স্বরাষ্ট্র মন্ত্রক

হরিয়ানার গুরুগ্রামে আজ এনএফটি, কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা এবং মেটাভার্সের যুগে অরপাধ ও নিরাপত্তা সংক্রান্ত জি-২০ সম্মেলনের উদ্বোধনী অধিবেশনে ভাষণ দিলেন কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র ও সমবায় মন্ত্রী অমিত শাহ

ক্রমাণ্বয়ে আরও সংযুক্ত হয়ে চলা এই বিশ্বে সাইবার ক্ষেত্রে সুস্থিতির প্রশ্নে জাতীয় ও আন্তর্জাতিক স্তরে সহযোগিতার গুরুত্ব তুলে ধরলেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী

ডিজিটাল পন্থায় পরিষেবা প্রদানের উদ্যোগ ভারতকে এক দশকের মধ্যে ‘ডিজিটাল দেশ’ করে তুলেছে, ভারত তৈরি করেছে একের পর এক ‘সকলের ব্যবহারযোগ্য ডিজিটাল জনপরিকাঠামো মডেল’ – যা সারা বিশ্বের সামনে উদাহরণস্বরূপ।

‘ডিনামাইট থেকে মেটাভার্স’ কিংবা ‘হাওয়ালা থেকে ক্রিপ্টো কারেন্সি’- পাল্টে যাচ্ছে সুরক্ষা সংক্রান্ত চ্যালেঞ্জগুলি। সারা বিশ্বকে এর মোকাবিলা করতে হবে একযোগে।

ডিজিটাল অপরাধের মোকাবিলায় সব দেশের আইনে অভিন্নতা থাকা দরকার।

প্রয়োজন ২৪ ঘন্টা কার্যকর সাইবার নিরাপত্তা ব্যবস্থাপনা।

Posted On: 13 JUL 2023 2:37PM by PIB Kolkata

নতুন দিল্লি  ১৩ জুলাই ২০২৩

হরিয়ানার গুরুগ্রামে আজ এনএফটি, কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা এবং মেটাভার্সের যুগে অরপাধ ও নিরাপত্তা সংক্রান্ত জি-২০ সম্মেলনের উদ্বোধনী অধিবেশনে ভাষণ দিলেন কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র ও সমবায় মন্ত্রী অমিত শাহ। উপস্থিত ছিলেন, কেন্দ্রীয় মন্ত্রিসভার সদস্য এবং শীর্ষ প্রশাসনিক আধিকারিকরা। দুদিনের এই সম্মেলনে যোগ দিয়েছেন জি-২০-র সদস্য, আমন্ত্রিত দেশ, বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সংস্থা এবং বিশ্বের তাবড় প্রযুক্তি বিশেষজ্ঞরা।

ক্রমাণ্বয়ে আরও নিবিড়ভাবে সংযুক্ত হয়ে চলা এই বিশ্বে সাইবার ক্ষেত্রে সুস্থিতির প্রশ্নে জাতীয় এবং আন্তর্জাতিক স্তরে সমন্বয়ে বিশেষ জোর দিয়েছেন অমিত শাহ। তিনি বলেছেন, এবছর জি-২০-এর পৌরোহিত্যে আসীন ভারতের মূল মন্ত্র হল ‘বসুধৈব কুটুম্বকম’, অর্থাৎ ‘এক বিশ্ব-এক পরিবার- এক ভবিষ্যৎ’। এই ধারণা আজকের ‘ডিজিটাল বিশ্ব’-এ চূড়ান্তভাবে প্রাসঙ্গিক বলে তিনি মন্তব্য করেছেন।

কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেছেন, প্রযুক্তি ভৌগোলিক, রাজনৈতিক এবং অর্থনৈতিক প্রশ্নে সীমারেখার প্রচলিত ধারণাকে পাল্টে দিয়েছে। আজ আমরা বাস করছি একটি বৃহৎ বৈশ্বিক ডিজিটাল গ্রামে। মানুষ, গোষ্ঠী এবং দেশসমূহকে কাছাকাছি নিয়ে আসায় প্রযুক্তি ইতিবাচক অবদান রেখেছে, কিন্তু কিছু সমাজবিরোধী শক্তি সাধারণ মানুষ এবং সরকারের ক্ষতি করার কাজে ব্যবহার করছে এই প্রযুক্তিকেই। ডিজিটাল বিশ্বকে সকলের কাছে নিরাপদ করে তুলতে আন্তর্জাতিক উদ্যোগ প্রয়োজন এবং সেক্ষেত্রে এই সম্মেলনের বিশেষ গুরুত্ব রয়েছে।

সাইবার নিরাপত্তার বিষয়টি এখন আর কেবলমাত্র ডিজিটাল দুনিয়াতেই সীমাবদ্ধ নয়, তা হয়ে উঠেছে জাতীয় এবং আন্তর্জাতিক নিরাপত্তার গুরুত্বপূর্ণ একটি দিক- প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর এই চিন্তাধারার উল্লেখ করেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী। প্রযুক্তির মানবিক ব্যবহারে প্রধানমন্ত্রী মোদী গুরুত্ব দিয়েছেন বলে মনে করিয়ে দেন তিনি।

প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর নেতৃত্বে ভারত তৃণমূল স্তর পর্যন্ত আধুনিক প্রযুক্তির সুযোগ পৌঁছে দেওয়ার কাজে যে সাফল্য পেয়েছে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী তার খতিয়ান তুলে ধরেন। তিনি বলেন, আজ অনলাইন পরিষেবার সুযোগ নেন ৮৪ কোটি ভারতবাসী, ২০২৫ নাগাদ ডিজিটাল বিশ্বে প্রবেশ করবেন আরও ৪০ কোটি ভারতীয়। এদেশে ইন্টারনেট সংযোগ গত ৯ বছরে ২৫০ শতাংশ বেড়েছে এবং প্রতি জিবি ডেটার খরচ কমেছে ৯৬ শতাংশ। অমিত শাহ বলেন, প্রধানমন্ত্রী জনধন যোজনার আওতায় খোলা হয়েছে ৫০ কোটি নতুন ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্ট। বিতরণ করা হয়েছে ৩৩ কোটি রুপে ডেবিট কার্ড। ২০২২ সালে এদেশে ডিজিটাল লেনদেনের সংখ্যা ৯ কোটি এবং ইউপিআইয়ের মাধ্যমে ভারতে এখনও পর্যন্ত ৩৫ ট্রিলিয়ন টাকা মূল্যের লেনদেন হয়েছে। সারা বিশ্বের ডিজিটাল লেনদেনের ৪৬ শতাংশই হয়ে থাকে ভারতে। সরাসরি সুবিধা হস্তান্তর কিংবা ডিজি লকারের মতো পরিষেবার প্রসঙ্গ তুলে ধরেন কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী। ভারতনেট কর্মসূচির আওতায় দেশে ৬ লক্ষ কিলোমিটার অপটিক্যাল ফাইবার কেবল পাতার কাজ সম্পন্ন হয়েছে বলে তিনি জানান। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আরও বলেন, ডিজিটাল পন্থায় পরিষেবা প্রদানের উদ্যোগ ভারতকে এক দশকের মধ্যে ‘ডিজিটাল দেশ’ করে তুলেছে, ভারত তৈরি করেছে একের পর এক ‘সকলের ব্যবহারযোগ্য ডিজিটাল জনপরিকাঠামো মডেল’ – যা সারা বিশ্বের সামনে উদাহরণস্বরূপ।

ইন্টারনেটের এই প্রবল রমরমার যুগে সাইবার বিপদের আশঙ্কাও বহুগুণে বেড়ে গেছে বলে সাবধান করে দেন অমিত শাহ। তিনি বলেন, সাইবার ফাঁদ, অনলাইন কেলেঙ্কারি, অনলাইনে শিশুদের যৌন নির্যাতন কিংবা হ্যাকিংয়ের ভয়াবহ সমস্যা সারা বিশ্বের সামনে প্রচণ্ড এক বিপদ এবং ভবিষ্যতে এধরনের ঘটনা বাড়তেই থাকবে। এই প্রেক্ষিতে প্রথমবার সাইবার নিরাপত্তা নিয়ে জি-২০ দেশগুলির এই সম্মেলন বিশেষ তাৎপর্যপূর্ণ। এর আগে জি-২০ অর্থনৈতিক দৃষ্টিকোণ থেকেই মূলত ডিজিটাল রূপান্তর নিয়ে চিন্তাভাবনা করেছে। কিন্তু এনএফটি, কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা এবং মেটাভার্সের এই যুগে সাইবার অপরাধের প্রতিরোধ ও মোকাবিলা প্রধানতম একটি বিষয়।এক্ষেত্রে দরকার সহযোগিতাভিত্তিক উদ্যোগ।

জি-২০ মঞ্চে সাইবার নিরাপত্তা সংক্রান্ত আলোচনা গোয়েন্দা তথ্য আদান-প্রদানের একটি নেটওয়ার্ক গড়ে তুলে সংশ্লিষ্ট ক্ষেত্রে বৈশিক সহযোগিতার পালে হাওয়া লাগাবে বলে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ মনে করেন।

তিনি বলেন, দুদিনের এই সম্মেলনে ৬টি অধিবেশনে মূলত যে বিষয়গুলি নিয়ে আলোচনা হবে সেগুলি হল,
       ক) ইন্টারনেট প্রশাসন
       খ) ডিজিটাল জনপরিকাঠামোর নিরাপত্তা
       গ) ডিজিটাল মালিকানার সঙ্গে সংশ্লিষ্ট আইন ও বিধি সংক্রান্ত বিষয়
       ঘ) কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার দায়িত্বশীল ব্যবহার এবং ডার্ক নেটের জন্য একটি আন্তর্জাতিক সহযোগিতা কাঠামো

‘ডিনামাইট থেকে মেটাভার্স’ কিংবা ‘হাওয়ালা থেকে ক্রিপ্টো কারেন্সি’-র দিকে যাওয়ার পথে সুরক্ষা সংক্রান্ত চ্যালেঞ্জগুলি যেভাবে পাল্টে যাচ্ছে তার মোকাবিলায় সারা বিশ্বের একটি অভিন্ন কৌশলগত পন্থা গড়ে তোলা দরকার বলে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ মন্তব্য করেন। তিনি বলেন,  অতি আধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহার করে নিজেদের কর্মকাণ্ড প্রসারিত করতে চাইছে মৌলবাদী এবং অপরাধীরা। নিজেদের পরিচিতি লুকোতে তারা আশ্রয় নিচ্ছে ডার্ক নেটের। মেটাভার্স একসময় ছিল কল্পবিজ্ঞানের বিষয়। এখন বাস্তব দুনিয়ায় তাকে কাজে লাগিয়ে প্রভাব বিস্তার করতে চাইছে সন্ত্রাসবাদী নানা সংগঠন। চুরি হয়ে যাচ্ছে ব্যক্তিগত গুরুত্বপূর্ণ তথ্যাদি। অনলাইনে শিশুদের নির্যাতন বেড়েই চলেছে। আর্থিক দুনিয়ায় অনলাইনে জোচ্চুরির একের পর এক ঘটনা মাথাব্যথার বড় কারণ হয়ে দাঁড়াচ্ছে। জরুরিভিত্তিতে এসবের মোকাবিলা সময়ের দাবি। প্রয়োজন ২৪ ঘন্টা কার্যকর সাইবার নিরাপত্তা ব্যবস্থাপনা।
 

ডিজিটাল ব্যবস্থাপনার ওপর সাধারণ মানুষ যাতে আস্থা রাখতে পারেন তা নিশ্চিত করা জরুরি বলে অমিত শাহ মনে করিয়ে দেন। কোনও দেশের সার্বভৌমত্বের প্রশ্নে নেতিবাচক প্রভাব ফেলতে ডিজিটাল পরিসরের ব্যবহার বন্ধ হওয়া দরকার বলে তার মন্তব্য।

বিশ্ব ব্যাঙ্কের তথ্য উদ্ধৃত করে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, ২০১৯-২০২৩ সময়কালে সাইবার হামলার দরুণ সারাবিশ্বে ক্ষতির পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ৫ দশমিক দুই ট্রিলিয়ন ডলার। ক্রিপ্টো কারেন্সির অপপ্রয়োগ এক জ্বলন্ত সমস্যা বলে তিনি মন্তব্য করেন। এসবের মোকাবিলায় ভারত সরকারের গৃহীত নানা উদ্যোগের কথা তুলে ধরেন তিনি।

ভাষণের শেষপর্বে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ বলেন, আমাদের লক্ষ্য সফল সাইবার দুনিয়া গড়ে তোলা। এই কাজে আধুনিক প্রযুক্তির যাবতীয় সম্ভাবনা কাজে লাগিয়ে বিশ্বের প্রতিটি মানুষের সুরক্ষিত ডিজিটাল ভবিষ্যৎ নির্মাণে এগোতে হবে জোরকদমে।
 
 
CG / AC /AG  ….Release ID (1939173)….. 13th July, 2023 …..W…. (926)



(Release ID: 1939222) Visitor Counter : 137