প্রধানমন্ত্রীরদপ্তর

বেঙ্গালুরুর ইসরো সেন্টার থেকে ফিরে দিল্লিতে এক সমাবেশে প্রধানমন্ত্রীর ভাষণের বঙ্গানুবাদ

Posted On: 26 AUG 2023 3:30PM by PIB Kolkata

 নয়াদিল্লি, ২৬ অগাস্ট, ২০২৩ 

 


ভারত মাতা কি – জয়!
ভারত মাতা কি – জয়!
ভারত মাতা কি – জয়!
আজ সকালে আমি বেঙ্গালুরুতে ছিলাম, খুব ভোরে দেশে ফিরেছি। দেশের জন্য এই দুর্দান্ত সাফল্য এনে দিয়েছেন যে বিজ্ঞানীরা, আমি তাঁদের সঙ্গে দেখা করার সিদ্ধান্ত নিই। ভোরে আমি ইসরো সেন্টারে যাই। যেভাবে জনগণ চন্দ্রযান – ৩ এর সাফল্য উদযাপন করেছে, সূর্যোদয়ের আগেই হাতে তিরঙ্গা পতাকা নিয়ে যেভাবে উৎসাহের সঙ্গে দাঁড়িয়েছিলেন, তা বিশেষ অনুপ্রেরণা যোগায়। এখন সূর্যের তেজ প্রচন্ড। কিন্তু, তীব্র গরমকে উপেক্ষা করে চন্দ্রযান-৩ এর এই সাফল্য উদযাপনের জন্য আপনারা এখানে এসেছেন – এটি আমার জন্য বিশেষ সৌভাগ্যের। আপনাদের সকলকে অভিনন্দন জানাই। এই উদযাপনের অঙ্গ হতে পেরে আমি আনন্দিত। আমার তরফ থেকে আপনাদের সকলের জন্য অভিনন্দন রইল।
আজ সকালে আমি যখন ইসরো পৌঁছেছি, তখন চন্দ্রযান-৩ এর নেওয়া ছবি প্রথমবার জনসমক্ষে পৌঁছে দেওয়ার সৌভাগ্য হয় আমার। হয়তো আপনারাও এতক্ষণে টিভিতে সেই ছবি দেখেছেন। এই সুন্দর ছবি নিজেই দেশের বৈজ্ঞানিক সফলতার এক বিশেষ উদাহরণ। সাধারণভাবে বিশ্বে একটি রীতি প্রচলিত আছে যে, সফলভাবে অবতরণের স্থানটিকে বিশেষ নাম দেওয়া হয়। সেই রীতি অনুসরণ করে যেখানে আমাদের চন্দ্রযান-৩ সফলভাবে অবতরণ করেছে, সেই স্থানটিকে আমি ‘শিবশক্তি’ নাম দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছি। আমরা যখন ভগবান শিবের কথা বলি, তখন শক্তি ওতপ্রোতভাবে জড়িয়ে যায়। আমার দেশের মহিলাদের শক্তি এর সঙ্গে বিশেষভাবে যুক্ত রয়েছে। আমরা যখন ভগবান শিবের কথা বলি, তখন হিমালয়ের কথা মনে আসে এবং আমরা যখন শক্তির কথা বলি, তখন কন্যাকুমারীর কথা মনে পড়ে। তাই, ঐ বিশেষ স্থানটির নাম দেওয়া হয়েছে ‘শিবশক্তি’। ২০১৯ সালে চন্দ্রযান-২ এর অভিযানের সময় এই নামটির কথা আমার মনে হয়েছিল। যদিও আমার মন তখন সম্পূর্ণভাবে এতে সায় দেয়নি। বারবার মনে হয়েছিল, সফলভাবে অভিযান সম্পূর্ণ হলেই নামকরণ করা হবে। চন্দ্রযান-৩ অভিযান যখন সফল হ’ল, তখন মনে হ’ল – যে স্থানটিতে চন্দ্রযান-২ অবতরণের চেষ্টা চালিয়েছিল, সেই স্থানটির নাম দেওয়ার হোক ‘তিরঙ্গা’। আমাদের জাতীয় পতাকার তিনটি রঙ আমাদের সবরকম চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় শক্তি যোগায়। আমাদের জাতীয় পতাকা আমাদের সব স্বপ্ন পূরণের সহায়ক। চন্দ্রযান-২ ব্যর্থ হলেও চন্দ্রযান-৩ সফল হয়েছে। ফলে, আমরা বলতে পারি যে, তিরঙ্গা আমাদের উৎসাহ যুগিয়েছে। অন্য আরও একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় আমি আজ সকালে বলেছি। ২৩ অগাস্ট ভারতের বৈজ্ঞানিক পথ চলায় বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ. প্রতি বছর এই দিনটি জাতীয় মহাকাশ দিবস হিসেবে পালন করবে ভারত।
বন্ধুগণ,
বিগত কয়েকদিন ব্রিকস্ শিখর সম্মেলনের জন্য আমি দক্ষিণ আফ্রিকায় ছিলাম। এ বছর ব্রিকস্ শিখর সম্মেলনে সদস্য দেশগুলি ছাড়াও সমগ্র আফ্রিকার দেশগুলিকেও আমন্ত্রণ জানানো হয়েছিল। সেখানে এমন মানুষ খুব কম ছিলেন, যাঁরা চন্দ্রযান-৩ এর সাফল্যের কথা উল্লেখ করেননি বা আমাকে অভিনন্দন জানাননি। দক্ষিণ আফ্রিকায় সমগ্র বিশ্ব থেকে আমি যে অভিনন্দন পেয়েছি, তা সব বিজ্ঞানীদের সঙ্গে ভাগ করে নিয়েছি। এখন আপনাদের সঙ্গেও সমগ্র বিশ্বের এই অভিনন্দন বার্তা ভাগ করে নিচ্ছি। 
বন্ধুগণ,
প্রত্যেকেই চন্দ্রযান – ৩ এর পথ চলার কথা জানতে আগ্রহী ছিলেন। পাশাপাশি, নতুন ভারত, নতুন স্বপ্ন, নতুন প্রতিশ্রুতি এবং ধারাবাহিক সাফল্যের বিষয়েও জানতে আগ্রহী সমগ্র বিশ্ব। আমাদের তেরঙ্গার ক্ষমতা এবং সাফল্যের বিষয়ে সমগ্র বিশ্ব এখন আগ্রহ প্রকাশ করছে। আমাদের সাফল্য ও ক্ষমতাকে স্বীকার করে নিচ্ছে ও সম্মান জানাচ্ছে আন্তর্জাতিক মহল।
বন্ধুগণ,
ব্রিকস্ শিখর সম্মেলনের পর আমি গ্রীসে গিয়েছিলাম। ৪০ বছর পর কোনও ভারতীয় প্রধানমন্ত্রী গ্রীস সফর করলেন। এটি আমার সৌভাগ্য যে, অনেক বকেয়া কাজ করার সুযোগ পাচ্ছি আমি। গ্রীসেও ভারতকে বিশেষ সম্মানের দৃষ্টিতে দেখা হয়। ভারত ও গ্রীসের মধ্যে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্কের জন্য এই দেশ এখন ইউরোপে প্রবেশের অন্যতম দ্বারা হয়ে উঠছে। ভারত ও ইউরোপীয় ইউনিয়নের মধ্যে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক মজবুত করতে গ্রীসের ভূমিকা বিশেষ।
বন্ধুগণ,
আগামী দিনে আমাদের আরও বেশ কিছু দায়িত্ব রয়েছে। বিজ্ঞানীরা তাঁদের কাজ করেছেন। উপগ্রহ বা চন্দ্রযান – এর পথ চলা যাই হোক না কেন, সাধারণ মানুষের জীবনে এর বিশেষ প্রভাব পড়ে। তাই, আমাদের দেশের যুবক-যুবতীদের বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির উন্নয়নে কাজ করতে উৎসাহিত করার জন্য আমাদের এগিয়ে আসতে হবে। কেবলমাত্র আনন্দ উদযাপনের মধ্যেই আমাদের দায়িত্ব শেষ হয়ে যায় না। কোনও সাফল্যের আনন্দ যখন উদযাপন করি, তখন আরও নতুন পদক্ষেপের জন্যও নিজেদের দৃঢ়ভাবে প্রস্তুত করি আমরা। মহাকাশ বিজ্ঞান কিভাবে কাজ করতে পারে, উপগ্রহ কিভাবে সুশাসনের জন্য গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠতে পারে - সেই দিকটি আমাদের খুঁজে দেখতে হবে। সাধারণ মানুষের জীবনযাত্রার মানোন্নয়নেও আমাদের বিশেষ নজর দিতে হবে। আমি তাই সরকারের সব দপ্তরকে উপগ্রহ ও মহাকাশ প্রযুক্তি যথাযথ ব্যবহারের আহ্বান জানাই। আগামী দিনে দেশের যুবক-যুবতীদের জন্য হ্যাকাথনের আয়োজন করার ইচ্ছে রয়েছে। সাম্প্রতিককালে বিভিন্ন হ্যাকাথনের সময় দেশের পড়ুয়ারা অবিরাম ৩০-৪০ ঘন্টা কাজ করে অনেক নতুন নতুন চিন্তাভাবনা প্রকাশ করেছেন। আমি শীঘ্রই বিভিন্ন হ্যাকাথন আয়োজন করতে চাই। এই হ্যাকথনগুলি সাধারণ মানুষের বিভিন্ন সমস্যা মোকাবিলায় সহায়ক হয়ে উঠবে।
এছাড়াও, আমাদের নতুন প্রজন্মকে বিজ্ঞানের প্রতি আকৃষ্ট করতে হবে। একুশ শতক প্রযুক্তি নির্ভর। দেশ ক্রমশ উন্নয়নের পথে এগিয়ে চলেছে। এই পথ চলায় বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির ভূমিকা বিশেষ। সময়ের দাবি মেনে ২০৪৭ সালের মধ্যে আমাদের দেশকে আমরা যদি উন্নত ভারত হিসেবে গড়ে তুলতে চাই, তা হলে বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি ক্ষেত্রকে আরও উন্নত করতে হবে। শৈশব থেকেই বৈজ্ঞানিক চিন্তাভাবনার সঙ্গে আমাদের আগামী প্রজন্মকে প্রস্তুত করতে হবে। পয়লা সেপ্টেম্বর থেকে আমরা MyGov – এ একটি ক্যুইজ প্রতিযোগিতার আয়োজন করতে চলেছি। এই ক্যুইজ প্রতিযোগিতা আমাদের পড়ুয়াদের বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি সম্পর্কে আগ্রহ বাড়াতে সাহায্য করবে। আজ আমি দেশের তরুণ প্রজন্ম ও পড়ুয়াদের চন্দ্রযান নিয়ে আয়োজিত এই ক্যুইজ প্রতিযোগিতায় অংশ নেওয়ার আহ্বান জানাই। লক্ষ লক্ষ যুবক-যুবতী এতে অংশ নিন। আমি বিশ্বাস করি, এর ফলাফল অত্যন্ত ভালো হবে। 
আমি আজ আরও একটি বিষয়ে আপনাদের দৃষ্টি আকর্ষণ করতে চাই। ভারতের বিষয়ে সমগ্র বিশ্বের ক্রমবর্ধমান আস্থা, উৎসাহ ও আকর্ষণ ক্রমবর্ধমান। আমাদের এই সুযোগকে গ্রহণ করতে হবে। দিল্লিতে আয়োজিত জি-২০ শিখর সম্মেলনে বিশেষভাবে সমগ্র বিশ্বের আস্থা অর্জনের জন্য কাজ করবো আমরা। 
জি-২০ শিখর সম্মেলনের আয়োজন সমগ্র দেশের। কিন্তু, আমার দিল্লির ভাই, বোন ও নাগরিকদের একটি বিশেষ দায়িত্ব রয়েছে। আমাদের সমগ্র বিশ্বকে দেখাতে হবে যে, দিল্লি এই দায়িত্ব পালনে সক্ষম। আমাদের জাতীয় পতাকাকে সসম্মানে ও মর্যাদার সঙ্গে উত্তোলনের দায়িত্ব দিল্লির জনগণের হাতে। বহুসংখ্যক অতিথি সমাগম হলে কিছু অসুবিধা হওয়া স্বাভাবিক। এমনকি, আমাদের বাড়িতে যদি ৫-৭ জন অতিথি আসেন, আমরা তাঁদের বাড়ির বড় সোফাটিতে বসতে বলি, আমাদের নিজেদের তখন ছোট চেয়ারেই বসতে হয়। আমাদের ‘অতিথি দেবো ভবঃ’ অর্থাৎ অতিথিকে দেবতা রূপে মান্য করার ঐতিহ্য রয়েছে। বিশ্বের নেতৃবৃন্দকে আমরা যত বেশি সম্মানের সঙ্গে অভ্যর্থনা জানাবো, তত বেশি আমাদের নিজেদের গৌরব ও মর্যাদা বৃদ্ধি পাবে। ৫ সেপ্টেম্বর থেকে ১৫ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত এখানে নানা অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হবে। আগামী দিনে দিল্লিবাসী যে অসুবিধার সম্মুখীন হবেন, তার জন্য আমি তাঁদের কাছে অগ্রিম ক্ষমাপ্রার্থী। আমি দিল্লির জনগণকে আগামী দিনে যেসব অসুবিধা হবে তার মোকাবিলায় ধৈর্য বজায় রাখার অনুরোধ জানাই। এই অতিথিরা আপনাদের সকলের অতিথি। আমাদের যানবাহন চলাচল সহ অন্যান্য বেশ কিছু ক্ষেত্রে অসুবিধা ভোগ করতে হবে। তা সত্ত্বেও আমরা অতিথিদের যথাযথ মর্যাদা দেব। কিছু জিনিস প্রয়োজনীয় হয়। যেমন – পরিবারে যদি কারও বিবাহ অনুষ্ঠান থাকে, তখন নখ কাটার সময় কোনোভাবে অল্প একটু কেটে গেলেও পরিবার-পরিজনেরা বলেন, ‘সাবধানে থাকো, এটি একটি বিশেষ অনুষ্ঠান, কোনও অশুভ কিছু যেন না হয়’। একই রকমভাবে, একটি পরিবারে এইসব অতিথিরাই আমাদের সকলের দায়িত্ব। আমি বিশ্বাস করি, জি-২০ শিখর সম্মেলন সফল হয়ে উঠবে। আমার দিল্লির সহ-নাগরিকরা সবরকম্ভাবে এই সম্মেলনকে পূর্ণতা দেবেন – এই বিশ্বাস আমার রয়েছে। 
আমার প্রিয় ভাই ও বোনেরা এবং আমার পরিবারের সদস্যরা, 
আর কয়েকদিন পরই রাখী বন্ধন উৎসব আসছে। বোনেরা তাদের ভাইয়ের হাতে রাখী বাঁধবেন। ছোট থেকেই আমাদের শেখানো হয়েছে, চাঁদ আমাদের মামা এবং ধরিত্রী আমাদের মা অর্থাৎ ধরিত্রী মাতা চাঁদ মামার বোন। এ বছর আমাদের ধরিত্রী মাতা চাঁদ মামার সঙ্গে রাখী বন্ধন উৎসব উদযাপন করবে। তাই চলুন, আমরাও সকলে সৌভ্রাতৃত্ব, প্রেম, প্রীতি এবং একতার আবহে এ বছরের রাখী বন্ধন উৎসব বর্ণময়ভাবে পালন করি। জি-২০ শিখর সম্মেলনেও যেন আমাদের এই সৌভ্রাতৃত্ব বোধ, একতা, প্রেম-প্রীতি ভালোবাসা এবং আমাদের সংস্কৃতি ও ঐতিহ্যের সঙ্গে আমরা সমগ্র বিশ্বের পরিচয় করাতে পারি। সেই লক্ষ্যে কাজ করতে হবে। আমি বিশ্বাস করি, আগামী দিনের উৎসব হবে বর্ণময় এবং সেপ্টেম্বর মাসে সমগ্র বিশ্ব আমাদের সাফল্যের সঙ্গে আরও একবার পরিচিত হবে। আমাদের বিজ্ঞানীরা চন্দ্রযান-৩ অভিযান সফলভাবে সম্পূর্ণ করে তিরঙ্গা জাতীয় পতাকাকে উচ্চস্থানে প্রতিষ্ঠিত করেছে। এখন জি-২০ শিখর সম্মেলনে এই পতাকার গৌরব বয়ে নিয়ে চলার দায়িত্ব আমাদের দিল্লির জনগণের। আমরা দারুণভাবে এই দায়িত্ব পালন করবো বলেই আমার বিশ্বাস রয়েছে। তীব্র রোদ ও গরমকে উপেক্ষা করে আমাদের বিজ্ঞানীদের সাফল্য উদযাপনের জন্য আপনারা যাঁরা এখানে সমবেত হয়েছেন, তাঁদের সকলকে জানাই আমার আন্তরিক শুভেচ্ছা এবং হৃদয়ের অন্তঃস্থল থেকে সকলকে জানাই অভিনন্দন। 
চলুন, একসঙ্গে সকলে মিলে বলি –
ভারত মাতা কি – জয়!
ভারত মাতা কি – জয়!
ভারত মাতা কি – জয়!

অসংখ্য ধন্যবাদ।

(প্রধানমন্ত্রীর মূল ভাষণটি ছিল হিন্দিতে)


AC/PM/SB



(Release ID: 1953730) Visitor Counter : 130