প্রধানমন্ত্রীরদপ্তর

রাজ্যসভায় রাষ্ট্রপতির ভাষণের ধন্যবাদ প্রস্তাবে প্রধানমন্ত্রীর জবাবী ভাষণ

Posted On: 07 FEB 2024 9:25PM by PIB Kolkata

নতুন দিল্লি, ৭ ফেব্রুয়ারি, ২০২৪

 

মাননীয় সভাপতি মহোদয়,

আমি মাননীয়া রাষ্ট্রপতির অভিভাষণ নিয়ে আলোচনায় অংশগ্রহণের জন্য উপস্থিত হয়েছি।আমি মাননীয় রাস্ট্রপতিজিকে তাঁর ভাষণের জন্য আমার পক্ষ থেকে ধন্যবাদ জানাই, অভিনন্দনও জানাই।    
মাননীয় সভাপতি মহোদয়,
এই ৭৫তম সাধারণতন্ত্র দিবস নিজেই একটি গুরুত্বপূর্ণ মাইলফলক। আর সে সময় সংবিধান প্রণয়নের এই গুরুত্বপূর্ণ পর্যায়ে রাষ্ট্রপতিজির ভাষণেরও ঐতিহাসিক তাৎপর্য রয়েছে। আর তাঁর বক্তৃতায় তিনি ভারতের আত্মবিশ্বাসের কথা বলেছেন, ভারতের উজ্জ্বল ভবিষ্যতের প্রতি আস্থা প্রকাশ করেছেন এবং ভারতের কোটি কোটি মানুষের সামর্থ্যকে খুব কম কথায়, কিন্তু অত্যন্ত অসাধারণ ভঙ্গিতে, দেশের সামনে এই সভার মাধ্যমে উপস্থাপন করেছেন। আমি এই অনুপ্রেরণাদায়ক ভাষণের মাধ্যমে জাতিকে দিকনির্দেশ প্রদানের জন্য এবং উন্নত ভারতের সংকল্পকে শক্তিশালী করার জন্য রাষ্ট্রপতিজির প্রতি আমার আন্তরিক কৃতজ্ঞতা জানাই।
আলোচনা চলাকালীন অনেক সম্মানিত সদস্য তাদের মতামত ব্যক্ত করেছেন এবং আলোচনাকে সমৃদ্ধ করার চেষ্টা করেছেন। যারা এই আলোচনাকে সমৃদ্ধ করার প্রচেষ্টা চালিয়েছেন সেই সকল সম্মানিত বন্ধুকে আমি আমার আন্তরিক কৃতজ্ঞতা ও অভিনন্দন জানাই। কয়েকজন বন্ধুর জন্য, সমালোচনা করা এবং কটু কথা বলার বাধ্যতা ছিল, আমি তাঁদের প্রতিও সমবেদনা জানাই।
আমি সেদিন তো বলতে পারিনি, কিন্তু আমি খাড়্গেজির প্রতি বিশেষ কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করছি। আমি খুব মনোযোগ দিয়ে খাড়্গেজির কথা শুনছিলাম এবং খুব আনন্দ অনুভব করছিলাম - এমন আনন্দ... এমন আনন্দ পাওয়া খুব বিরল। মাঝে মধ্যে আমরা লোকসভায় তাঁর সঙ্গে দেখা করতে পারি, কিন্তু আজকাল তিনি অন্য দায়িত্বে রয়েছেন, তাই আমরা কম বিনোদন পাই। কিন্তু লোকসভায় আমরা যে বিনোদনের অভাব বোধ করি সেদিন তা আপনি সেদিন পূরণ করে দিয়েছেন। আর আমি আনন্দিত ছিলাম যে মাননীয় খাড়্গেজি অনেকক্ষণ ধরে কথা বলছিলেন, বেশ সময় নিয়ে, শান্তভাবে এবং আনন্দের সঙ্গে, তিনি অন্যদের যথেষ্ট সময়ও দিয়েছিলেন। তখন ভাবছিলাম তিনি কিভাবে স্বাধীনতা পেলেন, এত কথা বলার স্বাধীনতা কিভাবে পেলেন? আমি এই কথা ভাবছিলাম, কিন্তু পরে আমার মাথায় আসে যে দুজন বিশেষ কমান্ডার থাকেন, তাঁরা সেদিন সেখানে ছিলেন না, তাঁরা আজকাল থাকেন না। আর সেই কারণেই শ্রদ্ধেয় খাড়্গেজি স্বাধীনতার পূর্ণ সদ্ব্যবহার করেছেন। আর আমার মনে হয়, সেদিন খাড়্গেজি নিশ্চয়ই একটি সিনেমার গান শুনে এসেছিলেন, অ্যাইসা মৌকা ফির কহাঁ মিলেগা!  এমন সুযোগ তিনি আবার কবে পাবেন! এখন খাড়্গেজিও আম্পায়ার নন, কমান্ডোরা সামনে না থাকায় তিনি চার-ছক্কা হাঁকানো উপভোগ করছিলেন। তবে খুশি হওয়ার একটা বিষয় ছিল। তিনি যে এনডিএ-কে ৪০০টি আসনের জন্য আশীর্বাদ দিয়েছিলেন, আর আমি খাড়্গেজির এই আশীর্বাদ গ্রহণ করেছি, আপনার আশীর্বাদ আমার মাথা পেতে নিয়েছি। এখন আপনি যদি আশীর্বাদ ফিরিয়ে নিতে চান, তাহলে ফিরিয়ে নিতে পারেন, কারণ আমাদের জয় তো নিশ্চিতই।
মাননীয় সভাপতি মহোদয়,
আমার স্পষ্ট মনে আছে গত বছরের সেই ঘটনা, আমরা সংসদের সেই সভাকক্ষে বসে থাকতাম এবং দেশের প্রধানমন্ত্রীর কণ্ঠস্বরকে থামিয়ে দেওয়ার সর্বাত্মক চেষ্টা করা হয়েছিল। আমরা অত্যন্ত ধৈর্য ও বিনয়ের সঙ্গে আপনার প্রতিটি কথা শুনছিলাম। আর আজও আপনারা না শোনার জন্য প্রস্তুত হয়ে এসেছেন, না শোনার জন্য প্রস্তুত হয়ে এসেছেন, কিন্তু আমার কণ্ঠকে দমিয়ে রাখতে পারবেন না। দেশের জনগণ এই কণ্ঠে শক্তি জুগিয়েছেন। দেশের সাধারণ মানুষের আশীর্বাদে এই কণ্ঠস্বর বের হচ্ছে আর এজন্যই আপনারা গতবার আটকাতে পারেন নি, এবার আমিও পূর্ণ প্রস্তুতি নিয়ে এসেছি। আমি তখন ভেবেছিলাম, আপনার মতো ব্যক্তি যখন এই সভাকক্ষে এসেছেন, তখন মর্যাদা রক্ষা করা হবে, কিন্তু আপনারা সেদিন দেড়-দুই ঘণ্টা ধরে আমার ওপর কী অত্যাচারই না করেছিলেন! কিন্তু তার পরেও আমি একটি শব্দেও মর্যাদা ভঙ্গ করিনি।
মাননীয় সভাপতি মহোদয়,
আমিও একটি প্রার্থনা করেছি। আপনারা প্রার্থনা তো করতে পারেন, আমি তো প্রার্থনা করতে থাকি। পশ্চিমবঙ্গ থেকে আপনারা যে চ্যালেঞ্জ পেয়েছেন তা হল কংগ্রেস ৪০ পার করতে পারবে না। আমি প্রার্থনা করি, আপনারা যেন ৪০টি আসন বাঁচাতে পারেন।
মাননীয় সভাপতি মহোদয়,
আমাদের অনেক বলা হয়েছে এবং আমরা শুনেছি। গণতন্ত্রে আপনার বলার অধিকার আছে এবং আমাদের শোনার দায়িত্ব আছে। আর আজ যত কথা হয়েছে, তা আমার দেশের সামনে তুলে ধরা উচিত আর তাই আমি চেষ্টা করবো।
মাননীয় সভাপতি মহোদয়,
এসব কথা যখন শুনি, ওখানেও শুনি, এখানেও শুনি, তখন আমার বিশ্বাস নিশ্চিত হয় দলটি চিন্তাভাবনার ক্ষেত্রেও কালবাহ্য হয়ে পড়েছে। আর যখন চিন্তাভাবনা কালবাহ্য হয়ে গেছে, তাঁরা তাঁদের কর্মপদ্ধতিও আউটসোর্স করে নিয়েছেন।দেখতে দেখতে এত বড় দল, এত দশক ধরে দেশকে শাসন করা দলটির এমন পতন, এমন পতন দেখে আমরা খুশি নই, আপনাদের প্রতি আমাদের সমবেদনা জানাই। কিন্তু ডাক্তার কী করবে, রোগী নিজেই যখন…, এরপর আর কী বলব?
মাননীয় সভাপতি মহোদয়,
এটা সত্য যে আজ অনেক বড় বড় কথা বলা হচ্ছে, আমরা শোনার শক্তিও হারিয়ে ফেলেছি, তবে আমি অবশ্যই দেশের সামনে বিষয়টি তুলে ধরতে বলব। যে কংগ্রেস তার ক্ষমতার লোভে প্রকাশ্যে গণতন্ত্রকে গলা টিপে মেরেছিল, যে কংগ্রেস কয়েক ডজন বার গণতান্ত্রিকভাবে নির্বাচিত সরকারগুলোকে রাতারাতি ভেঙে দিয়েছিল, বরখাস্ত করেছিল, যে কংগ্রেস দেশের সংবিধান ও গণতন্ত্রের মর্যাদাকে লঙ্ঘন করেছিল, কারাগারে বন্দী করেছিল, যে কংগ্রেস এমনকি খবরের কাগজের অফিসগুলিতে তালা মারার চেষ্টা করেছিল, আর আজ যে কংগ্রেসে দেশকে ভাঙার ন্যারেটিভ তৈরির নতুন শখ গড়ে উঠেছে! এত ভেঙে তাঁদের শখ মেটেনি, এখন উত্তর-দক্ষিণকে বিভাজিত করার বিবৃতি দেওয়া হচ্ছে? আর এখন এই কংগ্রেস আমাদের গণতন্ত্র ও যুক্তরাষ্ট্রীয় ব্যবস্থা নিয়ে প্রবচন শোনাচ্ছে? 
মাননীয় সভাপতি মহোদয়,
যে কংগ্রেস জাতি ও ভাষার নামে দেশকে বিভক্ত করার কোনও চেষ্টাই বাকি রাখে নি, যে কংগ্রেস নিজের স্বার্থে সন্ত্রাসবাদ ও বিচ্ছিন্নতাবাদকে বেড়ে উঠতে দিয়েছে, যে কংগ্রেস উত্তর-পূর্ব ভারতকে হিংসা, বিচ্ছিন্নতা ও পশ্চাৎপদতার দিকে ঠেলে দিয়েছে, যে কংগ্রেসের শাসনকালে দেশের সামনে নকশালবাদ একটি  বিরাট সমস্যা হয়ে উঠেছিল, যে কংগ্রেস দেশের বিশাল এলাকা শত্রুদের হাতে তুলে দিয়েছিল, যে কংগ্রেস দেশের সেনাবাহিনীর আধুনিকীকরণ বন্ধ করে দিয়েছিল, সেই কংগ্রেস আজ আমাদের জাতীয় নিরাপত্তা ও অভ্যন্তরীণ নিরাপত্তা নিয়ে বক্তৃতা দিচ্ছে? যে কংগ্রেস স্বাধীনতার পর থেকে বিভ্রান্ত ছিল যে শিল্পের প্রয়োজন বেশি নাকি কৃষি বেশি প্রয়োজন,  যে কংগ্রেস জাতীয়করণ বা বেসরকারিকরণের সিদ্ধান্ত নিতে পারেনি, বিভ্রান্ত হয়ে পড়ছে। যে কংগ্রেস দেশের অর্থনৈতিক ব্যবস্থাকে ১০ বছরে ১২ নম্বর থেকে ১১ নম্বরে, ১০ বছরে ১২ নম্বর থেকে ১১ নম্বরে নিয়ে আসতে সক্ষম হয়েছিল। আর ১২ তম স্থান থেকে ১১ তম স্থান পেতে খুব বেশি পরিশ্রম করতে হয় না, কিন্তু যতই উন্নতি করবেন, পরিশ্রম আরও বেশি করতে হয়, আমরা ১০ বছরে ৫ম স্থানে তুলে এনেছি, আর এই কংগ্রেস আমাদের এখানে অর্থনীতি নিয়ে বড়ো বড়ো ভাষণ দিচ্ছে?
মাননীয় সভাপতি মহোদয়,
যে কংগ্রেস ওবিসিদের সম্পূর্ণ সংরক্ষণ দেয়নি, যে কংগ্রেস সাধারণ শ্রেণীর গরীবদের কখনও সংরক্ষণ দেয়নি, যে কংগ্রেস বাবা সাহেবকে ভারতরত্ন দেওয়ার যোগ্য মনে করেনি, তারা বাবা সাহেবের পরিবর্তে নিজেদের পরিবারের সদস্যদের ভারতরত্ন দিয়ে গেছে। যে কংগ্রেস দেশের পথে পথে, সড়ক চৌমাথায় নিজেদের পরিবারের সদস্যদের নামে পার্ক তৈরি করে দিয়েছে, সেই কংগ্রেসের নেতারা আমাদের উপদেশ দিচ্ছে? তাঁরা আমাদের সামাজিক ন্যায়বিচারের শিক্ষা দিতে চাইছে?
মাননীয় সভাপতি মহোদয়,
যে কংগ্রেসের নেতাদের কোনও গ্যারান্টি নেই, নিজস্ব নীতির কোনও গ্যারান্টি নেই, তাঁরা মোদীর গ্যারান্টি নিয়ে প্রশ্ন তুলছেন।
মাননীয় সভাপতি মহোদয়,
এখানে একটি অভিযোগ ছিল যে তাঁরা আশ্চর্য হচ্ছেন, আমরা কেন এসব বলছি, কেন আমরা এমন দেখছি। কেন দেশবাসী ও বিশ্ববাসী তাঁদের ১০ বছরের শাসনকালের দিকে এভাবে দেখে, কেন দেশবাসী ক্ষুব্ধ হয়েছে, কেন দেশবাসী  এত ক্ষুব্ধ হয়েছে, শ্রদ্ধেয় সভাপতি মহোদয়, এই সবকিছু আমাদের কথায় হয়নি, এটা তাঁদের নিজেদের কর্মের ফল, যা এখন সামনে থাকে, যা অন্য কোনও জন্মে নয়, তাঁদেরকে এই জন্মেই ভুগতে হচ্ছে।
মাননীয় সভাপতি মহোদয়,
আমরা কাউকে খারাপ বলি না, কেন খারাপ বলবো, যখন তাঁদের লোকেরাই অনেক কিছু বলে ফেলেছে, তখন আমার বলার কী দরকার। আমি সভাকক্ষে এক ধরনের বক্তব্য রাখতে চাই। আমি আগে উদ্ধৃতিটি পড়ছি – ‘সদস্যরা জানেন…’, এটি একটি উদ্ধৃতি, ‘সদস্যরা জানেন যে আমাদের প্রবৃদ্ধি মন্থর হয়েছে এবং রাজস্ব ঘাটতি বেড়েছে, মুদ্রাস্ফীতির হার গত ২ বছর ধরে ক্রমাগত বাড়ছে। কারেন্ট একাউন্ট ডেফিসিট বা চলতি হিসাবের ঘাটতি আমাদের প্রত্যাশা ছাড়িয়ে গেছে’। আমি এই উদ্ধৃতি পড়েছি. এটা কোনো বিজেপি নেতার উদ্ধৃতি নয়, এটি আমার উদ্ধৃতিও নয়।
মাননীয় সভাপতি মহোদয়,
যিনি ইউপিএ সরকারে ১০ বছর ধরে সম্মানিত প্রধানমন্ত্রী হিসাবে দায়িত্ব পালন করেছিলেন, তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী, শ্রদ্ধেয় মনমোহন সিংজি, তিনি  তাঁর নিজের আমলেই একথা বলেছিলেন। তখন এমনই অবস্থা ছিল, তিনি বর্ণনা করেছিলেন।
মাননীয় সভাপতি মহোদয়, 
এখন আমি দ্বিতীয় উদ্ধৃতি পড়ছি, আমি দ্বিতীয় উদ্ধৃতিটি পড়ছি – ‘দেশে ব্যাপক ক্ষোভ, সরকারী পদের অপব্যবহার নিয়ে প্রবল ক্ষোভ, কীভাবে প্রতিষ্ঠানের অপব্যবহার করা হচ্ছে,… আমি কখনও একাজ করিনি’ একথা তখন দেশের প্রধানমন্ত্রী ডঃ মনমোহন সিং বলছিলেন। সে সময় দুর্নীতি নিয়ে গোটা দেশ রাজপথে নেমে এসেছিল, পথে পথে আন্দোলন চলছিল। এখন আমি তৃতীয় উদ্ধৃতিটি পড়বো - একটি সংশোধনীর কিছু পঙক্তি আছে, এটিও আপনারা শুনুন – ‘কর সংগ্রহে দুর্নীতি হয়, এর জন্য জিএসটি চালু করতে হবে, রেশন প্রকল্পে ‘লিকেজ’ হয়, যার ফলে দেশের দরিদ্র থেকে দরিদ্রতম মানুষ সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়, এই লিকেজ আটকানোর উপায় খুঁজতে হবে।সরকারি চুক্তি যেভাবে দেওয়া হচ্ছে তা নিয়ে সন্দেহ থেকে যাচ্ছে’ একথাও তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী শ্রদ্ধেয় মনমোহন সিং-ই বলেছিলেন। আর তার আগে আরেক প্রধানমন্ত্রী বলেছিলেন যে, ‘দিল্লি থেকে এক টাকা গেলে সুবিধাভোগীদের হাতে পৌঁছায় মাত্র ১৫ পয়সা’। শুদ্ধিকরণ, রোগ জানা ছিল, শুদ্ধিকরণের জন্য কোনও প্রস্তুতি ছিল না, আর আজ বড় বড় কথা বলা হচ্ছে। কংগ্রেসের ১০ বছরের ইতিহাস দেখুন, বিশ্বের ‘ফ্রেজিল ফাইভ ইকোনমি’ বা ভঙ্গুর পাঁচটি অর্থনীতির দেশের অন্যতম বলা হতো, এটা আমি নই, বিশ্ববাসী বলতো ‘ফ্রেজিল ফাইভ। পলিসি প্যারালাইসিস’, অর্থাৎ, ভঙ্গুর অর্থনীতি আর নীতি পক্ষাঘাত-ই হয়ে উঠেছিল তাঁদের পরিচয়। আর আমাদের ১০ বছরে পৌঁছে দিয়েছি বিশ্বের শীর্ষ পাঁচটি অর্থনীতির দেশের তালিকায়। এই ১০ বছর আমাদের বড়ো বড়ো এবং নির্ণায়ক সিদ্ধান্তের জন্য স্মরণীয় হয়ে থাকবে।
মাননীয় সভাপতি মহোদয়, 
আমরা অত্যন্ত পরিশ্রম ও চিন্তাভাবনা করে দেশকে সেই কঠিন সময় থেকে বের করে এনেছি। এই দেশ এমনি এমনি আমাদের আশীর্বাদ দিচ্ছে না।
মাননীয় সভাপতি মহোদয়, 
এখানে সভাকক্ষে ব্রিটিশদের স্মরণ করা হয়। তখন রাজা-মহারাজাদের গভীর সম্পর্ক ছিল ব্রিটিশদের সঙ্গে, তাই এখন জানতে চাই কারা ব্রিটিশদের দ্বারা অনুপ্রাণিত ছিল? আমি একথা জিজ্ঞাসাও করব না এই কংগ্রেস পার্টির জন্ম কে দিয়েছে? কিন্তু স্বাধীনতার পরও কারা দেশে দাসত্বের মানসিকতাকে বজায় রাখতে সহায়ক ভূমিকা পালন করেছিল? আপনারা যদি ব্রিটিশদের দ্বারা প্রভাবিত না হতেন, তাহলে আপনারা কেন ব্রিটিশদের প্রণীত দণ্ডবিধিতে পরিবর্তন আনেন নি?
মাননীয় সভাপতি মহোদয়, 
আপনারা যদি ব্রিটিশদের দ্বারা প্রভাবিত না হতেন তাহলে ব্রিটিশ আমলের শত শত আইন চলতে থাকবে কেন? আপনারা যদি ব্রিটিশদের দ্বারা প্রভাবিত না হতেন তাহলে এত দশক পরেও গাড়ির ওপর লাল বাতির সংস্কৃতি কেন অব্যাহত ছিল? আপনারা যদি ব্রিটিশদের দ্বারা প্রভাবিত না হন, তাহলে ভারতের বাজেট সন্ধ্যা ৫টায় কেন পেশ করা হতো? কারণ সেটাই ছিল ব্রিটিশ পার্লামেন্টের সকালে শুরু হওয়ার সময়। কেন আপনারা ব্রিটিশ পার্লামেন্টের উপযোগী করে বিকাল ৫টায় বাজেট পেশ  করার ঐতিহ্য অব্যাহত রাখলেন? ব্রিটিশদের দ্বারা কারা অনুপ্রাণিত ছিল? আপনারা যদি ব্রিটিশদের দ্বারা অনুপ্রাণিত না হন তবে কেন আমাদের সেনাবাহিনীর চিহ্নগুলিতে দাসত্বের চিহ্ন এখনও বজায় ছিল? আমরা এসে সেগুলিকে একের পর এক অপসারণ করছি। আপনারা যদি ব্রিটিশদের দ্বারা অনুপ্রাণিত না হয়ে থাকেন তাহলে কেন দিল্লির রাজপথ-কে দেশের কর্তব্যপথে রূপান্তরিত হতে মোদীর জন্য অপেক্ষা করতে হয়েছিল?
মাননীয় সভাপতি মহোদয়, 
আপনারা যদি ব্রিটিশদের দ্বারা প্রভাবিত না হতেন, তাহলে কেন এই আন্দামান ও নিকোবর দ্বীপপুঞ্জে ব্রিটিশ শাসনের চিহ্নগুলি এখনও বজায় ছিল?
মাননীয় সভাপতি মহোদয়, 
আপনারা যদি ব্রিটিশদের দ্বারা প্রভাবিত না হতেন, তাহলে এদেশের যে সৈন্যরা নানা সময়ে দেশের জন্য প্রাণ দিয়েছেন, কিন্তু স্বাধীনতার পর থেকে এত বছরে আপনারা সৈনিকদের সম্মানে একটি ওয়ার মেমোরিয়ালও নির্মাণ করতে পারেননি, কেন? আপনারা যদি ব্রিটিশদের দ্বারা অনুপ্রাণিত বা প্রভাবিত না হতেন তাহলে আপনারা কেন ভারতীয় ভাষাগুলির দিকে হীনমন্যতার দৃষ্টিতে তাকালেন? আঞ্চলিক ভাষাগুলিতে লেখাপড়ার প্রতি আপনারা কেন উদাসীন ছিলেন?
মাননীয় সভাপতি মহোদয়, 
আপনারা যদি ব্রিটিশদের দ্বারা অনুপ্রাণিত না হন তাহলে ভারতকে ‘গণতন্ত্রের মা’ বলতে আপনাদেরকে কে বাধা দিয়েছে? আপনারা কেন বুঝতে পারলেন না, মাননীয় সভাপতি মহোদয়,  আমি শত শত উদাহরণ দিতে পারি, কাদের প্রভাবে আপনারা কাজ করেছেন এবং তা শুনতে শুনতে দেশবাসীর মনে সেসব স্মৃতি জেগে উঠবে।
মাননীয় সভাপতি মহোদয়, 
আমি আরেকটি উদাহরণ দিতে চাই। কংগ্রেস একটি ব্যাখ্যা প্রচার করে আর সেই ব্যাখ্যার ফলে  ভারতীয় সংস্কৃতি ও মূল্যবোধে বিশ্বাসী লোকেদের অবজ্ঞা করা শুরু হয় এবং রক্ষণশীল বলে মনে করা হয়। আর এভাবেই আমাদের অতীতের প্রতি অবিচারের পরিস্থিতি এসেছে। আপনারা যদি নিজেদের আস্থাকে তুচ্ছতাচ্ছিল্য করেন, নিজেদের ভাল ঐতিহ্যের অপমান করেন তাহলেই আপনি প্রগতিশীল, এই ধরনের ব্যাখ্যা দেশে তৈরি হতে থাকে। আর এর নেতৃত্ব কারা দিয়েছিল তা বিশ্ববাসী ভালো করেই জানে। অন্যান্য দেশ থেকে আমদানি করা, তার জন্য গর্ব করে ভারতের যা কিছু রয়েছে সবই দ্বিতীয় শ্রেণীর – এমন ভ্রান্ত স্ট্যাটাস গড়ে তোলা হয়েছিল। এই ভ্রান্ত স্ট্যাটাস সিম্বল বাইরে থেকে এসেছে, বিদেশি তৈরি হয়েছে। আজও এই মানুষগুলো 'ভোকাল ফর লোকাল' বলা থেকে এড়িয়ে যাচ্ছে, অথচ স্থানীয় পণ্যের জন্যে সরব হলে আমার দেশের গরীবদের কল্যাণ হয়। আজ তাঁদের মুখ থেকে স্বনির্ভর ভারতের কথা বের হয় না। আজও কেউ ‘মেক ইন ইন্ডিয়া’ বললেই তাঁদের পেটে ইঁদুর দৌড়াতে শুরু করে।

মাননীয় সভাপতি মহোদয়, 

দেশ এই সব দেখেছে আর এখন বুঝতেও পেরেছে এবং আপনার এরই ফল ভোগ করছেন।

মাননীয় সভাপতি মহোদয়, 

রাষ্ট্রপতিজি তাঁর ভাষণে আমাদের সকলকে সমাজের চারটি বৃহত্তম স্তম্ভ সম্পর্কে বিস্তারিতভাবে আমাদের ব্যাখ্যা করেছেন। যুবসম্প্রদায়, মহিলা, দরিদ্র এবং আমাদের অন্নদাতা কৃষকরা। আমরা জানি যে তাঁদের সমস্যাগুলি বেশিরভাগই একই রকম, তাঁদের স্বপ্নগুলিও একই রকম এবং যদি সেগুলির সমাধান খুঁজে পাওয়া যায় তবে সেখানেও ১৯-২০% এর সামান্য পার্থক্য হবে, কিন্তু এই চারটি শ্রেণীর সমাধানও একই। এবং তাই তিনি জাতিকে অত্যন্ত যথাযথভাবে পথনির্দেশ করেছেন যে এই চারটি স্তম্ভকে শক্তিশালী করতে হবে, তবেই দেশ একটি উন্নত ভারতের দিকে দ্রুত গতিতে এগিয়ে যাবে।

মাননীয় সভাপতি মহোদয়, 

আমরা একবিংশ শতাব্দীর মানুষ, আমরা যদি ২০৪৭ সালের মধ্যে আমাদের দেশকে ‘উন্নত ভারত’ করে গড়ে তোলার স্বপ্ন পূরণ করতে চাই, তবে বিংশ শতাব্দীর চিন্তাভাবনা সম্বল করে কাজ করলে চলবে না। বিংশ শতাব্দীর স্বার্থপর এজেন্ডা, শুধু ‘আমি’ আর ‘আমার’ আলোকিত হওয়ার মনোবৃত্তি দেশকে একবিংশ শতাব্দীতে একটি সমৃদ্ধ ও উন্নত ভারতে পরিণত করতে পারে না। কংগ্রেস, আজকাল অনেক কথা বলছে, আমি জানি না কেন আবার জাতপাতের জিগির তোলার প্রয়োজন হয়েছে! কিন্তু তাঁদের যদি নিতান্তই প্রয়োজন হয় তাহলে আগে নিজেদের অন্তরে তাকান, দলের অভ্যন্তরে  তাকান ; তখনই তাঁরা বুঝতে পারবেন যে তাঁরা কী করেছেন। কংগ্রেসের জন্ম থেকেই দলিত, অনগ্রসর এবং বিভিন্ন জনজাতির মানুষই তাঁদের সবচেয়ে বড় প্রতিপক্ষ ছিলেন, আর আমি মাঝে মাঝে ভাবি যে বাবাসাহেব না থাকলে আদৌ দেশের এসসি/এসটি-র মানুষ সংরক্ষণ পেত কি না! -এই প্রশ্নও আমার মনে জাগে!

মাননীয় সভাপতি মহোদয়, 

আমি যা বলছি তার সমর্থনে আমার কাছে প্রমাণ আছে। তাঁদের এই ভাবনা আজ থেকে নয়, সেই সময় থেকেই যে এমনই চলে আসছে, আমার কাছে তাঁর প্রমাণ আছে। আর আমি এখানে প্রমাণ ছাড়া কিছু বলতে আসিনি, মাননীয় সভাপতি মহোদয়। আর যখন ওদিক থেকে প্রসঙ্গ উত্থাপিত হয়, তখন তো প্রস্তুতি নিয়েই কথা বলতে হয়, তাঁদের সঙ্গে আমার পরিচয়ের ১০ বছর পেরিয়ে গেছে । ...

একবার আমি শ্রদ্ধার সঙ্গে নেহেরুজিকে স্মরণ করতে চাই, আজকাল আমি নেহরুজি একটি বেশি স্মরণ করি, কারণ আমাদের সহকর্মীদের প্রত্যাশা থাকে যে তাঁদের সম্পর্কে মাঝে মধ্যে কিছু বলা উচিত। এখন দেখুন একবার নেহেরুজি একটি চিঠি লিখেছিলেন, আর এই চিঠিটি তিনি দেশের মুখ্যমন্ত্রীদের প্রতি লিখেছিলেন। এর রেকর্ড রয়েছে। আমি এর অনুবাদ পড়ছি, ‘আমি কোনো সংরক্ষণ পছন্দ করি না এবং বিশেষ করে চাকরির ক্ষেত্রে সংরক্ষণ কখনই পছন্দ করি না। আমি এরকম যে কোনও পদক্ষেপের বিরুদ্ধে, যা অদক্ষতাকে উৎসাহ যোগায়। যা আমাদের দ্বিচারিতার দিকে নিয়ে যায়।‘ এই কথাগুলি পন্ডিত নেহেরু মুখ্যমন্ত্রীদের লিখেছিলেন। আর তার এই কথার প্রেক্ষিতে বলছি, আমিও গোড়া থেকেই এর বিরোধী। নেহেরুজি বলতেন, ‘যদি এসসি, এসটি, ওবিসি-রা চাকরি ক্ষেত্রে সংরক্ষণ পান তাহলে সরকারি কাজের মানের অবনতি হবে। আর আজ যত পরিসংখ্যান তুলে ধরা হচ্ছে এত শতাংশ এখানে, তত শতাংশ ওখানে এসবের ভিত্তিও এটাই। কারণ সেই সময় তো তাঁরা থামিয়ে দিয়েছিল, নিয়োগই করো না। যদি সেই সময় সরকার তাঁদের নিয়োগ করতো, আর তাঁরা স্বাভাবিক নিয়মে পদোন্নতির মাধ্যমে এগিয়ে যেত, তাহলে তাঁরাও আজ এখানে পৌঁছোত।" 

মাননীয় সভাপতি মহোদয়, 

আমি উক্তি পড়ছি, আপনি যাচাই করে দেখতে পারেন। আমি পন্ডিত নেহেরুর বক্তব্য উদ্ধৃত করছি। 

মাননীয় সভাপতি মহোদয়, 

আপনি তো জানেন নেহেরুজি যা যা বলে গেছেন, কংগ্রেসের জন্য তা সর্বদাই বেদ বাক্যের মতো শিরোধার্য। অন্যদের দেখানোর জন্য আপনারা যা কিছুই বলুন না কেন, কিন্তু আপনাদের দৃষ্টিভঙ্গি এই ধরণের কিছু উদাহরণের মাধ্যমেই পরিস্ফুট হয়। আমি অসংখ্য উদাহরণ তুলে ধরতে পারি, কিন্তু একটি উদাহরণ অবশ্যই তুলে ধরতে চাই, আর তা হল জম্মু-কাশ্মীরের উদাহরণ। কংগ্রেস জম্মু-কাশ্মীরে এসসি, এসটি, ওবিসি-দের সাত দশক ধরে তাঁদের সমস্ত অধিকার থেকে বঞ্চিত রেখেছে। সংবিধানের ৩৭০ ধারা বিলুপ্ত করার ফলে আমরা কতটা তাদের অধিকার পুনরুদ্ধার করতে পেরেছি সে বিষয়ে এখন বলছি না। কিন্তু একথা নিশ্চিত যে সংবিধানের ৩৭০ ধারা বিলুপ্ত হওয়ার ফলেই এত দশক পর জম্মু-কাশ্মীরে এসসি, এসটি, ওবিসি-রা সেই অধিকারগুলি পাচ্ছেন, যা এত বছর ধরে দেশের অন্যান্য প্রান্তের এসসি, এসটি-রা পেয়ে আসছেন। জম্মু-কাশ্মীরের নাগরিকরা আমাদের অরণ্যের অধিকার আইনের সুবিধা পেতেন না। জম্মু-কাশ্মীরে ‘দ্য প্রিভেনশন অফ এট্রোসিটিস এক্ট’ ছিল না। আমরা ৩৭০ ধারা বিলুপ্ত করার পর তাঁরা এই সুবিধা পেয়েছেন। আমাদের এসসি-দের মধ্যেও সব থেকে পিছিয়ে রয়েছে আমাদের বাল্মীকি সমাজ। জম্মু-কাশ্মীরে বিগত সাত দশক ধরে যে বাল্মীকি সমাজের মানুষেরা নিয়মিত জনগণের সেবা করে আসছেন, তাঁদেরকে এমনি 'ডমিসাইলের' অধিকারও দেওয়া হয়নি। এই সমস্ত তথ্য আজ আমি দেশবাসীর অবগতির জন্য তুলে ধরতে চাই যে গতকাল ৬ ফেব্রুয়ারি তারিখে স্থানীয় প্রশাসন বা লোকাল সেলফ গভরমেন্ট-এ ওবিসি শ্রেণীভুক্তদের সংরক্ষণের আইন লোকসভায় প্রণিত হয়েছে। 

মাননীয় সভাপতি মহোদয়, 

এসসি, এসটি, ওবিসি-দের বড় অংশীদারিত্ব নিয়ে কংগ্রেস এবং তাঁদের বন্ধু দলগুলি সর্বদাই বিব্রত ছিল। বাবাসাহেবের দর্শনকে বিলুপ্ত করার জন্য সবরকম চেষ্টা তাঁরা করে গেছেন। বক্তব্য তৈরি রয়েছে নির্বাচনে কোথায় কোথায় কী কী বলা হয়েছে তারও রেকর্ড রয়েছে। তাঁরা তো বাবাসাহেবকে ভারতরত্ন সম্মান দিতেও তৈরি ছিলেন না। যখন বিজেপির সমর্থনে সরকার গড়ে ওঠে, তখনই গিয়ে বাবাসাহেব ভারতরত্ন পেয়েছেন। শুধু তাই নয়, সীতারাম কেশরীজি পিছিয়ে পড়া জাতির ছিলেন বলে, কংগ্রেস দলের অধ্যক্ষ তাঁকে উঠিয়ে ফুটপাতে ফেলে দিয়েছিলেন। তাঁর ভিডিও রয়েছে। দেশবাসী তা দেখেছে সীতারাম কেশরীজির সঙ্গে কী হয়েছিল। এই বক্তব্যের রেকর্ড রয়েছে। 

মাননীয় সভাপতি মহোদয়, 

এনাদের একজন পথপ্রদর্শক আমেরিকায় বসে আছেন। যিনি বিগত নির্বাচনের সময় বিখ্যাত হয়ে গিয়েছিলেন। তিনি কংগ্রেস পরিবারের অত্যন্ত ঘনিষ্ঠ। তিনি সম্প্রতি ভারতের সংবিধান রচয়িতা বাবাসাহেব আম্বেদকরের অবদানকে ছোট করে দেখানোর অনেক চেষ্টা করেছেন। 

আর মাননীয় সভাপতি মহোদয়, 

দেশে প্রথমবার এনডিএ একজন আদিবাসী মহিলাকে রাষ্ট্রপতি হওয়ার প্রস্তাব দিয়েছে, তাঁকে প্রার্থী করেছে। আমাদের সঙ্গে আপনাদের দর্শনগত পার্থক্য রয়েছে, সেটা এক ব্যাপার। কিন্তু যদি আমাদের দর্শনগত পার্থক্যের কারণে আপনারা প্রতিস্পর্ধী কোনও নেতা বা নেত্রীকে প্রার্থী হিসেবে দাঁড় করাতেন, সেটাও আমি বুঝতাম। কিন্তু কোনও দর্শনগত মতপার্থক্য ছিল না। কারণ, আমাদের দল ছেড়ে বেরিয়া যাওয়া ব্যক্তিকেই আপনারা প্রার্থী করেছিলেন। সেজন্য আমি জানি যে দর্শনগত বিরোধিতা নয়, আপনাদের বিরোধিতা ছিল একজন আদিবাসী মহিলা প্রার্থী ছিলেন বলে। সেজন্য আমাদের পক্ষ থেকে যখন সাংমাজি রাষ্ট্রপতি পদের জন্য প্রার্থী হয়েছিলেন, তিনি রাজনৈতিক ভাবে আপনাদের মতাদর্শে বিশ্বাসী হওয়া সত্বেও উত্তর-পূর্বাঞ্চলের আদিবাসী সম্প্রদায়ের মানুষ হওয়ায় আপনারা তারও বিরোধিতা করেছিলেন। আর বর্তমান রাষ্ট্রপতি ক্ষমতায় আসার পর তাঁর অপমান করার ঘটনাও কম নয়। এরকম ব্যবহার এদেশে প্রথমবার দেখলাম। অনেক দায়িত্বশীল ব্যক্তির মুখ থেকে এমন এমন কথা বেরিয়ে এসেছে, যা শুনলে লজ্জায় মাথা নত হয়ে যায়। রাষ্ট্রপতিজির উদ্দেশে এমন সব ভাষা ব্যবহার করা হয়েছে, তাঁদের মনের যে কালিমা তা কোথাও না কোথাও এভাবে প্রকাশিত হতে থাকে। আমরা বিগত ১১০ বছর ধরে বিজেপি নেতৃত্বাধীন এনডিএ সরকার চালাচ্ছি। আমরা প্রথমে একজন দলিত শ্রেণীর ব্যক্তিকে, আর এখন একজন আদিবাসী শ্রেণীর মহিলাকে প্রার্থী করে রাষ্ট্রপতি পদে বসিয়েছি। এ থেকেই প্রমাণিত হয় আমাদের অগ্রাধিকার কী! 

মাননীয় সভাপতি মহোদয়,

যখন আমি আমাদের সরকারের কর্মদক্ষতার কথা বলি, তখন এনডিএ-র গরীব কল্যাণ নীতিগুলিরও উল্লেখ করি। সমাজকে যদি ঘনিষ্ঠ ভাবে দেখি, জানার চেষ্টা করি তাহলে বুঝতে পারবো যে কোন সরকারি পরিষেবার সুবিধাভোগী কারা। এই বস্তিগুলিতে কারা সারাজীবন থাকতে বাধ্য হন? কোন সমাজের মানুষদের অসংখ্য সমস্যার মধ্য দিয়ে যেতে হয়, বিভিন্ন পরিষেবা থেকে বঞ্চিত থাকতে হয়। আমরা যত কাজ করেছি, তার অধিকাংশই এই এসসি, এসটি, ওবিসি ও আদিবাসী সমাজের জন্য। বস্তির কাঁচা বাড়িগুলিতে যাঁরা থাকেন তাঁরা পাকা বাড়ি পেয়েছেন। অর্থাৎ এই সমাজের বন্ধুরা পেয়েছেন। পরিচ্ছন্নতার অভাবে প্রত্যেকবার অসুস্থতার বিরুদ্ধে লড়তে হতো। স্বচ্ছ ভারত অভিযানের ফলে তাঁরা অনেক লাভবান হয়েছেন। অর্থাৎ আমরা তাঁদেরকে ভালভাবে বাঁচার সুযোগ দিতে পারি। আমাদের এই পরিবারগুলির মা ও বোনেদের প্রতিনিয়ত ধোঁয়ার মধ্যে রান্না করে নানা রকম রোগে ভুগতে হতো। আমরা তাঁদেরকে উজ্জ্বলা গ্যাস প্রকল্পের মাধ্যমে রান্নার গ্যাসের সংযোগ দিয়েছি। বিনামূল্যে রেশন থেকে শুরু করে বিনামূল্যে চিকিৎসার সুবিধাভোগী হয়ে উঠেছে আমাদের এই পরিবারগুলি। এরাই আমার নিজের পরিবারের মানুষ। যাঁদের উন্নয়নের জন্য আমরা সমস্ত প্রকল্পের কাজ করছি। 

মাননীয় সভাপতি মহোদয়,
এখানে এমন কিছু ব্যখ্যা দেওয়া হয়েছে, অন্ততপক্ষে তথ্যগুলিকে এভাবে নস্যাৎ করে দিলে কার ভালো হবে? আপনারা এমন ভাবে নিজেদের বিশ্বাসযোগ্যতা হারাচ্ছেন, নিজেদের সুনামও নষ্ট করছেন। 

মাননীয় সভাপতি মহোদয়,

এখানে শিক্ষার ভ্রান্ত পরিসংখ্যানও দেওয়া হয়েছে। বিভ্রান্ত করার চেষ্টা করা হয়েছে। ১০ বছর আগে এসসি, এসটি ছাত্র-ছাত্রীদের যে পরিমান ছাত্রবৃত্তি দেওয়া হতো, গত ১০ বছরে তা বেড়েছে। এই ১০ বছরে স্কুল, কলেজ, উচ্চ শিক্ষার ক্ষেত্রে নাম নথিভুক্তিকরণের সংখ্যাও অনেক বেড়েছে। আর স্কুলছুট ছাত্র-ছাত্রীদের সংখ্যা দ্রুত কমেছে। 

মাননীয় সভাপতি মহোদয়,

১০ বছর আগে দেশে মাত্র ১২০টি একলব্য মডেল স্কুল ছিল। আজ দেশে ৪০০টি একলব্য মডেল স্কুল রয়েছে। আপনারা এই পরিসংখ্যানকে কেন নস্যাৎ করতে চাইছেন, একথা আমি বুঝতে পারি না। কেন এমন করেন? 

মাননীয় সভাপতি মহোদয়,

আগে দেশে একটি কেন্দ্রীয় জনজাতি বিশ্ববিদ্যালয় ছিল। আজ দুটি কেন্দ্রীয় জনজাতি বিশ্ববিদ্যালয় রয়েছে। মাননীয় সভাপতি মহোদয়, এটাও সত্যি যে দীর্ঘকাল ধরে দলিত পিছিয়ে পড়া ও বিভিন্ন জনজাতি গোষ্ঠীর ছেলে-মেয়েরা কলেজের দরজা পর্যন্ত পৌঁছোতেন না। আমার মনে পড়ে যখন আমি গুজরাটের মুখ্যমন্ত্রী হই, তখন একটি বিশ্লেষণ দেখে চমকে উঠি। গুজরাটের ওমরগাঁও থেকে অম্বাজি পুরো এলাকাটাই জনজাতিবহুল এলাকা। আমাদের দিগ্বিজয় সিং-জির জামাতাও এই এলাকার সন্তান। এই গোটা এলাকায় তখন একটি বিদ্যালয়েও বিজ্ঞান পড়ানোর সুবিধা ছিল না। তাহলে সেই এলাকা থেকে ইঞ্জিনিয়ারিং বা মেডিকেল পড়ার জন্য ছাত্র-ছাত্রী উঠে আসার সুযোগই ছিল না। এই ধরণের ন্যূনতম পরিষেবা যারা তৈরি করে দিতে পারেন নি, তাঁরা এখানে এসে বড় বড় ভাষণ দিচ্ছেন। 

মাননীয় সভাপতি মহোদয়,

আমি বলতে চাই, যা বলবো তা শুনলে সভাকক্ষের সবাই গর্বিত হবেন। এখন যে সরকার দেশ শাসন করছে তাঁদের আমলে কত বড় পরিবর্তন এসেছে। আপনারা সেই দরিদ্র সমাজের আত্মবিশ্বাস বাড়ান, তাঁদের মনোবল বাড়ান। তাঁদেরকে দেশের মূল স্রোতে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার জন্য চেষ্টা চালাতে হবে, আমাদের সম্মিত প্রচেষ্টা করে যেতে হবে। আপনারা দেখুন নানা জনজাতি এবং আমাদের এসসি, এসটি ছাত্র-ছাত্রীদের সংশ্লিষ্ট কিছু পরিসংখ্যান আমি তুলে ধরতে চাই। উচ্চশিক্ষা ক্ষেত্রে এসসি শিক্ষার্থীদের নথিভুক্তিকরণ ৪৪% বৃদ্ধি পেয়েছে। উচ্চশিক্ষার এসটি ছাত্র-ছাত্রীদের নথিভুক্তিকরণ ৬৫% বৃদ্ধি পেয়েছে। উচ্চশিক্ষায় ওবিসি ছাত্র-ছাত্রীদের নথিভুক্তির ক্ষেত্রে ৪৫% বৃদ্ধি লক্ষ্য করা গেছে। আর আমার দরিদ্র, দলিত, পিছিয়ে পড়া, জনজাতি ও বঞ্চিত পরিবারের সন্তানরা যখন উচ্চশিক্ষায় শিক্ষিত হবেন, ডাক্তার, ইঞ্জিনিয়ার হবেন, তখন সেই সব সমাজের মধ্যেও একটা নতুন পরিবেশ সৃষ্টি হবে। আমাদের আসল চেষ্টা হল মৌলিক সমস্যাগুলির সমাধান। কিছু সময় লাগতে পারে, কিন্তু এই উদ্যোগ দৃঢ় ভাবে নিতে হবে, সেজন্য আমরা শিক্ষার ওপর এত জোর দিয়ে কাজ করছি। তথ্যের অভাব থাকলে অনুগ্রহ করে আমাদের জানান। আমরা আপনাদের তথ্য দেবো। তবে, এমন ব্যখ্যা করবেন না, যাতে আপনাদের সুনাম নষ্ট হয়। আপনাদের শব্দের জোর যেন কমে না যায়। কখনও কখনও আপনাদের ওপর আমার খুব করুণা হয়। 

মাননীয় সভাপতি মহোদয়,

'সবকা সাথ সবকা বিকাশ'! সকলকে সঙ্গে নিয়ে সকলের উন্নয়ন - এটা নিছকই একটি শ্লোগান নয়। এটি মোদীর গ্যারান্টি। আর যখন এত কাজ করেন তখন মেনে নিন। কেউ একজন কবিতা লিখে পাঠিয়েছিলেন, এই কবতাটা অনেক দীর্ঘ। কিন্তু এর মধ্যে একটি বাক্য রয়েছে :

'মোদী কি গ্যারান্টি কা দৌর হ্যায়
নয়ে ভারত কি ভোর
আউট অফ ওয়ারেন্টি চল রহী দুকানেঁ,
আউট অফ ওয়ারেন্টি চল রহী দুকানেঁ,
খোঁজে আপনে ঠোর'

(অর্থাৎ, 'মোদীর গ্যারান্টির মিছিল চলেছে, 
নতুন ভারতের ভোরে
আউট অফ ওয়ারেন্টি দোকানগুলি চলছে
নিজেদের অস্তিত্ব খুঁজছে')

মাননীয় সভাপতি মহোদয়,

কিভাবে দেশে হতাশার আবহ গড়ে তোলার চেষ্টা চলছে দেখুন। আমি এটা বুঝতে পারি, যারা এতটা হতাশার খানাখন্দে ডুবে আছে, তাঁদের পক্ষে এহেন হতাশা সরানো ছাড়া আর কোন সামর্থ নেই। তাঁরা তো কোন ভাবে কারো মনে আশার সঞ্চার করতেই পারেন না। যারা নিজেরাই হতাশায় ডুবে রয়েছেন, তাঁদের থেকে এই আশা করে লাভ নেই। কিন্তু তাঁরা দেশের সর্বত্র হতাশা ছড়ানোর চেষ্টা করছেন এবং সত্যকে নস্যাৎ করছেন। এর মাধ্যমে তাঁরা নিজেদেরও উন্নতি করতে পারবেন না, দেশেরও উন্নতি করতে পারবেন না। 

মাননীয় সভাপতি মহোদয়,

প্রত্যেকবার সেই একই গান তাঁরা গেয়ে যান। সমাজের কিছু শ্রেণীকে বিভ্রান্ত করার জন্য কোন রকম বাস্তব ভিত্তি ছাড়াই এধরণের বাক্য বলে দেন। আমি দেশের সামনে কিছু বাস্তব তথ্য তুলে ধরতে চাই। আমার দৃঢ় বিশ্বাস সংবাদ মাধ্যম যদি এই বিষয়গুলি নিয়ে কিছুটা বিতর্কসভার আয়োজন করে তাহলে সত্যটা বেরিয়ে আসে। 

মাননীয় সভাপতি মহোদয়,

এখানে বিভিন্ন সরকারি কোম্পানি নিয়ে আমাদের ওপর নানা রকম আরোপ দেওয়া হয়েছে। সেসব আরোপের মাথা বা লেজ কিছুই নেই। কিন্তু তাঁরা আমাদের ওপর দোষ দিয়ে গেছেন। কিন্তু দেশবাসীর হয়তো মনে আছে, মারুতির শেয়ার নিয়ে কী কেলেঙ্কারি হয়েছিল। সেই সময়ে সংবাদ শিরোনামে ছিল। আমি সেই মারুতি শেয়ার কেলেঙ্কারির গভীরে যেতে চাই না। কারণ, তাহলে তা তাঁরা খুবই কষ্ট পাবেন। আমি তাঁদের কষ্ট দিতে চাই না। 

মাননীয় সভাপতি মহোদয়,

কিন্তু দেশের জানা প্রয়োজন। 

মাননীয় সভাপতি মহোদয়,

স্বাধীন ভারতে আমার জন্ম হয়েছে। আমার চিন্তা-ভাবনাও স্বাধীন। আর আমার স্বপ্নগুলিও স্বাধীন। যাঁরা দাসত্বের মানসিকতা নিয়ে বাঁচেন, তাঁদের কাছে আর কিছু থাকে না। তাঁরা সেই পুরানো কাজ নিয়ে ঘুরতে থাকেন। 

মাননীয় সভাপতি মহোদয়,

কংগ্রেস বলেছে, আমরা নাকি সমস্ত রাষ্ট্রায়ত্ত সংস্থা বিক্রি করে দিয়েছে, রাষ্ট্রায়ত্ত সংস্থাগুলিকে নাকি ডুবিয়ে দিয়েছি। এরকম নানা রকম আরোপ তাঁরা লাগিয়েছে। আর বরিষ্ঠ নেতারাই এই ধরণের কথা বলছেন। আপনারা একবার মনে করুন তো কারা বিএসএনএল এবং এমটিএনএল ধ্বংস করেছে ? কাদের শাসনকালে এই বিএসএনএল ও এমটিএনএল নষ্ট হয়েছে? একটু মনে করুন তাঁরা এইচএএল-এর কেমন দুর্দশা করে দিয়েছিলেন। তারপর নির্লজ্জের মতো ২০১৯-এর সাধারণ নির্বাচনের আগে এইচএএল-এর নাম নিয়ে অপপ্রচার ও মিথ্যা ভাষণ দিয়েছেন। যাঁরা এইচএএল-কে ধ্বংস করেছেন, তাঁরাই এইচএএল-এর গেটে গিয়ে ভাষণ দিচ্ছিলেন। 

মাননীয় সভাপতি মহোদয়,

এয়ার ইন্ডিয়ার সর্বনাশ কারা করেছে? তাদের সর্বনাশের পরিস্থিতি তৈরি করেছে? কংগ্রসে পার্টি এবং ইউপিএ তাঁদের শেষ ১০ বছরে দেশের রাষ্ট্রায়ত্ত সংস্থাগুলির যত ক্ষতি করেছে তা তাঁরা অস্বীকার করতে পারবেন না। দেশবাসী খুব ভালো ভাবে জানেন। আর এখন আমি আমাদের শাসনকালে কিছু সাফল্যের কথা তুলে ধরতে চাই। 

মাননীয় সভাপতি মহোদয়,

যে বিএসএনএল-কে আপনারা সর্বস্বন্ত করে ছেড়েছিলেন, সেই বিএসএনএল আজ মেক ইন ইন্ডিয়া ফোর জি, ফাইভ জি-র দিকে এগিয়ে চলেছে। আর বিশ্বের দৃষ্টি আকর্ষণ করছে। 

মাননীয় সভাপতি মহোদয়,

এইচএএল-এর জন্য এত গুজব যাঁরা ছড়িয়েছেন, তাঁরা জেনে রাখুন আজ এইচএএল-এ রেকর্ড পরিমাণ উৎপাদন হচ্ছে। এইচএএল আজ রেকর্ড পরিমাণ পণ্য রপ্তানি করছে। যা নিয়ে তাঁরা সব থেকে বেশি চেঁচামেচি করেছেন, তা মিথ্যা প্রমাণ করে দিয়ে এখন কর্ণাটকে এইচএএল কোম্পানি এশিয়ার বৃহত্তম হেলিকপ্টার নির্মাণকারী কোম্পানিতে পরিণত হয়েছে। আপনারা কোথায় ছেড়ে ছিলেন, আর আমরা কোথায় পৌঁছে দিয়েছি। 

মাননীয় সভাপতি মহোদয়,

একজন কম্যান্ডো এখানে নেই, তিনি এলআইসি নিয়ে নাজানি কত জ্ঞানগর্ভ বক্তব্য রাখতেন। এলআইসি-র এই হয়েছে, সেই হয়েছে, এত ক্ষতি হয়ে গেছে। তিনি যে কত ভুলভাল বলতেন, তা এলআইসি-র আজকের পরিসংখ্যান দেখলে বোঝা যায়। আসলে তাঁদের এটাই পদ্ধতি। কারোর সর্বনাশ করার জন্য গুজব ছড়াও। সবাইকে বিভ্রান্ত করো। যেমন গ্রাম দেশে কারোর বড় বাঙলো থাকলে সেটিকে হাতানোর ইচ্ছা যারা রাখেন, তাঁরা গুজব রটিয়ে দেন যে বাঙলোটিতে ভুত আছে। তখন যে কেউ এই বাঙলোর সামনে দিয়ে যাওয়ার সময় ছুটে পালায়। এই গুজবের ফলে সেই বাঙলো আর বিক্রি হয় না। আর তাঁরা গিয়ে কম দামে কিনে নেন। এলআইসি-কে নিয়ে তাঁরা এমনই চেষ্টা করেছেন। 

মাননীয় সভাপতি মহোদয়,

আমি বুক ফুলিয়ে তাঁদের চোখে চোখ রেখে বলতে চাই, আজ এলআইসি-র শেয়ার রেকর্ড পরিমাণ বাণিজ্য করছে। ঠিক কিনা? 

মাননীয় সভাপতি মহোদয়,

এখন তাঁরা প্রচার করছেন রাষ্ট্রায়ত্ত সংস্থাগুলি বন্ধ হয়ে গেছে। তাঁরা নিজেদের ইতিহাস ভুলে গেছেন। কেউ ধরিয়ে দিয়েছে বলো বলো। আরে ভাই ২০১৪ সালে দেশে ২৩৪টি রাষ্ট্রায়ত্ত ছিল। আর আজ রয়েছে ২৫৪টি। তাহলে তারা কোন অঙ্কে বলছেন যে আমরা বিক্রি করে দিয়েছি। ২৩৪টি থেকে কটি কোম্পানি বিক্রি করলে ২৫৪টি হয়? কী যা তা বলছেন আপনারা?

মাননীয় সভাপতি মহোদয়,

আজ অধিকাংশ রাষ্ট্রায়ত্ত সংস্থা রেকর্ড পরিমাণে লাভের মুখ দেখছে। এই রাষ্ট্রায়ত্ত সংস্থাগুলির প্রতি বিনিয়োগকারীদের ভরসাও বাড়ছে। যাঁরা সামান্য শেয়ার বাজার সম্পর্কে অবগত, তাঁরা বুঝতে পারবেন। বুঝতে না পারলে কাউকে জিজ্ঞেস করুন। মাননীয় সভাপতি দেখুন, বোম্বে স্টক এক্সচেঞ্জের তালিকায় রাষ্ট্রায়ত্ত সংস্থাগুলির সূচক বিগত এক বছরে প্রায় দ্বিগুণ উল্লম্ফন করেছে।

মাননীয় সভাপতি মহোদয়,

১০ বছর আগে অর্থাৎ ২০০৪ - ২০১৪ সেই ১০ বছরের কথা বলছি। তখন দেশের রাষ্ট্রায়ত্ত সংস্থাগুলির মোট লাভ প্রায় ১ লক্ষ ২৫ হাজার কোটি টাকা ছিল। আর আমাদের শাসনকালের ১০ বছরে এই রাষ্ট্রায়ত্ত সংস্থাগুলির মোট লাভ আড়াই লক্ষ কোটি টাকা। আমাদের শাসনকালের ১০ বছরে রাষ্ট্রয়ত্ত সংস্থাগুলির নেট ওয়ার্থ ৯.৫ লক্ষ কোটি টাকা থেকে বেড়ে ১৭ লক্ষ কোটি টাকা হয়েছে। 

মাননীয় সভাপতি মহোদয়,

তাঁরা যে জিনিস স্পর্শ করেন সেটাই ডুবতে শুরু করে। দেশের রাষ্ট্রায়ত্ত সংস্থাগুলিকেও তাঁরা এই রকম দুর্দশাগ্রস্ত করে রেখেছিলেন। আমরা পরিশ্রম করে সেগুলির হৃত সম্মান ফিরিয়ে এনেছি। আপনাদের আনন্দিত হওয়া উচিত, গুজব ছড়াবেন না। এমন মিথ্যা কথা বলবেন না যাতে দেশের সামান্য বিনিয়োগকারীরা বিভ্রান্ত হন। এরকম কাজ আপনাদের করা উচিত নয়। 

মাননীয় সভাপতি মহোদয়,

এঁদের মর্যাদা এরকমই যে তাঁরা এখন নিজেদের যুবরাজকে এমনি একটি স্টার্টআপ তৈরি করে দিয়েছে। এখন তিনি নন-স্টার্টারে পরিণত হয়েছেন, যা লিস্টও করা যাচ্ছে না, লঞ্চও করা যাচ্ছে না।

মাননীয় সভাপতি মহোদয়,

আপনি গতবারও এতটাই শান্তিতে কাজ করে গেলে কতনা মজা হতো। 

মাননীয় সভাপতি মহোদয়,

অভিনন্দন, অভিনন্দন, অভিনন্দন, সবাইকে অভিনন্দন।

মাননীয় সভাপতি মহোদয়,

আমার সৌভাগ্য যে আমি দীর্ঘকাল ধরে একটি রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী রূপে দেশের সেবা করেছি। আর সেই সময় দেশের জনগণের সেবার সুযোগ পেয়েছি। আর আমি এজন্যে আঞ্চলিক প্রত্যাশা ও আশা-আকাঙ্খাগুলিকে খুব ভালোভাবে বুঝি। কারণ আমি সেই প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে গেছি। যেমন আমাদের এখানে দিগ্বিজয়জি রয়েছেন। তিনি খুব ভালোভাবে বুঝতে পারবেন যে একটি রাজ্যের জন্য কী কী হয়। আমরা সেই প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে গেছি। সেজন্য আমরা জানি আমাদের পাশাপাশি শ্রদ্ধেয় শরদ রাও-জিও জানেন, দেবগৌড়া জিও জানেন। আমরা এর গুরুত্বকে বুঝতে পারি। সেজন্য আমাদের কোনও বই পড়তে হয় না। আমাদের অভিজ্ঞতা রয়েছে। আর এটাই সত্য। ১০ বছর ধরে ইউপিএ সম্পূর্ণ শক্তি দিয়ে চেষ্টা করে গেছে যাতে আমরা গুজরাটে কিছু না করতে পারি। আপনারা কল্পনা করতে পারবেন না। কিন্তু আমি কান্নাকাটি করি না। আমার কান্নার অভ্যাস নেই। এত প্রতিকূলতার সৃষ্টির পরও আমরা সব ধরণের সমস্যার মোকাবিলা করে এই রাজ্যকে এগিয়ে নিয়ে গেছি। আমার এত সমস্যা হতো, যখন কোন কেন্দ্রীয় মন্ত্রীর অ্যাপয়েন্টমেন্ট পেতাম না। তারা বলতেন যে ভাই আপনি জানেন আমার বন্ধুত্ব রয়েছে, আমি ফোনে কথা বলে নেবো, কিন্তু কোথাও ফটো-টটো ছেপে দিলে বিপদে পড়ে যাব। আসলে মন্ত্রীরা ভয় পেতেন। তাঁদের সমস্যা আমি বুঝতে পারি। একবার গুজরাটে বড় প্রাকৃতিক বিপর্যয় আসে। আমি সেই সময় তৎকালীন প্রধানমন্ত্রীজিকে অনুরোধ জানিয়েছিলাম যে আপনি আসুন, একবার একটু দেখে নিন। তাঁরা কর্মসূচি তৈরি করেন, তারপর সাহেব একটি পরামর্শদাতা কমিটি তৈরি হয়েছিল না!  হয়তো ওখান থেকে হুকুম এসেছিল। যখন কোন হেলিকপ্টার থেকে বিহঙ্গ দৃষ্টিতে পরিদর্শন করেন। তখন আমি বুঝতে পারি তাঁরা কর্মসূচি বদলে দক্ষিণ ভারতের একটি রাজ্যে চলে গেছেন। আজ আমার ঠিক মনে নেই। আমি জিজ্ঞেস করলে বলেন, বিমান থেকে দেখে নেবো, আমরা গুজরাটে যাব না। তাঁরা আসবেন বলে আমি সুরাট পৌঁছে গিয়েছিলাম। আমি জানি শেষে কী হয়েছিল। আপনারা কল্পনা করতে পারেন, প্রাকৃতিক বিপর্যয়ের সময় আমি মুখ্যমন্ত্রী হিসেবে এই রকম সমস্যার সম্মুখীন হয়েছিলাম। কিন্তু সেই অসংবেদনশীলতা সত্বেও সেই সময় আমার যে মন্ত্র ছিল, আজও সেই মন্ত্র আমি অনুসরণ করি যে দেশের উন্নয়নের জন্যই রাজ্যগুলির উন্নয়ন জরুরী। ভারতের উন্নয়নের জন্য গুজরাটের উন্নয়ন জরুরী। আমাদের প্রত্যেককেই এই পথ অনুসরণ করতে হবে। আমরা রাজ্যগুলির উন্নয়নের মাধ্যমে দেশের উন্নয়ন করতে পারবো। এনিয়ে কোনও বিবাদ চলতে পারে না। আমি আপনাদের আশ্বস্ত করছি, যদি আমাদের শাসনকালে রাজ্য এক পা এগিয়ে আসে, তাহলে আমরা দু-পা এগিয়ে গিয়ে শক্তি সঞ্চারের জন্য প্রস্তুত। সহযোগিতামূলক যুক্তরাষ্ট্র ব্যবস্থা কাকে বলে? আমি তো সর্বদাই বলেছি যে প্রতিযোগিতামূলক, সহযোগিতামূলক যুক্তরাষ্ট্র ব্যবস্থা আজ দেশের প্রয়োজন। আমাদের রাজ্যগুলির মধ্যে যাতে কঠিন প্রতিযোগিতা হয়, তাহলে দেখবেন দ্রুতগতিতে এগিয়ে যাওয়ার দেশ হয়ে উঠবো। একটি ইতিবাচক ভাবনা নিয়ে এগিয়ে যাওয়ার প্রয়োজন রয়েছে। আর আমি যখন রাজ্য ছিলাম তখনও এই দৃষ্টিভঙ্গি নিয়ে কাজ করতাম। অবশ্য সেই জন্য হয়তো চুপচাপ সহ্য করে যেতাম। 
  
মাননীয় সভাপতি মহোদয়,

কোভিড একটা উদাহরণ। সারা বিশ্বে এত বড় একটা সঙ্কট এসেছিল। এহেন সঙ্কটের সময় আমি রাজ্যগুলির মুখ্যমন্ত্রীদের সঙ্গে ২০টি বৈঠকে মিলিত হয়েছি। প্রত্যেকটি বিষয় নিয়ে তাঁদের সঙ্গে আলাপ-আলোচনা করে এগিয়েছি। প্রত্যেক রাজ্যের সহযোগিতা সম্বল করে একটি টিম হয়ে কেন্দ্র এবং রাজ্যগুলির প্রশাসন মিলেমিশে কাজ করেছে। বিশ্ব যে সঙ্কটকে মোকাবিলা করতে পারেনি, আমরা সবাই মিলেমিশে তা করতে পেরেছি। এতে নির্দিষ্ট কারও কৃতিত্ব নয়, আমরা সবাই মিলে এই দেশকে বাঁচানোর জন্য প্রাণপনে চেষ্টা করেছি। এই সাফল্যের ওপর রাজ্যগুলির কৃতিত্বও অনস্বীকার্য। তাঁদের অধিকার সুনিশ্চিত করার ভাবনাকে মাথায় রেখে আমরা কাজ করেছি। 

মাননীয় সভাপতি মহোদয়,

আমরা জি-২০ সম্মেলন দিল্লিতেই করতে পারতাম। দিল্লির এই বড় বড় নেতাদের মধ্যে থেকে কত কিছু করতে পারতাম। আগে এরকম তো হয়েছে। কিন্তু আমরা এরকম করিনি। আমরা জি-২০-র সাফল্যের সম্পূর্ণ খ্যাতি রাজ্যগুলিকে দিয়েছি। দিল্লিতে মাত্র একটি বৈঠক হয়েছে, আর রাজ্যগুলিতে ২০০। বিশ্বের বিভিন্ন দেশ থেকে আসা প্রতিনিধিরা আমাদের প্রতিটি রাজ্যে যাওয়ার সুযোগ পেয়েছেন। এটা ভুল করে হয়নি। সুপরিকল্পিত ভাবে হয়েছে। আমার জন্য সরকার কোন দলের সেই ভিত্তিতে দেশ পরিচালনা করি না। আমরা সবাই মিলে দেশকে এগিয়ে নিয়ে যেতে চাই। এই ভূমিকা পালনেরই চেষ্টা করে গেছি। 

মাননীয় সভাপতি মহোদয়,

আমাদের দেশে বিদেশ যে অতিথিরা আসছেন, এমন তো নয় যে আমরা ক্ষমতায় আসার পর থেকে আসছেন। আগেও আসতেন, আজ যখন বিদেশ থেকে কোন অতিথি আসেন, তখন আমি তাঁদের অনুরোধ করি যে আপনার একদিন কোন রাজ্যে যাওয়া উচিত। আমি তাঁকে কোন রাজ্যে নিয়ে যাই, যাতে তিনি বুঝতে পারেন যে আমার দেশ এখন শুধু দিল্লি নয়, আমার দেশ চেন্নাইয়েও রয়েছে, ব্যাঙ্গালুরুতেও রয়েছে, হায়দ্রাবাদেও রয়েছে, পুরীতেও রয়েছে, ভূবনেশ্বরেও রয়েছে, কলকাতাতেও রয়েছে, আমার দেশ গুয়াহাটিতেও রয়েছে। গোটা বিশ্ব যেন আমার দেশের প্রত্যেক প্রান্ত সম্পর্কে জানতে পারে, আমরা সেই চেষ্টাই করে যাচ্ছি। কেন্দ্রের সঙ্গে সেখানকার রাজ্য সরকারের সহযোগিতা-অসহযোগিতা এসব কিছু দাঁড়িপাল্লায় মাপি না। সততার সঙ্গে এই দেশের ভবিষ্যতের জন্য কাজ করি, যাতে গোটা বিশ্ব আমার ভারতকে জানতে পারে, সে চেষ্টা করি। ২৬ জানুয়ারি আমাদের দেশে কত গুরুত্বপূর্ণ অনুষ্ঠান হয়, কাজ থাকে সেটা সবাই জানে। তারপরও ২৫ তারিখে আমি ফ্রান্সের রাষ্ট্রপতিকে রাজস্থানের অলিগলি ঘুরিয়ে দেখাচ্ছিলাম, যাতে বিশ্ববাসী জানতে পারে যে আমার রাজস্থান এরকম। 

মাননীয় সভাপতি মহোদয়,

আমরা একটি খুব বড় কর্মসূচি নিয়েছি। যা সম্পর্কে গোটা বিশ্বে মডেল রূপে আলোচনা হচ্ছে। প্রত্যাশি জেলা বা উচ্চাকাঙ্খী জেলাগুলির যে সাফল্য তার ৮০% ভূমিকা আমাদের রাজ্যগুলির সহযোগিতাতেই সম্ভব হয়েছে। রাজ্যগুলি আমার উচ্চাকাঙ্খী জেলার ভাবনাকে অনুভব করে সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দিয়েছে। আজ আমার উচ্চাকাঙ্খী জেলাগুলিকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার ক্ষেত্রে ৮০% শক্তি রাজ্য থেকে আসছে। জেলা স্তরের আধিকারিকরা তৎপর রয়েছেন। আর প্রতিটি রাজ্যের যে জেলাগুলি উন্নয়নের নিরিখে পেছনের সারিতে রয়েছে,  তাঁরাও আজ উন্নয়নের জাতীয় গড়ের সঙ্গে প্রতিযোগিতায় নেমেছে। যে জেলা কখনও পশ্চাদপদ ছিল সেই জেলাও সবচেয়ে উন্নত জেলার সঙ্গে প্রতিযোগিতায় নামছে। এই সবকিছু সহযোগিতার মাধ্যমেই সম্ভব হয়। আর আমরা এই কর্মসূচি চালুই করেছি সবাইকে সঙ্গে নিয়ে চলা আর সবাই মিলে দেশের ভবিষ্যৎ গড়ে তোলার উদ্দেশ্য নিয়ে। আজ দেশের প্রত্যেক কোণায় প্রতিটি পরিবার যাতে উন্নয়নের ফল পায় তা সুনিশ্চিত করা আমাদের সকলের দায়িত্ব। আর আমরা সেই লক্ষ্যে এগিয়ে যেতে চাই। আমরা প্রত্যেক রাজ্যকে তার সম্পূর্ণ অধিকারও দিতে চাই। কিন্তু আমি আজকের একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে আমার দুঃখের কথা বলতে চাই। 

মাননীয় সভাপতি মহোদয়,

একটি দেশ কখনও আমাদের জন্য শুধুই কিছু ভূমিখন্ড নয়। আমাদের সকলের জন্য এটি এমন একটি একক যা সকলকে প্রেরণা যোগাতে সক্ষম, একটি শরীরের মত। শরীরে যেমন প্রত্যেকটি অঙ্গের ভূমিকা রয়েছে। যদি পায়ে কাঁটা লাগে তাহলে হাত কখনও ভাবে না যে আমার কী, পায়ে কাঁটা লাগলে আমার কী ? পা নিজের কাজ করবে, কিন্তু তা হয় না। এক মুহূর্তে হাত পায়ের কাছে পৌঁছে যায়। কাঁটা টেনে বের করে। পায়ে কাঁটা লাগলে চোখ দিয়ে জল বেরিয়ে আসে। চোখ একথা বলে না যে পায়ে কাঁটা লাগলে আমার কী ? এরকমই ভারতের যে কোনও প্রান্ত যদি ক্ষতিগ্রস্ত বা ব্যথিত হয়, তাহলে সকলের দুঃখ হওয়া উচিত। যদি দেশের কোনও কোণা…, যদি শরীরের কোনও অঙ্গ কাজ না করে, তাহলে গোটা শরীরকেই প্রতিবন্ধী করে তোলে। শরীরের মতোই দেশের কোনও প্রান্ত বা অঞ্চল যদি উন্নয়ন থেকে বঞ্চিত থাকে, তাহলে দেশ উন্নত হতে পারে না। আর সেজন্য আমাদের ভারতকে একটি শরীর হিসেবে দেখা উচিত, খন্ডিত ভাবে দেখা উচিত নয়। আজকাল যে ধরণের ভাষা বলা হচ্ছে, রাজনৈতিক স্বার্থে দেশকে ভাঙার জন্য নতুন নতুন ব্যখ্যা দেওয়া হচ্ছে। একটি সম্পূর্ণ সরকার মাঠে নেমে নতুন ভাষা তৈরি করছে। এর থেকে বড় দুর্ভাগ্য আর দেশের জন্য কী হতে পারে, আপনারা বলুন!

ঝাড়খন্ডের কোনও জনজাতি সম্প্রদায়ের শিশু যদি অলিম্পিকে গিয়ে পদক জিতে আনে, তখন কি আমরা এটা ভাবি যে সে ঝাড়খন্ডের খেলোয়াড়। পুরো দেশ তখন গর্বে বুক ফুলিয়ে বলে, এ আমাদের দেশের সন্তান। যখন একটি ঝাড়খন্ডের শিশুর মধ্যে প্রতিভা দেখি, আর দেশ তাঁকে হাজার হাজার, লক্ষ লক্ষ টাকা খরচ করে ভালো প্রশিক্ষণের জন্য বিশ্বের যে কোন দেশে পৌঁছায়, তখন কি আমরা ভাবি এই খরচ ঝাড়খন্ডের জন্য হচ্ছে, দেশের জন্য হচ্ছে না। তাহলে আমরা এখন কী করছি, কেমন ভাষায় কথা বলছি ? এতে কি দেশের গৌরব বাড়বে ? আমাদের দেশের টিকা, দেশের কোটি কোটি মানুষকে যে টিকা দেওয়া হয়েছে, আমরা কি বলবো এই টিকা দেশের ওই রাজ্যে তৈরি হয়েছে, তাঁদেরই অধিকার। এইরকম ভাবলে কি দেশ চলতে পারে ? টিকা হয়তো অমুক শহরে তৈরি হয়েছে, সেজন্য দেশের অন্য এলাকার মানুষ তাঁরা লাভবান হতে পারবে না ? এরকম ভাবতে পারি কি? এ কোন ভাবনা থেকে আপনারা একথা বলছেন ? আর একটি পুরোনো জাতীয় দলের মধ্য থেকে যদি এমন ভাবনা উঠে আসে তা অত্যন্ত দুঃখের। 
আমি জিজ্ঞেস করতে চাই মাননীয় সভাপতি মহোদয়,

যদি হিমালয় বলতে শুরু করে যে নদীগুলি আমার বুক থেকে প্রবাহিত হচ্ছে, আমি তোমাদের জল দেব না। জলের অধিকার আমার। তাহলে দেশের কী হবে? দেশ কোথায় গিয়ে থামবে ? যে রাজ্যগুলিতে কয়লা রয়েছে তাঁরা যদি বলে, কয়লা দেব না, এটা আমাদের সম্পত্তি, যাও তোমরা অন্ধকারে কাটাও, তাহলে দেশ কিভাবে চলবে?

মাননীয় সভাপতি মহোদয়,

কোভিডের সময় অক্সিজেনের প্রয়োজন বেড়েছিল। আমাদের পূর্বের রাজ্যগুলিতে বেশি অক্সিজেন উৎপাদিত হয়। গোটা দেশে যে অক্সিজেনের প্রয়োজন ছিল, তখন পূর্ব ভারতের মানুষ যদি বলতেন আমরা অক্সিজেন দেব না, আমাদের জনগণের প্রয়োজন রয়েছে, তাহলে দেশের কী হত? তাঁরা সঙ্কট অনুভব করে সারা দেশে অক্সিজেন পৌঁছে দিয়েছেন। দেশের এই মনোভাবকে আজ ভাঙার চেষ্টা করা হচ্ছে। ‘আমাদের দেওয়া কর’, ‘আমাদের রাজ্যের টাকা’ - এরকম ভাষা ব্যবহার করা হচ্ছে, যা দেশের ভবিষ্যতের জন্য নতুন বিপদ সৃষ্টি করতে পারে। দেশকে ভাঙার জন্য নতুন নতুন ফিকির খোঁজা বন্ধ করুন। দেশকে এগিয়ে যেতে হবে। দেশকে একসঙ্গে নিয়ে চলার চেষ্টা করুন। 

মাননীয় সভাপতি মহোদয়,

বিগত ১০ বছর নীতি এবং নির্মাণের ক্ষেত্রে নতুন ভারতকে নতুন পথ দেখানোর চেষ্টা করা হয়েছে। যে লক্ষ্য নিয়ে আমরা এগিয়ে চলেছি, যে নির্মাণ কার্য আমরা বিগত এক দশক ধরে করেছি, তাতে আমরা দেশের সবাই যেন মৌলিক পরিষেবাগুলি পান এই ভাবনাকে অগ্রাধিকার দিয়েছি।  

মাননীয় সভাপতি মহোদয়,

আমরা চেষ্টা করেছি যাতে প্রত্যেক পরিবারের জীবনযাত্রার মান উন্নত হয়, প্রত্যেকের জীবনের ‘ইজ অফ লিভিং’ বাড়ে সেই চেষ্টা করেছি, এটাই সময়ের চাহিদা। প্রত্যেকের জীবনের মান আমরা কিভাবে উন্নত করবো তা সুনিশ্চিত করতে আগামীদিনেও আমাদের পূর্ণ শক্তি নিয়োগ করবো আমাদের সম্পূর্ণ সামর্থ দিয়ে, আমরা ‘ইজ অফ লিভিং’কে এককদম এগিয়ে নিয়ে গিয়ে জীবনযাত্রার মান উন্নত করতে কাজ করে যাব। 

মাননীয় সভাপতি মহোদয়,

গত ১০ বছরে আমাদের দেশে দারিদ্র সীমার ওপরে উঠে যে নতুন মধ্যবিত্ত শ্রেণী গড়ে উঠেছে, আগামী ৫ বছরে বিবিধ কর্মসূচির মাধ্যমে তাঁদের ক্ষমতায়ন করে নতুন উচ্চতায় পৌঁছে দেওয়ার চেষ্টা আমরা করছি। আর সে জন্য আমরা সামাজিক ন্যায়ের যে 'মোদী কবচ' দিয়েছি সেই মোদী কবচ-কে আরও মজবুত করে তুলবো, আরও শক্তি যোগাবো। 

মাননীয় সভাপতি মহোদয়,

আমরা যখন বলি ২৫ কোটি মানুষ দারিদ্র সীমার ওপরে উঠে এসেছে, তখন আজকাল তাঁরা কুতর্ক জুড়ে দেন যে ২৫ কোটি যদি নতুন করে দারিদ্র সীমার উপরে উঠে গিয়ে থাকে তাহলে ৮০ কোটি মানুষকে বিনামূল্যে রেশন কেন দিচ্ছেন? 

মাননীয় সভাপতি মহোদয়,
 
আমরা জানি কোন অসুস্থ ব্যক্তি যখন হাসপাতাল থেকে বাড়িতে আসেন, তখন ডাক্তার বলেন যে কিছুদিন এমন ভাবে সামলে রাখবেন, বেছে বেছে খাবেন, এটা করবেন, সেটা করবেন না - কেন বলেন ? যাতে আবার কোন সমস্যায় না পড়ে। যাঁরা দারিদ্র সীমা থেকে উপরে উঠে এসেছেন, তাঁদেরকে তো বেশি সামলে রাখা উচিত। যাতে এমন কোনও সঙ্কট এসে তাঁদেরকে আবার দারিদ্র সীমার নিচে না নিয়ে চলে যায়। আর সেজন্য তাঁদেরকে শক্তিশালী হয়ে ওঠার জন্য সময় দিতে হবে। আমরা এই সময় দরিদ্রদের পাশে দাঁড়িয়েছি, যাতে সেই নতুন মধ্যবিত্ত শ্রেণী আর একবার দারিদ্র সীমার নিচে পৌঁছে না যান। আয়ুষ্মান প্রকল্পে আমরা যে ৫ লক্ষ টাকা করে দিই, এর পেছনেও একটি বিশেষ ইচ্ছে রয়েছে। পরিবারে একজনের বিশেষ কঠিন রোগ হলে মধ্যবিত্ত পরিবারটির দারিদ্র সীমার নিচে চলে যেতে বেশি দেরি লাগে না। আর সে জন্যই দারিদ্র সীমার উপরে টেনে তোলা যতটা প্রয়োজন, ততটাই প্রয়োজন কোনও ভাবে যেন তাঁরা আবার দারিদ্র সীমার নীচে না চলে যায় সেদিকে লক্ষ্য রাখা। সেজন্য আমরা তাঁদেরকে বিনামূল্যে রেশন দিচ্ছি। এই রেশন আমরা দিয়ে যাব। এতে কারও যদি খারাপ লাগে তো লাগুক। কিন্তু ২৫ কোটি মানুষ দারিদ্র সীমার ওপরে উঠে নতুন মধ্যবিত্ত শ্রেণী তৈরি হয়েছে। তাঁদের পরিস্থিতি সম্পর্কে আমরা জানি, বুঝি। কারণ আমি নিজে একসময় সেই জীবনে অভ্যস্ত ছিলাম। তাঁদের পাশে দাঁড়ানো অনেক প্রয়োজন। সেজন্য আমাদের এই প্রকল্প চালু থাকবে। 

মাননীয় সভাপতি মহোদয়,

দেশবাসী জানে, আর সে জন্য আমি গ্যারান্টি দিয়েছি। আয়ুষ্মান ভারত প্রকল্পের ৫ লক্ষ টাকা মূল্যের চিকিৎসা আমাদের দেশের গরীবরা ভবিষ্যতেও পাবেন। এটা আমার গ্যারান্টি, এটা মোদীর গ্যারান্টি। ৮০% ছাড় দিয়ে যে ওষুধ পাওয়া যায়, মধ্যবিত্তরা যে পরিষেবা পান তাও জারি থাকবে। 

মাননীয় সভাপতি মহোদয়,

মোদীর গ্যারান্টি হল কৃষকরা যে সম্মান নিধি পাচ্ছেন, সেই সম্মান নিধিও চালু থাকবে। যাতে তাঁরা দেশের উন্নয়ন যাত্রার অংশীদার হয়ে শক্তি যোগাতে পারেন।

মাননীয় সভাপতি মহোদয়,

গরীব গৃহহীনদের পাকা বাড়ি বানিয়ে দেওয়ার অভিযান আমরা চালাচ্ছি। যদি পরিবার বড় হয় তা থেকে নতুন পরিবার তৈরি হয়। সেজন্য পাকা বাড়ি বানিয়ে দেওয়ার এই কর্মসূচি জারি থাকবে। নলের মাধ্যমে পরিশ্রুত পানীয় জল পৌঁছে দেওয়ার প্রকল্প জারি থাকবে -- এটা আমাদের দৃঢ় সংকল্প। আর আমার গ্যারান্টি নলের মাধ্যমে পরিশ্রুত পানীয় জল পৌঁছে দিতে থাকবো। আমাদের নতুন নতুন শৌচালয় গড়ে তোলার প্রয়োজন পড়বে, এক্ষেত্রেও আমার গ্যারান্টি। আমরা এই অভিযানও চালিয়ে যাব। আর এই সমস্ত কাজ দ্রুত গতিতে এগোবে। কারণ, উন্নয়নের যে পথ ও লক্ষ্য নিয়ে আমরা চলছি তাকে আমরা কোন পরিস্থিতিতেই একটুও শ্লথ হতে দিতে চাই না। 

মাননীয় সভাপতি মহোদয়,

আমাদের সরকারের তৃতীয় শাসনকাল দূরে নেই। অনেকে এর নাম দিয়েছেন মোদী ৩.০। এই মোদী ৩.০ উন্নত ভারতের ভিত্তিকে মজবুত করার জন্য সম্পূর্ণ শক্তি প্রয়োগ করবে। 

মাননীয় সভাপতি মহোদয়,

আগামী ৫ বছরে ভারতে চিকিৎসকের সংখ্যা আগের তুলনায় অনেক গুণ বাড়বে। মেডিকেল কলেজগুলির সংখ্যা বাড়বে। এদেশে চিকিৎসা অনেক সস্তা এবং সুলভ হবে। 

মাননীয় সভাপতি মহোদয়,

আগামী ৫ বছরে প্রত্যেক গরীবের বাড়িতে নলের মাধ্যমে পরিশ্রুত পানীয় জলের সংযোগ থাকবে। 

মাননীয় সভাপতি মহোদয়,

আগামী ৫ বছরে সমস্ত গরীবকে পিএম আবাস যোজনার মাধ্যমে পাকা বাড়ি দেওয়া হবে। যাতে কেউ বঞ্চিত না থাকেন, সেটা দেখা হবে। সেই বাড়িতে সৌরশক্তির মাধ্যমে বিনামূল্যে বিদ্যুৎ সরবরাহ হবে। দেশের কোটি কোটি নাগরিকের বিদ্যুতের বিল হবে শূন্য। আর ঠিক ভাবে আয়োজন করলে প্রত্যেকেই বাড়িতে বিদ্যুৎ উৎপাদন করে নিজের ব্যবহারের অতিরিক্ত বিদ্যুৎ বিক্রি করে রোজগার করতে পারবেন। এটা আমাদের আগামী ৫ বছরের কর্মসূচি। 

মাননীয় সভাপতি মহোদয়,

আগামী ৫ বছর ধরে দেশের সর্বত্র নলের মাধ্যমে রান্নার গ্যাসের সংযোগের নেটওয়ার্ক গড়ে তোলার চেষ্টা করা হবে। 

সভাপতি মহোদয়,

আগামী ৫ বছরে আমাদের যুব শক্তির সামর্থ পুরো বিশ্ব দেখবে। মাননীয় সভাপতি মহোদয়, আপনি দেখবেন আমাদের নবীনদের স্টার্ট আপ, নবীনদের ইউনিকর্নের সংখ্যা কয়েক লক্ষ হবে। শুধু তাই নয়, নতুন নতুন স্টার্ট আপের মাধ্যমে টিয়ার ২, টিয়ার ৩ শহরগুলির নতুন পরিচয় গড়ে উঠবে। আমি চোখের সামনে আগামী ৫ বছরের চিত্র দেখতে পাচ্ছি। 

মাননীয় সভাপতি মহোদয়,

আমাদের রিজার্ভ ফান্ডিং-এর বৃদ্ধির প্রভাব আপনি দেখতে পাচ্ছেন। বিগত ৭ দশকে যত পেটেন্ট হয়নি, আগামী ৫ বছরে তত রেকর্ড পরিমাণ পেটেন্ট ফাইল হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। 

মাননীয় সভাপতি মহোদয়,

আজ আমাদের মধ্যবিত্ত শ্রেণীর লক্ষ লক্ষ ছেলে-মেয়ে বিদেশে পড়াশুনো করতে চলে যায়। আমি এমন পরিস্থিতি আনতে চাই যাতে আমাদের সন্তানদের লক্ষ লক্ষ টাকা বাঁচে, আমার দেশের মধ্যবিত্তদের স্বপ্ন যাতে বাস্তবায়িত হয়, সেরা থেকে সেরা বিশ্ববিদ্যালয় আমার দেশে থাকে, আমার দেশেই যেন উচ্চতর শিক্ষার সমস্ত সুযোগ থাকে, আর আমাদের সন্তানদের টাকা সাশ্রয় হয়, পরিবারের অর্থও যেন সাশ্রয় হয়। 

মাননীয় সভাপতি মহোদয়,

আপনি দেখবেন, আগামী ৫ বছরে আমাদের দেশের খেলোয়াড়রা আন্তর্জাতিক সমস্ত ক্রীড়া প্রতিযোগিতায় ভারতের পতাকা ওড়াবে। আমরা এটা দেখবো যাতে আগামী ৫ বছরে ক্রীড়া জগতে ভারতের যুব সম্প্রদায়ের শক্তির পরিচয় তৈরি হয়। 

মাননীয় সভাপতি মহোদয়,

আগামী ৫ বছরে ভারতের গণ পরিবহণের ক্ষেত্রে পূর্ণ রূপান্তর আসছে। আগামী ৫ বছরে দরিদ্র এবং মধ্যবিত্তদের তেল ও জ্বালানি সাশ্রয় হবে এবং তাঁরা অতি সহজে অসাধারণ পরিষেবা সম্পন্ন গণ-পরিবহণ পাবেন। গতি বাড়বে, পূর্ণ শক্তিতে অনেক পরিষেবা পাবেন। আগামী ৫ বছর দেশ বুলেট ট্রেনও দেখবে। আর দেশে ‘বন্দে ভারত’ ট্রেনের সম্প্রসারণও দেখবে। 

মাননীয় সভাপতি মহোদয়,

আগামী ৫ বছরে আত্মনির্ভর ভারতের অভিযান নতুন উচ্চতায় পৌঁছোবে। দেশ প্রত্যেক ক্ষেত্রে আত্মনির্ভর হয়ে উঠতে থাকবে। 

মাননীয় সভাপতি মহোদয়,

আগামী ৫ বছরে ‘মেড ইন ইন্ডিয়া’ সেমি কন্ডাকটরের বিশ্বে আমাদের সাফল্যের প্রতিধ্বনি শোনা যাবে। প্রতিটি বৈদ্যুতিন পণ্যে সেই চিপ থাকবে যাতে কোনও না কোনও ভারতবাসীর ঘামের ছোঁয়া থাকবে। 

মাননীয় সভাপতি মহোদয়,

ভারত বিশ্বের বৈদ্যুতিক ও বৈদ্যুতিন বাজারে একটি নতুন গতির সামর্থ আগামী ৫ বছরে নিয়ে আসবে। 

মাননীয় সভাপতি মহোদয়,

আজ দেশ লক্ষ কোটি টাকার তেল আমদানি করে। আমাদের জ্বালানির প্রয়োজন মেটানোর জন্য আমরা যত বেশি সম্ভব আত্মনির্ভর হওয়ার লক্ষ্যে কাজ করবো, আর আমার দৃঢ় বিশ্বাস, আমরা এই জ্বালানির প্রয়োজন মেটাতে পরনির্ভরতা হ্রাস করতে সফল হবো। শুধু তাই নয়, মাননীয় সভাপতি মহোদয়, পরিবেশ বান্ধব হাইড্রোজেন অভিযানের মাধ্যমে আমরা বিশ্বের বাজারকে আকর্ষিত করার লক্ষ্যে এগিয়ে চলেছি। আমরা নিজেদের পরিবেশ বান্ধব হাইড্রোজেন ইন্ধনের প্রয়োজন মেটাতে সমর্থ হয়ে উঠবো। ইথানল উৎপাদনের ক্ষেত্রে আমরা দ্রুত গতিতে এগিয়ে চলেছি। আমরা ২০% লক্ষ্য পূরণের মাধ্যমে আমাদের জনগণের যাতায়াতের খরচ আরও সস্তা করে তোলার ব্যবস্থা করছি। 

মাননীয় সভাপতি মহোদয়,

যখন আমি ২০% ইথানলের কথা বলছি, তখন এর মাধ্যমে আমাদের দেশের কৃষকরা প্রত্যক্ষ ভাবে লাভবান হবেন। তাঁদের জীবনে একটি নতুন গতি আসবে। দেশে আজ হাজার হাজার কোটি টাকা মূল্যের খাদ্যশস্য ও ভোজ্য তেল আমাদের বিদেশ থেকে আমদানি করতে হয়। আমরা নিজেদের কৃষি প্রধান দেশ বলি। তবুও আমাদের এত টাকার খাদ্যশস্য ও ভোজ্য তেল আমদানি করতে হচ্ছে। আমাদের দেশের কৃষকদের ওপর আমার সম্পূর্ণ ভরসা আছে। আর আমার দৃঢ় বিশ্বাস যে নীতি নিয়ে আমরা চলেছি তা আমাদের আগামী ৫ বছরে দ্রুত ভোজ্য তেলের ক্ষেত্রে আত্মনির্ভর করে তুলবে। আর যে অর্থ সাশ্রয় হবে তা আমাদের দেশের কৃষকদের পকেটে যাবে। 

মাননীয় সভাপতি মহোদয়,

রাসায়নিক চাষের ফলে আমাদের ধরিত্রী মায়ের অনেক লোকসান হচ্ছে। আগামী ৫ বছরে দেশের কৃষকদের আমরা সাফল্যের সঙ্গে প্রাকৃতিক কৃষির দিকে নিয়ে যেতে পারবো। একটি নবজাগরণের কাজ হবে। ফলে, আমাদের ধরিত্রী মা আরও নিরাপদ হবে।  

মাননীয় সভাপতি মহোদয়,

প্রাকৃতিক কৃষির বাজার ক্রমে সম্প্রসারিত হচ্ছে। ফলে, আমাদের প্রাকৃতিক কৃষিজাত পণ্যগুলির শক্তিও বাড়তে চলেছে। 

মাননীয় সভাপতি মহোদয়,

রাষ্ট্রসংঘের মাধ্যমে আমি মোটা দানার খাদ্যশস্যের অভিযান চালিয়েছি। এই মোটা দানার শস্যকে আমি 'শ্রী অন্ন' বলি। এখন ক্রমে এই 'শ্রী অন্ন'  মিলেটস নামে এগুলির আন্তর্জাতিক পরিচয় গড়ে উঠছে। সেই দিন দূরে নেই যখন আগামী ৫ বছরের মধ্যেই বিশ্বের বাজারে সুপার ফুড রূপে আমার দেশের গ্রামগুলিতে ছোট ছোট বাড়িতে তৈরি 'শ্রী অন্ন' বিশ্বের বাজারে জনপ্রিয় হয়ে উঠবে। 

মাননীয় সভাপতি মহোদয়,

কৃষিতে একটি নতুন শক্তি হয়ে উঠতে চলেছে ড্রোন প্রযুক্তি। ইতিমধ্যেই আমরা ১৫  হাজার ‘ড্রোন দিদি’ কর্মসূচি চালু করেছি। এটা শুধুই সূত্রপাত। ভবিষ্যতে অনেক সাফল্য আসবে। 

মাননীয় সভাপতি মহোদয়,

আমরা ন্যানো টেকনোলজিকে কৃষিতে প্রয়োগের ক্ষেত্রে অনেক সাফল্য পেয়েছি। আমরা ন্যানো ইউরিয়া প্রয়োগেও সাফল্য পেয়েছি। ন্যানো ডিএপি-র লক্ষ্যেও সাফল্য এসেছে। আগে যারা এক বস্তা সার নিয়ে ঘুরতেন, আজ সেই কৃষকরাই মাত্র এক বোতল সার দিয়ে কাজ চালিয়ে নিচ্ছেন। এই প্রকল্প সারা দেশে দ্রুত সফল হবে। 

মাননীয় সভাপতি মহোদয়,

সমবায় ক্ষেত্রকে উৎসাহিত করতে আমরা একটি নতুন মন্ত্রক গড়ে তুলেছি। উদ্দেশ্য হল, সমবায়কে গণআন্দোলনের মাধ্যমে নতুন শক্তি যোগানো, আর একবিংশ শতাব্দীর প্রয়োজন অনুসারে গড়ে তোলা। এক্ষেত্রে আমরা হাতে নিয়েছি ২ লক্ষ শস্যভান্ডার গড়ে তোলার কাজ। এই অভিযান ৫ বছরের মধ্যে সম্পূর্ণ হবে। ছোট কৃষকরাও তাঁদের উৎপাদিত ফসল সংরক্ষণের জায়গা পাবেন। কৃষকরাই ঠিক করবেন তাঁদের উৎপাদিত ফসল কোন দামে বাজারে বিক্রি হবে। তাঁদের যে সর্বস্বান্ত হওয়ার ভয় সেটা আর থাকবে না। কৃষকদের আর্থিক শক্তি বাড়বে। মৎস্য চাষ এবং পশুপালন এর ক্ষেত্রে নতুন নতুন রেকর্ড গড়ে উঠবে। আজ আমাদের এখানে যত পশু রয়েছে, তার তুলনায় দুধের উৎপাদন কম। আমরা এই রীতিকে বদলে দেবো। মৎস্য রপ্তানির ক্ষেত্রে আমরা দ্রুত এগিয়ে চলেছি। আমরা এফপিও বা খাদ্য প্রক্রিয়াকরণ সংস্থা গড়ে তোলার কর্মসূচি শুরু করেছি। এর অভিজ্ঞতা খুব সুন্দর। আগামী ৫ বছরে কৃষকদের একটি নতুন সংগঠনের শক্তি এবং কৃষি উৎপাদনে মূল্য সংযোজনের মাধ্যমে আমাদের দেশের কৃষকরা অবশ্য লাভবান হবেন। 

মাননীয় সভাপতি মহোদয়,

জি-২০-র সাফল্য অনেক কিছু স্পষ্ট করে দিয়েছে। কোভিডের পর বিশ্বের বাজার যে ভাবে উন্মুক্ত হয়েছে, সেই উন্মোচনের সবচেয়ে বড় লাভ আমরা অনুভব করেছি যে বিশ্ববাসীর নজর ভারতের দিকে পড়েছে। সেজন্য ভারত আগামীদিনে পর্যটন ক্ষেত্রে একটি অনেক বড় গন্তব্য হয়ে উঠতে চলেছে। আর এই ক্ষেত্রটি সবচেয়ে কম বিনিয়োগে সর্বাধিক রোজগার দেয়। আজ বিশ্বের অনেক দেশ সম্পূর্ণ রূপে পর্যটন অর্থনীতির ওপর নির্ভরশীল। ভারতেও এমন অনেক রাজ্য রয়েছে যেগুলির সম্পূর্ণ অর্থনীতির সবচেয়ে বড় অংশ পর্যটন থেকে আসতে পারে। আর সেই দিন দূরে নেই। আমরা যে নীতি নিয়ে এগিয়ে চলেছি তা ভারতকে একটি অনেক বড় পর্যটন গন্তব্য করে তুলবে। 

মাননীয় সভাপতি মহোদয়,

যে বিষয়টি নিয়ে আগে খুব কম হিসেব করা হতো, যা নিয়ে কথা বললে ব্যঙ্গ বিদ্রুপ করা হতো, যখন আমি ডিজিটাল ইন্ডিয়ার কথা বলতাম, যখন আমি ফিনটেক নিয়ে আলোচনা করতাম, তখন তাঁদের মনে হতো যে আমি অহেতুক বাগাড়ম্বর করছি। আমার ভাবনার সঙ্গে তাঁরা একমত হতে পারতেন না। সামর্থের অভাব ছিল। কিন্তু আমি সম্পূর্ণ বিশ্বাস নিয়ে বলছি, শ্রদ্ধেয় সভাপতি মহোদয়, আগামী ৫ বছরে ডিজিটাল অর্থনীতির বিশ্বে ভারতের ডঙ্কা বাজতে চলেছে। ভারত একটি নতুন শক্তি হয়ে উঠতে চলেছে। আজ ডিজিটাল ব্যবস্থাগুলি ভারতের সামর্থকে বাড়িয়ে নিয়ে চলেছে। বিশ্ববাসী স্বীকার করছে যে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তাকে সব চেয়ে বেশি ব্যবহার করার সামর্থ যদি কোনও দেশের থাকে, তাহলে সেই দেশ হল ভারত। আমাদের দেশ সমস্ত অত্যাধুনিক প্রযুক্তিকে ব্যবহার করবে। 

মাননীয় সভাপতি মহোদয়,

অন্তরিক্ষে ভারতের নাম ক্রমে উজ্জ্বলতর হচ্ছে। আমাদের বৈজ্ঞানিকদের পরাক্রম ক্রমে আরও বাড়তে চলেছে। আর আগামী ৫ বছরের যে কর্মসূচি রয়েছে তা আজ আমি শব্দ দিয়ে ব্যখ্যা করতে চাই না। বিশ্বকে চমকে দেওয়ার লক্ষ্য নিয়ে আমাদের বৈজ্ঞানিকেরা মহাকাশে ভারতের উপস্থিতি আরও প্রবল করে তুলবেন - এটাই আমার বিশ্বাস। 

মাননীয় সভাপতি মহোদয়,

তৃণমূল স্তরে অর্থনীতিতে অনেক বড় পরিবর্তন এনেছে দেশের স্বনির্ভর গোষ্ঠীগুলির ১০ কোটি মা ও বোনেরা।এদের মধ্যে রয়েছেন এককোটি ‘লাখপতি দিদি’। আরও ৩ কোটি লাখপতি দিদি আগামী ৫ বছরে আমাদের মহিলাদের উৎকর্ষ গাঁথা গড়তে চলেছেন। 

মাননীয় সভাপতি মহোদয়,

এরকম অনেক বিবিধ ক্ষেত্র রয়েছে, যে ক্ষেত্রগুলি আমি স্পষ্ট দেখতে পাচ্ছি। আগামী ৫ বছরে ভারত আবার সেই ‘স্বর্ণ যুগ’-এর ভিত্তি স্থাপন করবে,  যার কথা আমরা  শুনে আসছি। ২০৪৭ সালে পৌঁছোনোর আগে ভারত আবার নতুন ‘স্বর্ণ যুগ’-এ প্রবেশ করবে। এই বিশ্বাস নিয়ে মাননীয় সভাপতি মহোদয়, উন্নত ভারত এই শব্দটিকে আমরা হালকা ভাবে নিচ্ছি না। এটি আমাদের দায়বদ্ধতা। এর জন্য আমরা সমর্পণের মনোভাব নিয়ে আমাদের প্রতিটি নিঃশ্বাস-প্রশ্বাসের সঙ্গে এই ভাবনা নিয়ে কাজ করে চলেছি। এই ভাবনা নিয়ে আমরা এগিয়ে চলেছি, আরও এগিয়ে যাব। দেশকেও এগিয়ে নিয়ে যাবো। এর মাধ্যমেই আগামী শতাব্দী এই ‘স্বর্ণ যুগ’কে ইতিহাসে অঙ্কিত করবে। আমার মনে এই বিশ্বাস রয়েছে, কারণ দেশের জনগণের মেজাজকে আমি খুব ভালোভাবে বুঝতে পারি। দেশ পরিবর্তনের ১০ বছরের অভিজ্ঞতাকে দেখেছে। একটি ক্ষেত্রে যে পরিবর্তন দেখেছে তার সেই দ্রুত গতি জীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রে নতুন উচ্চতা, নতুন শক্তি প্রদান করবে। আর প্রতিটি সংকল্পকে সিদ্ধির পথে পৌঁছে দেওয়া  আমাদের কর্মশৈলীর অঙ্গ।

মাননীয় সভাপতি মহোদয়,

আমি আর একবার বলছি, এই সদনে যাঁরা তাঁদের ভাবনাকে তুলে ধরেছেন, যাঁদের বক্তব্যের জবাবে দেশের সামনে সত্যকে তুলে ধরার সুযোগ আমি পেয়েছি, আর এই সভাকক্ষের পবিত্রতা রক্ষা করে সংবিধানকে সাক্ষী রেখে আপনাদের সামনে এই সত্যকে তুলে ধরার সুযোগ পেয়েছি, আমার দৃঢ় বিশ্বাস, যাঁদের ওয়ারেন্টি শেষ হয়ে গেছে তাঁদের কথা দেশ শুনবে না। যাঁদের গ্যারান্টির শক্তি দেশবাসী দেখেছে তাঁদের ভাবনাকে বিশ্বাস করে এগিয়ে যাবে। 

আমি আর একবার মাননীয় সভাপতি মহোদয়, আপনাকে অন্তর থেকে কৃতজ্ঞতা জানাচ্ছি। আর মাননীয় রাষ্ট্রপতিজিকে আমার পক্ষ থেকে তাঁর ব্যখ্যার জন্য সাদর অভিনন্দন ও কৃতজ্ঞতা জানিয়ে আমার বক্তব্যকে বিরাম দিচ্ছি। অনেক অনেক ধন্যবাদ।

(প্রধানমন্ত্রীর মূল ভাষণটি ছিল হিন্দিতে। এটি তার ভাবানুবাদ।)


  
PG/SB/SB/AS



(Release ID: 2005640) Visitor Counter : 131