অর্থমন্ত্রক

কোভিড-১৯ মোকাবিলায় ভারতের গৃহীত বহুমুখী কর্মতৎপরতা অর্থনৈতিক সমীক্ষায় স্থান পেয়েছে

Posted On: 31 JAN 2022 3:07PM by PIB Kolkata

নয়াদিল্লি, ৩১ জানুয়ারি, ২০২২

 

বিগত দু’বছরে বিশ্বের অন্যান্য অংশের সঙ্গে ভারতেও কোভিড-১৯ এর প্রভাব ছিল তীব্র। সমাজের ঝুঁকিপূর্ণ মানুষদের সুরক্ষিত রাখতে এবং মহামারীর ফলে স্বাস্থ্য ক্ষেত্রে উদ্ভূত সমস্যার মোকাবিলা করতে কেন্দ্রের গৃহীত পদক্ষেপগুলি অর্থনৈতিক সমীক্ষায় স্থান পেয়েছে। কেন্দ্রীয় ও কর্পোরেট বিষয়ক মন্ত্রী শ্রীমতী নির্মলা সীতারমন আজ সংসদে ২০২১-২২ অর্থবর্ষে অর্থনৈতিক সমীক্ষা পেশ করেন। সমীক্ষায় এক অনিশ্চিত পরিবেশের মধ্যে যেসব নীতি গ্রহণ করা হয়েছে, সে সম্পর্কে উল্লেখ করা হয়েছে। আন্তর্জাতিক এই মহামারী মোকাবিলা করতে কেন্দ্র একাধিক কৌশল নিয়েছে।

কোভিড-১৯ এর কারণে ভারতে স্বাস্থ্য ক্ষেত্রে গৃহীত বিভিন্ন পদক্ষেপ:

অর্থনৈতিক সমীক্ষায় বলা হয়েছে, বিশ্বে দ্বিতীয় জনবহুল দেশ ভারতে বহু প্রবীণ নাগরিকের বাস। এই পরিস্থিতিতে কোভিড-১৯ মোকাবিলায় যেসব পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে, সেগুলি হ’ল –

১) নিয়ন্ত্রণ/আংশিক লকডাউন
২) স্বাস্থ্য পরিকাঠামোর উন্নয়ন
৩) কোভিড-১৯ মোকাবিলায় যথাযথ আচরণ, নমুনা পরীক্ষা, সংক্রমিতকে শনাক্ত করা এবং
৪) টিকাকরণ অভিযান

সংক্রমণ-শৃঙ্খল ভাঙ্গতে কন্টেনমেন্ট ও বাফার জোন তৈরি করা হয়েছে। সংক্রমিতদের সংস্পর্শে যাঁরা এসেছে, তাঁদের শনাক্ত করে আইসোলেশনে পাঠিয়ে নমুনা পরীক্ষা করা হয়েছে। কোয়ারেন্টাইন ব্যবস্থাপনা, রোগ-প্রতিরোধ ব্যবস্থা গড়ে তুলতে প্রয়োজনীয় কৌশল গ্রহণ করা হয়েছে। সব সরকারি স্বাস্থ্য কেন্দ্রে বিনামূল্যে কোভিড-১৯ নমুনা পরীক্ষা করার ব্যবস্থা করা হয়েছে। এন-৯৫ মাস্ক, ভেন্টিলেটর, সুরক্ষা সরঞ্জাম ও স্যানিটাইজার উৎপাদন অগ্রাধিকারের ভিত্তিতে বহুগুণ বাড়ানো হয়েছে। সমীক্ষায় আইসোলেশন বেড, আইসিইউ বেড, চিকিৎসার জন্য ব্যবহৃত অক্সিজেন সরবরাহ সহ বিভিন্ন বিষয় উল্লেখ করা হয়েছে। সম্পূর্ণ সরকারি উদ্যোগে কোভিড-এর দ্বিতীয় ঢেউ-এর মোকাবিলায় নানা ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। রেল, বিমান ও নৌ-বাহিনী এবং শিল্প সংস্থাগুলি পরিস্থিতি মোকাবিলায় একযোগে কাজ করেছে।

কোভিড টিকাকরণ কর্মসূচির কৌশল:

অর্থনৈতিক সমীক্ষায় বলা হয়েছে, টিকাকরণ শুধুমাত্র রোগ-প্রতিরোধে একটি ব্যবস্থাপনা হিসাবেই বিবেচনা করা হচ্ছে না, এর মাধ্যমে অর্থনৈতিক কাজকর্ম শুরু করার প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে। তাই, একে ম্যাক্রো অর্থনৈতিক নির্দেশক বলা যেতে পারে। টিকাকরণ কর্মসূচির আওতায় ২০২১-এর পয়লা মে থেকে ২০শে জুন পর্যন্ত কি কি উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে, তার উল্লেখও এখানে  রয়েছে। এ বছরের তেসরা জানুয়ারি থেকে ১৫-১৮ বছর বয়সীদেরও টিকা দেওয়া শুরু হয়েছে। ১০ই জানুয়ারি থেকে স্বাস্থ্য কর্মী, সামনের সারিতে থাকা কোভিড যোদ্ধা এবং জটিল অসুখে আক্রান্ত ষাটোর্ধ্বো নাগরিকদের সতর্কতামূলক আরেকটি ডোজ দেওয়া শুরু হয়েছে। যাঁরা ন’মাস বা ৩৯ সপ্তাহ আগে টিকার দ্বিতীয় ডোজ নিয়েছেন, তাঁরাই এই ডোজটি পাবেন। অর্থনৈতিক সমীক্ষায় ভারতীয় জাতীয় কোভিড টিকাকরণ কর্মসূচিকে বিশ্বের বৃহত্তম টিকাকরণ অভিযান বলে উল্লেখ করা হয়েছে। এই কর্মসূচির আওতায় ভারতে তৈরি কোভিড টিকা বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহত্তম জনবহুল দেশে সকলকে বিনামূল্যে দেওয়ার ব্যবস্থা করা হয়েছে। কেন্দ্র এই খাতে ৩৫ হাজার কোটি টাকা বরাদ্দ করেছে। ২০২১-এর ১৬ই জানুয়ারি থেকে ২০২২ – এর ১৬ই জানুয়ারি পর্যন্ত ১৫৬ কোটি ৭৬ লক্ষ কোভিড টিকার ডোজ দেওয়া হয়েছে। সমীক্ষায় উল্লেখ করা হয়েছে, পৃথিবীতে স্বল্প যে কটি দেশে কোভিড টিকা উৎপাদন করা হচ্ছে, ভারত তার মধ্যে অন্যতম। ভারতের আত্মনির্ভর হয়ে ওঠার উদ্যোগে ভারত বায়োটেক ইন্টারন্যাশনাল লিমিটেড, ইন্ডিয়ান কাউন্সিল অফ মেডিকেল রিসার্চের ন্যাশনাল ইন্সটিটিউট অফ ভাইরোলজির সঙ্গে যৌথভাবে কোভ্যাকসিন টিকা তৈরি করেছে। আইসিএমআর অক্সফোর্ডের অ্যাস্ট্রোজেনেকার সঙ্গে যৌথভাবে কোভিশিল্ড টিকার পরীক্ষামূলক প্রয়োগে সাহায্য করেছে। দেশ জুড়ে কোভিশিল্ড ও কোভ্যাকসিন বিপুল পরিমাণে ব্যবহার করা হচ্ছে। প্রতি মাসে ২৫-২৭ কোটিরও বেশি কোভিশিল্ড এবং ৫-৬ কোটি কোভ্যাকসিন টিকার ডোজ তৈরি করা হচ্ছে। টিকাকরণ অভিযানে প্রযুক্তির সাহায্য নেওয়া হচ্ছে। কোভিড-১৯ সংক্রমণ ঠেকাতে আরোগ্য সেতু অ্যাপের মাধ্যমে ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। কোউইন ডিজিটাল প্ল্যাটফর্মের মাধ্যমে টিকাকরণ প্রক্রিয়া স্বচ্ছভাবে পরিচালিত হচ্ছে।

অর্থনৈতিক সমীক্ষায় বলা হয়েছে, মহামারীর ফলে প্রতিটি ক্ষেত্র প্রভাবিত হয়েছে। তবে, স্বাস্থ্য ক্ষেত্রে এর প্রভাব পড়েছে সবচেয়ে বেশি। কোভিড মহামারীর আগে ২০১৯-২০ অর্থবর্ষে স্বাস্থ্য ক্ষেত্রে ব্যয়ের পরিমাণ বৃদ্ধি করা হয়েছিল ২ লক্ষ ৭৩ হাজার কোটি টাকা। কোভিড পরিস্থিতিতে ২০২১-২২ অর্থবর্ষে তা ৭৩ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়ে হয়েছে ৪ লক্ষ ৭২ হাজার কোটি টাকা। জাতীয় স্বাস্থ্য মিশনের পাশাপাশি, সমীক্ষায় আয়ুষ্মান ভারত স্বাস্থ্য পরিকাঠামো মিশনের কথাও উল্লেখ করা হয়েছে। ২০২৫ সালের মধ্যেই দেশের মোট অভ্যন্তরীণ উৎপাদনের ২.৫ শতাংশ অর্থ স্বাস্থ্য খাতে ব্যয় করার পরিকল্পনা করা হয়েছে। সেই লক্ষ্যে ২০২১-২২ অর্থবর্ষে স্বাস্থ্য খাতে মোট অভ্যন্তরীণ উৎপাদনের ২.১ শতাংশ অর্থ ব্যয়ের পরিকল্পনা করা হয়েছে। ২০১৯-২০ অর্থবর্ষে এই পরিমাণ ছিল ১.৩ শতাংশ।

জাতীয় পরিবার স্বাস্থ্য সমীক্ষা – ৫ অনুযায়ী, দেশে ২০১৫-১৬ অর্থবর্ষের থেকে বর্তমানে মোট মাতৃত্বের হার, লিঙ্গ অনুপাত, শিশু মৃত্যু হার, ৫ বছরের কম বয়সী শিশু মৃত্যু হার, প্রাতিষ্ঠানিক উদ্যোগে জন্ম হার বৃদ্ধির মতো বিষয়গুলি সমীক্ষায় স্থান পেয়েছে। ২০১৫-১৬ অর্থবর্ষে প্রতি ১ হাজার জন পুরুষ পিছু মহিলার সংখ্যা ৯৯১। ২০১৯-২০ অর্থবর্ষে তা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১০২০। ২০১৯-২০ অর্থবর্ষে দেশে ১ হাজারটি পুরুষ শিশুর অনুপাতে কন্যা শিশুর অনুপাত ছিল ৯১৯। ২০১৯-২০ অর্থবর্ষে তা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৯২৯।

 

CG/CB/SB



(Release ID: 1793984) Visitor Counter : 1655