প্রধানমন্ত্রীরদপ্তর

প্রধানমন্ত্রী উত্তরপ্রদেশের সাম্ভালে শ্রী কল্কিধাম মন্দিরের শিলান্যাস করেছেন

Posted On: 19 FEB 2024 12:37PM by PIB Kolkata

নতুন দিল্লি, ১৯ ফেব্রুয়ারি, ২০২৪

 

প্রধানমন্ত্রী শ্রী নরেন্দ্র মোদী আজ উত্তরপ্রদেশের সাম্ভাল জেলায় শ্রী কল্কিধাম মন্দিরের শিলান্যাস করেছেন। প্রধানমন্ত্রী শ্রী কল্কিধাম মন্দিরের মডেলেরও আবরণ উন্মোচন করেন। শ্রী কল্কিধাম নির্মাণ করছে শ্রী কল্কিধাম নির্মাণ ট্রাস্ট যার চেয়ারম্যান আচার্য প্রমোদ কৃষ্ণম। অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন বহু সাধু, আধ্যাত্মিক নেতা এবং অন্য বিশিষ্ট জন।

সমাবেশে ভাষণে প্রধানমন্ত্রী বলেন, আজ আরও একটি গুরুত্বপূর্ণ তীর্থস্থানের যখন শিলান্যাস হচ্ছে তখন আরও একবার ভগবান শ্রী রাম এবং ভগবান শ্রী কৃষ্ণের ভূমি পূর্ণ হয়ে উঠেছে ভক্তি, ভাবাবেগ এবং আধ্যাত্মিকতায়। সাম্ভালে শ্রী কল্কিধাম মন্দিরের শিলান্যাসের সুযোগ পেয়ে কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেছেন মোদী এবং বলেছেন, এটি ভারতের আধ্যাত্মিকতার একটি নতুন কেন্দ্র হিসেবে গড়ে উঠবে বলে তাঁর বিশ্বাস। প্রধানমন্ত্রী মোদী সারা বিশ্বের সকল নাগরিক এবং তীর্থযাত্রীদের শুভেচ্ছা জানিয়েছেন।

ধামের উদ্বোধনের জন্য ১৮ বছর অপেক্ষার উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, মনে হচ্ছে এরকম বহু কাজ যেন বাকি ছিল তাঁর জন্য। তিনি বলেন, মানুষ এবং সাধুসন্তদের আশীর্বাদ নিয়ে তিনি সমস্ত অসম্পূর্ণ কাজ সম্পূর্ণ করবেন।

আজ ছ্ত্রপতি শিবাজী মহারাজের জয়ন্তীর দিনে তাঁর উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বর্তমানের সাংস্কৃতিক পুনর্জাগরণ, আমাদের আত্মপরিচয়ের গরিমা ও আত্মবিশ্বাসের জন্য শিবাজী মহারাজকে কৃতিত্ব দেন। প্রধানমন্ত্রী ছত্রপতি শিবাজী মহারাজের প্রতি শ্রদ্ধা জানান।

মন্দিরের স্থাপত্যের উপর আলোকপাত করে প্রধানমন্ত্রী জানান, এখানে থাকবে ১০টি গর্ভগৃহ। যেখানে ভগবানের ১০ অবতারই বিরাজ করবে। প্রধানমন্ত্রী ব্যাখ্যা করে বলেন, যদিও শাস্ত্রে ১০ জন অবতারের কথা আছে তবে ভগবানের আরও নানা রূপ আছে, এমনকি মানব রূপও। প্রধানমন্ত্রী বলেন, “জীবনে একজন ঐশ্বরিক চেতনা অনুভব করতে পারেন, আমরা সিংহ রূপে, বরাহ রূপে এবং কচ্ছপের রূপে ভগবানের উপস্থিতি অনুভব করেছি।” তিনি বলেন যে, এইসব রূপে ভগবানের স্থিতি থেকে বোঝা যায় মানুষ কিভাবে ঈশ্বরকে তার সামগ্রিক রূপে দেখেছে। প্রধানমন্ত্রী শ্রী কল্কিধাম মন্দিরের শিলান্যাসের সুযোগ পাওয়ার জন্য ঈশ্বরের আশীর্বাদের উল্লেখ করেন। প্রধানমন্ত্রী অনুষ্ঠানে উপস্থিত সাধুসন্তদের উদ্দেশ্যেও প্রণাম জানান, তাঁদের দিক নির্দেশনার জন্য। প্রধানমন্ত্রী ধন্যবাদ জানান শ্রী আচার্য প্রমোদ কৃষ্ণমকেও।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, ভারতের সাংস্কৃতিক নবজাগরণে আজকের অনুষ্ঠানটি আরও একটি সুন্দর মুহূর্ত। অযোধ্যাধামে রাম মন্দিরের প্রতিষ্ঠা এবং আবুধাবিতে সম্প্রতি মন্দিরের উদ্বোধনের উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, “যা ছিল কল্পনার অতীত, তা এখন বাস্তবে পরিণত হয়েছে”।

পর পর এই ধরনের কর্মসূচির অন্তর্গত মূল্যবোধটি তুলে ধরেন প্রধানমন্ত্রী। তিনি আধ্যাত্মিকতার পুনরুত্থানের বিষয়ে বলতে থাকেন, কাশীতে বিশ্বনাথধাম, কাশীর রূপান্তর, সোমনাথের মহাকাল মহালোক এবং কেদারনাথ ধামের উল্লেখ করেন। তিনি বলেন, “‘বিকাশ ভি বীরাসত ভি’ – উন্নয়নের সঙ্গে ঐতিহ্যের মন্ত্র নিয়ে আমরা পথ চলেছি”। তিনি অত্যাধুনিক নগর পরিকাঠামোর সঙ্গে সঙ্গে আধ্যাত্মিক কেন্দ্র স্থাপন, নতুন মেডিকেল কলেজ স্থাপনের সঙ্গে মন্দির প্রতিষ্ঠা এবং বিদেশী লগ্নির সঙ্গে বিদেশ থেকে শিল্পবস্তু ফেরানোর তুলনা করেন। তিনি বলেন, এর থেকে ইঙ্গিত পাওয়া যায় যে, সময়ের চাকা ঘুরে গেছে। তিনি লালকেল্লার প্রাঙ্গণ থেকে তাঁর আহ্বানের কথা জানান  - ‘ইয়ে হ্যয় সময়, ইয়ে হ্যায় সহি সময়’ এবং নতুনকে আলিঙ্গন করার প্রয়োজনীয়তার উপর জোর দেন। 

অযোধ্যায় শ্রী রাম জন্মভূমি মন্দির প্রতিষ্ঠা উৎসবের উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী ২০২৪-এর ২২ জানুয়ারি থেকে নতুন ‘কালচক্র’-এর সূচনার কথা পুনরায় বলেন এবং হাজার বছর ধরে চলা রাম রাজত্বের প্রভাবকে তুলে ধরেন। একইরকমভাবে রামলালা যখন বিরাজমান ভারত নতুন যাত্রা শুরু করেছে, সেখানে আজাদি কা অমৃত কালে বিকশিত ভারত শুধু স্বপ্ন নয় একটি সংকল্প। প্রধানমন্ত্রী বলেন, “ভারতের সংস্কৃতি এবং ঐতিহ্য প্রত্যেকটি সময়কালে এই সংকল্পের মধ্য দিয়ে বেঁচেছে”। শ্রী কল্কির রূপ নিয়ে শ্রী আচার্য প্রমোদ কৃষ্ণমজির গবেষণা এবং অনুশীলন সম্পর্কে বলতে গিয়ে প্রধানমন্ত্রী শাস্ত্রের জ্ঞান ও বৈশিষ্ট্যকে তুলে ধরেন এবং জানান যে, কল্কির রূপ আগামী হাজার বছরের ভবিষ্যতের পথ নির্দেশ করবে, যেমন করেন ভগবান শ্রী রাম। 

প্রধানমন্ত্রী বলেন, “কল্কি কালচক্র পরিবর্তনের সূচনাকারী এবং প্রেরণার উৎস”। তিনি বলেন যে, কল্কিধাম সেই ভগবানের উদ্দেশ্যে নিবেদিত স্থান হতে চলেছে, যার প্রতিষ্ঠা এখনও বাকি। তিনি বলেন যে, ভবিষ্যৎ নিয়ে এই ধারণা, তা কয়েক হাজার বছর আগে শাস্ত্রে লিখিত ছিল। এই বিশ্বাস, এই আস্থা নিয়ে সমগ্র জীবন অতিবাহিত করার জন্য শ্রী মোদী আচার্য প্রমোদ কৃষ্ণমের প্রশংসা করেন। কল্কি টেম্পল প্রতিষ্ঠার জন্য পূর্ববর্তী সরকারগুলিরি সঙ্গে আচার্যজির দীর্ঘ লড়াইয়ের কথা তুলে ধরেন তিনি এবং জানান যে এর জন্য আদালতেও যেতে হয়েছে। আচার্যজির সঙ্গে সাম্প্রতিক আলোচনার কথা মনে করিয়ে দিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, তিনি তাঁকে একজন রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব হিসেবেই জানতেন, কিন্তু পরে জানতে পারেন ধর্ম এবং আধ্যাত্মিকতা নিয়ে তাঁর নিষ্ঠার বিষয়ে। প্রধানমন্ত্রী বলেন, “আজ প্রমোদ কৃষ্ণমজি মনের শান্তিতে মন্দিরের কাজ শুরু করার অবকাশ পাবেন।” প্রধানমন্ত্রী আত্মবিশ্বাস নিয়ে বলেন, এই মন্দির হবে সুন্দর ভবিষ্যতের লক্ষ্যে বর্তমান সরকারের ইতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গির একটি প্রমাণ। 

প্রধানমন্ত্রী বলেন যে, ভারত জানে কিভাবে পরাজয়ের করাল গ্রাস থেকে জয় ছিনিয়ে আনতে হয়। একাধিক আগ্রাসনের বিরুদ্ধে ভারতীয় সমাজের দৃঢ়তার কথা তুলে ধরেন তিনি। মোদীজি বলেন, “বর্তমানে ভারতের অমৃত কালে ভারতের গৌরব, উচ্চতা এবং শক্তির বীজের স্ফূরণ ঘটছে”। তিনি আরও বলেন যে, যখন সাধুসন্ত এবং আধ্যাত্মিক নেতারা নতুন মন্দির তৈরি করছেন, তখন তাঁর দায়িত্ব পড়েছে রাষ্ট্রমন্দির নির্মাণের। তিনি আরও বলেন, “রাত দিন আমি রাষ্ট্রমন্দিরের গৌরব ছড়িয়ে দিতে কাজ করে চলেছি”। প্রধানমন্ত্রী মোদী বলেন, “বর্তমানে এই প্রথম ভারত এমনই একটি স্থানে আছে যেখানে আমরা শুধু অনুসরণ করছি তা নয়, আমরা উদাহরণ তৈরি করছি।” প্রধানমন্ত্রী প্রতিশ্রুতির ফলাফলের তালিকা দেন এবং সেই সূত্রে যেসব সাফল্যের উল্লেখ করেন সেগুলি হল - ভারত ডিজিটাল প্রযুক্তি এবং উদ্ভাবনের হাব হয়ে উঠছে, ভারত পঞ্চম বৃহত্তম অর্থনীতি হয়ে উঠেছে, চন্দ্রযানের সাফল্য, বন্দে ভারত এবং নমো ভারতের মতো আধুনিক ট্রেন, আসন্ন বুলেট ট্রেন, হাইটেক জাতীয় সড়ক এবং এক্সপ্রেস ওয়ের নেটওয়ার্ক। প্রধানমন্ত্রী বলেন, এইসব প্রাপ্তি ভারতীয়দের গর্ব অনুভব করার সুযোগ দিয়েছে এবং “এই ইতিবাচক ভাবনার প্রবাহ এবং দেশের আত্মবিশ্বাস চমকপ্রদ, সেইজন্য আজ আমাদের অসীম ক্ষমতা এবং আমাদের সম্ভাবনাও প্রবল”। 

প্রধানমন্ত্রী বলেন, “একটি দেশ সাফল্যের প্রাণশক্তি পায় সঙ্ঘবদ্ধতায়”। তিনি আজকের ভারতে একটি বিশাল ঐক্যবদ্ধ চেতনাকে দেখতে পারছেন। তিনি বলেন, “প্রত্যেক নাগরিক সবকা সাথ, সবকা বিকাশ, সবকা বিশ্বাস এবং সবকা প্রয়াসের মন্ত্র নিয়ে কাজ করছেন”।

গত ১০ বছরের নানা উদ্যোগের তালিকা দেন প্রধানমন্ত্রী – পিএম আবাস যোজনায় ৪ কোটির বেশি পাকা বাড়ি, ১১ কোটি শৌচাগার, ২.৫ কোটি পরিবারে বিদ্যুৎ, ১০ কোটির বেশি বাড়িতে নলবাহিত জল, ৮০ কোটি নাগরিককে বিনামূল্যে রেশন, ১০ কোটি মহিলাকে ভর্তুকিতে গ্যাস সিলিন্ডার, ৫০ কোটি আয়ুষ্মান কার্ড, ১০ কোটি কৃষকের জন্য কৃষক সম্মাননিধি, অতিমারির সময়ে বিনামূল্যে টিকাকরণ, স্বচ্ছ ভারত।

প্রধানমন্ত্রী সরকারের কাজের দ্রুততা এবং মানের জন্য দেশের নাগরিকদের কৃতিত্ব দেন। তিনি বলেন, বর্তমানে মানুষ, গরিব মানুষকে সাহায্য করছে সরকারের কর্মসূচির সুবিধা পেতে এবং কাজের ১০০ শতাংশ রূপায়ণের অভিযানে অংশ নিচ্ছেন। তাঁর মন্তব্য, দরিদ্র মানুষকে সেবার ভাবনা এসেছে ভারতের আধ্যাত্মিক মূল্যবোধ থেকে, যা প্রতিটি মানুষকে শেখায় যে সব মানুষের মধ্যেই নারায়ণ আছে। তিনি ‘বিকশিত ভারত গঠন’ এবং ‘আমাদের ঐতিহ্যের প্রতি গর্ব’-এর ৫টি নীতি মেনে চলার আহ্বানের পুনরুল্লেখ করেন।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, “যখনই ভারত বড় সংকল্প নেয় তখনই ঐশ্বরিক চেতনা নিশ্চিতভাবে কোনো না কোনো রূপে আমাদের মধ্যে উপস্থিত হয়”। গীতার দর্শনের উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী নিরলস কাজের প্রয়োজনীয়তার উপর জোর দেন। প্রধানমন্ত্রী সব শেষে বলেন, “এই পরবর্তী ২৫ বছরের ‘কর্তব্যকালে’ আমাদের কঠোর পরিশ্রমের শিখরে উঠতে হবে। আমাদের দেশকে সবার আগে রেখে নিঃস্বার্থভাবে সেবা করতে হবে। আমাদের প্রত্যেকটি প্রয়াসে দেশ লাভবান হবে এই কথাটি আমাদের মনে রাখতে হবে। এটিই আমাদের দেশের সব সমস্যা সমাধানের পথ দেখাবে।”

উত্তরপ্রদেশের মুখ্যমন্ত্রী শ্রী যোগী আদিত্যনাথ, শ্রী কল্কি ধামের পীঠাধীশ্বর আচার্য প্রমোদ কৃষ্ণম এই অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন অন্যদের মধ্যে। 

PG/AP/SKD



(Release ID: 2007159) Visitor Counter : 60