প্রধানমন্ত্রীরদপ্তর

উন্নয়নের পথে দেশ এগিয়ে চলেছে অপ্রতিরোধ্য গতিতে

‘ভারত মণ্ডপম’ হল ভারতের ইচ্ছাশক্তির এক প্রতীকী ব্যঞ্জনা

নয়াদিল্লির প্রগতি ময়দানে আন্তর্জাতিক প্রদর্শনী তথা সম্মেলন কেন্দ্রের (আইইসিসি) উদ্বোধনকালে বক্তব্য প্রধানমন্ত্রীর

Posted On: 26 JUL 2023 8:44PM by PIB Kolkata

নয়াদিল্লি, ২৬ জুলাই, ২০২৩


আজ নয়াদিল্লির প্রগতি ময়দানে একটি আন্তর্জাতিক প্রদর্শনী তথা সম্মেলন কেন্দ্রের (আইইসিসি) দ্বারোদ্ঘাটন করেন প্রধানমন্ত্রী শ্রী নরেন্দ্র মোদী। এই উপলক্ষে তিনি জি-২০ স্মারক মুদ্রা এবং জি-২০ ডাকটিকিটেরও আনুষ্ঠানিক সূচনা ও প্রকাশ করেন। এই সম্মেলন কেন্দ্রটি ‘ভারত মণ্ডপম’ নামে নামাঙ্কিত। প্রায় ২,৭০০ কোটি টাকা ব্যয়ে প্রগতি ময়দানের এই আন্তর্জাতিক প্রদর্শনী ও সম্মেলন কেন্দ্রটি গড়ে তোলা হয়েছে। বিশ্ব বাণিজ্যের একটি অন্যতম কেন্দ্র হিসেবে ভারতকে তুলে ধরতে এই কেন্দ্রটি সাহায্য করবে বলে সরকার মনে করে। 

উদ্বোধন অনুষ্ঠানে আয়োজিত এক সমাবেশে ভাষণদানকালে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘ভারত মণ্ডপম’ হল জাতির ক্ষমতা, দক্ষতা ও নতুন নতুন উৎসাহ-উদ্দীপনার এক প্রতীকী ব্যঞ্জনা। এ হল ভারতের ইচ্ছাশক্তির এক দার্শনিক অভিব্যক্তি। ‘ভারত মণ্ডপম’-এর সূচনা উপলক্ষে সমগ্র জাতিকে অভিনন্দনও জানান প্রধানমন্ত্রী। প্রসঙ্গত, ঐতিহাসিক কার্গিল বিজয় দিবসের কথা স্মরণ করে শ্রী মোদী কার্গিল যুদ্ধের সৈনিকদের উদ্দেশে গভীর শ্রদ্ধাও নিবেদন করেন। 

প্রধানমন্ত্রী তাঁর ভাষণে আরও বলেন, ‘ভারত মণ্ডপম’ নামটির পেছনে ‘অনুভব মণ্ডপম’-এর প্রেরণা ও উৎসাহ বিশেষভাবে কাজ করেছে। ‘অনুভব মণ্ডপম’ হল ভগবান বাসবেশ্বরের এক দর্শনবিশেষ যার মধ্যে দেশের আলোচনা, বিতর্ক এবং প্রকাশ ভঙ্গিমার সমন্বয় ঘটেছে। 

বহু ঐতিহাসিক এবং পুরাতাত্ত্বিক নিদর্শনের কথা তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ভারত হল ‘গণতন্ত্রের জননী’। তাই, ‘ভারত মণ্ডপম’ হল দেশের আসন্ন স্বাধীনতা দিবস উপলক্ষে গণতন্ত্রের উদ্দেশে আমাদের এক নিবেদন বিশেষ।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্তের মানুষ এই মণ্ডপের মাধ্যমে তাঁদের কর্মকুশলতার প্রদর্শন ও নিদর্শনকে তুলে ধরতে পারবেন। একইসঙ্গে দেশের স্টার্ট-আপ শক্তির একটি প্রদর্শনী মঞ্চ হিসেবে ‘ভারত মণ্ডপম’ কাজ করে যাবে। দেশের শিল্পী ও কারিগরদের তৈরি বিভিন্ন নিদর্শন এখানে বিশ্ব বাণিজ্যের উদ্দেশ্যে প্রদর্শিত হবে। সেই অর্থে এই মণ্ডপটি ‘আত্মনির্ভর ভারত’কে তুলে ধরার এক মঞ্চবিশেষ। 

শ্রী মোদী বলেন, ‘ভারত মণ্ডপম’-এর মতো একটি পরিকাঠামো বহু দশক আগেই নির্মিত হওয়া উচিত ছিল। কায়েমি স্বার্থের বিরোধিতা সত্ত্বেও এই ধরনের পরিকাঠামো গঠনের কাজ অব্যাহত রাখা হবে বলে দ্ব্যর্থহীন ভাষায় ঘোষণা করেন তিনি। প্রধানমন্ত্রীর মতে, বিচ্ছিন্নভাবে কাজ করার মধ্য দিয়ে কোনো সমাজই এগিয়ে যেতে পারে না। কর্মশৈলীর এক সার্বিক দৃষ্টিভঙ্গী তুলে ধরতে ‘ভারত মণ্ডপম’ এক বিশেষ ভূমিকা পালন করবে। প্রসঙ্গত, ই-কনফারেন্সের জন্য ভিসা ব্যবস্থার সুযোগ সহ বিভিন্ন অত্যাধুনিক পদক্ষেপের কথাও ঘোষণা করেন প্রধানমন্ত্রী। তিনি বলেন, দিল্লি বিমানবন্দরের যাত্রী বহন ক্ষমতা ইতিমধ্যেই সাড়ে সাত কোটিতে গিয়ে পৌঁছেছে। ভবিষ্যতে তা আরও বৃদ্ধি পেতে চলেছে। দিল্লির জাতীয় রাজধানী অঞ্চলে আতিথেয়তা শিল্পের প্রসার ঘটেছে পর্যাপ্ত মাত্রায়। এইভাবে সম্মেলন তথা পর্যটনের প্রসারে অনুকূল পরিবেশ ও পরিস্থিত গড়ে তুলতে সরকার নানাভাবে কাজ করে চলেছে।

গত কয়েক বছরে রাজধানীতে পরিকাঠামো উন্নয়নের অগ্রগতি সম্পর্কে তথ্য পেশ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, নবনির্মিত সংসদ ভবনটি প্রতিটি ভারতবাসীর কাছেই এখন গর্বের বিষয়। জাতীয় যুদ্ধ স্মারক, পুলিশ মেমোরিয়াল এবং বাবাসাহেব আম্বেদকর স্মারক স্থানগুলি এই ধরনের পরিকাঠামো উন্নয়নের এক একটি উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত। এমনকি, ‘কর্তব্য পথ’কে ঘিরে বিভিন্ন সরকারি কার্যালয় গড়ে তোলার কাজও বর্তমানে পুরোদমে শুরু হয়ে গেছে। কারণ, কর্মসংস্কৃতির পাশাপাশি কাজের পরিবেশে আমূল পরিবর্তনের লক্ষ্যে সরকার নিরন্তরভাবে প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। প্রসঙ্গত, প্রধানমন্ত্রী সংগ্রহালয়ের কথাও উল্লেখ করেন তিনি। ‘যুগে যুগীন ভারত’ নামে বিশ্বের বৃহত্তম সংগ্রহশালাটিও অনতিবিলম্বেই স্থাপিত হতে চলেছে নয়াদিল্লিতে।

প্রধানমন্ত্রী বিশেষ জোর দিয়ে বলেন, দেশকে উন্নত করে তুলতে হলে একদিকে যেমন আমাদের চিন্তাভাবনার পরিসরকে আরও বাড়াতে হবে, অন্যদিকে তেমনই লক্ষ্যমাত্রাও নির্দিষ্ট করতে হবে বৃহৎ আকার ও আয়তনে। এই কারণে ‘চিন্তাভাবনার পরিসর বৃদ্ধি করো, আরও বড় হয়ে ওঠার স্বপ্ন দেখ তথা আরও বড় বড় কাজ করো’ – এই নীতিকে অনুসরণ করে ভারত দ্রুততার সঙ্গে উন্নয়নের পথে অগ্রসর হয়েছে। এইভাবেই বিশ্বের বৃহত্তম সৌর তথা বায়ুশক্তি পার্ক, উচ্চতম রেল সেতু, দীর্ঘতম টানেল, বৃহত্তম সড়ক, বৃহত্তম ক্রিকেট স্টেডিয়াম, বিশ্বের দীর্ঘতম ও উচ্চতম স্ট্যাচু এবং এশিয়ার দ্বিতীয় বৃহত্তম রেল-সড়ক সেতু ভারতে নির্মাণের কথা আমরা চিন্তাভাবনা করেছি। একইসঙ্গে, গ্রিন হাইড্রোজেনের লক্ষ্যে আমরা আমাদের কর্মপ্রচেষ্টাকে চালিত করেছি। 

প্রধানমন্ত্রী বিশেষ জোর দিয়ে বলেন যে উন্নয়নের পথে ভারতের এই যাত্রা নিরন্তর অব্যাহত থাকবে। মোদী সরকারের বর্তমান এবং আগের মেয়াদকালে যেভাবে উন্নয়নের এক একটি স্তম্ভ গড়ে উঠছে সমগ্র জাতি তা প্রত্যক্ষ করেছে। কেন্দ্রের বর্তমান সরকার যখন ২০১৪ সালে ক্ষমতাসীন হয়, তখন ভারত ছিল বিশ্বের দশম বৃহত্তম অর্থনীতি। কিন্তু বর্তমানে ভারত রূপান্তরিত হয়েছে বিশ্বের পঞ্চম বৃহত্তম একটি অর্থনীতি রূপে। ভবিষ্যতেও এই সরকারের মেয়াদকালে ভারত বিশ্বের তিনটি শীর্ষস্থানীয় অর্থনীতির দেশের মধ্যে নিজের স্থান করে নেবে। এটাই হল মোদী সরকারের গ্যারান্টি। শ্রী মোদী আরও বলেন যে বর্তমান সরকারের তৃতীয় মেয়াদকালে দেশে উন্নয়নের গতি বৃদ্ধি পাবে বহুগুণে এবং তখনই দেশবাসীর স্বপ্নের বাস্তবায়ন সম্ভব হয়ে উঠবে। 

শ্রী মোদী বলেন, গত ৯ বছর ধরে দেশ পুনর্গঠনের কাজ চলেছে। সেজন্য পরিকাঠামো গড়ে তোলার কাজে ৩৪ লক্ষ কোটি টাকা ব্যয় করা হয়েছে। বর্তমান বছরেও মূলধনী ব্যয়ের মাত্রা ১০ লক্ষ কোটি টাকায় নির্দিষ্ট করা হয়েছে। ভারত বর্তমানে যেভাবে কর্মযজ্ঞে সামিল হয়েছে তা এক কথায় অভূতপূর্ব বলে বর্ণনা করেন প্রধানমন্ত্রী। তিনি বলেন, গত ৯ বছরে ৪০ হাজার কিলোমিটার রেলপথের বৈদ্যুতিকরণের কাজ সম্পূর্ণ হয়েছে যা কিনা আজ থেকে সাত দশক আগে ছিল মাত্র ২০ হাজার কিলোমিটার। ২০১৪ সালের আগে প্রতি মাসে মেট্রো লাইন সম্প্রসারণের কাজ হত ৬০০ মিটার। কিন্তু বর্তমানে প্রতি মাসে মেট্রো লাইন সম্প্রসারিত হচ্ছে ৬ কিলোমিটার হারে। ২০১৪ সালে দেশে গ্রামীণ সড়কের দৈর্ঘ্য ছিল মাত্র ৪ লক্ষ কিলোমিটার কিন্তু বর্তমানে তা বেড়ে হয়েছে ৭.২৫ লক্ষ কিলোমিটার। অন্যদিকে, দেশে বিমানবন্দরগুলির সংখ্যাও ৭০ থেকে উন্নীত হয়েছে প্রায় ১৫০টিতে। শহরাঞ্চলে গ্যাস সরবরাহ ও বন্টনের মাত্রাও বৃদ্ধি পেয়েছে উল্লেখযোগ্যভাবে। 

প্রধানমন্ত্রী বলেন যে গত শতকের তৃতীয় দশকে ভারতের স্বাধীনতা সংগ্রাম ও আন্দোলনের মূল লক্ষ্য ছিল ‘স্বরাজ’ প্রতিষ্ঠা। স্বরাজ আন্দোলনের মধ্য দিয়ে ভারত স্বাধীনতা লাভ করেছে। তেমনভাবেই বর্তমান শতকের তৃতীয় দশকটি ‘বিকশিত ভারত’-এর লক্ষ্যে উপনীত হওয়ার যাত্রাপথ রূপে চিহ্নিত হয়েছে যাতে আগামী ২৫ বছরের মধ্যে আমরা উন্নত ভারত রূপে বিশ্ববাসীর সামনে পরিচিত হতে পারি। উন্নত ভারত গঠনের মধ্য দিয়েই দারিদ্র্য দূর করা সম্ভব বলে মত প্রকাশ করেন প্রধানমন্ত্রী। নীতি আয়োগের একটি প্রতিবেদন তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী জানান যে মাত্র পাঁচ বছরের মধ্যে ১৩ কোটি ৫০ লক্ষ মানুষ দারিদ্রসীমার বাইরে বেরিয়ে আসতে পেরেছেন। বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সংস্থা সূত্রে প্রকাশ যে চরম দারিদ্র্য বলতে যা বোঝায়, ভারতে তা এখন ক্রমশ অতীতে পর্যবসিত হচ্ছে। 

সদিচ্ছা ও সঠিক নীতি প্রসঙ্গে প্রধানমন্ত্রী বলেন, জি-২০-র আলোচনাকে আমরা একটিমাত্র শহরে আবদ্ধ করে রাখিনি। দেশের ৫০টিরও বেশি শহরে জি-২০-র বৈঠক অনুষ্ঠিত হচ্ছে। এইভাবেই ভারতের বৈচিত্র্যের প্রকাশকে আমরা সম্ভব করে তুলতে পেরেছি। ভারতের সাংস্কৃতিক শক্তিই যে তার ঐতিহ্য, একথা আমরা প্রমাণ করেছি বিশ্ববাসীর সামনে। জি-২০ বৈঠকের ফলে নানা ধরনের সুযোগ-সুবিধা সম্প্রসারিত হয়েছে নির্দিষ্ট শহরগুলিতে। পুরনো কাঠামো ও সুযোগ-সুবিধাগুলিকে করে তোলা হয়েছে অত্যাধুনিক যা দেশ তথা দেশবাসীর প্রভূত কল্যাণসাধন করেছে। সুশাসনের এ হল এক উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত। ‘জাতিই সর্বাগ্রে, নাগরিকরাই সর্বপ্রথম’ – এই দৃষ্টিভঙ্গী নিয়ে উন্নত ভারতের স্বপ্নকে আমরা সাকার করে তুলতে চলেছি। 

এদিনের অনুষ্ঠানে অন্যান্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন কেন্দ্রীয় শিল্প ও বাণিজ্য মন্ত্রী শ্রী পীযূষ গোয়েল সহ অন্যান্য কেন্দ্রীয় মন্ত্রীরা। অগ্রণী শিল্প প্রতিষ্ঠানগুলির প্রতিনিধি ও বিশেষজ্ঞরাও যোগ দেন এই অনুষ্ঠানে। 

AC/SKD/DM



(Release ID: 1948450) Visitor Counter : 136