প্রধানমন্ত্রীরদপ্তর

প্রধানমন্ত্রী বারাণসীতে সন্ত গুরু রবিদাসের ৬৪৭তম জন্মবার্ষিকী উপলক্ষে আয়োজিত অনুষ্ঠানে ভাষণ দিয়েছেন

প্রধানমন্ত্রী সন্ত রবিদাসের নতুন প্রতিকৃতির আবরণ উন্মোচন করেছেন

সন্ত রবিদাসের জন্মস্থান সংলগ্ন অঞ্চলের উন্নয়ন সংক্রান্ত একগুচ্ছ প্রকল্পের উদ্বোধন ও শিলান্যাস করেছেন প্রধানমন্ত্রী

প্রধানমন্ত্রী সন্ত রবিদাস সংগ্রহশালা এবং তাঁর নামাঙ্কিত উদ্যানের সৌন্দর্যায়ন প্রকল্পের শিলান্যাস করেছেন

“দেশের যখনই প্রয়োজন হয় তখনই কোনো সাধু বা মহৎ ব্যক্তিত্ব ভারতে জন্মগ্রহণ করেন, এটিই এ দেশের ইতিহাস”

“সন্ত রবিদাসজি ভক্তি আন্দোলনের এক মহান সাধু ছিলেন যিনি দ্বিধাবিভক্ত দুর্বল ভারতবাসীর মনে নতুন শক্তির সঞ্চার ঘটিয়েছিলেন”

“সন্ত রবিদাসজি সমাজকে স্বাধীনতার গুরুত্ব উপলব্ধি করতে সহায়তা করেন এবং সামাজিক বিভাজনের অবসান ঘটাতে এক সেতুবন্ধ গড়ে তোলেন”

“রবিদাসজি সকলের এবং প্রত্যেকে রবিদাসজির”

“সরকার ‘সবকা সাথ সবকা বিকাশ’ মন্ত্র অনুসরণ করে সন্ত রবিদাসজির শিক্ষা ও আদর্শ প্রচারে ব্রতী হয়েছে”

“সন্ত রবিদাসজির ইতিবাচক শিক্ষাকে অনুসরণ করে আমাদের জাতিভেদ প্রথার নেতিবাচক মানসিকতাকে বর্জন করতে হবে”

Posted On: 23 FEB 2024 12:47PM by PIB Kolkata

নয়াদিল্লি, ২৩ ফেব্রুয়ারি, ২০২৪

 

প্রধানমন্ত্রী শ্রী নরেন্দ্র মোদী আজ বারাণসীতে সন্ত গুরু রবিদাসের ৬৪৭তম জন্মবার্ষিকী উপলক্ষে আয়োজিত অনুষ্ঠানে ভাষণ দিয়েছেন। বেনারস হিন্দু বিশ্ববিদ্যালয়ের সন্নিকটে সীর গোবর্ধনপুরে সন্ত গুরু রবিদাসের জন্মস্থানে তাঁর নতুন প্রতিকৃতির আবরণ উন্মোচন করেছেন শ্রী মোদী। এছাড়াও, ঐ অঞ্চলের উন্নয়ন সংক্রান্ত একগুচ্ছ প্রকল্পের উদ্বোধন ও শিলান্যাসও করেছেন তিনি। যে প্রকল্পগুলির উদ্বোধন করা হল, সেগুলির জন্য ব্যয় হয়েছে ৩২ কোটি টাকা। এছাড়াও, সন্ত রবিদাস সংগ্রহশালা এবং তাঁর নামাঙ্কিত উদ্যানের সৌন্দর্যায়ন প্রকল্পের শিলান্যাস করেছেন শ্রী মোদী। এর জন্য বরাদ্দ করা হয়েছে ৬২ কোটি টাকা। 

প্রধানমন্ত্রী তাঁর ভাষণে সন্ত রবিদাসজির জন্মস্থানে সকলকে স্বাগত জানান। দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে ভক্তরা রবিদাসজির ৬৪৭তম জন্মবার্ষিকী উপলক্ষে এখানে উপস্থিত হয়েছেন। পাঞ্জাব থেকে বহু ভক্ত কাশীতে অনুষ্ঠিত এই আয়োজনে অংশগ্রহণ করায় প্রধানমন্ত্রী তাঁদের মানসিকতার প্রশংসা করেন। তিনি বলেন, কাশী পাঞ্জাবের ক্ষুদ্র সংস্করণ হয়ে উঠেছে। সন্ত রবিদাসজির জন্মস্থান পুনরায় দর্শন করার এবং তাঁর আদর্শ ও নীতি প্রচারের সুযোগ পাওয়ায় তিনি নিজেকে ধন্য মনে করেন। 

প্রধানমন্ত্রী বলেন, কাশীর সাংসদ হিসেবে সন্ত রবিদাসজির ভক্ত ও অনুসারীদের সেবা করার সুযোগ পাওয়ায় তিনি কৃতজ্ঞ। এই প্রসঙ্গে তিনি সন্ত রবিদাসজির জন্মস্থানের মানোন্নয়ন সংক্রান্ত বিভিন্ন প্রকল্পের কথা উল্লেখ করেন। এর মধ্যে রয়েছে মন্দির সংলগ্ন অঞ্চলের উন্নয়ন, মন্দিরমুখী সড়ক নির্মাণ, পুজো দেওয়ার এবং প্রসাদ বিতরণের জায়গার ব্যবস্থা করা ইত্যাদি। এই প্রসঙ্গে প্রধানমন্ত্রী সন্ত রবিদাসের নতুন প্রতিকৃতির কথাও উল্লেখ করেন এবং তাঁর নামাঙ্কিত সংগ্রহশালার ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন। 

শ্রী মোদী বলেন, আজ মহান সাধু এবং সমাজ সংস্কারক গডজে বাবারও জন্মদিন, যিনি সমাজের দরিদ্র ও বঞ্চিত মানুষদের মানোন্নয়নে উল্লেখযোগ্য ভূমিকা পালন করেছেন। বাবাসাহেব আম্বেদকরও গডজে বাবার গুণমুগ্ধ ছিলেন এবং গডজে বাবাও বাবাসাহেবের আদর্শে অনুপ্রাণিত হয়েছিলেন। প্রধানমন্ত্রী গডজে বাবাকে তাঁর জন্মবার্ষিকীতে প্রণাম জানান। 

শ্রী মোদী বলেন, সন্ত রবিদাসের শিক্ষাকে তিনি সর্বদাই অনুসরণ করেন। তাঁর আদর্শ অনুসরণ করার জন্য তিনি নিজেকে ধন্য মনে করেন। সম্প্রতি মধ্যপ্রদেশে সন্ত রবিদাস স্মারকের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন তিনি। 

প্রধানমন্ত্রী বলেন, “দেশের যখনই প্রয়োজন হয় তখনই কোনো সাধু বা মহৎ ব্যক্তিত্ব ভারতে জন্মগ্রহণ করেন, এটিই এ দেশের ইতিহাস”। সন্ত রবিদাসজি ভক্তি আন্দোলনের এক মহান সাধু ছিলেন যিনি দ্বিধাবিভক্ত দুর্বল ভারতবাসীর মনে নতুন শক্তির সঞ্চার ঘটিয়েছিলেন। তিনি সমাজকে স্বাধীনতার গুরুত্ব উপলব্ধি করতে সহায়তা করেন এবং সামাজিক বিভাজনের অবসান ঘটাতে এক সেতুবন্ধ গড়ে তোলেন। অস্পৃশ্যতা, জাতিভেদ প্রথা এবং বৈষম্যের বিরুদ্ধে তিনি সর্বদাই সোচ্চার ছিলেন। “সন্ত রবিদাসজিকে কোনো মতবাদ বা ধর্ম বিশ্বাসে আবদ্ধ করা যায় না। রবিদাসজি সকলের এবং প্রত্যেকে রবিদাসজির”। প্রধানমন্ত্রী বলেন, বৈষ্ণব সম্প্রদায়ও সন্ত রবিদাসজিকে তাঁদের গুরু বলে বিবেচনা করেন কারণ, তিনি ছিলেন জগদ্গুরু রামানন্দের একজন ভক্ত। শিখ সম্প্রদায়ের মানুষরাও তাঁর প্রতি শ্রদ্ধাশীল। যাঁরা গঙ্গা নদীকে শ্রদ্ধা করেন এবং বারাণসীতে বসবাস করেন, তাঁরা সন্ত রবিদাসজির আদর্শকেও অনুসরণ করেন। বর্তমান সরকার ‘সবকা সাথ সবকা বিকাশ’ মন্ত্র অনুসরণ করে সন্ত রবিদাসজির শিক্ষা ও আদর্শ প্রচারে ব্রতী হয়েছে বলে শ্রী মোদী মত প্রকাশ করেন।

সন্ত রবিদাসের সাম্য সংক্রান্ত শিক্ষার প্রসঙ্গ উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, সমাজের পিছিয়ে পড়া মানুষদের যখন অগ্রাধিকার দেওয়া হয়, তখনই সাম্যের আদর্শকে অনুসরণ করা হয়। বর্তমান সরকার সেই আদর্শকে অনুসরণ করে। যাঁরা এতদিন উন্নয়নের সুফল পাননি, তাঁদের এখন উন্নয়নের ধারায় যুক্ত করা হচ্ছে। তিনি ৮০ কোটি ভারতবাসীর জন্য বিনামূল্যে রেশনের ব্যবস্থার প্রসঙ্গটিকে বিশ্বের বৃহত্তম কল্যাণমুখী প্রকল্প হিসেবে উল্লেখ করেন। “এই ধরনের এত বৃহৎ প্রকল্প পৃথিবীর অন্য কোনো দেশে কখনও কার্যকর হয়নি”। শ্রী মোদী বলেন, ‘স্বচ্ছ ভারত মিশন’-এর আওতায় দেশের নানা প্রান্তে শৌচাগার নির্মিত হচ্ছে। এর সুফল দলিত, পিছিয়ে পড়া সম্প্রদায় এবং তপশিলি জাতি, উপজাতি ও অন্যান্য অনগ্রসর শ্রেণীর মহিলারা সবথেকে বেশি পাচ্ছেন। একইভাবে, ‘জল জীবন মিশন’ পাঁচ বছরেরও কম সময়ে ১১ কোটি বাড়িতে নলবাহিত বিশুদ্ধ জল সরবরাহ করছে। কোটি কোটি দরিদ্র মানুষ আয়ুষ্মান কার্ডের মাধ্যমে তাঁদের জীবনের নিরাপত্তা পেয়েছেন। তাঁর ভাষণে প্রধানমন্ত্রী ‘জন ধন অ্যাকাউন্ট’, ‘প্রত্যক্ষ সুবিধা হস্তান্তর’-এর মতো গুরুত্বপূর্ণ আর্থিক সুবিধাগুলির কথা তুলে ধরেন। এর সুফল প্রত্যেকের কাছে পৌঁছচ্ছে। ‘কিষাণ সম্মান নিধি’র মাধ্যমে কৃষকদের কাছে যে অর্থ পৌঁছচ্ছে, বহু দলিত কৃষকও এর ফলে উপকৃত হচ্ছেন। এছাড়াও, ‘ফসল বিমা যোজনা’র মাধ্যমেও কৃষকরা উপকৃত হচ্ছেন। ২০১৪ সালের পর দলিত যুবক-যুবতীদের বৃত্তির পরিমান আগের থেকে দ্বিগুণ হয়েছে। ‘পিএম আবাস যোজনা’র আওতায় দলিত পরিবারগুলি কোটি কোটি টাকার অর্থ সহায়তা পেয়েছে।

শ্রী মোদী বলেন, দলিত, সমাজের পিছিয়ে পড়া শ্রেণী এবং দরিদ্র মানুষদের মানোন্নয়ন ঘটানো বর্তমান সরকারের অন্যতম উদ্দেশ্য। আর তাই, ভারতের উন্নয়ন বিশ্বে আলোচিত হচ্ছে। সাধু-সন্ন্যাসীদের বাণী প্রতিটি যুগে সকলকে যেমন পথ দেখিয়েছে, পাশাপাশি, বিভিন্ন বিপদ সম্পর্কে সতর্ক করেছে। রবিদাসজির বাণী উদ্ধৃত করে তিনি বলেন, জাতিভেদ প্রথার কারণে মানুষ পিছিয়ে থাকেন এবং এই প্রথা মানবজাতির সবথেকে বড় ব্যাধি। জাতের নামে কেউ যদি অন্য কারোর প্রতি যথাযথ আচরণ না করেন, তাহলে তা মানবজাতির পক্ষেও ক্ষতিকারক।

যাঁরা দলিত সম্প্রদায়ের কল্যাণের বিরোধিতা করে, সেই শক্তি সম্পর্কে প্রধানমন্ত্রী সকলকে সতর্ক  করে দেন। তিনি বলেন, এরা পরিবারতন্ত্রের রাজনীতিতে বিশ্বাসী এবং জাত-পাত ভিত্তিক রাজনীতিকে প্রশ্রয় দেয়। পরিবারতন্ত্রের রাজনীতি এইসব শক্তিকে লালিত করে। ফলে, এরা দলিত এবং আদিবাসীদের উত্থানের পক্ষে মত প্রকাশ করে না। “সন্ত রবিদাসজির ইতিবাচক শিক্ষাকে অনুসরণ করে আমাদের জাতিভেদ প্রথার নেতিবাচক মানসিকতাকে বর্জন করতে হবে”।

রবিদাসজির বাণী উদ্ধৃত করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, কেউ যদি শত শত বছর ধরে বেঁচে থাকেন, তাহলে তাঁকে সারা জীবন ধরেই কাজ করতে হবে, কারণ, কর্মই ধর্ম এবং নিঃস্বার্থভাবে সকল কাজ করতে হবে। সন্ত রবিদাসজির এই বাণী আজও সারা দেশের জন্য সমানভাবে প্রযোজ্য। স্বাধীনতার অমৃতকালে দেশের বিভিন্ন উদ্যোগের কথা উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘বিকশিত ভারত’ বা উন্নত ভারত গড়ে তোলার শক্তিশালী ভিত তৈরি হয়েছে। আগামী পাঁচ বছরে এই ভিতকে আরও শক্তিশালী করে তুলতে হবে। ১৪০ কোটি দেশবাসীর সক্রিয় অংশগ্রহণের মাধ্যমেই দরিদ্র এবং বঞ্চিত মানুষদের কল্যাণে কাজ করা সম্ভব। “আমাদের দেশের কথা ভাবতে হবে। বিভেদকামী শক্তিকে দূরে সরিয়ে রেখে দেশের ঐক্যকে শক্তিশালী করে তুলতে হবে।” তাঁর ভাষণের শেষে প্রধানমন্ত্রী আশা প্রকাশ করেন, সন্ত রবিদাসজির আশীর্বাদে দেশবাসীর সকল স্বপ্ন পূরণ হবে। 

অনুষ্ঠানে উত্তরপ্রদেশের মুখ্যমন্ত্রী শ্রী যোগী আদিত্যনাথ এবং সন্ত গুরু রবিদাস জন্মস্থান মন্দির ট্রাস্টের চেয়ারম্যান সন্ত নিরঞ্জন দাস সহ বিশিষ্টজনেরা উপস্থিত ছিলেন। 


PG/CB/DM



(Release ID: 2008366) Visitor Counter : 48