প্রধানমন্ত্রীরদপ্তর
সংসদে রাষ্ট্রপতির অভিভাষণের উপর ধন্যবাদ জ্ঞাপক প্রস্তাব সংক্রান্ত আলোচনায় লোকসভায় প্রধানমন্ত্রীর জবাবি ভাষণ
Posted On:
04 FEB 2025 9:13PM by PIB Kolkata
নয়াদিল্লি, ০৪ ফেব্রুয়ারী, ২০২৫
প্রধানমন্ত্রী শ্রী নরেন্দ্র মোদী আজ লোকসভায় রাষ্ট্রপতির অভিভাষণের উপর ধন্যবাদ জ্ঞাপক প্রস্তাব সংক্রান্ত আলোচনায় জবাবি ভাষণ দিলেন। এই আলোচনায় দলমত নির্বিশেষে সাংসদরা যেভাবে অংশ নিয়েছেন এবং স্পষ্টভাবে নিজেদের মতামত জানিয়েছেন, তা সুস্থ গণতন্ত্রের প্রতিফলন বলে প্রধানমন্ত্রী মনে করেন। ধারাবাহিকভাবে চোদ্দবার রাষ্ট্রপতির অভিভাষণের উপর আলোচনায় জবাবি ভাষণ দেওয়ার সুযোগের জন্য তিনি দেশের নাগরিকদের ধন্যবাদ জানিয়েছেন।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ২০২৫ – এ একবিংশ শতাব্দীর এক-চতুর্থাংশ সময়কাল পূর্ণ হচ্ছে। ঊনবিংশ শতকে স্বাধীনতা পরবর্তী অধ্যায় এবং একবিংশ শতকের প্রথম ২৫ বছরের সাফল্য যাচাই করার সময় আসবে একদিন। রাষ্ট্রপতির ভাষণ আগামী ২৫ বছরের যাত্রায় নতুন প্রত্যয় এবং উন্নত ভারতের ছবি স্পষ্ট করে তুলেছে বলে প্রধানমন্ত্রী মন্তব্য করেছেন।
বিগত ১০ বছরে ২৫ কোটি মানুষ দারিদ্র্যের ছায়া থেকে বেরিয়ে এসেছেন এবং এক্ষেত্রে দরিদ্র ও অভাবী মানুষের জন্য সরকারি কর্মসূচির রূপায়ণে সংবেদনশীলতা ও আন্তরিকতা বড় ভূমিকা নিয়েছে বলে প্রধানমন্ত্রী উল্লেখ করেন। বাস্তব পরিস্থিতি সম্পর্কে ওয়াকিবহাল মানুষ তৃণমূল স্তরের নাগরিকদের প্রতি যত্নবান হলেই এমনটা হওয়া সম্ভব বলে তাঁর মন্তব্য। প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, তাঁর সরকার দরিদ্রদের জন্য ভুয়ো শ্লোগান তৈরি করেনি, যথার্থ অর্থেই প্রকৃত উন্নয়নের দিশায় কাজ করেছে।
বর্ষার সময় কাঁচা বাড়িতে থাকার চূড়ান্ত অসুবিধার বিষয়টি মনে রেখেই তাঁর সরকার এখনও পর্যন্ত দরিদ্রদের জন্য ৪ কোটি বাড়ি নির্মাণ করেছে বলে প্রধানমন্ত্রী জানান। মহিলাদের অসুবিধা দূর করতে তৈরি করা হয়েছে ১২ কোটিরও বেশি শৌচালয়। ‘হর ঘর জল’ প্রকল্পের আওতায় গত ৫ বছরে ১২ কোটি পরিবারে নলবাহিত জল সংযোগ পৌঁছে দেওয়া হয়েছে বলে তিনি উল্লেখ করেন। এক্ষেত্রে স্বাধীনতার পর দীর্ঘদিন তেমন মনোযোগই দেওয়া হয়নি বলে প্রধানমন্ত্রী উল্লেখ করেন।
শ্রী মোদী আরও বলেন, আগে সরকার ১ টাকা খরচ করলে লক্ষ্যবিন্দুতে পৌঁছতো মাত্র ১৫ পয়সা। এই প্রবণতা দূর করতে সরকার উদ্যোগী হয়েছে। উন্নয়নের পাশাপাশি, সাধারণ নাগরিকের আর্থিক সঞ্চয় বৃদ্ধিতে জন ধন – আধার – মোবাইল ত্রয়ী বিশেষভাবে কার্যকর হয়ে উঠেছে এবং সরাসরি সুবিধা হস্তান্তর প্রণালীর মাধ্যমে সুবিধাপ্রাপকদের ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টে মোট ৪০ লক্ষ কোটি টাকা পাঠানো সম্ভব হয়েছে। এই প্রণালী চালু হওয়ার আগে ১০ কোটি ভুয়ো প্রাপক সরকারি প্রকল্পের সুবিধা আত্মসাৎ করত বলে প্রধানমন্ত্রী জানান। এখন তাঁরা চিহ্নিত হওয়ায় ৩ লক্ষ কোটি টাকা সাশ্রয় সম্ভব হয়েছে। সরকারি ক্রয়ের ক্ষেত্রে তথ্য প্রযুক্তির ব্যবহার ব্যয় সাশ্রয় এবং দুর্নীতি প্রতিরোধ করেছে বলে প্রধানমন্ত্রী মন্তব্য করেছেন। নতুন এই প্রক্রিয়ার সুবাদে সরকারের ১ কোটি ১৫ হাজার কোটি টাকা সাশ্রয় হয়েছে।
স্বচ্ছ ভারত অভিযানের সূচনার সময় অনেকে বিদ্রুপ করেছিলেন, কিন্তু সরকারের দৃঢ় পদক্ষেপে পরিচ্ছন্নতার এই অভিযান জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে বলে প্রধানমন্ত্রী মন্তব্য করেছেন। সরকারি দপ্তরের বর্জ্য বিক্রি বাবদ কোষাগারে ২ হাজার ৩০০ কোটি টাকা এসেছে বলে তিনি জানান।
জ্বালানী ক্ষেত্রে আমদানীর উপর নির্ভরশীলতা কমাতে সরকারের ইথানল মিশ্রণের কর্মসূচি পেট্রোল ও ডিজেল খাতে ব্যয় কমিয়েছে এবং ১ লক্ষ কোটি টাকা সাশ্রয় হয়েছে। এর সুবাদে কৃষকরা সরাসরি উপকৃত হয়েছেন বলে প্রধানমন্ত্রী উল্লেখ করেছেন।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, এক সময় একের পর এক দুর্নীতি সংবাদপত্রের শিরোনামে জায়গা করে নিত। সম্প্রতি ছবিটা বদলেছে। এখন সঞ্চিত অর্থ ব্যয় করা হচ্ছে সাধারণ মানুষের কল্যাণে।
সরকারের তহবিল এখন আর প্রাসাদ নির্মাণে নয়, দেশ গঠনে ব্যয় করা হচ্ছে বলে প্রধানমন্ত্রী মন্তব্য করেছেন। তিনি বলেন, ১০ বছর আগে পরিকাঠামো খাতে বাজেট বরাদ্দ ছিল ১.৮ লক্ষ কোটি টাকার আশেপাশে। এখন এক্ষেত্রে বরাদ্দ দাঁড়িয়েছে ১১ লক্ষ কোটি টাকায়। সড়ক, রেল এবং গ্রামাঞ্চলে রাস্তাঘাট নির্মাণ হচ্ছে দ্রুতগতিতে।
সরকারি কোষাগারে সঞ্চয়ের পরিমাণ যেমন গুরুত্বপূর্ণ, তেমনই গুরুত্বপূর্ণ সাধারণ মানুষ যাতে তার সুফল পান, তা নিশ্চিত করা। এই প্রসঙ্গে প্রধানমন্ত্রী আয়ুষ্মান ভারত প্রকল্পের কথা উল্লেখ করেন। তিনি বলেন, এই প্রকল্পের সুবাদে সাধারণ মানুষের ১.২ লক্ষ কোটি টাকা সাশ্রয় হয়েছে। জন ঔষধি কেন্দ্রগুলিতে ৮০ শতাংশ ছাড়ে ওষুধ পাওয়া যাচ্ছে। এরফলে, দরিদ্র পরিবারগুলির প্রায় ৩০ হাজার কোটি টাকা সাশ্রয় হয়েছে।
শ্রী মোদী বলেন, ইউনিসেফ – এর হিসেবানুযায়ী, উপযুক্ত শৌচালয় পরিষেবা থাকলে একটি পরিবারের বছরে ৭০ হাজার কোটি টাকা সাশ্রয় হয়। এক্ষেত্রেও স্বচ্ছ ভারত অভিযান অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ।
নলবাহিত জল পরিষেবা বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার স্বীকৃতি আদায় করে নিয়েছে বলে উল্লেখ করে শ্রী মোদী বলেন, এর ফলে রোগের প্রবণতা কমায় পরিবার প্রতি গড়ে ৪০ হাজার টাকা সাশ্রয় হচ্ছে।
সাধারণ মানুষের সাশ্রয়ের লক্ষ্যে সরকারের নিখরচায় খাদ্যশস্য প্রদান কর্মসূচির প্রসঙ্গও তুলে ধরেন প্রধানমন্ত্রী। পিএম সূর্যঘর প্রকল্পের আওতায় পরিবার প্রতি বার্ষিক ২৫-৩০ হাজার কোটি টাকা সাশ্রয় হচ্ছ বলে তিনি জানান। এলইডি বাল্ব জনপ্রিয় করে তোলায় সরকারের উদ্যোগের সুবাদে নাগরিকদের প্রায় ২০ হাজার কোটি টাকা খরচ কম হয়েছে বলে উল্লেখ করেন তিনি। সয়েল হেলথ কার্ড কৃষকদের বৈজ্ঞানিক পদ্ধতিতে চাষের সুযোগ করে দিয়েছে এবং প্রতি একরে ৩০ হাজার টাকা সাশ্রয় হচ্ছে বলে প্রধানমন্ত্রী জানান।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, বিগত ১০ বছরে সরকার আয়করের হার কমিয়েছে, যাতে মধ্যবিত্ত শ্রেণীর হাতে অর্থের সঞ্চয় হয়। ২০১৩-১৪’য় ২ লক্ষ টাকা পর্যয় আয়ে কর ছাড় মিলত, বর্তমানে এই সীমা হয়েছে ১২ লক্ষ টাকা। এর সঙ্গে ৭৫ হাজার টাকা স্ট্যান্ডার্ড ডিডাকশন ধরলে বেতনভোগীদের ১২.৭৫ লক্ষ টাকা পর্যন্ত উপার্জনে কর দিতে হবে না।
পূর্বের নেতৃত্ব বাস্তব পরিস্থিতি সম্পর্কে যথেষ্ট ওয়াকিবহাল না থাকায় অনেক কাজ বাকি ছিল বলে প্রধানমন্ত্রী অভিযোগ করেন। তাঁর সরকার ক্ষমতায় আসার পর, তরুণ প্রজন্মের আশা-আকাঙ্ক্ষার কথা মনে রেখে একের পর এক কর্মসূচি হাতে নেওয়া হয়েছে বলে প্রধানমন্ত্রী উল্লেখ করেছেন। এর সুবাদে দেশের তরুণ-তরুণীরা নিজেদের দক্ষতার প্রকাশ ঘটাতে পারছেন এবং মহাকাশ, প্রতিরক্ষা, সেমিকন্ডাক্টর – সবক্ষেত্রেই দ্রুত এগিয়ে চলেছে ভারত। স্টার্টআপ ইন্ডিয়া কর্মসূচির কল্যাণে দেশে উদ্ভাবনার পরিমণ্ডল সমৃদ্ধ হয়েছে।
কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা, থ্রি-ডি প্রিন্টিং, রোবোটিক্স, ভার্চ্যুয়াল রিয়েলিটি প্রভৃতি অত্যাধুনিক ক্ষেত্রের উপর অগ্রাধিকার দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী। তিনি বলেন, তাঁর কাছে এআই কেবলমাত্র আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স নয়, অ্যাসপিরেশনাল ইন্ডিয়া। দেশে উদ্ভাবনমূলক প্রবণতা প্রসারে সরকার স্কুলগুলিতে ১০ হাজার অটল টিঙ্কারিং ল্যাব তৈরি করেছে এবং বর্তমান বাজেটে ৫০ হাজার এই ধরনের ল্যাবের সংস্থান রয়েছে বলে প্রধানমন্ত্রী উল্লেখ করেছেন। ভারতের কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা অভিযান সারা বিশ্বের নজর কেড়েছে বলেও তিনি মন্তব্য করেন।
তাঁর সরকার তরুণ প্রজন্মকে কর্মদক্ষ করে তুলতে চাইছে, কিন্তু কয়েকটি পক্ষ ভোটের রাজনীতি করে ভাতা প্রদানের যে সংস্কৃতি তৈরি করতে চাইছে, তার ফল মারাত্মক হতে পারে বলে প্রধানমন্ত্রী সতর্ক করে দেন।
গণতান্ত্রিক মূল্যবোধ বজায় রাখার প্রসঙ্গে তাঁর সরকার সচেষ্ট বলে প্রধানমন্ত্রী মন্তব্য করেছেন। তিনি বলেন, ২০১৪’য় তাঁর সরকার ক্ষমতায় আসার সময় বিরোধী দলনেতা বলে কেউ ছিলেন না। কিন্তু, তাঁরা বিভিন্ন কাজে বৃহত্তম বিরোধী দলের নেতাকে কার্যত সেই স্বীকৃতি দিয়েছেন।
পরিবারতান্ত্রিক ধ্যানধারণা নির্মূল করতে প্রধানমন্ত্রী সংগ্রহালয়ে দেশের সব সরকার প্রধানের কাজকর্ম তুলে ধরার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে বলে প্রধানমন্ত্রী উল্লেখ করেছেন। এই সংগ্রহালয়কে আরও উন্নত করে তুলতে পরামর্শ চেয়েছেন তিনি।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, সেবার কাজে ক্ষমতা প্রযুক্ত হলে দেশের বিকাশ ঘটে। কিন্তু, ক্ষমতাকে অধিকার বলে ধরে নিলে সাধারণ মানুষ ক্ষতিগ্রস্ত হন। সংবিধানের প্রতি দায়বদ্ধ থেকে, বিভাজনের রাজনীতি পরিহার করে দেশের ঐক্যের লক্ষ্যে কাজ করে যাওয়ার ডাক দিয়েছেন তিনি।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, কিছু মানুষ যেভাবে শহুরে নকশালদের সুরে কথা বলছেন, তা অত্যন্ত দুর্ভাগ্যজনক। ভারতীয় রাষ্ট্রকে যাঁরা চ্যালেঞ্জ জানাতে চান, তাঁরা সংবিধান সম্পর্কে অবহিত নন।
স্বাধীনতার পর দশকের পর দশক ধরে জম্মু, কাশ্মীর ও লাদাখের মানুষ সাংবিধানিক অধিকার থেকে বঞ্চিত থেকেছেন। এই পরিস্থিতি দূর করতে সংবিধানের ৩৭০ ধারা রদ করা হয়েছে। ঐ অঞ্চল এখন উন্নয়ন যাত্রায় এগিয়ে চলেছে বলে প্রধানমন্ত্রী মন্তব্য করেন।
সংবিধানে বিভেদমূলক রীতি-নীতির কোনও জায়গা নেই বলে উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, পক্ষপাতমূলক রাজনীতির ফলে মুসলিম মহিলারা নিজের প্রাপ্য অধিকার থেকে বঞ্চিত ছিলেন বহুকাল। তিন তালাক প্রথা বিলুপ্ত হওয়ায় পরিস্থিতি পরিবর্তিত হয়েছে।
তাঁর সরকার মহাত্মা গান্ধীর ভাবধারা অনুযায়ী সমতার আদর্শে বিশ্বাসী এবং আঞ্চলিক বৈষম্য হ্রাসে উদ্যোগী বলে বার্তা দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী।
পশ্চিম ও পূর্ব উপকূল সহ ভারতের বিভিন্ন প্রান্তে বসবাসরত মৎস্যজীবীদের কল্যাণে সরকার একাধিক কর্মসূচি হাতে নিয়েছে বলে প্রধানমন্ত্রী জানান।
সমাজের প্রান্তিক গোষ্ঠীর মানুষের কল্যাণে দক্ষতা উন্নয়ন কর্মসূচিতে বিশেষ জোর দেওয়া হচ্ছে বলে প্রধানমন্ত্রী উল্লেখ করেছেন। সমবায় ক্ষেত্রের প্রসারে একটি পৃথক সমবায় মন্ত্রক গড়ে তোলা হয়েছে বলে তাঁর মন্তব্য।
বিভিন্ন দলের ওবিসি সাংসদদের দাবি মতো তাঁর সরকারের আমলেই ব্যাকওয়ার্ড ক্লাসেস কমিশন’কে সাংবিধানিক কাঠামোর মধ্যে আনা হয়েছে বলে প্রধানমন্ত্রী মনে করিয়ে দেন। সমাজের প্রান্তিক মানুষের কল্যাণে তাঁর সরকারের উদ্যোগের প্রসঙ্গে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ঐক্যের ধারণাকে মুক্ত করে তুলতে হবে সামাজিক অস্থিরতা তৈরি না করেই। ২০১৪’য় দেশে ৩৮৭টি মেডিকেল কলেজ ছিল, বর্তমানে সংখ্যাটি ৭৮০। ২০১৪’য় ডাক্তারি পড়ায় তপশিলি গোষ্ঠীভুক্তদের জন্য সংরক্ষিত আসন সংখ্যা ছিল ৭ হাজার ৭০০। বর্তমানে সংখ্যাটি ১৭ হাজার। তপশিলি উপজাতি গোষ্ঠীভুক্ত পড়ুয়াদেরও ডাক্তারি পড়ার সুযোগ এখন অনেক বেড়েছে বলে প্রধানমন্ত্রী জানান।
সরকারের যাবতীয় কর্মসূচির সুফল যাতে প্রতিটি যোগ্য প্রাপকের কাছে পৌঁছে যায়, তা নিশ্চিত করতে সরকার বিশেষভাবে উদ্যোগী বলে প্রধানমন্ত্রী পুনরায় ব্যক্ত করেন। এরফলে, সামাজিক ন্যায়, ধর্ম নিরপেক্ষতা এবং সংবিধানের প্রতি মানুষের আস্থা বৃদ্ধি পাবে বলে তিনি মনে করেন।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ২০২৫-২৬ অর্থবর্ষের বাজেটে ক্যান্সারের ওষুধ আরও সুলভ করে তুলতে গুরুত্বপূর্ণ ঘোষণা রয়েছে। ক্যান্সার রোগীদের জন্য তৈরি করা হবে ২০০টি ডে কেয়ার সেন্টার।
সরকারের বৈদেশিক নীতি নিয়ে কিছু মানুষ অনভিপ্রেত মন্তব্য করছেন এবং এতে দেশের ক্ষতি হতে পারে বলে প্রধানমন্ত্রী সতর্ক করে দেন।
সংসদে অভিভাষণের পর, রাষ্ট্রপতিকে লক্ষ্য করে কয়েকটি মহল যেসব মন্তব্য করেছে, তা অত্যন্ত দুর্ভাগ্যজনক বলে প্রধানমন্ত্রী মনে করেন। তিনি বলেন, ভারত নারী নেতৃত্বাধীন বিকাশের মন্ত্রে এগিয়ে চলেছে। বিগত ১০ বছরে স্বনির্ভর গোষ্ঠীগুলিতে যোগ দিয়েছেন ১২ কোটি মহিলা। ‘লাখপতি দিদি’ কর্মসূচির আওতায় ১.২৫ কোটি মহিলাকে লাখপতি দিদি করে তোলা হয়েছে। গ্রামীণ মহিলাদের ক্ষমতায়নে হাতে নেওয়া হয়েছে নমো ড্রোন দিদি প্রকল্প। প্রধানমন্ত্রী মুদ্রা যোজনা মহিলাদের ক্ষমতায়নে বিশেষ ভূমিকা নিয়েছে। বিকশিত ভারত গড়ে তোলায় গ্রামীণ অর্থনীতির গুরুত্বের বিষয়টিও উঠে আসে প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্যে।
তিনি বলেন, ২০১৪’র আগে ইউরিয়া পাওয়ার জন্য কৃষকদের নানা সমস্যার মুখোমুখী হতে হ’ত। তাঁদের জন্য তৈরি করা সার চলে যেত কালোবাজারে। বর্তমানে কৃষকরা পর্যাপ্ত সার পাচ্ছেন। কোভিড-১৯ এর সময় বিশ্ব জুড়ে সরবরাহ-শৃঙ্খল বিঘ্নিত হওয়ায় সারের দাম বেড়ে গেলেও সরকার কৃষকদের স্বার্থ অক্ষুণ্ন রেখেছে। ৩ হাজার টাকার ইউরিয়া কৃষকদের দেওয়া হয়েছে ৩০০ টাকায়। কৃষকদের কাছে সার সরবরাহ অক্ষুণ্ন রাখতে গত ১০ বছরে ১২ লক্ষ কোটি টাকা খরচ করা হয়েছে। পিএম-কিষাণ সম্মান নিধির আওতায় কৃষকদের ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টে সরাসরি পাঠিয়ে দেওয়া হয়েছে ৩.৫ লক্ষ কোটি টাকা। বেড়েছে ফসলের ন্যূনতম সহায়ক মূল্য। পিএম-ফসল বীমা যোজনার আওতায় কৃষকরা পেয়েছেন ২ লক্ষ কোটি টাকা। সেচের জলের অভাব দূর করতে দশকের পর দশক থমকে থাকা ১০০টি বড় সেচ প্রকল্পের কাজ সম্পন্ন করা হয়েছে। ডঃ আম্বেদকরের চিন্তাভাবনা অনুযায়ী, নদী সংযুক্তিকরণের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।
‘মেড ইন ইন্ডিয়া’ প্রকল্প, মিলেট’কে জনপ্রিয় করে তোলার উদ্যোগের কথাও তুলে ধরেন প্রধানমন্ত্রী।
নগরাঞ্চলের পরিকাঠামো উন্নয়নে নমো রেল এবং মেট্রো পরিষেবার প্রসারে সরকার জোর দিচ্ছে বলে প্রধানমন্ত্রী জানিয়েছেন। দূষণ প্রতিরোধে দেশের বিভিন্ন প্রান্তে ১২ হাজার বৈদ্যুতিক বাস চালু করা হয়েছে বলেও তিনি জানান।
বড় শহরগুলিতে কর্মরত প্রায় ১ কোটি গিগ (ডেলিভারী বয় বা এই ধরণের কর্মী) কর্মীর সামাজিক নিরাপত্তা নিশ্চিত করায় ই-শ্রম পোর্টালে তাঁদের নিবন্ধনের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। আয়ুষ্মান প্রকল্পের সুবিধাও পাবেন তাঁরা।
ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্প ক্ষেত্রে কর্মসংস্থানের বিপুল সম্ভাবনাকে সরকার কাজে লাগাতে উদ্যোগী বলে প্রধানমন্ত্রী পুনরায় ব্যক্ত করেছেন। এক্ষেত্রে তিনি মিশন ম্যানুফ্যাকচারিং – এর উপর জোর দেন। প্রধানমন্ত্রী বলেন, ২০০৬ – এ এমএসএমই’র যে সংজ্ঞা ছিল, তা এ বছরের বাজেট সহ বিগত দশকে দু’বার পরিমার্জিত হয়েছে। ক্ষুদ্র উদ্যোগপতিদের ঋণদানের কাজে গতি আনা হচ্ছে। এইসব কর্মসূচির সুবাদে ভারতের পণ্য এখন বিশ্ব বাজারে জনপ্রিয় হয়ে উঠছে।
প্রধানমন্ত্রী মনে করিয়ে দেন যে, উন্নত ভারতের স্বপ্ন কেবলমাত্র সরকারের নয়, ১৪০ কোটি ভারতবাসীর। লক্ষ্য পূরণে এগিয়ে আসতে হবে সকলকে। দেশের জনবিন্যাসগত সুবিধা, গণতান্ত্রিক মূল্যবোধ এবং বিপুল বাজারের সুবাদে ২০৪৭ সালে স্বাধীনতার ১০০ বছর পূর্তির সময় সেই লক্ষ্যবিন্দুতে পৌঁছে যাবে ভারত।
SC/AC/SB
(Release ID: 2100005)
Visitor Counter : 5
Read this release in:
English
,
Urdu
,
Hindi
,
Marathi
,
Assamese
,
Gujarati
,
Odia
,
Tamil
,
Telugu
,
Kannada
,
Malayalam