প্রধানমন্ত্রীরদপ্তর
নিখিল কামাথের সঙ্গে প্রধানমন্ত্রীর মতবিনিময়ের পূর্ণপাঠ
Posted On:
10 JAN 2025 9:37PM by PIB Kolkata
নয়াদিল্লি, ১০ জানুয়ারী ২০২৫
প্রধানমন্ত্রী – এখন পর্যন্ত আপনি কতগুলি পডকাস্ট করেছেন?
নিখিল কামাথ – ২৫টি, স্যার।
প্রধানমন্ত্রী – ২৫টি?
নিখিল কামাথ – হ্যাঁ, তবে আমি মাসে মাত্র একটি করে করি।
প্রধানমন্ত্রী – ঠিক আছে।
নিখিল কামাথ – প্রতি মাসে একদিন সময় দিই পডকাস্টের জন্য।
প্রধানমন্ত্রী – যাঁর সঙ্গে করেন, তাঁকেও কি এক মাস সময় দেন?
নিখিল কামাথ – হ্যাঁ স্যার, আমাদের বেশিরভাগ পডকাস্টের বিষয়বস্তু থাকে উদ্যোগ বিষয়ক। আমাদের দর্শক মূলত ১৫ থেকে ৪০ বছর বয়সী তরুণ-তরুণী, যারা প্রথমবারের মতো উদ্যোগ নিতে আগ্রহী। আমরা কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা, মেটাভার্স, ওষুধ ইত্যাদি নিয়ে পর্ব করেছি বা করছি। 'পিপল' নামে একটি ধারাবাহিকও শুরু করেছি, যেখানে বিল গেটসের মতো বিশিষ্টজনদের সঙ্গে কথোপকথন হয়েছে।
প্রধানমন্ত্রী – প্রথমেই বলি, এটি আমার জীবনের প্রথম পডকাস্ট, তাই এই জগৎ আমার কাছেও একেবারেই নতুন।
নিখিল কামাথ – স্যার, আমি হিন্দি খুব ভালো বলতে পারি না, এজন্য ক্ষমা চাচ্ছি। আমি দক্ষিণ ভারতীয়, বেঙ্গালুরুতে বড় হয়েছি। আমার মা মহীশূরের, যেখানে মূলত কানাড়া ভাষায় কথা বলা হয়। আমার বাবা ম্যাঙ্গালোরের। আমি স্কুলে হিন্দি শিখেছি, তবে সেভাবে বলতে পারি না।
প্রধানমন্ত্রী – দেখুন, আমিও হিন্দিভাষী নই, সুতরাং আমাদের দুজনের অবস্থা একই।
নিখিল কামাথ – আমাদের এই পডকাস্টটি কোনো প্রথাগত সাক্ষাৎকার নয়। আমি সাংবাদিকও নই। আমরা সাধারণত সেইসব মানুষের সঙ্গে কথা বলি, যারা প্রথমবারের মতো উদ্যোক্তা হওয়ার চেষ্টা করছেন। তাই আমরা তাঁদের বলি— উদ্যোগে নামার জন্য কী কী দরকার, কোথা থেকে তাঁরা প্রাথমিক মূলধন পেতে পারেন, কোথা থেকে অনলাইন শেখার উপকরণ পাবেন, ইত্যাদি বিষয়ে জোর দেওয়া হয়। আমরা সেই পরিবেশ থেকেই এসেছি এবং আজ আমরা রাজনীতি ও উদ্যোক্তা-জগতের মধ্যে সংযোগ খুঁজে বের করার চেষ্টা করব। কারণ আমি অনুভব করি, এই দুই ক্ষেত্রের মধ্যে অনেক মিল আছে, যেগুলো নিয়ে আজ পর্যন্ত খুব একটা আলোচনা হয়নি। তাই আমরা সেই দিকেই এগোব। এ কারণে, যদি আপনি নিজেও এই পডকাস্টে কিছু প্রশ্ন করতে চান, নিশ্চিন্তে করতে পারেন।
এই পডকাস্টে আমাদের প্রথম আলোচনার বিষয় আপনার জীবনের প্রথম অধ্যায়— প্রধানমন্ত্রী হওয়ার আগের সময়, মুখ্যমন্ত্রী হওয়ার আগের সময়, কোথায় আপনার জন্ম হয়েছিল, জীবনের প্রথম দশ বছর কেমন কেটেছিল। যদি আপনি আপনার জীবনের শুরুর দিকের কথা বলেন।
প্রধানমন্ত্রী – আচ্ছা, সবাই জানেন আমার জন্ম গুজরাটে হয়েছিল, উত্তর গুজরাটের মেহসানা জেলায়। সেখানকার ভাদনগর নামের একটি ছোট শহরে। আমি ছোটবেলায় যখন সেখানে ছিলাম, তখন জনসংখ্যা ছিল প্রায় ১৫ হাজার— এই কথাটা এখনো মোটামুটি মনে আছে। আমি সেই জায়গারই মানুষ। তবে তখন যেমন সবারই নিজস্ব গ্রাম ছিল, আমার গ্রামটিও তেমনই ছিল। আমাদের গ্রামে শিক্ষার প্রতি প্রবল আগ্রহ দেখা যেত। আমি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে পড়াশোনা করেছি। শৈশব সেখানেই কেটেছে। একটা পুকুর ছিল, সেখানেই সাঁতার শিখেছিলাম। সেখানে ভাগবত আচার্য নারায়ণ আচার্য হাই স্কুল ছিল, যেটি ‘বিএনএ স্কুল’ নামেও পরিচিত। এটি ছিল একটি অবৈতনিক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান। তখনকার শিক্ষার অবস্থা আজকের মতো ছিল না। আমি স্কুলের পড়াশোনা সেখানেই শেষ করি। আমি কোথাও পড়েছিলাম যে চীনের দার্শনিক হিউয়েন সাং একসময় আমাদের গ্রামে বসবাস করেছিলেন।
এর আগে আমি আমাদের গ্রামের একজন দাদাকে দেখেছিলাম। তিনি ছিলেন কংগ্রেস নেতা, সমাজতান্ত্রিক ভাবধারাও ছিল তাঁর। সৌরাষ্ট্রের হলেও তিনি আমাদের গ্রামে এসে থাকতে শুরু করেছিলেন। তিনি আমাদের মতো স্কুলের ছেলে-মেয়েদের অনেক কিছু শিখিয়েছিলেন। তিনি বলতেন— যেখানেই যাও না কেন, যদি কোনো লেখা বা খোদাই করা পাথর দেখো, সেটি সংগ্রহ করে এনে স্কুলের এক কোণে রেখে দাও। আমরা তাঁর কথামতো কাজ করতাম, আর আস্তে আস্তে সেইসব পাথর স্তূপ হয়ে জমা হতো। তখনই আমাদের বুঝতে সুবিধা হলো যে এ গ্রামটা ভীষণ প্রাচীন, প্রতিটি পাথরই যেন কোনো না কোনো কাহিনী বয়ে আনছে। ফলে আমার মনোযোগও ইতিহাসের দিকে গিয়ে পড়ল।
২০১৪ সালে আমি যখন প্রধানমন্ত্রী হলাম, তখন স্বাভাবিকভাবেই বিশ্বের বিভিন্ন দেশের নেতারা সৌজন্যমূলকভাবে ফোন করেছিলেন। চীনের রাষ্ট্রপতিও ফোন করেছিলেন, শুভেচ্ছা জানিয়েছিলেন। এরপর তিনি নিজেই বলেছিলেন যে তিনি ভারত সফরে আসতে চান। আমি তাঁকে নিমন্ত্রণ জানিয়েছিলাম। পরে তিনি গুজরাটেও আসতে চাইলেন, তখনও আমি তাঁকে আমন্ত্রণ জানালাম। তিনি এমনকি আমার গ্রাম ভাদনগরেও যেতে ইচ্ছা প্রকাশ করলেন। তখন তিনি বললেন, আমাদের দুজনের মধ্যে একটি বিশেষ বন্ধন আছে। আমি কৌতূহল বশত জানতে চাইলে তিনি ব্যাখ্যা করলেন— চীনের দার্শনিক হিউয়েন সাং আমাদের গ্রামে দীর্ঘ সময় বসবাস করেছিলেন। পরে তিনি চীনে ফিরে গিয়ে তাঁর নিজের গ্রামে বসবাস করতে শুরু করেছিলেন। তিনি বললেন, আমাদের দুজনের মধ্যে এই ঐতিহাসিক যোগসূত্র রয়েছে।
নিখিল কামাথ – আপনি যদি আপনার শৈশবের কথা মনে করেন, ছোটবেলায় নিশ্চয়ই আপনি একজন ভালো ছাত্র ছিলেন। সেই সময়ে আপনার আগ্রহ কী ছিল?
প্রধানমন্ত্রী – আমি আসলে খুবই সাধারণ একজন ছাত্র ছিলাম। আমাকে বিশেষ করে কেউ লক্ষ্য করত না। তবে আমার এক শিক্ষক ছিলেন, ভেলজিভাই চৌধুরী। তিনি আমাকে অনেক গুরুত্ব দিতেন। একদিন তিনি আমার বাবার সঙ্গে দেখা করেছিলেন। বাবাকে তিনি বলেছিলেন, আমার অনেক প্রতিভা আছে, কিন্তু আমি মনোযোগ দিই না, নানা রকম কাজ করি। তিনি বলতেন, আমি খুব দ্রুত সবকিছু আয়ত্ত করতে পারি, কিন্তু তারপর নিজের জগতে হারিয়ে যাই। তিনি আমার থেকে অনেক আশা করেছিলেন। আমার শিক্ষকরা আমাকে ভীষণ স্নেহ করতেন, তবে আমার আরও বেশি করে পড়াশোনা করা উচিত ছিল। প্রতিযোগিতার মুখোমুখি হলে আমি সরে যেতাম। তাতে আমার আগ্রহ ছিল না, শুধু পরীক্ষায় পাস করাই আমার লক্ষ্য ছিল। তবে ছোটবেলা থেকেই আমি নানা কিছু করতাম। নতুন কোনো কিছু আসলে তা সঙ্গে সঙ্গে শিখে নেওয়া আমার স্বভাব ছিল।
নিখিল কামাথ – স্যার, আপনার কি কোনো শৈশবের বন্ধু আছেন, যাঁদের সঙ্গে এখনও যোগাযোগ আছে?
প্রধানমন্ত্রী – আমার ক্ষেত্রে ব্যাপারটা একটু ভিন্ন। আমি খুব অল্প বয়সেই বাড়ি ছেড়ে বেরিয়ে পড়েছিলাম। বাড়ি ছেড়ে যাওয়ার মানে হলো আমি সব সম্পর্ক ছিন্ন করেছিলাম। কারও সঙ্গে যোগাযোগ ছিল না, ফলে একটা বড় ফাঁক তৈরি হয়েছিল। আমার জীবনটা যেন এক অচেনা পথিকের মতো ছিল। তাই আমার জীবনে এমন কিছু ছিল না। তবে মুখ্যমন্ত্রী হওয়ার পর আমার মনে হঠাৎ একটা ইচ্ছে জাগে। ইচ্ছে হলো আমার সব পুরোনো বন্ধুদের আবার ডাকি। এর পেছনে আমার এই অনুভূতি ছিল যে, আমি সেই একই মানুষ, যে বহু বছর আগে গ্রাম ছেড়ে গিয়েছিল, অথচ আমি এখনও বদলাইনি।
কিন্তু তাঁদের মুখ দেখলেও চিনতে পারছিলাম না, কারণ আমাদের মধ্যে এক বিশাল ব্যবধান তৈরি হয়েছিল। তাঁদের সন্তানরা বড় হয়ে গিয়েছিল। প্রায় ৩০–৩৫ জন বন্ধু তখন একত্র হয়েছিল। আমাদের আড্ডায় শৈশবের পুরোনো স্মৃতিগুলো যেন জীবন্ত হয়ে উঠেছিল। আজও তাঁদের সবার সঙ্গে যোগাযোগ আছে, এবং তাঁরা আমাকে ভীষণ শ্রদ্ধার চোখে দেখেন।
আমার দ্বিতীয় ইচ্ছে, যা হয়তো ভারতবাসীর কাছে অস্বাভাবিক মনে হতে পারে, সেটি হলো আমার সব শিক্ষকদের প্রকাশ্যে সম্মান জানানো। তাই ছোটবেলা থেকে স্কুলজীবন পর্যন্ত যাঁরা আমাকে পড়িয়েছেন, তাঁদের সবাইকে খুঁজে বের করেছিলাম এবং মুখ্যমন্ত্রী হওয়ার পর তাঁদের প্রকাশ্যে সম্মান জানাই। আমাদের রাজ্যপাল শর্মাজিও সেই অনুষ্ঠানে এসেছিলেন। গুজরাটের সব বিশিষ্ট ব্যক্তিরাও উপস্থিত ছিলেন। আমার মনে তখন একটাই বার্তা ছিল—আমি আজ যেই হই না কেন, তাঁদের প্রত্যেকেই কোনো না কোনোভাবে আমার জীবনে অবদান রেখেছেন। সবচেয়ে প্রবীণ শিক্ষক তখন ৯৩ বছরের ছিলেন। আমি প্রায় ৩০–৩২ জন শিক্ষককে নিজে ফোন করেছিলাম এবং সবাইকে প্রকাশ্যে সম্মান জানিয়েছিলাম। সেটা ছিল আমার জীবনের অন্যতম আনন্দদায়ক মুহূর্ত।
এরপর একদিন আমি আমার বড় পরিবার—ভাইবোন, তাদের সন্তান, আত্মীয়স্বজন—সবাইকে নিমন্ত্রণ করলাম। সবাইকে মুখ্যমন্ত্রীর ভবনে ডেকেছিলাম। পরিবারের সবার সঙ্গে আমি পরিচিত হলাম। এটি ছিল আমার জীবনের তৃতীয় কাজ।
চতুর্থত, আমি সংঘে থাকার সময় যেসব পরিবারে খাবার খেয়েছিলাম, তাঁদের সবাইকেও নিমন্ত্রণ জানিয়েছিলাম।
নিখিল কামাথ – আপনার হয়তো মনে আছে কয়েক বছর আগে আপনি বেঙ্গালুরুতে গিয়েছিলেন। সেখানে আপনি স্টার্টআপ-সংক্রান্ত অনেকের সঙ্গে দেখা করেছিলেন এবং আমাদের সঙ্গেও দেখা হয়েছিল। আপনার হাতে তখন মাত্র ১৫ মিনিট সময় ছিল, তবুও আপনি এক ঘণ্টা বসেছিলেন। যদি আপনি মনে করেন যে সমাজের কোনো একটি শ্রেণী বা কোনো একটি বয়সের মানুষের সঙ্গে আপনার সবচেয়ে গভীর সংযোগ রয়েছে, তাহলে সেটা কোন বয়সের হবে?
প্রধানমন্ত্রী – আপনি মোটামুটি বলতে চাইছেন যে যদি কেউ নরেন্দ্র ভাইকে খুঁজতে চায়, তবে কোথায় খুঁজবে? ১৫-২০ জন তরুণ-যুবকের মধ্যে দাঁড়িয়ে হাসতে দেখবে। এটাই আমার চিত্র। তাই হয়তো আজ আমি কোনো অঞ্চল বা কোনো বয়সের মানুষের থেকে দূরত্ব অনুভব করি না।
নিখিল কামাথ – যেমন আপনি বলেছেন যে আপনি প্রতিযোগিতা পছন্দ করেন না। জিদ্দু কৃষ্ণমূর্তির মতো লোকেরা বলেন প্রতিযোগিতা ভালো নয়। একই মতাদর্শ রাজনীতিতে কীভাবে সম্ভব?
প্রধানমন্ত্রী – দেখুন, শৈশবে যদি প্রতিযোগিতা না থাকে, তবে আমরা আলস্যগ্রস্ত হয়ে পড়ব। কোনো গভীর দর্শন থাকবে না। আমিও ছেলেমেয়েদের মতো দায়িত্বজ্ঞানহীন আচরণ করব। প্রতিযোগিতা না থাকলে মনে হবে সব ঠিকই আছে। নিজের জন্য তেমন কিছু ভাবতাম না। দ্বিতীয়ত, সেই সময়ে যা সামনে আসত, তাই করতাম। অর্থাৎ, আগে এইসব কাজ আমি স্বাভাবিকভাবেই করতাম। আমার শ্রী পারমার নামে একজন শিক্ষক ছিলেন, তিনি পিটি শিক্ষক ছিলেন। আমি তাঁর কাছ থেকে কুস্তি শিখেছিলাম। আমি ভোর ৫টায় তাঁর কাছে যেতাম এবং তিনি আমাকে কিছুটা সাহায্য করতেন। কিন্তু আমি খেলোয়াড় হয়ে উঠিনি। কয়েকদিন করেছি, তারপর ছেড়ে দিয়েছি।
নিখিল কামাথ – রাজনীতিতে এমন কিছু গুণ কি আছে যাকে একজন রাজনীতিবিদের প্রতিভা বলা যায়? যেমন উদ্যোগের ক্ষেত্রে যখন কেউ একটি কোম্পানি শুরু করে, তখন তিন-চারটি বিশেষ প্রতিভা স্বাভাবিকভাবেই লাগে। যেমন: কেউ মার্কেটিংয়ে দক্ষ, কেউ বিক্রিতে, কেউ প্রযুক্তিতে আর কেউ প্রোডাক্ট ডেভেলপমেন্টে। আজকের কোনো তরুণ-তরুণী যদি রাজনীতিবিদ হতে চায়, তবে তার মধ্যে এমন কোনো গুণ আছে কি যেটাকে আপনি ‘পরীক্ষা’ করতে পারেন, এবং সেটাই হওয়া উচিত?
প্রধানমন্ত্রী – এগুলো দুটি আলাদা বিষয়: রাজনীতিবিদ হওয়া এক জিনিস, আর রাজনীতিতে সফল হওয়া অন্য জিনিস। রাজনীতিতে প্রবেশ করা এক ব্যাপার, আর সফল হওয়া আরেক ব্যাপার। আমার বিশ্বাস, এর জন্য নিষ্ঠা, দায়িত্ববোধ, মানুষের সুখ-দুঃখের অংশীদার হতে হয়। আসলে আপনাকে একজন ভালো দলীয় কর্মী হতে হবে। যদি কেউ ভাবে যে আমি একজন মহান যোদ্ধা এবং আমি সবাইকে নিয়ন্ত্রণ করব, সবাই আমার কথা শুনবে – তাহলে হয়তো তার রাজনীতি চলবে, সে নির্বাচনে জয়ীও হতে পারে, কিন্তু সে একজন সফল রাজনীতিবিদ হবে – এর কোনো নিশ্চয়তা নেই।
আর দেখুন, দেশে, আমি কখনও কখনও ভাবি, সম্ভবত আমার এই ভাবনাই বিতর্ক তৈরি করতে পারে, যখন স্বাধীনতা আন্দোলন শুরু হয়েছিল, তখন সমাজের সব শ্রেণীর মানুষ এতে যোগ দিয়েছিল, কিন্তু সবাই রাজনীতিতে আসেনি। কেউ কেউ পরে নিজেদের উৎসর্গ করেছিল শিক্ষায়, কেউ খাদীর জন্য, কেউ প্রাপ্তবয়স্ক শিক্ষার জন্য, কেউ উপজাতি মানুষের কল্যাণের জন্য – এইসব সৃজনশীল কাজে। কিন্তু স্বাধীনতা আন্দোলন ছিল দেশপ্রেম দ্বারা অনুপ্রাণিত আন্দোলন। সকলের একটাই অঙ্গীকার ছিল – আমি ভারতের মুক্তির জন্য যা পারি করব।
স্বাধীনতার পরে তাদের অনেকেই রাজনীতিতে এসেছিলেন। প্রথম দিকে রাজনীতিতে আমাদের দেশের প্রায় সব নেতাই স্বাধীনতা সংগ্রাম থেকে উঠে আসা মানুষ ছিলেন। তাই তাঁদের চিন্তাধারা, তাঁদের পরিপক্কতা – একেবারেই আলাদা ছিল। তাঁদের আচরণ সম্পর্কে আমরা যা শুনি, তাতে বোঝা যায় সমাজের প্রতি তাঁদের গভীর সমর্পণবোধ ছিল। তাই আমার মত হলো, ভালো মানুষদের রাজনীতিতে আসা উচিত। তবে উচ্চাকাঙ্ক্ষা নিয়ে নয়, মিশন নিয়ে। যদি আপনি মিশন নিয়ে আসেন, তাহলে আপনি কোথাও জায়গা পাবেন। মিশন অবশ্যই উচ্চাকাঙ্ক্ষার উপরে থাকতে হবে, তখনই আপনার ক্ষমতা প্রকাশ পাবে।
আজকের যুগের নেতারা মহাত্মা গান্ধীর সঙ্গে খাপ খায় না। কিন্তু তাঁর কর্মই আগে কথা বলত এবং সেই শক্তিই পুরো দেশকে তাঁর পেছনে দাঁড় করিয়েছিল। আজকের রাজনীতিতে বক্তৃতা দিতে পারলেই চলে, কিছুদিন এর প্রভাব থাকে, জনতার হাততালি মেলে, কিন্তু শেষ পর্যন্ত কাজই কাজ করে। দ্বিতীয়ত, আমার মতে বাক্য আর বক্তৃতার থেকে যোগাযোগ অনেক বেশি গুরুত্বপূর্ণ। আপনি কীভাবে যোগাযোগ করেন, সেটাই আসল। আপনি দেখেছেন মহাত্মা গান্ধী লম্বা একটি লাঠি নিয়ে হাঁটতেন, যা তাঁর থেকেও উঁচু ছিল। অথচ তিনি ছিলেন অহিংসার প্রবক্তা। মহাত্মা গান্ধী কখনো টুপি পরেননি, অথচ সারা বিশ্ব গান্ধী টুপি পরেছে। এটাই ছিল তাঁর যোগাযোগের শক্তি। গান্ধীর ক্ষেত্র ছিল রাজনীতি, তিনি রাজনীতিবিদ ছিলেন, কিন্তু শাসক ছিলেন না। তিনি কোনো নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেননি, তিনি ক্ষমতায় আসেননি, অথচ মৃত্যুর পর যে স্মৃতিসৌধ তৈরি হলো তার নাম রাখা হলো রাজঘাট।
নিখিল কামাথ – আর স্যার, আপনি এইমাত্র যা বললেন, আমাদের কাছে আজকের আলোচনার মূল বক্তব্য হলো, আমরা তরুণ-তরুণীদের বলতে চাই যে রাজনীতিকে উদ্যোক্তার মতো এক ধরনের উদ্যোগ হিসেবেও ভাবতে হবে। ১০,০০০ স্মার্ট ভারতীয় যুবক-যুবতী আপনার জীবন থেকে অনুপ্রাণিত হোক, এবং ভারতের রাজনীতিবিদ হওয়ার জন্য অনুপ্রাণিত হোক।
প্রধানমন্ত্রী – আমি লালকেল্লা থেকে বলেছিলাম যে দেশের রাজনীতিতে এক লাখ এরকম তরুণ-তরুণীর প্রয়োজন আছে, এবং আমি বিশ্বাস করি এটা সম্ভব হবে। একজন উদ্যোক্তা প্রথম যে শিক্ষা পান, তা হলো কিভাবে বৃদ্ধি করা যায়। কিন্তু এখানে প্রথম শিক্ষা হলো আত্মনিবেদন—যা আছে তা দিতে শেখা। উদ্যোক্তার চিন্তা হলো—আমি কীভাবে আমার কোম্পানি বা পেশাকে নাম্বার ওয়ানে নিয়ে যাব। কিন্তু রাজনীতিতে হলো—“জাতি সবার আগে”। এটিই বড় পার্থক্য। সমাজও কেবল সেইসব মানুষকেই গ্রহণ করে যারা জাতিকে আগে রাখে। আর রাজনৈতিক জীবন মোটেও সহজ নয়। যারা ভাবে এটি কেবল কপালের ব্যাপার, কিছু লোকের ভাগ্যে জোটে, আর কিছু করার দরকার নেই—তারা ভুল করে।
একজন মানুষ ছিলেন অশোক ভাট। তিনি সারা জীবন ছোট্ট একটি বাড়িতে বাস করেছেন। তিনি মন্ত্রীও হয়েছিলেন, কিন্তু তাঁর নিজের গাড়ি পর্যন্ত ছিল না। তখন মোবাইল ছিল না, শুধু ল্যান্ডলাইন। আপনি তাঁকে রাত তিনটায় ফোন করলে, আধা রিং হতেই তিনি ফোন তুলে নিতেন। সেই সময় আমি রাজনীতিতে ছিলাম না। কিন্তু রাজকোটে বহু দুর্ঘটনা ঘটত। তাই সপ্তাহে দুদিন আমার কাছে ফোন আসত—“ভাই, এখানে বড় দুর্ঘটনা হয়েছে।” আমি তখন অশোক ভাটকে ফোন করতাম, আর তিনি বলতেন—“ঠিক আছে।” তাঁর নিজের বাহনও ছিল না, তিনি লিফট নিতেন, কখনো ট্রাকে চড়ে যেতেন। তিনি সারা জীবন এভাবেই কাটিয়েছেন।
নিখিল কামাথ – আপনি এটাও বলেছেন যে কোনো তরুণ-তরুণী কেবল “আমি রাজনীতিবিদ হব” ভেবে রাজনীতিতে আসা উচিত নয়। বরং “রাজনীতিবিদ হওয়ার পর আমি কী করব”—এ ভেবে তাঁদের আসা উচিত।
প্রধানমন্ত্রী – আসলে বেশিরভাগ মানুষই রাজনীতিবিদ হতে চায় না। কেউ বলে আমি বিধায়ক হতে চাই, কেউ সাংসদ হতে চায়—এটা আলাদা ব্যাপার। কিন্তু রাজনীতিতে প্রবেশ করার জন্য নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করাটা জরুরি নয়। এটা গণতন্ত্রের প্রক্রিয়া—সুযোগ পেলে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করবেন। কিন্তু প্রথম কাজ হলো সাধারণ মানুষের হৃদয় জয় করা। সাধারণ মানুষের হৃদয় জয় করেই তাঁদের মাঝে জীবন কাটাতে হবে, তাঁদের সঙ্গে জীবনকে যুক্ত করতে হবে। আর এমন মানুষ আজও দেশে আছেন।
নিখিল কামাথ – আজকের তরুণ রাজনীতিবিদদের মধ্যে কি আপনি দেখছেন যে অনেক সম্ভাবনা আছে?
প্রধানমন্ত্রী – হ্যাঁ, অনেকেই আছেন। তাঁরা দিন-রাত পরিশ্রম করছেন, মিশন মোডে কাজ করছেন।
নিখিল কামাথ – আপনার মনে বিশেষ করে কেউ আছেন?
প্রধানমন্ত্রী – নাম নিলে ঠিক হবে না। অনেক নাম মনে আসছে। অনেক মুখ আছে।
নিখিল কামাথ – আপনি আগেই বলছিলেন মানুষের সঙ্গে থাকার কথা, তাঁদের প্রতি সহানুভূতি রাখার কথা। আপনার শৈশবে কি কোনো অভিজ্ঞতা ছিল যা আপনাকে এভাবে গড়ে তুলেছে?
প্রধানমন্ত্রী – মানে?
নিখিল কামাথ – মানে, আপনি যেমন বলেছেন, যখন কেউ রাজনীতিবিদ হতে চায়, তখন সেটি নিজের ব্যাপার নয়। তখন নিজের কথা গৌণ হয়ে যায়, আর যাঁদের জন্য রাজনীতিবিদ হওয়া, তাঁরা হয়ে ওঠেন মুখ্য। আপনার শৈশবে কি এমন কোনো অভিজ্ঞতা হয়েছিল?
প্রধানমন্ত্রী – এটা সত্যি যে আমি আমার জীবন নিজে গড়িনি, পরিস্থিতিই আমাকে গড়ে তুলেছে। শৈশবের গভীরে যেতে চাই না, কারণ আমার শৈশব ছিল আলাদা। কিন্তু সেই জীবন আমাকে অনেক কিছু শিখিয়েছে। হয়তো সেটিই ছিল আমার সবচেয়ে বড় বিশ্ববিদ্যালয়। সমস্যাগুলোই আমার জন্য ছিল এক একটি বিশ্ববিদ্যালয়, যা আমাকে শিক্ষা দিয়েছে। হয়তো সেই কারণেই আমি বিপদকে ভালোবাসতে শিখেছি—যা আমাকে অনেক কিছু শিখিয়েছে। আমি এমন একটি রাজ্য থেকে এসেছি, যেখানে দেখেছি মা-বোনেরা মাথায় হাঁড়ি নিয়ে দুই-তিন কিলোমিটার হেঁটে জল আনছেন। তখন মনে হতো—স্বাধীনতার ৭৫ বছর পর কি আমি জল সরবরাহ করতে পারব না? তাই সেই অভিজ্ঞতা থেকেই আমার কাজের সূচনা।
আগেও নিশ্চয় পরিকল্পনা ছিল, আমি তার দাবি করি না। জনগণও স্বপ্ন দেখেছিল। কিন্তু সেই স্বপ্নগুলির জন্য আমি নিজেকে উৎসর্গ করি। যার স্বপ্নই হোক, যদি তা খাঁটি হয়, তবে দেশের জন্য কিছু করতে গিয়ে নিজেকে উৎসর্গ করা আমার কর্তব্য। আমি যখন মুখ্যমন্ত্রী হয়েছিলাম, তখন একটি ভাষণে স্বতঃস্ফূর্তভাবে বলেছিলাম তিনটি কথা—প্রথমত, আমি কঠোর পরিশ্রম করি। দ্বিতীয়ত, আমি নিজের জন্য কিছু করি না। আর তৃতীয়ত, আমি একজন মানুষ, ভুল করতে পারি, কিন্তু খারাপ উদ্দেশ্যে আমি কোনোদিন অন্যায় করি না। এগুলোই আমি আমার জীবনের মন্ত্র হিসেবে নিয়েছি। ভুল হবেই, আমিও ভুল করব—আমি মানুষ, ভগবান নই। কিন্তু খারাপ উদ্দেশ্যে আমি ভুল করি না—এটাই আমার অটল বিশ্বাস।
নিখিল কামাথ – আপনি কি মনে করেন, আপনার যে বিশ্বাসব্যবস্থা, যা আপনার কাছে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ—যদি সেটি ২০ বছর পর বদলে যায়, তবে সেটা ভালো নাকি খারাপ হবে?
প্রধানমন্ত্রী – কি ভাল লাগে?
নিখিল কামাথ – উদাহরণস্বরূপ ধরুন, আজ আমার বয়স ৩৮ বছর। যখন আমার বয়স প্রায় ২০ বছর ছিল, তখন আমি ভাবতাম পুঁজিবাদই বিশ্বের সঠিক পথ। কিন্তু এখন ৩৮ বছরে এসে হয়তো আমি আমার অবস্থান পরিবর্তন করতে চাই। ২০ বছর আগে আপনি যা বলেছেন, মানুষ তা মনে রাখে। কিন্তু আমি মনে করি এটা শুধুই বিবর্তন, এবং সেটা অধিক তথ্যের ভিত্তিতে পরিবর্তন। আগে মানুষ যেমনভাবে ভাবত, সময়ের সাথে সেই চিন্তায় পরিবর্তন আসে। যদিও আমি এখনও পুঁজিবাদে বিশ্বাস করি, এই উদাহরণটি শুধু বোঝানোর জন্য দিলাম। কিন্তু আপনার কি এমন কোনো বিশ্বাস ছিল যা আপনি ১০ বা ২০ বছর আগে মানতেন, অথচ আজ আর তা মানেন না?
প্রধানমন্ত্রী – দুটি কথা আছে। প্রথমত, কিছু মানুষের বিশ্বাস সময়ের সাথে পাল্টে যায়। আমি সেই ধরনের নই। আমি একটি ভাবনা নিয়ে বড় হয়েছি। আমার মতাদর্শ যদি খুব অল্প কথায় প্রকাশ করতে হয়, তবে সেটা হবে “রাষ্ট্র প্রথম”। আমার ট্যাগলাইনই হলো – রাষ্ট্র প্রথম। যদি পুরনো কিছু ছাড়তে হয়, আমি ছাড়তে প্রস্তুত; নতুন কিছু গ্রহণ করতে প্রস্তুত। কিন্তু মূল মন্ত্র এটাই – রাষ্ট্র প্রথম। আমার মাপকাঠি একটাই, সেটি আমি পরিবর্তন করি না।
নিখিল কামাথ – একটু এগোলে দেখা যায়, একজন রাজনীতিবিদ মতাদর্শের কারণে অনুসারী পান।
প্রধানমন্ত্রী – মতাদর্শের থেকে আদর্শবাদ বেশি গুরুত্বপূর্ণ। আমি এটা বলছি না যে মতাদর্শ ছাড়া রাজনীতি টিকে থাকতে পারে, কিন্তু আদর্শবাদ অপরিহার্য। যেমন স্বাধীনতার আগে একমাত্র মতাদর্শ ছিল স্বাধীনতা। গান্ধীজির পথ আলাদা ছিল, সাভারকরের পথ আলাদা ছিল, কিন্তু মতাদর্শ একটাই ছিল – স্বাধীনতা।
নিখিল কামাথ – সবাই বলে, রাজনীতিবিদ হতে দৃঢ়তার প্রয়োজন। এটা কীভাবে তৈরি হয়? কারণ মানুষ পরিহাস করবে, প্রকাশ্যে সমালোচনা করবে, আপনার সম্পর্কে গল্প বানাবে। একজন সাধারণ মানুষের জন্য এগুলো নতুন অভিজ্ঞতা। এটা শেখা যায় কীভাবে?
প্রধানমন্ত্রী – রাজনীতিতে সংবেদনশীল মানুষের প্রয়োজন। কারো কিছু ভালো হলে খুশি হতে পারা মানুষের প্রয়োজন। দ্বিতীয় বিষয় হলো অভিযোগ আর পাল্টা অভিযোগ। গণতন্ত্রে স্বাভাবিকভাবে আপনার বিরুদ্ধে অভিযোগ আসবে, নানা ধরনের অভিযোগ আসবে। কিন্তু যদি আপনি সত্যের পাশে থাকেন, ভুল না করেন, তবে কোনো সমস্যাই হবে না।
নিখিল কামাথ – আর স্যার, আপনি মুখ্যমন্ত্রী হয়েছেন প্রি-সোশ্যাল মিডিয়া যুগে এবং প্রধানমন্ত্রী হয়েছেন পোস্ট-সোশ্যাল মিডিয়া যুগে। এই সময়ের মধ্যে আপনি রাজনীতির পরিবর্তন খুব কাছ থেকে দেখেছেন। আগে যখন সোশ্যাল মিডিয়া এতটা গুরুত্বপূর্ণ ছিল না এবং এখন যখন তা অত্যন্ত প্রভাবশালী হয়ে উঠেছে।ট, একজন তরুণ, যে রাজনীতিতে আসতে চায়, তাকে আপনি কী পরামর্শ দেবেন, সোশ্যাল মিডিয়াকে কীভাবে ব্যবহার করা উচিত?
প্রধানমন্ত্রী – মাঝে মাঝে আমাকে ছোটরা এই প্রশ্ন করে। আমি বাচ্চাদের সঙ্গে আড্ডা দিতে ভালোবাসি। ৮ম-৯ম শ্রেণির ছাত্রছাত্রীরা যখন আমার সঙ্গে দেখা করতে আসে, তখন কেউ জিজ্ঞাসা করে – “স্যার, টিভিতে নিজেকে দেখে কেমন লাগে?” কেউ আবার বলে – “আপনার এত সমালোচনা হয়, খারাপ লাগে না?” তখন আমি মজার একটা কথা বলি। আমি বলি – আমি আহমেদাবাদের মানুষ। আহমেদাবাদিদের একটা স্বভাব আছে। ধরুন, কেউ স্কুটার চালিয়ে যেতে গিয়ে কারো সঙ্গে ধাক্কা খেলো। সামনের লোকটা খুব রেগে গিয়ে গালাগালি শুরু করল। আপনি চুপচাপ দাঁড়িয়ে আছেন। আহমেদাবাদের লোকেরা এমনই – তারা মনে-মনে ভাবে, “ওর যা আছে সেটা দেবে, আর আমার যা আছে আমি দেব।”
তাই আমি শিখেছি, মানুষ গালি দিক, যা বলার বলুক – আমি আমার পথে চলব। কিন্তু শর্ত একটাই – সত্যের পথে দাঁড়িয়ে থাকতে হবে, মনে কোনো পাপ রাখা যাবে না।
আপনি রাজনীতিতে নেই, আপনি যদি একটি অফিসে কাজ করেন, তবে কি সেখানে এমনটা হয় না? একটি বড় পরিবারেও যদি দুই ভাইয়ের মধ্যে টানাপড়েন থাকে, হয় না? তাই জীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রে, কম-বেশি এমন পরিস্থিতি তৈরি হয়। আমাদের অত্যন্ত সংবেদনশীল হতে হবে। জনজীবনে সংবেদনশীলতা ছাড়া মানুষের কল্যাণ করা সম্ভব নয়। আর আমি বিশ্বাস করি যে সোশ্যাল মিডিয়া গণতন্ত্রের একটি বড় শক্তি। আগে কয়েকজনই আপনাকে তথ্য দিতেন, আর আপনি সেটাকেই সত্য বলে বিশ্বাস করতেন। আপনার সময় ছিল না যাচাই করার, যদি কেউ বলত এক লক্ষ মানুষ মারা গিয়েছে, আপনি ধরে নিতেন যে সত্যিই এক লক্ষ মানুষ মারা গিয়েছে। আজ আপনার হাতে বিকল্প রয়েছে, আপনি যাচাই করতে পারেন যে খবরটি কোথা থেকে এসেছে। সব কিছুই আপনার মোবাইল ফোনে পাওয়া যায়। সামান্য মনোযোগ দিলেই আপনি সহজেই সত্যের কাছাকাছি পৌঁছে যেতে পারেন। তাই সোশ্যাল মিডিয়ার মাধ্যমে গণতন্ত্রকে শক্তিশালী করা সম্ভব।
আমার মনে পড়ছে, যখন আমি সাংগঠনিক কাজে যুক্ত ছিলাম, আমরা জনসংঘের লোক, তখনো রাজনীতিতে আসিনি—আমরা কিছু না করলেও গালাগালি পেতাম। দুর্ভিক্ষের সময়ও রাজনীতিবিদদের সমালোচনা করা হত। অর্থাৎ তখনও একই অবস্থা ছিল। তবে তখন প্রিন্ট মিডিয়ার প্রভাব ছিল। আজও সোশ্যাল মিডিয়া আছে, কিন্তু আজকের দিনে সত্য যাচাই করার জন্য আপনার হাতে অনেক বড় ক্যানভাস আছে, অনেক বিকল্প উপায় আছে, আর আজকের যুবসমাজ এগুলো কাজে লাগাচ্ছে।
দেখুন, আজকের ছেলেমেয়েদের সঙ্গে দেখা হলে আমি অবাক হই—তারা মহাকাশের প্রতি এত আগ্রহ দেখায়। চন্দ্রযানের সাফল্য আমাদের দেশের যুবসমাজের মধ্যে এক নতুন চেতনা তৈরি করেছে। আমি অনেক ছাত্র-ছাত্রীর সঙ্গে দেখা করেছি যারা গগনযানের সময়সূচি জানে। আমি দেখেছি সোশ্যাল মিডিয়ার শক্তি—অষ্টম, নবম শ্রেণির ছাত্ররাও জানে গগনযানের অবস্থা কী, মহাকাশচারীদের কী হচ্ছে, কোথায় তাদের প্রশিক্ষণ চলছে। অর্থাৎ নতুন প্রজন্মের জন্য সোশ্যাল মিডিয়া এক বিশাল শক্তি হয়ে দাঁড়িয়েছে, আর আমি এটিকে অত্যন্ত উপযোগী বলে মনে করি।
যখন আমি রাজনীতিতে প্রথম প্রবেশ করি, তখন আমি খুবই ছোট ছিলাম। তখন ভেবেছিলাম মানুষ এমন কথা কেন বলে, এমন আচরণ কেন করে। ধীরে ধীরে বুঝলাম—এই ক্ষেত্রটাই এমন।
নিখিল কামাথ: আজকাল অনেক তরুণ-তরুণী বলে যে তারা উদ্বেগে ভোগে। আমিও ভুগি। আমি আপনার সঙ্গে বসে কথা বলছি—আমি নার্ভাস বোধ করছি, উদ্বিগ্ন বোধ করছি। মনে হচ্ছে আমি জানি না কী বলব, আপনি কেমন নেবেন। আমার কাছে এটি কঠিন এক আলাপচারিতা। অনেকেই উদ্বেগের কথা বলে। নিশ্চয়ই এটি আপনার জীবনেও এসেছে। আপনি শৈশবে কীভাবে এর মোকাবিলা করেছিলেন?
প্রধানমন্ত্রী: অবশ্যই এসেছে। এমন নয় যে ভগবান শুধু আমার জন্য কিছু দরজা বন্ধ করে রেখেছেন। তিনি সবার যা দেন, আমাকেও তা দিয়েছেন। দেখুন, এগুলোর মোকাবিলা করার ক্ষমতা প্রত্যেকের আলাদা, আর সামলানোর ধরণও আলাদা।
নিখিল কামাথ: যদি আমি আপনার কাছ থেকে এটা শিখতে চাই?
প্রধানমন্ত্রী: একে থিসিস আকারে ব্যাখ্যা করা কঠিন। তবে আমি এমন অবস্থায় আছি, যেখানে আবেগ এবং মানবীয় প্রবণতা আমাকে ছেড়ে যায়নি। ২০০২ সালের গুজরাট নির্বাচন আমার জীবনের সবচেয়ে বড় পরীক্ষা ছিল। জীবনে অনেকবার নির্বাচনে জেতার সুযোগ পেয়েছি। লড়েছি, অন্যকেও লড়াই করতে বাধ্য করেছি। আমার জীবনে আমি কোনোদিন টিভি দেখিনি। ফলাফল আসছিল না, কিছুই না। রাত ১১টা-১২টার দিকে মুখ্যমন্ত্রীর বাংলোর বাইরে ঢাকের শব্দ শোনা যেতে লাগল। আমি সবাইকে বলেছিলাম, রাত ১২টার আগে আমাকে কোনো খবর দিও না। তারপর আমাদের অপারেটর একটি চিঠি পাঠালেন—“স্যার, আপনি দুই-তৃতীয়াংশ সংখ্যাগরিষ্ঠতায় এগিয়ে আছেন।” তাই আমি বিশ্বাস করি না যে আমার ভেতরে কিছুই ঘটেনি। কিন্তু তখন আমার ভেতরে এক ধরনের ভাবনা কাজ করছিল যা সেই অস্থিরতা বা উদ্বেগকে ঢেকে দিয়েছিল। একে আপনি অস্থিরতা বলুন, উদ্বেগ বলুন—এটি অন্যরকম ছিল।
একইভাবে, আমার এলাকায় পাঁচটি জায়গায় বোমা বিস্ফোরণ ঘটেছিল। একজন মুখ্যমন্ত্রী হিসেবে পরিস্থিতি তখন কেমন হতে পারে, আপনি কল্পনা করতে পারেন। তখন আমি বললাম—আমি পুলিশ কন্ট্রোল রুমে যেতে চাই। কিন্তু আমার নিরাপত্তারক্ষীরা অস্বীকার করলেন। আমি বললাম—যাই হোক, আমি যাব। তারা খুব উদ্বিগ্ন হলেন। শেষ পর্যন্ত আমি গাড়িতে উঠলাম। প্রথমে বললাম—আমি হাসপাতালে যাব। তারা বলল—স্যার, হাসপাতালে-ও বোমা বিস্ফোরণ হয়েছে। আমি বললাম—যা-ই হোক, আমি যাব।
তাই আপনি বলতে পারেন, আমার ভেতরেও অস্থিরতা এবং উদ্বেগ ছিল। কিন্তু আমার উপায় ছিল আমার মিশনে সম্পূর্ণ নিমগ্ন হয়ে যাওয়া। তাই আমি সেটিকে ভিন্নভাবে অনুভব করেছি। হয়তো দায়িত্ববোধও সেখানে বড় কারণ ছিল।
২০০২ সালের ২৪ ফেব্রুয়ারি আমি জীবনে প্রথমবারের মতো বিধায়ক হই। ২৭ ফেব্রুয়ারি প্রথমবারের মতো বিধানসভায় যাই। আমি তিনদিন বিধায়ক থাকাকালীন হঠাৎ গোধরার একটি বড় ঘটনার খবর আসে—একটি ট্রেনে আগুন লেগেছিল। তখন আমি চিন্তিত হয়ে পড়ি। আমি বাড়িতে ছিলাম, বেরিয়ে এসে নিরাপত্তারক্ষীদের বললাম আমি গোধরা যেতে চাই। আমি বললাম আমরা এখান থেকে বরোদা যাব, বরোদা থেকে হেলিকপ্টার নিয়ে যাব। তারা বলল যাওয়া সম্ভব নয়। কারণ তখন একটি মাত্র হেলিকপ্টার ছিল। আমি বললাম অন্য কারও হেলিকপ্টার খুঁজুন, হয়তো ওএনজিসির একটি ছিল, তবে সেটা এক ইঞ্জিনের। তাই তারা বলল ভিআইপি বহন করা যাবে না। আমি বললাম আমি ভিআইপি নই, আমি একজন সাধারণ মানুষ। আমি যখন দৃঢ়ভাবে বললাম আমি যাব, তখন আমাদের মধ্যে বাগ বিতণ্ডা হল। আমি লিখে দিতে রাজি হলাম যে দায়িত্ব আমার, আমি এক ইঞ্জিনের হেলিকপ্টারে করেই যাব এবং আমি গোধরা পৌঁছালাম। সেখানে সেই বেদনাদায়ক দৃশ্য—এত মৃতদেহ, আপনি কল্পনা করতে পারেন। আমিও তো একজন মানুষ, আমাকেও সবকিছু সামলাতে হয়েছিল। কিন্তু আমি জানতাম আমি এমন এক দায়িত্বে আছি যেখানে আমাকে আবেগ নিয়ন্ত্রণ করতে হবে। এই সবকিছুর মধ্যে আমি যতটা সম্ভব নিজেকে সামলানোর চেষ্টা করছিলাম। কিন্তু যখন আমি “পরীক্ষা পে চর্চা”-তে ছাত্রছাত্রীদের সঙ্গে কথা বলি, তখন আমি তাদের কথা বুঝতে পারি। আমি তাদের বলি তোমরা মনে করো না যে বিশেষ কিছু করতে বেরিয়েছো, এটা তোমাদের দৈনন্দিন কাজেরই একটা অংশ—এভাবে ভাবতে বলি। সেদিন বিশেষ করে নতুন পোশাক না পরতে বলি।
নিখিল কামাথ: আপনি কি এমন ভাবেন যে সবচেয়ে খারাপ কী হতে পারে?
প্রধানমন্ত্রী: না, আমি কোনোদিনও জীবন বা মৃত্যুর কথা ভাবিনি। দেখুন, আমি মনে করি এটা হয়তো তাঁদের জন্য, যারা জীবনের হিসাব রেখে বাঁচেন। তাই হয়তো আমি এই প্রশ্নের উত্তর দিতে পারব না। কারণ বাস্তবে আমি কোনোদিনই আজ এখানে পৌঁছাব বলে ভাবিনি, কখনোই সেখানে পৌঁছানোর জন্য বের হইনি। সেই কারণেই আমি কিছুই জানি না। আমি যখন মুখ্যমন্ত্রী হলাম, আমি নিজেই বিস্মিত হয়েছিলাম যে আমি কীভাবে মুখ্যমন্ত্রী হলাম। তাই এটা আমার জীবনের পথ ছিল না। আমি একটি দায়িত্ব পেয়েছি, তাই আমি তা পালন করছি, আমার উদ্দেশ্য হচ্ছে সেটা ভালোভাবে করা। কিন্তু এর জন্য আলাদা করে কোনো যাত্রা শুরু করিনি। সেই জন্যই আমি ওইসব হিসাব কষতে পারি না। স্বাভাবিক জীবনে যা ঘটে, হয়তো তার ব্যতিক্রম আমি, কারণ আমার পটভূমি এমন যে আমি কখনো এভাবে ভাবতে পারি না। আমার পটভূমি এমন ছিল যে যদি আমি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক হতাম, তাহলে আমার মা পাড়ায় সবাইকে গুড় খাইয়ে বলতেন, আমার ছেলে শিক্ষক হয়েছে। সেই কারণেই আমি কোনোদিন এমন স্বপ্ন দেখিনি। ফলে যদি এটা না-ও হয়, তাহলে কী হবে— এসব কথা আমার মনে খুব একটা আসে না।
নিখিল কামাথ: আজকের আগে আপনি যেমন বলেছিলেন আমরা সফলতার চেয়ে ব্যর্থতা থেকে বেশি শিখি, তেমন কিছু ব্যর্থতার কথা বলবেন?
প্রধানমন্ত্রী: চন্দ্রযান-২ উৎক্ষেপণের দিন অনেকেই আমাকে বলছিলেন, স্যার আপনি যাবেন না। আমি জিজ্ঞেস করলাম কেন? তারা বলল, স্যার এটা অনিশ্চিত, পৃথিবীর সব দেশই ব্যর্থ হয়, চার-পাঁচবার চেষ্টা করার পরও এমন হয়। তখন আমি বললাম, কী হয়েছে? বদনাম হলে দায়িত্ব কি আমার নয়? আমি গেলাম। আর কী হল? চন্দ্রযান উৎক্ষেপণের সময় আমরা শেষ সেকেন্ডে বিচ্ছিন্ন হয়ে গেলাম। বাইরে বসা সবাই উদ্বিগ্ন হয়ে পড়ল, কিন্তু প্রধানমন্ত্রীর কাছে বলার সাহস কারও ছিল না। তবে প্রযুক্তি যতটুকু বুঝি, আমি দেখলাম হ্যাঁ, কিছু একটা গলদ হয়েছে। শেষমেষ সবচেয়ে জ্যেষ্ঠ ব্যক্তি এসে আমাকে জানালেন। আমি বললাম চিন্তা করবেন না। নমষ্কার বলে সবাইকে সম্ভাষণ জানালাম। রাত দুটোয় আমার একটি অনুষ্ঠান ছিল। গেস্ট হাউসে গেলাম যদিও ঘুম আসেনি। আধঘণ্টা পর আবার সবাইকে ফোন করে বললাম—দেখো, এই মানুষগুলো যদি ভেঙে না পড়ে তাহলে আমি যাওয়ার আগে সকাল সাতটায় তাদের সঙ্গে দেখা করতে চাই। কারণ দেশ একটি বড় বিপর্যয়ের মুখোমুখি হয়েছে। যদিও আমি তাদের মধ্যে একজন নই যে সারাজীবন কাঁদতে থাকবে। আমি সকালে গিয়েছিলাম। আমি সব বিজ্ঞানীদের বললাম যদি কোনো ব্যর্থতা আসে তার দায়িত্ব আমার। আমি চেষ্টা করেছিলাম তাদের বোঝাতে, বলেছিলাম হতাশ হবে না। আর আমি তাদের মধ্যে যতটা সম্ভব আত্মবিশ্বাস জাগিয়েছিলাম। আর চন্দ্রযান-৩ সফল হয়েছে।
নিখিল কামাথ – এই ঘটনাটির শিক্ষা কি রাজনীতিতে ব্যবহার করা যেতে পারে?
প্রধানমন্ত্রী – দেখুন, রাজনীতিতে ঝুঁকি নিতে অনেক প্রস্তুতির প্রয়োজন হয়। প্রতিটি মুহূর্তে ঝুঁকি নেওয়া লক্ষাধিক যুবক-যুবতীকে এগিয়ে আসতে হবে। আর আমি চাই তাদের যা প্রয়োজন তার জন্য আমার সময় দিতে। আমি মনে করি, যদি দেশ এমন যুব সমাজ পায়, তবে ২০৪৭ সালের জন্য আমার যে স্বপ্ন আছে, সেটি তারা পূর্ণ করবে। আমি তাদের আমাকে নিয়ে কাজ করতে বলছি না, আমি চাই তারা দেশকে নিয়ে কাজ করুক।
নিখিল কামাথ – রাজনীতিতে নিয়ে আসা।
প্রধানমন্ত্রী – কিন্তু তাদের মধ্যে কোনো অজানা ভয় থাকা উচিত নয়। তাই আমি তাদের পাশে দাঁড়াতে চাই, যেন তারা ভাবে, চিন্তা করো না, বন্ধুদের সঙ্গে এগিয়ে চলো, কিন্তু কোনো সংঘাতে জড়ানোর জন্য নয়। গণতন্ত্রে রাজনীতির অনেক গুরুত্ব আছে। একে সম্মান দিন। রাজনীতি যত বেশি সম্মান পাবে, রাজনৈতিক বিশুদ্ধতাও ততই বাড়বে। আমরা যদি একে তুচ্ছ, নোংরা ভাবি, তবে সেটা নোংরা থেকেই যাবে। রাজনীতিকে সম্মান দিতে হবে, এবং ভালো মানুষদের এতে আসতে হবে। সেটিই আমার প্রচেষ্টা।
নিখিল কামাথ – আজ আমি এখানে একটি কথা বলছি যে যুবসমাজকে রাজনীতিতে যোগ দিতে হবে। নিজের প্রসঙ্গে দুটি কথা বলতে চাই। প্রথমত, আমার কাজটা আমার খুব ভালো লাগে। কোম্পানিতে বিনিয়োগ করতে ভালোবাসি এবং ২০ বছরেরও বেশি সময় ধরে শেয়ার বাজারে কাজ করছি, সত্যিই আমার কাজটা ভালোবাসি। আর দ্বিতীয়ত, দক্ষিণ ভারতীয় মধ্যবিত্ত পরিবারে বড় হওয়া একজন হিসেবে ছোটবেলা থেকে শুনে এসেছি, আমার সামনে বিকল্প মাত্র তিনটি— ডাক্তার, ইঞ্জিনিয়ার বা চার্টার্ড অ্যাকাউন্ট্যান্ট। এখন হয়তো এর সঙ্গে স্টার্টআপ যোগ করতে পারি। কিন্তু আমাদের সবার কাছে রাজনীতি একটা নোংরা জায়গা। আমাদের মানসিকতায় এটা এতটাই গেঁথে গেছে যে পরিবর্তন আনা খুবই কঠিন। আর সত্যি বলতে গেলে, যদি আমি রাজনীতিবিদ হই, তাহলে কী পরিবর্তন আনতে পারব সেটাও জানি না। তাহলে আমাদের মতো মানুষকে আপনি কী বলবেন?
প্রধানমন্ত্রী – আমি বিষয়টিকে অন্যভাবে দেখি। আপনার বিশ্লেষণ অসম্পূর্ণ। কারণ আপনি যা বলছেন, সেটি যদি সত্যি হতো তাহলে আপনি আজ এখানে থাকতেন না। আপনার প্রতিটি মিনিট টাকার মূল্যবান খেলা, কিন্তু সব ফেলে দিল্লির শীতে আমার সঙ্গে সময় কাটাচ্ছেন— এর মানে আপনি গণতান্ত্রিক রাজনীতির সঙ্গে জড়িত। রাজনীতি মানে শুধু নির্বাচন নয়, রাজনীতি মানে জয় বা পরাজয় নয়, রাজনীতি মানে ক্ষমতা নয়। এটা তার একটি দিক মাত্র। দেশে যতজন নির্বাচিত প্রতিনিধি আছেন, ধরুন ১০,০০০ বিধায়ক, বা ১,০০০-২,০০০— কিন্তু রাজনীতিতে সবার প্রয়োজন আছে। দ্বিতীয়ত, যদি আপনি নীতি-নির্ধারণের জায়গায় থাকেন, তাহলে বড় পরিবর্তন আনতে পারেন। আপনার ছোট কোম্পানিতে ভালো কাজ করে পরিবর্তন আনতে পারেন, কিন্তু নীতি-নির্ধারণের জায়গায়, রাজনীতিতে থাকলে পুরো দেশে সেই পরিবর্তন আনতে পারেন। তাই শাসন ব্যবস্থার সবচেয়ে বড় সুবিধা হলো— আপনি নীতি গড়তে পারেন, নীতি কার্যকর করে পরিস্থিতি বদলাতে পারেন, আর যদি সৎভাবে ও সঠিক পথে কাজ করেন, তবে ফলাফলও পাবেন। যেমন আমি আপনাদের বলতে চাই— আমাদের দেশের প্রতিটি সরকার আদিবাসী সমাজের জন্য কাজ করেছে। আমাদের রাষ্ট্রপতি দ্রৌপদী মুর্মু এই সমাজ থেকেই এসেছেন। তাই যখনই আমি তার সঙ্গে দেখা করি, তিনি খুব আবেগপ্রবণ হয়ে পড়েন। আদিবাসী সমাজে এমন মানুষ আছেন যারা অনেক পিছিয়ে, ছোট ছোট গোষ্ঠীতে ছড়িয়ে-ছিটিয়ে আছেন। তিনি আমাকে বারবার বলেছেন কিছু একটা করতে হবে। আমি তাকে অনুরোধ করেছি আমাকে পথ দেখাতে। তার নির্দেশেই আমি পিএম জনধন যোজনা শুরু করেছি। তাই সময়মতো সঠিক সিদ্ধান্ত নিলে রাজনীতিতেও বড় পরিবর্তন আনা সম্ভব।
নিখিল কামাথ – আর স্যার, আমি সাংবাদিক নই, রাজনৈতিক বিশেষজ্ঞও নই। তবে যদি আবার ব্যর্থতার প্রসঙ্গে আসি, তাহলে কি বলতে পারেন— শৈশবের ব্যর্থতা থেকে আপনি কী শিখেছেন, আর গত ১০ বছরে মুখ্যমন্ত্রী থাকার সময়কালে?
প্রধানমন্ত্রী – আচ্ছা, আমার জীবনে অনেক ব্যর্থতা এসেছে। যখন আমি ছোট ছিলাম, সম্ভবত প্রাথমিক বিদ্যালয়ে পড়তাম, ঠিক মনে নেই, আর হয়তো তখন আমাদের রাজ্যে একটি সৈনিক স্কুল শুরু হয়েছিল। আমার খবরের কাগজ পড়ার অভ্যাস ছিল, তাই খবরের কাগজ পড়ার মানে বিজ্ঞাপনও পড়া। আমাদের গ্রামে একটি গ্রন্থাগার ছিল, আমি প্রায়ই সেখানে যেতাম। সেখানেই সৈনিক স্কুল সম্পর্কে পড়েছিলাম। হয়তো তখন আমি মানি-অর্ডার করে এক টাকা পাঠিয়ে সব কাগজপত্র চেয়েছিলাম। সবই এত বড় ইংরেজিতে লেখা ছিল, কিছুই বুঝতে পারিনি। তখন আমাদের গ্রামের কাছেই প্রায় ৩০০-৪০০ মিটার দূরে এক জন ছিলেন রাসবিহারী মানিয়ার, তিনি একটি উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক ছিলেন। তাঁর বাড়ি আমি প্রায়ই যাতায়াতের সময় দেখতাম। ছোটবেলায় তাঁকে আমার খুব বড় মানুষ মনে হতো। একদিন তাঁর বাড়িতে গিয়ে বললাম, আমি কিছুই বুঝতে পারছি না, যদি কেউ বুঝিয়ে দেয়। তিনি খুব সদয় ছিলেন। তিনি বললেন, “তুমি চিন্তা করো না, আমি দেখছি।” তারপর তিনি সব পড়ে আমাকে বুঝিয়ে দিলেন—এটা সৈনিক স্কুল, এখানে সাক্ষাৎকার হয়, পরীক্ষা হয়, পরীক্ষা পাস করতে হয় ইত্যাদি। পরে আমি বাবাকে বললাম। বাবা বললেন, “না না, আমাদের টাকা নেই, কোথাও যেতে হবে না, আমাদের গ্রামেই থেকে যাও।” তখন আমার মনে হলো সৈনিক স্কুল দেশের জন্য খুব বড় একটি ব্যাপার, কিন্তু আমি তা করতে পারলাম না। আমি ভাবি হয়তো এটাই আমার জীবনের প্রথম ব্যর্থতা ছিল যে আমি এটা করতে পারলাম না। অর্থাৎ জীবনে প্রতিটি ছোট ছোট জিনিস এভাবেই দেখেছি।
আমার মনে আছে, সাধুর মতো জীবন যাপনের প্রবল ইচ্ছা ছিল, কিন্তু আমি তা করতে পারিনি। আমার প্রথম প্রচেষ্টা ছিল রামকৃষ্ণ মিশনে যোগ দেওয়া। স্বামী আত্মস্থানন্দজি, যিনি প্রায় ১০০ বছর বেঁচেছিলেন এবং সম্প্রতি পরলোকগমন করেছেন, তিনি আমার সম্পর্কে অনেক কিছু বলেছেন, কারণ আমি তাঁর সঙ্গে থেকেছিলাম। কিন্তু রামকৃষ্ণ মিশনের কিছু নিয়ম ছিল, আমি সেই যোগ্যতা পূরণ করতে পারিনি এবং তাই আমি সেখানে ফিট হলাম না। আমাকে প্রত্যাখ্যান করা হয়েছিল। তবে আমি হতাশ হইনি। আমার স্বপ্ন পূরণ হয়নি, কিন্তু আমি ভেঙে পড়িনি। জীবনে বারবার ব্যর্থতা এসেছে, আমি এদিক-ওদিক ঘুরেছি, কিছু সাধু-মহন্তদের খুঁজতে থেকেছি, সেখানেও কোনো সফলতা পাইনি। একভাবে বলতে পারি, আমি ফিরে এসেছিলাম। হয়তো ভাগ্যের পরিকল্পনাই এমন ছিল, তাই আমাকে এই পথে নিয়ে এসেছে। জীবনে এমন ব্যর্থতা আসবেই।
নিখিল কামাথ – আর এই ঘটনাক্রমই আজ আপনার ব্যক্তিত্ব গড়ে তোলার ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছে এবং এখান থেকে আপনি কী শিখেছেন?
প্রধানমন্ত্রী – আমি আপনাকে বলি, যখন আমি আরএসএস-এ কাজ করতাম, তখন আরএসএস-এর লোকেরা একটি পুরোনো জিপ কিনেছিল। আমি তখনই নতুন করে গাড়ি চালানো শিখেছিলাম। একদিন আমাদের এক আরএসএস কর্মকর্তার সঙ্গে উপজাতি অঞ্চলে যাচ্ছিলাম। আমরা উকাই বাঁধ থেকে ফিরছিলাম, রাস্তায় একটা খাড়া ঢাল ছিল। আমি ভেবেছিলাম, পেট্রোল বাঁচাবো, তাই গাড়ি বন্ধ করে দিলাম। ভেবেছিলাম নেমে যাব, কিন্তু বুঝতে পারিনি যে এতে বিপদ হবে। গাড়ি নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে গেল, ব্রেক চাপলেও কাজ করছিল না, কারণ হঠাৎ গতি বেড়ে গিয়েছিল। যন্ত্রটা বন্ধ থাকায় কোনো নিয়ন্ত্রণ ছিল না। আমি বেঁচে গেলাম, তবে পাশে বসা লোকেরাও বুঝতে পারেনি আমি এমন এক ভুল করেছি। পরে আমি শিক্ষা পেলাম যে ভাই, এ ধরনের খেলা বন্ধ করতে হবে।
আমি বিশ্বাস করি, প্রতিটি ভুল থেকেই শিক্ষা হয়। আমি দৃঢ়ভাবে মনে করি, জীবনের উন্নতি কেবল অভিজ্ঞতার মাধ্যমেই হয়। আমার সৌভাগ্য যে আমি কোনোদিনই আরামের জীবন কাটাইনি। আমি সবসময় আরামের সীমার বাইরে থেকেছি। আর যখনই আরামের সীমার বাইরে থেকেছি, তখনই শিখেছি কীভাবে করতে হয়, কীভাবে বাঁচতে হয়।
নিখিল কামাথ – বর্তমানেও আপনি মনে করেন আরামে থাকা আপনার জন্য নয়, এর নির্দিষ্ট কোনো কারণ আছে কি?
প্রধানমন্ত্রী – আমি সম্ভবত আরামের জন্য অযোগ্য, আমার তাই মনে হয়।
নিখিল কামাথ – কিন্তু আপনি কখনও ভেবেছেন কেন? কেন আপনি মনে করেন যে আপনি আরামের জন্য অযোগ্য?
প্রধানমন্ত্রী – আমি যে জীবন কাটিয়েছি, সেটাই আমার কাছে বড় কথা। সামগ্রিকভাবে আমি অনুভব করি যে আমি তৃপ্ত।
নিখিল কামাথ – আপনিও কি মনে করেন না যে আপনার চূড়ান্ত লক্ষ্যে পৌঁছানোর পথে আরাম আসে?
প্রধানমন্ত্রী – আমি বিশ্বাস করি, অনেক মানুষ জীবনে ব্যর্থ হয় কারণ তারা তাদের আরামদায়ক জীবনের মধ্যে আটকে যায়। এমনকি একজন বড় শিল্পপতিও, যদি তিনি ঝুঁকি না নেন এবং আরামদায়ক জীবনের বাইরে বের না হন, তবে সময়ের সাথে সাথে তার অগ্রগতিও থমকে যাবে। তাই তাকে অবশ্যই এই সীমাবদ্ধতা অতিক্রম করতে হবে। জীবনের যেকোনো ক্ষেত্রে এগিয়ে যেতে চাইলে, আরামদায়ক জীবনের সাথে অভ্যস্ত হওয়া ঠিক নয়। ঝুঁকি নেবার মানসিকতাই হলো সাফল্যের মূল চালিকা শক্তি।
নিখিল কামাথ – আর শিল্পায়নেও একই কথা, যে বেশি ঝুঁকি নিতে পারে সে-ই ভালো কাজ করে। স্যার, আপনার জীবনে সময়ের সাথে সাথে আপনার ঝুঁকি নেওয়ার ক্ষমতা কি বেড়েছে?
প্রধানমন্ত্রী – আমি অনুভব করি যে আমার ঝুঁকি নেওয়ার ক্ষমতা এখনো পুরোপুরি ব্যবহার হয়ন। আমার ঝুঁকি নেওয়ার ক্ষমতা হয়তো বহুগুণ বেশি কারণ আমি গুরুত্ব দিই না। আমি কখনো নিজের কথা ভাবিনি আর যে নিজের জন্য ভাবে না তার ঝুঁকি নেওয়ার ক্ষমতা অপরিসীম, এটাই আমার কথা।
নিখিল কামাথ – আজকের দিনে আপনি কী ভাবেন?
প্রধানমন্ত্রী – আজ আমি এটা নই, কাল আমি সেটা নই, তখন আমি কী হবো, তার সঙ্গে আমার কোনো সম্পর্ক নেই।
নিখিল কামাথ – যদি আজকের দিনে আপনি কিছু না ভাবেন, একেবারেই ভয় না থাকে এবং একটি সিদ্ধান্ত নেন যেটি আপনি সরকারের জন্য নিতে পারছেন না, সেটি কী হবে?
প্রধানমন্ত্রী — হয়তো আমার অন্য দায়িত্বগুলি এখন শেষ হয়ে আসছে এবং এটি এক ধরনের জীবনদর্শন হয়ে উঠেছে। সুতরাং হয়তো এটা করা উচিত, কিন্তু আগে একটা কাজ ছিল যা এখনও মাঝে মাঝে করার ইচ্ছে হয়। আগে আমার একটি প্রোগ্রাম ছিল, এবং আমি এর নাম দিয়েছিলাম "আমি নিজেকে দেখতে যাচ্ছি, আমি নিজেকে দেখতে যাচ্ছি"। অর্থাৎ, অনেক সময় আমরা নিজেকেই খুঁজে পাই না, আমরা পৃথিবীকে খুঁজি, কিন্তু নিজেকে খোঁজার সময় পাই না। তাই আগে আমি বছরে কিছু সময় বের করে, তিন-চার দিন, প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র নিয়ে এমন জায়গায় যেতাম যেখানে মানুষ নেই, কিন্তু জলের ব্যবস্থা আছে — জঙ্গলের কোথাও একাকী একটি স্থান খুঁজে বের করতাম। তখন মোবাইল ফোন ছিল না, খবরের কাগজও নয় — এসবের কোনো প্রশ্নই ছিল না। সেই জীবনটা আমার কাছে এক ভিন্নধরনের আনন্দ ছিল। আমি মাঝে মাঝে সেটা মিস করি।
নিখিল কামাথ — আর সেই সময়গুলোতে, যখন আপনি একা নিজের সঙ্গে সময় কাটিয়েছেন, তখন কি নিজের সম্পর্কে কিছু জানতে পেরেছিলেন? দর্শনে যেমন বলা হয়, জীবনের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ এবং আনন্দদায়ক প্রশ্ন হলো — “আমি কেন?”, “আমি কেমন করে?” — সেই সময়ে কি আপনি নিজের সম্পর্কে এমন কিছু জানতে পেরেছিলেন, যে কেন আপনি এইরকম?
প্রধানমন্ত্রী — নিজের মাঝে হারিয়ে যাওয়াটা একটা বিষয়। আমি একটা উদাহরণ দিই কী ঘটেছিল। এটা সম্ভবত ৮০’র দশকের কথা, আমি ঠিক করেছিলাম যে আমি মরুভূমিতে থাকব। যখন আমি মরুভূমির মধ্যে ঘুরে বেড়াচ্ছিলাম, একটা আলো দেখেছিলাম, কিন্তু সেখানে পৌঁছাতে পারছিলাম না। তারপর একজন উটওয়ালার সঙ্গে দেখা হয়। তিনি বললেন, "ভাই, আপনি এখানে কী করছেন?" আমি বললাম, "ভাই, আমি মরুভূমির ভিতরে যেতে চাই।" তিনি বললেন, "আপনি আমার সঙ্গে চলুন। সামনে যে আলোটা দেখছেন, ওটাই শেষ গ্রাম। আমি আপনাকে সেখানে নামিয়ে দেব। রাতটা ওখানে কাটান।"এরপর তিনি আমাকে নিয়ে গেলেন। এমন অবস্থায় একজন মুসলিম ভদ্রলোক, গুলবেক নামে, আমাকে তাঁর বাড়িতে নিয়ে যান। সেই ছোট্ট গ্রামটির নাম এখন ধোরদো — এটি পাকিস্তান সীমান্তে ভারতের শেষ গ্রাম। সেখানে ছিল মাত্র ২০-২৫টি ঘর, সব মুসলিম পরিবার। আমি তাঁদের আতিথ্য গ্রহণ করেছিলাম। যখন আমি যাওয়ার জন্য বের হচ্ছিলাম, তখন তাঁর ভাই ও সন্তানরা বললো, "মরুভূমিতে এখন যেও না, তাপমাত্রা এখন শূন্যের নিচে। তুমি কীভাবে সেখানে থাকবে? আজ রাতটা এখানেই থাকো, সকালে আমরা দেখাব।" যাই হোক, আমি রাতটা তাঁদের বাড়িতে কাটালাম, তিনি আমাকে খাওয়ালেন। আমি তাঁকে বললাম, “ভাই, আমি একা থাকতে চাই, আমাকে কিছু লাগবে না।”
তিনি বললেন, “তুমি একা থাকতে পারবে না। আমাদের এখানে একটি ছোট কুঁড়েঘর আছে, তুমি সেখানে থাকতে পারো।” রাতে আমি আবার কচ্ছের রণে ফিরে গেলাম। বাইরে একটি দৃশ্য আমার হৃদয় ছুঁয়ে গেল, যা আমি হিমালয়ে কাটানো আমার জীবনেও অনুভব করেছিলাম। বরফের মাঝে যেমন এক অনুভব নিয়ে বেঁচে থাকতাম, ঠিক তেমনই অনুভব হচ্ছিল। আমি আগেও একটি আধ্যাত্মিক অনুভূতি পেয়েছিলাম, কিন্তু এই দৃশ্য আমার মনে গেঁথে গিয়েছিল। যখন আমি মুখ্যমন্ত্রী হলাম, তখন আমি সেখানে “রণ উৎসব”-এর একটি বড় আয়োজন করেছিলাম। আজ সেটি একটি বড় পর্যটনকেন্দ্রে পরিণত হয়েছে। এখন এটি বিশ্বের অন্যতম সেরা পর্যটনস্থান হিসেবে বিবেচিত হয় এবং এটি বিশ্বের সেরা গ্রামের পুরস্কারও পেয়েছে।
নিখিল কামাথ — কল্পনা করুন, আগামীকাল আপনার জীবনে এমন একটি ঘটনা ঘটবে যা আপনাকে সবচেয়ে বেশি আনন্দ দেবে — তাহলে আপনার প্রথম ফোনটা আপনি কাকে করবেন?
প্রধানমন্ত্রী – যখন আমি শ্রীনগরের লালচকে তেরঙ্গা পতাকা উত্তোলন করতে গিয়েছিলাম এবং পাঞ্জাবের ভাগওয়ারার নিকটে আমাদের শোভাযাত্রায় আক্রমণ হয়েছিল, গুলি চালনা হয়েছিল, অনেক মানুষ, পাঁচ-ছ’জনের মৃত্যু হয়েছিল, অনেকেই আহত হয়েছিলেন, তখন সমগ্র দেশবাসী চিন্তিত হয়েছিল। তেরঙ্গা উত্তোলন করে জম্মুতে আসার পরে, জম্মুতে আমার প্রথম ফোনটা আমার জন্য ছিল এক আনন্দের মুহূর্ত, আর আমি তখনও ভেবেছিলাম যে মা নিশ্চয়ই চিন্তিত যে গুলিবর্ষণ হয়েছে আর আমি কোথায় আছি। আমার মনে আছে, প্রথম ফোনটা মায়ের কাছ থেকে ছিল – আজ বুঝতে পারছি সেই ফোনটার গুরুত্ব আমি আর কোথাও অনুভব করিনি।
নিখিল কামাথ – আপনি সম্প্রতি যেমন আপনার পিতামাতাকে হারিয়েছেন, আমিও আমার বাবাকে হারিয়েছি। আপনি আমাকে চিঠি দিয়ে সমবেদনাও জানিয়েছিলেন, তার জন্য অশেষ ধন্যবাদ। আপনার মনে প্রথমে কী এসেছিল? যদি আমি আমার উদাহরণ দিই, তখন যখন আমি বাবাকে হারিয়েছিলাম, তখন আমার মনে প্রথম চিন্তাটা এসেছিল – অপরাধবোধ, যে কেন আমি এটা করিনি, কেন যাইনি, কেন আরও বেশি সময় কাটালাম না তাঁর সঙ্গে। আপনার জীবনে যখন এই ঘটনা ঘটল, আপনি কী ভেবেছিলেন?
প্রধানমন্ত্রী – এমনটা আমার জীবনে হয়নি, কারণ আমি ছোটবেলায়ই বাড়ি থেকে বেরিয়ে এসেছিলাম, তাই বাড়ির মানুষও মেনে নিয়েছিলেন যে আমি আর তাঁদের নই। আমিও মেনে নিয়েছিলাম যে আমি পরিবারের জন্য নই। তাই আমার জীবনটা সেভাবেই চলেছে। ফলে কারও প্রতি সেই ধরনের মোহ অনুভব করার কোনো কারণ ছিল না। কিন্তু যখন আমার মা ১০০ বছরে পৌঁছালেন, আমি তাঁর চরণ স্পর্শ করতে গিয়েছিলাম। তখন ১০০ বছর বয়সে মা অশিক্ষিতা ছিলেন, তিনি কিছু জানতেন না, চিঠির জ্ঞান ছিল না। তখন বিদায় নেওয়ার সময় আমি বলেছিলাম, “মা, আমাকে যেতে হবে, আমার কর্তব্য ডাকছে।” আশ্চর্যের বিষয়, মা দুটো বাক্য বলেছিলেন। অর্থাৎ, একজন যিনি কোনোদিন স্কুলের দরজা পর্যন্ত দেখেননি, তিনি বললেন – “বুদ্ধিমানভাবে কাজ করো আর নির্মল জীবন যাপন করো।” তাঁর মুখ থেকে বেরোনো এই কথাটা আমার কাছে ছিল এক অমূল্য সম্পদ। একভাবে বলতে গেলে, এটা ছিল এক বিশাল ধন। বুদ্ধিমত্তা দিয়ে কাজ করা, আর পবিত্রতার সঙ্গে জীবন যাপন করা। মা গুজরাটিতে বলেছিলেন, কিন্তু তিনি যা বোঝাতে চেয়েছিলেন, তা-ই ছিল আসল বার্তা। তখন আমি ভেবেছিলাম, ভগবান মায়ের মধ্যে কী এমন বিশেষত্ব রেখেছেন। হয়তো যদি তাঁর সঙ্গে বেশি সময় কাটাতে পারতাম, আমি অনেক কিছু শিখতে পারতাম, তাঁর গুণগুলো চিনতে পারতাম। এখন মাঝে মাঝে মনে হয়, সেই সুযোগ না পাওয়ায় আমার যোগাযোগ অনেক কমে গিয়েছিল, কারণ আমি বছরে এক-দুবারই যেতাম। মা কখনও অসুস্থ হতেন না, আর যখনই যেতাম, তিনি বলতেন – “বাবা, তুমি কিছু স্থায়ী কাজ করো, বেশি সময় নষ্ট করো না।” এইটাই ছিল তাঁর স্বভাব।
নিখিল কামাথ – সুতরাং স্যার, আমি আবার রাজনীতির প্রসঙ্গে আসছি। প্রথমে আপনি বলেছিলেন যে রাজনীতি পঙ্কিল নয়, যদিও ইতিহাস আমাদের বলে যে অনেক রাজনীতিবিদ রাজনীতিকে কলুষিত করে তোলে। আর এখানেই প্রশ্ন – আদর্শবাদী মানুষ যদি পরিবর্তন আনতে চান, যদি ব্যবস্থাকে পরিবর্তন করতে চান... দ্বিতীয় প্রশ্নটা রাজনীতিতে অর্থ নিয়ে। আমরা যখন তরুণদের বলি যে রাজনীতিতে যোগ দিন, তখন তাঁদের দ্বিতীয় যে সংশয় আসে তা হলো – এর জন্য প্রচুর অর্থের প্রয়োজন, আর আমাদের হাতে তা নেই। আপনি কি আমার জীবনের অভিজ্ঞতা অনুযায়ী, যেমন আমি স্টার্টআপ উদ্যোগে বন্ধু ও পরিবারের কাছ থেকে প্রাথমিক বিনিয়োগ (সিড মানি) নিয়েছিলাম, রাজনীতিতে এই বিষয়টা কীভাবে হয়, সে সম্পর্কে কিছু বলবেন?
প্রধানমন্ত্রী: শৈশবের একটি ঘটনা আমার মনে আছে। আমার গ্রামে বসন্ত ভাই পারিখ নামের এক জন ডাক্তার ছিলেন। তিনি ছিলেন একজন দক্ষ চক্ষু-চিকিৎসক এবং তাঁর মধ্যে সেবার মনোভাব ছিল। তিনি একজন ভালো বক্তাও ছিলেন এবং হিন্দি খুব সুন্দরভাবে বলতে পারতেন। তিনি গুজরাটিও ভালোভাবে বলতেন। একবার তিনি নির্দলীয়ভাবে নির্বাচনে দাঁড়ানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন। আমরা সবাই তখন শিশুদের একটি দল গড়ে তুলেছিলাম, যাকে বালসেনা বলা হত। হাতে পতাকা নিয়ে ঘুরতাম, প্রচার করতাম। সেই স্মৃতিগুলো এখনও মনে আছে।
নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করার জন্য তিনি মানুষের কাছ থেকে এক টাকা করে সংগ্রহ করেছিলেন এবং পরে এক জনসভায় স্পষ্টভাবে হিসেব দিয়েছিলেন— কত টাকা পেয়েছেন এবং কীভাবে ২৫০ টাকা খরচ হয়েছে। খুব অল্প ভোটে তিনি নির্বাচনে জয়লাভ করেছিলেন। এতে প্রমাণিত হয়েছিল যে সমাজ অজ্ঞ নয়। ধৈর্য লাগে, নিষ্ঠা লাগে। দ্বিতীয়ত, শুধু অর্থ ব্যয় করলেই ভোট পাওয়া যায়— এই ধারণা ভুল। এমন হলে জীবনে সফল হওয়া যায় না। তাই আমি বলি যে নির্বাচনকে সীমাবদ্ধ দৃষ্টিভঙ্গি থেকে আলাদা করে, রাজনীতিকে বৃহত্তর পরিসরে দেখতে হবে— শুধু বিধায়ক-সাংসদ পর্যন্ত সীমাবদ্ধ রাখা উচিত নয়।
আমাদের সামাজিক জীবনের সঙ্গে যুক্ত যে-কোনো কাজই রাজনৈতিক প্রভাব ফেলে। কেউ হয়তো একটি ছোট আশ্রম চালাচ্ছে, মেয়েদের শিক্ষার কাজ করছে, নিজে নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছে না, কিন্তু তাঁর প্রচেষ্টার ফলে রাজনৈতিক ফলাফল বেরিয়ে আসছে। এই কারণেই রাজনীতিকে বিস্তৃত ক্যানভাসে দেখতে হবে। আমি মাঝে মাঝে বলি, গণতন্ত্রে ভোটার নিজেও এক অর্থে রাজনীতিবিদ। ভোট দেওয়ার সময় সে নিজের বিচারবুদ্ধি ব্যবহার করে— এই প্রার্থীকে ভোট দেব কি দেব না, তাঁর প্রতি আমার অনুভূতি কী।
আমার ক্ষেত্রে, যদিও আমি রাজনীতিতে আছি, আমি নিজেকে তথাকথিত রাজনীতিবিদ মনে করি না। আমি রাজনৈতিক বক্তৃতা দিই শুধু নির্বাচনের সময়, কারণ সেটি আমার দায়িত্ব, চাই বা না-চাই। কিন্তু নির্বাচনের বাইরে আমার সমগ্র সময় ব্যয় হয় শাসন ব্যবস্থায়। ক্ষমতায় থাকার সময় আমার মনোযোগ ছিল সংগঠন ও মানবসম্পদ উন্নয়নে। তার আগে আমি শ্রমিকদের জীবনমান উন্নত করতে নিজেকে নিয়োজিত রেখেছিলাম। কীভাবে বক্তৃতা দিতে হয়, কীভাবে প্রেস বিজ্ঞপ্তি লিখতে হয়, কীভাবে জনসমাবেশ আয়োজন করতে হয়— প্রতিটি কাজে আমি নিজেকে সম্পূর্ণভাবে নিযুক্ত করতাম।
আপনারা হয়তো লক্ষ্য করেছেন, গুজরাটের মুখ্যমন্ত্রী থাকার সময় আমি কখনো দায়িত্ব এড়াইনি। নতুন মুখ্যমন্ত্রী হওয়ার সময় আমার প্রথম চ্যালেঞ্জ ছিল ভূমিকম্প। তাই আমি ভূমিকম্প-আক্রান্ত অঞ্চলে গিয়েছিলাম। কর্মকর্তাদের সঙ্গে বৈঠক করে জিজ্ঞেস করলাম, “এখন পর্যন্ত তো নয় মাস কেটে গেছে, অক্টোবর মাস চলছে। এতদিনে কী হয়েছে?” তারা বলল, “স্যার, মার্চ মাসের মধ্যে কাজ শেষ হবে।” আমি বললাম, “মার্চ আপনার মনে আছে শুধু সরকারি অর্থবছরের কারণে। বাজেট-বর্ষের বাইরে ভাবুন। বলুন তো, ২৬ জানুয়ারির আগে কী করা সম্ভব?” কারণ ২৬ জানুয়ারি প্রজাতন্ত্র দিবস— গোটা দেশ উৎসব করে। আমি বললাম, আমাদের লক্ষ্য ডিসেম্বর মাসের শেষ।
তারপর আমি বললাম, ৪৩টি তালুক আক্রান্ত হয়েছে। প্রতিটি অফিসার একটি তালুকের দায়িত্ব নেবেন এবং সেখানকার মুখ্যমন্ত্রী হবেন। প্রতি শুক্রবার সেখানে যেতে হবে এবং সোমবার আমি জিজ্ঞেস করব কী করেছেন। সবাই গিয়ে কাজ শুরু করল। প্রথম বৈঠকে তারা বলল, “স্যার, এটা সম্ভব নয়, নিয়মে বাঁধা আছে।” আমি জিজ্ঞেস করলাম, “নিয়মটা কে করেছে?” তারা বলল, “আমরাই করেছি।” আমি বললাম, “তাহলে বদলে ফেলুন।” এরপর নিয়ম পাল্টানো হল, আর কাজ দ্রুত গতিতে এগোতে লাগল। জানুয়ারি মাসে দেশি-বিদেশি সংবাদমাধ্যম যখন এল, তারা উপলব্ধি করল যে আমি রাজনীতি করিনি, বরং সবাইকে প্রেরণা দিয়ে একটি ফলাফলের দিকে নিয়ে গিয়েছি। আমি তখন নতুন ছিলাম, অভিজ্ঞতা ছিল না, প্রশাসনের কোনো জ্ঞানও ছিল না।
পরে দিল্লিতে আসার পর একদিন আমি আমার সচিবদের ডেকে বললাম, “আমার একটি ইচ্ছে আছে, আপনারা কি করবেন?” তারা জিজ্ঞেস করল কী ইচ্ছে। আমি বললাম, “আপনাদের প্রত্যেককে পরিবার নিয়ে দুই-তিন দিনের ছুটি নিতে হবে।” তারা অবাক হল। আমি বললাম, “কিন্তু সেই সময়ে একটি কাজ করতে হবে। যেখানে প্রথমে আইএএস অফিসার হিসেবে আপনারা চাকরি শুরু করেছিলেন, সেই গ্রামে ফিরে যান। সেখানে দু’দিন থাকুন। স্ত্রী-সন্তানদের নিয়ে যান। তাদের দেখান— এই ছিল আমার প্রথম অফিস, এখানে ফ্যান ছিল না, একটি অ্যাম্বাসাডর গাড়ি ছিল, চারজন লোক মিলে কাজ সামলাতাম। সবকিছু দেখান। তারপর ফিরে এসে আমরা আলোচনা করব।”
তারা সবাই গেলেন, ফিরে এলেন। আমি জিজ্ঞেস করলাম, “আপনারা গিয়েছিলেন তো? গ্রামবাসীদের সঙ্গে দেখা করেছেন তো?” তারা বললেন, “হ্যাঁ, স্যার।” আমি বললাম, “এখন একটি গুরুতর প্রশ্ন— যেখানে আপনি ২৫–৩০ বছর আগে চাকরি শুরু করেছিলেন, সেই গ্রাম আজও কি একই রকম আছে, নাকি বদলেছে?” সবাই আবেগপ্রবণ হয়ে স্বীকার করলেন, “না স্যার, প্রায় একই রকম রয়ে গেছে।” আমি জিজ্ঞেস করলাম, “এর জন্য দায়ী কে?”
আমি কাউকে দোষ দিইনি। শুধু তাদের বাস্তবের সঙ্গে পুনঃপরিচয় করিয়েছিলাম। আমি তাদের ২৫ বছর আগের সেই পৃথিবীতে ফিরিয়ে নিয়ে গিয়েছিলাম। এটাই আমার কাজের ধরণ। আমি কখনো কাউকে গালিগালাজ করি না, কারও সঙ্গে খারাপ ব্যবহার করি না। আমি সবসময় অনুপ্রাণিত করার পন্থা অবলম্বন করি।
নিখিল কামাথ: এবং যদি আপনি সংগঠনের কথা বলেন—উদ্যোক্তা বা স্টার্টআপ ব্যবসায় যখন চক্রটি ভালোভাবে চলতে থাকে, তখন তারা অনেক মানুষকে নিয়োগ দেয়। কিন্তু পরবর্তীতে বাজারের গতি ধীরে বা চক্র বদলে যায়, তখন অনেক মানুষকে চাকরি থেকে বরখাস্ত করতে হয়। আপনি সর্বদা বলেছেন—ন্যূনতম সরকার, সর্বোচ্চ শাসন। আমাদের সরকার কি সত্যিই এটি কার্যকরভাবে বাস্তবায়ন করতে সক্ষম হয়েছে? এখন এটি কীভাবে চলছে?
প্রধানমন্ত্রী: আমাদের দেশের কিছু মানুষ বোঝাপড়ার অভাবে ন্যূনতম সরকার, সর্বোচ্চ শাসন ব্যবস্থাকে নিজের মতো ব্যাখ্যা করেছে। কেউ ভেবেছিল—কম সংখ্যক মন্ত্রী মানে ন্যূনতম সরকার, কেউ ভেবেছিল—কম সংখ্যক কর্মচারী মানে ন্যূনতম সরকার। আমি তা কখনো কল্পনা করিনি। তার চেয়ে উপরে গিয়ে আমি একটি নিখুঁত দক্ষতা মন্ত্রক, একটি নিখুঁত সমবায় মন্ত্রক ও একটি নিখুঁত মৎস্য মন্ত্রক গঠন করেছি।
অতএব দেশের সকল ফোকাস এলাকার জন্য… যখন আমি বলি ন্যূনতম সরকার, সর্বোচ্চ শাসন, এখানে চলমান প্রক্রিয়াটি দীর্ঘমেয়াদি। কোনো অনুমতি নিতে গেলে ছয় মাস সময় লাগে। আদালতের মামলা আছে—একশো বছর পুরনো মামলা এখনও বিচারাধীন। তাই আমরা কি করেছি? আমরা প্রায় ৪০,০০০ কমপ্লায়েন্স সরিয়ে দিয়েছি। না হলে এই বিভাগটি আপনাকে এটি খুঁজতে দেবে, আপনার কাছের ভাইও একই প্রশ্ন করবে, তৃতীয়জনও একই প্রশ্ন করবে। একজন ভাই জিজ্ঞেস করলে—“আপনি ব্যবহার করবেন কি?” ৪০,০০০ কমপ্লায়েন্স সরিয়ে দেওয়ার পর আপনি কল্পনা করতে পারেন যে ভারতের একজন সাধারণ মানুষ কত বোঝা বহন করে। আমি প্রায় ১,৫০০ আইন বাতিল করেছি। অপরাধমূলক বিষয়ের সঙ্গে যুক্ত আইন পরিবর্তন করেছি। তাই ন্যূনতম সরকার, সর্বোচ্চ শাসনের আমার দৃষ্টিভঙ্গি এটিই এবং আজ আমি দেখছি—সবকিছু কার্যকর হয়েছে।
নিখিল কামাথ: স্যার, ইন্ডিয়ান স্ট্যাকের কথা বলতে গেলে, আমরা সরাসরি উপকৃত হচ্ছি—ইউপিআই, ই-কে-ওয়াইসি, আধার। এগুলি তৈরি করার সময় আপনি কি ভেবেছিলেন যে এটি এইভাবে কাজ করবে?
প্রধানমন্ত্রী: আজ আমি ৩০ সেকেন্ডের মধ্যে ১০ কোটি কৃষকের একাউন্টে সরাসরি অর্থ পাঠাতে পারি। আজ আমি ১৩ কোটি গ্যাস সিলিন্ডার গ্রাহকের কাছে একটি ক্লিকে ৩০ সেকেন্ডে অর্থ প্রেরণ করতে পারি। এটি সম্ভব হয়েছে জনধনের জন্য। দেশে কোটি কোটি টাকার লুটপাট, যা আগে দুর্নীতির কারণে হতো, এখন তা আর নেই এবং প্রযুক্তি এটির ব্যবহার নিশ্চিত করেছে।
এখন আপনি ইউপিআই দেখছেন, যা পুরো বিশ্বের কাছে বিস্ময়কর। যখন বিদেশ থেকে মানুষ আসে, তারা জিজ্ঞেস করে—“ইউপিআই কিভাবে কাজ করে?” আমি তাদের বলি, একজন বিক্রেতার কাছে যান! ফিনটেক এবং প্রযুক্তি কিভাবে গণতান্ত্রিকভাবে ব্যবহার করা যায়, সেই জগতে ভারত বিশ্বে একটি আদর্শ স্থাপন করেছে। আজ যদি দেশের যুবক-যুবতীর পকেটে মোবাইল ফোন থাকে, তাদের আর কিছু করার প্রয়োজন নেই। তারা কখনো মনে রাখবে না যে পুরো পৃথিবী তাদের পকেটে বা মোবাইলে থাকাকালীন সময়ে সরকার ছিল। এটি প্রযুক্তি-চালিত শতাব্দী। দেশ পৃথক উদ্ভাবনের জন্য একটি কমিশনও তৈরি করেছে। উদ্ভাবনের জন্য আমি একটি নিখুঁত পুঁজি স্থাপন করেছি। যুবক-যুবতীদের ঝুঁকি নিতে হবে, তাদের অনুভব করতে হবে—আমি ব্যর্থ হলেও অভুক্ত মারা যাব না, কেউ আমার যত্ন নেবে।
প্রধানমন্ত্রী: আমি একবার তাইওয়ানে গিয়েছিলাম! আমার স্বভাব একজন ছাত্রের মতো, আমার মধ্যে একটি গুণ আছে, তাই আমি বলতে পারি যে একজন ছাত্র আমার মধ্যে এখনও বাঁচে। তাই সেখানে আমি সব নেতাদের সঙ্গে দেখা করেছি এবং এতটাই খুশি হয়েছিলাম জেনে যে তাদের মধ্যে যদি কেউ পরিবহনমন্ত্রী হয়, তবে তিনি বিশ্বের সেরা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পরিবহন বিষয়ে পিএইচডি করেছেন। অর্থাৎ তিনি যে বিষয়ে মন্ত্রী, সেই বিষয়ে পিএইচডি অধিকারী, সেরা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে। এই কথাটি আমার মনে গভীর প্রভাব ফেলেছিল। আমার দেশেও এমন যুবক প্রয়োজন যিনি দেশকে সেই স্তরে নিয়ে যেতে পারেন।
তাইওয়ান যাওয়ার সময় আমার একজন দোভাষী ছিল। তিনি একজন যোগ্য প্রকৌশলী এবং সু-শিক্ষিত যুবক। তাই সেখানে সরকার তাকে আমার দোভাষী হিসেবে নিযুক্ত করেছিল। আমার ১০ দিনের তাইওয়ান সফর ছিল এবং আমি সেই সরকারের অতিথি ছিলাম। এটি আমার মুখ্যমন্ত্রী হওয়ার আগে। তাই কয়েক দিন আগে তিনি আমাকে জিজ্ঞেস করেছিলেন—“স্যার, আমি একটি প্রশ্ন করতে চাই, যদি আপত্তি না থাকে।” আমি বললাম—“না না, ভাই, এতদিন একসাথে আছি, কি সমস্যা হবে? জিজ্ঞেস করো।” তিনি বললেন, “আপনার সমস্যা হবে কি?” আমি বললাম—“এটা করো ভাই, তোমার মনে কিছু আছে, তুমি জিজ্ঞেস করো।”
তারপর তিনি আমাকে জিজ্ঞেস করলেন—“স্যার, ভারতে কি এখনো কালো জাদু কাজ করে?” “ভারতে কি এখনো সাপের মোহিনী জাদু আছে?” ওই যুবকের মনে ভারতের এই ভাবমূর্তি ছিল। এতদিন তার সঙ্গে থাকলাম, প্রযুক্তি নিয়ে আলোচনা করলাম, তারপরও তার মনে এটিই ছিল। আমি তাকে হালকাভাবে বললাম—“দেখো ভাই, আমাদের পূর্বপুরুষরা আগে সাপের সঙ্গে খেলেছে, আমরা খেলতে পারিনি, এখন আমরা মাউস নিয়ে খেলি।” আমি বললাম—“আমার দেশের প্রতিটি শিশু মাউসের সঙ্গে খেলে। আমার দেশের শক্তি সেই মাউসে।” সাপের মন্ত্রের মতো, সেই ভারতে আলাদা পরিস্থিতি ছিল।
নিখিল কামাথ: এক কথায় সবাই একমত যে ভারতের ভাবমূর্তি, উদ্ভাবন ও উদ্যোগের ক্ষেত্রে অনেকটাই মার্কেটিং কোম্পানির মাধ্যমে তৈরি হয়। আপনি ভারতীয় ধারণাকে বিদেশে অনেক বদলে দিয়েছেন। এই বিষয়ে কি কিছু টিপস দিতে পারেন, যা একজন উদ্যোগী শিখতে পারে?
প্রধানমন্ত্রী: প্রথমত, আমার নিজেকে পরিবর্তিনের কাণ্ডারী দাবি করা সঠিক নয়। আমার দৃষ্টিভঙ্গি সবসময়ই ছিল—যে কেউ বিশ্বের যাত্রা করে, সরকার যে ব্যক্তিকে পাঠায়, তিনি একজন রাষ্ট্রদূত। যিনি যান, তিনি জাতীয় রাষ্ট্রদূত।
আপনি নিশ্চয় দেখেছেন যে আমরা নীতি কমিশন তৈরি করেছি। আমাদের প্রাথমিক উদ্দেশ্য হল সমগ্র বিশ্বে ছড়িয়ে থাকা ভারতীয় সম্প্রদায়ের শক্তিকে সংযুক্ত করা। তাই আমার সুচিন্তিত দৃষ্টিভঙ্গি হলো—বিশ্বের সমস্ত শক্তিকে সংযুক্ত করা উচিত।
দ্বিতীয়ত, আমি মুখ্যমন্ত্রী হওয়ার আগে অনেক রাজ্য সফর করেছি এবং সংগঠনের মানুষের সঙ্গে কাজ করেছি। আমি তাদের শক্তি এবং যোগাযোগের সঙ্গে পরিচিত ছিলাম। একবার অটলজি’র নির্দেশে একটি কাজ করতে গিয়েছিলাম এবং সাফল্যও পেয়েছিলাম। এই ক্ষমতা আগে ব্যবহার হয়নি। কিন্তু যখন আমি এটি চ্যানেল করতে শুরু করলাম, তখন বিশ্বরাজনীতিবিদরাও বুঝতে শুরু করলো—এটি একটি বিশাল শক্তি।
দ্বিতীয়ত, তারা দেখলো যে বিশ্বের যেকোনো স্থানে যদি ন্যূনতম অপরাধ ঘটে, তবে তা ভারত। ভাল শিক্ষিত হলে ভারতীয়। যারা আইন মানে, তারা ভারতীয়। তাই মালিকানার বোঝাপড়া বৃদ্ধি পেতে শুরু করলো। এই সমস্ত ক্রমবর্ধমান প্রভাবের কারণে আজ দেশের প্রোফাইল বৃদ্ধি পেয়েছে।
নিখিল কামাথঃ আরে স্যার, আমি এ কথা ঠিক তেমনভাবে বলিনি! ছোটবেলায়, ১৪, ১৫, ১৬, ২০, ২৫ বছর আগে বেঙ্গালুরুতে পড়াশোনা করার সময় মনে হতো—কলেজে ভর্তি হওয়া, আমেরিকায় গিয়ে পিএইচডি করা, মাইক্রোসফটের মতো কিছু কোম্পানিতে ঢোকা—এগুলোই ছিল জীবনের বড় সাফল্য। আমাদের কাছে এর বাইরে কিছু ছিল না। কিন্তু আজ আমি বলতে পারি, আজকের ১৮ বছরের ছেলেমেয়েরা তেমন নয়। তারা ভারতের উন্নয়নের কথা বলে। তারা বিদেশে গিয়ে কলেজ নিয়ে খুব কম কথা বলে, তখনকার তুলনায় অনেক কম। এটিই বড় পরিবর্তন, আর আমি নিজেও তা দেখেছি। আর স্যার, যদি আপনি আবারও শিল্পায়ন বনাম রাজনীতির প্রসঙ্গ নেন, তবে প্রতিযোগিতা আমার জগতে ভালো ব্যাপার, আপনার জগতেও প্রতিযোগিতা ভালো ব্যাপার কি না?
প্রধানমন্ত্রীঃ এই বিষয়ে দু’তিনটি আলাদা দিক থেকে কথা বলতে চাই। আমি প্রকাশ্যে বলেছি—আপনি যদি ভারতে ফিরে না আসেন তবে অনুশোচনা করবেন। অন্তত যত তাড়াতাড়ি পারেন, ফিরে আসুন। সময় বদলাতে চলেছে—এ কথা আমি বলেছিলাম। আমার মনে আছে, যখন আমি একটি গণতান্ত্রিকভাবে নির্বাচিত সরকারের মুখ্যমন্ত্রী ছিলাম, তখন আমেরিকা সরকার আমাকে ভিসা দিতে অস্বীকার করেছিল। ব্যক্তিগত জীবনে আমার জন্য আমেরিকায় যাওয়া বড় কিছু ছিল না। আমি এর আগে গিয়েছিলাম, কেউ কিছু বলেনি। কিন্তু তখন এটা একজন নির্বাচিত সরকার ও একটি রাজ্যের অপমান ছিল, আর সেটা মানে দেশের অপমান। আমি সেটিকে ব্যক্তিগতভাবে গ্রহণ করিনি, বরং দেশের অপমান হিসেবে অনুভব করেছিলাম। তখন আমার মনে গভীর যন্ত্রণা এসেছিল—শুধু মিথ্যা প্রচারের কারণে এমন সিদ্ধান্ত নেওয়া হলো, এটাই কি বিশ্বের নিয়ম? সেই দিন আমি সংবাদ সম্মেলন ডেকে বলেছিলাম—আজ আমেরিকা সরকার আমার ভিসা বাতিল করেছে। প্রয়োজনীয় কথাগুলো বলেছিলাম। কিন্তু একটি কথা আমি বলেছিলাম—আজ আমেরিকা সরকার আমার ভিসা বাতিল করেছে, কিন্তু সময় আসবে যখন সারা বিশ্বের মানুষ ভারতের ভিসার জন্য লাইনে দাঁড়াবে। এ ছিল আমার ২০০৫ সালের বক্তব্য। আর আজ ২০২৫ সালে দাঁড়িয়ে আমি তা বলছি। সুতরাং আমি এটাও দেখেছি—এখন ভারতের সময় এসেছে। আমার শক্তি আমার দেশের সাধারণ মানুষ।
সাম্প্রতিককালে আমি কুয়েতে গিয়েছিলাম, শ্রমিক কলোনি ঘুরেছিলাম। সেখানে সেই শ্রমিক পরিবারগুলোকে দেখেছি। তারা ১০-১৫ বছর আগে সেখানে গিয়েছিল কাজের জন্য। এখন বিয়ে বা অন্য কারণে দেশে আসে, তেমন যোগাযোগ নেই। একজন শ্রমিক আমাকে বললেন—তিনি একটি প্রত্যন্ত এলাকার মানুষ—তিনি বললেন, "স্যার, আমাদের জেলায় কবে আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর হবে?" ভাবুন তো, ১৫ বছর আগে ভারত ছেড়ে কুয়েতে শ্রমিক হিসেবে কাজ করতে যাওয়া একজন মানুষ নিজের জেলায় আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের স্বপ্ন দেখছেন। এই আকাঙ্ক্ষাই আমাদের দেশকে ২০৪৭ সালে উন্নত দেশে পরিণত করবে। আজ ভারতের প্রতিটি যুবকেরই এই আকাঙ্ক্ষা রয়েছে।
নিখিল কামাথঃ আজ তো মনে হচ্ছে গোটা বিশ্ব যুদ্ধের দিকে এগোচ্ছে। যেমন উদাহরণস্বরূপ ইউক্রেন ও রাশিয়ার যুদ্ধ। এমন দেশে যখন ভারতীয় নাগরিকরা বসবাস করে, তখন ভারতের প্রধানমন্ত্রী হিসেবে তাদের প্রতি তো একধরনের দায়িত্ব আপনার ওপর পড়ে। আপনি কি এ বিষয়ে কিছু বলতে পারেন—এই পরিস্থিতিতে কি হয়, কি ঘটছে, পৃথিবীতে যা ঘটছে তা নিয়ে আমাদের চিন্তিত হওয়া উচিত কি না?
প্রধানমন্ত্রীঃ আমাদের ওপর বিশ্বের বিশ্বাস রয়েছে। আমরা যা বলি তা স্পষ্টভাবে বলি। এই সংকটের সময়ও আমি বারবার বলেছি—আমরা নিরপেক্ষ নই। আমি শান্তির পক্ষে। আমার অবস্থান শান্তি, আর তার জন্য যে প্রচেষ্টা করা হবে আমি তাকে সমর্থন করব। আমি এই কথা রাশিয়াকেও বলি, ইউক্রেনকেও বলি, ইরানকেও বলি, প্যালেস্টাইনকেও বলি, ইসরায়েলকেও বলি। আর আমার কথায় তারা বিশ্বাস করে—আমি যাই বলি তা সত্য বলে মনে করে। আর তাই ভারতের বিশ্বাসযোগ্যতা বেড়েছে। যেমন দেশবাসী বিশ্বাস করে যে সংকটে পড়লে আমার দেশ নিশ্চয়ই আমার যত্ন নেবে, তেমনি আজ বিশ্বও বিশ্বাস করে যে ভারত যদি ভাই বলে, তবে সত্যিই বিশ্বাস করা যায়।
দেখুন, যখন করোনার পরিস্থিতি এল, তখন আমাদের ভারতীয় ছাত্রছাত্রীরা সেই জায়গাতেই ছিল যেখানে ঘটনাটি প্রথম ঘটেছিল। তখন তাদের ফিরিয়ে আনতে হয়েছিল। আমি বায়ুসেনাকে বলেছিলাম—এটা কঠিন কাজ। স্বেচ্ছাসেবীদের দাও এই কাজ। সেনারা এগিয়ে এসেছিল। এর মানে মৃত্যুর সঙ্গে লড়াই করা। কিন্তু তারা সবাইকে ফিরিয়ে এনেছিল। ভগবানের কৃপায় কোনো ক্ষতি হয়নি। এমনকি পাকিস্তান, নেপাল, বাংলাদেশ থেকেও মানুষকে ফিরিয়ে এনেছিলাম। তখন আমার মনে দৃঢ় হলো—যদি আমার দেশবাসী বিপদে পড়ে, তাহলে তাদের জন্য চিন্তা করবে কে, যদি ভারত না করে?
আরেকটি ঘটনা স্পষ্ট মনে আছে—নেপালে ভূমিকম্প হয়েছিল। আমরা ভারত থেকে সাহায্য পাঠিয়েছিলাম। কয়েক দিন পরে যখন বিমানে মানুষ ফিরিয়ে আনা হচ্ছিল, তখন এক ভদ্রলোক দাঁড়িয়ে বললেন—"আমি একজন ডাক্তার। আমি সারাজীবন সরকারকে গালি দিয়েছি—যে সরকারই হোক, আমি সমালোচনা করেছি। বলেছি সরকার শুধু কর নেয়—আয়কর নেয়, এটা নেয়, ওটা নেয়। আমি যেখানে সুযোগ পেয়েছি সমালোচনা করেছি। কিন্তু আজ বুঝলাম, এই কর কতটা কাজে লাগে। আজ আমি জীবিত অবস্থায় বাড়ি ফিরতে পারব।"
বিশ্বের যেকোনো স্থানে যখন আপনি নিজের দেশবাসীর সেবা করেন, তখন তাদের হৃদয়ে ভালোবাসা জাগ্রত হয়। তারাও ভালো কিছু করতে চান, আর আমি সেটিই অনুভব করি। একবার আপনি আমাকে আবুধাবিতে নিয়ে গিয়েছিলেন, সেখানে আমি ক্রাউন প্রিন্সকে বলেছিলাম, আপনি যদি আমাকে একটি মন্দিরের জন্য জায়গা দেন, ভালো হবে। এক মুহূর্ত দেরি না করে তিনি আমাকে একটি ইসলামিক দেশে মন্দির নির্মাণের অনুমতি দেন। আজ কোটি কোটি হিন্দু এতটাই আনন্দ অনুভব করছেন যে আমরা আমাদের দেশবাসীর সেবা করতে পারছি।
নিখিল কামাথ: যেমন আমরা অন্য দেশের কথা বলছি… যদি আমি একটু প্রসঙ্গ বদলাই এবং আপনার প্রিয় খাবার সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করি। মানুষ বলে আপনি ইন্টারনেটে ইতালি সম্পর্কে অনেক কিছু জেনেছেন। এ বিষয়ে কিছু বলতে চান? আপনি কি এই মিমগুলো দেখেছেন?
প্রধানমন্ত্রী: না, ওগুলো স্বাভাবিক কথা। আমি আমার সময় এসব নষ্ট করি না। মানুষ যে আমাকে খাদ্যপ্রেমী বলে, তা সত্য নয়।
নিখিল কামাথ: একেবারেই নন?
প্রধানমন্ত্রী: একেবারেই নই! সেই কারণেই যেখানে যাই, যা পরিবেশন করা হয়, আমি আনন্দের সঙ্গেই খাই। কিন্তু আমার এতটাই দুর্ভাগ্য যে আজ যদি আপনি আমাকে একটি রেস্তোরাঁয় নিয়ে গিয়ে মেনু থেকে বেছে নিতে বলেন, আমি পারব না।
নিখিল কামাথ: স্যার, আপনি কি রেস্তোরাঁয় যেতে পারেন?
প্রধানমন্ত্রী: এখনও যেতে পারিনি। এখনো যাইনি।
নিখিল কামাথ: কত বছর হয়ে গেল?
প্রধানমন্ত্রী: অনেক বছর!
নিখিল কামাথ: যখন আপনি বাইরে থাকতেন…
প্রধানমন্ত্রী: আগে যখন আমি সংগঠনের জন্য কাজ করতাম, তখন আমাদের অরুণ জেটলি জি ছিলেন একজন বড় খাদ্যপ্রেমী। ভারতের কোন শহরের কোন রেস্তোরাঁয় কোন খাবার সর্বোত্তম, তিনি ছিলেন তার জীবন্ত বিশ্বকোষ। তাই আমরা যখনই বাইরে যেতাম, তাঁর সঙ্গে কোনো একটি রেস্তোরাঁয় সন্ধ্যা কাটাতাম। কিন্তু আজ যদি কেউ আমাকে একটি মেনু দেয় এবং বেছে নিতে বলে, আমি পারব না। কারণ কখনো আমি যে নাম পড়ি, আর সেই খাবার একেবারেই আলাদা হয়। আমার সে জ্ঞান নেই। কারণ আমার সেই অভ্যাস গড়ে ওঠেনি। তাই আমি খুব বেশি বুঝি না। তাই আমি সবসময় অরুণ জিকে বলতাম— “ভাই অরুণ জি, আপনি অর্ডার করুন।” আমি শুধু নিরামিষ চাইতাম।
নিখিল কামাথ: আমি আপনার কয়েকজন বন্ধুর সঙ্গে কথা বলেছি… বন্ধু বা যাঁরা আপনাকে ১০–২০ বছরেরও বেশি সময় ধরে চেনেন। আমি তাঁদের বলেছিলাম এমন কিছু বলতে যা জনসমক্ষে জানা নেই। আমি তাঁদের নাম বলব না। তাঁরা আমাকে একটি ছবি পাঠিয়েছিলেন—মুখ্যমন্ত্রীর শপথগ্রহণের ছবি। কিছু প্রবীণ রাজনীতিবিদ চেয়ারে বসে আছেন, আর আপনি মাটিতে বসে আছেন। আমি যখন সেই ছবি ৩৮ বছর বয়সে দেখেছিলাম, তখনই মনে পড়ে যে সময়ে আপনি প্রধানমন্ত্রী বা গুজরাটের মুখ্যমন্ত্রী ছিলেন। তার আগের সময়ের কোনো চিত্র আমার মনে আসে না। তাই ছবিটা বারবার দেখছিলাম। যদি আপনি বলেন, সেখান থেকে এখন পর্যন্ত পরিবর্তনের মানে হলো কেউ আপনাকে আর ‘তুমি’ বলে সম্বোধন করতে পারে না, হয়তো শুধু আপনার কোনো শিক্ষক, যাঁর কথা আপনি বলেছেন। এটা কীভাবে হয়? আমার মতো কারও জন্য?
প্রধানমন্ত্রী: আমি এটা বলিনি যে আমাকে কেউ ‘তুমি’ বলে সম্বোধন করতে পারে না।
নিখিল কামাথ: কিন্তু কেউ বলেন না!
প্রধানমন্ত্রী: হ্যাঁ, হয়তো কেউ বলে না, কিন্তু অনুমান করা যে আমাকে কেউ ‘তুমি’ বলে সম্বোধন করতে পারে না—এটা সঠিক নয়।
নিখিল কামাথ: সঠিক!
প্রধানমন্ত্রী: কিন্তু আমি কোনোদিনও সেই কথা শুনতে পাই না, কারণ জীবনটা এমন হয়ে গেছে। দ্বিতীয়ত, পরিস্থিতি বদলাতে পারে, অবস্থা বদলাতে পারে, ব্যবস্থাও বদলাতে পারে, কিন্তু মোদী সেই মানুষই রয়ে গেছে, যে আগে ছিল। তাই আমার কাছে এর কোনো বিশেষ পার্থক্য নেই। আর আমি শুধু বলছি না, এটাই বাস্তব—আমার কাছে এর কোনো পার্থক্য নেই।
নিখিল কামাথ: আর স্যার, যদি মনে থাকে, গত বছর আমি আপনার সামনে ভাইব্র্যান্ট গুজরাটে বক্তৃতা দিয়েছিলাম, যখন আপনিও সেখানে ছিলেন। আমি এতটাই খারাপ করেছিলাম যে পরে একজন স্পিচ কোচ নিয়োগ করি এবং এক বছর ধরে শিখছি, ক্লাসে যাচ্ছি, আমার একজন শিক্ষক আছেন। আপনি এত ভালোভাবে কীভাবে করেন? কিছু টিপস দিতে পারবেন? এটা তো সবাই জানতে চায়।
প্রধানমন্ত্রী: কয়েকটা আলাদা আলাদা কথা বলব। একটা হলো—আমাকে প্রায়ই জিজ্ঞাসা করা হয়, আপনি গুজরাটি? আপনি হিন্দি এত ভালো বলেন কীভাবে? আগে যখন সংঘে কাজ করতাম, অনেকে আমাকে উত্তর ভারতের ভেবেছিল, কিন্তু আমি গুজরাটে থাকি। এর কারণ হলো—আমরা আগে রেলওয়ে স্টেশনে চা বিক্রি করতাম। আমার গ্রাম মেহসানা, ‘মেহ’ মানে মোষ! মেহসানা মানে মোষের দেশ। আমাদের গ্রামের মোষেরা যখন দুুধ দিতে শুরু করল, তখন সেই দুধ মুম্বাইয়ে নিয়ে যাওয়া হতো এবং সেখানে ব্যবসা শুরু হলো। এই ব্যবসা করার লোকেরা মূলত উত্তরপ্রদেশ থেকে আসত। তাই মালগাড়ি ধরতে এসে তারা প্ল্যাটফর্মে অপেক্ষা করত। মালগাড়ি পাওয়ার পর তারা ভেতরে খড় বিছিয়ে চারটে মোষ দাঁড় করানোর ব্যবস্থা করত। এভাবে প্রায় ৩০–৪০ জন মানুষ সবসময় রেলওয়ে প্ল্যাটফর্মে থাকত। তখন আমি চা বিক্রি করতাম, চা পরিবেশন করতে গিয়ে তাঁদের সঙ্গে কথা বলতে হতো, সেখান থেকেই হিন্দি শিখেছিলাম। দুধের ব্যবসায় আসা এই লোকগুলো শ্রমিক ছিল, কিন্তু সন্ধ্যায় ভজন-সংকীর্তন গাইত। তারা চা অর্ডার দিত, আমরা চা খেতাম, আমি-ও হিন্দি শিখতাম।
নিখিল কামাথ: আপনি গুজরাটে বড় হয়েছেন, আজ আপনি দিল্লিতে থাকেন। এই দুই শহরে বসবাস করা আপনার কাছে ব্যক্তিগতভাবে কি খুব আলাদা কিছু?
প্রধানমন্ত্রী: আমরা কি শহরে থাকি ভাই? আমরা তো ঘরের একটি কোণে থাকি। শুধু বাড়ি থেকে অফিস আর অফিস থেকে বাড়ি—এই পর্যন্ত। বাইরের জগত থেকে আমরা বিচ্ছিন্ন। যখন সরকারি জীবন এমন হয়, তখন এক শহর আর অন্য শহরের মধ্যে পার্থক্য করা খুবই কঠিন হয়ে যায়।
নিখিল কামাথ: আর এটাই আমার শেষ প্রশ্ন স্যার। আমি আপনাকে অনেকগুলো প্রশ্ন করেছি…
প্রধানমন্ত্রী: কিন্তু আপনার দ্বিতীয় প্রশ্ন ছিল বক্তৃতা সম্পর্কিত…
নিখিল কামাথ: হ্যাঁ, আমি শিখতে চাই, দয়া করে সংশোধন করে দিন।
প্রধানমন্ত্রী: আমি মনে করি আপনাকে দেখতে হবে—ধরুন কোথাও কোনো ঝগড়া হচ্ছে বা কোনো ঘটনা ঘটছে। সেখানে চারজন সম্পূর্ণ নিরক্ষর মানুষ আছেন। হয়তো একজন মহিলা, একজন বৃদ্ধ মানুষ, আর আপনি মাইক হাতে দাঁড়িয়ে আছেন। তাঁরা জোরে জোরে বলতে শুরু করলেন—“এটা হলো, ওটা হলো, এইভাবে আগুন জ্বলে উঠল, এটা হলো…”। নিশ্চয়ই আপনি দেখেছেন কত সুন্দর শব্দ, কত সুন্দর অভিব্যক্তি, মনের মতো বলার ধরণ আছে। কেন জানেন? কারণ সেটা তাঁদের আত্ম-অভিজ্ঞতা। যখন আপনার ভেতর থেকে কথা বেরিয়ে আসে, তখনই তা প্রাণ পায়। কিভাবে বললেন, কণ্ঠস্বরের ভঙ্গি কেমন হলো—এগুলো খুব গুরুত্বপূর্ণ নয়। আসল বিষয় হলো, আপনি যা বলছেন তাতে কি অভিজ্ঞতার শক্তি আছে? নিজের ভেতরের অভিজ্ঞতাকে বলায় কি কোনো প্রভাব আছে?
নিখিল কামাথ: মানে, কোনো দুঃখের কথা বলতে গেলে ভেতর থেকে সেই অনুভূতি জাগে কি? কথায় কি তখন সত্যিই দুঃখ ফুটে ওঠে?
প্রধানমন্ত্রী: হ্যাঁ! নিশ্চয়ই। আপনি নিশ্চয় লক্ষ্য করেছেন, অনেক মানুষ আমার প্রতি বিরূপ মনোভাব পোষণ করেন। কিন্তু বেশিরভাগ সময় যখন আমি দুঃখী মানুষের কথা বলি, তখন নিজেকে সংযত করতে হয়, আমি আবেগপ্রবণ হয়ে পড়ি। সংবাদপত্রে অনেক সমালোচনা পাই, তবুও নিজেকে আটকাতে পারি না। সামাজিক জীবনে এমন পরিস্থিতি দেখলে বা মনে পড়লে, সেই অনুভূতি স্বাভাবিকভাবেই আমার ভেতরে জন্ম নেয়।
নিখিল কামাথ: আর স্যার, যদি আপনি আপনার জীবনে যা শিখেছেন, আপনার এত অভিজ্ঞতা আছে—যদি এই জ্ঞান দিয়ে আপনি আপনার ২০ বছরের সংস্করণকে একটি কথা বলতে পারেন, তাহলে কী বলবেন?
প্রধানমন্ত্রী: আমি কখনও মনে করি না যে যুবসমাজকে আমি উপদেশ দেওয়ার যোগ্য, কিংবা প্রচার করার কোনো অধিকার আমার আছে। কিন্তু আমি বলব, আমার দেশের যুবসমাজের প্রতি আমার অপরিসীম বিশ্বাস আছে। একটি গ্রামের ছেলে—সে হয়তো কোনো কাজ করছে না, সে বলে “আমি একটি স্টার্টআপ করব।” হয়তো তিনটি স্টার্টআপ ব্যর্থ হবে। আম যখন প্রথম স্টার্টআপ কনফারেন্সের আয়োজন করেছিলাম, তখন ‘স্টার্টআপ’ শব্দটাই আমাদের দেশে নতুন ছিল। কিন্তু আমি জানতাম এর ভেতরে কী শক্তি আছে। তাই আমি কয়েকজন স্টার্টআপ শুরু করা তরুণ-তরুণীকে তাদের অভিজ্ঞতা শেয়ার করতে বলেছিলাম। তখন এক মেয়ে দাঁড়িয়ে বলল, “আমি আমার অভিজ্ঞতা বলব।” সে কলকাতার, বাঙালি। সে একটি স্টার্টআপ শুরু করেছিল। তারপর সে বাড়িতে মাকে জানাতে গেল যে সে চাকরি ছেড়ে দিয়েছে। তখন মা অবাক হয়ে বললেন, “তুই কী করবি?” সে বলল, “আমি একটি স্টার্টআপ শুরু করেছি।” মা বললেন, “সর্বনাশ!” কত নাটকীয়ভাবে সে উপস্থাপন করেছিল ব্যাপারটা। তখনকার দিনে ‘স্টার্টআপ’ মানেই সর্বনাশ! আজ স্টার্টআপ সম্মান, বিশ্বাসযোগ্যতা অর্জন করেছে। আর এই কারণেই আমি বিশ্বাস করি, ছোট গ্রামে থেকেও যদি কেউ ব্যর্থ হয়, মানুষ তাকে রোল মডেল হিসেবে দেখবে—সে একজন প্রতিভাবান যুবক, কিছু করার চেষ্টা করছে।
নিখিল কামাথ: আর স্যার, যদি আমি আপনাকে জিজ্ঞেস করি—প্রধানমন্ত্রী হিসেবে আপনার দ্বিতীয় মেয়াদ প্রথম মেয়াদের থেকে কীভাবে আলাদা ছিল? আর আপনার তৃতীয় মেয়াদ দ্বিতীয় মেয়াদের থেকে কীভাবে আলাদা?
প্রধানমন্ত্রী: প্রথম মেয়াদে মানুষ আমাকে বোঝার চেষ্টা করছিল, আমিও দিল্লিকে বোঝার চেষ্টা করছিলাম। প্রথম ও দ্বিতীয় মেয়াদে আমি অতীতের প্রেক্ষাপট থেকে ভাবতাম—“আগে আমরা এখানে ছিলাম, এখন ওখানে যাবো। আগে এতগুলো করেছি, এখন আরও এতটা করব।” কিন্তু তৃতীয় মেয়াদে আমার চিন্তার দিগন্ত বদলে গেছে। আমার সাহস আরও দৃঢ় হয়েছে। আমার স্বপ্ন বড় হয়েছে। আমার আকাঙ্ক্ষা বেড়েছে। আমি বলতে চাই, ২০৪৭ সালের মধ্যে আমি একটি উন্নত ভারত চাই। এর মানে কোনো বক্তৃতা নয়, বরং প্রতিটি ক্ষেত্রে সমস্যামুক্ত এক দেশ। শৌচাগার ১০০ শতাংশ, বিদ্যুৎ ১০০ শতাংশ, ট্যাপের জল ১০০ শতাংশ—এসব হওয়া উচিত। সাধারণ মানুষকে কি সরকারের কাছে কিছু চেয়ে ভিক্ষা করতে হবে? এটা কি ব্রিটিশ শাসন? না—এটা তাদের অধিকার! ১০০ শতাংশ ডেলিভারি হওয়া উচিত, ১০০ শতাংশ সুবিধাভোগী হওয়া উচিত, ১০০ শতাংশ সুবিধা তাদের ঘরে পৌঁছানো উচিত। কোনো বৈষম্য থাকবে না—এটাই প্রকৃত সামাজিক ন্যায়, এটাই প্রকৃত সমাজতন্ত্র। তাই আমি এসব বিষয়েই জোর দিচ্ছি। আর এর চালিকাশক্তি হলো “আকাঙ্ক্ষিত ভারত।” আমার কাছে ‘এআই’ মানে হলো আকাঙ্ক্ষিত ভারত। তাই এখন আমি যদি ভাবি ২০৪৭-এ আছি, তাহলে ২০২৫ থেকে আর কত বাকি? আগে ভাবতাম—আমরা কতটা এগিয়েছি। এখন ভাবি—আমরা আজ যেখানে আছি, কালকে কোথায় পৌঁছাব? তাই এখন আমার সমস্ত চিন্তাভাবনা ২০৪৭ সালের প্রেক্ষাপটে আবর্তিত হচ্ছে। এ কারণে আমার তৃতীয় মেয়াদ প্রথম দুটি মেয়াদ থেকে সম্পূর্ণ আলাদা। এটা একেবারে ভিন্ন, আর এর পেছনে রয়েছে এক বিশাল স্বপ্ন।
নিখিল কামাথ: আর স্যার, এর ঊর্ধ্বে আপনার কি কোনো পরিকল্পনা আছে? মানে, আজকের জন্য নয়, এমন যুবক-যুবতী আছেন যারা বিশ্বাস করে যে তারা ২০ বছর পর, ৩০ বছর পরের জন্য নিজেকে প্রস্তুত করছে…
প্রধানমন্ত্রী: আমি দেখেছি যে বহু সম্ভাবনাময় মানুষ রয়েছে। গুজরাটে থাকার সময় আমি বলেছিলাম যে আগামী ২০ বছরের জন্য মানুষকে প্রস্তুত করতে চাই এবং আমি সেটাই করে যাচ্ছি। আমার সাফল্য নির্ভর করছে কীভাবে আমি আমার দলকে প্রস্তুত করি, যাতে তারা কাজগুলো সামলাতে পারে। এটাই আমার নিজের কাছে আমার মানদণ্ড।
নিখিল কামাথ: আর স্যার, আমার শেষ প্রশ্ন হলো—রাজনীতিবিদ হতে ন্যূনতম প্রয়োজনীয়তা খুব বেশি নয়। বয়স ২৫ বছরের ঊর্ধ্বে হতে হবে, দুই বছরের বেশি কারাদণ্ডপ্রাপ্ত হওয়া যাবে না, ভোটার আইডি থাকতে হবে—এইগুলো খুব সাধারণ শর্ত। তাই, আমার ইচ্ছে স্যার এই দীর্ঘ আলাপচারিতার পর হলো, যেকোনো জায়গা থেকে প্রায় ১০,০০০ তরুণ-তরুণী আসা উচিত, যারা রাজনীতিতে যোগ দেবে। আমি জানি আপনি তাদের সহায়তা করবেন। এই বিষয়ে আপনার শেষ মন্তব্য কী হবে?
প্রধানমন্ত্রী: দেখুন, আপনি যা বলেছেন সেটা প্রার্থী হওয়ার যোগ্যতার কথা।
নিখিল কামাথ: হ্যাঁ, ঠিক!
প্রধানমন্ত্রী: আপনি কিন্তু রাজনীতিবিদ হওয়ার কথা বলেননি।
নিখিল কামাথ: ঠিকই স্যার!
প্রধানমন্ত্রী: রাজনীতিবিদ হতে হলে বহু যোগ্যতার প্রয়োজন। হাজার হাজার চোখ প্রতি মুহূর্তে আপনাকে পর্যবেক্ষণ করে। আপনি যদি একটি ভুল শব্দও ব্যবহার করেন, তবে আপনার ১০ বছরের সাধনা বৃথা যেতে পারে। ২৪ ঘণ্টা, সপ্তাহে ৭ দিন আপনাকে সজাগ থাকতে হবে। এর সঙ্গে বেঁচে থাকতে হবে। অসাধারণ গুণের প্রয়োজন, এবং সেটাই আসল যোগ্যতা—যা বিশ্ববিদ্যালয়ের সার্টিফিকেট থেকে আসে না।
নিখিল কামাথ: এই অনুষ্ঠানটি যারা দেখছে, সেই সব তরুণ-তরুণীর উদ্দেশ্যে, আপনি তাদের জন্য কী বার্তা দিতে চান?
প্রধানমন্ত্রী: প্রথমেই আমি মায়েদের, বোনদের এবং কন্যাদের উদ্দেশ্যে বলতে চাই, আজ আমাদের দেশে প্রায় প্রতিটি রাজ্যে মহিলাদের জন্য প্রায় ৫০% সংরক্ষণ রয়েছে—পঞ্চায়েত, গ্রাম প্রধান, নগরপালিকা, মহানগরপালিকায়। তাদের প্রকৃত নেতা হওয়ার চেষ্টা করা উচিত। তাদের ভাবা উচিত নয় যে, নারী হওয়ার কারণে আমাকে নেতা বানানো হয়েছে। আমাদের সমাজকে নেতৃত্ব দিতে হবে। পুরুষও নেতৃত্ব দেবে, নারীরাও নেতৃত্ব দেবে। আমার মা-বোন-কন্যারা নেতৃত্বের মানদণ্ডে দাঁড়াক, আমি সেটাই চাই। আমি এ কথা বলছি কারণ খুব শিগগিরই বিধায়ক ও সাংসদ স্তরেও ৩০% সংরক্ষণ আসছে। তখন আমাদের এ ধরনের অনেক গোষ্ঠীর প্রয়োজন হবে। তাই এখনো দুই থেকে চার বছরের সময় আছে। আমি তাদের অনুরোধ করবো তারা যেন রাজনীতির ক্ষেত্রটিতে এসে নিজেদের সক্ষম করে তোলে। এটাই সময়, এটা তাদের সময়, সেটা বুঝতে হবে।
দ্বিতীয়ত, আমি দেশের তরুণ-তরুণীদের বলতে চাই, রাজনীতিকে খারাপ বলে ভাববেন না। নির্বাচন রাজনীতি মানে মর্যাদার সঙ্গে ভোট দেওয়া। জনজীবনে, রাজনীতিতে একবার প্রবেশ করুন, যেকোনো রূপে। আজ দেশের প্রয়োজন এমন নেতৃত্ব, যা সৃজনশীলতার গর্ভ থেকে জন্ম নেয়। আন্দোলনের গর্ভ থেকে জন্ম নেওয়া রাজনীতিবিদরা ভিন্ন ধরণের মান তৈরি করেন। স্বাধীনতা আন্দোলনেও সৃজনশীলতা ছিল, তাই ভিন্ন প্রজন্ম তৈরি হয়েছিল। আজ দেশের প্রয়োজন সৃজনশীল চিন্তা, নতুন কিছু করার ইচ্ছা, নিজেকে প্রস্তুত করা, সুখ-দুঃখ বোঝা, পথ খুঁজে নেওয়া, কাউকে হেয় না করা—কিন্তু দেশের জন্য নতুন দিশা বের করা। আমি বলছি না যে আজ কেউ নেই, তবে নতুন মানুষের প্রয়োজন। আজ যদি ২০-২৫ বছর বয়সী তরুণ-তরুণীরা এগিয়ে আসে, তাহলে ২০৪৭ সালে তাদের বয়স হবে ৪০-৫০ বছর—মানে দেশ চালানোর উপযুক্ত জায়গায় থাকবে। দ্বিতীয়ত, যখন আমি তরুণদের এগিয়ে আসতে বলছি, তখন অনেকে ভাববে আমি বিজেপির পতাকা তুলতে বলছি। আমি দেশের রাজনীতির কথা বলছি। আমি কাউকে বলছি না বিজেপিতে যোগ দাও বা কোনো নির্দিষ্ট দলে যোগ দাও বা যেও না। আমি শুধু চাই সব দলে নতুন স্রোত আসুক। সব দলে তরুণরা এগিয়ে আসুক। অবশ্যই বিজেপিতে আসুক, তবে শুধু বিজেপি নয়, সব দলে আসুক। যাতে দেশের তরুণ-তরুণীরা এগিয়ে আসে, নতুন কিছু শুরু হয়।
নিখিল কামাথ: ধন্যবাদ মোদীজী, এখানে আসার জন্য।
প্রধানমন্ত্রী: হ্যাঁ, আমার প্রথম পডকাস্ট হওয়ায় খুব ভালো লাগলো।
নিখিল কামাথ: আপনি আমাদের এত সময় দিলেন, অনেক অনেক ধন্যবাদ!
প্রধানমন্ত্রী: আমি জানি না, আপনাদের এবং দর্শকদের জন্য এটা কেমন হলো!
নিখিল কামাথ: আপনি অসাধারণ কথা বলেছেন, আর সবচেয়ে সৌজন্যের ব্যাপার হলো, আপনি আমাদের এতটা সময় দিলেন।
প্রধানমন্ত্রী: চলি তবে! আপনার দলও নিশ্চয় ক্লান্ত হয়ে পড়েছে। এই সময়ে একটা কথা মনে রাখবেন ভাই, এখানে কিন্তু যথেষ্ট ঠাণ্ডা পড়ছে।
নিখিল কামাথ: হ্যাঁ!
SC/PK
(Release ID: 2162135)
Visitor Counter : 40
Read this release in:
Odia
,
English
,
Urdu
,
Hindi
,
Marathi
,
Assamese
,
Manipuri
,
Punjabi
,
Gujarati
,
Tamil
,
Telugu
,
Kannada
,
Malayalam