প্রধানমন্ত্রীরদপ্তর

হরিয়ানার পানিপথ-এ টু-জি ইথানল প্ল্যান্টের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রীর ভাষণ

Posted On: 10 AUG 2022 7:31PM by PIB Kolkata

নয়াদিল্লি, ১০ আগস্ট ২০২২

 

নমস্কার,

হরিয়ানার রাজ্যপাল শ্রী বন্ডারু দত্তাত্রেয়জি, কেন্দ্রীয় মন্ত্রিসভায় আমার সহযোগী শ্রী নরেন্দ্র সিং তোমরজি, শ্রী হরদীপ সিং পুরীজি, শ্রী রামেশ্বর তেলিজি, উপস্থিত সাংসদগণ, উপস্থিত হরিয়ানা বিধানসভার বিধায়কগণ আর এই সভাস্থলে বিপুল সংখ্যায় আগত আমার পানিপথ-এর কৃষক ভাই ও বোনেরা, এই কর্মসূচির সঙ্গে যুক্ত অন্যান্য সকল মাননীয় ব্যক্তিবর্গ, ভদ্রমহিলা ও ভদ্রমহোদয়গণ, আপনাদের সবাইকে বিশ্ব জৈব জ্বালানি দিবস উপলক্ষে অনেক অনেক শুভকামনা!

আজকের অনুষ্ঠান পানিপথ তথা হরিয়ানা সহ গোটা দেশের কৃষকদের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এই যে পানিপথে আধুনিক ইথানলের প্ল্যান্ট চালু হয়েছে, এখানে জৈব জ্বালানি উৎপাদনের জন্য এই প্ল্যান্ট গড়ে উঠেছে, তা একটি সূত্রপাত মাত্র। এই প্ল্যান্ট দিল্লি-এনসিআর এবং গোটা হরিয়ানায় বায়ু দূষণ কমাতে একটি সহায়ক ভূমিকা পালন করবে। আমি হরিয়ানার জনগণকে বিশেষ করে, কৃষক ভাই ও বোনেদের অনেক অনেক শুভেচ্ছা জানাই। এমনিতে আজ হরিয়ানা দ্বিগুণ শুভেচ্ছার দাবিদারও। কমনওয়েলথ গেমস-এ হরিয়ানার ছেলে-মেয়েরা অত্যন্ত অসাধারণ কৃতিত্ব স্থাপন করে দেশের মাথা উঁচু করেছেন, দেশকে অনেক মেডেল এনে দিয়েছেন। খেলার মাঠে যে প্রাণশক্তি হরিয়ানার খেলোয়াড়রা দেখিয়েছেন, তেমনটাই এখন হরিয়ানার কৃষিক্ষেত্রগুলিও জ্বালানি উৎপাদনের মাধ্যমে দেখাবে।

বন্ধুগণ,

প্রকৃতির পূজারী আমাদের দেশে জৈব জ্বালানি প্রকৃতি রক্ষারও একটি বিশেষ উপায়। আমাদের কৃষক ভাই ও বোনেরা একে আরও ভালোভাবে বোঝেন। আমাদের জন্য জৈব জ্বালানি পরিবেশ রক্ষার জ্বালানি। আপনারা শতাব্দীর পর শতাব্দীকাল ধরে এক্ষেত্রে সচেতন যে বীজ বপন থেকে শুরু করে ফসল উৎপাদন আর তারপর তাকে বাজারে পৌঁছে দেওয়া পর্যন্ত – কোনো কিছুকে নষ্ট হতে দেন না। কৃষকরা নিজেদের খেতে উৎপাদিত সবকিছুকে খুব ভালোভাবে ব্যবহার করতে জানেন। যে খেত মানুষের মুখে অন্ন যোগায়, তা থেকে গৃহপালিত পশুদের জন্যও খাদ্যের যোগান আসে। ফসল কাটার পর যে অবশিষ্টাংশ থেকে যায়, আমাদের অধিকাংশ কৃষকই তাকে সঠিকভাবে ব্যবহার করতে জানেন। এগুলিকে গৃহপালিত পশুদের খাদ্যের জন্য ব্যবহার করা হয়। অনেক গ্রামে মাটির বাসন পোড়ানোর জন্যও ফসলের অবশিষ্টাংশ ব্যবহার করা হয়। কিন্তু এটাও সত্য যে হরিয়ানার মতো রাজ্যে যেখানে ধান এবং গমের উৎপাদন বেশি হয়, সেখানে সম্পূর্ণ ফসলের অবশিষ্টাংশ সঠিকভাবে ব্যবহৃত হয় না। এখন এখানকার কৃষকরা এই ফসলের অবশিষ্টাংশ সদ্ব্যবহারের একটি ভালো উপায় পেতে চলেছেন। এই উপায় হল আধুনিক ইথানল প্ল্যান্ট, জৈব জ্বালানি প্ল্যান্ট। পানিপথের এই জৈব জ্বালানি প্ল্যান্ট থেকে ফসলের অবশিষ্টাংশকে না জ্বালিয়ে ইথানল উৎপাদন করা যাবে। এথেকে আরও অনেক লাভ হবে। প্রথমত, ফসলের অবশিষ্টাংশ জ্বালিয়ে দিলে পৃথিবী মায়ের যে যন্ত্রণা হয়, আগুনে পৃথিবী মা যেভাবে ঝলসে যান, সেই পীড়া থেকে পৃথিবী মা-কে মুক্তি দেওয়া যাবে। পৃথিবী মায়ের ভালো লাগবে যে এই ফসলের অবশিষ্টাংশ এখন সঠিকভাবে ব্যবহৃত হচ্ছে। দ্বিতীয় লাভ হল, ফসলের অবশিষ্টাংশ কাটা থেকে শুরু করে তা পুনর্ব্যবহারের যে নতুন ব্যবস্থা তৈরি হচ্ছে, নতুন নতুন মেশিন আসছে, পরিবহণের নতুন নতুন সুবিধা তৈরি হচ্ছে, এর ফলে এই জৈব জ্বালানি প্ল্যান্ট থেকে আমাদের হরিয়ানার গ্রামে গ্রামে কর্মসংস্থানের নতুন সুযোগ তৈরি হবে। ‘গ্রিন জব’-এর সুযোগ বাড়বে। তৃতীয় লাভ হবে যে ফসলের অবশিষ্টাংশ কৃষকদের জন্য বোঝা ছিল, সমস্যার কারণ ছিল, সেটাই আজ তাঁদের জন্য অতিরিক্ত আয়ের উৎস হয়ে উঠবে। চতুর্থ লাভ হল বায়ু দূষণ হ্রাস পাওয়া। পরিবেশ রক্ষায় কৃষকদের অবদান আরও বৃদ্ধি পাবে আর পঞ্চম লাভ হল দেশ একটি বিকল্প জ্বালানির উৎস পাবে। অর্থাৎ, আগে যে ফসলের অবশিষ্টাংশ লোকসানের কারণ হয়ে উঠত তা থেকে এই পাঁচ ধরনের অমৃত উঠে আসবে। আমি অত্যন্ত আনন্দিত যে দেশের ভিন্ন ভিন্ন এলাকায় এরকম বেশ কিছু জৈব জ্বালানি প্ল্যান্ট শুরু করার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।

বন্ধুগণ,

যাঁদের রাজনৈতিক স্বার্থের জন্য শর্টকাট পদ্ধতি নিয়ে সমস্যাগুলিকে এড়িয়ে যাওয়ার প্রবৃত্তি থাকে, তাঁরা কখনও সমস্যাগুলির স্থায়ী সমাধান করতে পারেন না। শর্টকাট সমাধানের কারণে কিছু সময়ের জন্য তাঁরা অবশ্যই প্রশংসা পান, রাজনৈতিক লাভও হয়, কিন্তু সমস্যা হ্রাস পায় না। সেজন্য আমি বলি যে শর্টকাটের মাধ্যমে কাজ করলে শর্ট-সার্কিট হয়। শর্টকাট পদ্ধতির বদলে আমাদের সরকার সমস্ত সমস্যার স্থায়ী সমাধানের চেষ্টা করছে। ফসলের অবশিষ্টাংশ নিয়ে অনেক সমস্যা সম্পর্কে জানা থাকা সত্ত্বেও অনেক বছর ধরে কত কিছু বলা হয়েছে। কিন্তু শর্টকাট পদ্ধতিতে যাঁরা সমাধান করতে চান, তাঁরা এক্ষেত্রে বিফল হয়েছেন। আমরা কৃষকদের ফসলের অবশিষ্টাংশ সংক্রান্ত সমস্যাগুলি নিবিড়ভাবে বুঝি। সেজন্য তাঁদেরকে এই সমস্যা থেকে মুক্তি দেওয়ার সহজ বিকল্পও তুলে ধরেছি।

আমরা কিষাণ উৎপাদক সঙ্ঘ বা এফপিও-গুলিকে ফসলের অবশিষ্টাংশ ব্যবস্থাপনায় আর্থিক সাহায্যের ব্যবস্থা করেছি। এই সংক্রান্ত আধুনিক মেশিন কেনার জন্য ৮০ শতাংশ পর্যন্ত ছাড় দিয়েছি। এখন পানিপথে যে জৈব জ্বালানি প্ল্যান্ট গড়ে উঠেছে তা এ রাজ্যে ফসলের অবশিষ্টাংশ সংক্রান্ত সমস্ত সমস্যার স্থায়ী সমাধানে অত্যন্ত সহায়ক হবে। এই আধুনিক জৈব জ্বালানি প্ল্যান্টে ধান এবং গমের ভূষির পাশাপাশি ভুট্টার অবশিষ্টাংশ, আখের ছিবড়ে, পচা শাকসব্জি – এসব কিছুও ইথানল তৈরিতে কাজে লাগবে। অর্থাৎ, কৃষকদের অনেক বড় চিন্তা মিটবে। আমাদের অন্নদাতারা যে অসহায়তা থেকে ফসলের অবশিষ্টাংশ জ্বালিয়ে দিতেন, যাঁদেরকে এজন্য বদনাম করে দেওয়া হয়েছিল, তাঁদেরও এখন গর্ব হবে যে তাঁরা ইথানল বা জৈব জ্বালানি উৎপাদনেও সাহায্য করছেন, দেশ নির্মাণে সাহায্য করছেন। গরু-মোষের গোবর এবং খেত থেকে যত আবর্জনা বেরোয়, সেগুলির সদ্ব্যবহারের জন্যও সরকার একটি প্রকল্প শুরু করেছে। ‘গোবর্ধন যোজনা’ নামে এই প্রকল্পও কৃষকদের আয় বৃদ্ধির আরও একটি মাধ্যম হয়ে উঠেছে।

বন্ধুগণ,

স্বাধীনতার পর এত দশক ধরে আমরা সার থেকে শুরু করে বিভিন্ন রাসায়নিক পদার্থ, ভোজ্য তেল, কাঁচা তেল, গ্যাস, ইত্যাদির জন্য বিদেশের ওপর অনেক বেশি নির্ভরশীল ছিলাম। সেজন্য যখনই বিশেষ বিশেষ আন্তর্জাতিক পরিস্থিতির কারণে এই সরবরাহ শৃঙ্খলে অবরোধ তৈরি হয়, ভারতও সেই সমস্যা থেকে নিজেকে বাঁচাতে পারে না। বিগত ৮ বছর ধরে দেশ এই সমস্যাগুলির স্থায়ী সমাধানের জন্যও কাজ করে চলেছে। দেশে নতুন নতুন সার কারখানা গড়ে উঠছে, ‘ন্যানো ফার্টিলাইজার’ উৎপাদিত হচ্ছে। ভোজ্য তেলের জন্য নতুন নতুন অভিযান শুরু করা হয়েছে। আগামীদিনে এগুলি দেশকে অনেক সমস্যার স্থায়ী সমাধানের দিকে নিয়ে যাবে।

বন্ধুগণ,

স্বাধীনতার অমৃতকালে দেশ আত্মনির্ভর ভারতের সঙ্কল্পকে বাস্তবায়িত করার দিকে দ্রুতগতিতে এগিয়ে চলেছে। আমাদের গ্রাম এবং আমাদের কৃষকরা আত্মনির্ভরতার সবচাইতে বড় উদাহরণ। কৃষকরা তাঁদের প্রয়োজনীয় সবকিছু অধিকাংশ ক্ষেত্রেই নিজেদের গ্রামেই জুটিয়ে নেন। গ্রামের আর্থ-সামাজিক ব্যবস্থা এমন থাকে যে পরস্পরের প্রয়োজন মেটাতে সবাই একত্রিত হয়ে যান। এজন্যই গ্রামের মানুষের মধ্যে সঞ্চয়ের প্রবৃত্তিও অত্যন্ত শক্তিশালী হয়। তাঁদের এই প্রবৃত্তি দেশের অর্থও সাশ্রয় করছে। পেট্রোলে ইথানল মিশ্রণের ফলে বিগত ৭-৮ বছরে দেশে প্রায় ৫০ হাজার কোটি টাকার বিদেশি মুদ্রা সাশ্রয় হয়েছে আর প্রায় সমপরিমাণ টাকা ইথানল মিশ্রণের ফলে আমাদের দেশের কৃষকরা পেয়েছেন। অর্থাৎ, যে টাকা বিদেশে চলে যেত তা একভাবে আমাদের কৃষকরাই পাচ্ছেন।

বন্ধুগণ,

একবিংশ শতাব্দীর নতুন ভারতে আরও একটি বড় পরিবর্তন এসেছে। আজ দেশ অনেক বড় বড় সঙ্কল্প নিচ্ছে আর সেগুলি নির্ধারিত সময়ে বাস্তবায়িত করে দেখাচ্ছে। কয়েক বছর আগে দেশ সিদ্ধান্ত নিয়েছিল যে পেট্রোলে ১০ শতাংশ পর্যন্ত ইথানল মিশ্রণের লক্ষ্য বাস্তবায়িত করার। আমাদের কৃষক ভাই ও বোনেদের সাহায্যে দেশ এই লক্ষ্য নির্ধারিত সময়ের আগেই অর্জন করেছেন। আট বছর আগে আমাদের দেশে ইথানলের উৎপাদন মাত্র ৪০ কোটি লিটারের কাছাকাছি হত, সেই জায়গায় আজ প্রায় ৪০০ কোটি লিটার ইথানল উৎপাদিত হচ্ছে। এত বড় মাত্রায় ইথানল উৎপাদনের জন্য কাঁচামাল আমাদের কৃষকদের চাষের খেত থেকেই আসছে। এর ফলে বিশেষ করে, আখ চাষীরা লাভবান হচ্ছেন।

দেশ কিভাবে বড় বড় লক্ষ্য সাধন করছে তা আমি আমার কৃষক ভাই ও বোনেদের একটি উদাহরণের মাধ্যমে বোঝাতে চাই। ২০১৪ সাল পর্যন্ত দেশে মাত্র ১৪ কোটির কাছাকাছি এলপিজি গ্যাস সংযোগ ছিল। দেশের প্রায় অর্ধেক জনসংখ্যা, আমাদের মা ও বোনেরা রান্নাঘরের ধোঁয়ায় জীবন কাটাতেন। এর ফলে তাঁদের স্বাস্থ্যের যে ক্ষতি হত তা নিয়ে আগে কেউ ভাবেনি। আমি অত্যন্ত আনন্দিত যে আজ ‘উজ্জ্বলা যোজনা’র মাধ্যমে দেশের ৯ কোটিরও বেশি গরীব বোনেদের রান্নার গ্যাসের সংযোগ দেওয়া হয়েছে। এখন আমরা দেশে প্রায় ১০০ শতাংশ এলপিজি কভারেজের কাছাকাছি পৌঁছেছি। ১৪ কোটি থেকে বৃদ্ধি পেয়ে আজ দেশে প্রায় ৩১ কোটি গ্যাস সংযোগ রয়েছে। এর ফলে, আমাদের গরীব ও মধ্যবিত্তরা বেশি লাভবান হয়েছেন।

বন্ধুগণ,

দেশে সিএনজি নেটওয়ার্ক বৃদ্ধি এবং নলের মাধ্যমে সুলভ গ্যাস বাড়িতে বাড়িতে পৌঁছে দেওয়ার অভিযানও দ্রুতগতিতে এগিয়ে চলেছে। আমাদের দেশে ৯০-এর দশকে সিএনজি স্টেশন স্থাপন করার কাজ শুরু হয়েছিল। আট বছর আগে পর্যন্ত সারা দেশে ৮০০-রও কম সিএনজি স্টেশন ছিল। বাড়িতে বাড়িতে নলের মাধ্যমে গ্যাসের সংযোগও ছিল মাত্র কয়েক লক্ষ্য। আজ সারা দেশে ৪,৫০০-রও বেশি সিএনজি স্টেশন আর নলের মাধ্যমে গ্যাস সংযোগের পরিসংখ্যান ১ কোটি স্পর্শ করছে। আজ যখন আমরা স্বাধীনতার ৭৫ বর্ষ পূরণ করতে চলেছি তখন দেশ এই লক্ষ্য নিয়ে কাজ করে চলেছে যাতে আগামী কয়েক বছরে দেশে ৭৫ শতাংশেরও বেশি বাড়িতে নলের মাধ্যমে গ্যাস সংযোগ পৌঁছয়।

বন্ধুগণ,

আজ আমরা সারা দেশে হাজার হাজার কিলোমিটার দীর্ঘ গ্যাস পাইপলাইন বসাচ্ছি যা বিভিন্ন আধুনিক শিল্প কারখানাগুলিকে জ্বালানি সরবরাহে উল্লেখযোগ্য ভূমিকা পালন করবে আর এর দ্বারা সবচাইতে বেশি লাভবান হবে আমাদের নবীন প্রজন্ম। দেশে ‘গ্রিন জবস’-এর নিরন্তর নতুন নতুন সুযোগ তৈরি হবে। আজকের সমস্যাগুলি যাতে আমাদের ভবিষ্যৎ প্রজন্মকে কোনরকম কষ্ট না দেয়, এটাই প্রকৃত উন্নয়নের দায়বদ্ধতা।

বন্ধুগণ,

যদি রাজনীতিতে স্বার্থ থাকে তাহলে কেউই ক্ষমতায় এসে পেট্রোল, ডিজেলও বিনামূল্যে দেওয়ার ঘোষণা করতে পারে। এহেন পদক্ষেপ আমাদের ছেলে-মেয়েদের কাছ থেকে তাঁদের ভবিষ্যৎ ছিনিয়ে নেবে। দেশকে আত্মনির্ভর করে তুলতে দেবে না। এ ধরণের স্বার্থপর নীতি দেশের সৎ করদাতাদের বোঝাও বাড়াতে থাকবে। নিজেদের রাজনৈতিক স্বার্থের জন্য যাঁরা এ ধরনের ঘোষণা করেন, তাঁরা কখনও নতুন প্রযুক্তির ওপর বিনিয়োগ করেন না। তাঁরা কৃষকদের মিথ্যা প্রতিশ্রুতি দেন, কিন্তু কৃষকদের আয় বৃদ্ধির জন্য ইথানল উৎপাদনের প্ল্যান্ট কখনও শুরু করেন না। তাঁরা ক্রমবর্ধমান পরিবেশ দূষণ নিয়ে আকাশকুসুম কথাবার্তা বলেন, কিন্তু তা প্রতিরোধের জন্য যদি কিছু করেন না।

আমার প্রিয় ভাই ও বোনেরা,

এগুলিকে নীতি বলা যায় না, এগুলি আসলে অ-নীতি। এথেকে কোনো রাষ্ট্রহিত হয় না, রাষ্ট্রের অ-হিত হয়। এগুলির মাধ্যমে কোনো দেশ নির্মাণ হয় না, এগুলি দেশকে পেছনে ঠেলে দেয়। দেশের সামনে যত সমস্যা রয়েছে সেগুলির সমাধানের জন্য স্পষ্ট ইচ্ছাশক্তি থাকতে হবে, নিষ্ঠা থাকতে হবে আর ইতিবাচক নীতি থাকতে হবে। সেজন্য অনেক পরিশ্রম করতে হয় আর সরকারকে বিপুল মাত্রায় অর্থ বিনিয়োগ করতে হয়। যখন সরকারের হাতে টাকা থাকেই না, তখন তারা কিভাবে ইথানল প্ল্যান্ট, বায়ো-গ্যাস প্ল্যান্ট, বড় বড় সোলার প্ল্যান্ট, হাইড্রোজেন গ্যাস প্ল্যান্ট স্থাপন করবে? আজ আমরা যত উদ্যোগ নিচ্ছি, সরকারের হাতে টাকা না থাকলে তাও বন্ধ হয়ে যাবে। আমাদের এটা মনে রাখতে হবে যে আমরা থাকি বা না থাকি, কিন্তু এই দেশ সব সময় থাকবে, অনেক শতাব্দী ধরে এই দেশ ছিল, আরও অনেক শতাব্দী ধরে থাকবে। এ দেশে জন্মগ্রহণকারী সন্তানদের প্রবাহও চলতে থাকবে। আমাদের নিজেদের ভাবী সন্তান-সন্ততিদের ভবিষ্যৎ নষ্ট করার কোনো অধিকার নেই।

বন্ধুগণ,

স্বাধীনতার জন্য যাঁরা নিজেদের জীবন উৎসর্গ করে গেছেন, তাঁদের মনে এই শাশ্বত ভাবনা ছিল। তাঁরা যদি শুধু নিজেদের কথা ভাবতেন, যদি শুধু নিজেদের স্বার্থ দেখতেন, তাহলে তাঁদের নিজেদের জীবনে কোনো কষ্ট আসত না। কিন্তু তাঁরা ভবিষ্যৎ প্রজন্মের সুখের কথা ভেবেই এত কষ্ট সয়েছেন, গুলি খেয়েছেন, হাসতে হাসতে ফাঁসি কাঠে প্রাণ দিয়েছেন। তাঁরা যদি এসব না করতেন তাহলে আজ কিন্তু তাঁদের সন্তানরা অর্থাৎ, আমরা ভারতবাসীরা আজ স্বাধীনতার অমৃত মহোৎসব পালন করতে পারতাম না। এই আগস্ট মাসটি বিপ্লবের মাস। সেজন্য একটি দেশ রূপে আমাদের এই সঙ্কল্প নিতে হবে যাতে এ ধরনের পলায়ণপর প্রবৃত্তিকে আমরা পুষ্পিত, পল্লবিত হতে দেব না। এটা সমস্ত দেশবাসীর সম্মিলিত দায়িত্ব।

বন্ধুগণ,

স্বাধীনতার এই অমৃত মহোৎসবে আজ যখন দেশ ত্রিবর্ণরঞ্জিত জাতীয় পতাকার রঙে রঞ্জিত হয়েছে, তখন এমন কিছু ঘটনাও ঘটেছে যেদিকে আমি দেশবাসীর দৃষ্টি আকর্ষণ করতে চাইব। আমাদের বীর স্বাধীনতা সংগ্রামীদের অপমান করার, এই পবিত্র উপলক্ষকে অপবিত্র করার চেষ্টাও করা হয়েছে। এ ধরনের মানুষদের এই নিকৃষ্ট মানসিকতাকে দেশবাসীর বোঝা জরুরি। আমরা জানি যে কখনও কখনও কোনো রোগী দীর্ঘ রোগভোগের কারণে চিকিৎসা করাতে গিয়ে ক্লান্ত হয়ে পড়েন, নিরাশ হয়ে পড়েন, ভালো ভালো ডাক্তারের পরামর্শ সত্ত্বেও যখন তাঁর কোনো লাভ হয় না, তখন তিনি যতই শিক্ষিত হোক না কেন, অন্ধ বিশ্বাসের দিকে পা বাড়াতে শুরু করে। তিনি তখন ঝাড়ফুঁক করান, টোটকা বা কালো যাদুতে বিশ্বাস করতে শুরু করেন। ঠিক এই অবস্থাই হয়েছে আমাদের দেশের কিছু মানুষের যাঁরা নেতিবাচকতার ঘূর্ণিতে ফেঁসে গেছেন, হতাশায় ডুবে গেছেন। সেজন্য তাঁরা সরকারের বিরুদ্ধে একের পর এক মিথ্যা আরোপ করছেন। কিন্তু সাধারণ মানুষ এ ধরনের মিথ্যাচারীদের ভরসা করতে আর প্রস্তুত নন। এই হতাশাগ্রস্ত মানুষরাও এখন কালো যাদুতে বিশ্বাস করতে শুরু করেছেন।

সম্প্রতি আমরা ৫ আগস্টে দেখেছি কিভাবে তাঁরা সারা দেশে কালো যাদু ছড়িয়ে দেওয়ার চেষ্টা করেছেন। এঁরা ভাবেন যে কালো কাপড় পরলেই তাঁদের হতাশা, নিরাশার কাল সমাপ্ত হয়ে যাবে। কিন্তু তাঁরা জানেন না যে তাঁরা যতই ঝাড়ফুঁক করুন, যতই অন্ধ বিশ্বাস কিংবা কালো যাদুর স্মরণাগত হন না কেন, তাঁরা আর কোনদিন জনগণের বিশ্বাস অর্জন করতে পারবেন না। আর আমি এটাও বলব যে এই কালো যাদুর চক্করে স্বাধীনতার অমৃত মহোৎসবের অপমান যেন তাঁরা না করেন, দেশের পবিত্র ত্রিবর্ণরঞ্জিত জাতীয় পতাকার অপমান যেন তাঁরা না করেন।

বন্ধুগণ,

কোনো কোনো রাজনৈতিক দলের স্বার্থ নীতি বহির্ভূত। আমাদের সরকার ‘সবকা সাথ, সবকা বিকাশ, সবকা বিশ্বাস অউর সবকা প্রয়াস’-এর মন্ত্র নিয়ে কাজ করে যাবে। আমার দৃঢ় বিশ্বাস যে এই উন্নয়নের জন্য ইতিবাচক বিশ্বাসের প্রাণশক্তি এভাবেই সৃষ্টি হতে থাকবে। আরও একবার হরিয়ানার কোটি কোটি বন্ধুদের, কৃষক এবং পশুপালক ভাই ও বোনেদের অনেক অনেক শুভেচ্ছা জানাই। আগামীকাল পবিত্র রাখী উৎসব। ভাই-বোনের স্নেহ, ভালোবাসার প্রতীক। এই পবিত্র উৎসব প্রত্যেক ভাইকে তাঁর কর্তব্য পালনের সঙ্কল্প স্মরণ করায়। আগামীকাল একজন নাগরিক হিসেবেও আমাদের দেশের প্রতি আমাদের কর্তব্য পালনের সঙ্কল্পকে পুনরুচ্চারণ করতে হবে। এই কামনা নিয়ে আমি নিজের বক্তব্য সম্পূর্ণ করছি। অনেক অনেক ধন্যবাদ!

 

PG/SB/DM/



(Release ID: 1851300) Visitor Counter : 140