অর্থমন্ত্রক
azadi ka amrit mahotsav

আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রে মহামারী এবং রাশিয়া-ইউক্রেন সংঘাতের মতো পরিস্থিতির অবসান হলেই আগামী দশকে ভারতীয় অর্থনীতির আরও দ্রুত প্রবৃদ্ধি হবে

Posted On: 31 JAN 2023 1:58PM by PIB Kolkata

নয়াদিল্লি, ৩১ জানুয়ারি, ২০২৩


২০১৪-২২ সময়কালে ভারতীয় অর্থনীতিতে ব্যাপক হারে সংস্কার হয়েছে। যার ফলে, সার্বিকভাবে দক্ষতা বৃদ্ধি পেয়েছে। কেন্দ্রীয় অর্থ ও কর্পোরেট বিষয়ক মন্ত্রী শ্রীমতী নির্মলা সীতারমন আজ ২০২২-২৩ সময়কালের অর্থনৈতিক সমীক্ষা সংসদে পেশ করার সময় জানান যে সহজ জীবনযাত্রা এবং সহজে ব্যবসা-বাণিজ্য করার ওপর গুরুত্ব দিয়ে বিভিন্ন সংস্কারমূলক উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়েছে। এর ফলে, জনকল্যাণের পাশাপাশি আস্থাশীল প্রশাসন, উন্নয়নে বেসরকারি অংশীদারিত্ব এবং কৃষিক্ষেত্রে উৎপাদন বৃদ্ধি নিশ্চিত হবে।

সমীক্ষায় বলা হয়েছে যে অর্থনীতির কিছু কিছু ক্ষেত্রে প্রতিকূল পরিস্থিতির জন্য সংস্কারমূলক উদ্যোগগুলির যথাযথভাবে সুফল পাওয়া যায়নি। তবে, বর্তমান দশকে শক্তিশালী মধ্যবর্তী উন্নয়নমূলক কিছু উদ্যোগের ফলে অর্থনীতিতে আশার সঞ্চার হয়েছে। ধারণা করা হচ্ছে যে মহামারী এবং ২০২২ সালে বিভিন্ন পণ্যসামগ্রীর মূল্য বৃদ্ধির সমস্যা দূর হলে ভারতীয় অর্থনীতির আগামী দশকে দ্রুত হারে প্রবৃদ্ধি হবে।

সমীক্ষা অনুযায়ী, ২০১৪ সালের আগে যেসব সংস্কারমূলক উদ্যোগ নেওয়া হয়েছিল তার ফলে উৎপাদন এবং মূলধন ক্ষেত্রে যথেষ্ট সুবিধা হয়েছে। ২০১৪ সালের পরেও সেই উদ্যোগগুলি অব্যাহত রয়েছে। বর্তমান সরকার গত আট বছর ধরে সংস্কারে নতুন মাত্রা নিয়ে এসেছে যার মূল উদ্দেশ্য হল জনকল্যাণ নিশ্চিত করা, আস্থাশীল প্রশাসনিক ব্যবস্থা কার্যকর করা, উন্নয়নের ক্ষেত্রে বেসরকারি প্রতিষ্ঠানকে যুক্ত করা এবং কৃষিক্ষেত্রে উৎপাদন বাড়ানো। সমীক্ষায় বলা হয়েছে ‘সবকা সাথ, সবকা বিকাশ’-এর ভাবনায় উন্নয়নযজ্ঞে বিভিন্ন অংশীদারদের যুক্ত করতে হবে।

সমীক্ষা অনুযায়ী, গত কয়েক বছরে দেশের পরিকাঠামো গড়ে তোলার ক্ষেত্রে বিশেষ অগ্রাধিকার দেওয়া হচ্ছে। হিসাবনিকাশ সংক্রান্ত বিভিন্ন সমস্যার কারণে আর্থিক নয় এ ধরনের কর্পোরেট সংস্থার বিনিয়োগে সমস্যা রয়েছে। তাই, সরকার এমন এক মঞ্চ গড়ে তুলছে যেখানে আগামী দশকে বেসরকারি সংস্থাগুলি উন্নয়নের জন্য বিনিয়োগ করতে পারবে। এক্ষেত্রে ডিজিটাল নয়, এ ধরনের সংস্থাগুলিকে বিভিন্ন প্রক্রিয়ায় যুক্ত করা হচ্ছে। এক্ষেত্রে সম্ভাব্য অর্থনৈতিক বিকাশে ডিজিটাল প্রক্রিয়াকে আরও শক্তিশালী করা হচ্ছে। উচ্চতর ক্ষেত্রে আর্থিক সমন্বয়, অধিক নীতি প্রণয়ন এবং দক্ষতা বৃদ্ধির ফলে বিভিন্ন ক্ষেত্রে সুযোগ বাড়ছে।

সমীক্ষায় বলা হয়েছে যে সরকার এবং নাগরিক / ব্যবসায়ীদের মধ্যে আস্থা গড়ে ওঠায় দক্ষতা বেড়েছে। এর মূল কারণ বিনিয়োগে আগ্রহ বৃদ্ধি, সহজে ব্যবসা-বাণিজ্যের সুযোগ এবং সক্রিয় প্রশাসন। দেউলিয়া বিধি এবং রিয়েল এস্টেট নিয়ন্ত্রণ ও উন্নয়ন আইনে সংস্কার, ২০১৩ সালের নতুন কোম্পানি আইন এবং ২৫ হাজার সাবেক বিধি-নিষেধ ও ১,৪০০ পুরনো আইন বাতিলের ফলে দেশে সহজে ব্যবসা-বাণিজ্য করার এক পরিবেশ গড়ে উঠেছে। সুসংহত জিএসটি, কর্পোরেট কর হ্রাস, সভরিন ওয়েলথ ফান্ড-এ ছাড় এবং পেনশন তহবিলকে কর-এর থেকে ছাড় দেওয়ার ফলে ব্যক্তিবিশেষ ও শিল্প সংস্থাগুলির ওপর থেকে অহেতুক কর-এর বোঝা কমেছে।

২০১৪ সালের পর সরকারের নীতি অনুযায়ী, দেশের উন্নয়নযজ্ঞে বেসরকারি সংস্থাগুলিকে যুক্ত করা হয়েছে। আত্মনির্ভর ভারতের জন্য নতুন রাষ্ট্রায়ত্ত উদ্যোগ নীতি কার্যকর হওয়ায় শুধু কিছু কৌশলগত ক্ষেত্র ছাড়া অন্যান্য ক্ষেত্রের রাষ্ট্রায়ত্ত সরকারি সংস্থার উপস্থিতি কমানো হয়েছে। যার ফলে দক্ষতা বেড়েছে। ২০২২-এর জাতীয় লজিস্টিক্স নীতি কার্যকর হওয়ায় পণ্য চলাচলের মূল্য হ্রাস হয়েছে। প্রত্যক্ষ বিদেশি বিনিয়োগ নীতি উদার হওয়ায় গত দশকে ভারতে বিদেশি বিনিয়োগ বৃদ্ধি পেয়েছে। প্রতিরক্ষা, খনি, মহাকাশের মতো কৌশলগত ক্ষেত্রগুলি বেসরকারি সংস্থার জন্য উন্মুক্ত করে দেওয়ায় ব্যবসা-বাণিজ্যের সম্ভাবনা বৃদ্ধি পেয়েছে। অণু, ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্পোদ্যোগ সংক্রান্ত নীতির প্রয়োজনীয় সংস্কারসাধনের ফলে সংশ্লিষ্ট সংস্থার বিকাশে সুবিধা হয়েছে।

সমীক্ষায় বলা হয়েছে যে গত ছ’বছরে ভারতের কৃষিক্ষেত্রের বিকাশের বার্ষিক গড় হার ৪.৬ শতাংশ। সংশ্লিষ্ট সময়কালে ভালো বৃষ্টি হওয়া ছাড়াও সরকারের বিভিন্ন সংস্কার কার্যকর করার ফলে কৃষি পণ্যের উৎপাদন বেড়েছে। সয়েল হেলথ কার্ড, ক্ষুদ্র সেচ তহবিল এবং জৈব ও প্রাকৃতিক পদ্ধতিতে কৃষিকাজে উৎসাহদানের ফলে কৃষকরা তাঁদের সম্পদের সর্বোচ্চ ব্যবহার করতে পারছেন এবং কৃষিকাজে ব্যয় হ্রাস পেয়েছে। কৃষি পরিকাঠামো তহবিল, কৃষি পণ্য উৎপাদক সংগঠন (এফপিও) এবং জাতীয় কৃষি বাজার (ই-ন্যাম)-এর মতো বিভিন্ন ব্যবস্থাপনায় কৃষকদের ক্ষমতা বৃদ্ধি পেয়েছে। পচনশীল কৃষি পণ্য পরিবহণের জন্য কিষাণ রেল সহায়ক হয়েছে। সমীক্ষা অনুযায়ী এর ফলে সার্বিকভাবে কৃষি পণ্যের উৎপাদন বেড়েছে এবং মধ্যবর্তী পর্যায়ে আর্থিক বিকাশে যা সহায়ক হয়েছে।

অর্থনৈতিক সমীক্ষায় বলা হয়েছে যে ১৯৯৮ থেকে ২০০৪ সময়কালে বিভিন্ন সংস্কারমূলক উদ্যোগ গৃহীত হলেও তার যথাযথ ফলাফল পাওয়া যায়নি। এর জন্য আন্তর্জাতিক কিছু বিষয়ের পাশাপাশি অভ্যন্তরীণ আর্থিক ক্ষেত্রও দায়ী। ২০০৩ সালে যখন এইসব সমস্যার থেকে নিষ্কৃতি পাওয়া গেছে তার পর ভারত আন্তর্জাতিক স্তরে অর্থনৈতিক বিকাশে শরিক হয়েছে। একইভাবে, মহামারী এবং গত বছর মূল্য বৃদ্ধির ফলে বিশ্বজুড়ে যে সঙ্কট দেখা দিয়েছে, ভারতীয় অর্থনীতিতেও তার প্রভাব পড়েছে।

অর্থনৈতিক সমীক্ষায় বলা হয়েছে, মহামারীর ফলে স্বাস্থ্যক্ষেত্রে এবং আর্থিক ক্ষেত্রে প্রতিকূল পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে। ২০২২ সালে বিভিন্ন পণ্যসামগ্রীর মূল্য বৃদ্ধির ফলে পরিস্থিতি খানিকটা জটিল হয়েছে। তবে, ভারতীয় অর্থনীতি যথেষ্ট সুবিধাজনক অবস্থায় রয়েছে। আশা করা যায়, আগামী দশকে ২০০৩-এর পরবর্তী সময়কালের মতো তার সুফল পাওয়া যাবে। ব্যাঙ্কিং, নন-ব্যাঙ্কিং এবং কর্পোরেট ক্ষেত্রের স্বাস্থ্যকর হিসাবনিকাশ এবং নতুন ঋণ ব্যবস্থাপনার মতো বিভিন্ন উদ্যোগের ফলে সাম্প্রতিক মাসগুলিতে ব্যাঙ্ক ঋণের ক্ষেত্রে দুই সংখ্যার বিকাশ নজরে আসছে। এর ফলে আশা করা যায়, মহামারীর আগের সময়কালের থেকেও আগামীদিনে ভারতের বিকাশ আরও বৃদ্ধি পাবে।

সমীক্ষায় আরও বলা হয়েছে যে ডিজিটাল পদ্ধতিতে সংস্কার এবং বৃহৎ পরিসরে নিয়ম-নীতির পরিবর্তন, আর্থিক সমন্বয় ও নতুন নতুন সুযোগ তৈরি হওয়ায় মধ্যবর্তী পর্যায়ে ভারতের আর্থিক উন্নয়ন পরিলক্ষিত হবে। সরকারের দক্ষতা সংক্রান্ত উদ্যোগের পাশাপাশি এইসব সংস্কারমূলক প্রয়াস গৃহীত হওয়ার ফলে আগামীদিনগুলিতে তার সুফল পাওয়া যাবে।

বিশ্বজুড়ে রাজনৈতিক পরিস্থিতির পর্যালোচনা করে সমীক্ষায় বলা হয়েছে, বৈচিত্র্যপূর্ণ আন্তর্জাতিক সরবরাহ শৃঙ্খলের সুফল ভারত ভবিষ্যতে পেতে পারে। গত কয়েক বছরে আন্তর্জাতিক স্তরে ব্যবসা-বাণিজ্যের সঙ্কট, মহামারীর ফলে সরবরাহ শৃঙ্খলে ব্যাঘাত ঘটা এবং ইউরোপে সঙ্কটের ফলে বহুজাতিক সংস্থাগুলি অভূতপূর্ব ঝুঁকির সম্মুখীন। এই পরিস্থিতিতে বিভিন্ন নীতি কার্যকর করার মধ্য দিয়ে অন্যান্য দেশের তুলনায় মূলধনে বৈচিত্র্য আনা সম্ভব হয়েছে এবং এর ফলে ভারত নির্ভরযোগ্য গন্তব্য হয়ে উঠেছে।

এর ফলে আশা করা যায় ভারতের অর্থনৈতিক বিকাশ প্রাক্‌-মহামারীর সময়কালের তুলনায় বেশি হবে এবং মধ্যবর্তী পর্যায়ে ভারতীয় অর্থনীতির উন্নয়নের যথেষ্ট সম্ভাবনা রয়েছে।

 

PG/CB/DM/


(Release ID: 1895095) Visitor Counter : 458