প্রধানমন্ত্রীরদপ্তর
azadi ka amrit mahotsav

প্রধানমন্ত্রী শ্রী নরেন্দ্র মোদী পরীক্ষা পে চর্চা ২০২৫-এ ছাত্র ছাত্রীদের সঙ্গে আলাপচারিতা করলেন

Posted On: 10 FEB 2025 3:14PM by PIB Kolkata

নতুন দিল্লি, ১০ ফেব্রুয়ারি, ২০২৫

 

 

প্রধানমন্ত্রী শ্রী নরেন্দ্র মোদী নতুন দিল্লির সান্ডার নার্সারি-তে পরীক্ষা পে চর্চা (পিপিসি)-র অষ্টম সংস্করণে ছাত্র-ছাত্রীদের সঙ্গে আলাপচারিতা করলেন। প্রধানমন্ত্রী এই অনানুষ্ঠানিক আলাপচারিতায় সারা দেশ থেকে আসা ছাত্র-ছাত্রীদের সঙ্গে একাধিক বিষয়ে আলোচনা করলেন। তিনি তিলের সন্দেশ বিতরণ করেন, যা শীতকালে শরীর গরম রাখতে চিরকাল খাওয়া হয়।

 

লালন থেকে উত্তরণ

 

পুষ্টি বিষয়ে শ্রী মোদী বলেন, রাষ্ট্রসঙ্ঘ ভারত থেকে প্রস্তাব পেয়ে ২০২৩-কে ‘আন্তর্জাতিক মিলেট বর্ষ’ হিসেবে ঘোষণা করেছিল এবং সারা বিশ্বে এর প্রচার করেছিল। তিনি আরও বলেন, ভারত সরকার জোরালোভাবে আবেদন জানায় যে, পুষ্টি বিষয়ে অনেক বেশি সচেতনতা থাকা দরকার, কারণ সঠিক পুষ্টিই অনেক রোগ প্রতিরোধ করতে সাহায্য করে। প্রধানমন্ত্রী বলেন, মিলেট ভারতে সুপারফুড হিসেবে পরিচিত। ভারতে অনেক শস্য এবং ফল আমাদের ঐতিহ্যের সঙ্গে জড়িত। তিনি উদাহরণ দিয়ে বলেন, প্রত্যেকটি নতুন শস্য প্রথমেই দেওয়া হয় ভগবানকে এবং প্রত্যেকটি উৎসবই ভগবানের প্রতি নিবেদিত। তিনি আরও বলেন, ঈশ্বরকে দেওয়া অর্ঘ্য প্রসাদ হিসেবে বিতরণ করা হয়। শ্রী মোদী ছোটদের মরশুমি ফল খাওয়ার পরামর্শ দেন। তিনি ছোটদের জাঙ্ক ফুড, তেলেভাজা এবং ময়দার তৈরির খাবার পরিহার করতে বলেন। সঠিকভাবে খাবার খাওয়ার গুরুত্বের বিষয়ে প্রধানমন্ত্রী ছোটদের বলেন, গলাধঃকরণ করার আগে অন্তত ৩২ বার মুখের খাবারকে চিবোতে হবে। তিনি ছোটদের বলেন, জল খাওয়ার সময়ে অল্প অল্প করে চুমুক দিতে হবে এবং জলের স্বাদ নিতে হবে। ঠিক সময়ে, ঠিক খাবারের ব্যাপারে শ্রী মোদী কৃষকদের উদাহরণ দেন, বলেন যে তাঁরা মাঠে যাওয়ার আগে ভালো করে প্রাতরাশ করেন এবং সূর্যাস্তের আগেই নৈশাহার সেরে নেন। তিনি ছাত্রদের এই একইরকম স্বাস্থ্যকর অভ্যাস অনুসরণ করতে বলেন। 

 

পুষ্টি এবং সুস্থতা

 

সুস্থতা নিয়ে আলোচনা করতে গিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, সুস্থতার অনুপস্থিতি মানেই এটা বোঝায় না যে একজন স্বাস্থ্যবান এবং তিনি ছোটদের সুস্থতার উপর জোর দিতে বলেন। তিনি আরও বলেন, ভালো করে ঘুম শরীরের সুস্থতা এবং ফিটনেসের জন্য জরুরি। তিনি বলেন, মানুষের সুস্থতায় ঘুমের গুরুত্ব নিয়ে অনেক গবেষণা হয়েছে। শ্রী মোদী মানবশরীরে সূর্যালোকের গুরুত্বের উপর জোর দিয়ে ছোটদের প্রতিদিন সকালে কয়েক মিনিটের জন্য সূর্যালোক গায়ে মাখার অভ্যাস গড়ে তুলতে বলেন। সূর্য ওঠার পর কোনো গাছের নীচে দাঁড়িয়ে গভীর শ্বাস নেওয়ার পরামর্শ দেন। প্রধানমন্ত্রী জানান, জীবনে পুষ্টির গুরুত্ব নির্ভর করে একজন কী, কখন, কেমনভাবে এবং কেন খাচ্ছের তার উপর। 

 

চাপ এড়াতে

 

চাপ নিয়ন্ত্রণ বিষয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, এটা দুর্ভাগ্যজনক যে আমাদের সমাজে এমন একটা বদ্ধমূল ধারণা আছে যে, দশ ক্লাস এবং বারো ক্লাসের স্কুলের পরীক্ষায় ভালো নম্বর না পেলে জীবন নষ্ট হয়ে গেল। তিনি বলেন, এতে শিশুদের উপর চাপ পড়ে। একটি ক্রিকেট ম্যাচে বলের উপর ব্যাটসম্যানের মনঃসংযোগের কথা উল্লেখ করে শ্রী মোদী ছোটদের ব্যাটসম্যানের মতো বাইরের চাপ এড়ানোর পরামর্শ দেন এবং মন দিতে বলেন লেখাপড়ার উপর। শুধুমাত্র সেটাই তাদের চাপমুক্ত করতে পারে। 

 

নিজেকে চ্যালেঞ্জ জানানো

 

ছাত্র-ছাত্রীদের ভালোভাবে প্রস্তুত হতে এবং প্রত্যেকবার নিজেদেরই চ্যালেঞ্জ জানিয়ে যেতে বলে প্রধানমন্ত্রী বলেন, অনেক মানুষ তাদের নিজেদের যুদ্ধ নিজেরা লড়ে না। তিনি আত্মসমীক্ষার গুরুত্ব নিয়ে বলেন, প্রত্যেককে আবেদন জানান যাতে তাঁরা মাঝে মাঝে নিজেদের প্রশ্ন করে যে তারা কী হতে চায়, কী পেতে চায় এবং কিসে তাদের সন্তুষ্টি আসবে। তিনি জোর দিয়ে বলেন, খবরের কাগজ অথবা টিভি-র মতো প্রতিদিনের বাইরের প্রভাবে মনঃসংযোগ যেন নষ্ট না হয়, বরং নিজেকে ঠিক সময়ে গুছিয়ে নেওয়া উচিত। প্রধানমন্ত্রী বলেন, অনেক মানুষ উদ্দেশ্যহীনভাবে নিজেদের মনকে চলতে দেয়। তিনি পরামর্শ দেন সিদ্ধান্ত গ্রহণে দোলাচলতা থাকা উচিত নয়। কোনো কিছুর উপর এমনভাবে মনঃস্থির করতে হবে যা তাদের চ্যালেঞ্জের মোকাবিলায় সাহায্য করবে। 

 

নেতৃত্বের কৌশল

 

কার্যকরী নেতৃত্ব বিষয়ে পরামর্শ চেয়ে করা এক ছাত্রের প্রশ্নের উত্তরে শ্রী মোদী বলেন, বাইরের চেহারা থেকে নেতাকে বোঝা যায় না, নেতা সেই যিনি নেতৃত্বদানের মাধ্যমে অপরের সামনে নজির রাখেন। এটা অর্জন করতে হলে নিজেদের পরিবর্তন করতে হবে এবং পরিবর্তন যেন ফুটে ওঠে তার ব্যবহারে। প্রধানমন্ত্রী বলেন, “নেতৃত্ব চাপিয়ে দেওয়া যায় না, আশপাশের লোকই মেনে নেয়”। তিনি বলেন, অন্যকে বলা পরামর্শ অনেক সময়ে গৃহীত হয় না। কিন্তু তার আচরণ গৃহীত হয়। তিনি এই সূত্রে একটি উদাহরণ দেন, বলেন, যদি কেউ পরিচ্ছন্নতা নিয়ে ভাষণ দেন কিন্তু নিজে তা পালন না করেন তারা কখনই নেতা হতে পারবেন না। শ্রী মোদী জোর দিয়ে বলেন যে, টিম ওয়ার্ক ও ধৈর্য নেতৃত্বের জন্য জরুরি। তিনি বলেন, কাউকে কাজ দিতে হলে দলের সদস্যদের সমস্যাগুলিকে বোঝা জরুরি এবং সঙ্কটে তাদের সাহায্য করার মাধ্যমে তাদের আত্মবিশ্বাস এবং নেতৃত্বের উপর আস্থা গড়ে তুলতে হবে। এইসূত্রে প্রধানমন্ত্রী তাঁর ছোটবেলার একটি গল্প বলেন, যেখানে একটি মেলায় ছেলেটি তার বাবা-মার হাত ধরে ছিল। শিশুটি বাবা-মায়ের হাত ধরে থাকতেই পছন্দ করতো, তাতে তার নিরাপত্তা এবং আস্থা নিশ্চিত হতো। এই আস্থাই নেতৃত্বের একটি গুরুত্বপূর্ণ গুণ। 

 

বই ছাড়িয়ে – ৩৬০০ অগ্রগতি

 

লেখাপড়ার সঙ্গে হবির ভারসাম্য বিষয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, সাধারণ বিশ্বাস একমাত্র লেখাপড়া করলেই সাফল্য পাওয়া যায়। কিন্তু ছাত্র-ছাত্রীরা রোবট নয়। প্রধানমন্ত্রী সার্বিক উন্নতির গুরুত্বের উপর জোর দেন। তিনি বলেন, শুধুমাত্র লেখাপড়ার মাধ্যমেই পরবর্তী ক্লাসে ওঠা যায় না। সার্বিক ব্যক্তিগত উন্নতির মধ্য দিয়েই তা সম্ভব হয়। অতীতের ঘটনার রেশ টেনে তিনি বলেন, ছোটবেলায় বাগান করা অপ্রাসঙ্গিক মনে হতে পারে, কিন্তু সার্বিক উন্নয়নে তার ভূমিকা আছে। প্রধানমন্ত্রী অভিভাবক এবং শিক্ষকদের ছোটদের শুধুমাত্র লেখাপড়ার মধ্যেই আটকে না রাখার পরামর্শ দেন, বলেন এতে বৃদ্ধি ব্যহত হয়। তিনি আরও বলেন, শিশুদের প্রয়োজন খোলামেলা পরিবেশ এবং এমন কাজ যেটা তারা ভালোবাসে। এতে তাদের লেখাপড়ার উন্নতি হয়। তিনি জোর দিয়ে বলেন, জীবনে পরীক্ষাই সব নয়। ছাত্র-ছাত্রীদের বলেন, এই মনোভাব গ্রহণ করলে পরিবার এবং শিক্ষকদের বোঝাতে সাহায্য হবে। প্রধানমন্ত্রী ব্যাখ্যা করে বলেন, তিনি বই পড়ার বিরুদ্ধে বলছেন না, বরং তিনি যত বেশি সম্ভব জ্ঞান আহরণের গুরুত্বের উপর জোর দেন। তিনি বলেন, পরীক্ষাই সব নয়, জ্ঞান এবং পরীক্ষা দুটি ভিন্ন বিষয়। 

 

ইতিবাচক সন্ধান

 

প্রধানমন্ত্রী বলেন, মানুষ অনেক সময়ে তাদেরকে দেওয়া পরামর্শ নিয়ে প্রশ্ন তোলেন। ভাবে কেনই বা এটা বলা হয়েছে, যদি এর ফেতর কোনো ভুল থাকে। এই ধরনের মনোভাবে অন্যকে সাহায্য করার ক্ষমতা বাধাপ্রাপ্ত হয়। বদলে তিনি অন্যের ভালো গুণগুলিকে চিহ্নিত করতে বলেন, যেমন ভালো গান গায়, পরিষ্কার জামাকাপড় পরে, এই ইতিবাচক গুণগুলি নিয়ে আলোচনা। এইধরনের মনোভাবে প্রকৃত আগ্রহ বোঝা যায় এবং সম্পর্ক বাড়ে। তিনি পরামর্শ দেন একসঙ্গে পড়বো বলে অন্যকে আহ্বান জানিয়ে সাহায্য করা যায়। প্রধানমন্ত্রী লেখার অভ্যাস তৈরি করার গুরুত্বের উপর আলোকপাত করেন। তিনি বলেন, যারা লেখার অভ্যাস গড়ে তোলে তারা তাদের ভাবনাকে গুছোতে পারে কার্যকরীভাবে। 

 

অনন্যতার সন্ধান

 

আমেদাবাদের একটি ঘটনার কথা উল্লেখ করেন প্রধানমন্ত্রী। যেখানে মনঃসংযোগের অভাবের কারণে একটি ছাত্রকে স্কুল থেকে বহিষ্কারও করা হচ্ছিল। কিন্তু সেই ছেলেটি টিংকারিং ল্যাবে সাফল্য পায় এবং একটি রোবোটিক্স প্রতিযোগিতায় জিতে যায়, দেখায় তার অনন্য শক্তি। প্রধানমন্ত্রী জোর দিয়ে বলেন, ছোটদের অনন্য প্রতিভা এবং শক্তির দিকটি চিহ্নিত করে তাকে উৎসাহ দেওয়াই শিক্ষকদের কাজ। শ্রী মোদী আত্মসমীক্ষা এবং সম্পর্ক বোঝার জন্য একটি পরীক্ষা করতে বলেন। তিনি বলেন, ছোটবেলার ২৫ থেকে ৩০টি বন্ধুর নাম মনে করে তাদের পুরো নাম, তাদের বাবা-মায়ের নাম লিখতে বলেন। এতে দেখা যাবে, আমরা যাদের খুব ঘনিষ্ঠ বন্ধু মনে করি, তাদের সম্পর্কে কত কম জানি আমরা। প্রধানমন্ত্রী মানুষের ভালো গুণগুলি চিহ্নিত করে অন্যের মধ্যে ইতিবাচক দিকটি খোঁজার অভ্যাস গড়ে তোলার পরামর্শ দেন। তিনি বলেন, এই অভ্যাস ব্যক্তিগত উন্নতির জন্য অত্যন্ত উপকারী। 

 

সময়কে নিয়ন্ত্রণ করো, জীবনকে নিয়ন্ত্রণ করো

 

সময় ব্যবস্থাপনা নিয়ে এক ছাত্রের প্রশ্নের উত্তরে শ্রী মোদী বলেন, প্রত্যেকের কাছে দিনের ২৪ ঘণ্টা আছে। তবে, কেউ কেউ তার মধ্যে অনেক কিছু করতে পারে, আবার কেউ ভাবে কিছুই তো হল না। তিনি সময় ব্যবস্থাপনার গুরুত্বের উপর আলোকপাত করেন বলেন, অনেকেই জানে না কিভাবে সময়কে ব্যবহার করা যায়। প্রধানমন্ত্রী সময়ের খেয়ার রাখার উপর পরামর্শ দেন। নির্দিষ্ট কোনো কাজ ঠিক করতে বলেন এবং প্রতিদিন কতটা এগোনো হল তা খতিয়ে দেখতে বলেন। তিনি এও বলেন, সমস্যা আছে এমন কাজ এড়িয়ে না গিয়ে তার মোকাবিলা করা গুরুত্বপূর্ণ। তিনি বলেন, কেউ যদি মনে করে এই কাজটা শক্ত তাহলে সেই কাজটাই হাতে নিয়ে তার মোকাবিলা করা উচিত। নিষ্ঠার সঙ্গে এইসব চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হলে যে কোনো ব্যক্তি বাধা সরিয়ে সাফল্য অর্জন করতে পারে। পরীক্ষার সময়ে নানা ভাবনা, নানা সম্ভাবনা, নানা প্রশ্নতে মনঃসংযোগ ব্যাহত হওয়ার বিষয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, সাধারণত ছাত্র-ছাত্রীরা নিজেদেরই ঠিকঠাক জানে না। বন্ধুবান্ধবের সঙ্গে গল্প করে, না পড়ার অজুহাত দেয়। তিনি বলেন, ছাত্র-ছাত্রীরা সাধারণভাবে যে অজুহাত দেয় তা হল খুব ক্লান্ত, এখন মন লাগছে না। প্রধানমন্ত্রী বলেন, এই ধরণের মনোবিক্ষেপ যেমন ফোন থেকে হয়, তাতে লেখাপড়ার মনঃসংযোগ ব্যাহত হয়। 

 

মুহূর্তে বাঁচো

 

প্রধানমন্ত্রী বলেন, এই মুহূর্তটাই সবচেয়ে বেশি মূল্যবান। একবার চলে গেলে তা গেলো। যদি সেটাকে ব্যবহার করা যায় তাহলে সেটা জীবনের অঙ্গ হয়ে যায়। তিনি বলেন, মৃদুমন্দ বাতাস বইলে সেটার দিকে মন দেওয়া এবং তা উপভোগ করা খুব জরুরি। 

 

ভাগ করে নেওয়ার শক্তি

 

লেখাপড়া করার সময়ে উদ্বেগ এবং অবসন্নতার মোকাবিলা করার বিষয়ে শ্রী মোদী বলেন, অবসন্নতা অনেক সময়ে পরিবারের সঙ্গে বিচ্ছিন্নতার ভাবনা থেকে শুরু হয় এবং ক্রমে সামাজিক মেলামেশা বন্ধ করে দেয়। তিনি বলেন, বেড়ে যাওয়ার আগে ব্যক্তিগত টানাপোড়েনের কথা প্রকাশ করে দেওয়া গুরুত্বপূর্ণ। প্রধানমন্ত্রী বলেন, আগেকার একান্নবর্তী পরিবারে অন্যদের সঙ্গে খোলাখুলি আলোচনায় নামসিক চাপ কমতো, ভাবানুতা তৈরি হতো না। কিভাবে তাঁর শিক্ষকরা তাঁর হাতের লেখা ভালো করার জন্য অনেক খেটেছিলেন, যা তাঁকে গভীরভাবে স্পর্শ করেছিল তার কথা বলেন প্রধানমন্ত্রী। তিনি শিক্ষাদাতাদের প্রকৃত যত্নের গুরুত্বের উপর জোর দেন। প্রধানমন্ত্রী বলেন, এই যত্ন এবং মনোযোগ একজন ছাত্রের সুস্থতা এবং লেখাপড়ার সাফল্যকে অনেকটাই প্রভাবিত করে। 

 

আগ্রহ যেদিকে সেদিকে যাওয়া

 

শ্রী মোদী নির্দিষ্ট কেরিয়ার বাছতে শিশুদের উপর বাবা-মার চাপের উল্লেখ করেন। তিনি বলেন, বাবা-মায়ের চাহিদা অনেক সময়ে তৈরি হয় অন্যের ছেলে-মেয়ের সঙ্গে তুলনা করে। যাতে তাঁদের অহংকার এবং সামাজিক মর্যাদা আঘাত পায়। তিনি অভিভাবকদের পরামর্শ দেন, কোনো জায়গায় নিজেদের ছেলে-মেয়েদের মডেল হিসেবে তুলে ধরবেন না। ভালোবাসুন এবং তাদের ক্ষমতাকে স্বীকার করুন। তিনি পূর্বের শিশুটির উদাহরণ দেন যে, স্কুল থেকে বহিষ্কৃত হতে চলেছিল কিন্তু সে রোবোটিক্সে সাফল্য পায়। তার থেকে বোঝা যায় প্রত্যেকটি শিশুরই একটি অনন্য প্রতিভা আছে। তিনি ক্রিকেট কিংবদন্তী সচিন তেন্ডুলকরেরও উদাহরণ দেন। তিনি অভিভাবকদের নিজেদের ছেলে-মেয়েদের ক্ষমতাটুকু বুঝে তাকে লালনপালন করার পরামর্শ দেন, যদি লেখাপড়ার দিকে ঝোঁক নাও থাকে। তিনি দক্ষতা উন্নয়নের গুরুত্বের উপর জোর দেন। তিনি বলেন, প্রধানমন্ত্রী না হলে তিনি দক্ষতা উন্নয়ন দপ্তর বেছে নিতেন। ছেলে-মেয়েদের ক্ষমতার উপর জোর দিয়ে অভিভাবকরা তাদের উপর থেকে চাপ কমিয়ে তাদের বেড়ে উঠতে সাহায্য করতে বলেন। 

 

থামুন, ভাবুন, ঠিক করুন

 

প্রধানমন্ত্রী বর্ণনা করেন যে কিভাবে বিভিন্ন শব্দ চিহ্নিত করলে মনঃসংযোগের সুবিধা হয়। তিনি জানান, প্রাণায়ামের মতো শ্বাসপ্রশ্বাসে ব্যায়াম এক অন্য ধরনের শক্তি তৈরি করে, যার থেকে উদ্বেগ কমায়। প্রধানমন্ত্রী দুই নাসারন্ধ্র দিয়েই শ্বাসপ্রশ্বাসে ভারসাম্যের কৌশল শেখান, যাতে শরীর কয়েক সেকেন্ডে নিয়ন্ত্রণে আসে। তিনি বলেন, কিভাবে ধ্যান এবং শ্বাস নিয়ন্ত্রণের শিক্ষা চাপ কমায় এবং মনঃসংযোগে সাহায্য করে।

 

নিজের ক্ষমতা বুঝুন, লক্ষ্য পূরণ করুন

 

ইতিবাচক থাকার এবং ছোট ছোট জয় সুখ খুঁজে পাওয়ার বিষয়ে শ্রী মোদী বলেন, অনেক সময়ে মানুষ নিজেদের ভাবনার কারণে অথবা অপরের প্রভাবে নেতিবাচক হয়ে যান। একটি ছাত্র যার লক্ষ্য ছিল দশম শ্রেণীতে ৯৫ শতাংশ কিন্তু পেয়েছে ৯৩ শতাংশ যার থেকে হতাশা এসেছে তার সঙ্গে কথায় প্রধানমন্ত্রী এটাকেই সাফল্য বলেন এবং উঁচু লক্ষ্য রাখার জন্য ছাত্রটিকে অভিনন্দন জানান। তিনি বলেন, লক্ষ্য বড় হওয়া উচিত তবে, সেই সঙ্গে বাস্তবোচিত হওয়াও উচিত। শ্রী মোদী ইতিবাচক পরিপ্রেক্ষিতে সাফল্যকে দেখতে উৎসাহ দেন। নিজের ক্ষমতা বুঝে এবং লক্ষ্য পূরণে কাছাকাছি পৌঁছতে প্রয়াসের প্রশংসা করেন। 

 

প্রত্যেক শিশুই অনন্য

 

পরীক্ষার সময়ে স্বাস্থ্য ভালো রাখার বিষয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, প্রাথমিক কাজটি ছাত্রদের নয়, বরং বেশি করে তাদের পরিবারের। তিনি বলেন, অনেক অভিভাবক নির্দিষ্ট কেরিয়ার তৈরির জন্য ছাত্রদের উপর চাপ সৃষ্টি করেন, যেমন ইঞ্জিনিয়ারিং অথবা মেডিসিন। যদিও সেই শিশুটির হয় তো আগ্রহ আছে কলা শিল্পে। এই লাগাতার চাপে শিশুটির জীবনই চাপে পড়ে যায়। তিনি অভিভাবকদের তাঁদের সন্তানদের ক্ষমতা এবং আগ্রহ বুঝে তাদের অগ্রগতির প্রতি লক্ষ্য রাখতে এবং সাহায্য করতে পরামর্শ দেন। উদাহরণ স্বরূপ, যদি কোনো শিশু খেলায় আগ্রহ দেখায় অভিভাবকদের উচিত তাকে নানাধরনের খেলাধুলো দেখতে উৎসাহ দেওয়া। প্রধানমন্ত্রী অভিভাবকদেরও আবেদন জানান যাতে তারা এমন একটি পরিবেশ তৈরি না করেন, যেখানে শীর্ষ স্থানাধিকারী ছাত্ররাই মনোযোগ পায় এবং অন্যরা অবহেলিত হয়। তিনি ছাত্রদের মধ্যে তুলনা না টানার এবং প্রত্যেক ছাত্রের ক্ষমতা অনুযায়ী তাকে উৎসাহিত করার গুরুত্বের উপর জোর দেন। তিনি ছাত্রদের মনে করিয়ে দেন, উন্নতি করার এবং ভালো ফল করার জন্য নিশ্চয়ই চেষ্টা করতে হবে, কিন্তু এটাও বুঝতে হবে যে জীবনে শিক্ষাই সব কিছু নয়। 

 

আত্মপ্রেরণা

 

আত্মপ্রেরণা বিষয়ে প্রধানমন্ত্রী কখনও নিজেকে বিচ্ছিন্ন না করার পরামর্শ দেন এবং পরিবার এবং বয়ঃজ্যেষ্ঠদের সঙ্গে ভাবনা ভাগ করে নিয়ে প্রেরণা খোঁজার উপর গুরুত্ব দেন। ১০ কিলোমিটার সাইক্লিং করার মতো ছোট ছোট লক্ষ্যের সঙ্গে লড়াই করার মাধ্যমে নিজের আত্মবিশ্বাস বাড়ানো এবং সফল হওয়ার সুখ উপভোগ করার পরামর্শ দেন তিনি। শ্রী মোদী বলেন, এই ছোট ছোট পরীক্ষানিরীক্ষাগুলি একজনকে তার ব্যক্তিগত সীমাবদ্ধতা পেরিয়ে বর্তমানে বসবাস করতে সাহায্য করে। অতীত থাকে অতীতেই। প্রধানমন্ত্রী বলেন, তিনি মানুষের কাছ থেকে, ১৪০ কোটি ভারতীয়ের কাছ থেকে প্রেরণা পান। তিনি বলেন, যখন তিনি ‘পরীক্ষা পে চর্চা’ ভেবেছিলেন তখন অজয়ের মতো ছেলে তাঁদের গ্রামে এটিকে কবিতায় রূপান্তরিত করে। সে ভাবে, এইরকম কাজ চালিয়ে যাওয়া উচিত। এইরকম অনেক কিছু প্রেরণার পাওয়ার বিষয় আছে আমাদের চারপাশে। আত্মস্থ করার বিষয়ে শ্রী মোদী বলেন, সকালে তাড়াতাড়ি ওঠার মতো পরামর্শই যথেষ্ট নয়, যদি না তা কাজে লাগানো যায়। তিনি বলেন, শেখা বিষয়গুলি কাজে লাগাতে হবে এবং ব্যক্তিগত পরীক্ষানিরীক্ষার মাধ্যমে নিজেকে ধারালো করে তুলতে হবে। প্রধানমন্ত্রী নিজেকে ল্যাবরেটরি হিসেবে ভেবে এইসব নীতিগুলির পরীক্ষা করলে একজন সত্যি করেই এর সঙ্গে মেলাতে পারবে এবং উপকার পাবে। শ্রী মোদী বলেন, বেশিরভাগ মানুষই নিজের সঙ্গে প্রতিযোগিতা না করে অপরের সঙ্গে প্রতিযোগিতা করে। এমন লোকের সঙ্গে তুলনা করে নিজের যে হয়তো তার থেকে কম ক্ষমতাসম্পন্ন, ফলে হতাশার সৃষ্টি হয়। তিনি বলেন, আত্মপ্রতিযোগিতা অদম্য আত্মবিশ্বাসের জন্ম দেয়। কিন্তু অন্যের সঙ্গে তুলনা করলে অনুৎসাহ জাগে।

 

ব্যর্থতাই সাফল্যের সমান

 

ব্যর্থতাকে কিভাবে জয় করা যায়, সেই বিষয়ে শ্রী মোদী বলেন, যদি ৩০ থেকে ৪০ শতাংশ ছাত্র-ছাত্রী তাদের দশম অথবা দ্বাদশ শ্রেণীর পরীক্ষায় ব্যর্থ হয়, তাহলে জীবন সেখানেই শেষ হয়ে যায় না। তিনি বলেন, ঠিক করতে হবে জীবন না শিক্ষা কোন সাফল্যটা গুরুত্বপূর্ণ। তিনি ব্যর্থতাকে শিক্ষক হিসেবে দেখার গুরুত্ব দেন। এই সূত্রে তিনি ক্রিকেটের উদাহরণ দেন যেখানে খেলোয়াড়রা নিজেদের ভুলভ্রান্তি খতিয়ে দেখে আরও উন্নতির চেষ্টা করে। প্রধানমন্ত্রী জীবনকে তাঁর সার্বিকরূপে দেখার পরামর্শ দেন, পরীক্ষার লেন্স দিয়ে নয়। তিনি বলেন, ভিন্নভাবে সক্ষমরা অনেক সময়ে অসাধারণ শক্তি ধরে এবং প্রত্যেক ব্যক্তির একটা নিজস্ব ক্ষমতা আছে। তিনি শুধুমাত্র শিক্ষাগত সাফল্যে জোর দেওয়া থেকে এই শক্তিগুলির ভিত্তিতে কাজ করাতে গুরুত্ব দেওয়ার পরামর্শ দেন। তিনি বলেন, ভবিষ্যতে একজনের জীবন এবং ক্ষমতাই তার সাফল্যের কথা বলে, শুধুমাত্র শিক্ষায় প্রাপ্ত নম্বর নয়। 

 

প্রযুক্তি ব্যবহার

 

আমরা সকলেই সৌভাগ্যবান বিশেষ করে এমন একটা সময়ে যখন প্রযুক্তি সর্বক্ষেত্রে এবং অত্যন্ত প্রভাবশালী। প্রধানমন্ত্রী বলেন, প্রযুক্তি থেকে মুখ ঘুরিয়ে থাকার প্রয়োজন নেই বরং ব্যক্তিকে ঠিক করতে হবে তারা অকাজে সময় নষ্ট করবে না নিজেদের আগ্রহ নিয়ে আরও এগিয়ে যাবে। এই করলে প্রযুক্তি ক্ষতিকারক নয়, বরং শক্তি। শ্রী মোদী বলেন, গবেষক এবং উদ্ভাবকরা সমাজের ভালোর জন্য প্রযুক্তির উন্নতি করছেন। তিনি মানুষকে প্রযুক্তির ব্যবহার করা এবং বোঝার পরামর্শ দেন। কিভাবে একজন যে কোনো কাজে তার সেরাটা দিতে পারে সে বিষয়ে শ্রী মোদী জোর দেন লাগাতার উন্নতি করে চলার উপর। তিনি বলেন, সেরাটা দেওয়ার প্রথম শর্তটাই হল প্রতিদিন আরও বেশি করে উন্নতি করা।

 

কিভাবে অভিভাবকদের বোঝাবে?

 

ব্যক্তিগত আগ্রহ এবং পরিবারের পরামর্শের ভেতর থেকে বেছে নেওয়া টানাপোড়েন বিষয়ে শ্রী মোদী বলেন, পারিবারিক পরামর্শ বোঝাটা জরুরি। সেইসঙ্গে তাঁদের উপদেশ মেনে সাহায্য নিয়ে কিভাবে এগোতে হবে সেটা ঠিক করাও জরুরি। প্রকৃত আগ্রহ দেখিয়ে এবং বিকল্প রাস্তাগুলি ভালোভাবে আলোচনা করে পরিবারগুলি ক্রমে বুঝতে পারবে এবং একজনের প্রত্যাশা পূরণে সাহায্য করবে। 

 

পরীক্ষার চাপ কাটাতে

 

ঠিক সময়ে পরীক্ষায় খাতায় উত্তর দেওয়ার কাজ না হওয়ার বিষয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, পূর্বের বছরগুলির প্রশ্নপত্র নিয়ে অনুশীলন করে কিভাবে সময়ের মধ্যে ছোট করে সঠিক উত্তর দেওয়া যায় তার অনুশীলন চালাতে হবে। যে প্রশ্নগুলি সহজ তাতে বেশি নজর দিতে হবে। অচেনা বা শক্ত প্রশ্নগুলির উপর সময় নষ্ট না করা উচিত। তিনি বলেন, নিয়মিত অনুশীলনে পরীক্ষায় সময় মতো উত্তর দেওয়া সহজ হবে।

 

প্রকৃতির প্রতি ভালোবাসা

 

প্রধানমন্ত্রী জলবায়ু পরিবর্তন নিয়ে বলেন, এবং এই বিষয়ে তরুণ প্রজন্মের উদ্বেগের প্রশংসা করেন। তিনি জানান, বিশ্বের বেশিরভাগ উন্নতির ফলে অপব্যবহারে সংস্কৃতি তৈরি হয়েছে, যেখানে মানুষ পরিবেশ রক্ষার তুলনায় ব্যক্তিগতলাভে অগ্রাধিকার দেয়। শ্রী মোদী বলেন, মিশন লাইফ যা এমন একটি জীবনশৈলী তৈরি করে যা প্রকৃতিকে লালন করে ও রক্ষা করে। তিনি ভারতের সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যের উল্লেখ করেন, যেমন পৃথ্বীমার কাছে ক্ষমা চাওয়া, নদী এবং গাছকে পুজো করা। যার থেকে বোঝা যায় প্রকৃতির প্রতি শ্রদ্ধা। তিনি “এক পেড় মা কে নাম” অভিযানের উল্লেখ করে মানুষকে মায়ের নামে গাছ রোপণ করার পরামর্শ দেন। এই উদ্যোগ নিজেকে একাত্ম করার এবং মালিকানার অনুভব জাগে, যার থেকে প্রকৃতি রক্ষা পায়।

 

নিজের সবুজ সর্গ নির্মাণ

 

শ্রী মোদী ছাত্র-ছাত্রীদের নিজেদের গাছ রোপণ করার এবং তাকে জল কিভাবে দিতে হবে তার পরামর্শ দেন। তিনি বলেন, একটি মাটির পাত্র জল ভরে গাছের কাছে রাখতে হবে এবং সেটিকে মাসে একবার ভরতে হবে। এতে গাছটি দ্রুত বাড়বে, খুব কম জল ব্যবহার করে। প্রধানমন্ত্রী প্রত্যেককে অভিনন্দন জানান এবং তাদের অংশগ্রহণের জন্য কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন।

 

 

SC/AP/SKD


(Release ID: 2101569) Visitor Counter : 8