প্রধানমন্ত্রীরদপ্তর

জি-৭ শীর্ষ বৈঠকের নবম পর্ব তথা অধিবেশনে প্রধানমন্ত্রী শ্রী নরেন্দ্র মোদীর প্রারম্ভিক বক্তব্য

এক শান্তিপূর্ণ, স্থিতিশীল ও সমৃদ্ধ বিশ্ব গড়ে তোলাই এই পর্বের আলাপ-আলোচনার লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য

Posted On: 21 MAY 2023 10:20AM by PIB Kolkata

নয়াদিল্লি, ২১ মে, ২০২৩


মাননীয় নেতৃবৃন্দ,

আজ আমরা প্রসিডেন্ট জেলেনস্কির বক্তব্য শুনলাম। গতকাল তাঁর সঙ্গে আমার সাক্ষাৎকারও ঘটেছিল। বর্তমান পরিস্থিতিকে আমি কখনই একটি রাজনৈতিক বা অর্থনৈতিক বিষয় বলে মনে করি না। বরং আমি বিশ্বাস করি যে, এ হ’ল মানবতা এবং মানবকল্যাণ বোধের একটি বিষয়। সূচনাকাল থেকেই আমরা বলে এসেছি যে, আলাপ-আলোচনা এবং কূটনৈতিক দৌত্যই হ’ল সমস্যা সমাধানের একমাত্র পথ। এই পরিস্থিতির সন্তোষজনক মীমাংসায় ভারতের পক্ষ থেকে আমরা সম্ভাব্য সকল রকম প্রচেষ্টাই যেভাবে পারি না কেন চালিয়ে যাব। 

মাননীয় নেতৃবৃন্দ,

বিশ্ব শান্তি, স্থিতিশীলতা এবং সমৃদ্ধিই হ’ল আমাদের মিলিত লক্ষ্য। বর্তমান বিশ্ব পরস্পর সংযুক্ত। তাই, বিশ্বের কোনও অঞ্চলে কোনও রকম সঙ্কট দেখা দিলে তার প্রভাব গিয়ে পড়ে অন্য দেশগুলির উপরও। উন্নয়নশীল দেশগুলির সহায়-সম্পদ খুবই সীমিত। তাই, এই দেশগুলিই হয় সবেচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত। বর্তমান বিশ্ব পরিস্থিতিতে খাদ্য, জ্বালানী এবং সারের ক্ষেত্রে যে সঙ্কট দেখা দিয়েছে, এই দেশগুলিই তাতে বিশেষভাবে এবং সর্বোচ্চ মাত্রায় ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। 

মাননীয় নেতৃবৃন্দ,

এই পরিস্থিতিতে যে প্রশ্নটি সবচেয়ে বড় হয়ে দেখা দিয়েছে, তা হ’ল – বিশেষ বিশেষ মঞ্চগুলিতে শান্তি ও স্থিতিশীলতা সম্পর্কে আলাপ-আলোচনা চালিয়ে যাওয়া। শান্তি স্থাপনের লক্ষ্যেই রাষ্ট্রসঙ্ঘের প্রতিষ্ঠা। কিন্তু, তা সত্ত্বেও সংঘাত ও সংঘর্ষ প্রতিরোধ করতে তা ব্যর্থ কেন? সন্ত্রাসবাদের সংজ্ঞাটি এখনও পর্যন্ত রাষ্ট্রসংঘে গৃহীত হ’ল না কেন? যদি আমরা আমাদের অন্তর্দৃষ্টি দিয়ে বিষয়টিকে খতিয়ে দেখি, তা হলে কিন্তু একটি বিষয় স্পষ্ট হয়ে উঠবে। তা হ’ল – গত শতাব্দীতে যে প্রতিষ্ঠানগুলি গড়ে তোলা হয়েছিল, তা একুশ শতকের সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ নয়। কারণ, সেগুলির মধ্যে বর্তমানকালের বাস্তবতার প্রতিফলন দেখা যায় না। এই কারণেই রাষ্ট্রসঙ্ঘের মতো বড় বড় সংস্থা ও প্রতিষ্ঠানগুলির একটি সুসংগঠিত আকার দেওয়ার লক্ষ্যে সংস্কার প্রচেষ্টা চালিয়ে যাওয়া একান্তই জরুরি। একই সঙ্গে, তাতে ধ্বনিত হওয়া উচিৎ দক্ষিণ বিশ্বের কন্ঠস্বরও। তা না হলে আমরা শুধুমাত্র সংঘর্ষ বিরতি সম্পর্কেই আলোচনা চালিয়ে যেতে থাকবো। রাষ্ট্রসঙ্ঘ ও নিরাপত্তা পরিষদ শুধুমাত্র আলাপ-আলোচনা ও মতবিনিময়ের একটি কেন্দ্র হয়েই থাকবে। 

মাননীয় নেতৃবৃন্দ,

রাষ্ট্রসংঘের সনদ, আন্তর্জাতিক আইন এবং সবকটি রাষ্ট্রের সার্বভৌমত্ব তথা ভূখন্ডজনিত সংহতির প্রতি শ্রদ্ধা জানানো উচিৎ সকল রাষ্ট্রেরই। সুতরাং, বর্তমান অচলাবস্থা কাটিয়ে উঠতে সকল নিয়ে ঐক্যবদ্ধভাবে প্রচেষ্টা চালানোর পাশাপাশি একপক্ষীয় কর্তৃত্ব কায়েমির বিরুদ্ধে সোচ্চার হয়ে উঠতে হবে। ভারত বরাবরই বিশ্বাস করে এসেছে যে, উত্তেজনা প্রশমন এবং বিবাদ-বিতর্কের নিষ্পত্তি শুধুমাত্র শান্তিপূর্ণ উপায়ে এবং আলাপ-আলোচনার মাধ্যমেই সম্ভব। আইনগত ব্যবস্থাপনায় যদি কোনও রকম সমাধানসূত্র থাকে, তা অবশ্যই গ্রহণ করা উচিৎ। এই মানসিকতা নিয়েই ভারত বাংলাদেশের সঙ্গে তার ভূখন্ড ও নৌ-সীমানা নিয়ে বিবাদ-বিতর্কের অবসান ঘটিয়েছে। 

মাননীয় নেতৃবৃন্দ,

ভারতে, এমনকি জাপানেও হাজার হাজার বছর ধরে ভগবান বুদ্ধের বাণী ও উপদেশ অনুসৃত হচ্ছে। আধুনিক যুগে এমন কোনও সমস্যা নেই, যার সমাধান বুদ্ধের শিক্ষাদর্শের মধ্যে খুঁজে পাওয়া যায় না। যুদ্ধবিগ্রহ, অশান্তি এবং অ-স্থিতিশীলতার সমাধানের পথ বুদ্ধ বহু শতাব্দী আগেই আমাদের দেখিয়ে গেছেন। সত্যি কথা বলতে কি, বর্তমান বিশ্ব এই ধরণের পরিস্থিতিরই এখন সম্মুখীন।
ভগবান বুদ্ধ একদা বলেছিলেন:

नहि वेरेन् वेरानी, 
सम्मन तीध उदासन्, 
अवेरेन च सम्मन्ति, 
एस धम्मो सन्नतन। 

এর অর্থ হ’ল – বৈরিতা কখনই বৈরিতাকে দমন করতে পারে না। মৈত্রী স্থাপনের মাধ্যমেই বৈরিতার অবসান ঘটানো সম্ভব।

এই মানসিকতা নিয়েই প্রত্যেককে সঙ্গে নিয়েই আমাদের একত্রে এগিয়ে চলা উচিৎ। 

ধন্যবাদ। 


AC/SKD/SB



(Release ID: 1946257) Visitor Counter : 121