স্বরাষ্ট্র মন্ত্রক
azadi ka amrit mahotsav

হিন্দী দিবস উপলক্ষ্যে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র ও সমবায় মন্ত্রী শ্রী অমিত শাহের বার্তা

Posted On: 14 SEP 2025 9:50AM by PIB Kolkata

 

নয়াদিল্লি, ১৪ সেপ্টেম্বর, ২০২৫ 

 

প্রিয় দেশবাসী,

 

হিন্দী দিবস উপলক্ষ্যে আপনাদের সকলকে জানাই আন্তরিক শুভেচ্ছা।

 

 

আমাদের দেশ ভারত মূলত একটি ভাষাকেন্দ্রিক জাতি। আমাদের ভাষাগুলি প্রজন্ম থেকে প্রজন্মান্তরে সংস্কৃতি, ইতিহাস, ঐতিহ্য, জ্ঞান, বিজ্ঞান, দর্শন এবং আধ্যাত্মিকতাকে বহন করার এক শক্তিশালী মাধ্যম। হিমালয়ের উচ্চতা থেকে দক্ষিণের বিশাল সমুদ্রসৈকত পর্যন্ত, মরুভূমি থেকে দুর্গম বন ও প্রত্যন্ত গ্রাম পর্যন্ত, ভাষা প্রতিটি পরিস্থিতিতে মানুষকে সংগঠিত থাকতে এবং যোগাযোগ ও ভাব বিনিময়ের মাধ্যমে ঐক্যবদ্ধভাবে এগিয়ে যাওয়ার পথ দেখিয়েছে।

 

"একসঙ্গে চলা, একসঙ্গে ভাবা এবং একসঙ্গে কথা বলা” - এই হল আমাদের ভাষাগত-সাংস্কৃতিক চেতনার মূল মন্ত্র।

 

ভারতের ভাষাগুলির সবথেকে বড় শক্তি - তারা প্রতিটি শ্রেণী ও সম্প্রদায়কে নিজেদের ভাব প্রকাশের সুযোগ করে দিয়েছে। উত্তর-পূর্বের বিহু গান, তামিলনাড়ুর ওভিয়ালুর সুর, পাঞ্জাবের লোহরি গান, বিহারের বিদ্যাপতির পদাবলী, বাংলার বাউল সাধকদের স্তোত্র, কাজরী গান এবং ভিখারি ঠাকুরের 'বিদেসিয়া' - এগুলি সবই আমাদের সংস্কৃতিকে প্রাণবন্ত ও কল্যাণমুখী রেখেছে।

 

আমি দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করি যে ভাষাগুলি একে অপরের সঙ্গী হয়ে ঐক্যের সুতোয় বাঁধা পড়ে একসঙ্গে এগিয়ে চলেছে। সন্ত তিরুভল্লুভরকে দক্ষিণে যেমন ভক্তির সঙ্গে গাওয়া হয়, তেমনই উত্তরে তাঁকে আগ্রহের সঙ্গে পড়াও হয়। কৃষ্ণদেবরায় দক্ষিণে যেমন জনপ্রিয় ছিলেন, তেমনই তিনি উত্তরেও জনপ্রিয় ছিলেন। সুব্রক্ষ্মনীয় ভারতীর দেশাত্মবোধক রচনাগুলি প্রতিটি অঞ্চলের যুবকদের মধ্যে জাতীয় গর্বের সঞ্চার করে। গোস্বামী তুলসীদাস প্রত্যেক ভারতীয়ের কাছে শ্রদ্ধেয় এবং সন্ত কবীরের দোঁহাগুলি তামিল, কন্নড় এবং মালয়ালম ভাষায় অনুবাদে পাওয়া যায়। সুরদাসের কবিতা আজও দক্ষিণ ভারতের মন্দির এবং সঙ্গীতঘরানায় প্রচলিত আছে। শ্রীমন্ত শঙ্করদেব এবং মহাপুরুষ মাধবদেব প্রত্যেক বৈষ্ণবের কাছে পরিচিত এবং ভূপেন হাজারিকার গান হরিয়ানার যুবকেরাও গুনগুন করে গায়।

 

 

এমনকি পরাধীনতার কঠিন সময়েও ভারতীয় ভাষাগুলি প্রতিরোধের কণ্ঠস্বর হয়ে উঠেছিল। আমাদের ভাষাগুলি স্বাধীনতা আন্দোলনকে দেশব্যাপী আন্দোলনে পরিণত করতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছিল। আমাদের স্বাধীনতা সংগ্রামীরা আঞ্চলিক এবং গ্রামীণ ভাষাগুলিকে স্বাধীনতা সংগ্রামের সঙ্গে যুক্ত করেছিলেন। হিন্দীর পাশাপাশি, সকল ভারতীয় ভাষার কবি, সাহিত্যিক এবং নাট্যকাররা লোকভাষা, লোককথা, লোকগান এবং লোকনাটকের মাধ্যমে প্রতিটি বয়স, শ্রেণী এবং সম্প্রদায়ের মধ্যে স্বাধীনতার সংকল্পকে দৃঢ় করেছিলেন। ‘বন্দে মাতরম’ এবং ‘জয় হিন্দ’-এর মতো স্লোগানগুলি আমাদের ভাষাগত চেতনা থেকে উদ্ভূত হয়ে স্বাধীন ভারতের গর্বের প্রতীক হয়ে উঠেছিল।

 

 

দেশ স্বাধীনতা লাভের পর, আমাদের সংবিধান প্রণেতারা ভাষাগুলির সম্ভাবনা ও গুরুত্ব নিয়ে ব্যাপক আলোচনা করেন এবং ১৯৪৯ সালের ১৪ই সেপ্টেম্বর দেবনাগরী লিপিতে লিখিত হিন্দীকে রাষ্ট্রভাষা হিসেবে গ্রহণ করেন। সংবিধানের ৩৫০ অনুচ্ছেদটি হিন্দীকে ভারতের মিশ্র সংস্কৃতির একটি কার্যকর মাধ্যম হিসেবে গড়ে তোলার জন্য হিন্দী ভাষার প্রচার ও প্রসারের দায়িত্ব অর্পণ করে।

 

 

গত দশকে, মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শ্রী নরেন্দ্র মোদীর নেতৃত্বে ভারতীয় ভাষা এবং সংস্কৃতির নবজাগরণের এক সোনালী যুগের সূচনা হয়েছে। সেটা রাষ্ট্রসঙ্ঘের মঞ্চ হোক, জি-২০ শীর্ষ সম্মেলন হোক, অথবা সাংহাই কোঅপারেশন অর্গানাইজেশনের বক্তৃতা হোক, মোদীজি হিন্দী এবং অন্যান্য ভারতীয় ভাষায় যোগাযোগ স্থাপন করে ভারতীয় ভাষাগুলির মর্যাদা বৃদ্ধি করেছেন।

 

 

স্বাধীনতার 'অমৃত কালে', মোদীজি দেশকে দাসত্বের প্রতীক থেকে মুক্ত করার জন্য 'পঞ্চ প্রাণ' (পাঁচটি সংকল্প) গ্রহণ করেছেন, যেখানে ভাষাগুলির একটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রয়েছে। আমাদের অবশ্যই ভারতীয় ভাষাগুলিকে যোগাযোগ ও ভাবের আদান-প্রদানের মাধ্যম হিসেবে গ্রহণ করতে হবে।

 

হিন্দী রাষ্ট্রভাষা হিসেবে ৭৬টি গৌরবময় বছর পূর্ণ করেছে। ভাষা বিভাগ দপ্তর তার সুবর্ণজয়ন্তী সম্পন্ন করে হিন্দীকে জনসাধারণের এবং গণচেতনার ভাষায় পরিণত করার ক্ষেত্রে অসাধারণ কাজ করেছে।

 

 

২০১৪ সাল থেকে সমস্ত সরকারি কাজে হিন্দী ভাষার ব্যবহার ক্রমাগত প্রচার করা হচ্ছে। ২০২৪ সালের হিন্দী দিবসে, সমস্ত প্রধান ভারতীয় ভাষার মধ্যে নির্বিঘ্ন অনুবাদের লক্ষ্যে 'ভারতীয় ভাষা অনুভব' স্থাপন করা হয়েছিল। আমাদের লক্ষ্য হিন্দী এবং অন্যান্য ভারতীয় ভাষাগুলি কেবল যোগাযোগের মাধ্যম না হয়ে প্রযুক্তি, বিজ্ঞান, বিচার, শিক্ষা এবং প্রশাসনের মূল ভিত্তি হয়ে উঠুক - এটিকে নিশ্চিত করা। ডিজিটাল ইন্ডিয়া, ই-গভর্নেন্স, কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা এবং মেশিন লার্নিং-এর এই যুগে, আমরা ভারতীয় ভাষাগুলিকে ভবিষ্যতের জন্য সক্ষম, প্রাসঙ্গিক এবং বিশ্বব্যাপী প্রযুক্তি প্রতিযোগিতায় ভারতকে একটি নেতা হিসেবে গড়ে তোলার জন্য চালিকা শক্তি হিসেবে তৈরি করছি।

 

 

বন্ধুগণ, ভাষা হলো বর্ষার এক ফোঁটা জলের মতো, যা মনের দুঃখ ও বিষণ্ণতাকে ধুয়ে ফেলে নতুন শক্তি ও প্রাণচঞ্চলতা নিয়ে আসে। শিশুদের কল্পনা থেকে তৈরি হওয়া অনন্য গল্প থেকে শুরু করে দিদা-ঠাকুমার ঘুমপাড়ানি গান ও গল্প পর্যন্ত, ভারতীয় ভাষাগুলি সর্বদা সমাজকে বেঁচে থাকার ও আত্মবিশ্বাসের মন্ত্র শিখিয়েছে।

 

 

মিথিলার কবি বিদ্যাপতিজি যথার্থই বলেছিলেন:

 

"দেসিল বয়না সব জন মিঠঠা"

যার অর্থ, নিজের ভাষা সবার কাছেই মিষ্টি।

 

এই হিন্দী দিবস উপলক্ষ্যে, আসুন আমরা হিন্দী সহ সমস্ত ভারতীয় ভাষাকে সম্মান করি এবং একটি আত্মনির্ভর, আত্মবিশ্বাসী ও উন্নত ভারতের দিকে এগিয়ে যাই।

 

হিন্দী দিবস উপলক্ষ্যে আপনাদের সকলকে আবারও জানাই আন্তরিক শুভেচ্ছা।

 

বন্দে মাতরম।

 

 

SC/AS…


(Release ID: 2166501) Visitor Counter : 2