প্রধানমন্ত্রীরদপ্তর
azadi ka amrit mahotsav

রোজগার মেলার আওতায় ৫১,০০০-এর বেশি নিয়োগপত্র বিলি করে প্রধানমন্ত্রীর ভাষণ

Posted On: 26 APR 2025 1:08PM by PIB Kolkata

নয়াদিল্লি, ২৬ এপ্রিল, ২০২৫

 

নমস্কার।

কেন্দ্রীয় সরকারের বিভিন্ন বিভাগে আজ ৫১,০০০-এর বেশি যুবক-যুবতীদের পাকা সরকারি চাকরির নিয়োগপত্র দেওয়া হয়েছে। ভারত সরকারের বিভিন্ন বিভাগে আজ যুবক-যুবতীদের নতুন দায়িত্বের সূচনা হল। আপনাদের দায়িত্ব বিশ্বের আর্থিক গতিকে মজবুত করা, আপনাদের দায়িত্ব দেশের অভ্যন্তরীণ নিরাপত্তা মজবুত করা, আপনাদের দায়িত্ব দেশের আধুনিক পরিকাঠামো গড়ে তোলা, আপনাদের দায়িত্ব শ্রমিকদের জীবনে সামগ্রিক পরিবর্তন আনা। আপনাদের কাজ আপনারা যত বেশি সততার সঙ্গে পালন করবেন, তার লাভ দেশের জনগণের ওপর ও উন্নত ভারতের যাত্রাপথে তত বেশি পরিলক্ষিত হবে। আমার বিশ্বাস, আপনারা আপনাদের দায়িত্ব সম্পূর্ণ নিষ্ঠার সঙ্গে পালন করবেন। 

বন্ধুগণ,

যে কোনও দেশের উন্নতি ও সমৃদ্ধি এবং তার সাফল্যের ভিত হয় সেই দেশের যুব সম্প্রদায়। যখন যুবক-যুবতীরা দেশ গঠনের কাজে অংশ নেন, তখন সেই দেশের উন্নয়ন দ্রুত গতিতে সম্পন্ন হয় এবং বিশ্ব মঞ্চে তৈরি হয় নিজস্ব পরিচয়। ভারতের যুব সম্প্রদায় আজ নিজেদের পরিশ্রম ও উদ্ভাবনের মাধ্যমে বিশ্বকে দেখাচ্ছে যে তারা কতটা যোগ্য। আমাদের সরকার সব পদক্ষেপেই দেশের যুবক-যুবতীদের রোজগার স্বরোজগারের সুযোগ বৃদ্ধির বিষয়টি নিশ্চিত করছে। দক্ষ ভারত, স্টার্টআপ ইন্ডিয়া, ডিজিটাল ভারতের মতো অনেক এই লক্ষ্যে যুবক-যুবতীদের জন্য নতুন সুযোগ গড়ে তুলছে। এই অভিযানের মাধ্যমে আমরা ভারতের যুবা সম্প্রদায়কে নিজেদের প্রতিভা প্রদর্শনের উন্মুক্ত মঞ্চ প্রদান করছি। এর ফলশ্রুতিতে এই দশকে আমাদের যুবক-যুবতীরা প্রযুক্তি, তথ্য এবং উদ্ভাবনের মতো ক্ষেত্রগুলিতে ভারতের স্থান বিশ্বমঞ্চে কয়েক ধাপ এগিয়ে দিয়েছে। বর্তমানে ইউপিআই ওএনডিসি, সরকারি ই-মার্কেটপ্লেস-এর মতো ডিজিটাল প্ল্যাটফর্মগুলিতে সাফল্য দেখিয়ে দিচ্ছে যে আমাদের যুব সম্প্রদায় কীভাবে ডিজিটাল অর্থব্যবস্থা পরিবর্তনে নেতৃত্ব দিচ্ছে। বর্তমানে ভারতে সবচেয়ে বেশি রিয়েল টাইম ডিজিটাল লেনদেন হচ্ছে। আর এর কৃতিত্ব আমাদের যুব সম্প্রদায়ের। 

বন্ধুগণ,

এই বাজেটে সরকার ম্যানু্ফ্যাকচারিং মিশনের ঘোষণা করেছে। এর উদ্দেশ্য হল, মেক ইন ইন্ডিয়াকে আরও মজবুত করা এবং ভারতের যুব সম্প্রদায়কে আন্তর্জাতিক গুণমানসম্পন্ন সামগ্রী তৈরি করার সুযোগ করে দেওয়া। এতে কেবলমাত্র দেশের লক্ষ লক্ষ এমএসএমই ক্ষুদ্র উদ্যোগপতিরা উপকৃত হচ্ছেন তাই নয়, বরং আমাদের দেশের কর্মসংস্থানেও নতুন সুযোগ তৈরি হচ্ছে। বর্তমান সময় ভারতে যুব সম্প্রদায়ের জন্য অভূতপূর্ব সম্ভাবনার সময়। সম্প্রতি আইএমএফ বলেছে যে ভারত বিশ্বের সবচেয়ে দ্রুত উন্নয়নশীল অর্থব্যবস্থা হয়ে থাকবে। এই বিশ্বাসের এই উন্নয়নের বেশ কয়েকটি দিক রয়েছে। সবচেয়ে বড় দিক হল যে, আগামীদিনে সব ক্ষেত্রেই চাকরির সুযোগ বাড়বে। বৃদ্ধি পাবে রোজগার। সাম্প্রতিককালে অটোমোবাইল ও পাদুকা শিল্পে আমাদের উৎপাদন ও রপ্তানি নতুন রেকর্ড গড়েছে। এই ক্ষেত্র এখন বিপুল সংখ্যক যুবক-যুবতীকে রোজগারের সুযোগ করে দিচ্ছে। প্রথমবার খাদি এবং গ্রামোদ্যোগ সামগ্রী ১ লক্ষ ৭০ হাজার কোটি টাকার টার্নওভার অতিক্রম করেছে। এই সংখ্যা প্রায় পৌনে ২ লক্ষ। এই ক্ষেত্র থেকে বিশেষ করে গ্রামীণ এলাকায় লক্ষ লক্ষ নতুন কর্মসংস্থান তৈরি হয়েছে। কয়েকদিন আগে অভ্যন্তরীণ জল পরিবহণে দেশের এক উন্নতি সামনে এসেছে। ২০১৪ সালের আগে আমাদের দেশে এক বছরে অভ্যন্তরীণ গণ পরিবহণ মাধ্যমে প্রায় ১৮ মিলিয়ন টন কার্গো পণ্য চলাচল হতো। বর্তমানে তা বেড়ে ১৪৫ মিলিয়ন টনের বেশি হয়েছে। ভারতের এই সাফল্য এজন্য এসেছে কারণ, ভারত এই ক্ষেত্রের জন্য অবিরাম নীতি তৈরি করেছে, সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেছে। বর্তমানে জলপথে কার্যকরভাবে ৫০০০ কিলোমিটার পথ অতিক্রম করা যায়। এইসব কারণে দেশের যুব সম্প্রদায়ের সামনে কর্মসংস্থানের নতুন সুযোগ সৃষ্টি হচ্ছে।  

বন্ধুগণ,

কিছুদিন পর মুম্বাইয়ে ওয়ার্ল্ড অডিও ভিস্যুয়াল অ্যান্ড এন্টারটেনমেন্ট সামিট অর্থাৎ ওয়েভস ২০২৫-এর আয়োজন করা হবে। এই আয়োজনের কেন্দ্রবিন্দুতেও রয়েছে দেশের যুব সম্প্রদায়। দেশের যুব স্রষ্টাদের প্রথমবার এ ধরনের মঞ্চের সুবিধা মিলছে। মিডিয়া, গেমিং এবং এন্টারটেনমেন্ট ক্ষেত্রে উদ্যোগপতিদের জন্য প্রতিভা প্রদর্শনের এ এক অভূতপূর্ব সুযোগ। এ হল এমন একটি প্ল্যাটফর্ম যেখানে বিনোদনের সঙ্গে যুক্ত স্টার্টআপগুলি বিনিয়োগকারী ও শিল্প নেতাদের সঙ্গে যুক্ত হওয়ার সুযোগ পাবেন। বিশ্বের সামনে নিজেদের চিন্তাভাবনা প্রদর্শনের সবচেয়ে বড় মঞ্চ হচ্ছে এটি। যুব সম্প্রদায়, এআই সহ বিভিন্ন মিডিয়া সম্পর্কে জানতে পারবেন। এর জন্য নানা কর্মশালার আয়োজন করা হবে। ওয়েভস থেকে ভারতের ডিজিটাল কনটেন্ট-এর ভবিষ্যতে নতুন শক্তি সঞ্চয় হবে। 

বন্ধুগণ,

বর্তমানে ভারতের যুব সম্প্রদায়ের সাফল্যে সবচেয়ে বড় প্রশংসনীয় দিক হল তাঁদের অনুসন্ধিৎসা। ভারত বর্তমানে বিভিন্ন ক্ষেত্রে যে নতুন নতুন নজির গড়ছে তাতে সমাজের সর্ব অংশের মানুষদের যোগদান বাড়ছে। আমাদের মেয়েরাও এখন দু-পা এগিয়ে রয়েছেন। কিছুদিন আগেই ইউপিএসসি-র ফল প্রকাশ হয়েছে। তাতেও প্রথম দুটি স্থান দখল করেছেন আমাদের মেয়েরাই। প্রথম ৫ জনের মধ্যে ৩ জন মহিলা। আমাদের নারীশক্তি আমলাতন্ত্র থেকে শুরু করে মহাকাশ ও বিজ্ঞান ক্ষেত্র সবকিছুতেই নতুন উচ্চতা স্পর্শ করছেন। সরকারের বিশেষ লক্ষ্য গ্রামীণ মহিলাদের ক্ষমতায়ন। স্বনির্ভর গোষ্ঠী, বিমা সখী, ব্যাঙ্ক সখী এবং কৃষি সখীর মতো বিষয়গুলি গ্রামীণ মহিলাদের জন্য নতুন সুযোগ তৈরি করছে। বর্তমানে বিশ্বের হাজার হাজার মহিলা ড্রোন দিদি হিসেবে কাজ করে নিজের পরিবার এবং গ্রামের উন্নয়ন সুনিশ্চিত করছে। বর্তমানে দেশে ৯০,০০০-এর বেশি স্বনির্ভর গোষ্ঠী রয়েছে। এর সঙ্গে যুক্ত রয়েছেন ১০ কোটির বেশি মহিলারা। এই স্বনির্ভর গোষ্ঠীগুলির ক্ষমতা বাড়াতে আমাদের সরকার বাজেট বরাদ্দ ৫ গুণ বাড়িয়েছে। কোনো জামানত ছাড়াই ২০ লক্ষ টাকা পর্যন্ত ঋণ দেওয়ার ব্যবস্থা করা হয়েছে। মুদ্রা যোজনার সবচেয়ে সুবিধাভোগীও মহিলারাই। বর্তমানে দেশে ৫০,০০০-এর বেশি স্টার্টআপে মহিলারা নির্দেশক হিসেবে কাজ করেন। এই ক্ষেত্রে এ ধরনের পরিবর্তন বিকশিত ভারতের সংকল্পকে আরও মজবুত করে এবং রোজগার ও স্বরোজগারের সুযোগ বাড়ায়। 

বন্ধুগণ,

আপনারা সকলে এই পথ নিজেদের পরিশ্রম এবং নিষ্ঠার সাহায্যে পেয়েছেন। এখন সময় এসেছে যখন আপনারা নিজেদের জীবনের পরবর্তী ধাপে কেবলমাত্র নিজেদের জন্য নয়, দেশের জন্য সমর্পিত হয়ে কাজ করবেন। জনসেবার ভাবনা সবচেয়ে বেশি গুরত্ব পাওয়া উচিত। যখন আপনারা আপনাদের দায়িত্বকে সর্বোচ্চ মনে করে কাজ করবেন, তখন আপনাদের কাজে শক্তি আসবে এবং তা দেশকে নতুন দিশা দেখাবে। আপনাদের কর্তব্য পালন, আপনাদের উদ্ভাবন এবং আপনাদের নিষ্ঠা থেকেই ভারতের প্রত্যেক নাগরিকের জীবন উন্নত হবে।

বন্ধুগণ,

আপনারা যখন কোনো দায়িত্বশীল পদে পৌঁছান তখন এক নাগরিগ হিসেবে আপনাদের কর্তব্য ও আপনাদের ভূমিকাকে বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ বলে মনে করা হয়। আপনাদের সকলকে এই বিষয়েও সচেতন থাকতে হবে। আমাদেরও একজন নাগরিক হিসেবে নিজেদের ভূমিকা পালনে পিছিয়ে থাকা উচিত নয়। আমি এখন একটি উদাহরণ দিয়ে বলতে চাই যে, দেশের বর্তমানে ‘এক পেড় মা কে নাম’ বা একটি গাছ মায়ের নামে এই অভিযান চলছে। আপনারা বর্তমানে যেসব জায়গায় পৌঁছেছেন সেটি আপনাদের নিজেদের জীবনের এক নতুন সূচনা। আর এই কাজে সবচেয়ে বড় ভূমিকা পালন করেছেন আপনাদের মা। আপনারাও আপনাদের মায়ের নামে গাছ লাগিয়ে প্রকৃতির সেবা করে নিজেদের কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করুন। আপনারা যে অফিসে কাজ করবেন, সেখানেও যত বেশি সম্ভব মানুষকে এই অভিযানের সঙ্গে যুক্ত করুন। আপনাদের কর্মজীবনের প্রারম্ভেই জুন মাস আসছে। এই সময় আন্তর্জাতিক যোগ দিবস পালন করা হবে। এ এক অনেক বড় সুযোগ। আপনাদের সফল জীবনের প্রারম্ভের পাশাপাশি আপনারা যোগের মাধ্যমে সুস্থ জীবন যাপনেরও সূচনা করুন। আপনাদের সুস্বাস্থ্য আপনাদের জন্য তো জরুরি বটেই, আপনাদের কর্মদক্ষতা এবং দেশের উৎপাদনশীলতার জন্যও তা বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ। 

আপনারা নিজেদের ক্ষমতা বাড়াতে মিশন কর্মযোগীর যথাযথ সাহায্য নিতে থাকুন। আপনাদের কাজের উদ্দেশ্য যেন কেবলমাত্র পদ প্রাপ্তি না হয়, আপনাদের পদ ভারতের প্রত্যেক নাগরিকের সেবা করার এবং দেশের উন্নয়নে নিজেদের যোগদান দেওয়ার জন্য। কিছুদিন আগে সিভিল সার্ভিসেস দিবসে আমি একটি মন্ত্র দিয়েছিলাম। আমি বলেছিলাম যে, আমাদের সরকারের সঙ্গে যুক্ত যেসব মানুষ রয়েছেন, আমাদের প্রত্যেকেরই সর্বোপরি একটাই মন্ত্র হওয়া উচিত, তা হল- নাগরিক দেব ভবঃ, নাগরিক দেব ভবঃ। দেশের জনগণের সেবাই আপনাদের জন্য, আমাদের সকলের জন্য দেবপূজার সমান। এই মঞ্চ সর্বদাই মনে রাখবেন। আমার বিশ্বাস যে আমরা নিজেদের সামর্থ ও সততার সঙ্গে এক এমন ভারত গড়ে তুলবো যা উন্নত হবে, সমৃদ্ধও হবে। 

আমি আপনাদের সকলকে অনেক অনেক শুভকামনা জানাই। আপনাদের পরিবারের জন্য রইল অনেক অনেক শুভকামনা। আপনারা যখন নিজেদের স্বপ্ন পূরণের সুযোগ পেয়েছেন তখন ১৪০ কোটি দেশবাসীর স্বপ্নপূরণ করতে এই সুযোগের সদ্ব্যবহার করুন। আমার সম্পূর্ণ বিশ্বাস যে, আপনারা আপনাদের পদের গরিমা বাড়াবেন, দেশবাসীর গৌরব বৃদ্ধি করবেন এবং আপনাদের জীবন ধন্য করার জন্য সময় ও শক্তির সদ্ব্যবহার করবেন। এই শুভকামনার সঙ্গে আপনাদের সকলকে অনেক অনেক অভিনন্দন। 

 

SC/PM/NS…


(Release ID: 2124673) Visitor Counter : 6