প্রধানমন্ত্রীরদপ্তর
এনএক্সটি কনক্লেভে প্রধানমন্ত্রীর ভাষণের মূল অংশ
Posted On:
01 MAR 2025 2:03PM by PIB Kolkata
নয়াদিল্লি, ১ মার্চ, ২০২৫
নমস্কার,
আইটিভি নেটওয়ার্কের প্রতিষ্ঠাতা এবং সংসদে আমার সহকর্মী কার্তিকেয় শর্মাজি, নেটওয়ার্কের পুরো টিম, ভারত ও বিদেশ থেকে আগত সকল অতিথি, অন্যান্য বিশিষ্ট ব্যক্তিবর্গ, ভদ্রমহিলা ও ভদ্রমহোদয়গণ, নিউজএক্স ওয়ার্ল্ড একটি অত্যন্ত শুভ সূচনা এবং এর জন্য আমি আপনাদের সকলকে অভিনন্দন জানাই এবং আপনাদের সকলের জন্য শুভকামনা জানাই। আজ আপনার নেটওয়ার্কের সমস্ত আঞ্চলিক চ্যানেল, হিন্দি এবং ইংরেজি সহ, এখন বিশ্বব্যাপী প্রচারিত হচ্ছে। আর আজ অনেক ফেলোশিপ এবং স্কলারশিপও চালু হয়েছে, এই প্রোগ্রামগুলির জন্য আমি আপনাদের সকলকে শুভকামনা জানাই।
বন্ধুগণ,
আমি আগেও এই ধরণের মিডিয়া প্রোগ্রামে অংশগ্রহণ করেছি, কিন্তু আজ আমার মনে হচ্ছে আপনারা একটি নতুন ধারা তৈরি করেছেন এবং সেজন্যও আমি আপনাদের অভিনন্দন জানাই। আমাদের দেশে এই ধরনের মিডিয়া ইভেন্টগুলি ঘটতে থাকে, এবং এটি একটি চলমান ঐতিহ্য, এতে কিছু অর্থনৈতিক সমস্যাও রয়েছে, এটি সকলের জন্য সুবিধার বিষয়, কিন্তু আপনাদের নেটওয়ার্ক এটিকে একটি নতুন মাত্রা দিয়েছে। আপনারা এমন একটি নতুন মডেলের উপর কাজ করছেন যা একেবারেই অপ্রচলিত। আমার মনে আছে, আমি গতকাল থেকে আপনাদের পূর্ববর্তী শীর্ষ সম্মেলন এবং এবারের শীর্ষ সম্মেলনের কথা শুনে আসছি, বিভিন্ন মিডিয়া হাউস দ্বারা আয়োজিত পূর্ববর্তী শীর্ষ সম্মেলনগুলি নেতা-কেন্দ্রিক ছিল, কিন্তু আমি খুশি যে এবার এটি নীতি-কেন্দ্রিক, এখানে নীতিগুলি নিয়ে আলোচনা করা হচ্ছে। বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই অতীতের উপর ভিত্তি করে বর্তমানকে সঞ্জীবিত রাখার উপর জোর দেওয়া হচ্ছে। আমি দেখতে পাচ্ছি যে আপনাদের এই শীর্ষ সম্মেলন আগামীকালের জন্য উৎসর্গীকৃত। আমি লক্ষ্য করেছি যে, দূর থেকে যেসব অনুষ্ঠান দেখেছি অথবা নিজে উপস্থিত হয়েছি, সেখানে বিতর্কের গুরুত্ব বেশি, এখানে সংলাপের গুরুত্ব বেশি। আর আমি দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করি যে, এবং দ্বিতীয়ত, আমি যে সমস্ত অনুষ্ঠানে গিয়েছি, সেগুলি একটি ছোট ঘরে এবং সেখানে তাঁদের নিজস্ব লোকজনই থাকেন। এখানে এত বিশাল অনুষ্ঠান দেখা, তাও একটি মিডিয়া হাউসের আয়োজনে আর এতে সর্বস্তরের মানুষের উপস্থিতি, এটি নিজেই একটি বিরাট ব্যাপার। এটা সম্ভব যে অন্যান্য গণমাধ্যমের লোকেরা এখান থেকে কোনও উপাদান পাবে না, কিন্তু দেশ অনেক অনুপ্রেরণা পাবে, কারণ আশা করি, এখানে আসা প্রত্যেক ব্যক্তির চিন্তাভাবনা এমন হবে যা দেশকে অনুপ্রাণিত করবে। আশা করি, আগামী দিনে, অন্যান্য মিডিয়া হাউসগুলিও তাদের নিজস্ব উদ্ভাবনী উপায়ে এই প্রবণতা, এই টেমপ্লেটটি গ্রহণ করবে এবং উদযাপনের ক্ষেত্রে অন্তত সেই ছোট ঘর থেকে বেরিয়ে আসবে।
বন্ধুগণ,
আজ সমগ্র বিশ্বের দৃষ্টি একবিংশ শতাব্দীর ভারতের দিকে; সারা বিশ্বের মানুষ ভারতে আসতে চান এবং ভারতকে জানতে চান। আজ, ভারত বিশ্বের এমন একটি দেশ হয়ে উঠেছে যেখানে ক্রমাগত ইতিবাচক সংবাদ তৈরি হচ্ছে। যেখানে প্রতিদিন নতুন নতুন রেকর্ড তৈরি হচ্ছে, যেখানে নতুন কিছু ঘটেই চলেছে, সেখানে সংবাদ তৈরির কোনও প্রয়োজন নেই। সম্প্রতি ২৬শে ফেব্রুয়ারিতে প্রয়াগরাজে আমাদের ঐক্যের মহাকুম্ভ সমাপ্ত হয়েছে। একটি অস্থায়ী শহরে, একটি অস্থায়ী ব্যবস্থায়, কোটি কোটি মানুষ নদীর তীরে এসেছেন, শত শত কিলোমিটার সফর করে এসেছেন এবং পবিত্র স্নানের পর যেভাবে আবেগে ভরে উঠেছেন, তা দেখে গোটা বিশ্ব অবাক। আজ বিশ্ববাসী ভারতের আয়োজন এবং উদ্ভাবনী দক্ষতা দেখছে। আমরা এখানে সেমি-কন্ডাক্টর থেকে শুরু করে এয়ারক্র্যাফট ক্যারিয়ার বা বিমান বাহক পর্যন্ত সবকিছুই তৈরি করছি। বিশ্ব ভারতের এই সাফল্য সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে চায়। আমি মনে করি এসব কারণেই নিউজএক্স ওয়ার্ল্ড নিজেই একটি বিশাল সুযোগে পরিণত হয়েছে।
বন্ধুগণ,
মাত্র কয়েক মাস আগে, ভারত বিশ্বের বৃহত্তম নির্বাচন পরিচালনা করেছে। ৬০ বছর এমন হয়েছে, যখন ভারতে টানা তৃতীয়বারের মতো কোনও সরকার ক্ষমতায় ফিরে এসেছে। এই জনসাধারণের আস্থার ভিত্তি হল গত ১১ বছরে ভারতের অনেক সাফল্য। আমি নিশ্চিত যে আপনাদের নতুন চ্যানেল ভারতের বাস্তব গল্পগুলি বিশ্বের সামনে তুলে ধরবে। আপনাদের গ্লোবাল চ্যানেল ভারতকে যেমন আছে তেমনই দেখাবে, কোনও রঙ ছাড়াই, আমাদের মেকআপের দরকার নেই।
বন্ধুগণ,
কয়েক বছর আগে, আমি দেশের সামনে ‘ভোকাল ফর লোকাল’ এবং ‘লোকাল ফর গ্লোবাল’-এর দৃষ্টিকোণ তুলে ধরেছিলাম। আজ আমরা এই স্বপ্নকে বাস্তবে রূপান্তরিত হতে দেখছি। আজ আমাদের আয়ুষ উৎপাদিত পণ্যগুলি এবং যোগ ‘লোকাল’ থেকে বিশ্বব্যাপী ছড়িয়ে পড়েছে। পৃথিবীর যে কোনও জায়গায় যান না কেন, এমন কাউকে না কাউকে পাবেন, যিনি যোগব্যায়াম জানেন। আমার বন্ধু টনি এখানে বসে আছেন, তিনি প্রতিদিন যোগব্যায়াম করেন। আজ ভারতের সুপারফুড, আমাদের মখানা, লোকাল থেকে বিশ্বব্যাপী ছড়িয়ে পড়ছে। ভারতের মিলেটস- শ্রীঅন্নও লোকাল থেকে গ্লোবাল বা বিশ্বব্যাপী জনপ্রিয়তা পেয়েছে। আর আমি জানতে পারলাম যে আমার বন্ধু টনি অ্যাবট, দিল্লি হাটে ভারতীয় মিলেটস দিয়ে তৈরি খাবার খাওয়ার প্রত্যক্ষ অভিজ্ঞতা নিয়েছেন এবং তাঁর খুব ভাল লেগেছে। একথা শুনে আমি আরও বেশি খুশি হয়েছি।
বন্ধুগণ,
শুধু মিলেটস নয়, ভারতের হলুদও লোকাল থেকে গ্লোবাল হয়েছে। ভারত বিশ্বের ৬০ শতাংশেরও বেশি হলুদের সরবরাহকারী। ভারতের কফিও লোকাল থেকে গ্লোবাল হয়েছে। এক্ষেত্রে ভারত বিশ্বের সপ্তম বৃহত্তম কফি রপ্তানিকারক দেশে পরিণত হয়েছে। আজ ভারতের মোবাইল ফোন, বিভিন্ন বৈদ্যুতিন পণ্য, ভারতের ওষুধ তাদের নিজস্ব আন্তর্জাতিক পরিচিতি তৈরি করছে। আর, এইসব কিছুর পাশাপাশি আরও একটি বিষয় হয়েছে, ভারত অনেক আন্তর্জাতিকস্তরের উদ্যোগে নেতৃত্ব দিচ্ছে। সম্প্রতি আমার ফ্রান্সে এআই অ্যাকশন সামিটে অংশগ্রহণের সৌভাগ্য হয়েছে। বিশ্বকে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা ভবিষ্যতের দিকে নিয়ে যাওয়ার ক্ষেত্রে এই শীর্ষ সম্মেলনটি অনেক গুরুত্বপূর্ণ ছিল। এটির সহ-আয়োজক দেশ ছিল ভারত। এখন এর পরবর্তী আয়োজনের দায়িত্ব ভারতের কাছে রয়েছে। ভারত নিজের সভাপতিত্বে অসাধারণ জি-২০ শীর্ষ সম্মেলনের আয়োজন করেছে। এই শীর্ষ সম্মেলনের সময় আমরা ভারত-মধ্যপ্রাচ্য-ইউরোপ করিডর রূপে একটি নতুন ইকনমিক রুট বিশ্বকে দিয়েছি। ভারত গ্লোবাল সাউথকেও একটি শক্তিশালী কন্ঠস্বর দিয়েছে। আমরা সমস্ত দ্বীপ রাষ্ট্রগুলিকে তাদের মঙ্গলের জন্য আমাদের অগ্রাধিকারের সঙ্গে যুক্ত করেছি। পরিবেশ সংক্রান্ত বিভিন্ন সমস্যার মোকাবিলা করার জন্য ভারত বিশ্বকে ‘মিশন লাইফ’ দৃষ্টিকোণ প্রদান করেছে। এভাবেই আন্তর্জাতিক সৌরসঙ্ঘ, কোয়ালিশন ফর ডিজাস্টার রেসিলিয়েন্ট ইনফ্রাস্ট্রাকচার – এরকম অনেক উদ্যোগের ক্ষেত্রে ভারত বিশ্বে নেতৃত্ব দিচ্ছে। আমি অত্যন্ত আনন্দিত যে আজ যখন ভারতের অনেক ব্র্যান্ড আন্তর্জাতিক পরিচিতি পাচ্ছে, তখন ভারতের সংবাদমাধ্যমও আন্তর্জাতিক হয়ে উঠছে। এটাকে আন্তর্জাতিক সুযোগ বলে গ্রহণ করছে।
বন্ধুগণ,
অনেক দশক ধরে বিশ্ববাসী ভারতকে তাদের ব্যাক-অফিস বলে মনে করত। কিন্তু আজ ভারত ‘নিউ ফ্যাক্টরি অফ দ্য ওয়ার্ল্ড’-এ পরিণত হচ্ছে। আমরা শুধুই মানবসম্পদ দিয়ে ‘ওয়ার্কফোর্স’ নয়, ইতিমধ্যেই ‘ওয়ার্ল্ডফোর্স’ হয়ে উঠছি। আগে আমরা যে পণ্যগুলি আমদানি করতাম, আজ দেশ সেগুলিরই ‘ইমার্জিং এক্সপোর্ট হাব’ হয়ে উঠছে। যে কৃষক স্থানীয় বাজার পর্যন্তই সীমাবদ্ধ ছিলেন, আজ তাঁর ফসল গোটা বিশ্বের বিভিন্ন বাজারে পৌঁছে যাচ্ছে। পুলওয়ামার স্নো-পিজ বা কড়াইশুটি, মহারাষ্ট্রের পুরন্দর ফিগস বা ডুমুর এবং কাশ্মীরের ক্রিকেট ব্যাটের চাহিদা এখন বিশ্বে ক্রমবর্ধমান। আমাদের উৎপাদিত প্রতিরক্ষা সরঞ্জাম বিশ্বে ভারতের অনুপম কারিগরি এবং প্রযুক্তি শক্তিকে তুলে ধরছে। বৈদ্যুতিন থেকে শুরু করে অটোমোবাইল সেক্টর পর্যন্ত বিশ্বে আমরা যে মাত্রায় উৎপাদন করছি, সেই সামর্থ্য সবাই অবাক হয়ে দেখছে। আমরা বিশ্বকে শুধু নিজেদের উৎপাদিত পণ্য দিচ্ছি না, ভারত আন্তর্জাতিক সরবরাহ শৃঙ্খলে একটি বিশ্বস্ত এবং নির্ভরযোগ্য অংশীদারও হয়ে উঠছে।
বন্ধুগণ,
আজ আমরা যে অনেক ক্ষেত্রে নেতৃত্ব দিচ্ছি তার পেছনে অনেক বছরের সুচিন্তিত পরিশ্রম রয়েছে। তা আমাদের সিস্টেমেটিক পলিসি ডিসিশন্স-এর মাধ্যমেই সম্ভব হয়েছে। আপনারা আমাদের ১০ বছরের যাত্রাপথকে দেখুন, যেখানে কখনও অসংখ্য অসম্পূর্ণ সেতু, সড়কপথ ইত্যাদি ছিল, আজ সেখানে অত্যাধুনিক নতুন গতি প্রদানকারী সেতু ও সড়কপথ গড়ে উঠেছে। শুধু তাই নয়, অসাধারণ সব এক্সপ্রেসওয়ে নির্মিত হওয়ায় বিভিন্ন পণ্য পরিবহণের সময় ও মূল্য দুটোই কমেছে। এর ফলে, শিল্পোদ্যোগগুলি আজ বিভিন্ন লজিস্টিক্স-এর টার্নঅ্যারাউন্ড টাইম হ্রাস করতে পেরেছে। এর ফলে সবচাইতে বেশি লাভবান হয়েছে আমাদের অটোমোবাইল শিল্প। নানা রকম গাড়ির চাহিদা বেড়েছে। আমরা গাড়ি উৎপাদনের ক্ষেত্রেও বিদ্যুৎ- চালিত বাহনকে বেশি উৎসাহ দিয়েছি। আজ আমরা বিশ্বের একটি বৃহৎ অটোমোবাইল উৎপাদক এবং রপ্তানিকারক হিসেবে উঠে এসেছি।
বন্ধুগণ,
এরকমই পরিবর্তন আমরা বৈদ্যুতিন পণ্য উৎপাদনের ক্ষেত্রেও দেখেছি। বিগত দশকে আড়াক কোটিরও বেশি পরিবারে প্রথমবার বিদ্যুৎ সংযোগ করা হয়েছে। ফলে, দেশে বিদ্যুতের চাহিদা বেড়েছে, উৎপাদনও বেড়েছে। এর ফলে বিভিন্ন বৈদ্যুতিন সরঞ্জামের চাহিদা বেড়েছে। আমরা ‘ডেটা’ সুলভ করেছি। ফলে, সারা দেশে মোবাইল ফোনের চাহিদা বেড়েছে। যেত বেশি সম্ভব পরিষেবা প্রদানের মাধ্যমে মোবাইল ফোন বাজারজাত হওয়ায় অন্যান্য ডিজিটাল সরঞ্জামের চাহিদাও বেড়েছে। এই চাহিদাকে সুযোগে পরিণত করে আমরা পিএলআই স্কিমের মতো প্রোগ্রাম শুরু করেছি। এর ফলে ভারত ইতিমধ্যেই ‘মেজর ইলেক্ট্রনিক্স এক্সপোর্টার’-এ পরিণত হয়েছে।
বন্ধুগণ,
আজ ভারত যে অনেক বড় বড় লক্ষ্য পূরণ করতে পারছে, করছে, এর পেছনে রয়েছে একটি বিশেষ মন্ত্র। এই মন্ত্রটি হল – ‘মিনিমাম গভর্নমেন্ট, ম্যাক্সিমাম গভর্ন্যান্স’। এটাই দক্ষ ও কার্যকরী প্রশাসনের মন্ত্র। অর্থাৎ, সরকার কোনওভাবে নাক গলাচ্ছে না, কোনও চাপও সৃষ্টি করছে না। আমি আপনাদের একটা চিত্তাকর্ষক উদাহরণ দিই। বিগত এক দশকে আমরা প্রায় ১,৫০০ এমন আইন বাতিল করেছি, যেগুলির গুরুত্ব নষ্ট হয়ে গিয়েছিল। ১,৫০০ আইন বাতিল করা অনেক বড় বিষয়। এদের মধ্যে এমন অনেক আইন ছিল যেগুলি ইংরেজ শাসকরাই তৈরি করেছিলেন। এখন আমি এরকম কিছু উদাহরণ দেব যা শুনে আপনারা আশ্চর্য হবেন। একটা আইন ছিল, ‘ড্রামাটিক পারফরম্যান্স অ্যাক্ট’। এই আইন ইংরেজরা ১৫০ বছর আগে প্রণয়ন করেছিল। তখন ব্রিটিশ শাসক চাইত যে নাটক ও থিয়েটারের ব্যবহার যেন সরকারের বিরুদ্ধে না করা হয়। এই আইনে ব্যবস্থা ছিল যে যদি পাবলিক প্লেসে ১০ জন মানুষকে একসঙ্গে নাচ করতে দেখা যায়, তাহলে তাঁদেরকে গ্রেপ্তার করা যেত। আর এই আইন দেশ স্বাধীন হওয়ার পরও ৭৫ বছর ধরে চলছিল। অর্থাৎ, বিয়ের বরযাত্রীরাও যদি একসঙ্গে ১০ জন নাচ করেন, তাহলে জামাই বাবাজি সহ তাঁদেরকে পুলিস গ্রেপ্তার করতে পারবে। আমরা এই আইনকে বাতিল করেছি। আমার তখনকার সরকার বা নেতাদের কিছু বলার নেই। তাঁদের মধ্যে অনেকে এখানে বসেও আছেন। কিন্তু আমার এই লুটেরাদের কথা ভেবে অবাক লাগে, এই খান মার্কেট গ্যাং-এর কথা ভেবে অবাক লাগে। এঁরা ৭৫ বছর এই আইনগুলি নিয়ে চুপ কেন ছিল? যাঁরা নিয়মিত আদালতে যেতেন, জনস্বার্থ মামলার ঠিকাদার ছিলেন, তাঁরাও কেন চুপ ছিলেন? এখন মোদী যদি এমন কোনো আইন প্রণয়ন করতে, তাহলে কী হত? এখন বিভিন্ন সামাজিক মাধ্যমে যাঁরা ট্রোল করেন, তাঁরা যদি এরকম একটি মিথ্যা গুজব রটায় যে মোদী এরকম একটা আইন প্রণয়ন করবে, তাহলেই দেখবেন এঁরা কিরকম আগুন লাগিয়ে দেন, মোদীর চুল ছিঁড়ে নেন।
বন্ধুগণ,
আমাদের সরকার দাসত্বের সময় তৈরি এই আইনকে বাতিল করেছে। আমি আরও একটি উদাহরণ দেব বাঁশের। এই বাঁশ আমাদের দেশের জনজাতি এলাকাগুলিতে, বিশেষ করে উত্তর-পূর্ব ভারতের লাইফলাইন। কিন্তু আগে বাঁশ কাটলে আপনাকে জেলে পাঠানো যেত। কারণ, বাঁশকে গাছ মনে করা হত। কিন্তু আমরা নতুন আইন এনে বিজ্ঞানসম্মতভাবে বাঁশকে এক প্রকারের ঘাস হিসেবে সংজ্ঞায়িত করেছি। আমাদের পূর্ববর্তী শাসকরা এটা বুঝতেই পারেননি যে বাঁশ আসলে গাছ নয়। এক্ষেত্রে ইংরেজদের নিজস্ব স্বার্থ ছিল। কিন্তু আমাদের আগের কোনও সরকার কেন এই পদক্ষেপ নিল না? আমাদের সরকারকেই কেন এত পুরনো আইন বদলাতে হল?
বন্ধুগণ,
আপনাদের হয়তো মনে আছে, ১০ বছর আগে পর্যন্ত আয়কর রিটার্ন ভরা সাধারণ মানুষের পক্ষে কতটা কঠিন ছিল। আজ যে কেউই কয়েক মুহূর্তের মধ্যে আয়কর ফাইল করতে পারেন, এবং রিফান্ডও কয়েকদিনের মধ্যেই সরাসরি তাঁর ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টে জমা হয়ে যায়। এখন তো আয়কর সংক্রান্ত আইনগুলিকে আরও সহজ করার প্রক্রিয়া আমাদের সংসদে পেশ করা হয়েছে। আমরা ১২ লক্ষ টাকা পর্যন্ত আয়কে করমুক্ত করে দিয়েছি (হ্যাঁ, এতক্ষণে হাততালির শব্দ শুনতে পেলাম)। বাঁশের ক্ষেত্রে আপনারা হাততালি দেননি, কারণ এতে লাভবান হয়েছে জনজাতির মানুষ। কিন্তু এই আয়কর আইন সংস্কারের ফলে আমাদের সংবাদমাধ্যমের কর্মীরা এবং অন্যান্য বেতনপ্রাপ্ত কর্মচারীরা অনেক বেশি লাভবান হয়েছেন। যে যুব সম্প্রদায় এখন প্রথম কিংবা দ্বিতীয় চাকরি করছেন, তাঁদের প্রত্যাশা যেমন ভিন্ন, তাঁদের খরচও ভিন্ন। তাঁরা তাঁদের প্রত্যাশা পূরণের জন্য সঞ্চয় বাড়ান তা সুনিশ্চিত করতে এবারের বাজেট অনেক সাহায্যও করেছে। আমাদের উদ্দেশ্য এটাই। দেশের মানুষকে ‘ইজ অফ লিভিং’ দাও, ‘ইজ অফ ডুয়িং বিজনেস’ দাও, ওড়ার জন্য মুক্ত আকাশ দাও। আপনারা দেখুন, জিও-স্পেশিয়াল ডেটা থেকে কত স্টার্ট-আপ উপকৃত হচ্ছে। আগে কাউকে মানচিত্র তৈরি করতে হলে সরকারের কাছে অনুমতি নিতে হত। আমরা প্রথম এই পদ্ধতি বদলেছি এবং আজ আমাদের স্টার্ট-আপ প্রাইভেট কোম্পানিগুলি এই ডেটার উন্নত প্রয়োগ করছে।
বন্ধুগণ,
বিশ্বকে ‘শূন্য’-এর ধারণা দিয়েছে যে ভারত, তা আজ আবার অপরিসীম উদ্ভাবনের দেশ হয়ে উঠছে। আজ ভারত শুধুই উদ্ভাবন বা ইনোভেট করছে না, ইন্ডোভেটও করছে। যখন আমি ‘ইন্ডোভেট’ শব্দটি বলছি, এর মানে হল, ‘ইনোভেটিং দ্য ইন্ডিয়ান ওয়ে’। ইন্ডোভেশনের মাধ্যমে আমরা যে সমাধান তৈরি করছি তা যতটা সুলভ হবে, তত বেশি ব্যবহারযোগ্য হবে, তত বেশি নমনীয় হবে। অর্থাৎ, ‘অ্যাফোর্ডেবল, অ্যাক্সেসেবল অ্যান্ড অ্যাডাপ্টেবল’। আমরা এই সমাধানগুলির ‘গেটকিপিং’ করিনি। আমরা গোটা বিশ্বকে তা উপহার দিয়েছি। এখন বিশ্ব একটি নিরাপদ এবং সাশ্রয়যোগ্য ডিজিটাল লেনদেনের ব্যবস্থা চাইছিল। আমরা ইউপিআই ব্যবস্থা গড়ে তুলেছি। আমি একটু আগে প্রফেসর কার্লোস মন্টেস-এর কথা শুনছিলাম। তিনি ইউপিআই-এর মতো প্রযুক্তিকে জন-বান্ধব ও অত্যন্ত কার্যকর হিসেবে ব্যবহৃত হতে দেখেছেন। আজ ফ্রান্স, সংযুক্ত আরব আমিরশাহী ও সিঙ্গাপুরের মতো কয়েকটি দেশ আমাদের ইউপিআই-কে তাঁদের নিজস্ব ফিনান্সিয়াল ইকো-সিস্টেমের অংশ করে নিয়েছে। আজ আমাদের ডিজিটাল পাবলিক ইনফ্রাস্ট্রাকচার, ইন্ডিয়া স্ট্যাক-এর সঙ্গে যুক্ত হওয়ার জন্য বিশ্বের অনেক দেশ চুক্তিবদ্ধ হচ্ছে। কোভিড বিশ্বব্যাপী মহামারীর সময় আমাদের আবিষ্কৃত টিকা বিশ্বের বিভিন্ন দেশে ভারতের ‘কোয়ালিটি হেলথ কেয়ার সলিউশন’-এর মডেল তুলে ধরেছে। আমরা ‘আরোগ্য সেতু’ অ্যাপটিকেও সবার জন্য উন্মুক্ত করে দিয়েছি যাতে বিশ্ববাসী এর দ্বারা উপকৃত হন। আজ মহাকাশ প্রযুক্তির ক্ষেত্রেও ভারত একটি বড় শক্তি। আমরা অন্যান্য দেশের মহাকাশ আকাঙ্ক্ষাকে বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে সাহায্য করছি। ভারত কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তাকে জনগণের কাজে লাগানোর দায়িত্ব পালন করছে এবং নিজেদের অভিজ্ঞতা ও দক্ষতাকে বিশ্বের সামনেও উন্মুক্ত করছে।
বন্ধুগণ,
আইটিভি নেটওয়ার্ক আজ বেশ কিছু ফেলোশিপ শুরু করেছে। ভারতের নবীন প্রজন্ম বিকশিত ভারতের সবচাইতে বড় সুবিধাভোগী এবং সবচাইতে বেশি সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা এই যুব সম্প্রদায়। সেজন্য তাঁদেরকেই সবচাইতে বেশি অগ্রাধিকার দেওয়া হচ্ছে। জাতীয় শিক্ষা নীতিতে শিশুদের বিনামূল্যে পুস্তক বিতরণের মাধ্যমে আরও এগিয়ে গিয়ে ভাবনার সুযোগ তাদের হাতে তুলে দিয়েছে। মাধ্যমিক স্তর থেকেই এই শিশুরা কোডিং শিখে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা এবং ডেটা সায়েন্সের ক্ষেত্রের জন্য প্রস্তুতি নিতে পারবে। অটল টিঙ্কারিং ল্যাবস শিশুদের সামনে অত্যাধুনিক প্রযুক্তির ডালা খুলে দিয়েছে। সেজন্য এ বছরের বাজেটে আমরা ৫০ হাজার নতুন অটল টিঙ্কারিং ল্যাবস নির্মাণের কথা ঘোষণা করেছি।
বন্ধুগণ,
সংবাদের বিশ্বে আপনারা ভিন্ন ভিন্ন এজেন্সির গ্রাহক ছিলেন। এর ফলে আপনারা উন্নত নিউজ কভারেজ দেখতে পান। এরকমই গবেষণার ক্ষেত্রে ছাত্রছাত্রীদের যত বেশি সম্ভব তথ্যের ভাণ্ডারের প্রয়োজন হয়। এজন্য আগে তাঁরা বেশি দাম দিয়ে ভিন্ন ভিন্ন জার্নালের গ্রাহক হতেন। আমাদের সরকার সমস্ত গবেষকদের এই চিন্তা থেকে রেহাই দিয়েছে। আমরা ‘ওয়ান নেশন ওয়ান সাবস্ক্রিপশন’ চালু করেছি। এর ফলে দেশের প্রত্যেক গবেষক বিশ্বের প্রসিদ্ধ সমস্ত জার্নাল বিনামূল্যে দেখতে পাবেন। এক্ষেত্রে সরকার ৬ হাজার কোটি টাকারও বেশি খরচ করতে চলেছে। আমরা এটা নিশ্চিত করতে চাই যে প্রত্যেক গবেষক অত্যাধুনিক গবেষণার সুবিধা পান। ডঃ ব্রায়ান গ্রিন আইআইটি-র ছাত্রছাত্রীদের সঙ্গে দেখা করেছেন, তেমনই মহাকাশচারী মাইক মাসিমিনো সেন্ট্রাল স্কুলের ছাত্রছাত্রীদের সঙ্গে দেখা করে তাঁদের অভিজ্ঞতার কথা শুনিয়েছেন। সেদিন দূরে নেই যখন ভবিষ্যতে মহাকাশ থেকে শুরু করে বায়ো-টেক, কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা থেকে শুরু করে অন্য যে কোনো বড় উদ্ভাবনের ক্ষেত্রে নেতারা ভারতের কোনো ছোট স্কুল থেকে বেরিয়ে আসবে।
বন্ধুগণ,
অদূর ভবিষ্যতেই ভারতের ত্রিবর্ণ রঞ্জিত জাতীয় পতাকা যেন প্রত্যেক আন্তর্জাতিক মঞ্চে পতপত করে উড়তে থাকে, এটাই আমাদের আকাঙ্ক্ষা, এটাই আমাদের লক্ষ্য।
বন্ধুগণ,
এটা ছোট ভাবা আর ছোট পদক্ষেপ নেওয়ার সময় নয়। আমি অত্যন্ত আনন্দিত যে একটি সংবাদমাধ্যম রূপে আপনারা এই ভাবনাকে বুঝেছেন। ১০ বছর আগে পর্যন্ত আপনারা ভাবতেন যে দেশের ভিন্ন ভিন্ন রাজ্যে পৌঁছতে হবে। আজ আপনারা আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রে পৌঁছনোর সাহস অর্জন করেছেন। এই প্রেরণা, এই পণ আজ দেশের প্রত্যেক নাগরিকের এবং প্রত্যেক নতুন শিল্পোদ্যোগীর প্রেরণা হয়ে উঠুক। আমি স্বপ্ন দেখি যে বিশ্বের প্রতিটি বাজারে, প্রত্যেক ড্রয়িং রুমে কিংবা প্রতিটি পরিবারের ডাইনিং টেবিলে কোনও না কোনও ভারতীয় ব্র্যান্ড থাকবে। ‘মেড ইন ইন্ডিয়া’ যেন বিশ্বের বিশ্বস্ততার প্রতীক হয়ে ওঠে। কেউ অসুস্থ হলে তাঁদের মাথায় যেন ‘হিল ইন ইন্ডিয়া’র ভাবনা জেগে ওঠে। তেমনই বিয়ে করতে হলে সবার আগে যেন সবাই ভাবেন ‘ওয়েড ইন ইন্ডিয়া’, বেড়াতে গেলে তালিকায় সবার ওপরে যেন ভারতকে রাখেন। সস্তায় কনফারেন্স কিংবা একজিবিশন আয়োজন করতে চান অথবা কোনও কনসার্টের আয়োজন করতে চান, তাঁরা যেন সবার আগে ভারতকে বেছে নেন। এই শক্তি, এই ইতিবাচক ভাবনা আগে আমাদের নিজেদের মনে জাগিয়ে তুলতে হবে। এক্ষেত্রে আপনাদের নেটওয়ার্ক, আপনাদের চ্যানেলও বড় ভূমিকা পালন করতে পারে। এক্ষেত্রে অনেক অনন্ত সম্ভাবনা রয়েছে। শুধু আমাদের নিজেদের সাহস ও সঙ্কল্প শক্তি নিয়ে একে বাস্তবে রূপান্তরিত করতে হবে।
বন্ধুগণ,
ভারত আগামী ২৫ বছরে উন্নত ভারত হিসেবে গড়ে ওঠার সঙ্কল্প নিয়ে এগিয়ে চলেছে। আপনারাও মিডিয়া হাউজ রূপে নিজেদেরকে বিশ্বমঞ্চে নিয়ে যেতে হবে এমন সঙ্কল্প নিয়ে এগিয়ে যান। আমার দৃঢ় বিশ্বাস যে আপনারা অবশ্যই সফল হবেন। আমি আরেকবার আই নেটওয়ার্কের সম্পূর্ণ টিমকে অনেক অনেক শুভকামনা জানাই। দেশের বিভিন্ন প্রান্ত ও বিশ্বের নানা দেশ থেকে যত অংশগ্রহণকারী এখানে এসেছেন, আমি তাঁদেরকে অভিনন্দন জানাই। তাঁদের ভাবনাচিন্তা অবশ্যই একটি ইতিবাচক ভাবনাকে শক্তি যুগিয়েছে। আমি এজন্য আপনাদেরকে ধন্যবাদ জানাই; কারণ ভারতের গৌরব বৃদ্ধি হলে, প্রত্যেক ভারতবাসীর মনে আনন্দ হয়, গর্ব হয়। আর সেজন্য তাঁদের সবাইকে অনেক অনেক ধন্যবাদ জানাই। নমস্কারম।
(প্রধানমন্ত্রী প্রদত্ত ভাষণের কিছুটা অংশ গুজরাটিতে এবং বাকি অংশটি হিন্দিতে ছিল। এখানে তার ভাবানুবাদ করা হয়েছে।)
SC/SB/DM/
(Release ID: 2111528)
Read this release in:
Telugu
,
English
,
Hindi
,
Marathi
,
Punjabi
,
Gujarati
,
Urdu
,
Assamese
,
Manipuri
,
Tamil
,
Kannada
,
Malayalam