প্রধানমন্ত্রীরদপ্তর

মালদ্বীপের সরকারি সফরে জনতার মজলিস-এ প্রধানমন্ত্রীর ভাষণের বঙ্গানুবাদ

Posted On: 08 JUN 2019 2:59PM by PIB Kolkata

নয়াদিল্লি,  ৮ জুন, ২০১৯

জনতার মজলিস-এর মাননীয় অধ্যক্ষ, মালদ্বীপের প্রাক্তন রাষ্ট্রপতি এবং আমার অভিন্ন হৃদয় বন্ধু শ্রী মহম্মদ নাসিদ,

জনতার মজলিস-এর সম্মানীয় সদস্যবৃন্দ

মাননীয়গণ,

বিশিষ্ট অতিথিবৃন্দ,

নমস্কার (শুভ সন্ধ্যা),

১৩০ কোটির ভারতীয়ের হয়ে এবং আমার তরফ থেকে আপনাদেরকে শুভেচ্ছা জানাই। পবিত্র উৎসব ইদল ফিতরের হর্ষ এবং উন্মাদনা এখন আমাদের মধ্যে রয়েছে। এই উপলক্ষে আপনাদেরকে এবং মালদ্বীপের সাধারণ মানুষকে আমি আমার আন্তরিক শুভেচ্ছা জানাচ্ছি।

মাননীয় অধ্যক্ষ,

মালদ্বীপ হাজারটি দ্বীপের মালা। কেবলমাত্র ভারত মহাসাগরীয় এলাকাতেই নয়, সারা বিশ্বেই এ এক বিরল রত্ন। শত শত বছর ধরে এই অপার সৌন্দর্য্য এবং প্রাকৃতিক সম্পদ আকর্ষণের এক কেন্দ্রবিন্দু হয়ে রয়েছে। প্রাকৃতিক শক্তির বিরুদ্ধে মানুষের অদম্য সাহসিকতার এক উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত হল এই দেশ। বাণিজ্য, মানুষ এবং সংস্কৃতি এক নিরলস ধারার সাক্ষ্য হল মালদ্বীপ। এবং মালে এই অসাধারণ রাজধানী নীল সাগরে পর্যটকদের এক প্রবেশদ্বারই কেবল নয় স্থায়ী, শান্তিপূর্ণ এবং সমৃদ্ধ ভারত মহাসাগরীয় এলাকা সারা বিশ্বের কাছে মূল আকর্ষণের কেন্দ্রবিন্দু।

মাননীয় অধ্যক্ষ,

এই বিশিষ্ট মজলিসে এবং মালদ্বীপে আপনাদের সঙ্গে মিলিত হওয়ার সুযোগ পেয়ে আমি অপরিসীম আনন্দিত এবং গর্বিত। মিঃ নাসিদ অধ্যক্ষ হিসেবে নির্বাচিত হওয়ার পর মজলিস তার প্রথম বৈঠকে সর্বসম্মতভাবে আমাকে আমন্ত্রণ জানানোয় আমি সৌভাগ্যবান বোধ করছি। আপনাদের এই অভিপ্রায় প্রত্যেক ভারতীয়ের হৃদয় ছুঁয়ে গেছে এবং তাদের গর্ব ও সম্মানকে বাড়িয়েছে। এজন্য মাননীয় অধ্যক্ষ এই বিশিষ্ট সভার সমস্ত সদস্যবৃন্দকে আমি আমার তরফ থেকে এবং সমগ্র ভারতের তরফ থেকে আন্তরিক ধন্যবাদ জানাচ্ছি।

মাননীয় অধ্যক্ষ,

মালদ্বীপে এটা আমার দ্বিতীয় সফর এবং বস্তুতপক্ষে এই নিয়ে দ্বিতীয়বার আমি মজলিসে ঐতিহাসিক কার্য-বিবরণী প্রত্যক্ষ করছি। গত নভেম্বরে রাষ্ট্রপতি সোলির শপথ গ্রহণ অনুষ্ঠানে উপস্থিত থাকতে পেরে আমি নিজেকে গভীরভাবে আনন্দিত এবং সৌভাগ্যবান মনে করেছি। উন্মুক্ত স্টেডিয়ামে হাজার হাজার মানুষের মধ্যে এই  অনুষ্ঠান আয়োজন করা হয়। এটা ছিল গণতন্ত্রের এক ঐতিহাসিক জয় এবং এতে নিহিত ছিল আস্থা, সাহস এবং প্রত্যয়। এই উদযাপন অনুষ্ঠান এক অপরিসীম অভিজ্ঞতা। মালদ্বীপে প্রকৃত গণতন্ত্রের শক্তিকে প্রথম দফায় আমি প্রত্যক্ষ করেছি এবং গণতন্ত্রের প্রতি মালদ্বীপের সাধারণ মানুষদের আত্মত্যাগ এবং নিষ্ঠা তদুপরি আপনাদের মতো নেতৃত্বের প্রতি তাদের সম্মান এবং ভালোবাসার তা ছিল এক প্রত্যক্ষ প্রমাণ। এবং আজ মালদ্বীপের গণতন্ত্রের পতাকা বাহকদের প্রতি আমি আমার অভিবাদন জানাচ্ছি।

মাননীয় অধ্যক্ষ,

এই মজলিস, এই বাড়ি কেবলমাত্র ইঁট-পাথরের একটি নির্মাণ গৃহ নয়, এটা মানুষদের এক সাধারণ সম্মেলনও নয়, এটা গণতন্ত্রের শক্তির এক আধার। এই গৃহে প্রত্যেক সদস্যের চিন্তা এবং তাদের কথায় জাতির মর্মধ্বনি এবং হৃদয়বার্তা ধ্বনিত হয়। এখানে সাধারণ মানুষের স্বপ্ন এবং আকাঙ্খা আপনাদের প্রচেষ্টার মাধ্যমে সফলতা অর্জন পায়। এখানে বিভিন্ন মতাদর্শ এবং বিভিন্ন দলের সদস্য দেশের শান্তি, উন্নয়ন এবং গণতন্ত্রের স্বার্থে তাদের সম্মিলিত সদ্দিচ্ছাকে এক সার্থক সফলতা দান করে।

এই একইরকমভাবে কয়েক মাস আগে মালদ্বীপের সাধারণ মানুষ যৌথভাবে সারা বিশ্বের কাছে গণন্ত্রের এক উজ্জ্বল নির্দশন উপহার দিয়েছে। আপনাদের এই যাত্রাপথ ছিল চ্যালেঞ্জপূর্ণ। কিন্তু মালদ্বীপ দেখিয়েছে এবং আপনারা দেখিয়েছেন যে মানুষই শেষ পর্যন্ত জয়লাভ করে। এটা কোনো সাধারণ সাফল্য নয়, সারা বিশ্বের গণতন্ত্রের শক্তির কাছে আপনাদের এই সাফল্য এক বিরাট প্রেরণা স্বরূপ। এবং মালদ্বীপের এই সাফল্যে সব থেকে গর্বিত এবং খুশি কে হতে পারে? উত্তর অবশ্যম্ভাবী।

এটা অবশ্যই আপনাদের ঘনিষ্ঠতম বন্ধু এবং প্রতিবেশী। পৃথিবীর বৃহত্তম গণতন্ত্র ভারত। আজ এই বিশিষ্ট সম্মেলনে আমি জোরের সঙ্গে জানাতে চাই যে ভারত এবং সমগ্র ভারতবাসী মালদ্বীপের গণতন্ত্রকে শক্তিশালী করতে সব সময় আপনাদের সঙ্গে ছিল এবং আপনাদের সঙ্গে থাকবে।

মাননীয় অধ্যক্ষ,

ভারতেও মানবতার ইতিহাসে গণতন্ত্রের সবথেকে বড় পরীক্ষা আমরা সম্পূর্ণ করেছি। ১৩০ কোটি ভারতীয়ের এটা কোনো সাধারণ নির্বাচন ছিল না। গণতন্ত্রের মহান উৎসবে এটা এক বড় উদযাপন। যোগ্য ভোটারদের দুই তৃতীয়াংশের বেশি যা কি না ৬০ কোটিরও বেশি মানুষ ভোট দিয়েছে এবং উন্নয়ন ও স্থায়িত্বের প্রতি অকুন্ঠ রায় দিয়েছে।

মাননীয় অধ্যক্ষ,

আমার সরকারের মূল মন্ত্র হল; “সবকা সাথ, সবকা বিকাশ এবং সবকা বিশ্বাস” (সরলে একত্রে, সকলের উন্নয়নে এবং সকলের বিশ্বাস নিয়ে) কেবল ভারতের জন্য নয়, এটা আমার সরকারের বিদেশ নীতি এবং সারা বিশ্বের প্রতি বিশেষত আমাদের প্রতিবেশীদের প্রতি আমার সরকারের পরাকাষ্ঠা।

আমাদের প্রাধান্যের তালিকায় হল ‘প্রতিবেশী প্রথম’ এবং এই প্রতিবেশীদের মধ্যে মালদ্বীপ অগ্রাধিকারের জায়গা। এরফলে আজ যে আমি আপনাদের মধ্যে এটা কাকতালীয় কোনো ঘটনা নয়।

গত বছর ডিসেম্বরে রাষ্ট্রপতি সোলি প্রথম দেশ হিসেবে ভারত সফর করেন এবং এখন মালদ্বীপের পক্ষ থেকে আন্তরিক আমন্ত্রণ আমাকে এখানে নিয়ে এসেছে। এবার প্রধানমন্ত্রী হয়ে এটাই আমার প্রথম বিদেশ সফর। কিছুক্ষণ আগে বিদেশীদের জন্য মালদ্বীপে সর্বোচ্চ নাগরিক সম্মান রাষ্ট্রপতি সোলি আমাকে দেওয়ায় আমি সৌভাগ্যবান। আমি আমার কৃতজ্ঞতা জানানোর ভাষা খুঁজে পাচ্ছি না।

মাননীয় অধ্যক্ষ,

ভারত এবং মালদ্বীপের সম্পর্ক ইতিহাসের থেকেও প্রাচীন। অনন্তকাল ধরে সাগরের নীল জল আমাদের তীরোভূমি ধুয়েছে। আমাদের সংস্কৃতি এবং সভ্যতা তাদের দ্বারা বিকশিত হয়েছে। সমুদ্রের মতো গভীর এবং অপরিসীম আমাদের সম্পর্ক আর্শিবাদধন্য হয়েছে। কয়েক সহস্র বছর ধরে আমার নিজের রাজ্য গুজরাট সহ ভারত এবং মালদ্বীপের মধ্যে বাণিজ্য প্রসারলাভ করেছে। আড়াই হাজার বছরেরও বেশি সময় আগে মালদ্বীপ লোথালের সঙ্গে বাণিজ্য করতো যা বিশ্বে সর্বাধিক প্রাচীন বন্দর হিসেবে পরিচিত। ফলে আমাদের শহর সুরাটের সঙ্গেও বাণিজ্য সম্পর্ক চলে। এবং ভারতীয় শিশুরাও মালদ্বীপের কড়িকে সম্পদ হিসেবে রক্ষা করে। সঙ্গীত, বাদ্যযন্ত্র, রীতি এবং প্রথাগত দিক থেকে আমাদের পারস্পরিক ঐতিহ্যের উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত।

দিভেহি ভাষাকে উদাহরণ হিসেবে ধরা যাক। ‘উইক’কে ভারতে ‘হপ্তা’ বলা হয়। এমনকি দিভেহিতেও তাই। সপ্তাহের দিনগুলির নামই ধরা যাক। ‘সানডে’ দিভেহিতে ‘আদিথ্য’ যা আদিত্য বা সূর্যের সম্পর্কিত। ‘মানডে’কে বলা ‘হোমা’ যা ‘সোমা’ বা চাঁদের অনুরূপ।

এ রকম অনন্ত উদাহরণ রয়েছে। আমি বলতে থাকলে আস্ত অভিধান হয়ে যাবে।

মালদ্বীপের বাইরে এ রকম আর কোথাও প্রবাল মসজিদ নেই। হাজার বছর আগে জ্ঞানী মালদ্বীপবাসী সমুদ্রের সম্পদ দিয়ে এই অমূল্য স্থাপত্য নির্মাণ করেছে। এটা প্রকৃতির সঙ্গে তাদের যে সম্প্রীতি এবং শ্রদ্ধার নিদর্শন স্বরূপ।

দুঃখের বিষয় দূষণের কারনে আজ এই সমুদ্র সম্পদ বিপর্যের মুখে দাঁড়িয়ে। এই প্রবাল মসজিদের সংরক্ষণ প্রকৃতি সংরক্ষণের জন্য সারা বিশ্বের কাছে এক বার্তাবহ।

মাননীয় অধ্যক্ষ,

স্বাধীনতা, গণতন্ত্র, সমৃদ্ধি এবং শান্তির স্বার্থে ভারত মালদ্বীপের সঙ্গে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে চলেছে। ১৯৮৮ সালের ঘটনায় হোক বা ২০০৪ সালে সুনামির মতো প্রাকৃতিক বিপর্যয় হোক, অথবা অতি সাম্প্রতিক কালে জল সঙ্কটই হোক না কেন, আমরা সবসময় সমস্ত সময়, প্রতি মুর্হুতে আপনাদের পাশে দাঁড়িয়ে আপনাদের প্রচেষ্টার প্রতি সমর্থন জানিয়ে গর্ববোধ করে থাকি। রাষ্ট্রপতির সোলে-র ভারত সফরে আমাদের যে সিদ্ধান্ত হয়েছিল ১৪০ কোটি মার্কিন ডলার আর্থিক প্যাকেজ রূপায়ণের জন্য সে ব্যাপারে আশাপ্রদ উন্নতি হয়েছে।

ভারতের সহযোগিতা সবসময় মালদ্বীপের অগ্রাধিকার এবং তাদের প্রয়োজনের দিকে তাকিয়ে এবং সেখানকার সাধারণ মানুষের কল্যাণকে মূল লক্ষ্য করা হয়েছে।

মাননীয় অধ্যক্ষ,

আমরা যখন আমাদের দ্বিপাক্ষিক সমন্বয়কে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছি তখন আজ আমাদের চারিদিকে যে গুরুত্বপূর্ণ চ্যালেঞ্জ এবং অপরিসীম অনিশ্চয়তা রয়েছে সে ব্যাপারেও আমাদের সতর্ক হওয়া দরকার। প্রযুক্তির অগ্রগতির সঙ্গে সঙ্গে উদ্ভুত চ্যালেঞ্জ এবং বিঘ্ন দেখা দিচ্ছে। প্রতিযোগিতা, প্রতিদ্বন্দ্বিতা এবং বহুমেরু বিশ্বে অর্থনৈতিক এবং কৌশলগত ভর কেন্দ্রের যে বদল ঘটছে তার ফলে বিভিন্ন সমস্যার সৃষ্টি হচ্ছে। এর ফলে আমাদের দু-দেশের ক্ষেত্রে মূল তিনটি বিষয়ের ওপর আমি আলোকপাত করতে চাই।

মাননীয় অধ্যক্ষ,

আমাদের সময় সন্ত্রাসবাদ সব থেকে বড় চ্যালেঞ্জ হিসেবে আত্মপ্রকাশ করেছে। একটি দেশ বা একটি অঞ্চলই নয় সমগ্র মানবতাই এই চ্যালেঞ্জের মুখে দাঁড়িয়ে। এমন একটা দিন যাচ্ছে না যখন সন্ত্রাসবাদের ভয়ঙ্কর মূর্তি কোথাও না কোথাও নিরীহ জীবনকে কেড়ে নিচ্ছে। সন্ত্রাসবাদীদের নিজস্ব ব্যাঙ্ক নেই। তাদের অস্ত্রাগার বা টাঁকশালও নেই। কিন্তু তাদের অর্থ এবং অস্ত্র কেবল সীমিত সময়ের জন্য নয়, তাহলে তারা এগুলো পাচ্ছে কোথায় থেকে? তাদের সুযোগ-সুবিধার যোগান দিচ্ছে কে?

সন্ত্রাসবাদের রাষ্ট্রীয় পৃষ্ঠপোষকতাই হচ্ছে সব থেকে বড় চ্যালেঞ্জ।

আমি সমস্ত অগ্রগণ্য রাষ্ট্রের বৈশ্বিক প্রতিষ্ঠানগুলিকে আহ্বান জানাবো একটা নির্দিষ্ট সময়সীমার মধ্যে সন্ত্রাসবাদ নিয়ে আন্তর্জাতিক সম্মেলন আয়োজন করার। যাতে সন্ত্রাসবাদী এবং তাদের সমর্থকরা যে পৃষ্ঠপোষকতা পাচ্ছে তা নির্মূল করতে সদর্থক এবং ফলপ্রসূ আলোচনা সম্ভব হয়। এ ব্যাপারে যদি আমরা আরো বিলম্ব করি, তাহলে ভবিষ্য প্রজন্ম আমাদের ক্ষমা করবে না।

মাননীয় অধ্যক্ষ,

এরপর আমি বলবো জলবায়ু পরিবর্তনের কথা। আমাদের সময় এটা যে বাস্তব ঘটনা তা নিয়ে কোনো সন্দেহ নেই। নদী শুকিয়ে যাচ্ছে এবং জলবায়ুগত অনিশ্চয়তা আমাদের কৃষি এবং কৃষকদের ওপর গভীর ক্ষতিকর প্রভাব বিস্তার করছে। কিন্তু এর থেকেও বড় কথা হচ্ছে হিমবাহ গলছে, সমুদ্রের জলস্তর বৃদ্ধি বাড়ছে। ফলে মালদ্বীপের মতো দেশগুলির ক্ষেত্রে তা এক বাহ্যিক হূমকি হিসাবে দেখা দিয়েছে। সামুদ্রিক দূষণের ফলে প্রবাল দ্বীপ এবং সমুদ্রের ওপর নির্ভর করে যারা জীবন জীবিকা নির্বাহ করেন তাদের ওপর ভয়ঙ্কর ক্ষতিকর প্রভাব ফেলছে।

জলবায়ু পরিবর্তনের বিরূপ প্রভাব আমরা বদল করতে পারবো না যতক্ষণ না আমরা আমাদের মূল্যবোদ, জীবনশৈলী এবং সামাজিক ক্ষেত্রে পরিবর্তন ঘটাচ্ছি। প্রাচীন ভারতীয় বিশ্বাস হল ধরিত্রী জননী এবং আমরা সকলেই তার সন্তান। আমরা যদি ধরিত্রীকে আমাদের জননী জ্ঞান করে থাকি তাহলে তাঁকে শ্রদ্ধা এবং সংরক্ষণ করা ও তার কোনো ক্ষতি হতে না দেওয়া আমাদের দায়িত্ব। আমাদের মনে রাখতে হবে এই পৃথিবী আমাদের গৃহ। এর উত্তরাধিকারে আমাদের ভবিষ্যৎ প্রজন্মের আস্থা অর্জন করতে হবে।

মাননীয় অধ্যক্ষ,

তৃতীয় বিষয় হল ভারত-প্রশান্ত মহাসাগরীয় এলাকা যেখানকার আমরা অংশীদার। এখানে বিশ্বের ৫০ শতাংশ মানুষ বসবাস করে। ধর্মীয় ক্ষেত্রে সাংস্কৃতিক ভাষা, ইতিহাস, রাজনীতি এবং অর্থনৈতিক ব্যবস্থাপনা, অপরিসীম ভিন্নতা রয়েছে। এটা এমন একটা জায়গা যেখানে বহু প্রশ্নের উত্তর পাওয়া যায়নি এবং বহু বিবাদের মিমাংসা হয়নি। এটা বাণিজ্য এবং সমৃদ্ধির এক বিরাট পথ। সব অর্থেই আমাদের উভয়ের ভবিষ্যতের এটা নির্ণায়ক ক্ষেত্র। সেইজন্য আমি ২০১৮র জুনে সিঙ্গাপুরে বলেছিলাম উন্মুক্ত এলাকা হিসেবে সংহতি বজায় রাখতে এবং ইন্দো-প্রশান্ত মহাসাগরীয় এলাকার ভারসাম্য রক্ষার্থে সকলকে একযোগে কাজ করতে হবে। এর ফলে রাষ্ট্রগুলির মধ্যে বিশ্বাস অর্জন করা সম্ভব হবে এবং বহুমুখী শাসন ব্যবস্থা ন্যায়ের শাসনকে এগিয়ে যাওয়ার পথ তা সুনিশ্চিত করবে।

মাননীয় অধ্যক্ষ,

চার বছর আগে আমি ভারত-মহাসাগরীয় এলাকাকে ভারতের লক্ষ্য এবং দায়বদ্ধতা হিসেবে এসএজিএআর এইভাবে সাজিয়েছিলাম। যার হিন্দি অর্থ হল সমুদ্র। এর অর্থ করলে দাঁড়ায় এই এলাকার সকলের জন্য সুরক্ষা এবং অগ্রগতি নিশ্চিত করা। ইন্দো-প্রশান্ত মহাসাগরীয় এলাকার সহযোগিতার জন্য এটা আমাদের একটা ব্লুপ্রিন্ট। আজ আমি পুনরায় অন্তর্ভুক্তির ওপর জোর দিচ্ছি। এবং আমি পুনরায় জোরের সঙ্গে বলছি ভারত তার সামর্থ এবং শক্তি তার নিজের সমৃদ্ধি এবং সুরক্ষার জন্যই নয়, এই এলাকার সমস্ত দেশের অগ্রগতির স্বার্থে আমরা প্রয়াসী হব এবং বিপর্যয়ের সময় যে কোন মানবিক সাহায্যে আমরা এগিয়ে যাবো। পারস্পরিক সুরক্ষা, সমৃদ্ধি এবং উজ্জ্বল ভবিষ্যতের জন্য কাজ করবো। সক্ষম, সবল এবং সমৃদ্ধ ভারত কেবলমাত্র দক্ষিণ এশীয় এবং ভারত-প্রশান্ত মহাসাগরীয় এলাকার শান্তি, উন্নয়ন এবং সুরক্ষাই নয় সমগ্র বিশ্বের জন্য এক বলিষ্ঠ স্তম্ভ হিসাবে কাজ করবে।

মাননীয় অধ্যক্ষ,

সুপ্রতিবেশী এবং বন্ধু হিসেবে বিশ্বের জন্য আমরা আমাদের আদর্শকে স্থির করি। আমাদের জনসাধারণের আর্থিক, সামাজিক এবং রাজনৈতিক আকাঙ্খা আমাদের পারস্পরিক সহযোগিতার মধ্যে দিয়ে পূর্ণতা লাভ করতে পারে। এলাকার স্থায়িত্ব, শান্তি এবং সুরক্ষার লক্ষ্যে একযোগে কাজ করার ক্ষেত্রপথগুলি হল বিশ্বের সব থেকে গুরুত্বপূর্ণ এই সমুদ্র পথে সুরক্ষাকে সুনিশ্চিত করা। সন্ত্রাসবাদের পতন ঘটানো। আমাদের উপকূলবর্তী এলাকা থেকে উগ্রপন্থা এবং সন্ত্রাসবাদে মদতদানকারী শক্তিগুলিকে দুরে সরিয়ে রাখা। সুস্বাস্থ্য এবং স্বচ্ছ পরিবেশের জন্য প্রয়োজনীয় পরিবর্তন নিয়ে আসা। আমাদের ইতিহাস এবং আমাদের মানুষ চাই যে এই সমস্ত সম্ভাবনাগুলি পূরণ করা সেগুলিকে বিফল হতে না দেওয়া। এই লক্ষ্যে সহযোগিতার জন্য ভারত কৃতসংকল্পবদ্ধ এবং মালদ্বীপের সঙ্গে অমূল্য বন্ধুত্ব এতে আরো গভীরতা পাবে। আমি এই সংকল্পের কথা আজ পুনরায় ব্যক্ত করলাম।

আপনারা আপনাদের মধ্যে আজ আমাকে থাকার সুযোগ দেওয়ায় এবং যে সম্মান আপনারা আমাকে দিয়েছেন সেজন্য আমি ধন্যবাদ জানাই। আপনাদের বন্ধুত্বের জন্য ধন্যবাদ।

অসংখ্য ধন্যবাদ।

PG/AB/NS


(Release ID: 1868532) Visitor Counter : 111