প্রধানমন্ত্রীরদপ্তর
azadi ka amrit mahotsav

বিহারের মধুবনীতে একাধিক উন্নয়নমূলক প্রকল্পের উদ্বোধন ও জাতীয় পঞ্চায়েতি রাজ দিবস অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রীর ভাষণ

Posted On: 24 APR 2025 3:34PM by PIB Kolkata

নয়াদিল্লি, ২৪ এপ্রিল, ২০২৫ 

 

আমার বক্তব্য শুরু করার আগে আপনাদের সকলের কাছে আমার প্রার্থনা, আপনারা যে যেখানে বসে আছেন, সেখানে বসে থেকেই, উঠে দাঁড়ানোর কোনও প্রয়োজন নেই। বসে থেকেই আপনারা ২২ তারিখ আমরা আমাদের যে পরিবার-পরিজনকে হারিয়েছি, তাঁদের শ্রদ্ধা জ্ঞাপন করতে কিছু সময় নীরবতা পালন করব। আপনারা নিজ নিজ স্থানে বসে নিজেদের আরাধ্য দেবতার কাছে মৃত পরিবার-পরিজনের প্রতি শ্রদ্ধা জ্ঞাপন করুন। এরপর, আমি আমার বক্তব্য শুরু করব।

ওঁ শান্তি শান্তি শান্তি।

বিহারের রাজ্যপাল শ্রী আরিফ মহম্মদ খানজি, রাজ্যের জনপ্রিয় মুখ্যমন্ত্রী আমার বন্ধু শ্রী নীতীশ কুমারজি, মঞ্চে উপস্থিত অন্যসব প্রবীণ ব্যক্তি এবং আমার বিহারের প্রিয় ভাই ও বোনেরা।

আজ পঞ্চায়েতি রাজ দিবস উপলক্ষ্যে সমগ্র দেশ মিথিলার সঙ্গে, বিহারের সঙ্গে যুক্ত হয়েছে। আজ এখানে দেশের তথা বিহারের উন্নয়নের সঙ্গে যুক্ত হাজার কোটি টাকার একাধিক প্রকল্পের উদ্বোধন ও শিলান্যাস হয়েছে। বিদ্যুৎ, রেল, পরিকাঠামো সহ বিভিন্ন ক্ষেত্রের এই প্রকল্পগুলি বিহারে কর্মসংস্থানের নতুন সুযোগ তৈরি করবে। আজ জাতীয় কবি রামধারী সিংহ দিনকরের প্রয়াণ বার্ষিকী। আমি তাঁর প্রতি আমার শ্রদ্ধাজ্ঞাপন করছি।

বন্ধুগণ,
বিহারের মাটিতে পুজ্য বাপুজি সত্যাগ্রহের মন্ত্র ছড়িয়ে দিয়েছিলেন। বাপুজির দৃঢ় বিশ্বাস ছিল যে, ভারতের গ্রামগুলি যদি শক্তিশালী হয়, তা হলে দ্রুতগতিতে দেশের বিকাশ হবে। আর তখনই দেশে পঞ্চায়েতি রাজের পরিকল্পনা গড়ে তোলা হয়। বিগত দশকে পঞ্চায়েতগুলিকে আরও মজবুত করতে একের পর এক পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে। প্রযুক্তির সাহায্যে পঞ্চায়েতগুলিকে মজবুত করা হচ্ছে। বিগত দশকে ২ লক্ষেরও বেশি গ্রাম পঞ্চায়েতে ইন্টারনেট সংযোগ দেওয়া হয়েছে। পঞ্চায়েতগুলিকে ডিজিটাল মাধ্যমের সঙ্গে যুক্ত করায় আরও একটি লাভ হয়েছে। তা হ’ল – জীবন-মৃত্যু শংসাপত্র, জমির শংসাপত্রের মতো গুরুত্বপূর্ণ কাগজপত্র সহজেই পাচ্ছেন জনগণ। স্বাধীনতার বেশ কয়েক দশক পর, যেখানে দেশে নতুন সংসদ ভবন গড়ে উঠেছে, সেখানে দেশে ৩০ হাজার নতুন পঞ্চায়েত ভবনও তৈরি করা হয়েছে। পঞ্চায়েতগুলি যেন পর্যাপ্ত অর্থ পায়, সেদিকে সরকার বিশেষ নজর দিয়েছে। বিগত ১০ বছরে ২ লক্ষ কোটি টাকারও বেশি তহবিল পঞ্চায়েতকে দেওয়া হয়েছে। গ্রামের উন্নয়নেই এই অর্থ ব্যয় করা হচ্ছে। 

বন্ধুগণ,
গ্রাম পঞ্চায়েতগুলির একটি বড় সমস্যা হ’ল জমি বিবাদ। কোন জমি চাষের, কোন জমি বসবাসের আর পঞ্চায়েতের জমিই বা কোনটি কিংবা সরকারি জমিই বা কোনটি – তা নিয়ে মাঝে মধ্যেই বিবাদ হয়। এর সমাধানে জমিগুলি ডিজিটাইজেশন করা হয়েছে। 

বন্ধুগণ,
আমরা দেখেছি যে, পঞ্চায়েত কিভাবে সামাজিক অংশীদারিত্বকে মজবুত করেছে। বিহার, দেশের প্রথম রাজ্য, যেখানে মহিলাদের ৫০ শতাংশ সংরক্ষণের সুবিধা দেওয়া হয়েছে। এজন্য আমি নীতীশ কুমারজিকে অভিনন্দন জানাই। বর্তমানে বিপুল সংখ্যক দরিদ্র, দলিত, পিছিয়ে পড়া সমাজের মা, বোন ও মেয়েরা বিহারের জনপ্রতিনিধি হয়ে কাজ করছেন। লোকসভা ও বিধানসভাতেও মহিলাদের জন্য ৩৩ শতাংশ সংরক্ষণের আইন রয়েছে। এর লাভ দেশের সব রাজ্যের মহিলারা পাবেন।

বন্ধুগণ,
মহিলাদের আয় বাড়াতে সরকার মিশন মোড – এ কাজ করছে। বিহারে বর্তমানে যে জীবিকা দিদি কর্মসূচি চলছে, তা অনেক বোনের জীবন বদলে দিয়েছে। বিহারের বোনেদের প্রায় ১ হাজার কোটি টাকা সাহায্য দেওয়া হয়েছে। দেশে ৩ কোটি লাখপতি দিদি তৈরি করার লক্ষ্য প্রাপ্তিতে এটি বড় ভূমিকা পালন করবে।

বন্ধুগণ,
বিগত দশকে গ্রামীণ অর্থ ব্যবস্থায় নতুন গতি এসেছে। গ্রামের দরিদ্রদের ঘর তৈরি হয়েছে, রাস্তা তৈরি হয়েছে, গ্রামে গ্রামে পৌঁছে দেওয়া হয়েছে রান্নার গ্যাস ও পানীয় জলের সংযোগ। এমনকি, নির্মিত হয়েছে শৌচালয়ও। এ ধরনের কাজ থেকে গ্রামগুলিতে কর্মসংস্থানের সুযোগ তৈরি হয়েছে। শ্রমিক থেকে শুরু করে কৃষক বা দোকানদার সকলেরই রোজগারের সুযোগ বেড়েছে। আমি আপনাদের প্রধানমন্ত্রী আবাস যোজনার উদাহরণ দিচ্ছি। এই প্রকল্পের লক্ষ্য হ’ল – দেশের কোথায় যেন কোনও দরিদ্র পরিবার গৃহহীন থাকেন, তার ব্যবস্থা করা। সকলের মাথার উপর পাকা ছাদের ব্যবস্থা করা। আমি এখন যখন মা ও বোনেদের তাঁদের বাড়ির চাবি দিচ্ছিলাম, তখন তাঁদের মুখে যে ঔজ্জ্বল্য ফুটে উঠছিল, তা লক্ষ্য করেছি। বিগত দশকে ৪ কোটিরও বেশি পাকা বাড়ি নির্মাণ করা হয়েছে। আগামী দিনে দরিদ্রদের আরও ৩ কোটি পাকা বাড়ি দেওয়া হবে। বিহারের প্রায় দেড় লক্ষ পরিবার আজ গৃহ প্রবেশ করছেন। আজ প্রায় ১০ লক্ষ দরিদ্র পরিবারকে তাঁদের পাকা বাড়ি নির্মাণের জন্য আর্থিক সহায়তা দেওয়া হয়েছে।

বন্ধুগণ,
বিগত দশক ভারতের পরিকাঠামোর দশক ছিল। এই আধুনিক পরিকাঠামো উন্নত ভারতের ভিতকে মজবুত করেছে। দেশে ১২ কোটিরও বেশি গ্রামীণ পরিবারে প্রথমবার নলবাহিত পানীয় জল পৌঁছেছে। যাঁরা কখনও ভাবতে পারেননি যে, রান্নার গ্যাস ব্যবহার করবেন, তাঁদের কাছেও রান্নার গ্যাসের সংযোগ পৌঁছে দেওয়া হয়েছে। সম্প্রতি আপনারা হয়তো খবরে দেখেছেন যে, লাদাখের সিয়াচেনে যেখানে প্রাথমিক সুবিধা পৌঁছে দেওয়াও কঠিন, সেখানেও ফোর-জি এবং ফাইভ-জি মোবাইল পরিষেবা পৌঁছে গেছে। দেশের কাছে প্রাথমিক গুরুত্ব কি, তা সহজেই আপনারা দেখতে পাচ্ছেন। দিল্লি এইমস্‌ - এর মতো হাসপাতাল আজ এই দ্বারভাঙাতেও তৈরি হচ্ছে।

বন্ধুগণ,
গ্রামগুলিতেও যাতে উন্নতমানের হাসপাতাল নির্মিত হয়, তার জন্য সমগ্র দেশে দেড় লক্ষেরও বেশি আয়ুষ্মান আরোগ্য মন্দির তৈরি করা হচ্ছে। বিহারে এ ধরনের ১০ হাজারেরও বেশি আয়ুষ্মান আরোগ্য মন্দির তৈরি করা হয়েছে। এভাবেই জন ঔষধি কেন্দ্রগুলিও দরিদ্র ও মধ্যবিত্ত শ্রেণীর জনগণকে ব্যাপক স্বস্তি দিয়েছে। ৮০ শতাংশের কাছাকাছি ছাড়ে এই কেন্দ্রগুলি থেকে ওষুধ পাওয়া যায়। আয়ুষ্মান ভারত যোজনা থেকেও বিহারের লক্ষ লক্ষ পরিবার বিনামূল্যে চিকিৎসা পরিষেবা পাছেন।

বন্ধুগণ,
বর্তমানে ভারত সড়ক, রেল ও বিমানবন্দরের মতো পরিকাঠামোগুলির দ্রুত উন্নয়ন ঘটাচ্ছে। পাটনায় মেট্রো রেলের কাজ চলছে। দেশে দু’ডজনেরও বেশি শহরে এখন মেট্রোর সুবিধা রয়েছে। আজ পাটনা থেকে জয়নগর পর্যন্ত নমো ভারত র‍্যাপিড রেলের সূচনা হয়েছে। এরফলে, পাটনা থেকে জয়নগর অনেক কম সময়ে যাতায়াত করা যাবে। সমস্তিপুর, দ্বারভাঙা, মধুবনী ও বেগুসরাইয়ের লক্ষ লক্ষ মানুষ এই সুবিধা পাবেন। 

বন্ধুগণ,
এখানে আজ অনেক নতুন রেল লাইনের উদ্বোধন হয়েছে। এছাড়া, বিহারের বেশ কিছু রেল স্টেশনেরও আধুনিকীকরণ হয়েছে। দ্বারভাঙা বিমানবন্দর থেকে মিথিলা পর্যন্ত বিমান যোগাযোগ আরও উন্নত হচ্ছে। পাটনা বিমানবন্দরেরও উন্নয়ন ঘটানো হচ্ছে। উন্নয়নের এই কাজ থেকে বিহারে কর্মসংস্থানের নতুন নতুন সুযোগ তৈরি হচ্ছে।

বন্ধুগণ,
আমাদের কৃষকরা গ্রামীণ অর্থ ব্যবস্থার মেরুদন্ড। এই মেরুদন্ড যত মজবুত হবে, গ্রামগুলি তত মজবুত হবে, দেশ হয়ে উঠবে আরও উন্নত ক্ষমতাসম্পন্ন। সরকার বিহারে বন্যার প্রভাব কম করার জন্য কয়েক কোটি টাকা খরচ করতে চলেছে। বাগমতি, কোসি এবং ধারের মতো নদীগুলিতে বাঁধ তৈরি করা হবে। নদীর জল থেকে সেচ ব্যবস্থা উন্নত হবে। 

বন্ধুগণ,
মাখানা এখন দেশ ও বিশ্বের জন্য সুপারফুড। এই মাখানা মিথিলার সংস্কৃতির অংশ। এই সংস্কৃতিকেই আমরা এখানকার সমৃদ্ধির সূত্র হিসেবে গড়ে তুলব। মাখানাকে আমরা জিআই ট্যাগ দিয়েছি। বিহারের মাখানা সমগ্র বিশ্বের বাজারে সুপারফুড হিসেবে পৌঁছে যাবে। এখানকার তরুণ প্রজন্ম খাদ্য প্রক্রিয়াকরণ শিল্পের সঙ্গে যুক্ত কাজ থেকে সাহায্য পাবেন।

বন্ধুগণ,
কৃষি কাজের পাশাপাশি, মৎস্য চাষেও বিহার এগিয়ে চলেছে। আমাদের মৎস্যজীবীরা এখন কিষাণ ক্রেডিট কার্ডের সুবিধা পাচ্ছেন। প্রধানমন্ত্রী মৎস্য সম্পদ যোজনার আওতায় বিহারে হাজার হাজার কোটি টাকার কাজ হয়েছে। 

বন্ধুগণ,
২২ এপ্রিল জম্মু ও কাশ্মীরের পহলগাঁও – এ সন্ত্রাসবাদীরা যেভাবে নিরপরাধ দেশবাসীকে হত্যা করেছে, তাতে সমগ্র দেশ ব্যথিত। শোক-সন্তপ্ত পরিবার-পরিজনের সঙ্গে আমরা এই দুঃখের সময়ে পাশে রয়েছি। যাঁদের চিকিৎসা চলছে, তাঁরা যেন তাড়াতাড়ি সুস্থ হয়ে ওঠেন, তার জন্য সরকার সবরকম চেষ্টা চালাচ্ছে। 

বন্ধুগণ,
এই সন্ত্রাসবাদী হামলায় কেউ তাঁর ছেলে হারিয়েছেন, কেউবা তাঁর ভাই, আবার কেউবা হারিয়েছেন তাঁর জীবনসঙ্গীকে। মৃতদের মধ্যে কেউবা বাংলায় কথা বলতেন, কেউবা কন্নড়, কেউ মারাঠী, কেউ ওড়িয়া, কেউ গুজরাটি আবার কেউ ছিলেন এই বিহারেরই বাসিন্দা। আজ তাঁদের মৃত্যুতে কার্গিল থেকে কন্যাকুমারী পর্যন্ত সকলেই ক্রোধে-আক্রোশে ফেটে পড়ছেন। এই হামলা কেবল পর্যটকদের উপর হয়নি, দেশের শত্রুরা ভারতের আত্মার উপর হামলা চালানোর দুঃসাহস দেখিয়েছে। আমি অত্যন্ত স্পষ্ট ভাষায় বলতে চাই, যারা হামলা চালিয়েছে, সেই সন্ত্রাসবাদীরা যারা ষড়যন্ত্র করেছে, তারা কল্পনাও করতে পারছে না যে, কত বড় শাস্তি পাবে। ১৪০ কোটি ভারতবাসীর ইচ্ছাশক্তি এখন সন্ত্রাসবাদের কোমর ভেঙে দেবে। 

বন্ধুগণ,
আজ বিহারের মাটি থেকে আমি সমগ্র বিশ্বকে বলতে চাই যে, ভারত অবশ্যই এই সন্ত্রাসবাদী ও তাদের সাহায্যকারীদের শনাক্ত করবে এবং শাস্তি দেবে। সন্ত্রাসবাদের সাহায্যে ভারতের ক্ষমতা কখনই নষ্ট করা যাবে না। যাঁরা মানবতায় বিশ্বাসী তাঁরা সকলেই আমাদের সঙ্গে আছেন। বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্তের দেশের জনগণ ও নেতারা যাঁরা এই সময়ে আমাদের সঙ্গে রয়েছেন, তাঁদের সকলকে আমি ধন্যবাদ জানাই।

বন্ধুগণ,
শান্তি ও সুরক্ষা দ্রুতগতির উন্নয়নে সবচেয়ে জরুরি শর্ত। বিকশিত ভারতের জন্য বিকশিত বিহার প্রয়োজন। বিহার উন্নত হোক এবং এই উন্নয়নের লাভ এখানকার সকল শ্রেণীর ও ক্ষেত্রের জনগণের কাছে পৌঁছে যাক – এটাই আমাদের প্রচেষ্টা। পঞ্চায়েতি রাজ দিবসের এই অনুষ্ঠানের সঙ্গে যুক্ত হওয়ার জন্য আমি আরও একবার আপনাদের সকলকে কৃতজ্ঞতা জানাই। 

অনেক অনেক ধন্যবাদ। আমার সঙ্গে বলুন – 
ভারত মাতা কি জয়।
ভারত মাতা কি জয়।
ভারত মাতা কি জয়।

 


SC/PM/SB


(Release ID: 2124191) Visitor Counter : 22