প্রধানমন্ত্রীরদপ্তর
azadi ka amrit mahotsav

জাতির উদ্দেশে প্রধানমন্ত্রীর ভাষণ

Posted On: 12 MAY 2025 8:36PM by PIB Kolkata

নয়াদিল্লি, ১২ মে, ২০২৫

 

প্রধানমন্ত্রী শ্রী নরেন্দ্র মোদী ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে আজ জাতির উদ্দেশে ভাষণ দেন। প্রধানমন্ত্রী তাঁর ভাষণে বলেন, সাম্প্রতিক দিনগুলিতে দেশ ভারতের শক্তি ও সহনশীলতাকে প্রত্যক্ষ করেছে। দুর্ভেদ্য সেনা শক্তি, তদন্ত সংস্থা এবং বিজ্ঞানীদের তিনি প্রত্যেক ভারতবাসীর পক্ষ থেকে অভিনন্দন জানিয়েছেন। প্রধানমন্ত্রী বলেন, অপারেশন সিঁদুর – এ লক্ষ্য অর্জনে ভারতীয় সেনাবাহিনী  অবিচল সাহস দেখিয়েছে এবং তাঁদের বীরত্ব, সহনশীলতা এবং অদম্য মানসিকতাকে তুলে ধরেছে। দেশের সকল মা-বোন এবং কন্যা সন্তানের প্রতি এই অনন্য সাধারণ সাহসিকতাকে উৎসর্গ করেন তিনি।

পহলগাঁও – এ ২২ এপ্রিল বর্বরোচিত সন্ত্রাসী হামলাকে কঠোর ভাষায় নিন্দা করে তিনি বলেন, দেশ ও বিশ্বকে এই ঘটনা হতবাক করেছে। একে সন্ত্রাসের এক ভয়ঙ্কর নমুনা বলে বর্ণনা করে শ্রী মোদী বলেন, নির্দোষ মানুষেরা যখন ছুটি উপভোগ করছিলেন, সেই সময় তাঁদের পরিবার ও সন্তানদের সামনে তাঁদের ধর্মীয় পরিচয় জানতে চেয়ে নৃশংসভাবে তাঁদের হত্যা করা হয়। তিনি জোরের সঙ্গে বলেন, এটা কেবল নিষ্ঠুরতাই নয়, দেশের ঐক্যকে ভেঙে দেওয়ার এক জঘন্য প্রয়াস। এই হামলায় তিনি তাঁর ব্যক্তিগত যন্ত্রণার কথা প্রকাশ করে বলেন, সকল নাগরিক, সকল সম্প্রদায়, সমাজের প্রতিটি শ্রেণী এবং সকল রাজনৈতিক দল সহ সমগ্র দেশ সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে শক্তিশালী পদক্ষেপ নেওয়ার দাবিতে ঐক্যবদ্ধ হয়। তিনি জোর দিয়ে বলেন, সরকার সন্ত্রাসবাদীদের বিলুপ্ত করতে সেনাবাহিনীকে পূর্ণ অধিকার দিয়েছে। তিনি সমস্ত সন্ত্রাসবাদী সংঠনকে সতর্ক করে বলেন, দেশের নারীদের মর্যাদাকে ক্ষুণ্ন করলে কী পরিণতির মুখোমুখি হতে হয়, তা তারা সম্যক বুঝতে পেরেছে।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, অপারেশন সিঁদুর কেবল একটি নাম নয়, সহস্র ভারতবাসীর আবেগের এক প্রতিফলন। ন্যায়বিচারের প্রতি অদম্য সংকল্প বলতে কি বোঝায়, সারা বিশ্ব তার পূর্ণতাকে প্রত্যক্ষ করেছে ৬-৭ মে। প্রধানমন্ত্রী বলেন, ভারতীয় সেনাবাহিনী পাকিস্তানে জঙ্গি ঘাঁটি এবং তাদের প্রশিক্ষণ শিবিরগুলির উপর নির্ভুল আঘাত হেনে তার যোগ্য জবাব দিয়েছে। তিনি বলেন, সন্ত্রাসবাদীরা কল্পনা করতে পারেনি যে, ভারত এরকম বলিষ্ঠ পদক্ষেপ নিতে পারে। ‘দেশ সর্বাগ্রে’ – এই ভাবধারায় সমগ্র দেশ ঐক্যবদ্ধ হলে কঠোর সিদ্ধান্তের প্রয়োজন হয় এবং তার প্রভাব হয় ফলদায়ী। তিনি বলেন, পাকিস্তানের জঙ্গি ঘাঁটিগুলির উপরে ভারতীয় মিসাইল ও ড্রোনের হানা কেবল তাদের পরিকাঠামোকেও ধসিয়ে দিয়েছে তা নয়, তাদের মনোবলকেও চূর্ণ করে দিয়েছে। প্রধানমন্ত্রী বলেন, ভাওয়ালপুর এবং মুরিদকের মতো এলাকা আন্তর্জাতিক সন্ত্রাসবাদের কেন্দ্র স্থল হিসেবে দীর্ঘদিন ধরে পরিচালিত হয়েছে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে ৯/১১ হামলা, লন্ডন টিউব – এ বোমা বিস্ফোরণ এবং ভারতে দশকের পর দশক ধরে সন্ত্রাসবাদী ঘটনার মূল কেন্দ্র স্থল হিসেবে তারা জড়িত। প্রধানমন্ত্রী বলেন, সন্ত্রাসীরা ভারতীয় নারীর মর্যাদাহানির দুঃসাহস দেখানোয় ভারত সন্ত্রাসের সদর কার্যালয়গুলিকে চূর্ণ করে দিয়েছে। অপারেশন সিঁদুর ১০০-রও বেশিও কুখ্যাত সন্ত্রাসবাদীকে খতম করেছে। ভারতের বিরুদ্ধে কয়েক দশক ধরে ষড়যন্ত্র রচনার মূল চক্রীরাও এর মধ্যে রয়েছে। তিনি আরও বলেন, ভারতের বিরুদ্ধে হুমকির ষড়যন্ত্রকারীদের সম্পূর্ণভাবে নিষ্ক্রিয় করে দেওয়া হয়েছে।

শ্রী মোদী বলেন, ভারতের নির্ভুল ও কঠোর হামলা পাকিস্তানকে গভীর হাতাশায় নিমজ্জিত করেছে। উৎকন্ঠার বশে পাকিস্তান সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে বিশ্বের সম্মিলিত লড়াইয়ে যোগ না দিয়ে বরং বেপরোয়া কাজে লিপ্ত হয়েছে। তারা ভারতের বিদ্যালয়, কলেজ, গুরুদ্বার, মন্দির, সাধারণ নাগরিকদের বাড়ি-ঘর এমনকি সেনা ঘাঁটিকে আক্রমণের লক্ষ্য করেছে। প্রধানমন্ত্রী বলেন, এই আগ্রাসন পাকিস্তানের দুর্বলতাকেই তুলে ধরেছে। ভারতের আকাশ প্রতিরক্ষা ব্যবস্থার সামনে পাকিস্তানের ড্রোন ও মিসাইলগুলি ভেঙে পড়েছে। তিনি বলেন, পাকিস্তান ভারতের সীমান্তে হামলার প্রস্তুতি নিলে ভারত পাকিস্তানের কেন্দ্রস্থলে সুযোগ্য আঘাত হেনেছে। ভারতীয় ড্রোন ও মিসাইলগুলি লক্ষ্য বস্তুগুলিকে সঠিকভাবে আঘাত করেছে, যাতে পাকিস্তানের বিমান ঘাঁটিগুলি, যা নিয়ে তাদের দীর্ঘদিনের গর্ব ছিল, তা ব্যাপকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। ভারতের প্রত্যাঘাতের প্রথম তিন দিনে পাকিস্তানের কল্পনাতীত ক্ষতি হয়েছে। পরবর্তীকালে, ভারতের পাল্টা আক্রমণাত্মক পদক্ষেপে দিশেহারা হয়ে পাকিস্তান বিশ্ব সম্প্রদায়ের সাহায্যের মুখাপেক্ষী হয়ে পড়ে। শ্রী মোদী বলেন, ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতির পর পাকিস্তানের সামরিক শাখা ১০ মে বিকেলে ভারতের ডিজিএমও-র সঙ্গে যোগাযোগ করে। এই সময়কালের মধ্যে ভারত বিস্তীর্ণ সন্ত্রাসবাদী পরিকাঠামোকে ধ্বংস করে দিয়েছে। মূল সন্ত্রাসবাদীদের নিঃশেষ করেছে এবং পাকিস্তানের সন্ত্রাসের ঘাঁটিগুলিকে ধ্বংস স্তুপে পরিণত করেছে। শ্রী মোদী বলেন, পাকিস্তানের তার কাতর আবেদন ভারতের বিরুদ্ধে সমস্ত রকম সামরিক আগ্রাসন ও জঙ্গি কার্যকলাপ বন্ধের আশ্বাস দেয়। এরপর, ভারত পরিস্থিতির পর্যালোচনা করে পাকিস্তানের জঙ্গি ও সামরিক ঘাঁটিগুলির উপরে পাল্টা প্রত্যাঘাত সাময়িক বিরত রাখার সিদ্ধান্ত নেয়। তিনি পুনরায় জোর দিয়ে বলেন, এটা বিরতি মাত্র, পরিসমাপ্তি নয়। ভারত আগামী দিন পাকিস্তানের প্রতিটি পদক্ষেপের মূল্যায়ন করবে। প্রধানমন্ত্রী দৃঢ়তার সঙ্গে বলেন, ভারতের ভবিষ্যৎ অবস্থান তার অঙ্গীকারের সঙ্গে সঙ্গতিপূর্ণ হবে।

প্রধানমন্ত্রী পুনরায় জোর দিয়ে বলেন, ভারতের সশস্ত্র বাহিনী – স্থলসেনা, বিমান বাহিনী, নৌ-বাহিনী, সীমান্ত রক্ষী বাহিনী এবং আধা-সামরিক বাহিনী সতর্ক রয়েছে। দেশের সুরক্ষা সুনিশ্চিত করা সর্বদাই তাদের প্রাথমিক কর্তব্য। প্রধানমন্ত্রী ঘোষণা করেন, সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে অপারেশন সিঁদুর এখন ভারতের প্রতিষ্ঠিত নীতি। ভারতের কৌশলগত পদক্ষেপে তা এক নির্ণায়ক পরিবর্তন। তিনি বলেন, এই অপারেশন এক নতুন মূল্যমানকে প্রতিষ্ঠিত করেছে। সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণে তা এক নতুন স্বাভাবিক পদক্ষেপ। প্রধানমন্ত্রী ভারতের নিরাপত্তা মতবাদের তিনটি স্তম্ভের কথা উল্লেখ করেন। প্রথমত, সুনিশ্চিত প্রত্যাঘাত, তা হ’ল – ভারতের উপর কোনও রকম জঙ্গি হামলা হলে তার কঠোর জবাব দেওয়া হবে। ভারত তার নিজের মতো করে এর জবাব দেবে। সন্ত্রাসের শিকড়কে উপড়ে দেবে। দ্বিতীয় হ’ল – নিউক্লিয়ার ব্ল্যাকমেল’কে কোনও রকমভাবে প্রশ্রয় দেওয়া হবে না। পরমাণু হামলার কথা বলে ভারতকে ভয় পাওয়া যাবে না। এই অজুহাতে সন্ত্রাসবাদের নিরাপদ ঘাঁটির উপর সঠিক ও যোগ্য আঘাত হানা হবে। তৃতীয়টি হ’ল – সন্ত্রাসের মদতদাতা এবং সন্ত্রাসবাদীদের মধ্যে কোনও রকম বিভাজন করা হবে না। ভারত সন্ত্রাসী নেতা এবং তাদের আশ্রয়দাতা কোনও সরকারকে পৃথক করে দেখবে না। তিনি উল্লেখ করেন, অপারেশন সিঁদুর – এ সারা বিশ্ব আরও একবার পাকিস্তানের ভয়ঙ্কর বাস্তবকে প্রত্যক্ষ করেছে। পাকিস্তানের উচ্চ পদস্থ সেনা আধিকারিকরা নিহত সন্ত্রাসবাদীদের অন্ত্যেষ্টিতে যোগ দিয়েছিল। এ থেকেই প্রমাণ হয় যে, সন্ত্রাস পাকিস্তানের রাষ্ট্রীয় মদতপুষ্ট। প্রধানমন্ত্রী দৃঢ়তার সঙ্গে বলেন, কোনও রকম হুমকির বিরুদ্ধে নাগরিকদের স্বার্থ রক্ষায় বলিষ্ঠ পদক্ষেপ নিয়ে চলবে।

তিনি বলেন, ভারত সবসময়েই যুদ্ধ ক্ষেত্রে পাকিস্তানকে পরাস্ত করেছে। অপারেশন সিঁদুর দেশের সামরিক শক্তির এক নতুন মাত্রা সংযোজন করেছে। শ্রী মোদী বলেন, মরুভূমি ও পর্বত যুদ্ধ কৌশলে ভারতের অনন্য দক্ষতার পাশাপাশি এই অপারেশন সিঁদুর নতুন যুগের যুদ্ধ কৌশলে ভারতের কর্তৃত্বকে প্রতিষ্ঠা করল। তিনি বলেন, সারা বিশ্ব এখন ভারতে তৈরি প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা একবিংশ শতাব্দীর যৌদ্ধ কৌশলের অনন্য শক্তি হিসেবে প্রত্যক্ষ করছে।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, যে কোনও রকম সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে ভারতের ঐক্যই হ’ল সর্ববৃহৎ শক্তি। প্রধানমন্ত্রী জোর দিয়ে বলেন, এটা যুদ্ধের সময় নয়। তবে, তা সন্ত্রাসেরও সময় নয়। উন্নত ও নিরাপদ বিশ্ব গড়ার সুনিশ্চয়তাই হ’ল - সন্ত্রাসকে কোনও রকম প্রশ্রয় না দেওয়া।

শ্রী মোদী জোর দিয়ে বলেন, পাকিস্তানের সামরিক বাহিনী ও সরকার নিরন্তর সন্ত্রাসে মদত দিয়ে এসেছে। তিনি সতর্ক করে বলেন, এই ব্যবস্থা চলতে থাকলে, তা পাকিস্তানের পতন ডেকে আনবে। তিনি বলেন, পাকিস্তান যদি ঘুরে দাঁড়াতে চায়, তা হলে তার উচিৎ সন্ত্রাস পরিকাঠামোকে ধ্বংস করা। শান্তির পথে এর কোনও বিকল্প হতে পারে না। ভারতের দৃঢ় অবস্থান কঠোরভাবে ব্যক্ত করে বলেন, সন্ত্রাস ও আলোচনা একসঙ্গে হতে পারে না; সন্ত্রাস ও বাণিজ্য একসঙ্গে চলতে পারে না; রক্ত ও জল একসঙ্গে বইতে পারে না। সারা বিশ্ব সম্প্রদায়কে সম্বোধন করে তিনি ভারতের দীর্ঘস্থায়ী ঘোষিত নীতিকে পুনরায় ব্যক্ত করে বলেন, পাকিস্তানের সঙ্গে আলোচনা কেবলমাত্র সন্ত্রাসবাদ ইস্যু এবং পাক অধিকৃত কাশ্মীর নিয়েই হতে পারে।

বুদ্ধ পূর্ণিমা উপলক্ষে প্রধানমন্ত্রী বুদ্ধের শিক্ষার উপর আলোকপাত করে বলেন, শান্তির পথ পরিচালিত হতে হবে শক্তির দ্বারা। তিনি বলেন, মানবতাকে শান্তি ও সমৃদ্ধির লক্ষ্যে এগিয়ে যেতে হবে, যাতে সকল ভারতীয় মর্যাদার সঙ্গে বাঁচতে পারেন এবং বিকশিত ভারতের স্বপ্ন বাস্তবায়িত হতে পারে। প্রধানমন্ত্রী জোর দিয়ে বলেন, শান্তি প্রতিষ্ঠায় ভারতের অবস্থান সবসময়েই শক্তিশালী প্রয়োজন পড়লে সেই শক্তি প্রয়োগও করা হবে। তিনি বলেন, সাম্প্রতিক ঘটনাচক্র আদর্শ রক্ষায় ভারতের অবিচল সংকল্পকে তুলে ধরেছে। পরিশেষে, প্রধানমন্ত্রী পুনরায় ভারতের সশস্ত্র বাহিনীকে অভিবাদন জানিয়ে তাঁদের সাহসিকতার জন্য এবং ভারতীয় নাগরিকদের ঐক্যের প্রতি গভীর শ্রদ্ধা ব্যক্ত করেন।

 

SC/AB/SB


(Release ID: 2128345)