প্রধানমন্ত্রীরদপ্তর

বিশ্বকর্মা জয়ন্তী উপলক্ষে কৌশল দীক্ষান্ত সমারোহে ভিডিও কনফারেন্সিং-এর মাধ্যমে প্রধানমন্ত্রীর ভাষণ

“দক্ষতা সমাবর্তন অনুষ্ঠানের মাধ্যমে শিল্প প্রশিক্ষণ প্রতিষ্ঠানের ৯ লক্ষেরও বেশি পড়ুয়াকে ডিগ্রি প্রদানের মাধ্যমে আজ ইতিহাস সৃষ্টি হ’ল”

“বিশ্বকর্মা জয়ন্তী যাঁরা আক্ষরিক অর্থে কঠোর পরিশ্রম করেন, তাঁদের সম্মান জানানোর দিন, এটি শ্রমিকদের দিবস”

“ভারতে আমরা সর্বদাই দক্ষতা ও শ্রমের দেবতা হিসাবে বিশ্বকর্মা পুজো করি”

“এই শতকের ভারতে দেশের তরুণ প্রজন্মের জন্য শিক্ষার পাশাপাশি, দক্ষতাকে সমান গুরুত্ব দেওয়া প্রয়োজন”

“আইটিআই থেকে কারিগরি প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত দেশের তরুণদের সেনাবাহিনীতে নিয়োগে বিশেষ সংস্থান রয়েছে”

“আইটিআই – এর ভূমিকা বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ। তরুণদের এর সবরকম সুবিধা গ্রহণ করা উচিৎ”

“ভারতের দক্ষতা ক্ষেত্রে বিশেষ গুণগত মান রয়েছে”

“যখন কোনও যুবসম্প্রদায়ের শিক্ষার শক্তির পাশাপাশি, দক্ষতা শক্তিও থাকে, তখন স্বাভাবিকভাবেই তার আত্মবিশ্বাস বেড়ে যায়”

“পরিবর্তিত বিশ্ব পরিস্থিতিতে ভারতের উপর সারা পৃথিবীর আস্থা রয়েছে”

Posted On: 17 SEP 2022 3:57PM by PIB Kolkata

নয়াদিল্লি, ১৭ সেপ্টেম্বর, ২০২২

 

প্রধানমন্ত্রী শ্রী নরেন্দ্র মোদী আজ ভিডিও বার্তায় প্রথম শিল্প প্রশিক্ষণ প্রতিষ্ঠানের কৌশল সমাবর্তন সমারোহে ভাষণ দেন। 

প্রধানমন্ত্রী বলেন, ভারত একুশ শতকের দিকে এগিয়ে চলেছে। আজ এই সমাবর্তন অনুষ্ঠানে শিল্প প্রশিক্ষণ প্রতিষ্ঠানের ৯ লক্ষেরও বেশি পড়ুয়ার ডিগ্রি প্রদানের মাধ্যমে ইতিহাস সৃষ্টি হয়েছে। ৪০ লক্ষেরও বেশি পড়ুয়া ভার্চ্যুয়ালি যুক্ত হয়েছেন। প্রধানমন্ত্রী বলেন, ভগবান বিশ্বকর্মা জয়ন্তীতে যেসব পড়ুয়ারা তাঁদের দক্ষতা উন্নয়নের জন্য এগিয়ে এসেছেন, তাঁদের ধন্যবাদ জানাই। আপনাদের দক্ষতার নবনির্মাণের পথে এটি হ’ল আপনাদের প্রথম পদক্ষেপ। প্রধানমন্ত্রী বলেন, “আমি দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করি, আপনাদের আজকের এই শুরুটা যতটাই সুন্দর হয়েছে, আগামী দিনের যাত্রাপথও আরও বেশি সৃজনশীল হবে। 

বিশ্বকর্মা জয়ন্তী প্রসঙ্গে প্রধানমন্ত্রী বলেন, এটি দক্ষতা বৃদ্ধির অন্যতম উৎসব। বিশ্বকর্মা জয়ন্তীতে পড়ুয়াদের দক্ষতাকে সম্মান ও স্বীকৃতি জানানো হচ্ছে। এটি বিশেষ গর্বের। তিনি বলেন, “যাঁরা আক্ষরিক অর্থেই কঠোর পরিশ্রম করেন, বিশ্বকর্মা জয়ন্তীতে তাঁদের সম্মান জানানোর দিন”। প্রধানমন্ত্রী আরও বলেন, “ভারতবর্ষে আমরা দক্ষতা ও শ্রমের মূর্তি হিসাবে ভগবান বিশ্বকর্মার পুজো করি”। তিনি বলেন, “আজকের এই অনুষ্ঠান হ’ল – ভগবান বিশ্বকে ‘কৌশলাঞ্জলি’ দেওয়ার দিন”।

প্রধানমন্ত্রী গত ৮ বছরে সরকারের বিভিন্ন সাফল্যের কথা উল্লেখ করে বলেন, দেশে অনেক নতুন প্রকল্পের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। ‘শ্রমেব জয়তে’ চিন্তাধারার বাস্তব রূপায়ণের জন্য চেষ্টা চালানো হচ্ছে দক্ষতা উন্নয়নের মাধ্যমে। দেশের তরুণ প্রজন্ম শিক্ষিত হওয়ার পাশাপাশি, দক্ষতা হয়ে ওঠাও বিশেষ জরুরি বলেন তিনি মন্তব্য করেন। সরকার দক্ষতা উন্নয়নকে বিশেষ প্রাধান্য দিচ্ছে এবং দেশে নতুন নতুন প্রতিষ্ঠান গড়ে উঠছে। প্রধানমন্ত্রী বলেন, “১৯৫০ সালে ভারতে প্রথম আইটিআই স্থাপন করা হয়েছিল। পরবর্তী ৭০ বছরে গড়ে তোলা হয়েছে আরও ১০ হাজার আইটিআই। এর মধ্যে আমাদের সরকার গত ৮ বছরে ৫ হাজার নতুন আইটিআই স্থাপন করেছে। ৮ বছরে আইটিআই-গুলিতে ৪ লক্ষেরও বেশি নতুন আসন সংখ্যা বাড়ানো হয়েছে”।

তিনি বলেন, আইটিআই ছাড়াও দেশে জাতীয় দক্ষতা প্রশিক্ষণ প্রতিষ্ঠান, ভারতীয় দক্ষতা প্রতিষ্ঠান এবং হাজার হাজার দক্ষতা উন্নয়ন কেন্দ্র চালু করা হয়েছে। বিদ্যালয় স্তরে দক্ষতা উন্নয়নকে উৎসাহিত করতে সরকার ৫ হাজার দক্ষতা হাব গড়ে তুলবে। নতুন জাতীয় শিক্ষা নীতি কার্যকর হওয়ার পর বিদ্যালয়গুলিতে দক্ষতা উন্নয়ন সংক্রান্ত পাঠক্রমের উপর জোর দেওয়া হচ্ছে।

যেসব পড়ুয়ারা দশম শ্রেণী পাশ করার পর আইটিআই-তে ভর্তি হচ্ছেন, তারা সহজেই জাতীয় মুক্ত বিদ্যালয়ের মাধ্যমে দ্বাদশ শ্রেণীর শংসাপত্র পেতে পারেন বলে জানতে পেরে সন্তোষ প্রকাশ করেন প্রধানমন্ত্রী। যেসব তরুণরা আইটিআই থেকে কারিগরি প্রশিক্ষণ নিচ্ছেন, সেনাবাহিনীতে নিয়োগে তাঁদের বিশেষ সংস্থান রয়েছে। 

চতুর্থ শিল্প বিপ্লব ইন্ডাস্ট্রি ৪.০-র কথা উল্লেখ করে শ্রী মোদী বলেন, দেশের সাফল্যে শিল্প প্রশিক্ষণ প্রতিষ্ঠানগুলি বড় ভূমিকা নেবে। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে চাকরির ধরণ বদলাচ্ছে। তাই সরকার যেসব পড়ুয়ারা আইটিআই-তে প্রশিক্ষণ নিচ্ছেন, তাঁরা যাতে আধুনিক পাঠক্রমের সুযোগ পান, সেদিকে বিশেষ নজর দিয়েছে। কোডিং, এআই, রোবটিক্স থ্রি-ডি প্রিন্টিং, ড্রোন প্রযুক্তি এবং টেলিমেডিসিন সংক্রান্ত পাঠক্রম শুরু হয়েছে আইটিআই-তে। প্রধানমন্ত্রী বলেন, পুনর্নবীকরণযোগ্য শক্তি, সৌরশক্তি এবং বৈদ্যুতিক যানবাহনের ক্ষেত্রে ভারত ক্রমশ এগিয়ে চলেছে। এই সংক্রান্ত অনেক পাঠক্রমই দেশের আইটিআই-গুলিতে চালু করা হচ্ছে। তিনি বলেন, “এর ফলে আপনাদের মতো পড়ুয়াদের কর্মসংস্থানের সুযোগ বাড়বে”। বর্তমানে প্রতিটি গ্রামে অপটিক্যাল ফাইবার পরিষেবা দেওয়ার প্রসঙ্গ উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, গ্রামগুলিতে লক্ষ লক্ষ সাধারণ পরিষেবা কেন্দ্র খোলা হচ্ছে। দেশে প্রযুক্তির প্রসার ঘটছে, বাড়ছে কাজের সুযোগও। গ্রামগুলিতে আইটিআই থেকে পাশ করা পড়ুয়াদের কাজের সুযোগ বৃদ্ধি পাচ্ছে”। “গ্রামে মোবাইল মেরামতির কাজ বা কৃষি ক্ষেত্রে নতুন প্রযুক্তির ব্যবহার কিংবা জমিতে সার দেওয়া, ড্রোনের সাহায্যে ওষুধ সরবরাহের মতো নানা নতুন ধরনের কাজ গ্রামীণ অর্থনীতিতে যুক্ত হচ্ছে”। প্রধানমন্ত্রী বলেন, “আইটিআই-গুলির ভূমিকা এক্ষেত্রে বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ। আমাদের তরুণদের উচিৎ এগুলির যথাযথ সুফল গ্রহণ করা”। আইটিআই-গুলির মানোন্নয়নের জন্য সরকার অবিরাম কাজ করে চলেছে বলেও তিনি উল্লেখ করেন। 

দক্ষতা উন্নয়নের পাশাপাশি, তরুণদের ‘সফট স্কিল’ বাড়ানো জরুরি বলেও প্রধানমন্ত্রী মন্তব্য করেন। উদাহরণ হিসাবে তিনি বলেন, ব্যবসার পরিকল্পনা করা, ব্যাঙ্ক থেকে ঋণ নেওয়ার পরিকল্পনা, জরুরি নথিপত্র পূরণ করা কিংবা নতুন কোম্পানীর নথিভুক্তিকরণ – এই সবকিছু পাঠক্রমের অন্তর্গত। সরকারের এই প্রচেষ্টার ফলে ভারতে দক্ষতার মানোন্নয়ন হয়েছে। “বিগত কয়েক বছরে আমাদের আইটিআই থেকে পাশ করা ছাত্রছাত্রীরা বিশ্ব দক্ষতা প্রতিযোগিতায় নানা ধরনের বড় বড় পুরস্কার পেয়েছেন”। 

দক্ষতা উন্নয়ন প্রসঙ্গে প্রধানমন্ত্রী বলেন, কোনও একজন তরুণের যখন শিক্ষার শক্তির পাশাপাশি, দক্ষতা শক্তিও থাকে, তখন স্বাভাবিকভাবেই সে তাঁর আত্মবিশ্বাস বেড়ে যায়। দেশের তরুণ প্রজন্ম যখন দক্ষ হয়ে ওঠেন, তখন তাঁদের যে কোনও কাজ শুরুর বিষয়ে স্পষ্ট ধারণা থাকে এবং স্বরোজগারের উদ্দীপনাও থাকে। প্রধানমন্ত্রী মুদ্রা যোজনা, স্টার্টআপ ইন্ডিয়া ও স্ট্যান্ডআপ ইন্ডিয়ার মতো প্রকল্পগুলির কথা উল্লেখ করেন।

শ্রী মোদী বলেন, “লক্ষ্য আপনার সামনে, তা পূরণের জন্য আপনাকে সঠিক দিশায় পৌঁছতে হবে। আজ দেশ আপনার হাত ধরেছে, আগামীতে আপনাকে দেশকে এগিয়ে নিয়ে যেতে হবে”। প্রত্যেকের দৃষ্টি আকর্ষণ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, আজাদি কা অমৃত কাল অর্থাৎ আগামী ২৫ বছর আমাদের জীবন ও দেশের ভবিষ্যতের জন্য বিশেষ জরুরি। তিনি বলেন, “আপনারা সকলে ‘মেক ইন ইন্ডিয়া’ এবং ‘ভোকাল ফর লোকাল’ প্রচারাভিযানের নেতা। আপনারা ভারতের শিল্প ক্ষেত্রের মেরুদন্ড। তাই, আত্মনির্ভর ভারত গড়ে তোলার স্বপ্ন পূরণে আপনাদের বড় ভূমিকা রয়েছে”। 

বিশ্ব স্তরে সম্ভাবনার বিষয় উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, বিশ্বের অনেক দেশেরই তাদের স্বপ্ন পূরণ ও উন্নয়নের গতি অব্যাহত রাখার জন্য দক্ষ কর্মী গোষ্ঠীর প্রয়োজন। তাই, দেশ ও দেশের বাইরেও অপার সম্ভাবনা অপেক্ষা করছে। তিনি বলেন, “পরিবর্তিত বিশ্ব পরিস্থিতিতে ভারতের উপর সারা বিশ্বের আস্থা অবিরাম বেড়ে চলেছে। এমনকি, করোনা পরিস্থিতিতেও ভারত দেখিয়েছে, কি করে দেশের দক্ষ কর্মী গোষ্ঠী ও তরুণ সম্প্রদায় কিভাবে চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করতে পারে। শ্রী বলেন, ভারতীয়রা প্রতি ক্ষেত্রেই দক্ষতা ও মেধার মাধ্যমে বিশ্ব বাজারে বিশেষ চিহ্ন রেখে চলেছে। স্বাস্থ্য পরিষেবা, ডিজিটাল সমাধান বা বিপর্যয় মোকাবিলা – সব ক্ষেত্রেই এগিয়ে ভারত। 

প্রধানমন্ত্রী তাঁর ভাষণের শেষে বলেন, অবিরাম দক্ষতার মানোন্নয়ন ঘটাতে হবে। এটিই হবে ভবিষ্যতের ভিত্তি। শ্রী মোদী বলেন, “যখন দক্ষতার প্রশ্ন আসে, তখন আপনার মন্ত্র হবে ‘স্কিলিং, রিস্কিলিং এবং আপ-স্কিলিং’ অর্থাৎ ‘দক্ষতা, পুনর্দক্ষতা এবং আরও দক্ষতা’”! প্রধানমন্ত্রী পড়ুয়াদের নতুন নতুনভাবে দক্ষ হয়ে ওঠার ও তাদের জ্ঞান অন্যদের সঙ্গে ভাগ করে নেওয়ার আহ্বান জানান। তিনি বলেন, “আমি নিশ্চিত, আপনারা আপনাদের দক্ষতার মাধ্যমে উন্নয়নের এই গতিকে এগিয়ে নিয়ে যাবেন এবং নতুন ভারতকে উন্নত ভবিষ্যতের সঠিক দিশা দেখাবেন”।

 

PG/PM/SB



(Release ID: 1860211) Visitor Counter : 116