়ি যেতেন, কখনো বা চাষের জমিতে ঘুরতেন। কিভাবে তারা উৎসব পালন করতেন, এমন অনেক কথা তাদের তোমরা জিজ্ঞাসা করতে পারো। তারাও নিজেদের চল্লিশ, পঞ্চাশ বা ষাট বছর আগেকার জীবনে ফিরে যেতে খুব আনন্দ পাবেন, আর তোমরাও চল্লিশ, পঞ্চাশ বছর আগের ভারতবর্ষ কেমন ছিল, তোমরা যেখানে থাকো সেই জায়গা, আশেপাশের জায়গা কেমন ছিল, মানুষজনের আদব-কায়দা কেমন ছিল এসব বিষয় খুব সহজেই শিখতে পারবে, জানতে পারবে। তোমরা দেখো তোমাদের খুব ভালো লাগবে, আর পরিবারের জন্য এক অত্যন্ত অমূল্য সম্পদ - একটি দারুন ভিডিও অ্যালবামও তৈরি হয়ে যাবে।   


বন্ধুরা, একথা সত্যি যে আত্মজীবনী বা জীবনী, অটোবায়োগ্রাফি বা বায়োগ্রাফি ইতিহাসের সত্যের কাছে যাওয়ার জন্য খুবই উপযোগী একটি মাধ্যম। তোমরাও যদি বয়স্ক, প্রবীণদের সঙ্গে কথা বল তাহলে তাঁদের সময়ের কথা, তাঁদের শৈশব, তাঁদের যৌবনের কথা আরো সহজে বুঝতে পারবে। আর প্রবীণদের জন্যও এটা একটা অসাধারণ সুযোগ যে তাঁরাও নিজেদের ছোটবেলার বিষয়ে, সেই সময়ের ব্যাপারে নিজেদের বাড়ির ছোটদের বলবেন। 


বন্ধুরা,  দেশের একটা বড় অংশে এখন বর্ষা পৌঁছে গেছে। এবছর বর্ষা নিয়ে আবহাওয়া বিজ্ঞানীরাও খুবই উৎসাহিত, তাঁরা অনেক প্রত্যাশা করে আছেন। বৃষ্টি ভালো হলে আমাদের কৃষকদের ফসল ভালো হবে। পরিবেশও সবুজ হবে। বর্ষা ঋতুতে প্রকৃতিও নিজেকে পুনরুজ্জীবিত করে নেয়। মানুষ প্রাকৃতিক সম্পদের যতটা শোষণ করে, প্রকৃতি একদিক থেকে বর্ষার সময় তা পূরণ করে নেয়। রিফিলিং করে নেয়, কিন্তু এই রিফিলিং তখনই সম্ভব যখন তাতে আমরাও আমাদের ধরিত্রী-মা'র সহায়তা করি। নিজেদের দায়িত্ব পালন করি। আমাদের ছোট্ট একটি প্রয়াস প্রকৃতিকে, পরিবেশকে অনেকটা সাহায্য করতে পারে।


আমাদের অনেক দেশবাসী এই ব্যাপারে খুব ভালো কাজ করছেন। কামেগৌড়াজী, ৮০-৮৫  বছরের এক  বর্ষীয়ান  ব্যক্তি  থাকেন কর্ণাটকের মন্ডাবালীতে। পেশায়  তিনি  সামান্য এক কৃষক, কিন্তু ব্যক্তিত্বে তিনি অসামান্য। তিনি এমন একটি কাজ করেছেন যাতে যে কেউ অবাক হবেন। ৮০-৮৫ বছর বয়সে কামেগৌড়াজি পশুচারণের সঙ্গে সঙ্গে তার অঞ্চলে নতুন জলাশয় খননের কাজও  করে চলেছেন। তিনি তাঁর এলাকায় জলের সমস্যা দূর করতে চান, সে কারণেই অর্থাৎ জল সংরক্ষণের জন্য তিনি ছোট ছোট জলাশয় তৈরীর কাজে মনোনিবেশ করছেন। জানলে আপনি অবাক হবেন যে ৮০-৮৫ বছর বয়সী কামেগৌড়াজি, কী ভীষণ কঠিন পরিশ্রম করে ইতিমধ্যে মোট ১৬টি জলাশয় খনন করে ফেলেছেন। হতে পারে তিনি যে জলাশয়গুলি তৈরি করেছেন সেগুলি খুব বড় নয়, কিন্তু তাঁর এই প্রচেষ্টা সত্যিই মহৎ। সেই জলাশয়গুলিই আজ ওই অঞ্চলে নতুন প্রাণের সঞ্চার করেছে।


বন্ধুরা, অনুপ্রাণিত করার মত একটি ঘটনা গুজরাটের ভোদোদারাতেও ঘটেছে। সেখানে স্থানীয় মানুষ এবং জেলা প্রশাসন একসঙ্গে একটি প্রচার অভিযানে যোগ দিয়েছিলেন। সেই প্রচার অভিযানের কারণে, বর্তমানে ভোদোদরায় এক হাজার স্কুলে বৃষ্টির জল সঞ্চয়ের কাজ শুরু হয়েছে। অনুমান করা হচ্ছে এজন্য প্রতি বছর গড়ে প্রায় ১০কোটি লিটার জল অপচয়ের হাত থেকে রক্ষা পাচ্ছে। 


বন্ধুরা, প্রকৃতি ও পরিবেশকে রক্ষা করার জন্য, এই বর্ষাকালে আমাদেরও এরকমই কিছু চিন্তা করার এবং উদ্যোগ নেওয়ার প্রয়োজন রয়েছে। অনেক জায়গাতেই এবারও গণেশ চতুর্থীর প্রস্তুতি শুরু হতে চলেছে, সে ক্ষেত্রে আমরা কি এবার পরিবেশ বান্ধব গণেশ মূর্তি তৈরি করার এবং সেই মূর্তি পূজা করার চেষ্টা করতে পারি না? যে মূর্তি বা প্রতিমাগুলির নদী বা জলাশয়ে বিসর্জন দেওয়ার ফলে জলে বসবাসকারী প্রাণীরা সংকটের মুখে পড়ছে, সেই জাতীয় প্রতিমাগুলির উপাসনা কি আমরা এবার এড়িয়ে চলতে পারিনা? আমি বিশ্বাস করি যে আপনারা অবশ্যই তা করতে পারেন এবং এই সমস্ত কিছুর মধ্যে আমাদের এটাও মনে রাখতে হবে যে বর্ষাকালে অনেক অসুখের প্রাদুর্ভাবও ঘটে। এই করোনার সময় আমাদের সে সমস্ত বিপদ থেকেও নিজেদের বাঁচিয়ে রাখতে হবে, এই কারণে আয়ুর্বেদিক ওষুধ, কাথ্ব, গরম জল - এসবের ব্যবহার করুন এবং নিজেকে সুস্থ রাখুন।


আমার প্রিয় দেশবাসী, আজ ২৮শে জুন সমগ্র ভারত তার এক প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রীর প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন করছে। যিনি অত্যন্ত সংবেদনশীল  এক সমযে় এই দেশকে নেতৃত্ব দিয়েছিলেন। আজ আমাদের প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী শ্রী পি ভি নরসিমহা রাওর জন্মশতবার্ষিকীর সূচনা। আমরা যখন পিভি নরসিংহ রাও সম্পর্কে আলোচনা করি  স্বাভাবিকভাবেই একজন রাজনীতিবিদ হিসাবে তাঁর প্রতিচ্ছবি আমাদের সামনে ভেসে ওঠে কিন্তু আরও একটি সত্য হলো তিনি বহু ভাষায় পারদর্শী ছিলেন। ভারতীয় ও বিদেশী বহু ভাষায় কথা বলতে পারতেন। একদিকে ভারতীয় মূল্যবোধ সম্পর্কে তার গভীর আস্থা ছিল, অন্যদিকে পশ্চিমী সাহিত্য ও বিজ্ঞান সম্পর্কেও তাঁর জ্ঞান ছিল প্রগাঢ়। তিনি ছিলেন ভারতের একজন  অন্যতম অভিজ্ঞ নেতা ও রাজনীতিবিদ। কিন্তু, ওঁর জীবনের আরও একটি দিক ছিল এবং সেটি অবশ্যই উল্লেখযোগ্য। আমাদের নিশ্চয়ই জানা উচিত। বন্ধুরা, নরসিমা রাওজী নিজের কৈশোরেই স্বাধীনতা আন্দোলনে অংশ নিয়েছিলেন। যখন হায়দ্রাবাদের নিজাম বন্দেমাতরম গাওয়ার অনুমতি দিতে অস্বীকার করেন তখন তিনি তাঁর প্রতিবাদে সক্রিয়ভাবে অংশগ্রহণ করেছিলেন, সেই সময় তাঁর বয়স ছিল মাত্র ১৭ বছর। অল্পবয়স থেকেই শ্রীনরসিমা রাও অন্যায়ের বিরুদ্ধে প্রতিবাদে সরব হওয়ার অগ্রণী ছিলেন। দৃঢ়তার সাথে সোচ্চার হওয়ায় কখনো কোনো ত্রূটি রাখেননি। নরসিমা রাওজী ইতিহাসকে অত্যন্ত ভালো বুঝতেন। অতিসাধারণ এক পটভূমি থেকে তাঁর উত্তরণ, ওঁর শিক্ষার প্রতি জোর দেওয়া, শেখার প্রতি ওঁর আগ্রহ, এবং, এসবের সাথে, ওঁর নেতৃত্ব প্রদানের ক্ষমতা – সবকিছুই স্মরণীয়। আমার ইচ্ছে যে, নরসিমা রাওজীর জন্মশতবর্ষে, আপনারা সবাই ওঁর জীবন এবং বিচার ধারা সম্বন্ধে যত বেশি সম্ভব জানার চেষ্টা করুন। আমি আবারও একবার ওঁর প্রতি আমার শ্রদ্ধাঞ্জলি অর্পণ করছি। 


আমার প্রিয়দেশবাসী, এবারের 'মন কি বাত' অনুষ্ঠানে অনেক বিষয়েই কথা হল। পরের বার যখন আমাদের সাক্ষাৎ হবে, তখন আরো নতুন কিছু বিষয় নিয়ে কথা বলব। আপনারা আপনাদের বার্তা, আপনাদের উদ্ভাবনী ভাবনা আমাকে অবশ্যই পাঠাতে থাকুন। আমরা সবাই মিলে এগিয়ে যাব, এবং আগামীদিন আরও ইতিবাচক হয়ে উঠবে, যেমন ধরুন, আমি আজ প্রথমেই বলেছি, আমরা এইবছরেই অর্থাৎ ২০২০তেই উন্নতি করব, এগিয়ে যাব এবং আমাদের দেশও নতুন উচ্চতায় পৌঁছবে। আমার বিশ্বাস যে, এই দশকে ভারতকে নতুন এক লক্ষ্যে পৌঁছে দেওয়ার উদ্দেশ্যে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা নেবে ২০২০। এই বিশ্বাসের সঙ্গেই আপনারাও এগিয়ে চলুন, সুস্থ থাকুন, ইতিবাচক থাকুন। এই শুভকামনা নিয়েই আপনাদের সকলকে অনেক অনেক ধন্যবাদ। নমস্কার।

 

 


CG/CB


(Release ID: 1634918) Visitor Counter : 515