প্রধানমন্ত্রীরদপ্তর
azadi ka amrit mahotsav

কৃষি অর্থনীতি সংক্রান্ত আন্তর্জাতিক সম্মেলনের উদ্বোধনে প্রধানমন্ত্রীর ভাষণ

Posted On: 03 AUG 2024 12:03PM by PIB Kolkata

নয়াদিল্লি, ৩ আগস্ট ২০২৪

 

কৃষি ও কৃষককল্যাণ মন্ত্রী শ্রী শিবরাজ সিং চৌহান, কৃষি অর্থনীতির আন্তর্জাতিক সম্মেলনের সভাপতি ডঃ মোতিন কায়েম, নীতি আয়োগের সদস্য শ্রী রমেশজি, ভারত এবং অন্য দেশের কৃষি-বিজ্ঞানীগণ, কৃষিক্ষেত্রে গবেষণার কাজে যুক্ত বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের আমাদের সহকর্মীগণ, ভদ্রমহোদয়া এবং ভদ্রমহোদয়গণ,

আমি খুশি যে আইসিএই সম্মেলন ভারতে অনুষ্ঠিত হচ্ছে ৬৫ বছর পরে। আপনারা বিশ্বের নানা দেশ থেকে ভারতে এসেছেন। আমি ভারতের ১২ কোটি কৃষকের তরফে আপনাদের স্বাগত জানাই। আমি আপনাদের ভারতের ৩ কোটির বেশি মহিলা কৃষকের পক্ষ থেকে স্বাগত জানাই। আমি দেশের ৩ কোটি মৎস্যজীবীর পক্ষ থেকে স্বাগত জানাই। আমি আপনাদের দেশের ৮ কোটি পশুপালনকারীর পক্ষ থেকে স্বাগত জানাই। আপনারা ৫৫ কোটি প্রাণীর দেশে এসেছেন। আমি আপনাদের কৃষি এবং পশুপ্রেমীর দেশ ভারতে স্বাগত জানাই। 

বন্ধুগণ,

জীবন, খাদ্য এবং কৃষি নিয়ে প্রাচীন ভারতীয় প্রজ্ঞার ওপরই ভারত প্রতিষ্ঠিত। প্রায় ২ হাজার বছর আগে ‘কৃষি পরাশর’ নামে একটি পুঁথি লেখা হয়েছিল ভারতে যা সর্ব মানব ইতিহাসের একটি ঐতিহ্য। এটি বৈজ্ঞানিক কৃষিকার্যের ওপর একটি সার্বিক নথি। এটির অনূদিত সংস্করণও পাওয়া যায়। এই পুঁথিতে বিভিন্ন বিষয়ে লেখা আছে যেমন, কৃষির ওপর মহাজাগতিক শক্তির প্রভাব, বিভিন্ন ধরনের মেঘ, বৃষ্টিপাতের পরিমাপ এবং পূর্বাভাস দেওয়ার পদ্ধতি, বৃষ্টির জলে চাষ, জৈব সার, পশুপালন, বীজ রক্ষণ এবং মজুতকরণ। এই ঐতিহ্য মেনে শিক্ষা এবং গবেষণার একটি পরিবেশ গড়ে উঠেছিল ভারতীয় কৃষিতে। ইন্ডিয়ান কাউন্সিল অফ এগ্রিকালচারাল রিসার্চ-এর একারই আছে ১০০-র বেশি গবেষণা সংস্থা। ভারতে ৫০০-র বেশি কলেজ আছে কৃষি এবং কৃষি সংক্রান্ত বিষয়ে পড়াশোনা করার জন্য। ভারতে আছে ৭০০-র বেশি কৃষিবিজ্ঞান কেন্দ্র (এগ্রিকালচারাল সায়েন্স সেন্টার), যা কৃষকদের নতুন প্রযুক্তি যোগায়। 

বন্ধুগণ,

ভারতীয় কৃষির আরও একটি বৈশিষ্ট্য হল, আমরা এখনও ছ’টি ঋতুর ভিত্তিতে সব পরিকল্পনা করি। আমাদের দেশের একটি অভিনব বৈশিষ্ট্য - ১৫টি কৃষি-জলবায়ু অঞ্চল। ভারতে কয়েকশ’ কিলোমিটার গেলেই কৃষিকাজে পরিবর্তন দেখতে পাবেন। সমতলে কৃষিকাজ একরকম, হিমালয়ে কৃষিকাজ একরকম, মরুভূমিতে কৃষিকাজ একরকম, জল কম এমন জায়গায় কৃষিকাজ একরকম এবং উপকূল অঞ্চলে কৃষিকাজ একেবারেই অন্যরকম। এই বৈচিত্র্যই ভারতকে আন্তর্জাতিক খাদ্য নিরাপত্তার জন্য আলোর দিশা হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করেছে।

বন্ধুগণ,

শেষবার আইসিএই সম্মেলন যখন এখানে হয়েছিল, ভারত তখন সবেমাত্র স্বাধীন হয়েছে। তখন ভারতের খাদ্য নিরাপত্তা এবং কৃষির পক্ষে নানা সমস্যা। আজ ভারত ‘খাদ্য উদ্বৃত্ত’ দেশ। এখন ভারত দুধ, ডাল এবং মশলার বৃহত্তম উৎপাদক দেশ। খাদ্যশস্য, ফল, শাকসব্জি, তুলা, চিনি, চা এবং মৎস্যচাষে ভারত দ্বিতীয় বৃহত্তম উৎপাদক দেশ। একটা সময় ছিল যখন ভারতের খাদ্য নিরাপত্তা নিয়ে সারা বিশ্ব চিন্তিত ছিল, আর এখন ভারত আন্তর্জাতিক খাদ্য নিরাপত্তার সমাধান দিচ্ছে, আন্তর্জাতিক পুষ্টি নিরাপত্তায় সমাধান দিচ্ছে। সেজন্য, ‘খাদ্য ব্যবস্থার রূপান্তর’-এর মতো বিষয়ে আলোচনা করতে গেলে ভারতের অভিজ্ঞতা অমূল্য। এতে বিশেষ করে উপকৃত হবে গ্লোবাল সাউথ। 

বন্ধুগণ,

ভারত মানবতার কল্যাণে ‘বিশ্ববন্ধু’কে অগ্রাধিকার দিয়েছে। ভারত ‘এক বিশ্ব, এক পরিবার এবং এক ভবিষ্যৎ’-এর ধারণাকে তুলে ধরেছে জি-২০-র সময়। ভারত ‘মিশন লাইফ’-এর মন্ত্রও দিয়েছে যা জোর দেয় পরিবেশবান্ধব জীবনযাপনে। ভারত এরই পাশাপাশি, ‘এক বিশ্ব এক স্বাস্থ্য’ উদ্যোগও শুরু করেছে। আমরা কখনও মানুষ, প্রাণী এবং গ্রহের স্বাস্থ্যকে আলাদা করে দেখতে পারি না। আজ কৃষি এবং খাদ্য ব্যবস্থা যে সমস্যারই সম্মুখীন হোক না কেন, তার মোকাবিলা করতে হবে ‘এক বিশ্ব, এক পরিবার এবং এক ভবিষ্যৎ’-এর ভাবনা নিয়ে। 

বন্ধুগণ,

কৃষি আমাদের অর্থনীতির কেন্দ্রে। আমাদের দেশের প্রায় ৯০ শতাংশ পরিবারের খুব সামান্যই জমি আছে। এই ক্ষুদ্র চাষীরাই ভারতের খাদ্য নিরাপত্তার সবচেয়ে বড় শক্তি। এশিয়ার অনেক বিকাশশীল দেশেই এই একই পরিস্থিতি। সেজন্য ভারতের মডেল অনেক দেশেই কার্যকর হতে পারে। উদাহরণস্বরূপ, দীর্ঘস্থায়ী কৃষি একটি বিষয় যেখানে আমরা বড় পরিসরে রাসায়নিকমুক্ত প্রাকৃতিক চাষে জোর দিচ্ছি এবং আমরা এতে ইতিবাচক ফল পেয়েছি। এবারের বাজেটেও দীর্ঘস্থায়ী কৃষি এবং জলবায়ু সহনশীল কৃষিকাজের ওপর গুরুত্ব দিয়েছি। আমরা কৃষকদের সাহায্যার্থে একটা পরিবেশ তৈরির চেষ্টা করছি। জলবায়ু সহনশীল শস্য সংক্রান্ত গবেষণা ও উন্নয়নে ভারত জোর দিচ্ছে। গত ১০ বছরে আমরা প্রায় ১,৯০০ নতুন ধরনের জলবায়ু সহনশীল বীজ কৃষকদের দিয়েছি। এতে ভারতের কৃষকদের উপকার হয়েছে। আমাদের দেশে এমন কিছু ধরনের চাল আছে যার জন্য ২৫ শতাংশ কম জল লাগে চিরাচরিত চাষের থেকে। আমাদের দেশে সাম্প্রতিক কয়েক বছরে ‘ব্ল্যাক রাইস’ সুপার ফুড হয়ে গেছে। মণিপুর, মেঘালয় ও আসামের ‘ব্ল্যাক রাইস’ তার ঔষধি গুণের জন্য বহুল প্রশংসিত। ভারত ঐকান্তিক আগ্রহে চায় এই অভিজ্ঞতা সারা বিশ্বের সঙ্গে ভাগ করে নিতে।

বন্ধুগণ,

জলাভাব, জলবায়ু পরিবর্তন এবং পুষ্টি এ যুগে খুব গুরুত্বপূর্ণ সমস্যা। এই সমস্যার সমাধান আছে ভারতের কাছে। ভারত বিশ্বে মিলেটের সবচেয়ে বড় উৎপাদক, যাকে বিশ্ব বলে সুপার ফুড এবং আমরা এটিকে বলি ‘শ্রী অন্ন’। এতে জল লাগে কম, উৎপাদন হয় বেশি। ভারতের নানা ধরনের সুপার ফুড বিশ্বস্তরে পুষ্টির সমস্যার মোকাবিলায় গুরুত্বপূর্ণ ভুমিকা নিতে পারে। ভারত এই সুপার ফুডের ভাণ্ডার দিতে পারে বিশ্বকে। এছাড়া, গোটা বিশ্বে গত বছর ভারতের উদ্যোগে আন্তর্জাতিক মিলেট বর্ষ পালন করা হয়।

বন্ধুগণ,

গত এক দশকে আমরা কৃষির সঙ্গে আধুনিক প্রযুক্তির সংযোগ ঘটাবার জন্য নানা রকম প্রয়াস নিয়েছি। বর্তমানে একজন কৃষক তাঁর সয়েল হেলথ কার্ড ব্যবহার করে জানতে পারেন কি চাষ করতে হবে। তাঁরা পাম্প চালাতে পারেন সৌরশক্তিতে, পতিত জমিতে সৌরশক্তির মাধ্যমে কৃষিকাজ থেকে উপার্জনও করতে পারেন। তাঁরা ভারতের ডিজিটাল কৃষি বাজার ই-ন্যাম-এর মাধ্যমে তাঁদের উৎপাদিত ফসল বিক্রি করতে পারেন। তাঁরা কিষাণ ক্রেডিট কার্ড ব্যবহার করতে পারেন এবং তাঁদের শস্যের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে পারেন ‘প্রধানমন্ত্রী ফসল বিমা যোজনা’র মাধ্যমে। কৃষক থেকে কৃষি-প্রযুক্তি স্টার্ট-আপ পর্যন্ত, প্রাকৃতিক কৃষিকাজ থেকে মজুতকরণ এবং বিপণন পর্যন্ত ভারতে কৃষি এবং সেই সংক্রান্ত ক্ষেত্রগুলি নিয়মিত পরিশীলিত হচ্ছে। গত ১০ বছরে আমরা ৯০ লক্ষ হেক্টর কৃষি জমিকে ক্ষুদ্র সেচের অধীনে এনেছি। আমাদের ইথানল মেশানোর কর্মসূচি কৃষির পাশাপাশি পরিবেশকেও সাহায্য করছে। আমরা পেট্রোলে ২০ শতাংশ ইথানল মেশানোর লক্ষ্য পূরণের দিকে দ্রুত এগিয়ে চলেছি।

বন্ধুগণ,

ভারতে আমরা কৃষিক্ষেত্রে ডিজিটাল প্রযুক্তির বহুল ব্যবহার করছি। ‘পিএম কিষাণ সম্মান নিধি’র মাধ্যমে একটা ক্লিকে ৩০ সেকেন্ডের মধ্যে ১০ কোটি কৃষকের ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টে টাকা পাঠানো হচ্ছে। ডিজিটাল শস্য সমীক্ষার জন্য আমরা ডিজিটাল পাবলিক পরিকাঠামো তৈরি করছি। এতে আমাদের কৃষকরা তাৎক্ষণিক তথ্য পাবেন এবং সেইমতো সিদ্ধান্ত নিতে পারবেন। এই উদ্যোগে কয়েক কোটি কৃষক উপকৃত হবেন এবং তাঁদের আর্থিক সঙ্গতি বাড়বে। সরকার ভূমির পরচা ডিজিটাইজ করার বড়সড় অভিযান চালাচ্ছে। কৃষকদের ডিজিটাল আইডেন্টিফিকেশন নম্বর দেওয়া হবে তাঁদের জমির জন্য। আমরা কৃষিক্ষেত্রে ড্রোন ব্যবহারে উৎসাহ দিচ্ছি। আমাদের ‘ড্রোন দিদি’ মহিলারা ড্রোনের মাধ্যমে কৃষিকার্য পরিচালনা করছেন। এইসব পদক্ষেপই ভারতীয় কৃষকদের উপকৃত করবে এবং আন্তর্জাতিক খাদ্য নিরাপত্তাকে শক্তিশালী করবে।

বন্ধুগণ,

আপনারা আগামী পাঁচদিন ধরে এখানে বিস্তারিত আলোচনা করবেন। আমি আনন্দিত এখানে মহিলা এবং যুব সম্প্রদায়ের অধিক সংখ্যায় যোগদান দেখে। এঁরা প্রত্যেকেই খুব আগ্রহের সঙ্গে আপনাদের কথা শুনবেন বলে আমার আশা। এই সম্মেলন আমাদের সাহায্য করবে বিশ্বের দীর্ঘস্থায়ী কৃষি-খাদ্য ব্যবস্থার সঙ্গে সংযুক্ত করার পথ খুঁজে নিতে। আমরা একে-অপরের কাছ থেকে শিখব এবং একে-অপরকে শেখাবো।

বন্ধুগণ,

যেহেতু আপনারা কৃষির সঙ্গে যুক্ত, আমার মনে হয় একটা তথ্য আপনাদের জানানো দরকার। আমি তো জানি না বিশ্বে কোথাও কোনো কৃষকের মূর্তি বসানো হয়েছে। আমরা জানি বিশ্বের সর্বোচ্চ মূর্তি হল স্ট্যাচু অফ লিবার্টি। কিন্তু কৃষি-বিশ্বের আমার সহকর্মীরা জানলে খুশিই হবেন যে বিশ্বের বৃহত্তম মূর্তিটি হল ভারতের সর্দার বল্লভভাই প্যাটেলের মূর্তি যিনি আমাদের কৃষকদের তাঁদের শক্তি সম্পর্কে সচেতন করেছিলেন এবং তাঁদের ভারতের স্বাধীনতা আন্দোলনের মূলস্রোতে এনেছিলেন। এটি স্ট্যাচু অফ লিবার্টি থেকে দ্বিগুণ বড় এবং এটি একজন কৃষক নেতার। আরও একটি বিশেষ বৈশিষ্ট্য যে এই মূর্তিটি যখন তৈরি হয়, ভারতের ৬ লক্ষ গ্রামের কৃষককে তাঁদের খেতের কাজে ব্যবহৃত লোহার যন্ত্রপাতির টুকরো দিতে বলা হয়েছিল। ৬ লক্ষ গ্রাম থেকে সেই লোহার টুকরো এনে গলিয়ে বিশ্বের বৃহত্তম এই কৃষক নেতার মূর্তি তৈরিতে ব্যবহার করা হয়। আমি সত্যই সত্যই বিশ্বাস করি যে, এই দেশে একজন কৃষকের এই সন্তানকে বিরাট সম্মান দেওয়া হয়েছে, যা পৃথিবীর কোথাও কখনও ঘটেনি। আমি আত্মবিশ্বাসী যে আপনারা এখানে এসেছেন, আপনারা বিশ্বের এই দীর্ঘতম মূর্তি ‘স্ট্যাচু অফ ইউনিটি’ দেখতে আগ্রহী হবেন। আরও একবার আপনাদের সকলকে শুভেচ্ছা জানাই!

ধন্যবাদ!

প্রধানমন্ত্রী মূল ভাষণটি হিন্দিতে দিয়েছিলেন

 

PG/AP/DM


(Release ID: 2047751) Visitor Counter : 136