প্রধানমন্ত্রীরদপ্তর
গুজরাটের ভাবনগরে ‘সমুদ্র সে সমৃদ্ধি’ অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রীর ভাষণ
Posted On:
20 SEP 2025 2:33PM by PIB Kolkata
নয়াদিল্লি, ২০ সেপ্টেম্বর, ২০২৫
গুজরাটের জনপ্রিয় মুখ্যমন্ত্রী শ্রী ভূপেন্দ্রভাই প্যাটেল, কেন্দ্রীয় মন্ত্রী পরিষদের আমার সহকর্মীরা, সর্বানন্দ সোনোয়াল জি, সি আর পাতিল জি, মনসুখ ভাই মান্ডাভিয়া জি , শান্তনু ঠাকুর জি, নিমুবেন বাবনিয়া জি, দেশের ৪০টিরও বেশি স্থান থেকে, সমস্ত প্রধান বন্দর থেকে, বিভিন্ন রাজ্যের মন্ত্রী, উচ্চপদস্থ কর্মকর্তা, অন্যান্য গণ্যমান্য ব্যক্তিবর্গ এবং আমার প্রিয় ভাই ও বোনেরা, আপনাদের সকলকে অভিনন্দন।
আমাদের ভাবনগরে একটা উত্তেজনা তৈরি হয়েছে, হ্যাঁ, বিদ্যুৎ এসেছে। প্যান্ডেলের বাইরে আমি মানুষের সমুদ্র দেখতে পাচ্ছি। এত বিপুল সংখ্যক মানুষ আমাদের আশীর্বাদ করার জন্য এসেছিলেন, তাদের সকলের প্রতি আমি কৃতজ্ঞ।
বন্ধুগণ,
এই অনুষ্ঠানটি ভাবনগরে অনুষ্ঠিত হচ্ছে, তবে এই অনুষ্ঠানটি সমগ্র ভারতের জন্য। আজ, ভাবনগর সেই উপলক্ষ, এবং ভাবনগরকে এই গুরুত্বপূর্ণ কর্মসূচির কেন্দ্র হিসেবে বেছে নেওয়া হয়েছে, যা সমগ্র ভারত জুড়ে ‘সমুদ্র থেকে সমৃদ্ধি’র দিকে আমাদের দিকনির্দেশ প্রতিফলিত করবে। গুজরাটের জনগণ এবং ভাবনগরের জনগণকে অনেক অভিনন্দন।
বন্ধুগণ,
গত ১৭ই সেপ্টেম্বর, আপনারা সকলেই আপনাদের নরেন্দ্র ভাইকে যে শুভেচ্ছা পাঠিয়েছেন, দেশ ও বিশ্ব থেকে যে শুভকামনা পেয়েছি, ব্যক্তিগতভাবে সবাইকে ধন্যবাদ জানানো সম্ভব নয়, তবে ভারত এবং বিশ্বের প্রতিটি কোণ থেকে আমি যে ভালোবাসা এবং আশীর্বাদ পেয়েছি তা আমার সবচেয়ে বড় সম্পদ, এটাই আমার সবচেয়ে বড় শক্তি এবং তাই আজ আমি দেশ ও বিশ্বের সকল মহান ব্যক্তিদের প্রতি প্রকাশ্যে আমার আন্তরিক কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করছি। এখানে, একটি মেয়ে একটি ছবি এনেছে, আর ওখানে, একটি ছেলে একটি ছবি এনেছে। দয়া করে সেগুলি সংগ্রহ করুন, ভাই। এই শিশুদের জন্য আমার আন্তরিক আশীর্বাদ। যারা এটি এনেছে তাদের ধন্যবাদ। আপনাদেরদে ভালোবাসা এবং আপনার সমস্ত কঠোর পরিশ্রমের জন্য আমি কৃতজ্ঞ। ধন্যবাদ, স্যার। ধন্যবাদ, পুত্র। ধন্যবাদ, বন্ধু।
বন্ধুগণ,
বিশ্বকর্মা জয়ন্তী থেকে গান্ধী জয়ন্তী পর্যন্ত, অর্থাৎ ১৭ সেপ্টেম্বর থেকে ২ অক্টোবর পর্যন্ত, দেশজুড়ে লক্ষ লক্ষ মানুষ সেবা পখওয়াড়া উদযাপন করছেন। আমাকে বলা হয়েছে যে গুজরাটেও এখন ১৫ দিনের একটি সেবা পখওয়াড়া চলছে, কিন্তু গত দুই-তিন দিনে, সেবা পখওয়াড়ার সময় অনেক অনুষ্ঠান আয়োজিত হয়েছে, শত শত জায়গায় রক্তদান শিবিরের আয়োজন করা হয়েছে, আর তাদের মধ্যে এখন পর্যন্ত ১,০০,০০০ মানুষ রক্তদান করেছেন। আমি কেবল গুজরাট সম্পর্কে যে তথ্য পেয়েছি তা শেয়ার করছি। অনেক শহরে পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা অভিযান পরিচালিত হয়েছিল, লক্ষ লক্ষ মানুষ এই পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা অভিযানে অংশগ্রহণ করেছিলেন, রাজ্যের ৩০ হাজারেরও বেশি জায়গায়, এই সংখ্যাটি অনেক বড়, স্বাস্থ্য শিবির স্থাপন করা হয়েছে, যেখানে মানুষকে পরীক্ষা-নিরীক্ষা এবং চিকিৎসার মাধ্যমে সহায়তা করা হচ্ছে, যেখানে মহিলাদের স্বাস্থ্যকে বিশেষভাবে গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে। আমি সারা দেশে এই সেবামূলক প্রচেষ্টার সঙ্গে জড়িত সকলকে অভিনন্দন জানাই এবং কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করি।
বন্ধুগণ,
আজ এই অনুষ্ঠানে, প্রথমেই আমি কৃষ্ণ কুমার সিংজির গুণাবলী স্মরণ করছি। সর্দার সাহেবের মিশনে যোগ দিয়ে তিনি ভারতের ঐক্যে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রেখেছিলেন। আজ, এই মহান দেশপ্রেমিকদের দ্বারা অনুপ্রাণিত হয়ে, আমরা ভারতের ঐক্যকে শক্তিশালী করছি এবং "এক ভারত, শ্রেষ্ঠ ভারত" এর চেতনাকে শক্তিশালী করছি।
বন্ধুগণ,
আজ আমি এমন এক সময়ে ভাবনগরে এসেছি যখন নবরাত্রির পবিত্র উৎসব শুরু হতে চলেছে। এবার, জিএসটি হ্রাসের ফলে, বাজারগুলি আরও প্রাণবন্ত হতে চলেছে, এবং এই উৎসবমুখর পরিবেশে, আজ আমরা সমুদ্র থেকে সমৃদ্ধির মহা উৎসব উদযাপন করছি। ভাবনগরের ভাইয়েরা, আমাকে ক্ষমা করবেন, আমাকে হিন্দিতে কথা বলতে হচ্ছে কারণ সারা দেশ থেকে মানুষ এই অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণ করছে। যখন সারা দেশ থেকে লক্ষ লক্ষ মানুষ এই অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণ করছে, তখন আমি ক্ষমা চাইছি এবং হিন্দিতে কথা বলতে হচ্ছে।
বন্ধুগণ,
একবিংশ শতাব্দীর ভারত আজ সমুদ্রকে একটি বিশাল সুযোগ হিসেবে দেখে। কিছুক্ষণ আগে, বন্দর-কেন্দ্রিক উন্নয়ন ত্বরান্বিত করার জন্য এখানে হাজার হাজার কোটি টাকার প্রকল্পের ভিত্তিপ্রস্তর এবং উদ্বোধন করা হয়েছে। দেশে ক্রুজ পর্যটনকে উৎসাহিত করার জন্য, আজ মুম্বাইয়ের আন্তর্জাতিক ক্রুজ টার্মিনালেরও উদ্বোধন করা হয়েছে। গুজরাটের ভাবনগরের উন্নয়নের সাথে সম্পর্কিত বেশ কয়েকটি প্রকল্পও শুরু হয়েছে। আমি সকল দেশবাসী এবং গুজরাটের জনগণকে আমার শুভেচ্ছা জানাই।
বন্ধুগণ,
আজ, ভারত বিশ্ব ভ্রাতৃত্বের চেতনা নিয়ে এগিয়ে চলেছে। বিশ্বে আমাদের কোনও বড় শত্রু নেই। যদি আমাদের সত্যিকার অর্থে কোন শত্রু থাকে, তাহলে তা হলো অন্যান্য দেশের উপর আমাদের নির্ভরতা। এটাই আমাদের সবচেয়ে বড় শত্রু। একসঙ্গে মিলেমিশে আমাদের ভারতের এই শত্রু, পরাধীনতার শত্রুকে পরাজিত করতে হবে। আমাদের সর্বদা এই কথাটি পুনরাবৃত্তি করতে হবে, বিদেশী নির্ভরতা যত বেশি হবে, দেশের ব্যর্থতা তত বেশি হবে, বিশ্বের শান্তি, স্থিতিশীলতা এবং সমৃদ্ধির জন্য, বিশ্বের বৃহত্তম জনসংখ্যার দেশকে স্বাবলম্বী হতে হবে। আমরা যদি অন্যের উপর নির্ভরশীল থাকি, তাহলে আমাদের আত্মসম্মানও ক্ষতিগ্রস্ত হবে। আমরা ১৪০ কোটি দেশবাসীর ভবিষ্যৎ অন্যের উপর ছেড়ে দিতে পারি না, দেশের উন্নয়নের সংকল্পকে অন্যের উপর নির্ভরশীল করে ছেড়ে দিতে পারি না, আমরা ভবিষ্যৎ প্রজন্মের ভবিষ্যৎকে ঝুঁকির মুখে ফেলতে পারি না।
আর তাই, ভাই ও বোনেরা,
গুজরাটিতে একটা কথা আছে, "একশো সমস্যার একটাই ঔষধ। ১০০ সমস্যার একটাই ঔষধ, আর সেটা হলো আত্মনির্ভর ভারত।" কিন্তু এর জন্য আমাদের চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হতে হবে, অন্যান্য দেশের উপর আমাদের নির্ভরতা ক্রমাগত কমাতে হবে। আর এখন ভারতকে আত্মনির্ভরশীল হতে হবে এবং বিশ্বের সামনে শক্তিশালী হয়ে দাঁড়াতে হবে।
ভাই ও বোনেরা,
ভারতে সম্ভাবনার কোনও অভাব নেই। কিন্তু স্বাধীনতার পর, কংগ্রেস দল ভারতের প্রতিটি সম্ভাবনাকে উপেক্ষা করেছে। অতএব, স্বাধীনতার ছয় থেকে সাত দশক পরেও, ভারত তার প্রাপ্য সাফল্য অর্জন করতে পারেনি। এর দুটি প্রধান কারণ ছিল: দীর্ঘ সময় ধরে, কংগ্রেস সরকার দেশকে লাইসেন্স-কোটা রাজে জড়িয়ে রেখেছিল, বিশ্ব বাজার থেকে বিচ্ছিন্ন করে রেখেছিল। আর তারপর যখন বিশ্বায়নের যুগ এলো, তখন কেবল আমদানির পথ অবলম্বন করা হলো। আর সে পথেই হাজার হাজার কোটি টাকার কেলেঙ্কারি সংঘটিত হয়েছিল। কংগ্রেস সরকারের এই নীতিগুলি দেশের যুবসমাজের বিরাট ক্ষতি করেছিল। এই নীতিগুলি ভারতের প্রকৃত শক্তি প্রকাশ পেতে বাধা দিয়েছিল।
বন্ধুগণ,
আমাদের জাহাজ পরিবহণ ক্ষেত্রটি দেশের ক্ষতির একটি প্রধান উদাহরণ। আপনারা জানেন যে ভারত শতাব্দীর পর শতাব্দী ধরে একটি প্রধান সামুদ্রিক শক্তি ছিল এবং বিশ্বের বৃহত্তম জাহাজ নির্মাণ কেন্দ্র ছিল। ভারতের উপকূলীয় রাজ্যগুলিতে নির্মিত জাহাজ জাতীয় ও আন্তর্জাতিক বাণিজ্যকে উৎসাহিত করত। এমনকি ৫০ বছর আগেও, আমরা ভারতে নির্মিত জাহাজ ব্যবহার করতাম। সেই সময়ে, ভারতের আমদানি ও রপ্তানির ৪০ শতাংশেরও বেশি দেশীয়ভাবে নির্মিত জাহাজের মাধ্যমে পরিচালিত হত। কিন্তু, দেশের জাহাজ পরিবহণ ক্ষেত্রটিও কংগ্রেসের অপকর্মের শিকার হয়েছিল। ভারতে জাহাজ নির্মাণের উপর জোর দেওয়ার পরিবর্তে, কংগ্রেস বিদেশী জাহাজ ভাড়া করাকেই বেশি প্রাধান্য দিয়েছিল। এর ফলে ভারতের জাহাজ নির্মাণ ব্যবস্থা স্থবির হয়ে পড়ে, সেজন্য বিদেশী জাহাজের উপর আমাদের নির্ভরতা অপরিহার্য হয়ে ওঠে। ফলস্বরূপ, যেখানে ৫০ বছর আগে ৪০% বাণিজ্য বিদেশী জাহাজের উপর ভিত্তি করে ছিল, ভারতীয় জাহাজের বাণিজ্য পরিচালনার পরিমাণ কমে মাত্র পাঁচ শতাংশে দাঁড়িয়েছে। এর অর্থ হল, আমাদের বাণিজ্যের ৯৫ শতাংশের জন্য আমরা বিদেশী জাহাজের উপর নির্ভরশীল হয়ে পড়েছি। বিদেশী জাহাজের উপর এই নির্ভরতার কারণে আমাদের উল্লেখযোগ্য পরিমাণ ক্ষতি হয়েছে।
বন্ধুগণ,
আজ আমি দেশ এবং আপনাদের সকলের সামনে কিছু পরিসংখ্যান উপস্থাপন করতে চাই। দেশবাসী জেনে অবাক হবেন যে, আজ প্রতি বছর ভারত বিদেশী জাহাজ কোম্পানিগুলিকে জাহাজ পরিষেবার জন্য প্রায় ৭৫ বিলিয়ন ডলার অর্থাৎ প্রায় ৬ লক্ষ কোটি টাকা প্রদান করে এবং মাল পরিবহন করে। আজ, ভারতের প্রতিরক্ষা বাজেটের প্রায় সমান পরিমাণ অর্থ ভাড়ার জন্য ব্যয় করা হচ্ছে। একবার ভাবুন তো, গত সাত দশকে আমরা অন্যান্য দেশকে ভাড়া হিসেবে কত টাকা দিয়েছি। আমাদের টাকা দিয়ে বিদেশে লক্ষ লক্ষ কর্মসংস্থান তৈরি হয়েছে। একবার ভাবুন, যদি পূর্ববর্তী সরকারগুলি এই বিশাল অঙ্কের অর্থের সামান্য অংশও জাহাজ শিল্পে বিনিয়োগ করত, তাহলে আজ বিশ্ব আমাদের জাহাজ ব্যবহার করত, আমরা জাহাজ পরিষেবার আকারে লক্ষ লক্ষ কোটি টাকা পেতাম, এবং আমরা অন্য সবকিছুর পাশাপাশি তাও সাশ্রয় করতাম।
বন্ধুগণ,
যদি ভারতকে ২০৪৭ সালের মধ্যে উন্নয়ন করতে হয়, যখন দেশটি তার স্বাধীনতার ১০০ বছর উদযাপন করবে, তাহলে ভারতকে স্বনির্ভর হতে হবে। ভারতের কাছে আত্মনির্ভরশীল হওয়া ছাড়া আর কোন বিকল্প নেই। ১৪০ কোটি দেশবাসীর একটাই সংকল্প থাকা উচিত, সেটা চিপ হোক বা জাহাজ, আমাদের তা কেবল ভারতেই করতে হবে। এই চিন্তাভাবনা নিয়ে, আজ ভারতের সামুদ্রিক ক্ষেত্রও পরবর্তী প্রজন্মের সংস্কার গ্রহণ করতে চলেছে। আজ থেকে, দেশের প্রতিটি প্রধান বন্দর বিভিন্ন নথি এবং বিভিন্ন প্রক্রিয়া থেকে মুক্ত থাকবে। এক জাতি, এক নথি, এবং এক জাতি, এক বন্দর প্রক্রিয়া বাণিজ্য ও ব্যবসাকে আরও সহজ করবে। একটু আগেই, আমাদের মন্ত্রী সর্বানন্দ সোনোয়াল জি তার বক্তব্যে যেমনটি উল্লেখ করেছেন, সংসদের বর্ষাকালীন অধিবেশনে, আমরা ব্রিটিশ আমলের বেশ কয়েকটি পুরনো আইন সংশোধন করেছি। আমরা সমুদ্র খাতে একাধিক সংস্কার শুরু করেছি। আমাদের সরকার দেশে পাঁচটি সামুদ্রিক আইন নতুন রূপে উপস্থাপন করেছে। এই আইনগুলি এবং তাদের বাস্তবায়ন জাহাজ চলাচল খাত এবং বন্দর প্রশাসনে এক বিরাট রূপান্তর আনবে।
বন্ধুগণ,
ভারত শতাব্দীর পর শতাব্দী ধরে বড় জাহাজ তৈরিতে বিশেষজ্ঞ। পরবর্তী প্রজন্মের সংস্কার এই ভুলে যাওয়া গৌরব পুনরুদ্ধারে সাহায্য করবে। গত দশকে, আমরা নৌবাহিনীতে ৪০টিরও বেশি জাহাজ এবং সাবমেরিন অন্তর্ভুক্ত করেছি। একটি বা দুটি বাদে, এগুলি সবই আমরা ভারতে তৈরি করেছি। আপনি হয়তো আইএনএস বিক্রান্তের কথা শুনেছেন, বিশাল আইএনএস বিক্রান্ত, যা ভারতেও নির্মিত হয়েছিল। এটি তৈরিতে ব্যবহৃত উচ্চমানের ইস্পাতও ভারতে তৈরি হয়েছিল। এর অর্থ হল আমাদের সামর্থ্য আছে, আমাদের দক্ষতার কোন অভাব নেই। আজ, আমি আমার দেশবাসীকে আশ্বস্ত করছি যে বৃহৎ জাহাজ তৈরির জন্য রাজনৈতিক ইচ্ছাশক্তির প্রয়োজন।
বন্ধুগণ,
গতকালও দেশের সামুদ্রিক ক্ষেত্রকে শক্তিশালী করার জন্য একটি অত্যন্ত ঐতিহাসিক সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। আমরা জাতীয় নীতিতে একটি বড় পরিবর্তন এনেছি। সরকার এখন বৃহৎ জাহাজকে পরিকাঠামো হিসেবে স্বীকৃতি দেয়। যখন কোনও ক্ষেত্রকে পরিকাঠামো হিসেবে স্বীকৃতি দেওয়া হয়, তখন এটি ব্যাপকভাবে উপকৃত হয়। এখন, বড় জাহাজ নির্মাণ কোম্পানিগুলির জন্য ব্যাংক থেকে ঋণ পাওয়া সহজ হবে, তারা সুদের হারেও ছাড় পাবে, পরিকাঠামোগত অর্থায়নের অন্যান্য সমস্ত সুবিধাও এই জাহাজ নির্মাণ কোম্পানিগুলি পাবে। সরকারের এই সিদ্ধান্ত ভারতীয় জাহাজ কোম্পানিগুলির উপর বোঝা কমাবে এবং তাদের বিশ্বব্যাপী প্রতিযোগিতায় এগিয়ে যেতে সাহায্য করবে।
বন্ধুগণ,
ভারতকে বিশ্বের একটি প্রধান সামুদ্রিক শক্তি হিসেবে গড়ে তোলার জন্য, ভারত সরকার আরও তিনটি প্রধান পরিকল্পনা নিয়ে কাজ করছে। এই তিনটি প্রকল্প জাহাজ নির্মাণ খাতের জন্য আর্থিক সহায়তা প্রদান করবে, আমাদের জাহাজ নির্মাণ প্রতিষ্ঠানগুলিকে আধুনিক প্রযুক্তি গ্রহণে সহায়তা করবে এবং নকশা ও মান উল্লেখযোগ্যভাবে উন্নত করবে। আগামী বছরগুলিতে এই প্রকল্পগুলিতে সত্তর হাজার কোটি টাকারও বেশি ব্যয় করা হবে।
বন্ধুগণ,
আমার মনে আছে, ২০০৭ সালে, যখন আমি মুখ্যমন্ত্রী হিসেবে আপনাদের সেবা করছিলাম, তখন গুজরাট জাহাজ নির্মাণের সুযোগ নিয়ে একটি বড় সেমিনারের আয়োজন করেছিল। সেই সময়কালে, আমরা গুজরাটে জাহাজ নির্মাণ বাস্তুতন্ত্রকে সমর্থন করেছিলাম। এখন, আমরা দেশজুড়ে জাহাজ নির্মাণের প্রচারের জন্য ব্যাপক পদক্ষেপ নিচ্ছি। এখানকার বিশেষজ্ঞরা জানেন যে জাহাজ নির্মাণ কোনও সাধারণ শিল্প নয়। জাহাজ নির্মাণ শিল্পকে সকল শিল্পের জননী, সকল শিল্পের জননী, সারা বিশ্বের সকল শিল্পের জননী বলা হয়। কারণ এতে কেবল জাহাজ তৈরি হয় না, এর সাথে যুক্ত শিল্পগুলিও প্রসারিত হয়। ইস্পাত, যন্ত্রপাতি, ইলেকট্রনিক্স, টেক্সটাইল, রঙ, আইটি সিস্টেম এবং আরও অনেক শিল্প জাহাজ শিল্প দ্বারা সমর্থিত। এটি ক্ষুদ্র ও ক্ষুদ্র শিল্প, যার মধ্যে এমএসএমই-ও রয়েছে, উপকৃত হয়। গবেষণায় দেখা গেছে যে জাহাজ নির্মাণে বিনিয়োগ করা প্রতিটি টাকা অর্থনীতিতে বিনিয়োগের প্রায় দ্বিগুণ করে তোলে। এবং একটি জাহাজ নির্মাণে তৈরি প্রতিটি কর্মসংস্থান সরবরাহ শৃঙ্খলে ছয় থেকে সাতটি নতুন কর্মসংস্থান তৈরি করে। এর অর্থ হল, জাহাজ নির্মাণ শিল্পে যদি ১০০টি কর্মসংস্থান তৈরি হয়, তাহলে সংশ্লিষ্ট খাতে ৬০০টিরও বেশি কর্মসংস্থান তৈরি হয়। জাহাজ নির্মাণের বিশাল গুণীতক প্রভাব এটাই।
বন্ধুগণ,
আমরা জাহাজ নির্মাণের জন্য প্রয়োজনীয় দক্ষতার উপরও জোর দিচ্ছি। আমাদের আইটিআইগুলি এতে কার্যকর হবে এবং সামুদ্রিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলির ভূমিকা বৃদ্ধি পাবে। বছরের পর বছর ধরে, আমরা নৌবাহিনী এবং এনসিসির মধ্যে সমন্বয়ের মাধ্যমে উপকূলীয় অঞ্চলে নতুন ব্যবস্থা তৈরি করেছি। এই এনসিসি ক্যাডেটদের নৌবাহিনীর পাশাপাশি বাণিজ্যিক ক্ষেত্রেও ভূমিকা পালনের জন্য প্রস্তুত করা হবে।
বন্ধুগণ,
আজকের ভারত ভিন্ন মানসিকতা নিয়ে এগিয়ে চলেছে। আমরা যে লক্ষ্যই নির্ধারণ করি না কেন, আমরা নির্ধারিত সময়ের আগেই তা অর্জন করি। ভারত এখন নির্ধারিত সময়ের চার থেকে পাঁচ বছর আগেই তার সৌর লক্ষ্যমাত্রা অর্জন করছে। বন্দর-নেতৃত্বাধীন উন্নয়নেও ১১ বছর সময় লাগছে। ভারত আমাদের পূর্বে নির্ধারিত লক্ষ্য অর্জনে অসাধারণ সাফল্য অর্জন করছে। আমরা বৃহৎ জাহাজ পরিবহনের জন্য দেশজুড়ে বৃহৎ বন্দর নির্মাণ করছি এবং সাগরমালার মতো প্রকল্পের মাধ্যমে বন্দর সংযোগ বৃদ্ধি করছি।
বন্ধুগণ,
গত ১১ বছরে ভারত তার বন্দরের ক্ষমতা দ্বিগুণ করেছে। ২০১৪ সালের আগে, ভারতে জাহাজ পরিবহনের সময় গড়ে দুই দিন ছিল। আজ, ভারতে জাহাজ পরিবহনের সময় এক দিনেরও কম হয়েছে। আমরা দেশে নতুন এবং বৃহত্তর বন্দরও নির্মাণ করছি। সম্প্রতি, কেরালায় দেশের প্রথম গভীর জলের কন্টেইনার ট্রান্সশিপমেন্ট বন্দর উদ্বোধন করা হয়েছে। মহারাষ্ট্রের বধবন বন্দরটি ₹৭৫,০০০ কোটি টাকারও বেশি ব্যয়ে নির্মিত হচ্ছে। এটি একদিন বিশ্বের শীর্ষ দশটি বন্দরের মধ্যে একটি হয়ে উঠবে।
বন্ধুগণ,
বর্তমানে সমুদ্র বাণিজ্যে ভারতের অংশ মাত্র ১০ শতাংশ। আমরা এটি আরও বাড়াতে চাই, ২০৪৭ সালের মধ্যে বিশ্বব্যাপী সামুদ্রিক বাণিজ্যে আমাদের অংশ প্রায় তিনগুণ করতে চাই। এবং আমরা তা করব।
বন্ধুগণ,
আমাদের সামুদ্রিক বাণিজ্য যত বাড়ছে, আমাদের নাবিকদের সংখ্যাও তত বাড়ছে। এঁরা হলেন পরিশ্রমী পেশাদার যাঁরা সমুদ্রে জাহাজ পরিচালনা করেন, ইঞ্জিন ও যন্ত্রপাতি পরিচালনা করেন এবং লোডিং এবং আনলোডিং তত্ত্বাবধান করেন। এক দশক আগে, আমাদের নাবিকদের সংখ্যা ছিল ১.২৫ লক্ষেরও কম। কিন্তু আজ তাঁদের সংখ্যা তিন লক্ষ ছাড়িয়ে গেছে। আজ, ভারত বিশ্বের শীর্ষ তিনটি দেশের মধ্যে একটি হয়ে উঠেছে, যেখানে সর্বাধিক সংখ্যক নাবিক রয়েছে এবং এটি ভারতের যুবকদের জন্য কর্মসংস্থানের সুযোগ বৃদ্ধি করে। এর অর্থ হল ভারতের ক্রমবর্ধমান জাহাজ শিল্পও তার বিশ্বব্যাপী শক্তি বৃদ্ধি করছে।
বন্ধুগণ,
ভারতের রয়েছে সমৃদ্ধ সামুদ্রিক ঐতিহ্য। আমাদের জেলেরা, আমাদের প্রাচীন বন্দর শহরগুলি এই ঐতিহ্যের প্রতীক। আমাদের ভাবনগর, সৌরাষ্ট্র, এর একটি উজ্জ্বল উদাহরণ। আমাদের এই ঐতিহ্য ভবিষ্যৎ প্রজন্মের কাছে পৌঁছে দিতে হবে এবং বিশ্বের কাছে আমাদের শক্তি প্রদর্শন করতে হবে। আর সেই কারণেই আমরা লোথালে একটি চমৎকার সামুদ্রিক জাদুঘর তৈরি করছি। আর এটিও বিশ্বের বৃহত্তম সামুদ্রিক জাদুঘর হয়ে উঠবে। স্ট্যাচু অফ ইউনিটির মতো, এটিও ভারতের নতুন পরিচয় হয়ে উঠবে। আমি আজ পরে সেখানে যাচ্ছি।
বন্ধুগণ,
ভারতের উপকূলরেখা ভারতের সমৃদ্ধির প্রবেশদ্বার হয়ে উঠবে। এবং আমি অত্যন্ত গর্বের সঙ্গে বলতে পারি, এবং আমি অনেক দূর এগিয়ে যেতে দেখতে পাচ্ছি যে, ভারতের উপকূলরেখা ভারতের সমৃদ্ধির প্রবেশদ্বার হয়ে উঠতে চলেছে। আমি আনন্দিত যে গুজরাটের এই উপকূলরেখা আবারও এই অঞ্চলের জন্য আশীর্বাদ হয়ে উঠছে। আজ, এই সমগ্র অঞ্চল দেশকে বন্দর-কেন্দ্রিক উন্নয়নের একটি নতুন পথ দেখাচ্ছে। বর্তমানে, সমুদ্রপথে দেশে আসা পণ্যের চল্লিশ শতাংশ গুজরাট বন্দর দিয়ে পরিচালিত হয়। এখন, এই বন্দরগুলিও ডেডিকেটেড ফ্রেইট করিডোরের সুবিধা পাবে। এর ফলে দেশের অন্যান্য অংশে পণ্য দ্রুত পরিবহন করা সহজ হবে। এর ফলে বন্দরগুলির দক্ষতা আরও বৃদ্ধি পাবে।
বন্ধুগণ,
এখানে একটি বৃহৎ জাহাজ ভাঙার বাস্তুতন্ত্রও গড়ে উঠছে। আলাং জাহাজ ভাঙার ইয়ার্ড এর একটি উজ্জ্বল উদাহরণ, যা বিপুল সংখ্যক তরুণ-তরুণীর কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করে।
বন্ধুগণ,
একটি উন্নত ভারতের জন্য, আমাদের প্রতিটি ক্ষেত্রে, প্রতিটি ক্ষেত্রে দ্রুত কাজ করতে হবে। আর আমরা সকলেই জানি যে একটি উন্নত ভারতের পথ স্বনির্ভর ভারতের মধ্য দিয়েই নিহিত। অতএব, আমাদের মনে রাখতে হবে যে আমরা যা কিছু কিনব তা স্বদেশী হতে হবে। আমরা যা কিছু বিক্রি করব তা স্বদেশী হতে হবে। আমি আমার সকল সহকর্মী দোকানদারদের তাঁদের দোকানে একটি পোস্টার লাগানোর জন্য অনুরোধ করতে চাই যাতে লেখা থাকে, ‘গর্বের সঙ্গে জানাই, এগুলি স্বদেশী পণ্য’। এই প্রচেষ্টা প্রতিটি উদযাপনকে ভারতের সমৃদ্ধির উদযাপনে রূপান্তরিত করবে। এই অনুভূতি নিয়ে, আমি আবারও আপনাদের সকলকে নবরাত্রি উপলক্ষে অনেক অনেক শুভেচ্ছা জানাই! একটা ছোট ছেলে একটা ছবি এনেছে, এতক্ষণ ধরে ওখানে দাঁড়িয়ে আছে, ওর হাত নিশ্চয়ই ব্যথা করছে, কেউ দয়া করে ছবিটা তুলে দাও, ও তো ছোট ছেলে, দারুণ এঁকেছ বাবা! ‘এসো বাবা, আমি তোমার ছবি খুঁজে পেয়েছি। কেঁদোনা বাবা। আমি এটা পেয়েছি, আমি তোমার ছবি হাতে পেয়েছি। যদি তোমার ঠিকানা লেখা থাকে, আমি অবশ্যই তোমাকে একটি চিঠি লিখব’।
বন্ধুগণ,
এই ছোট বাচ্চাদের ভালোবাসার চেয়ে বড় সম্পদ জীবনে আর কী হতে পারে? আবারও, আজ আমাকে যে বিশাল অভ্যর্থনা এবং সম্মান জানানো হয়েছে তার জন্য আমি আপনাকে ধন্যবাদ জানাই, এবং আমি জানি যে যখন ‘অপারেশন সিন্দুর’ হয়েছিল, তখন সমগ্র ভাবনগর এই মাঠে জড়ো হয়েছিলেন। আমি আপনাদের স্বভাব জানি, এবং আমি এর জন্য আমার গভীর কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করছি। ভাবনগরের ভাই ও বোনেরা, দয়া করে আপনাদের নবরাত্রির মণ্ডপে এমন কিছু সাজানোর প্রচেষ্টা করবেন, যাতে আপনাদের মণ্ডপের মাধ্যমে দেশের সকলের কাছে আত্মনির্ভর ভারতের বার্তা পৌঁছায়। অনেক ধন্যবাদ ভাইয়েরা!
SC/SB/DM
(Release ID: 2169102)