প্রধানমন্ত্রীরদপ্তর

হিমাচল প্রদেশে বিবিধ উন্নয়নমূলক প্রকল্পের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রীর ভাষণ

Posted On: 27 DEC 2021 4:43PM by PIB Kolkata

নয়াদিল্লি, ২৭ ডিসেম্বর, ২০২১

 

হিমাচলের রাজ্যপাল শ্রী রাজেন্দ্র আরলেকরজি, জনপ্রিয় এবং প্রাণশক্তিতে পরিপূর্ণ মুখ্যমন্ত্রী শ্রী জয়রাম ঠাকুরজি, প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী শ্রী ধুমলজি, আমার কেন্দ্রীয় মন্ত্রিসভার সহযোগী শ্রী অনুরাগ ঠাকুরজি, সংসদে আমার সহযোগী শ্রী সুরেশ কাশ্যপজি, শ্রী কিষাণ কাপুরজি, ভগিনী ইন্দু গোস্বামীজি আর হিমাচলের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে এখানে এই সভায় বিপুল সংখ্যায় আগত আমার প্রিয় ভাই ও বোনেরা!

এই মাসে কাশী বিশ্বনাথের দর্শন করার পর আজ এই ‘ছোটি কাশী’তে এসে বাবা ভূতনাথের, পঞ্চভূতের ঈশ্বর, আদি মহামৃত্যুঞ্জয় মহাদেবের আশীর্বাদ গ্রহণের সৌভাগ্য হয়েছে। এই দেবভূমিতে সমস্ত দেবী-দেবতাকে আমার প্রণাম জানাই। 

বন্ধুগণ,

হিমাচলের সঙ্গে আমার সব সময়েই একটা আবেগের সম্পর্ক রয়েছে। হিমাচলের মাটি আর হিমালয়ের উত্তুঙ্গ শিখরগুলি আমার জীবনকে দিশা দেখাতে সব সময়েই গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছে আর আজ যখন আমি আপনাদের মাঝে এসেছি, আর আমি যখনই মাণ্ডিতে আসি, মাণ্ডির সেপুবড়ি, কচৌরি এবং বদান-এর মিটঠা সব সময় মনে পড়ে।

বন্ধুগণ,

আজ এখানে ডবল ইঞ্জিন সরকারেরও চার বছর পূর্ণ হল। সেবা এবং সিদ্ধির এই চার বছরের জন্য হিমাচলের জনগণেশকে অনেক অনেক শুভেচ্ছা জানাই, আর এত বিপুল সংখ্যায় আর এই রকম ভীষণ ঠান্ডার মধ্যে আপনারা সবাই আমাকে আশীর্বাদ দিতে এসেছেন। এর মানে হল, এই চার বছরে হিমাচলকে দ্রুতগতিতে আপনারা এগিয়ে যেতে দেখেছেন। জয়রামজি এবং তাঁর পরিশ্রমী টিম হিমাচলবাসীদের স্বপ্নগুলিকে বাস্তবায়িত করার ক্ষেত্রে কোনও ত্রুটি রাখেননি। এই চার বছরের মধ্যে দু’বছর তো আমরা করোনার মতো ভয়ানক রোগের বিরুদ্ধে লড়েছি। কিন্তু তবুও, উন্নয়নের কাজগুলিকেও থামতে দিইনি। বিগত চার বছরে হিমাচল প্রথম একটা এইমস হাসপাতাল পেয়েছে। হামিরপুর, মাণ্ডি, চম্বা এবং সিরমৌর-এ চারটি নতুন মেডিকেল কলেজ মঞ্জুর করা হয়েছে। হিমাচলের যোগাযোগ ব্যবস্থাকে মজবুত করার জন্য অনেক প্রচেষ্টা হয়েছে আর অনেক প্রচেষ্টা এখনও জারি রয়েছে। 

ভাই ও বোনেরা,

আজ এখানে মঞ্চে আসার আগে আমি হিমাচল প্রদেশের শিল্প বিকাশের সঙ্গে যুক্ত কর্মসূচিতে ‘ইনভেস্টর্স মিট’-এও সামিল হয়েছি আর এখানে যে প্রদর্শনী চালু হয়েছে সেটা দেখেও আমার মন অভিভূত হয়েছে। এর মাধ্যমে হিমাচলে হাজার হাজার কোটি টাকার বিনিয়োগ হয়েছে আর এই টাকা যুব সম্প্রদায়ের জন্য অনেক নতুন রোজগারের পথ প্রশস্ত করেছে। এই তো কিছুক্ষণ আগেই ১১ হাজার কোটি টাকা বিনিয়োগে চারটি বড় জলবিদ্যুৎ প্রকল্পের শিলান্যাস কিংবা উদ্বোধন করা হয়েছে। এগুলির মাধ্যমে হিমাচলের আয় বৃদ্ধি পাবে এবং হাজার হাজার মানুষের কর্মসংস্থানের সুযোগ গড়ে উঠবে। সাওড়াকুড্ডু প্রকল্প থেকে শুরু করে লুহরি প্রকল্প, ধৌলাসিদ্ধ প্রকল্প কিংবা রেণুকাজি প্রকল্প – এই সবক’টিই হিমাচলের আকাঙ্ক্ষা এবং দেশের প্রয়োজনীয়তা মেটাবে। সাওড়াকুড্ডু বাঁধ তো পিয়ানোর আকৃতিসম্পন্ন। এশিয়ায় প্রথম এরকম একটি বাঁধ হবে, যেখানে উৎপন্ন বিদ্যুৎ থেকে হিমাচল প্রদেশ প্রতি বছর প্রায় ১২৫ কোটি টাকা আয় করবে।

বন্ধুগণ,

আশ্রীরেণুকাজি আমাদের আস্থার একটি গুরুত্বপূর্ণ কেন্দ্র। ভগবান পরশুরাম এবং তাঁর মা রেণুকাজির ভালোবাসার প্রতীক এই ভূমি থেকে আজ দেশের উন্নয়নের জন্যও একটি ধারা নিষ্কাশিত হয়েছে। গিরি নদীতে নির্মীয়মান শ্রীরেণুকাজি বাঁধ প্রকল্প যখন সম্পূর্ণ হয়ে যাবে তখন একটি বড় ক্ষেত্র এর দ্বারা সরাসরি লাভবান হবে। এই প্রকল্প থেকে যতটা আয় হবে তারও একটা বড় অংশ এখানকার উন্নয়নে খরচ হবে। 

বন্ধুগণ,

দেশের নাগরিকদের জীবন সহজ করে তোলা, ‘ইজ অফ লিভিং’, আমাদের সরকারের সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার আর এর মধ্যে বিদ্যুতের একটা অনেক বড় ভূমিকা রয়েছে। ছেলে-মেয়েদের পড়াশোনার জন্য বিদ্যুৎ, ঘরের কাজকর্ম করার জন্য বিদ্যুৎ, শিল্পের জন্য বিদ্যুৎ, শুধু তাই নয়, আজ তো মোবাইল চার্জ করার জন্যও বিদ্যুতের প্রয়োজন হয়। এটা ছাড়া কেউ থাকতেই পারবেন না। আপনারা জানেন যে আমাদের সরকারের ‘ইজ অফ লিভিং’ মডেল পরিবেশের প্রতি সচেতন এবং পরিবেশ সুরক্ষার ক্ষেত্রেও সহায়ক। আজ এখানে যে জলবিদ্যুৎ প্রকল্পের শিলান্যাস এবং উদ্বোধন হয়েছে, সেগুলিও ‘ক্লাইমেট-ফ্রেন্ডলি নিউ ইন্ডিয়া’ বা পরিবেশ-বান্ধব নতুন ভারতের লক্ষ্যে দেশের একটি শক্তিশালী পদক্ষেপ। আজ গোটা বিশ্ব লভারতের এই উদ্যোগকে প্রশংসা করছে যে, আমাদের দেশ কিভাবে পরিবেশকে বাঁচিয়ে উন্নয়নে গতি আনছে। সৌরশক্তি থেকে শুরু করে জলবিদ্যুৎ শক্তি পর্যন্ত, বায়ুশক্তি থেকে শুরু করে গ্রিন হাইড্রোজেন পর্যন্ত আমাদের দেশ পুনর্নবীকরণযোগ্য শক্তির প্রতিটি সম্পদকে সম্পূর্ণরূপে ব্যবহার করার জন্য লাগাতার কাজ করে যাচ্ছে। উদ্দেশ্য এটাই যে, দেশের নাগরিকদের জ্বালানির প্রয়োজন মেটানোর পাশাপাশি পরিবেশেরও সুরক্ষা হবে। ভারত তার লক্ষ্যগুলি কিভাবে বাস্তবায়িত করবে এর একটা উদাহরণ দেশের ক্রমবর্ধমান ‘ইনস্টলড ইলেক্ট্রিসিটি ক্যাপাসিটি’ও।

বন্ধুগণ,

ভারত ২০১৬-তে এই লক্ষ্য রেখেছিল যে দেশে ২০৩০ সালের মধ্যে ‘ইনস্টলড ইলেক্ট্রিসিটি ক্যাপাসিটি’র ৪০ শতাংশ ‘নন-ফসিল এনার্জি সোর্স’ থেকে মেটাবে। আজ প্রত্যেক ভারতীয় এর জন্য গর্ব করতে পারেন যে ভারত তার এই লক্ষ্য এ বছর নভেম্বর মাসেই বাস্তবায়িত করে নিয়েছে। অর্থাৎ, যে লক্ষ্য ২০৩০-এর ছিল, ভারত তা ২০২১-এই হাসিল করেছে। এই যে কাজের গতি আজ সর্বত্র লক্ষ্য করা যাচ্ছে, ভারত এরকমই গতিতে কাজ করে চলে। এটাই আমাদের সরকারের কাজ করার গতি। 

বন্ধুগণ,

পাহাড়গুলিতে প্লাস্টিকের ফলে যে লোকসান হচ্ছে, আমাদের সরকার তা নিয়েও অত্যন্ত সতর্ক। সিঙ্গল ইউজ প্লাস্টিকের বিরুদ্ধে সারা দেশে অভিযানের পাশাপাশি আমাদের সরকার প্লাস্টিক বর্জ্য ব্যবস্থাপনা নিয়েও কাজ করছে। প্লাস্টিক বর্জ্যকে রি-সাইকেল করে আজ সড়ক নির্মাণের ক্ষেত্রে কার্যকরীভাবে কাজে লাগানো হচ্ছে। দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে পর্যটকরা হিমাচল প্রদেশে বেড়াতে আসেন। আজ আপনাদের উদ্দেশ্যে বলা এই বক্তব্যের মাধ্যমে আমি হিমাচলে বেড়াতে আসা পর্যটকদেরকেও একটা অনুরোধ জানাতে চাই। হিমাচলকে পরিচ্ছন্ন রাখতে, প্লাস্টিক এবং অন্যান্য বর্জ্য থেকে মুক্ত রাখতে পর্যটকদেরও বড় দায়িত্ব রয়েছে। আপনারা যেখানে-সেখানে প্লাস্টিক ফেলছেন, নদীতে প্লাস্টিক ফেলছেন, এতে হিমাচলের অনেক ক্ষতি হচ্ছে, পরিবেশের অনেক ক্ষতি হচ্ছে। এই ক্ষতি প্রতিরোধ করার জন্য আমাদের সবাইকে মিলেমিশে চেষ্টা করতে হবে।

বন্ধুগণ,

দেবভূমি হিমাচল প্রদেশ প্রকৃতি থেকে যে বরদান পেয়েছে, আমাদের তাকে সংরক্ষিত রাখতে হবে। এখানে পর্যটনের পাশাপাশি শিল্পোদ্যোগ বিকাশেরও অপার সম্ভাবনা রয়েছে। আমাদের সরকার এই লক্ষ্যেও ক্রমাগত কাজ করছে। আমরা বিশেষ করে ফুড ইন্ডাস্ট্রি, ফার্মিং এবং ফার্মা ইন্ডাস্ট্রিকে গুরুত্ব দিচ্ছি, আর এখানকার জন্য তহবিল তো রয়েইছে। পর্যটনের তহবিল হিমাচল প্রদেশের থেকে বেশি কোথায় পাবেন? হিমাচলের খাদ্য প্রক্রিয়াকরণ শিল্প বিস্তারের অনেক ক্ষমতা রয়েছে। সেজন্য আমাদের সরকার মেগা ফুড পার্ক থেকে শুরু করে কোল্ড স্টোরেজ ইনফ্রাস্ট্রাকচারকেও মজবুত করছে। কৃষিক্ষেত্রে প্রাকৃতিক পদ্ধতিতে চাষকে উৎসাহ যোগানোর জন্যও ডবল ইঞ্জিনের সরকার ক্রমাগত কাজ করে চলেছে। আজ প্রাকৃতিক কৃষি থেকে উৎপাদিত ফসলের চাহিদা সারা পৃথিবীতে বাড়ছে। রাসায়নিক মুক্ত কৃষিপণ্য আজ বিশেষ আকর্ষণের কেন্দ্র হয়ে উঠছে। আমি অত্যন্ত আনন্দিত যে হিমাচল এক্ষেত্রেও খুব ভালো কাজ করছে। রাজ্যে অনেক বায়ো-ভিলেজ তৈরি করা হয়েছে আর আমি আজ বিশেষ রূপে হিমাচলের কৃষকদের হৃদয় থেকে অভিনন্দন জানাতে চাই, কারণ তাঁরা প্রাকৃতিক পদ্ধতিতে কৃষিকাজের পথ বেছে নিয়েছেন। আমাকে বলা হয়েছে, প্রায় ১.৫ লক্ষেরও বেশি কৃষক প্রাকৃতিক পদ্ধতিতে চাষ করা শুরু করেছেন। এত ছোট রাজ্যে এত কম সময়ে রাসায়নিক মুক্ত প্রাকৃতিক চাষের দিকে ঝুঁকে যাওয়া কম কথা নয়। আমি আজকের প্রদর্শনীতে প্রাকৃতিক পদ্ধতিতে চাষে উৎপন্ন অনেক ফসল দেখছিলাম। সেগুলির আকারও যথেষ্ট লোভনীয় ছিল, সেগুলির রং-রূপও অত্যন্ত আকর্ষণীয় ছিল। আমার খুব আনন্দ হয়েছে। আমি হিমাচল প্রদেশকে, হিমাচলের কৃষকদের সেজন্য হৃদয় থেকে অভিনন্দন জানাই। সারা দেশের কৃষকদের অনুরোধ জানাই যে আজ হিমালয় যে পথ বেছে নিয়েছে, এই পথটিই উত্তম কৃষির একটি অতি উত্তম পথ। আজ যখন ‘প্যাকড ফুড’-এর প্রচলন বৃদ্ধি পাচ্ছে, তখন হিমাচল প্রদেশ এক্ষেত্রেও অনেক বড় ভূমিকা পালন করতে পারে।

বন্ধুগণ,

হিমাচল প্রদেশ, আজ দেশের সর্ববৃহৎ গুরুত্বপূর্ণ ফার্মা হাবগুলির মধ্যে অন্যতম। ভারতকে আজ ‘ফার্মাসি অফ দ্য ওয়ার্ল্ড’ বলা হচ্ছে। এক্ষেত্রেও হিমাচলের একটি অত্যন্ত বড় ভূমিকা রয়েছে। করোনা বিশ্বব্যাপী মহামারীর সময় হিমাচল প্রদেশ শুধু অন্যান্য রাজ্য নয়, অনেক দেশকেও সাহায্য করেছে। ফার্মা ইন্ডাস্ট্রির পাশাপাশি, আমাদের সরকার আয়ুষ ইন্ডাস্ট্রি – ন্যাচারাল মেডিসিনের সঙ্গে জড়িত শিল্পগুলিকেও উৎসাহ যোগাচ্ছে। 

বন্ধুগণ,

আজ দেশে সরকার চালানোর ক্ষেত্রে দুটি ভিন্ন ভিন্ন প্রকৃতির মডেল কাজ করছে। একটি মডেল হল, ‘সবকা সাথ, সবকা বিকাশ, সবকা বিশ্বাস অউর সবকা প্রয়াস’ আর দ্বিতীয় মডেল হল, নিজের স্বার্থ, পরিবারের স্বার্থ, উন্নয়নও নিজের পরিবারের। আমরা যদি হিমাচলের দিকে তাকাই তাহলে দেখব যে প্রথম মডেলটি, যে মডেল নিয়ে আমরা আপনাদের কাছে এসেছি, সেই মডেলেই পূর্ণ শক্তি দিয়ে রাজ্যের উন্নয়নে সমর্পণ ভাব নিয়ে কাজ করে চলেছে। এর পরিণাম হল, হিমাচল তার সম্পূর্ণ বয়স্ক জনসংখ্যার টিকাকরণে দেশের অন্য সব রাজ্য থেকে এগিয়ে। এখানে যে সরকার রয়েছে, সেই সরকার রাজনৈতিক স্বার্থে নিমজ্জিত নয়। এই সরকারের সম্পূর্ণ মনোযোগ হিমাচলের প্রত্যেক নাগরিকের টিকাকরণ। টিকাকরণ কিভাবে হবে সেদিকে লক্ষ্য রাখা। আমার একবার ভার্চ্যুয়ালি এই অভিযানে অংশগ্রহণকারী ব্যক্তিদের সঙ্গে কথা বলার সৌভাগ্য হয়েছিল। তাঁদের সঙ্গে কথা বলে আমি খুব প্রেরণা পেয়েছি। তাঁদের এক একটি কথা অত্যন্ত প্রেরণাদায়ী ছিল। 

ভাই ও বোনেরা,

তাঁদের সকলের মনে ছিল হিমাচলের জনগণের সুস্বাস্থ্যের চিন্তা। সেজন্য তাঁরা অনেক কষ্ট করে হলেও দূরদুরান্তের অঞ্চলগুলিতে টিকা নিয়ে পৌঁছে গেছেন। এটাই তো আমাদের সেবাভাব। জনগণের প্রতি দায়িত্বের অনুভব। এখানে সরকার জনগণের উন্নয়নের জন্য অনেক নতুন প্রকল্প চালু করেছে আর কেন্দ্রীয় সরকারের প্রকল্পগুলিকেও খুব ভালোভাবে সকলের মধ্যে ছড়িয়ে দিচ্ছে। এ থেকে স্পষ্টভাবে প্রমাণিত হয়, হিমাচলের রাজ্য সরকার জনগণের কথা ভাবে, গরীবদের জন্য কতো চিন্তা করে! 

বন্ধুগণ,

আজ আমাদের সরকার মেয়েদের জন্য, মেয়েদের সমান অধিকার প্রদানের জন্য ক্রমাগত কাজ করছে। আমাদের কাছে ছেলে ও মেয়ে এক সমান। এখানে এত বিপুল পরিমাণে মা ও বোনেরা এসেছেন, তাঁদের আশীর্বাদ আমাদেরকে এই কাজে আরও শক্তি যোগায়। আমাদের কাছে ছেলে-মেয়ে সব এক সমান। আমরা ঠিক করেছি যে মেয়েদের বিয়ের বয়স সেটাই হওয়া উচিৎ যে বয়সে ছেলেরা বিয়ের জন্য অনুমতি পায়। দেখুন, দেখুন! আমার বোনেরাই সবচাইতে বেশি হাততালি দিচ্ছেন। মেয়েদের বিয়ের বয়স ২১ বছর হলে তাঁরা পড়াশোনার জন্য সম্পূর্ণ সময় পাবেন আর নিজেদের কেরিয়ারও তৈরি করতে পারবেন। আমাদের এই সমস্ত প্রচেষ্টার মধ্যে আপনারা আরও একটি মডেলও দেখতে পাচ্ছেন – যাঁরা নিজেদের স্বার্থ দেখেন, নিজেদের ভোটব্যাঙ্ক দেখেন। যে রাজ্যগুলিতে তাঁরা সরকার চালাচ্ছেন, তাঁদের অগ্রাধিকার গরীবদের কল্যাণে নয়, নিজেদের পরিবারের কল্যাণের জন্য। আমি বলতে চাই, দেশের পণ্ডিতদের অনুরোধ জানাতে চাই, আপনারা ওই রাজ্যগুলির টিকাকরণের রেকর্ডও খতিয়ে দেখুন। তাদের টিকাকরণ রেকর্ডও এর সাক্ষী যে তাদের মনে নিজের রাজ্যের জনগণের জন্য কোনও চিন্তা নেই। 

বন্ধুগণ,

আমাদের সরকার সম্পূর্ণ সংবেদনশীলতা নিয়ে, সতর্কতা নিয়ে, আপনাদের প্রত্যেক প্রয়োজনীয়তাকে মাথায় রেখে ক্রমাগত কাজ করে যাচ্ছে। এখন সরকার ঠিক করেছে যে ১৫-১৮ বছর বয়সী মেয়েদের, ছেলে-মেয়ে সবাইকে, তাঁদেরকেও ৩ জানুয়ারি, সোমবার থেকে টিকাকরণ শুরু করা হবে। ৩ জানুয়ারি, সোমবার থেকে এই অভিযান শুরু হতে চলেছে। আমার দৃঢ় বিশ্বাস, হিমাচল প্রদেশ এক্ষেত্রেও অসাধারণ কাজ করে দেখাবে। দেশকে দিশা দেখানোর কাজ হিমাচল প্রদেশ করতে থাকবে। আমাদের যে স্বাস্থ্যক্ষেত্রে কর্মরত মানুষেরা রয়েছেন, ফ্রন্টলাইন ওয়ার্কাররা রয়েছেন, তাঁরা বিগত দু’বছর ধরে করোনার বিরুদ্ধে লড়াইয়ে দেশের একটি বড় শক্তি হয়ে উঠেছেন। তাঁদেরকেও আগামী ১০ জানুয়ারি থেকে ‘প্রিকশন ডোজ’ দেওয়ার কাজ শুরু হবে। ৬০ বছরের বেশি বয়সী মানুষদের মধ্যে যাঁদের আগে থেকেই কঠিন রোগ রয়েছে, তাঁদেরকেও চিকিৎসকের পরামর্শ মেনে ‘প্রিকশন ডোজ’-এর বিকল্প দেওয়া হয়েছে। এই সকল প্রচেষ্টা হিমাচল প্রদেশের জনগণের সুরক্ষাকবচ তো হয়ে উঠবেই, পাশাপাশি হিমাচলের জন্য সবচাইতে প্রয়োজনীয় পর্যটন ক্ষেত্রটিকে বাঁচানো এবং এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার ক্ষেত্রেও অত্যন্ত সহায়ক হবে।

বন্ধুগণ,

প্রত্যেক দেশের ভিন্ন ভিন্ন বিচারধারা থাকে। কিন্তু আজ আমাদের দেশের মানুষ স্পষ্টভাবে দুটি বিচারধারা দেখতে পাচ্ছেন। একটি বিচারধারা বিলম্বের আর দ্বিতীয় বিচারধারা উন্নয়নের। বিলম্বের বিচারধারা নিয়ে যাঁরা কাজ করেন তাঁরা পাহাড়ে বসবাসকারী মানুষদের কথা কখনও ভাবেন না, পরিকাঠামো সংক্রান্ত সমস্ত কাজ থেকে শুরু করে জনগণকে বুনিয়াদি সুবিধা প্রদানের কাজ পর্যন্ত। এই বিলম্বের ভাবনা নিয়ে কাজ করা মানুষেরা হিমাচলের জনগণকে অনেক দশক অপেক্ষা করিয়েছেন। তাঁদের এই ঢিমেতালে চলার কারণে অটল টানেলের কাজও অনেক বছর দেরিতে শেষ হয়েছে। রেণুকাজি প্রকল্প বাস্তবায়নেও তিন দশক দেরি হয়েছে। সেই মানুষদের বিলম্বের ভাবধারা থেকে ভিন্ন আমাদের ভাবধারা হল দায়বদ্ধতার মাধ্যমে এবং শুধু উন্নয়নের জন্য, তীব্র গতিতে উন্নয়নের জন্য, আমরা অটল টানেলের কাজ সম্পূর্ণ করিয়েছি। আমরা চণ্ডীগড় থেকে মানালি এবং সিমলাকে যুক্তকারী সড়কপথ প্রশস্ত করেছি। আমরা শুধুই হাইওয়ে এবং রেলওয়ে ইনফ্রাস্ট্রাকচারই বিকশিত করছি না, আমরা অনেক জায়গায় রোপওয়ের ব্যবস্থাও করছি। আমরা দূরদুরান্তের গ্রামগুলিকে প্রধানমন্ত্রী গ্রাম সড়ক যোজনার সঙ্গেও যুক্ত করছি। 

বন্ধুগণ,

বিগত ৬-৭ বছরে যেভাবে ডবল ইঞ্জিনের সরকার কাজ করছে, তাতে বিশেষ করে আমাদের বোনেদের জীবনে অনেক পরিবর্তন এসেছে। আগে রান্নার জন্য কাঠ যোগাড় করতে আমাদের বোনেদের অনেক সময় লেগে যেত। আজ বাড়িতে বাড়িতে গ্যাস সিলিন্ডার পৌঁছেছে। শৌচালয়ের সুবিধা বাড়িতেই হওয়ার ফলে মা-বোনেরা অনেক স্বস্তি পেয়েছেন। জলের জন্য এখানকার বোন ও মেয়েদের কতটা পরিশ্রম করতে হত তা আপনাদের থেকে বেশি করে আর কে জানে? একটা সময় ছিল যখন নলের মাধ্যমে জলের সংযোগ পাওয়ার জন্য অনেক দিন সরকারি দপ্তরে ছুটোছুটি করতে হত। আজ সরকার নিজেই জলের সংযোগ দেওয়ার জন্য আপনাদের দরজায় কড়া নাড়ছে। স্বাধীনতার পর সাত দশকে হিমাচলের ৭ লক্ষ পরিবার নলের মাধ্যমে জল পেয়েছে। সাত দশকে ৭ লক্ষ পরিবার এরকম পেয়েছে। মাত্র দু’বছরের মধ্যেই, আর তাও করোনার সঙ্কটকালে ৭ লক্ষেরও বেশি নতুন পরিবারকে নলের মাধ্যমে জল সংযোগ পৌঁছে দেওয়া হয়েছে। তার মানে, সাত দশকে ৭ লক্ষ। কত? সাত দশকে ৭ লক্ষ। একটু ওদিক থেকে আওয়াজ শুনতে চাইছি। সাত দশকে কত জন? ৭ লক্ষ। আর আমরা দুই বছরে দিয়েছি ৭ লক্ষ। আর নতুন কতগুলি দিয়েছি? ৭ লক্ষ বাড়িতে জল পৌঁছে দেওয়ার কাজ করেছি। এখন হিমাচলের প্রায় ৯০ শতাংশ জনসংখ্যার বাড়িতে নলের মাধ্যমে জলের সুবিধা পৌঁছে গেছে। ডবল ইঞ্জিন সরকারের এটাই লাভ। কেন্দ্রীয় সরকারের একটা ইঞ্জিন যখন যে প্রকল্প শুরু করে.....! রাজ্য সরকার হল দ্বিতীয় ইঞ্জিন। সেই ইঞ্জিনই প্রতিটি প্রকল্পকে দ্রুতগতিতে বাস্তবায়িত করে। এখন যেমন আয়ুষ্মান ভারত যোজনার একটি উদাহরণ দেওয়া যেতে পারে। এই প্রকল্পকে এগিয়ে নিয়ে যেতে হিমাচল প্রদেশ রাজ্য সরকার ‘হিম কেয়ার যোজনা’ শুরু করেছে, আর অধিকাংশ মানুষকে ৫ লক্ষ টাকা পর্যন্ত বিনামূল্যে চিকিৎসার আওতার মধ্যে এনেছে। এই প্রকল্পের মাধ্যমে হিমাচলের প্রায় ১ লক্ষ ২৫ হাজার রোগী ইতিমধ্যেই বিনামূল্যে চিকিৎসা পরিষেবা পেয়েছেন। তেমনই এখানকার সরকার ‘উজ্জ্বলা যোজনা’র সুবিধাভোগীদের জন্য ‘গৃহিনী সুবিধা যোজনা’ চালু করেছে। এর ফলে লক্ষ লক্ষ মহিলা উপকৃত হয়েছেন। এর ফলে লক্ষ লক্ষ বোনেরা একটি নতুন সাহায্য পেয়েছেন। কেন্দ্রীয় সরকার এই কঠিন সময়ে দেশের ৮০ কোটি জনগণকে যেভাবে বিনামূল্যে রেশন পৌঁছে দিচ্ছে, তাকে দ্রুতগতিতে প্রত্যেক সুবিধাভোগীর কাছে পৌঁছে দেওয়ার কাজও এখানে রাজ্য সরকার করছে। 

বন্ধুগণ,

হিমাচল বীরদের মাটি, হিমাচল অনুশাসনেরও মাটি। দেশের সম্মান, মর্যাদা এবং সম্পদ বৃদ্ধির মাটি হল এই হিমাচল প্রদেশ। এখানকার বাড়িতে বাড়িতে দেশের সুরক্ষার জন্য বীর পুত্র-কন্যারা রয়েছেন। আমাদের সরকার বিগত সাত বছরে দেশের সুরক্ষা বৃদ্ধির জন্য যে কাজ করেছে, ফৌজিরা বিশেষ করে, প্রাক্তন ফৌজিদের জন্য যে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে, তাতেও অনেক বড় লাভ হিমাচলের জনগণের হয়েছে। ‘ওয়ান র‍্যাঙ্ক ওয়ান পেনশন’ বা এক পদ এক পেনশনের যে সিদ্ধান্তটি অনেক দশক ধরে আটকে ছিল, সেটিকে বাস্তবায়িত করার পাশাপাশি সেনার জন্য আধুনিক হাতিয়ার এবং বুলেট প্রুফ জ্যাকেট কেনার কাজ, অত্যন্ত শীতের মধ্যে কাজ করার জন্য প্রয়োজনীয় বিভিন্ন সাজসরঞ্জাম কেনা আর তাঁদের আসা-যাওয়ার জন্য উন্নত যোগাযোগ ব্যবস্থা - সরকারের এই প্রচেষ্টাগুলির দ্বারা হিমাচলের প্রত্যেক পরিবার উপকৃতও হয়েছে। 

বন্ধুগণ,

ভারতে পর্যটন এবং তীর্থযাত্রা পরস্পরের সঙ্গে ওতোপ্রতোভাবে জড়িত। তীর্থযাত্রায় হিমাচলের যে সামর্থ্য তার কোনও তুলনায় হয় না। হিমাচল শিব এবং শক্তির আবাসস্থল। পঞ্চকৈলাশের মধ্যে তিনটি কৈলাশ হিমাচল প্রদেশে রয়েছে। তেমনই হিমাচলে বেশ কয়েকটি শক্তিপীঠও রয়েছে। বৌদ্ধ আস্থা এবং সংস্কৃতিরও অনেক গুরুত্বপূর্ণ স্থান এখানে রয়েছে। ডবল ইঞ্জিনের সরকার হিমাচলের এই শক্তিকে আরও কয়েকগুণ বাড়িয়ে দেবে। 

মাণ্ডিতে শিবধামের নির্মাণও এই দায়বদ্ধতারই পরিণামস্বরূপ।

ভাই ও বোনেরা,

আজ যখন ভারত স্বাধীনতার অমৃত মহোৎসব পালন করছে, তখন হিমাচলও পূর্ণ রাজ্যের মর্যাদা পাওয়ার স্বর্ণ জয়ন্তী পালন করছে। অর্থাৎ, এটি হিমাচলের জন্য নতুন সম্ভাবনা নিয়ে কাজ করারও সময়। হিমাচল প্রত্যেক রাষ্ট্রীয় সঙ্কল্পকে সিদ্ধির মধ্যে নিয়ে যাওয়ার ক্ষেত্রে অগ্রণী ভূমিকা পালন করেছে। আগামী সময়েও এই উৎসাহ জারি থাকবে বলে আমার বিশ্বাস। আরেকবার উন্নয়ন এবং বিশ্বাসের পঞ্চম বর্ষের পথে নববর্ষের অনেক অনেক শুভকামনা। এত ভালোবাসা দেওয়ার জন্য আপনাদের অনেক অনেক শুভেচ্ছা, আশীর্বাদ দেওয়ার জন্য অনেক অনেক শুভেচ্ছা। আমি আরেকবার এই দেবভূমিকে প্রণাম করছি। আমার সঙ্গে বলুন – 

ভারতমাতার জয়! ভারতমাতার জয়! ভারতমাতার জয়!

অনেক অনেক ধন্যবাদ!

 

CG/SB/DM/



(Release ID: 1786114) Visitor Counter : 309