প্রধানমন্ত্রীরদপ্তর
azadi ka amrit mahotsav

প্রধানমন্ত্রী শ্রী নরেন্দ্র মোদীর আলাপচারিতা প্যারিস অলিম্পিকের ক্রীড়াবিদদের সঙ্গে

Posted On: 16 AUG 2024 12:22PM by PIB Kolkata

নয়াদিল্লি, ১৬  অগাস্ট, ২০২৪

 

প্রধানমন্ত্রী :  বন্ধুগণ, আমি আপনাদের সকলের সঙ্গে কথা বলতে চাই। এখন এখানে যাঁরা আছেন, কতজন ভাবছেন যে হেরে যাওয়ার পরে ফিরে এসেছেন? প্রথমে আপনাদের বলি, এই ভাবনাটা আপনাদের মন থেকে মুছে ফেলুন। আপনারা এখানে এসেছেন দেশের প্রতিনিধিত্ব করার পরে, এবং আপনারা ফিরেছেন মূল্যবান কিছু শিক্ষা নিয়ে। সেই কারণেই খেলায় সত্যি করে কেউ হারে না; সকলেই শেখে। আমি আপনাদের কাছে এটা পরিষ্কার করে দিতে চাই। সেইজন্যই আপনাদের জিজ্ঞেস করেছি, আপনাদের মধ্যে কতজন ওইভাবে ভাবছেন। দেখে ভালো লাগছে যে আপনাদের ৮০ শতাংশই হাত তোলেননি। তার মানে আপনারা বুঝেছেন যে আমি কী বলতে চাইছি। যাঁরা হাত তুলেছেন তাঁরা হয়তো বিনয়ের জন্য হাত তুলেছেন বা সজ্ঞানে হাত তুলেছেন। তবে তাঁদেরও আমি বলতে চাই, একদম ভাববেন না যে আপনি পিছনে পড়ে গেছেন; আপনারা ফিরেছেন জ্ঞানের সম্পদ নিয়ে। আপনারা আমার সঙ্গে একমত? তাহলে আসুন, জোরে বলুন- আপনারা শেষ পর্যন্ত অ্যাথলিট। 

অ্যাথলিটরা : হ্যাঁ, স্যার! 


প্রধানমন্ত্রী : এবার আমি আপনাদের কিছু জিজ্ঞেস করতে চাই। সারা পৃথিবী দেখেছে আপনারা মাঠে কী করেছেন। কিন্তু আমাকে বলুন, আপনারা প্রতিযোগিতার ফাঁকে আর কী করেছেন? হয়তো আপনারা সারা বিশ্বের খেলোয়াড়দের সঙ্গে বন্ধুত্ব করেছেন, অনেক কিছু নতুন জিনিস শিখেছেন। আপনারা হয়তো ভাবছেন যদি এখানেও আমরা এ রকম কিছু করি, তাহলে ভালো হয়। আমি নিশ্চিত, আপনাদের মনে এ রকম ভাবনা এসেছে। তাই আপনাদের কাছ থেকে আমি আপনাদের অভিজ্ঞতার কথা শুনতে চাই। কে বলবেন আমাকে? 

লক্ষ্য : হ্যাঁ, স্যার, প্রথমে, আপনাকে নমস্কার। 
 
প্রধানমন্ত্রী : আমি যখন প্রথম লক্ষ্যকে দেখি, সে তখন খুব ছোট ছিল। আর এখন দেখুন সে কতো বড় হয়ে গেছে।

লক্ষ্য : প্রতিযোগিতার সময় প্রথম দিন থেকেই আমার ম্যাচগুলো ছিল দীর্ঘ এবং কঠিন। তাই আমি প্রধানত আমার খেলাতেই মনোনিবেশ করেছিলাম। তবে যখনই ফাঁকা সময় পেয়েছি, আমরা সব একসঙ্গে ডিনার করতে যেতাম। সেখানে অন্য অ্যাথলিটদের সঙ্গেও দেখা হতো। তাঁদের দেখা এবং একসঙ্গে খাবার খাওয়া আমার কাছে খুব বড় ব্যাপার। গোটা পরিবেশটাই ছিল দারুণ। বিশেষ করে এটা যেহেতু আমার প্রথম অলিম্পিক। বিশাল স্টেডিয়ামে খেলা, অনেক দর্শক খেলা দেখছে, এটা প্রথমে আমার কাছে দারুণ লেগেছিল। প্রথম ২-৩টি ম্যাচের সময় আমি নার্ভাস ছিলাম। কিন্তু যতো প্রতিযোগিতা এগিয়েছে আমি তত স্বচ্ছন্দ হয়ে গেছি। তবে সব মিলিয়ে এটা খুব বড় অভিজ্ঞতা।

প্রধানমন্ত্রী : ভালো, আপনি দেবভূমি থেকে এসেছেন। কিন্তু আপনি কী বুঝতে পেরেছেন যে আপনি হঠাৎই সেলিব্রিটি হয়ে গেছেন?

লক্ষ্য : হ্যাঁ, স্যার। ম্যাচ চলাকালীন আমার ফোন প্রকাশ স্যারই ধরতেন। তিনি বলেছিলেন, যতক্ষণ না প্রতিযোগিতা শেষ হচ্ছে, এটা ব্যবহার করার অনুমতি দেবেন না। পরে আমি জানতে পারি মানুষের কাছ থেকে আমি প্রচুর সমর্থন পেয়েছি। এটা খুব শিক্ষণীয় অমূল্য অভিজ্ঞতা। যদিও খুব হৃদয় বিদারক যে আমি খুব কাছে এসেছিলাম। আমি ভবিষ্যতে আমার ফলাফল উন্নত করতে দৃঢ়প্রতিজ্ঞ। 

প্রধানমন্ত্রী : তাহলে, প্রকাশ স্যার খুবই কড়া এবং শৃঙ্খলাপরায়ণ, ঠিক কী না? পরের বার তিনি যাতে যান, তা আমি নিশ্চিত করবো।

লক্ষ্য : অবশ্যই, স্যার, নিশ্চয়ই। 

প্রধানমন্ত্রী : তবে আপনারা নিশ্চয়ই অনেক কিছু শিখেছেন। আমি বলি, যদি আপনি জিততেন, তাহলে খুবই ভালো হতো। কিন্তু যাঁরা এমনকি সত্যি করে বোঝেও না খেলাটা সম্পর্কে, তাঁরাও ঘণ্টার পর ঘণ্টা আপনার খেলা দেখেছে। আপনার খেলার হাইলাইটের রিলস দেখেছে একনাগাড়ে। যেভাবে আপনি খেলেছেন, তাতে মানুষ বুঝতে পেরেছে যে শুধুমাত্র বিদেশী খেলোয়াড়রাই যে খুব ভালো খেলে তাই নয়, আমাদের ছেলেরাও খেলতে পারে। এই মনোভাবটা শিকড় গেড়ে বসেছে।

লক্ষ্য : হ্যাঁ স্যার, আমার মনে হয় আমার দুটো একটা শট অত্যন্ত জনপ্রিয় হয়ে গেছে। তবে সব মিলিয়ে আমার আশা প্রতিযোগিতায় আমার এই ধরনের খেলায় ভবিষ্যতে যাঁরা ব্যাডমিন্টন খেলতে চায়, সেইসব তরুণ খেলোয়াড়রা অনুপ্রাণিত হবে। 

প্রধানমন্ত্রী : খুব ভালো। এখন ওখানে এসি ছিল না। খুব গরম ছিল। কে প্রথম চেঁচিয়েছিলেন? কে বলেছিলেন, “মোদী বড় বড় কথা বলে অথচ ঘরে কোনো এসি নেই- তাহলে আমরা কীভাবে কী করবো?” গরমে আপনাদের কার বেশি কষ্ট হয়েছে? তবে আমি শুনেছি কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই বিষয়টা মিটে গেছিল। প্রত্যেকেই এসি পেয়েছিলেন। পাননি? দেখুন, কীভাবে প্রত্যেক খেলোয়াড়ের যত্ন নেওয়া হয়েছে। প্রত্যেকে সঙ্গে সঙ্গে কাজে নেমে পড়েছেন। 

অঞ্জুম মৌদগিল : নমস্কার, স্যার। আমার নাম অঞ্জুম মৌদগিল। আমি শ্যুটিং করি। আমার সব মিলিয়ে অভিজ্ঞতা হল এই যে এটা আমার দ্বিতীয় অলিম্পিক ছিল এবং আমি মাত্র কয়েকটা পয়েন্টের জন্য ফাইনালে উঠতে পারিনি। কিন্তু একজন ভারতীয় এবং একজন অ্যাথলিট হিসেবে দেখেছি, অ্যাথলিটরা প্রতিদিন কী অবস্থার মধ্যে দিয়ে যায়। লক্ষ্যে পৌঁছনোর চরম আনন্দ এবং যখন সেটা পিছলে যায় তখন চরম হতাশা। গোটা দেশই তাই ভাবে অলিম্পিক চলার সময় ভারতের কৃতিত্বের জন্য। একদিন আমরা মনুর পদকের জন্য অত্যন্ত উৎফুল্ল। আবার এমনও ঘটনা ঘটেছে, কেউ কেউ চতুর্থ হয়েছেন। আর বিনেশের ব্যাপারটাতো সত্যিই হৃদয়বিদারক। তারপরে হকি ম্যাচ এবং তাতেও হল আনন্দ। আমরা প্রতিদিন অ্যাথলিটরা যে নানা ভাবাবেগের মধ্যে দিয়ে গেছি, তা গোটা দেশ ওই ১০ দিন এই একই ভাবাবেগের মধ্যে দিয়ে গেছে। আমার মনে হয়, এই খেলাগুলি কাজে লাগবে ভারতের ক্রীড়া সংস্কৃতির প্রসারে এবং এবার থেকে মানুষ ভালোভাবে বুঝতে পারবে অ্যাথলিট হিসেবে যাত্রাপথ। এর থেকে যে ইতিবাচক পরিবর্তন আসবে তা ভবিষ্যতে আরও প্রভাব ফেলবে।

প্রধানমন্ত্রী : আপনি ঠিকই বলেছেন। শুধু আপনিই নন, ভারতের কোণে কোণে এই একই মনোভাব ছিল। যদি কোনো খেলোয়াড়কে দেখা যেতো একটু অসুবিধা আছে, দর্শকরা অস্থির হয়ে উঠতো। ঠিক যেন গাড়ি চালানোর মতো। যদি আপনি পিছনের আসনে থাকেন এবং গাড়ি চালাতে জানেন, তাহলে চালক ব্রেক চাপলে আপনিও পা চাপেন যেন আপনিই গাড়ি চালাচ্ছেন। সেই রকম খেলোয়াড়রা যেমন হাত-পা চালায়, মানুষও সেভাবে হাত-পা ছোঁড়ে। শ্রীজেশ, আপনি কী আগেই অবসরের সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন, না সম্প্রতি নিয়েছেন?

শ্রীজেশ : স্যার নমস্কার। আমি কয়েক বছর ধরেই ভাবছিলাম। আমার সহ খেলোয়াড়রা প্রায়ই আমাকে জিগ্যেস করতো কখন আমি অবসর নেব; এই প্রশ্ন প্রায়ই আমাকে শুনতে হতো। আমার মনে হয়, আমি ২০০২ সালে কেরিয়ার শুরু করেছিলাম। জুনিয়ার টিমের হয়ে প্রথম আন্তর্জাতিক ম্যাচ খেলেছিলাম ২০০৪-এ। আমি ২০ বছর ধরে আমার দেশের হয়ে খেলছি। তাই আমি চাইতাম একটা ভালো প্ল্যাটফর্ম থেকে অবসর নেওয়ার। অলিম্পিক সেরকমই একটা প্ল্যাটফর্ম যা গোটা বিশ্ব উদযাপন করে। তাই আমার বিশ্বাস এর থেকে ভালো সুযোগ হয় না। তাই আমি খুব ভেবেচিন্তেই সিন্ধান্ত নিয়েছি।

প্রধানমন্ত্রী : আমি বলি আপনাকে যে সন্দেহ নেই, দল আপনাকে মিস করবে। তবে তাঁরা আপনাকে দারুণ ফেয়ারওয়েল দিয়েছে।

শ্রীজেশ : হ্যাঁ, স্যার। 

প্রধানমন্ত্রী : অভিনন্দন দলকে,

শ্রীজেশ : সত্যিই স্যার। আমরা এরকম একটা ফল স্বপ্নেও ভাবিনি। সেমিফাইনালে যখন হেরে গেলাম তখন আমাদের জন্য এটা খুব কঠিনই ছিল। আমরা অনেক আশা নিয়ে প্যারিসে গেছিলাম; আমাদের লক্ষ্য ছিল ফাইনালে পৌঁছানো অথবা সোনা জেতা। সেমিফাইনালে পরাজয়ে আমাদের প্রত্যেকেরই একরকম মন ভেঙে গেছিল। তবে যখন আমরা ম্যাচের জন্য প্রস্তুতি নিলাম, তখন প্রত্যেকেই শ্রী ভাইয়ের (শ্রীজেশ) জন্য জেতার সংকল্প নেয়। স্যার এটা আমাকে আরও গর্বিত করেছে। এতো বছরের পরিশ্রম আমি দিয়েছি আমার দেশের জন্য। আমার সহযোগী খেলোয়াড়রা আমাকে সাহায্য করেছে। আমি ফেয়ারওয়েলের সময় বিশেষ করে তাঁদের ধন্যবাদ দিয়েছি এবং বিদায় জানিয়েছি।

প্রধানমন্ত্রী : আমাকে বলুন, যখন আপনাদের মাত্র ১০ জন খেলোয়াড় নিয়ে ব্রিটেনের বিরুদ্ধে লড়তে হল, তখনকি শুরুতে মনোবল ভেঙে গেছিল? সরপঞ্চ সাহাব, দয়া করে আপনার ভাবনাটা জানান। এটা নিশ্চয়ই খুব চ্যালেঞ্জিং ছিল। 

হরমনপ্রীত সিং : নমস্কার, স্যার। হ্যাঁ, এটা অবশ্যই খুব কঠিন ছিল। আমাদের খেলোয়াড়রা ইতিমধ্যেই কোয়ার্টার ফাইনাল থেকে বেরিয়ে গেছিল। তবে আমাদের কোচিং স্টাফ যথেষ্ট সাহায্য করেছে। আমরা আগে থাকতেই সম্ভাব্য ছবিটা দেখতে পেয়েছিলাম, কারণ অলিম্পিকে যে কোনো কিছু ঘটতে পারে অনেক সময় অপ্রত্যাশিতভাবে। পরিস্থিতি যাই হোক না কেন, আমরা আমাদের পরিকল্পনা মাফিক খেলার জন্য দৃঢ়মনস্ক ছিলাম যা দলের উৎসাহকে বাড়িয়েছে। আর গ্রেট ব্রিটেনের সঙ্গে আমাদের কিছুটা বৈরিতা থাকায় আমরা আরও বেশি করে উদ্বুদ্ধ হই।

প্রধানমন্ত্রী : ওই বৈরিতা চলে আসছে ১৫০ বছর ধরে। 

হরমনপ্রীত সিং : একদম ঠিক স্যার। আমরা সেই ঐতিহ্য বহন করে চলেছি। আমাদের সংকল্প ছিল আমাদের ম্যাচ জিততেই হবে। যখন ম্যাচ ১-১ অমিমাংসিতভাবে শেষ হয়, সেটা ছিল গুরুত্বপূর্ণ মুহূর্ত। আমরা শ্যুট আউটে বিজয়ী হই। অলিম্পিক ইতিহাসে যা অভূতপূর্ব। আর একটা বড় ব্যাপার, অস্ট্রেলিয়াকে হারানো; ৫২ বছরের খরা শেষে এটা আমাদের একটি গুরুত্বপূর্ণ জয় ছিল।
 
প্রধানমন্ত্রী : নিশ্চয়ই। আপনারা ৫২ বছরের রেকর্ড ভেঙেছেন। একটা অলিম্পিকে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করাও একটি গুরুত্বপূর্ণ সাফল্য। 

হরমনপ্রীত সিং : হ্যাঁ স্যার। 

প্রধানমন্ত্রী : আর আপনি সবচেয়ে কম বয়সী। 

আমন শেরাওয়াত : নমস্কার স্যার।

প্রধানমন্ত্রী : আমি নিশ্চিত, অনেকেই আপনাকে পরামর্শ দিয়েছে, কী করতে হবে না তা বলেছে। তাতে কী অনেক সময় আপনি বেশি চিন্তিত হয়েছেন?

আমন শেরাওয়াত : এই কম বয়েসেই আমি অনেক দুঃসময়ের সম্মুখীন হয়েছি। যখন আমার ১০ বছর বয়স তখনই আমার অভিভাবকরা মারা গেছেন। শুধু রেখে গেছেন আমার জন্য অলিম্পিক পদক জেতার স্বপ্ন। আমি সেই স্বপ্নকে ভাগ করে নিয়েছি এবং পদক জেতার ব্যাপারে দৃঢ় সংকল্প ছিলাম। সেটা মাথায় রেখে আমি নিষ্ঠা সহকারে অনুশীলন চালিয়ে গেছি এবং টার্গেট অলিম্পিক পোডিয়াম স্কিম (টিওপিএস), স্পোর্টস অথরিটি অফ ইন্ডিয়া (এসএআই) এবং রেসলিং ফেডারেশন অফ ইন্ডিয়া (ডাব্লুএফআই) থেকে যে সাহায্য পেয়েছি তা অমূল্য। 

প্রধানমন্ত্রী : এখন কী মনে হচ্ছে?

আমন শেরাওয়াত : ভালো লাগছে। আমি খুব খুশি

প্রধানমন্ত্রী : বাড়ি ফিরে পছন্দের খাবার খেয়েছেন?

আমন শেরাওয়াত : আমি এখনও বাড়ি যাইনি।।

প্রধানমন্ত্রী : আপনি এখনও বাড়ি যাননি? এটা যদি আমাকে জানাতেন, তাহলে আপনার জন্য কিছু ব্যবস্থা করতাম। 

আমন শেরাওয়াত : বাড়ি ফিরে চুরমা খাওয়ার ইচ্ছা আছে। 

প্রধানমন্ত্রী : যাই হোক, আমাদের সরপঞ্চ সাহেবের যেমন একটা ডাকনাম আছে, আপনাদের মধ্যে কারো কি তেমন ডাকনাম আছে?

শ্রেয়সী সিং : শুভেচ্ছা স্যার। আমি শ্রেয়ী সিং। বর্তমানে আমি বিহারের বিধায়ক। আমার দলের প্রত্যেকে আমাকে ডাকে এমএলএ দিদি বলে।

প্রধানমন্ত্রী : এমএলএ দিদি, আপনি বলছেন।

শ্রেয়সী সিং : হ্যাঁ স্যার।

প্রধানমন্ত্রী : তাহলে এখানে একজন সরপঞ্চ এবং একজন এমএলএ আছেন। আমি লক্ষ্য করেছি, আপনাদের অনেকেই আজকাল মোবাইল ফোনে আটকে থাকেন। ঠিক কী না? আপনারা রিল দেখেন, এমনকি রিল তৈরিও করেন। করেন না? আপনাদের কে কে রিল তৈরি করেন?

হরমনপ্রীত সিং : স্যার আসলে আমি বলতে চাই যে আমাদের পুরো দল সিদ্ধান্ত নিয়েছিল অলিম্পিক চলাকালীন মোবাইল ফোন ব্যবহার করবে না। সোশ্যাল মিডিয়ায় ব্যস্ত না থাকার সিদ্ধান্ত নিয়েছিলাম আমরা। 

প্রধানমন্ত্রী : সেটা খুব ভালো সিদ্ধান্ত- খুব ভালো। 

হরমনপ্রীত সিং : নিশ্চয়ই স্যার। আমরা বুঝতে পেরেছিলাম, ইতিবাচক অথবা নেতিবাচক, যে কমেন্টই হোক না কেন, তাতে আমাদের ওপর চাপ বাড়বে। সেইজন্য আমরা পুরোপুরি সোশ্যাল মিডিয়া থেকে সরে থাকার ব্যাপারে একমত হই।

প্রধানমন্ত্রী : আপনারা সকলেই অভিনন্দনযোগ্য সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন।

হরমনপ্রীত সিং : হ্যাঁ, স্যার।

প্রধানমন্ত্রী : আমি চাই আপনারা দেশের যুব সমাজকে পরামর্শ দিন যে সোশ্যাল মিডিয়া থেকে দূরে থাকা খুব উপকারিও হতে পারে। অনেক লোকই এতে সময় নষ্ট করে এবং এতে আটকে থাকে। আপনাকে মেয়ে মনে হচ্ছে একটু ভেঙে পড়েছেন। 

রীতিকা হুডা : হ্যাঁ স্যার। আমি এই প্রথম লড়াই করলাম এবং খুব অল্পের জন্য হেরেছি। ওই ম্যাচে জিততে পারলে আমি ফাইনালে পৌঁছতে পারতাম এবং সম্ভবত সোনাও জিততাম। দুর্ভাগ্যবশত কপাল খারাপ এবং দিনটা আমার জন্য ভালো ছিল না।

প্রধানমন্ত্রী : ঠিক আছে। আপনার এখনও কম বয়েস। যথেষ্ট সময় আছে আরও কিছু পাওয়ার।

রীতিকা হুডা : হ্যাঁ স্যার। 

প্রধানমন্ত্রী : আর হরিয়ানার মাটিই যেমন যে শক্তি দেখাবার মনোবল জোগায়। 

রীতিকা হুডা : হ্যাঁ স্যার। 

ডঃ দীনশ পার্দিওয়ালা : নমস্কার প্রধানমন্ত্রী। আমার বিশ্বাস এবারে এবারে আমাদের পুরো দলে আহত হওয়ার ঘটনা খুব কম। দু-একটা মাত্র খুব গুরুতর আঘাতের ঘটনা ঘটেছে। এমনিতেই আমরা দেখে থাকি সব ধরনের খেলাতেই অস্ত্রোপচার করতে হয় এমন ৩-৪টে গুরুতর ধরনের আঘাত ঘটেই থাকে। সৌভাগ্যবশত এবারে একটাইমাত্র গুরুতর আহত হওয়ার ঘটনা ঘটেছে, যার ফলাফল অবশ্য ভালোই। একটা উল্লেখ করার মতো ঘটনা, আগেকার দিনের মতো নয় যখন অলিম্পিক ভিলেজে খুব সীমিত সুযোগ-সুবিধা থাকতো, এবারে আমাদের নিজেদের বাড়িতে প্রয়োজনীয় সব রকম সুযোগ-সুবিধা ছিল। এতে অনেক অ্যাথলিটদেরই সুস্থ হয়ে ওঠা, আঘাত সারানো এবং প্রস্তুতি অনেক সহজ হয়ে গেছে। আমার বিশ্বাস, এই ধরনের ব্যবস্থা খুবই উপকারি এবং এতে অ্যাথলিটদের মধ্যে আত্মবিশ্বাস বাড়ে এটা জেনে যে চাইলেই সব কিছু পাওয়া যাবে। ভবিষ্যতে যদি আমরা এইভাবেই এগোতে পারি, তাহলে আমরা আমাদের অ্যাথলিটদের সাহায্য করতে পারবো।

প্রধানমন্ত্রী : দেখুন, ডাক্তারবাবু আমাকে একটা গুরুত্বপূর্ণ বিষয় জানিয়েছেন; এবারে আগের বছরগুলির তুলনায় আহত হওয়ার ঘটনা কম ঘটেছে। আহত হওয়ার ঘটনা কমার অর্থ, খেলার প্রত্যেক বিষয়ে আপনাদের দক্ষতা আছে। অনেক সময় জখন হওয়ার ঘটনা ঘটে খেলা নিয়ে বোঝার ফাঁক থাকলে। যার থেকে অনেক সময় ক্ষতি হয়। আপনাদের প্রস্তুতি ও প্রশিক্ষণ সামান্য চোট-আঘাত সামলাবার ক্ষমতা দিয়েছে আপনাদের শরীরকে। ফলে বড়সড় আঘাত এড়াতে পেরেছেন। আমি বিশ্বাস করি যে এটি অর্জন করতে আপনাদের নিষ্ঠার সঙ্গে কঠোর পরিশ্রমের অনুশীলন করতে হয়েছে। এই উল্লেখযোগ্য সাফল্যের জন্য আপনাদের সকলকে অভিনন্দন। 

প্রধানমন্ত্রী :

বন্ধুগণ,

আমার সঙ্গে যোগ দিচ্ছেন মনসুখ মাণ্ডভিয়াজি এবং ক্রীড়া প্রতিমন্ত্রী রক্ষা খাড়সেজি। যিনি খেলার জগতে আমাদের দেশের জন্য অনেক সম্মান এনে দিয়েছেন, সেই পিটি উষাজিও এখানে উপস্থিত আছেন। আপনারা প্যারিস থেকে ফিরেছেন এবং আমি আমার হৃদয়ের অন্তর থেকে আপনাকে এবং আপনাদের সহকর্মীদের আন্তরিক স্বাগত জানাই। আমি যে উৎসাহ নিয়ে আপনাদের প্যারিস যাত্রার জন্য বিদায় জানিয়েছিলাম, সেই ভাবেই আপনাদের স্বাগত জানাচ্ছি। এই স্বাগত জানানো পদকের সংখ্যার ভিত্তিতে নয়, বরং ভারতের খেলোয়াড়দের জন্য বিশ্বের প্রশংসার কারণে। আমি তাঁদের সাহস, শৃঙ্খলাপরায়ণতা এবং আচরণ সম্পর্কে জানতে পেরেছি দেশের সব প্রান্ত থেকে। এতে আমি অত্যন্ত গর্বিত বোধ করছি। আমাদের খেলোয়াড়রা যে নিষ্ঠার সঙ্গে দেশের প্রতিনিধিত্ব করেছেন, তাতে একজন খেলোয়াড়ও এমন কোনো কাজ করেন নি যাতে দেশের নামে কালি লাগতে পারে। এটাই আমাদের সবচেয়ে বড় সম্পদ এবং এরজন্য গোটা দলই অভিনন্দনযোগ্য।

বন্ধুগণ,

আমি গর্বিত আপনারা বিশ্বজুড়ে তেরঙ্গার গৌরব বাড়িয়ে দেশে ফিরেছেন এবং আমার বাড়িতে আপনাদের স্বাগত জানাতে পেরে আমি সম্মানিত। আমাদের খেলোয়াড়রা তরুণ। তাঁরা অমূল্য অভিজ্ঞতা সঞ্চয় করেছেন যাতে দেশ এই অভিজ্ঞতা থেকে অনেক উপকৃত হবে।

সম্ভবত প্যারিস অলিম্পিক ভারতের কাছে অনেক দিক দিয়ে ঐতিহাসিক। গেমস-এ হওয়া রেকর্ড দেশের কোটি কোটি তরুণকে অনুপ্রেরণা জুগিয়েছে। অলিম্পিকের ১২৫ বছরের ইতিহাসে মনু প্রথম মহিলা অ্যাথলিট দুটি ব্যক্তিগত পদক জিতেছেন। নিরোদ চোপরা প্রথম ভারতীয় হিসেবে সোনা এবং রুপো জিতেছেন ব্যক্তিগত ইভেন্টে। হকিতে ভারত ৫২ বছরে এই প্রথম পর পর দুটি অলিম্পিকে পদক জিতেছে। আমন মাত্র ২১ বছর বয়েসে পদক জিতে দেশকে অনেক আনন্দ দিয়েছে। বিনেশ প্রথম ভারতীয় কুস্তির ফাইনালে উঠেছে যা উল্লেখযোগ্য সাফল্য। ভারতীয় শ্যুটাররা এই প্রথম ৭টি বিভাগে ফাইনালে উঠেছে। তেমনই তিরন্দাজিতে ধীরজ এবং অঙ্কিতা প্রথম ভারতীয় হিসেবে পদকের জন্য লড়াই করেছে। লক্ষ্য সেনের কীর্তি গোটা দেশকে অনুপ্রাণিত করেছে। প্রথম ভারতীয় হিসেবে তিনি সেমিফাইনালে উঠেছেন। অবিনাশ সাবলে প্রথম ভারতীয় হিসেবে স্টিপলচেজের ফাইনালে ওঠার যোগ্যতা অর্জন করেছেন।

বন্ধুগণ,

আমাদের বেশিরভাগ পদকজয়ীই তরুণ। এবারের অলিম্পিক হল তিন বছর বাদে। আর এক বছর অনুশীলন করতে পারলে আরও বড় সাফল্য সম্ভব ছিল। এই তরুণ দল ভারতীয় খেলার উজ্জ্বল ভবিষ্যতের চিহ্ন বহন করছে।

বন্ধুগণ,

আজ ভারত বিশ্বমানের ক্রীড়া পরিবেশ উন্নয়নে অগ্রাধিকার দিচ্ছে। আমরা গ্রাম এবং শহর থেকে তরুণ প্রতিভা তুলে আনতে খেলো ইন্ডিয়া অভিযান শুরু করেছি। 

আমার বিশ্বাস, খেলো ইন্ডিয়া উদ্যোগের মাধ্যমে আমরা নতুন এবং সম্ভাবনাময় প্রতিভা তুলে আনতে পারবো। আমি খুশি যে আপনারা অলিম্পিকের আগেই বিভিন্ন আন্তর্জাতিক প্রতিযোগিতায় অংশ নেওয়ার সুযোগ পেয়েছেন। একাধিক প্রশিক্ষক, বিশেষজ্ঞ- খ্যাদ্য তালিকা, ক্রীড়া সরঞ্জাম এবং প্রশিক্ষণের পাশাপাশি বিশ্বমানের সুযোগ-সুবিধা দেওয়ার যে প্রয়াস নেওয়া হয়েছে তা অভূতপূর্ব।

বন্ধুগণ,

আপনারা আমাদের দেশের যুব সমাজের কাছে অনুপ্রেরণার স্বরূপ। দেশ এবং তরুণ সমাজ আপনাদের প্রত্যেকের সঙ্গে পরিচিত হয়ে উঠেছে এটা খুব গুরুত্বপূর্ণ। গতবারের মতোই আমাদের কন্যারা আবার অলিম্পিকে ভারতের জয়ে নেতৃত্ব দিয়েছে। অঙ্কিতা এই মরশুমে সেরা কৃতিত্ব দেখিয়েছেন। মনিকা বাতরা এবং শ্রীজা আকুলা সকলের মনোযোগ আকর্ষণ করেছেন। একইরকমভাবে নীরজের ধারাবাহিকতা, স্বপ্নিলের সমস্যার মোকাবিলা করা এবং আমাদের সরপঞ্চ সাহেবের হকি দল সকলেই ভারতের শক্তি প্রদর্শন করেছে।

বন্ধুগণ,

ভারত ২০৩৬-এর অলিম্পিক সংগঠনের চেষ্টা করছে। আমি লালকেল্লার প্রাকার থেকে ঘোষণা করেছিলাম, আমরা পূর্ণাঙ্গ প্রস্তুতি গ্রহণ করেছি। আপনারাই আমাদের ২০৩৬-এর দলের অগ্রদূত। আপনাদের সাহায্য পেলে আমাদের অলিম্পিকের আয়োজন করতে সুবিধা হবে।

বন্ধুগণ,

খেলোয়াড় এবং প্রশিক্ষকরা মূল্যবান পরামর্শ দেন ভারতীয় ক্রীড়াকে এগিয়ে নিয়ে যেতে। ভবিষ্যতের খেলোয়াড়দের পথ দেখাতে, উদ্বুদ্ধ করতে আপনাদের দায়িত্ব আছে। ক্রীড়া মন্ত্রক আপনাদের সঙ্গে বিভিন্ন গোষ্ঠীর আলাপচারিতার ব্যবস্থা করবে। যাঁরা আমার সঙ্গে সরাসরি কথা বলেননি তাঁরাও সেইসব জায়গায় তাঁদের অভিজ্ঞতা ভাগ করে নিতে পারবেন। 

বন্ধুগণ,

আপনাদের সঙ্গে যখন দেখা করার সুযোগই হয়েছে, তখন আপনাদের একটি দায়িত্ব না দিয়ে ছেড়ে দিলে আজকের দিনটি অসম্পূর্ণ থেকে যাবে বলে আমার বিশ্বাস। আমি আপনাদের সকলকে ‘এক পেড় মা কে নাম’ অভিযানে অংশ নেওয়ার অংশ জানাচ্ছি। আপনার মা কে নিয়ে একটি গাছ রোপণ করুন। যদি মা না থাকে মায়ের ছবির পাশে একটি গাছ রোপণ করুন। গ্রামে ফিরে গিয়ে প্রাকৃতিক, রাসায়নিকমুক্ত চাষ সম্পর্কে তথ্য ভাগ করে নিন এবং ধরিত্রী মাতাকে রক্ষা করার গুরুত্বের ওপর জোর দিন। তরুণদের খেলতে উৎসাহ দিন এবং সুস্থ থাকতে উদ্বুদ্ধ করুন।

বন্ধুগণ,

আমার বিশ্বাস, আপনারা আমাদের দেশের জন্য আরও সম্মান নিয়ে আসবেন। আপনাদের মতো তরুণ প্রতিভার সাফল্য আমাদের দেশকে উন্নত দেশ হিসেবে গড়ে তোলার যাত্রাকে আরও গতি দেবে। এই আশা নিয়ে আমি আপনাদের প্রত্যেককে আন্তরিক শুভেচ্ছা জানাই। আমার কাছে আপনারা সকলেই সফল। আপনাদের মধ্যে এমন কেউ নেই যিনি কিছু না কিছু করেছেন। আমাদের একজন তরুণ যখন কিছু মহান কীর্তি গড়ে, আমাদের দেশ তখন নতুন উচ্চতায় পৌঁছতে উৎসাহিত হয়।

আরও একবার অভিনন্দন এবং শুভেচ্ছা, বন্ধুরা।

প্রধানমন্ত্রীর মূল ভাষণটি হিন্দিতে দিয়েছেন।
 

PG/AP/NS…


(Release ID: 2050975) Visitor Counter : 56