প্রধানমন্ত্রীরদপ্তর

২০২২-এ এশিয়ান গেমসে ভারতের প্রতিনিধিত্বকারী অ্যাথলিটদের সঙ্গে আলাপচারিতায় প্রধানমন্ত্রীর ভাষণ

Posted On: 01 NOV 2023 8:57PM by PIB Kolkata

নতুন দিল্লি, ১ নভেম্বর, ২০২৩

 

বন্ধুগণ,

আমি আপনাদের সঙ্গে দেখা করার, কথা বলার এবং আপনাদের অভিজ্ঞতার কথা শোনার সুযোগের অপেক্ষা করছিলাম। এবং আমি দেখেছি প্রত্যেকবারই আপনারা আসেন নতুন উৎসাহ উদ্দীপনা নিয়ে। এবং এটাই এক বিশাল অনুপ্রেরণা হয়ে দাঁড়িয়েছে। তাই প্রথমেই আমি যে বিষয়ের জন্য আপনাদের সামনে এসেছি, সেটি হল আপনাদের সকলকে অভিনন্দন জানাতে। আপনারা সকলেই ভারতের বাইরে ছিলেন, চীনে খেলছিলেন কিন্তু আপনারা হয়তো জানেন না, যে আমিও আপনাদের সঙ্গে ছিলাম। আমি এখান থেকে আপনাদের কাজের, আপনাদের প্রয়াসের, আপনাদের আত্মবিশ্বাসের প্রত্যেকটা মুহূর্তে উপস্থিত ছিলাম। যেভাবে আপনারা দেশের গরিমা বৃদ্ধি করেছেন তা সত্যিই অভূতপূর্ব এবং সেইজন্য আপনাদের, আপনাদের প্রশিক্ষকদের এবং আপনাদের পরিবারের সদস্যদের শুধু অভিনন্দন জানানোই যথেষ্ট নয়। সমগ্র দেশবাসীর পক্ষ থেকে আমি আপনাদের আমার হৃদয়ের অন্তঃস্থল থেকে এই ঐতিহাসিক সাফল্যের জন্য অভিনন্দন জানাই।

বন্ধুগণ,

আপনারা সকলেই ভালো করে জানেন, যে ক্রীড়া ক্ষেত্র অত্যন্ত প্রতিদ্বন্দ্বিতামূলক। আপনারা প্রত্যেকটি খেলায় একে অপরের সঙ্গে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেন এবং একে অপরকে কঠিন প্রতিদ্বন্দ্বিতার মুখে ফেলে দেন। কিন্তু আমি জানি যে আপনাদের ভেতরেও একটি যুদ্ধ চলে। আপনারা প্রতিদিন নিজের সঙ্গে নিজেরা প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেন। আপনাদের নিজেদের সঙ্গেই লড়াই করতে হয়, সংগ্রামের মুখোমুখি হতে হয় এবং নিজের সঙ্গে বার বার নিজেকে কথা বলতে হয়। অনেক সময় আপনারা দেখে থাকবেন যে সকালে উঠতে আপনার ভালো লাগছে না কিন্তু আপনার ভেতর থেকেই কেউ যেন আপনাকে ঠেলে তুলে দেয় এবং নতুন করে প্রাণশক্তি সঞ্চার করে। এমনকি আপনাদের যখন প্রশিক্ষণ নিতে ভালো লাগে না, তবুও আপনারা করেন। এমনকি যখন প্রশিক্ষণ কেন্দ্র থেকে বাড়ি যান তখন আপনাদের আরও অতিরিক্ত কয়েক ঘণ্টা ঘাম ঝরাতে হয় এবং কঠোর পরিশ্রম করতে হয় এবং কথায় আছে প্রকৃত সোনা আগুনে ভয় পায় না। সেই একইভাবে আপনারা উজ্জ্বল হওয়ার জন্য কাঠিন্যের মুখোমুখি হয়েছেন। এখানে উপস্থিত সকলে এই খেলার জন্য নির্বাচিত হয়েছেন, কেউ কেউ ফিরে এসেছেন জয়ী হয়ে, কেউ কেউ ফিরেছেন সেখান থেকে শিক্ষা নিয়ে। আপনাদের মধ্যে একজনও শূন্য হাতে ফেরেননি। এর জন্য আমার কাছে একটা সরল সংজ্ঞা আছে। যে কোনো খেলার দুটি ফলাফল – জয় এবং শিক্ষা। কোনো হার বা পরাজয় নেই। যখন আপনাদের সকলের সঙ্গে কথা বলছি, কেউ কেউ হয়তো বলছে এবারে ওরা প্রত্যাশা মতো খেলতে পারেনি। তাতে কিছু মনে করার নেই, আমরা পরেরবার আরও ভালো করবো। এর অর্থ হল যখন কোনো ব্যক্তি শিক্ষা নিয়ে ফেরেন, তখন তিনি নতুন প্রতিজ্ঞা নিয়েও ফেরেন। অনেকে আছেন যারা এই খেলায় অংশ নিয়েছিলেন, কেউ কেউ হয়তো প্রথমবারের জন্য, কিন্তু ১৪০ কোটি দেশবাসীর মধ্য থেকে আপনাদের নির্বাচন সেটাই তো একটা জয়।

আপনারা এত কিছু সমস্যার মুখোমুখি হয়ে আরও শক্তিশালী হয়ে উঠেছেন। আর আপনাদের ফলাফল শুধু পরিসংখ্যানের বিষয় নয়। প্রত্যেক দেশবাসী গর্ব অনুভব করছে। দেশ এক নতুন আত্মবিশ্বাসে পূর্ণ হয়ে উঠেছে। আপনারা শুধু পূর্বেকার রেকর্ডই ভেঙেছেন তাই নয়, কোনো কোনো ক্ষেত্রে আপনারা তারও উপরে উঠে গেছেন। যেখানে আগামী ২-৩টি গেমসে অনেকেই হয়তো পৌঁছতে পারবে না। এমনই একটি পরিস্থিতি আপনারা তৈরি করেছেন। আপনারা দেশে ফিরেছেন ১১১টি পদক নিয়ে - ১১১! এটা একটা ছোট সংখ্যা নয়। আমার এখনও মনে আছে, যখন আমি রাজনীতিতে নতুন, দলের সংগঠনের কাজ করছি, লোকসভা নির্বাচনে আমরা গুজরাটে ১২টি আসনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে ১২টিতেই জিতেছিলাম। তাই জেতার পর আমরা দিল্লিতে আসি। আর এটা আমার কাছে একটা বিস্ময়কর ঘটনা ছিল। ওই সময় আমাদের নেতা ছিলেন অটল বিহারী বাজপেয়ীজী। তিনি আমাকে জড়িয়ে ধরেন এবং জিজ্ঞাসা করেন, ‘এই ১২টির মধ্যে সবকটি আসনে জেতার অর্থ কি তুমি বোঝ’। তিনি বলেন, একটা সময় ছিল যখন আমরা সারা দেশে ১২টি আসনে জিততে পারতাম। কিন্তু তোমরা একটি রাজ্যেই ১২টি আসন জিতেছো। ১২টি আসনে জেতা সত্ত্বেও আমি ব্যাপারটি ঠিক বুঝতে পারিনি, যতক্ষণ না অটলজী আমাকে বলেছিলেন। তাই আপনাদেরও আমি বলি, এই ১১১টি জয় শুধু মাত্র একটি সংখ্যা নয়। এটি ১৪০ কোটি স্বপ্ন। ২০১৪-র এশিয়াম প্যারা গেমসে ভারতের পদক সংখ্যার থেকে এটি তিনগুণেরও বেশি। এবার আমরা ২০১৪-র তুলনায় ১০ গুণেরও বেশি সোনার পদক জিতেছি। ২০১৪-য় আমরা সব মিলিয়ে পঞ্চদশ স্থানে ছিলাম কিন্তু এবারে আপনারা দেশকে প্রথম পাঁচের মধ্যে নিয়ে এসেছেন। গত ৯ বছরে দেশ অর্থনৈতিক বৃদ্ধির পরিপ্রেক্ষিতে সারা বিশ্বে দশম স্থান থেকে পঞ্চম স্থানে পৌঁছেছে এবং আজ আপনারাও দেশকে দশম স্থান থেকে পঞ্চম স্থানে তুলে এনেছেন। এর সবই আপনাদের কঠোর পরিশ্রমের ফল। সেই জন্য আমি আপনাদের সকলকে হার্দিক অভিনন্দন জানাই!

বন্ধুগণ,

গত কয়েক মাসে ক্রীড়া ক্ষেত্রে ভারতের চমকপ্রদ উত্থান হয়েছে এবং আপনাদের সাফল্য তাতে আরও ঔজ্জ্বল্য এনেছে। অগাস্ট মাসে বুদাপেস্টে বিশ্ব অ্যাথলেটিক্স প্রতিযোগিতায় আমরা সোনার পদক পেয়েছিলাম। ভারতের ব্যাডমিন্টনের ডাবলস দল এশিয়ান গেমসে প্রথম সোনা জেতে। ভারতের মহিলাদের ডাবলস জুটি এশিয়ান গেমসে টেবল টেনিসে প্রথম পদক পায়। ভারতের পুরুষ ব্যাডমিন্টন দল ২০২২-এ টমাস কাপ জিতে ইতিহাস সৃষ্টি করেছে। এশিয়ান গেমসে আমাদের অ্যাথলিটরা ঐতিহাসিক দক্ষতা দেখিয়েছে। ২৮টি সোনা সহ ১০৭টি পদক পেয়েছে এবং আপনারাও এশিয়ান প্যারা গেমসে এপর্যন্ত সবচেয়ে বেশি কৃতিত্ব প্রদর্শন করেছেন।

বন্ধুগণ,

গোটা দেশ আপনাদের কীর্তিতে উত্তেজিত। বন্ধুরা, আপনাদের বলি, যে অন্যান্য খেলায় যখন একজন খেলোয়াড় পদক জেতে তখন সে বিশাল অনুপ্রেরণা হয়ে ওঠে এবং ক্রীড়া জগতে, খেলোয়াড়দের কাছে, নতুন খেলোয়াড়দের কাছে উৎসাহের কারণ হয়ে দাঁড়ায়। কিন্তু একজন দিব্যাঙ্গ যখন জয়ী হন, তখন তিনি শুধু বিশ্ব ক্রীড়া ক্ষেত্রে নয়, জীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রের জন্য অনুপ্রেরণা হয়ে ওঠেন। হতাশাক্লিষ্ট একজন ব্যক্তি আপনাদের সাফল্য দেখে উঠে দাঁড়ায় এবং ভাবে – ‘ভগবান আমাকে সব দিয়েছেন, তিনি আমাকে হাত, পা, মস্তিস্ক, চোখ দিয়েছেন। কয়েকটি সীমাবদ্ধতা সত্ত্বেও একজন এইরকম চমক সৃষ্টি করছে অথচ আমি এখনও ঘুমিয়ে আছি’। তখনই সে জেগে ওঠে। আপনাদের সাফল্য তাঁর কাছে বিশাল অনুপ্রেরণা হয়ে দাঁড়ায়। তাই যখন আপনারা সফল, কেউ আপনাদের খেলাধুলো করতে দেখে, তখন সেটা শুধু ক্রীড়া বিশ্বেই নয়, জীবনের সর্বক্ষেত্রে প্রত্যেকের কাছে অনুপ্রেরণার উৎস হয়ে দাঁড়ায়। এবং আপনারা আমার বন্ধুরা, সেই অনুপ্রেরণা দেওয়ার কাজই করে যাচ্ছেন।

বন্ধুগণ,

আমরা প্রত্যেক দিন ভারতের ক্রীড়া সংস্কৃতি এবং ক্রীড়া সমাজের অগ্রগতি লক্ষ্য করছি। আরও একটা কারণ আছে যার জন্য ভারত এগিয়ে যাওয়ার আত্মবিশ্বাস পেয়েছে। আমরা এখন ২০৩০-এর যুব অলিম্পিকস এবং ২০৩৬-এ অলিম্পিকস আয়োজনের চেষ্টা চালাচ্ছি। 

বন্ধুগণ, 

আপনারা ভালো করে জানেন, যে ক্রীড়া ক্ষেত্রে কোনো সহজ পথ নেই। ক্রীড়াবিদ যে ধরনের কঠোর পরিশ্রম করেন, তা কেউ করতে পারবে না। আপনাদের নিজেরই এটি করতে হয়। ক্রীড়া বিশ্বে ক্রীড়াবিদদের নিজেদেরই যা কিছু কঠোর পরিশ্রম তা করতে হয়। সেখানে অন্য কেউ করে দেওয়ার নেই। খেলার যত চাপ, তা নিজেকেই সামলাতে হয়। আপনাদের ধৈর্য ও কঠোর পরিশ্রম অত্যন্ত প্রয়োজনীয়। প্রত্যেক ব্যক্তি তাঁর নিজের শক্তিতে অনেক কিছু করতে পারেন। যখন সে কারোর সহায়তা পায়, তখন তার শক্তি বহুগুণ বৃদ্ধি পায়। পরিবার, সমাজ, প্রতিষ্ঠান এবং অন্যান্য সহায়ক পরিবেশ খেলোয়াড়দের নতুন উচ্চতায় পৌঁছতে উৎসাহ দেয়। আমাদের খেলোয়াড়দের সাহায্য করতে যত তাঁরা এগিয়ে আসবেন, ততই তাঁদের পক্ষে ভালো হবে। বর্তমানে পরিবার থেকে খেলাধুলো করার জন্য ছেলে-মেয়েদের আরও বেশি সাহায্য দেওয়া হচ্ছে। কিছু কিছু সুবিধে পাওয়ার পর আপনাদেরও কেউ কেউ বাড়ি থেকে হয়তো একটু উৎসাহ পেয়েছেন কিন্তু তার আগে পরিবারগুলি অনেক সময় আপনাদের নিয়ে অতি রক্ষণশীল ছিল। যদি আপনাদের চোট লাগে, তাহলে আপনাদের কে দেখবে? তাঁরা আপনাদের বাইরে ছাড়তে চাইতেন না, বাড়িতেই থাকার উপর জোর দিতেন। আপনাদের অনেকেই হয়তো এইরকম পরিস্থিতির মধ্য দিয়ে গেছেন। বর্তমানে আমি দেখছি, প্রত্যেকটি পরিবার তাঁদের ছেলেমেয়েদের ক্রীড়া ক্ষেত্রে এগিয়ে যাওয়ার জন্য উৎসাহ দিচ্ছে। দেশে এই নতুন সংস্কৃতির উদ্ভব হওয়া একটি বড় ব্যাপার। যদি আমরা সমাজ নিয়ে কথা বলি, তাহলে দেখবো মানুষের মধ্যে একটি বড় পরিবর্তন এসেছে। এখন আপনারা হয়তো দেখে থাকবেন যে, যদি কেউ খেলাধুলোর সঙ্গে যুক্ত থাকতো, মানুষের এমন একটি ধারণা ছিল যে তাহলে পড়াশুনা হবে না। যদি আপনি বলেন, ‘আমি একটা পদক জিতেছি’ তারা বলবে, ‘ও তাই, এটাই করেছো? তুমি পড়াশুনা করো না? তাহলে তুমি জীবনধারণের জন্য উপার্জন করবে কি করে?’ আগে এই ধরনের প্রশ্নই তাঁরা করতেন। কিন্তু এখন তাঁরা বলেন, ‘কি দারুণ তুমি পদক জিতেছো! একবার এটা আমাকে ধরতে দাও।’ এখন এটাই পরিবর্তন হয়েছে।

বন্ধুগণ,

একটা সময় ছিল যখন কেউ খেলাধুলো করলে তাকে কাজের ছেলে বলে মনে করা হতো না। তাকে জিজ্ঞেস করা হতো – ‘কিন্তু সংসার করতে হলে এবার কি করবে?’ কিন্তু এখন সমাজ ক্রীড়াকে একটি পেশা হিসেবে মেনে নিচ্ছে।

বন্ধুগণ,

সরকারের কথা বলতে গেলে, আগে বলা হতো খেলোয়াড়রা সরকারের জন্য। কিন্তু এখন বলা হচ্ছে সরকার সম্পূর্ণভাবে খেলোয়াড়দের জন্য। যখন সরকার এবং নীতি প্রণেতারা তৃণমূলস্তরে যুক্ত হন, যখন সরকার খেলোয়াড়দের স্বার্থের বিষয়ে সচেতন হয়, যখন সরকার খেলোয়াড়দের সংগ্রাম এবং তাদের স্বপ্নকে বোঝে তখন সরকারের ভাবনায় এবং নীতি ক্ষেত্রে তার প্রত্যক্ষ প্রভাব দৃশ্যমান হয়। এমনকি ভাবনা চিন্তাতেও তা চোখে পড়ে। এর আগেও আমাদের দেশে দুর্দান্ত খেলোয়াড়রা ছিলেন। কিন্তু তাঁদের সাহায্য করার জন্য কোনো নীতি ছিল না। না ছিল ভালো প্রশিক্ষণ ব্যবস্থা, আধুনিক পরিকাঠামো অথবা প্রয়োজনীয় আর্থিক সহায়তা। এমন একটি পরিবেশে কিভাবে আমাদের খেলোয়াড়রা পতাকা তুলবেন। গত ৯ বছরে দেশ সেই পুরনো ভাবনা, পুরনো ব্যবস্থা থেকে বেরিয়ে এসেছে।

আজ দেশে এমন অনেক খেলোয়াড় আছেন যাদের জন্য ৪-৫ কোটি টাকা খরচ করা হচ্ছে। সরকারের ভাবনা এখন অ্যাথলিটকেন্দ্রিক। সরকার এখন অ্যাথলিটদের সামনে থাকা বাধাগুলি অপসারণ করছে এবং সুযোগ তৈরি করছে। এটা বলা হয়, পোটেনশিয়াল + প্ল্যাটফর্ম = পারফর্মেন্স। ঠিকঠাক মঞ্চ পেলে দক্ষতা আরও বৃদ্ধি পায়। ‘খেলো ইন্ডিয়া’-র মতো কর্মসূচি খেলোয়াড়দের জন্য এমনই একটি মঞ্চ হয়ে দাঁড়িয়েছে। প্রতিভা সন্ধানের নতুন পথ খুলে দিয়েছে এবং তৃণমূলস্তরে অ্যাথলিটদের সাহায্য করছে। আপনাদের অনেকেই হয়তো জানেন, কিভাবে টিওপিএস উদ্যোগ আমাদের অ্যাথলিটদের দক্ষতা বাড়াতে সাহায্য করছে। প্যারা অ্যাথলিটদের সাহায্য করতে আমরা গোয়ালিয়রে একটি ডিজএবিলিটি স্পোর্টস ট্রেনিং সেন্টারও স্থাপন করেছি। এবং আপনারা যাঁরা গুজরাটের সঙ্গে পরিচিত, তাঁরা জানেন, যে এই বিষয়টি শুরু হয়েছে গুজরাট থেকে। এবং ক্রমে ক্রমে একটি সার্বিক সংস্কৃতি তৈরি হয়েছে। এমনকি বর্তমানে আপনাদের অনেকে সেখানে প্রশিক্ষণের জন্য গেলে গান্ধীনগরের ওই প্রতিষ্ঠানগুলিতেই প্রশিক্ষণ নেন। তার অর্থ যখন সব প্রতিষ্ঠানগুলি শুরুতেই একটা আকার নিতে শুরু করে তখন তাদের শক্তি অকল্পনীয়। কিন্তু যখন নিয়মিত প্রশিক্ষণ এবং অনুশীলন চলে, তখন দেশ তার শক্তি অনুভব করা শুরু করে। আমি বিশ্বাস করি যে এইসব সুবিধার মাধ্যমেই দেশ আপনাদের মতো আরও অনেক বিজয়ী পেতে চলেছে। আমার পূর্ণ বিশ্বাস আছে। 

বন্ধুগণ,

আমি ইতিমধ্যেই বলেছি যে, আপনাদের ৩০০-র বেশি খেলোয়াড় সমৃদ্ধ দলে কেউ হেরে যাননি। এবং মন্ত্র হল, আমি আবার বলছি, আপনাদের কেউ জিতেছেন, আবার কেউ শিখেছেন। আপনাদের নিজেদের দিকে এবং পদকের চেয়েও তার ফলের দিকেই তাকাতে হবে, কারণ সেটাই সবচেয়ে বেশি গুরুত্বপূর্ণ। যে সমস্যার আপনারা সম্মুখীন হয়েছেন এবং সেগুলি অতিক্রম করতে আপনারা যে শক্তি দেখিয়েছেন সেটাই এই দেশের প্রতি আপনাদের সবচেয়ে বড় অবদান। অপনাদের অনেকেই হয়তো খুব ছোট শহর, সাধারণ পরিবার এবং কঠিন পরিস্থিতি থেকে এখানে এসেছেন। অনেকেই জন্ম থেকে শারীরিক সমস্যার সম্মুখীন হয়েছেন! অনেকেই দুর্গম গ্রামে থাকেন, অনেকেই এমন দুর্ঘটনায় পড়েছেন যাতে গোটা জীবনটাই বদলে গেছে। তবুও আপনারা দৃঢ় প্রতিজ্ঞ। সামাজিক মাধ্যমে আপনাদের সাফল্যের দিকে নজর দিন। হয়তো কোনো খেলাই আপনাদের মতো এত জনপ্রিয়তা ও খ্যাতি পায়নি। প্রত্যেকেই, এমনকি যার খেলা সম্পর্কে কোনো জ্ঞান নেই সেও দেখেছে। তারা ভাবে “শারীরিক সমস্যা থাকা সত্ত্বেও ছেলেটা এত ভালো খেলছে”। মানুষ আপনাদের দেখছে এবং বাড়িতে তার সন্তানদের দেখাচ্ছে। আপনাদের জীবন কথা, গ্রাম এবং ছোটো ছোটো শহরের ছেলেমেয়েদের কথা বর্তমানে আলোচনা হচ্ছে - স্কুল, কলেজ, বাড়ি, খেলার মাঠ সব জায়গায়। আপনাদের সংগ্রাম এবং এই সাফল্য তাদের মনেও নতুন স্বপ্ন বুনে দিচ্ছে। আজ যে পরিস্থিতিই হোক না কেন, মানুষ বড় করে ভাবছেন এবং আরও উৎসাহ চাইছেন। আরও বড় হওয়ার আকাঙ্ক্ষা জাগছে তাদের মধ্যে। প্রত্যেকটি প্রতিযোগিতায় আপনাদের অংশগ্রহণ মানুষের স্বপ্নের জয়। আর এটাই হল আপনাদের সবচেয়ে বড় অবদান।

এবং সেই জন্যই আমি বিশ্বাস করি আপনারা এইরকমই কঠোর পরিশ্রম করবেন এবং দেশকে গর্বিত করবেন। আমাদের সরকার আছে আপনাদের পাশে, সারা দেশ আছে আপনাদের পাশে এবং বন্ধুরা, নিষ্ঠা একটি বড় শক্তি। যদি আপনি নেতিবাচক ভাবনার শিকার হন, তাহলে আপনি বিশ্বে এগোতে পারবেন না, কিছু অর্জন করতে পারবেন না। একটা উদাহরণ দিই, যদি কেউ বলে, ‘এখান থেকে রোহতক যাও’। তখন কেউ কেউ সিদ্ধান্ত নেওয়ার আগে পঞ্চাশবার ভাববে, বাসে যাবে কি যাবে না, ট্রেনে যাবে কি যাবে না, কিভাবে যাবে, কি করবে, আবার অনেক মানুষ সঙ্গে সঙ্গে প্রস্তুত! ‘ঠিক আছে আমাকে রোহতক যেতে হবে, আমি সন্ধ্যায় যাবো’। এধরনের মানুষ ভাবে না তারা সাহস দেখায়। ইতিবাচক মনোভাবের একটি শক্তি আছে। ‘সও কে পার’ সংকল্প ঠিক এভাবে ঘটে না, এর পেছনে একটি গভীর ভাবনা আছে। এর পেছনে কঠোর পরিশ্রম, আত্মবিশ্বাস এবং নিষ্ঠার সম্পূর্ণ রেকর্ড আছে। তখনই আমরা বলতে পারি, ‘ইস বার সও পার’। তবে আমরা ১০১-এ থামিনি। আমরা সেটিকে নিয়ে গেছি ১১১-য়। বন্ধুরা, এটাই আমার ট্র্যাক রেকর্ড। এবং সে জন্যই আমি বলি, আমরা দেশকে দশম থেকে পঞ্চম বৃহত্তম অর্থনীতিতে পৌঁছতে সাহায্য করেছি এবং আমি বলতে পারি, আমি পূর্ণ আত্মবিশ্বাস নিয়ে বলতে পারি যে, এই একই দশকে আমরা তিনে পৌঁছবো। এবং তারই ভিত্তিতে আমি বলতে পারি যে, ২০৪৭-এ এই দেশ উন্নত ভারত হয়ে উঠবে। যদি আমার দিব্যাঙ্গ মানুষ তাদের স্বপ্ন পূরণ করতে পারে, তাহলে ১৪০ কোটির শক্তি কোনো স্বপ্নকে অপূর্ণ রাখতে দেবে না। এটাই আমার বিশ্বাস।

বন্ধুগণ,

আমি আমার হৃদয়ের অন্তঃস্থল থেকে অভিনন্দন জানাই এবং শুভেচ্ছা জানাই। কিন্তু আমাদের এখানে থামলে চলবে না। নতুন সংকল্প এবং নতুন বিশ্বাস নিয়ে এগিয়ে যেতে হবে। প্রত্যেকটি সকালই হয়ে উঠুক একটি নতুন ভোর। তবেই আমরা আমাদের লক্ষ্য পূরণ করতে পারবো, বন্ধুগণ,

অসংখ্য ধন্যবাদ, অনেক শুভেচ্ছা!


PG/AP/SKD/



(Release ID: 1978172) Visitor Counter : 115