প্রধানমন্ত্রীরদপ্তর

সুপরিকল্পিত নগরোন্নয়নই ভারতের ভাগ্য নির্ণয় করতে পারে

‘পরিকল্পনার ওপর বিশেষ চিন্তাভাবনার মাধ্যমে নগরোন্নয়ন’ সম্পর্কিত বাজেট পরবর্তী এক ওয়েবিনারে বললেন প্রধানমন্ত্রী

Posted On: 01 MAR 2023 11:29AM by PIB Kolkata

 

নয়াদিল্লি, ১ মার্চ, ২০২৩


অমৃতকালে নগর পরিকল্পনা যেমন শহরগুলির ভবিষ্যৎ গড়ে তুলতে পারে, ঠিক তেমনভাবেই সুপরিকল্পিত নগরোন্নয়নই ভারতের ভাগ্য নির্ণয় করতে পারে। উন্নততর পরিকল্পনার মাধ্যমে দেশের শহরগুলির জলবায়ু পরিবর্তনের মোকাবিলা এবং জল নিরাপত্তা নিশ্চিত করা সম্ভব।


‘পরিকল্পনার ওপর বিশেষ চিন্তাভাবনার মাধ্যমে নগরোন্নয়ন’ সম্পর্কিত বাজেট পরবর্তী এক ওয়েবিনারে আজ ভাষণদানকালে এই আশার কথা ব্যক্ত করেন প্রধানমন্ত্রী শ্রী নরেন্দ্র মোদী। পাশাপাশি, তিনি বিশেষ আক্ষেপের সঙ্গে বলেন যে স্বাধীনতা লাভের পর বহু বছর অতিক্রান্ত। কিন্তু এই সময়কালের মধ্যে দেশে মাত্র একটি কি দুটি শহর পরিকল্পিতভাবে গড়ে উঠেছে। অথচ, স্বাধীনতা পরবর্তী ৭৫ বছরে বিশ্বে ভারতের অবস্থান অনেকটাই উন্নত হতে পারত যদি অন্তত ৭৫টি পরিকল্পিত শহর ঐ সময়কালের মধ্যে গড়ে তোলা যেত।


প্রধানমন্ত্রীর মতে, একুশ শতকের ভারতে সুপরিকল্পিত নগরোন্নয়ন একান্ত জরুরি একটি প্রয়োজন। কারণ, দেশ এখন অপ্রতিহত গতিতে এগিয়ে চলেছে। নতুন নতুন শহরগুলির উন্নয়ন এবং বর্তমান শহরগুলিতে পরিষেবা ব্যবস্থার আধুনিকীকরণকে নগরোন্নয়নের দুটি বিশেষ দিক বলে চিহ্নিত করেন প্রধানমন্ত্রী। তিনি বলেন, দেশের প্রত্যেকটি বাজেটে নগরোন্নয়নের মতো বিষয়টির যথেষ্ট গুরুত্ব ও তাৎপর্য রয়েছে। নগরোন্নয়নের উচ্চ তথা উন্নত মানের জন্য এ বছরের বাজেটে ১৫ হাজার কোটি টাকার বিশেষ সংস্থান রাখা হয়েছে যা পরিকল্পিত নগরোন্নয়নের কাজকে বিশেষভাবে উৎসাহিত করবে বলে মনে করেন তিনি।


শ্রী মোদী বলেন, শহরগুলির অপরিকল্পিত উন্নয়ন পরিকল্পনা এবং পরিকল্পনা পরবর্তীকালের বাস্তবায়ন প্রচেষ্টা যথাযথভাবে না হওয়ার ফলে উন্নয়নের লক্ষ্যে ভারতের যাত্রাপথে নানা ধরনের সমস্যার উদ্ভব হয়। এই কারণে নগরোন্নয়নের ক্ষেত্রে পরিকল্পনা ও পরিচালনের এক বিশেষ ভূমিকা রয়েছে। দেশের রাজ্যগুলিতে নগর পরিকল্পনার উপযোগী পরিবেশ ও পরিস্থিতিকে অনুকূল করে তোলার লক্ষ্যে তিনটি বিষয়ের ওপর নজর দেওয়া প্রয়োজন। এগুলি হল – স্থানীয় সমস্যাগুলির নিরসন করা, পরিবহণ ব্যবস্থাকে সুষ্ঠু ও জটমুক্ত করতে উপযুক্ত চিন্তাভাবনা করা এবং শহর পরিকাঠামোর প্রসার।


প্রধানমন্ত্রী বলেন, সবক’টি রাজ্য সরকার এবং শহরাঞ্চলের পৌর ও সরকারি সংস্থাগুলি জাতি গঠনের কাজে বিশেষ অবদানের নজির গড়তে পারে যদি শহরাঞ্চলগুলিকে সুপরিকল্পিতভাবে গড়ে তোলা যায়। এজন্য উদ্ভাবনী চিন্তাভাবনা নিয়ে এগিয়ে আসার জন্য নগর পরিকল্পনা বিষয়ে বিশেষজ্ঞদের আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, বিশেষজ্ঞদের পরামর্শ ও মতামত স্থানীয় পৌর তথা সরকারি সংস্থাগুলিকে শহরাঞ্চলের সুযোগ-সুবিধার প্রসারে চিন্তাভাবনার খোরাক এনে দিতে পারে।


পরিবহণ পরিকল্পনাকে শহরোন্নয়ন প্রচেষ্টার ক্ষেত্রে একটি গুরুত্বপূর্ণ স্তম্ভ বলে বর্ণনা করেন প্রধানমন্ত্রী। তিনি বলেন, শহরাঞ্চলের যান চলাচলকে কোনভাবেই রুদ্ধ বা ব্যহত হতে দেওয়া যায় না। প্রসঙ্গত, ২০১৪ সালের আগে দেশের শহরগুলিতে মেট্রো চলাচলের পরিস্থিতি কিরকম ছিল তার বর্ণনা করতে গিয়ে তিনি বলেন, ২০১৪-র পরবর্তী সময়ে বর্তমান কেন্দ্রীয় সরকার দেশের বহু শহরে মেট্রো সম্প্রসারণের কাজ শুরু করে এবং এই বিষয়টিতে বিশ্বের অনেক দেশের তুলনায় অনেকাংশে এগিয়ে আছে। দেশের শহরগুলিতে মেট্রো নেটওয়ার্ক দ্রুত গড়ে তোলার ওপর গুরুত্ব দেন প্রধানমন্ত্রী। তিনি বলেন, আমাদের প্রয়োজন শেষ প্রান্ত পর্যন্ত সংযোগ ও যোগাযোগ ব্যবস্থার সুষ্ঠু ও সুঠাম প্রসার। শহরগুলির রাস্তাঘাট সুপ্রশস্ত করা, পরিবেশ-বান্ধব যান চলাচল, ওভারব্রিজ সহ সড়ক উন্নয়ন এবং বিভিন্ন রাস্তার জংশনগুলিকে উন্নত করে তোলার মাধ্যমে নগর পরিকল্পনাকে এক বিশেষ রূপ দেওয়া যায় বলে মন্তব্য করেন শ্রী নরেন্দ্র মোদী।


তিনি বলেন, চক্রাকার অর্থনীতিকে ভিত্তি করে নগরোন্নয়নের ক্ষেত্রে ভারত এক বিশেষ প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। শহরাঞ্চলের বিভিন্ন ধরনের বর্জ্যকে পুনর্ব্যবহারযোগ্য করে তোলার মাধ্যমে উন্নতমানের সারে রূপান্তরের প্রচেষ্টাও চালানো হয়েছে। ২০১৪ সালে যেখানে মোট বর্জ্যের ১৪-১৫ শতাংশ প্রক্রিয়াকরণের ব্যবস্থা করা হত সেখানে বর্তমানে ৭৫ শতাংশ বর্জ্যকে প্রক্রিয়াকরণের মাধ্যমে পুনর্ব্যবহারযোগ্য করে তোলা হচ্ছে। বর্জ্যের প্রক্রিয়াকরণ ও ব্যবস্থাপনার মাধ্যমে শহরগুলিকে আবর্জনামুক্ত করে তোলার ওপর যে বিশেষ জোর দেওয়া হচ্ছে, একথাও প্রসঙ্গত তুলে ধরেন প্রধানমন্ত্রী। এক্ষেত্রে স্টার্ট-আপ সংস্থাগুলি যেভাবে কাজ করে যাচ্ছে তাকে সমর্থন জানানোর জন্য প্রত্যেককে এগিয়ে আসার আহ্বান জানান তিনি। বর্জ্য ব্যবস্থাপনার সম্ভাবনাকে সর্বোচ্চ মাত্রায় কাজে লাগানোর জন্য শিল্প সংস্থাগুলির কাছে আর্জি জানান প্রধানমন্ত্রী। তিনি বলেন, ‘অম্রুত’ কর্মসূচির সাফল্যের পথ অনুসরণ করে শহরাঞ্চলে বিশুদ্ধ পানীয় জলের যোগান দিতে ‘অম্রুত-২’ কর্মসূচির কাজ শুরু করা হয়।


শ্রী মোদী বলেন, আমাদের নতুন নতুন শহরগুলিকে অবশ্যই আবর্জনামুক্ত হতে হবে। এর পাশাপাশি, বিশুদ্ধ জলের নিরন্তর যোগান সহ পরিবেশ অনুকূল রূপেও এই ধরনের শহরগুলিকে গড়ে তোলা প্রয়োজন। এই লক্ষ্যে নগর পরিকাঠামোর উন্নয়নে বিনিয়োগের প্রসার ঘটানোও প্রয়োজন বলে মনে করেন তিনি। দেশের ভবিষ্যৎ শহরগুলির চেহারা কিরকম হতে পারে তার বর্ণনা দিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন যে স্থাপত্য, দূষণমুক্ত, পরিবেশ-বান্ধব জ্বালানি, জমি ব্যবহারের ক্ষেত্রে দক্ষতা, ট্রানজিট করিডর এবং জন-পরিষেবাকে ‘এ-ওয়ান’ মানের হতে হবে।


শ্রী মোদী বলেন, যে সমস্ত নীতি ও পরিকল্পনা সরকার গ্রহণ করেছে তা শহরাঞ্চলের অধিবাসীদের জীবনযাত্রাকে আরও সহজ করে তোলার মধ্যেই শুধুমাত্র সীমাবদ্ধ থাকবে না, বরং শহরবাসীরা তাঁদের জীবনকে যাতে আরও নতুনভাবে সাজিয়ে তুলতে পারেন সেদিকেও দৃষ্টি দেবে। এ বছরের বাজেটে ‘প্রধানমন্ত্রী আবাস যোজনা’র আওতায় ৮০ হাজার কোটি টাকা ব্যয়ের যে অঙ্গীকার করা হয়েছে তার উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, সিমেন্ট, ইস্পাত, রং এবং আসবাবপত্র নির্মাণের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট শিল্পক্ষেত্রগুলি তাতে বিশেষ চাঙ্গা হয়ে উঠবে। নগরোন্নয়নের সঙ্গে ভবিষ্যৎ প্রযুক্তির যোগসাধনের লক্ষ্যে স্টার্ট-আপ সংস্থা এবং অন্যান্য শিল্পক্ষেত্রকে চিন্তাভাবনা করার জন্য আবেদন জানান প্রধানমন্ত্রী। তিনি বলেন, যে সমস্ত সম্ভাবনা রয়েছে সেগুলির সুযোগ যেমন আমাদের গ্রহণ করতে হবে, অন্যদিকে তেমনই নতুন নতুন সম্ভাবনার সৃষ্টিও আমাদের করে যেতে হবে। গৃহ নির্মাণ প্রযুক্তি থেকে নগরোন্নয়ন – প্রতিটি ক্ষেত্রেই নতুন নতুন সমাধানের পথ আমাদের খুঁজে বের করতে হবে।

PG/SKD/DM



(Release ID: 1903357) Visitor Counter : 166