প্রধানমন্ত্রীরদপ্তর

“ভারত একটি কল্যাণ রাষ্ট্র, সরকারি কর্মসূচির সুফল সুনির্দিষ্ট সুফলভোগীদের কাছে পৌঁছে দেওয়াই হল আমাদের অগ্রাধিকারের একটি বিষয়”

‘ইটি নাও বিশ্ব বাণিজ্য বৈঠক, ২০২৪’-এ বক্তব্য প্রধানমন্ত্রীর

Posted On: 09 FEB 2024 10:53PM by PIB Kolkata

নয়াদিল্লি, ৯ ফেব্রুয়ারি,২০২৪

 

“ভারত হল একটি কল্যাণ রাষ্ট্র। দেশের সাধারণ নাগরিকদের জীবনযাত্রাকে আরও সহজ করা এবং সেইসঙ্গে তাঁদের জীবনযাপনের গুণগত মান আরও উন্নত করে তোলার মতো বিষয়গুলিকেই সরকার বিশেষ অগ্রাধিকার দিয়েছে। একদিকে যেমন নতুন নতুন প্রকল্প ও কর্মসূচি রচিত হচ্ছে, অন্যদিকে তেমনই তার সুফল সুনির্দিষ্ট সুফলভোগীদের কাছে পৌঁছে দেওয়ার কাজও নিশ্চিত করা হচ্ছে। শুধুমাত্র বর্তমানের জন্যই নয়, দেশের ভবিষ্যতের লক্ষ্যেও আমাদের এই উন্নয়ন তথা বিনিয়োগ প্রচেষ্টা।” 

আজ রাজধানীর হোটেল তাজ প্যালেস-এ ‘ইটি নাও বিশ্ব বাণিজ্য বৈঠক, ২০২৪’-এ ভাষণদানকালে এই মন্তব্য করেন প্রধানমন্ত্রী শ্রী নরেন্দ্র মোদী। এবারের বৈঠকের মূল আলোচ্য বিষয় ছিল – ‘ব্যাঘাত, উন্নয়ন ও বৈচিত্র্যকরণ’। এই প্রসঙ্গটি উত্থাপন করে শ্রী মোদী বলেন, যখন আমরা ব্যাঘাত, উন্নয়ন এবং বৈচিত্র্যকরণের কথা উল্লেখ করি, তখন সকলেই ‘এখনই হল ভারতের সেরা সময়’ কথাটিতে সহমত প্রকাশ করেন। প্রধানমন্ত্রী বলেন, ভারত সম্পর্কে বিশ্ববাসীর আস্থা ও বিশ্বাস ক্রমশ বৃদ্ধি পেয়ে চলেছে। দাভোস-এ আলোচনার বিষয়বস্তুই ছিল – ‘ভারতের নজিরবিহীন অর্থনৈতিক সাফল্য’। ডিজিটাল তথা ব্যবহারিক পরিকাঠামোকে ভারত যেভাবে এক নতুন উচ্চতায় উন্নীত করেছে, তা বিশ্ববাসীর কাছে এক অপার বিস্ময়। কারণ, বিশ্বের প্রায় প্রতিটি ক্ষেত্রেই ভারতের প্রাধান্য এখন সর্বজনস্বীকৃত। এই কারণে ভারত সম্পর্কে বিশ্বজনের উৎসাহ ও কৌতুহলের মাত্রাও এখন বেশ উল্লেখ করার মতো। দাভোস-এর সম্মেলনে এক পদস্থ আধিকারিক বর্তমান ভারত সম্পর্কে যে মন্তব্য করেছিলেন, তাও প্রসঙ্গত স্মরণ করেন প্রধানমন্ত্রী। তিনি বলেন, ভারতের বর্তমান ক্ষমতা ও দক্ষতাকে ঐ আধিকারিক শক্তিশালী এক বৃষের সঙ্গে তুলনা করেছিলেন। অতীতে ভারত সম্পর্কে এ ধরনের ইতিবাচক আবেগ ও প্রশংসা এর আগে কখনও শোনা যায়নি। এখানে উল্লেখ করার মতো আরও একটি বিষয় হল, প্রধানমন্ত্রী তাঁর লালকেল্লার প্রাকার থেকে প্রদত্ত ভাষণে বর্তমান সময়কালটি যে একান্তই ভারতের সঠিক সময়, এ কথা বিশেষ জোরের সঙ্গে ঘোষণা করেছিলেন।

শ্রী মোদী বলেন, কোন দেশের উন্নয়নের যাত্রাপথে এমন এক একটি সময় আসে যখন পরিস্থিতি সার্বিকভাবেই তার অনুকূলে থাকে। ভারতের এখন সেই সময়কালই উপস্থিত। উন্নয়ন প্রচেষ্টার মাধ্যমে ভারত যেভাবে নিজেকে আরও শক্তিশালী করে তুলছে, তার রেশ অব্যাহত থাকবে আগামী বেশ কয়েক শতক জুড়ে। দেশে একদিকে যেমন উন্নয়নের হার বৃদ্ধি পাচ্ছে, অন্যদিকে তেমনই হ্রাস পাচ্ছে আর্থিক ঘাটতির অঙ্ক। একদিকে যেমন রপ্তানি বৃদ্ধি পাচ্ছে, অন্যদিকে তেমনই উৎপাদনশীল খাতে বিনিয়োগের পরিমাণও রেকর্ড উচ্চতায় উন্নীত হয়েছে। মুদ্রাস্ফীতির হার বর্তমানে রয়েছে নিয়ন্ত্রণে। অন্যদিকে, আয় ও উপার্জন সহ অন্যান্য সুযোগ-সুবিধাও ক্রমান্বয়ে বৃদ্ধি পেয়ে চলেছে। ফলে, দারিদ্র্য হ্রাস পাওয়ার পাশাপাশি ভোগ্যপণ্যের বাজার ক্রমশ চাঙ্গা হচ্ছে এবং কর্পোরেট ক্ষেত্রের লাভের পরিমাণও উল্লেখযোগ্যভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে। রেকর্ড পরিমাণ হ্রাস পেয়েছে ব্যাঙ্কগুলির অনুৎপাদক সম্পদও। উৎপাদন ও উৎপাদনশীলতা - দুইয়েরই বৃদ্ধি ঘটে চলেছে নিরন্তরভাবে।

ভারতের এ বছরের অন্তর্বর্তী বাজেট সম্পর্কে সাংবাদিক এবং অর্থনৈতিক বিশেষজ্ঞরা যেভাবে ইতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গী গ্রহণ করেছেন তার প্রশংসা করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, এই বাজেট কখনই জনগণকে খুশি করার মতো একটি বাজেট নয়, বরং এর মধ্যে রয়েছে বেশ কিছু নীতিগত উদ্যোগ এবং সার্বিক নীতি প্রণয়নের মতো বিষয়। আবার, এই নীতিগুলির মধ্যে প্রতিধ্বনিত হয়েছে নিরন্তর অগ্রগতি ও স্থিতিশীলতার মতো গুরুত্বপূর্ণ বিষয়গুলি। তাই এবারের এই অন্তর্বর্তী বাজেট এই ধরনের নীতিগুলিরই সম্প্রসারণ প্রচেষ্টা মাত্র। 

করোনা অতিমারীকালে বিশ্বের সার্বিক অর্থনৈতিক পরিস্থিতির কথা উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, স্বাস্থ্য ও অর্থনীতির মতো দুটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় বিশ্বের প্রতিটি দেশকেই আতঙ্কগ্রস্ত করে তুলেছিল। অতিমারীর মোকাবিলায় বিশ্বের বিভিন্ন দেশ তখন দিশেহারা। কিন্তু, ঐ সঙ্কটজনক পরিস্থিতিতে মানুষকে বাঁচানোর বিষয়টিতেই ভারত বিশেষ অগ্রাধিকার দিয়েছিল। কারণ, ভারত বিশ্বাস করে যে মানুষকে জীবনদানের মধ্যেই রয়েছে উন্নয়নের সাফল্য। দরিদ্র সাধারণ মানুষের কাছে বিনামূল্যে রেশন পৌঁছে দেওয়ার পাশাপাশি ভারতেই তৈরি করোনা প্রতিষেধক ব্যবহারের ওপর সরকার বিশেষ গুরুত্ব আরোপ করেছিল। শুধু তাই নয়, খুব সহজেই যাতে এই ভ্যাক্সিন বা প্রতিষেধক পাওয়া যায় তার ব্যবস্থাও নিশ্চিত করা হয়েছিল সরকারের পক্ষ থেকে। এইভাবেই স্বাস্থ্য এবং জীবনধারণ - দুটি বিষয়কেই বিপন্মুক্ত করে তোলার চেষ্টা করা হয়েছিল সরকারের পক্ষ থেকে। সরকারের বিভিন্ন উন্নয়নমূলক কর্মসূচি প্রসঙ্গে মহিলা সুফলভোগীদের ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টে প্রত্যক্ষ সুফল হস্তান্তর, রাস্তার হকার ও পণ্য বিক্রেতাদের জন্য আর্থিক সহায়তাদান এবং কৃষি উৎপাদন বৃদ্ধির লক্ষ্যে বিভিন্ন ব্যবস্থা গ্রহণের মতো বিষয়গুলিরও উল্লেখ করেন প্রধানমন্ত্রী। তিনি বলেন, বিপর্যয়কে কিভাবে সুযোগ-সুবিধায় রূপান্তরিত করা যায়, তা নিশ্চিত করাই ছিল সরকারের এক সঙ্কল্প বিশেষ। 

সুনির্দিষ্ট লক্ষ্য পূরণে সঞ্চিত অর্থই হল অর্জিত অর্থ – এই মন্ত্রকে সম্বল করে নির্দিষ্ট লক্ষ্যমাত্রা পূরণকে একটি সুচিন্তিত পদক্ষেপ বলে উল্লেখ করেন প্রধানমন্ত্রী। সার্বিক অর্থনৈতিক প্রচেষ্টায় স্বচ্ছতা নিশ্চিত করার মাধ্যমে দেশের কিভাবে আর্থিক সাশ্রয় ঘটছে, তারও উল্লেখ করেন তিনি। প্রধানমন্ত্রী বলেন, সরকারের এই প্রচেষ্টায় প্রযুক্তি হল এক নির্ভরশীল হাতিয়ার। গত বছর পেট্রোলের সঙ্গে ইথানল যোগ করে ২৪ হাজার কোটি টাকার মতো সাশ্রয় ঘটেছে বলে প্রসঙ্গত উল্লেখ করেন তিনি। স্বচ্ছতা অভিযান সহ সরকারের বিভিন্ন উন্নয়নমূলক কর্মসূচির কথাও এদিন শোনা যায় প্রধানমন্ত্রীর ভাষণে। তিনি বলেন যে সরকারি কর্মসূচিগুলি এমনভাবে গড়ে তোলা হয়েছে যাতে নাগরিকদের পক্ষে অর্থ সাশ্রয় করা আরও সহজ হয়ে ওঠে। ফলে, সাধারণ মানুষের সঞ্চয়ের পরিমাণও বৃদ্ধি পেতে থাকে। দৃষ্টান্তস্বরূপ ‘জল জীবন মিশন’-এর কথা তুলে ধরেন প্রধানমন্ত্রী। তিনি বলেন, বিশুদ্ধ পানীয় জলের যোগানের মাধ্যমে দরিদ্র সাধারণ মানুষের স্বাস্থ্যরক্ষা বহুলাংশে সম্ভব হয়েছে। তাই, স্বাস্থ্যরক্ষা খাতে সাধারণ মানুষের ব্যয়ের পরিমাণও এখন অনেকাংশে হ্রাস পেয়েছে। তাছাড়া, ‘আয়ুষ্মান ভারত’ হল এমন একটি স্বাস্থ্য কর্মসূচি যা দরিদ্র সহ সাধারণ দেশবাসীর স্বাস্থ্যখাতে ব্যয়ের মাত্রা অনেকটাই লাঘব করতে সক্ষম হয়েছে। ‘প্রধানমন্ত্রী জন ঔষধি কেন্দ্র’গুলি থেকে তাঁরা সংগ্রহ করতে পারছেন ৮০ শতাংশ কম দামে জীবনদায়ী বিভিন্ন ওষুধ। 

শ্রী মোদী বলেন যে শুধুমাত্র বর্তমান প্রজন্মের কাছেই নয়, আগামী প্রজন্মগুলির কাছেও তিনি দায়বদ্ধ। তাই, সার্বিক নীতি রচনা, তা রূপায়ণ এবং সিদ্ধান্ত গ্রহণের মতো ক্ষেত্রগুলিতে আর্থিক ব্যবস্থাপনার ওপর তিনি সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার দিয়েছেন। 

বিদ্যুতের ব্যবহার ও সাশ্রয় প্রসঙ্গে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ১ কোটি বাড়িতে রুফটপ সোলার কর্মসূচির মাধ্যমে বিদ্যুৎ খাতে খরচ শূন্যে নামিয়ে আনার লক্ষ্যমাত্রা স্থির করেছে তাঁর সরকার। এছাড়াও, ‘উজালা’ কর্মসূচির আওতায় এলইডি বাল্বের ব্যবহারও বিদ্যুৎ বিলের অঙ্কে ২০ হাজার কোটি টাকার সাশ্রয় ঘটিয়েছে। সরকার গৃহীত বিভিন্ন উন্নয়নমূলক কর্মসূচির পরিপ্রেক্ষিতে ২০১৪-র পরবর্তীকালে ২৫ কোটি মানুষকে দারিদ্র্যসীমার ঊর্ধ্বে নিয়ে আসা সম্ভব হয়েছে। অতীতে দারিদ্র্য মোচনের বিষয়টি ছিল একটি স্লোগান মাত্র। কিন্তু, ২০১৪ থেকে ২০২৪ – এই ১০ বছর সময়কালে তাঁর সরকার একটি প্রায় অসম্ভবকে নিশ্চিতভাবেই সম্ভব করে তুলেছে। বিংশ শতাব্দীর সমস্যাগুলির মোকাবিলার পাশাপাশি একুশ শতকের ভারতকে আশা-আকাঙ্ক্ষা পূরণের এক নতুন ভারতে রূপান্তরিত করাই তাঁর লক্ষ্য বলে মন্তব্য করেন প্রধানমন্ত্রী। 

প্রধানমন্ত্রী বলেন, ২০১৪-র পূর্ববর্তী ১০ বছরে তৎকালীন সরকার নীতিগত যে সমস্ত পদক্ষেপ গ্রহণ করেছিল, তা দেশকে ক্রমশ দারিদ্র্যের পথেই চালিত করেছিল। এ সম্পর্কে সংসদের বাজেট অধিবেশনে একটি শ্বেতপত্রও প্রকাশ করা হয়েছে। কিন্তু, প্রকৃত সত্য হল ভারতীয় অর্থনীতি এখন বেশ শক্তিশালী অবস্থায় রয়েছে। এ সম্পর্কে সমস্ত বিষয়ই সরকার দেশবাসীর সামনে নিয়ে এসেছে শ্বেতপত্রের আকারে। 

প্রধানমন্ত্রী বলেন, ভারত এখন নতুন নতুন উচ্চতা ও অগ্রগতির পথকে অনুসরণ করে চলেছে। কারণ আমাদের লক্ষ্য হল, বিশ্বের তৃতীয় বৃহত্তম অর্থনীতিতে দেশকে উন্নীত করা। কেন্দ্রের বর্তমান সরকারের দ্বিতীয় মেয়াদকালে এই ধরনের বিভিন্ন সুচিন্তিত পদক্ষেপকে আরও এগিয়ে নিয়ে যাওয়াই হবে বিশেশ লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য। দারিদ্র্য দূর করার পাশাপাশি, উন্নয়ন প্রচেষ্টাকে দেওয়া হবে এক নতুন মাত্রা। এজন্য ১৫ লক্ষ দেশবাসীর প্রস্তাব ও পরামর্শ বর্তমানে সরকার চিন্তাভাবনা করে দেখছে। 

পরিশেষে প্রধানমন্ত্রী বলেন, নতুন ভারত দ্রুতগতিতে উন্নয়নের যাত্রাপথে এগিয়ে যাবে এবং তা হল ‘মোদীর গ্যারান্টি’। 


PG/SKD/DM



(Release ID: 2004915) Visitor Counter : 110