প্রধানমন্ত্রীরদপ্তর
azadi ka amrit mahotsav

বিচার বিভাগের জাতীয় সম্মেলনে প্রধানমন্ত্রীর ভাষণের বঙ্গানুবাদ

Posted On: 31 AUG 2024 1:41PM by PIB Kolkata

নতুন দিল্লি, ৩১ অগাস্ট ২০২৪

 


অনুষ্ঠানে উপস্থিত ভারতের প্রধান বিচারপতি শ্রী ডি ওয়াই চন্দ্রচূড় মহোদয়, বিচারপতি শ্রী সঞ্জীব খান্না মহোদয়, বিচারপতি বি আর গাভাই মহোদয়, কেন্দ্রীয় আইন ও বিচারমন্ত্রী শ্রী অর্জুন রাম মেঘওয়াল মহোদয়, অ্যাটর্নি জেনারেল শ্রী আর. ভেঙ্কটরমানি মহোদয়, সুপ্রিম কোর্ট বার কাউন্সিলের চেয়ারম্যান শ্রী কপিল সিব্বল মহোদয়, বার কাউন্সিল অফ ইন্ডিয়ার চেয়ারম্যান শ্রী মনন কুমার মিশ্র মহোদয়, সুপ্রিম কোর্টের সকল বিচারপতি, হাইকোর্টের প্রধান বিচারপতি, জেলা বিচারক, অন্যান্য সম্মানিত অতিথিবৃন্দ, ভদ্রমহোদয়া ও ভদ্রমহোদয়গণ!

আপনাদের গম্ভীর আচরণ দেখে আমার মনে হচ্ছে এই অনুষ্ঠানটি বেশ ভাবগম্ভীর। মাত্র কয়েকদিন আগে, আমি রাজস্থান হাইকোর্টের প্ল্যাটিনাম জুবিলি অনুষ্ঠানে যোগ দিয়েছিলাম। আর আজ, সুপ্রিম কোর্টের যাত্রার ৭৫-তম বার্ষিকী উপলক্ষে, জেলা বিচার বিভাগের একটি জাতীয় সম্মেলন অনুষ্ঠিত হচ্ছে। সুপ্রিম কোর্টের ৭৫ বছর কেবল একটি প্রতিষ্ঠানের যাত্রা নয়, এটি ভারতীয় সংবিধান এবং সাংবিধানিক মূল্যবোধের যাত্রা! এটি ভারতের গণতন্ত্র হিসেবে পরিপক্ক হওয়ার যাত্রা! আমাদের সংবিধান প্রণেতাদের এবং বিচার বিভাগের অনেক বিশিষ্ট ব্যক্তিত্বের অবদান এই যাত্রায় অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ। এই যাত্রায় লক্ষ লক্ষ নাগরিকের অবদানও অন্তর্ভুক্ত, যারা প্রতিটি পরিস্থিতিতে বিচার বিভাগের প্রতি তাদের বিশ্বাস অটল রেখেছিলেন। ভারতের জনগণ কখনও সুপ্রিম কোর্ট বা আমাদের বিচার বিভাগের প্রতি সন্দেহ করেনি। অতএব, সুপ্রিম কোর্টের এই ৭৫ বছর গণতন্ত্রের জননী হিসেবে ভারতের গর্বকে আরও বাড়িয়ে তোলে। এটি আমাদের সাংস্কৃতিক ঘোষণাকে শক্তিশালী করে, যা বলে, "সত্যমেব জয়তে, নানৃতম" (সত্যেরই জয় হয়, মিথ্যার নয়)। জাতি যখন স্বাধীনতার ৭৫ বছর উদযাপন করছে, তখন সংবিধানের ৭৫-তম বার্ষিকী উদযাপন করতে চলেছে। অতএব, এই মুহূর্তে গর্ব, গৌরব এবং অনুপ্রেরণা রয়েছে। এই উপলক্ষে আমি সকল আইনবিদ এবং সমগ্র জাতিকে আমার আন্তরিক অভিনন্দন জানাই। এই সময়ে অনুষ্ঠিত জাতীয় জেলা বিচার বিভাগীয় সম্মেলনের জন্যও আমি আমার শুভেচ্ছা জানাই।

বন্ধুগণ,

আমাদের গণতন্ত্রে বিচার বিভাগকে সংবিধানের রক্ষক হিসেবে বিবেচনা করা হয়। এটি নিজেই একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব। আমরা গর্বের সঙ্গে বলতে পারি যে সুপ্রিম কোর্ট এবং আমাদের বিচার বিভাগ এই দায়িত্বটি সুষ্ঠুভাবে পালনের জন্য প্রচেষ্টা চালিয়েছে। স্বাধীনতার পরে, জরুরি অবস্থার অন্ধকার সময়েও বিচার বিভাগ ন্যায়বিচারের চেতনাকে রক্ষা করেছে। সেই সময়ে, সংবিধান রক্ষায় বিচার বিভাগ গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছিল। সুপ্রিম কোর্ট যখন মৌলিক অধিকারগুলিকে আক্রমণ করা হয়েছিল তখনও সেগুলি রক্ষা করেছিল। তাছাড়া, যখনই জাতীয় নিরাপত্তার প্রশ্ন উঠেছে, বিচার বিভাগ সর্বোপরি জাতীয় স্বার্থকে অক্ষুন্ন রেখেছে এবং ভারতের ঐক্যকে রক্ষা করেছে। এই সবকিছুর মধ্যে আমি এই স্মরণীয় ৭৫ বছরের জন্য সমস্ত পণ্ডিতদের অভিনন্দন জানাই।

বন্ধুগণ,

গত ১০ বছরে, দেশ ন্যায়বিচার সহজলভ্য করার জন্য বেশ কিছু প্রচেষ্টা গ্রহন করেছে। আদালতের আধুনিকীকরণের জন্য একটি মিশন পর্যায়ে কাজ করা হচ্ছে, যেখানে সুপ্রিম কোর্ট এবং বিচার বিভাগের সহযোগিতা উল্লেখযোগ্য। আজ, জেলা বিচার বিভাগের এই অনুষ্ঠানটি একই প্রচেষ্টার আরেকটি উদাহরণ। আগে, এখানে উল্লেখ করা হয়েছিল যে সুপ্রিম কোর্ট এবং গুজরাট হাইকোর্ট যৌথভাবে "অল ইন্ডিয়া ডিস্ট্রিক্ট কোর্ট জাজেস কনফারেন্স" আয়োজন করেছে। ন্যায়বিচার সহজ করার জন্য এই ধরনের অনুষ্ঠান অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। আমাকে জানানো হয়েছে, যে আগামী দুদিন ধরে এখানে বেশ কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় নিয়ে আলোচনা করা হবে, যেমন বিচারাধীন মামলার ব্যবস্থাপনা, মানবসম্পদ এবং আইনি ভ্রাতৃত্বের উন্নতি। আপনারা আলোচনার জন্য প্রয়োজনীয় সমস্ত বিষয় নির্বাচন করেছেন। আমি আনন্দিত যে, এই সমস্ত কিছুর পাশাপাশি, আগামী দুদিন ধরে বিচারকদের সুস্থতা সম্পর্কিত একটি অধিবেশনও অনুষ্ঠিত হবে। ব্যক্তিগত সুস্থতা সামাজিক সুস্থতার জন্য সর্বাগ্রে প্রয়োজন। এটি আমাদের কর্মসংস্কৃতিতে স্বাস্থ্যকে অগ্রাধিকার দিতে সাহায্য করবে।
বন্ধুগণ,

আমরা সকলেই জানি যে স্বাধীনতার এই অমৃত কাল, ১৪০ কোটি ভারতবাসীর স্বপ্ন হল 'বিকশিত ভারত' (উন্নত ভারত) এবং নতুন ভারত! নতুন ভারত মানে চিন্তাভাবনা এবং সংকল্প-সহ একটি আধুনিক ভারত! আমাদের বিচার বিভাগ এই দৃষ্টিভঙ্গির একটি শক্তিশালী স্তম্ভ, বিশেষ করে আমাদের জেলা বিচার বিভাগ। জেলা বিচার বিভাগ হল ভারতীয় বিচার ব্যবস্থার ভিত্তি। দেশের সাধারণ নাগরিক প্রথমে ন্যায়বিচারের জন্য আপনার দরজায় কড়া নাড়ে। অতএব, এটি ন্যায়বিচারের প্রথম কেন্দ্র, প্রথম পদক্ষেপ। এটিকে সম্পূর্ণরূপে সক্ষম এবং আধুনিক করে তোলা দেশের জন্য একটি অগ্রাধিকার। আমি নিশ্চিত যে এই জাতীয় সম্মেলন, এর আলোচনা-সহ, জাতির প্রত্যাশা পূরণে সহায়তা করবে।

বন্ধুগণ,

যে কোনো দেশের উন্নয়নের জন্য যদি কোন অর্থবহ মানদণ্ড থাকে, তা হলো সাধারণ মানুষের জীবনযাত্রার মান। এটি কেবল তখনই সম্ভব হবে যখন আমাদের জেলা আদালতগুলি আধুনিক অবকাঠামো এবং প্রযুক্তিতে সজ্জিত হবে। আমরা সকলেই জানি যে আজ জেলা আদালতগুলিতে প্রায় ৪.৫ কোটি মামলা বিচারাধীন রয়েছে। ন্যায়বিচারের এই বিলম্ব দূর করার জন্য গত দশকে বেশ কয়েকটি প্রচেষ্টা করা হয়েছে। গত ১০ বছরে, দেশ বিচার পরিকাঠামোর উন্নয়নে প্রায় ৮,০০০ কোটি টাকা ব্যয় করেছে। আপনারা জেনে খুশি হবেন যে গত ২৫ বছরে বিচার পরিকাঠামোর জন্য ব্যয় করা অর্থের ৭৫ শতাংশ গত ১০ বছরে ব্যয় করা হয়েছে। শুধুমাত্র এই ১০ বছরে, জেলা বিচার বিভাগের জন্য ৭,৫০০টিরও বেশি আদালত হল এবং ১১,০০০ আবাসিক ইউনিট প্রস্তুত করা হয়েছে।

বন্ধুগণ,

যখনই আমি আইনজীবী সমাজের মধ্যে আসি, তখনই স্বাভাবিকভাবেই ই-কোর্টের বিষয়টি উঠে আসে। এই প্রযুক্তিগত হস্তক্ষেপ/উদ্ভাবন কেবল বিচার প্রক্রিয়াকেই ত্বরান্বিত করেনি বরং আইনজীবী থেকে শুরু করে মামলাকারী সকলের সমস্যা দ্রুত হ্রাস করেছে। আজ, সারা দেশের আদালতগুলিকে ডিজিটালাইজ করা হচ্ছে। এবং যেমনটি আমি উল্লেখ করেছি, সুপ্রিম কোর্টের ই-কমিটি এই সমস্ত প্রচেষ্টায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে।

বন্ধুগণ,

গত বছর, ই-কোর্টস প্রকল্পের তৃতীয় পর্যায়ও অনুমোদিত হয়েছিল। আমরা একটি ঐক্যবদ্ধ প্রযুক্তি প্ল্যাটফর্ম তৈরির দিকে এগিয়ে যাচ্ছি। এর অধীনে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা এবং অপটিক্যাল ক্যারেক্টার রিকগনিশনের মতো উদীয়মান প্রযুক্তি ব্যবহার করা হবে। আমরা বিচারাধীন মামলাগুলি বিশ্লেষণ করতে সক্ষম হব এবং এমনকি ভবিষ্যতের মামলাগুলির পূর্বাভাস দিতেও সক্ষম হব। প্রযুক্তি পুলিশ, ফরেনসিক, জেল এবং আদালতকে একীভূত করবে এবং তাদের কাজকেও ত্বরান্বিত করবে। আমরা এমন একটি বিচার ব্যবস্থার দিকে এগিয়ে যাচ্ছি যা ভবিষ্যতের জন্য সম্পূর্ণরূপে প্রস্তুত হবে।

বন্ধুগণ,

আপনারা জানেন যে, একটি উল্লেখযোগ্য পরিবর্তনে, পরিকাঠামো এবং প্রযুক্তির পাশাপাশি, নিয়ম, নীতি এবং উদ্দেশ্যও ভূমিকা পালন করে। অতএব, স্বাধীনতার সাত দশক পর, দেশটি প্রথমবারের মতো আমাদের আইনি কাঠামোতে গুরুত্বপূর্ণ পরিবর্তন এনেছে। আমরা ভারতীয় ন্যায় সংহিতার আকারে একটি নতুন ভারতীয় আইনি কোড পেয়েছি। এই আইনগুলির মূল কথা হল 'নাগরিক প্রথমে, মর্যাদা আগে এবং ন্যায়বিচার আগে'। আমাদের ফৌজদারি আইনগুলি শাসক এবং প্রজাদের ঔপনিবেশিক মানসিকতা থেকে মুক্ত করা হয়েছে। দেশদ্রোহিতার মতো ব্রিটিশ আইন বাতিল করা হয়েছে। ভারতীয় ন্যায় সংহিতা কেবল নাগরিকদের শাস্তি দেওয়ার জন্য নয়, নাগরিকদের নিরাপত্তা প্রদানের জন্যও। এই কারণেই, একদিকে, নারী ও শিশুদের বিরুদ্ধে অপরাধ মোকাবিলায় কঠোর আইন তৈরি করা হয়েছে। ইলেকট্রনিক এবং ডিজিটাল রেকর্ড এখন প্রমাণ হিসাবে স্বীকৃত। ভারতীয় নাগরিক সুরক্ষা সংহিতার অধীনে এখন বৈদ্যুতিনভাবে সমন পাঠানো যেতে পারে। এটি বিচার বিভাগের উপর বিচারাধীন মামলার বোঝাও কমাবে। আমি অনুরোধ করছি যে সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশে জেলা বিচার বিভাগকে এই নতুন ব্যবস্থায় প্রশিক্ষণ দেওয়ার জন্য নতুন উদ্যোগ নেওয়া উচিত। আমাদের বিচারক এবং আইনজীবী সহকর্মীরাও এই প্রচারে অংশ হতে পারেন। এই নতুন ব্যবস্থার সঙ্গে জনসাধারণকে পরিচিত করার ক্ষেত্রে আইনজীবী এবং বার অ্যাসোসিয়েশনগুলিরও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রয়েছে।

বন্ধুগণ,

আমি দেশ ও সমাজের সামনে আরেকটি জ্বলন্ত বিষয় উত্থাপন করতে চাই। আজ, নারীর বিরুদ্ধে নৃশংসতা এবং শিশুদের নিরাপত্তা সমাজের জন্য গুরুতর উদ্বেগের বিষয়। নারীর সুরক্ষার জন্য দেশে বেশ কয়েকটি কঠোর আইন প্রণয়ন করা হয়েছে। ২০১৯ সালে, সরকার ফাস্ট ট্র্যাক বিশেষ আদালত প্রতিষ্ঠার প্রস্তাব করেছিল। এর অধীনে গুরুত্বপূর্ণ সাক্ষীদের জন্য জবানবন্দি কেন্দ্রের ব্যবস্থা রয়েছে। জেলা নজরদারি কমিটিগুলিও এতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে পারে। এই কমিটিতে জেলা জজ, ডিএম এবং এসপি অন্তর্ভুক্ত রয়েছেন। ফৌজদারি বিচার ব্যবস্থার বিভিন্ন দিকের মধ্যে সমন্বয় সাধনে তাদের ভূমিকা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। আমাদের এই কমিটিগুলিকে আরও সক্রিয় করতে হবে। নারীর বিরুদ্ধে নৃশংসতা সম্পর্কিত মামলায় যত দ্রুত সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে, জনসংখ্যার অর্ধেক তাদের সুরক্ষার প্রতি তত বেশি আস্থা রাখবে।

বন্ধুগণ,

আমার বিশ্বাস, এখানকার আলোচনা দেশের জন্য মূল্যবান সমাধানের পথ তৈরি করবে এবং 'সকলের জন্য ন্যায়বিচার' অর্জনের পথ সুদৃঢ় হবে। আবারও, এই পবিত্র অনুষ্ঠান এবং সমাবেশের জন্য আপনাদের সকলকে আমার শুভেচ্ছা জানাচ্ছি, এই আশায় যে এই আলোচনা জ্ঞানের অমৃত দান করবে।

আপনাদের সকলকে অনেক ধন্যবাদ.

এটি প্রধানমন্ত্রীর ভাষণের আনুমানিক বঙ্গানুবাদ। মূল ভাষণটি হিন্দিতে দেওয়া হয়েছিল।

 

SSS/PM/CS


(Release ID: 2177663) Visitor Counter : 5