রাষ্ট্রপতিরসচিবালয়

৭৫তম স্বাধীনতা দিবসের প্রাক্কালে জাতির উদ্দেশে রাষ্ট্রপতি শ্রী রাম নাথ কোবিন্দ-এর বেতার ভাষণ

Posted On: 14 AUG 2021 7:44PM by PIB Kolkata

নতুনদিল্লি, ১৪ই আগস্ট, ২০২১

 

আমার প্রিয় দেশবাসী,

১   দেশ ও বিদেশে বসবাসকারী সব ভারতীয় নাগরিককে আমি স্বাধীনতা দিবসের আন্তরিক শুভ কামনা জানাই। এই দিন আমাদের সবার কাছে অত্যন্ত আনন্দ ও উচ্ছ্বাসের দিন। এ বছরের স্বাধীনতা দিবস বিশেষ তাৎপর্যপূর্ণকারণ এই দিন থেকে আমাদের স্বাধীনতার পঁচাত্তর বছর শুরু হচ্ছে এবং আমরা আজাদি কা অমৃত  মহোৎসব’  উদযাপন করতে চলেছি। এই ঐতিহাসিক মুহূর্তে আপনাদের সবাইকে অনেক অনেক অভিনন্দন জানাই। 

২  স্বাধীনতা দিবস আমাদের কাছে পরাধীনতা থেকে মুক্তির উৎসব। জানা বা অজানা কয়েক প্রজন্মের স্বাধীনতা-সংগ্রামীর আন্দোলনের মধ্য দিয়ে আমাদের স্বাধীনতার স্বপ্ন পূর্ণ হয়েছে। তাঁরা সবাই ত্যাগ ও আত্মোৎসর্গের উজ্জ্বল উদাহরণ স্থাপন করেছেন। তাঁদের শৌর্য ও পরাক্রমে বলীয়ান হয়েই আজ  আপনারা ও আমরা স্বাধীন দেশে  শ্বাস গ্রহণ করতে পারছি। আমি সেই সমস্ত বীর শহিদদের পুণ্য স্মৃতির উদ্দেশে বিনম্র শ্রদ্ধা অর্পণ করছি।

৩  অনেক দেশের মতো আমাদের দেশকেও বিদেশি শাসনকালে অনেক অন্যায় ও অত্যাচার সহ্য করতে হয়েছে। কিন্তু ভারতের বিশেষত্ব ,  গান্ধিজির নেতৃত্বে আমাদের স্বাধীনতা আন্দোলন সত্য ও অহিংসার আদর্শে প্রতিষ্ঠিত ছিল। তিনি ও অন্য সব রাষ্ট্রনেতা ভারতকে ঔপনিবেশিক শাসন থেকে মুক্ত করার পথ তো দেখিয়েছেনসঙ্গে সঙ্গে রাষ্ট্রের পুনর্নিমাণের রূপরেখাও তৈরি করেছিলেন। তাঁরা ভারতীয় জীবনের মূল্যবোধ  ও ভারতীয় গৌরব পুনঃপ্রতিষ্ঠার জন্য প্রভূত চেষ্টা করেছিলেন।

৪  আমাদের গণতন্ত্রের বিগত পঁচাত্তর বছরের যাত্রাপথের দিকে আজ আমরা যখন ফিরে তাকাইতখন আমাদের গর্ববোধ হয় এই কারণে যে  প্রগতির উদ্দেশ্যে অনেক লম্বা পথ আমরা তৈরি করেছি। গান্ধিজি আমাদের শিখিয়েছেনভুল পথে দৃঢ় পদক্ষেপের চেয়ে নির্ভুল পথে ধীর ও দৃঢ় পদক্ষেপ বেশি জরুরি।  পরম্পরা-সমৃদ্ধ ভারতের সবচেয়ে বৃহৎ ও প্রাণবন্ত গণতন্ত্রের বিস্ময়কর সাফল্যের দিকে সমগ্র বিশ্ব সম্মানের সঙ্গে চেয়ে থাকে।  

প্রিয় দেশবাসী,

৫  সদ্য সমাপ্ত  টোকিয়ো অলিম্পিকস-এ আমাদের খেলোয়াড়েরা উজ্জ্বল নৈপুণ্য প্রদর্শন করে দেশকে গর্বিত করেছেন। অলিম্পিক্স-এ ভারতের ১২১ বছরের অংশগ্রহণের মধ্যে এবার সবচেয়ে বেশি পদক জয় করার ইতিহাস রচিত হয়েছে। আমাদের মেয়েরা অনেক বাধা পার হয়ে খেলার জগতে বিশ্ব মানের দক্ষতা অর্জন করেছেন। খেলাধূলার সঙ্গে সঙ্গে জীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রে মহিলাদের অংশগ্রহণ ও সাফল্যে যুগান্তকারী পরিবর্তন ঘটে চলেছে। উচ্চ শিক্ষা প্রতিষ্ঠান থেকে শুরু করে সশস্ত্র সেনাদলগবেষণাগার থেকে খেলার মাঠ পর্যন্ত সর্বত্র আমাদের মেয়েরা তাঁদের নিজস্ব পরিচিতি অর্জন করছেন। মেয়েদের এই সাফল্যের মধ্যে দিয়ে আমি ভবিষ্যৎ ভারতের ছবি দেখতে পাই। সমস্ত বাবা-মার কাছে আমি বলতে চাই যে সম্ভাবনাপূর্ণ এইসব মেয়েদের পরিবারের কাছ থেকে শিক্ষা গ্রহণ করে নিজেদের মেয়েকেও সামনে এগিয়ে যাওয়ার সুযোগ করে দিন।        

৬  গত বছরের মতোএই বছরওঅতিমারীর জন্য স্বাধীনতা দিবস খুব বড়ো আকারে উদযাপন করা সম্ভব না হলেও সবার অন্তরে পরিপূর্ণ উৎসাহ তৈরি হয়েছে।  অতিমারীর তীব্রতা হয়তো কমে এসেছে কিন্তু করোনা ভাইরাসের প্রভাব এখনও শেষ হয়নি। এ বছর এই অতিমারীর  দ্বিতীয় ঢেউএর অনিষ্টকারী প্রভাব থেকে এখনও আমরা মুক্তি পাইনি। গত বছরসব মানুষের অভূতপূর্ব প্রচেষ্টায় আমরা সংক্রমণের অগ্রগতিকে খর্ব করতে সফল হয়েছিলাম। আমাদের বৈজ্ঞানিকেরা অত্যন্ত কম সময়ের মধ্যে টিকা তৈরির মতো কঠিন কাজ সম্পন্ন করেছেন। এই কারণেএই বছরের শুরুতে আমাদের মনে পূর্ণ বিশ্বাস জন্মেছিল এবং আমরা ইতিহাসের সবচেয়ে বড়ো টিকাকরণ কর্মসূচি শুরু করতে পেরেছিলাম। তবুকরোনা ভাইরাসের নতুন রূপ ও অন্য  অপ্রত্যাশিত কারণে দ্বিতীয় ঢেউএর ভয়াবহ প্রকোপ দেখতে হয়েছে। অত্যন্ত দুঃখের কথাএই দ্বিতীয় ঢেউ-এ অনেক মানুষের প্রাণরক্ষা করা সম্ভব হয়নি এবং অনেক লোককে অত্যন্ত কষ্ট সহ্য করতে হয়েছে। সে এক অভূতপূর্ব  সংকটের কাল। সব দেশবাসীর সঙ্গেএবং সারা দেশের সকলের পক্ষ থেকে  আমি  সমস্ত আক্রান্ত পরিবারের দুঃখ সবসময়ের মতো ভাগ করে নিচ্ছি।

৭  এই ভাইরাস এক অদৃশ্য ও শক্তিশালী শত্রু। বিজ্ঞান এই ভাইরাসের সঙ্গে অভূতপূর্ব গতিতে মোকাবিলা করে চলেছে। আমরা আশ্বস্ত হতে পারি এই ভেবে যে এই অতিমারীতে যত মানুষের প্রাণহানি ঘটেছেতার চেয়ে বেশি মানুষের প্রাণ রক্ষা করা সম্ভব হয়েছে। আ্মাদের সম্মিলিত সংকল্পের জোরে দ্বিতীয় ঢেউএর প্রভাব কমে যেতে দেখছি। পুনরায়নিজেদের বিপন্ন করে চিকিৎসকসেবিকাস্বাস্থ্যকর্মীপ্রশাসক ও অন্য করোনা-যোদ্ধার চেষ্টায় করোনার দ্বিতীয় ঢেউকে দুর্বল করা সম্ভব হচ্ছে।

৮  কোভিদের দ্বিতীয় ঢেউ-এ আমাদের সর্বজনীন স্বাস্থ্য-ব্যবস্থার প্রাথমিক পরিকাঠামোর ওপর যথেষ্ট চাপ তৈরি হয়েছে। বাস্তব সত্য হলউন্নত অর্থব্যবস্থাযুক্ত দেশসহ যে কোনও দেশ প্রাথমিক পরিকাঠামোর সামর্থ্যে এই বিশাল সঙ্কটের মোকাবিলা করতে পারেনি। আমাদের স্বাস্থ্যব্যবস্থার পরিকাঠামোকে আরও সমর্থ করে তুলতে যুদ্ধকালীন তৎপরতায় চেষ্টা করা হয়েছে।  দেশের নেতৃত্ব এই চ্যালেঞ্জের সম্যক মোকাবিলা করেছেন। কেন্দ্রীয় সরকারের চেষ্টার সঙ্গে সঙ্গে রাজ্য সরকার ও ব্যক্তিগত উদ্যোগের স্বাস্থ্যব্যবস্থাঅসরকারি সংগঠন তথা অন্য জন-উদ্যোগ সক্রিয়ভাবে যোগদান করেছে। এই অভূতপূর্ব অভিযানে কয়েকটি দেশও উদারভাবে প্রয়োজনীয় জিনিষপত্র দান করেছেনযেভাবে ভারতও অনেক দেশকে ওষুধ ও টিকার মতো উপকরণ জোগান দিয়েছে। এই সহায়তার জন্য সমগ্র বিশ্বের কাছে আমাদের কৃতজ্ঞতা জ্ঞাপন করছি।    

৯  সামগ্রিক প্রয়াসের ফলেকিছুটা পরিমাণে হলেওপরিস্থিতি স্বাভাবিক হয়েছে এবং দেশবাসী স্বস্তির নিশ্বাস ফেলতে পারছেন।  এখন পর্যন্তঅভিজ্ঞতা দিয়ে আমরা যে শিক্ষা লাভ করেছিতা হলএখনও আমাদের সাবধানতা অবলম্বন করে চলতে হবে। বিজ্ঞান পথ সহজ করে দিয়েছে এবং টিকাই এই সময় আমাদের কাছে সর্বোচ্চ সুরক্ষাকবচ । বিশ্বের সবচেয়ে বড়ো টিকাকরণ কর্মসূচি এখন এই দেশে চলছে। এর ফলে এখন পর্যন্ত পঞ্চাশ কোটির বেশি দেশবাসীকে ভ্যাকসিন দেওয়া সম্ভব হয়েছে। আমি সকল দেশবাসীকে বলব যে যারা এখনও টিকা নেন নি  তারা যত তাড়াতাড়ি সম্ভব টিকা নেবেন এবং অন্যদের উৎসাহিত করবেন।

আমার প্রিয় দেশবাসী,   

১০  এই অতিমারীর প্রভাব জনস্বাস্থ্যের ওপর যেমনঅর্থব্যবস্থার ওপরও তেমনই ক্ষতিকারক। সরকার গরিব ও নিম্ন মধ্যবিত্ত শ্রেণির মানুষের সমস্যার সঙ্গে ছোটো ও মাঝারি শিল্পের সমস্যা সম্পর্কে চিন্তিত। যারা লক-ডাউন ও নানা বিধিনিষেধের কারণে  অভাবগ্রস্ত হয়ে সমস্যায় পড়েছেন, সরকার সেই শ্রমিক  ও উদ্যোগীদের প্রতি সহানুভূতিশীল । তাঁদের প্রয়োজনের কথা উপলব্ধি করে সরকার গত বছর তাঁদের ত্রাণের জন্য অনেকগুলি পদক্ষেপ করেছিল।  এই বছরও সরকার মে ও জুন মাসে প্রায় আশি কোটি মানুষকে খাদ্যশস্য সরবরাহ করেছে। এই সহায়তার সময়সীমা দীপাবলি পর্যন্ত বাড়ানো হয়েছে। এ ছাড়াকোভিড প্রভাবিত ও ক্ষতিগ্রস্ত কিছু শিল্পকে উৎসাহ দেবার জন্য প্যাকেজ ঘোষণা করা হয়েছে। এই তথ্য খুবই সন্তোষজনক যে চিকিৎসা ব্যবস্থার প্রসারের জন্য এক বছরের মধ্যে তেইশ হাজার দুশো বিশ কোটি টাকা খরচ করা হচ্ছে।

১১  এত বাধা সত্ত্বেও গ্রামীন ক্ষেত্রেবিশেষ করে কৃষিতেউন্নতি অব্যাহত আছে,যা খুবই আনন্দের কথা । সম্প্রতিকানপুর দেহাত জেলায় আমার পৈতৃক গ্রাম পরৌখ-এ যাওয়ার সময় গ্রামীন মানুষের জীবনের উন্নতির জন্য উন্নত পরিকাঠামো গড়ে তোলা  দেখে আমি আনন্দ পেয়েছি ।  শহর ও গ্রামের মধ্যে যে মানসিক দূরত্ব তা এখন আগের তুলনায় অনেক কমে এসেছে। বস্তুতভারতের অবস্থান গ্রামে। তাই উন্নয়নের ক্ষেত্রে গ্রামকে পিছিয়ে পড়তে দেওয়া যায় না। এই কারণেচাষী ভাইবোনদের জন্য  প্রধানমন্ত্রী কিষান সম্মান নিধিসহ বিশেষ কর্মসূচিতে জোর দেওয়া হচ্ছে।  

১২ আত্মনির্ভর ভারত-এর ভাবনার সঙ্গে এই সমস্ত প্রচেষ্টা  সামঞ্জস্যপূর্ণ। আমাদের অর্থব্যবস্থার মধ্যে নিহিত সামর্থ্যে দৃঢ় আস্থা রেখে সরকার সুরক্ষাস্বাস্থ্যবিমানচালনাবিদ্যুৎ ও অন্য আরও ক্ষেত্রে পুঁজিনিবেশের সুযোগকে সহজ করেছে। সরকারের নতুন উদ্যোগ হল পরিবেশ অনুকূলশক্তির পুনর্নবীকৃত উৎসবিশেষ করে সৌরশক্তির উৎপাদনে উৎসাহ দান করা। বিশ্বে এইসব উদ্যোগ  প্রশংসা পাচ্ছে। যখন ব্যবসা করার পথ সহজ করা হবেতখন তার প্রভাব জীবনকে সহজ করার ওপরে পড়বে। এ ছাড়া জনকল্যাণ প্রকল্পে বিশেষ জোর দেওয়া হচ্ছে। যেমনসত্তর হাজার কোটি টাকার ক্রেডিট-লিঙ্কড ভর্তুকি যোজনার ফলে বাড়ির মালিক হওয়ার স্বপ্ন বাস্তব করা সম্ভব হচ্ছে।  আমাদের অন্নদাতা কৃষক কৃষি বিপণনের ক্ষেত্রে অনেক সংশোধনের ফলে আরও সমর্থ হবেন এবং নিজের উৎপাদিত দ্রব্যের ভালো দাম পাবেন। সরকার প্রতিটি দেশবাসীর সামর্থ্যের বিকাশ ঘটানোর জন্য যে সব উদ্যোগ নিচ্ছে তার কিছু উল্লেখ আমি এতক্ষণ করলাম।     

 প্রিয় দেশবাসী,

১৩   জম্মু-কাশ্মীরে এখন নতুন চেতনার জাগরণ লক্ষ করা যাচ্ছে। গণতন্ত্র ও আইনের শাসনে বিশ্বাস রাখে এমন সব পক্ষের সঙ্গে পরামর্শ করার প্রক্রিয়া সরকার শুরু করেছে। জম্মু-কাশ্মীরবাসীবিশেষ করে যুবসম্প্রদায়কেএই সুযোগ কাজে লাগানোর এবং গণতান্ত্রিক প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে নিজেদের আকাঙ্ক্ষাকে বাস্তবায়িত করতে সক্রিয় হওয়ার অনুরোধ করব।

১৪  সর্বাঙ্গীন উন্নয়নের প্রভাবেআন্তর্জাতিক মঞ্চে ভারতের মর্যাদা বৃদ্ধি পাচ্ছে। বিভিন্ন উল্লেখযোগ্য বহুমুখী ফোরামে আমাদের অংশগ্রহণ এবং দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক সুদৃঢ়  হওয়ার মধ্যে দিয়ে  এই পরিবর্তন পরিলক্ষিত হচ্ছে।

প্রিয় দেশবাসী,  

১৫  পঁচাত্তর বছর আগে ভারত যখন স্বাধীনতা লাভ করেতখন অনেকের সংশয় ছিল যে ভারতে গণতন্ত্র সফল হবে না। তঁদের হয়তো জানা ছিল না যে প্রাচীন কালেও গণতন্ত্রের শিকড় এই ভারত-ভুমিতে ফুলে-ফলে বিকশিত হয়েছিল। আধুনিক যুগেও ভারত কোনও বিভেদের কথা মাথায় না রেখে সব বয়স্ক নাগরিকের ভোটাধিকার প্রদানের সময়অনেক পশ্চিমি দেশের চেয়ে এগিয়ে ছিল। আমাদের রাষ্ট্র-নির্মাতারা জনগণের বুদ্ধিবিবেচনার ওপর আস্থা রেখেছিলেন এবং ভারতবাসী নিজেদের দেশকে এক শক্তিশালী গণতন্ত্র হিসেবে প্রতিষ্ঠা করতে সফল হয়েছেন।  

১৬  আমাদের গণতন্ত্র সংসদীয় ব্যবস্থার ওপর গড়ে উঠেছে। এই সংসদ গণতন্ত্রের মন্দির। এখানে গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে আলোচনা করা হয়বিতর্ক হয় এবং জনগণের হিতার্থে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয়। দেশবাসীর জন্য এটা গর্ব করার মতো বিষয় যে আমাদের গণতন্ত্রের মন্দির অদূর ভবিষ্যতে নতুন ভবনে স্থানান্তরিত হতে যাচ্ছে। এই ভবন আমাদের রীতি ও নীতির অভিব্যক্তি হয়ে উঠবে। এই নির্মাণ  উত্তরাধিকারের প্রতি সম্মানসূচক এবং সেই সঙ্গে সমকালীন বিশ্বের সঙ্গে তাল মিলিয়ে চলার দক্ষতা প্রদর্শন করবে। স্বাধীনতার পঁচাত্তর বর্ষ উদযাপনের বছরে নতুন সংসদ ভবনের দ্বারোদ্ঘাটন বিশ্বের সবচেয়ে বৃহৎ গণতন্ত্রের পথে অগ্রগতির এক ঐতিহাসিক প্রতীক হয়ে থাকবে।    

১৭  এই বিশেষ বছরটিকে স্মরণীয় করে রাখতে সরকার কিছু উদ্যোগ গ্রহণের পরিকল্পনা করেছে। এগুলির মধ্যে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হল গগনযান মিশন। এই মিশনের জন্য ভারতীয় বায়ুসেনার কিছু পাইলট বিদেশে প্রশিক্ষণ নিচ্ছেন।  তাঁরা যখন বিমানে অন্তরীক্ষে প্রবেশ করবেনতখন ভারত মানবযুক্ত মহাকাশ মিশনে পৃথিবীতে চতুর্থ দেশ হয়ে উঠবে। আমাদের আকাঙ্ক্ষার উড়ান এইভাবে কোনও ধরনের সীমাবদ্ধতার মধ্যে আটকে থাকে না।

১৮ তবুআমাদের পা শক্ত জমির ওপর রাখা থাকে। যাঁরা আমাদের স্বাধীনতা এনে দিয়েছেন সেই স্বাধীনতা সংগ্রামীদের স্বপ্নকে বাস্তবায়িত করার লক্ষ্যপথে আমাদের আরও এগিয়ে যেতে হবে, এই চেতনা আমাদের আছে । এইসব স্বপ্ন আমাদের সংবিধানে ন্যায়’, ‘স্বাধীনতা’, ‘সাম্য’ ও ভ্রাতৃত্ব’ এই চার শব্দের মধ্যে নিহিত হয়ে আছে। অসাম্যে পূর্ণ বিশ্ব পরিস্থিতিতে সাম্য প্রতিষ্ঠা এবং অ-ন্যায়ের জায়গায়  ন্যায়ের প্রতিষ্ঠার জন্য দৃঢ় পদক্ষেপের প্রয়োজন। ন্যায়ের অর্থ অতি ব্যাপকযেখানে আর্থিক ও  পারিপার্শ্বিক ন্যায়ও তার অন্তর্গত। সামনে এগোনোর পথ সহজ নয়। আমাদের কিছু জটিল ও কঠিন বাধা পার হতে হবে। আমাদের উপলব্ধিতে অবশ্য অতুলনীয় এক মার্গদর্শন আছে। আর তা এসেছে নানা সূত্র থেকে। আমাদের সঙ্গে হাজার হাজার বছর আগের মুনি-ঋষিদের থেকে শুরু করে আধুনিক যুগের সন্ত ও রাষ্ট্রনায়ক পর্যন্ত মার্গদর্শনের এক অতি সমৃদ্ধ ঐতিহ্যের সামর্থ্য আছে। অনৈক্যের মধ্যে ঐক্যের ভাবনার ভিত্তিতে দৃঢ়তার সঙ্গে আমরা এক জাতি হিসেবে এগিয়ে চলেছি।  

১৯  ঐতিহ্যের মধ্যে থেকে পাওয়া আমাদের পূর্বজদের জীবনের প্রতি দৃষ্টিভঙ্গি শুধু আমাদেরই সাহায্য করবে নাবিশ্বের কাজেও লাগবে। আধুনিক শিল্পসভ্যতা মানবজাতির সামনে গুরুত্বপূর্ণ চ্যালেঞ্জ ছুড়ে দিয়েছে। সমুদ্রের জলস্তর বাড়ছেহিমবাহ গলে যাচ্ছে আর পৃথিবীর তাপমাত্রা বাড়ছে। এই ধরনের আবহাওয়ার পরিবর্তনের সমস্যা আমাদের জীবনকে প্রভাবিত করছে। আমাদের গৌরবের কথা এই যেভারত শুধু প্যারিস জলবায়ু চুক্তিই মানেনিজলবায়ুর বিশুদ্ধতা রক্ষায় তার প্রতিশ্রুতির অনেক বেশি কাজ করে চলেছে। তবু পরিস্থিতির সংশোধনের জন্য বিশ্বের দিক থেকে আরও কিছু দিশা খুঁজে পাওয়া দরকার। এই কারণে গোটা পৃথিবী  ভারতীয় জ্ঞান-পরম্পরার প্রতি চোখ ফেরাচ্ছে । এমন জ্ঞানের এই পরম্পরা  বেদ ও উপনিষদের রচনাকারেরা উপলব্ধি করেছিলেনরামায়ণ ও মহাভারতে বর্ণিত হয়েছে,  ভগবান মহাবীরভগবান বুদ্ধ ও গুরু নানক এই জ্ঞানের প্রচার করেছেনএবং এই জ্ঞান  মহাত্মা গান্ধী প্রমুখ মানুষের জীবনে পরিলক্ষিত হয়েছে।

২০  গান্ধিজি বলেছিলেন যে প্রকৃতির মতো বেঁচে থাকার কলা শিক্ষা করার চেষ্টা দরকারকিন্তু আপনি যদি একবার নদী ও পাহাড়পশু ও পাখির সঙ্গে সম্বন্ধ তৈরি করতে পারেনতাহলে প্রকৃতি তার রহস্য আপনার সামনে উন্মোচিত করে দেবে। আসুনআমরা গান্ধিজির এই বার্তা আমরা নিজের করে নিই যে ভারতভূমিতে আমরা বাস করিতার পরিবেশ সংরক্ষণের জন্য কিছু ত্যাগ স্বীকার করি।

২১  আমাদের স্বাধীনতা সংগ্রামীদের মনে সবকিছুর ওপরে  দেশপ্রেমের ভাবনা ছিল । নিজেদের ভালোমন্দের হিসেব না করে তাঁরা সব ধরনের চ্যালেঞ্জের সামনে দাঁড়িয়েছেন। আমি লক্ষ করেছি যে করোনা সংকটের মুখোমুখি হয়ে লক্ষ লক্ষ মানুষ নিঃস্বার্থ ভাবে অন্যের স্বাস্থ্য ও প্রাণ রক্ষার জন্য ঝুঁকি নিয়েছেন। এই জন্য সমস্ত কোভিড-যোদ্ধাদের আমি আন্তরিক অভিনন্দন জানাই। অনেক কোভিড যোদ্ধাকেও প্রাণ হারাতে হয়েছে। আমি তাঁদের সবার স্মৃতির উদ্দেশে শ্রদ্ধা জানাই।

২২  সম্প্রতি, ‘কারগিল বিজয় দিবস’ উপলক্ষ্যেলাদাখে অবস্থিত কারগিল যুদ্ধ-স্মারকদ্রাস’-এ  আমাদের বীর সৈন্যদের প্রতি শ্রদ্ধাঞ্জলি প্রদান করতে যেতে চেয়েছিলাম। কিন্তু রাস্তায়আবহাওয়া খারাপ হয়ে ওঠায় ওই স্মারক-স্থল পর্যন্ত যাওয়া সম্ভব হয়নি। বীর সৈনিকদের সম্মানে ওই দিন আমি বারামুলাতে দাগগর যুদ্ধ স্মারকে শহিদদের প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন করি।  সেই সব শহিদদের স্মরণে এই মেমোরিয়াল তৈরি করা হয়েছেযাঁরা কর্তব্যের জন্য  নিজেদের প্রাণ দিয়েছেন। এইসব সেনাদের বীরত্ব ও আত্মত্যাগের প্রশংসা করার সময় আমি লক্ষ করি যে ওই যুদ্ধ-স্মারকে একটি বাক্য খোদিত আছে—“মেরা হর কামদেশ কে নাম। এই আদর্শ-বাক্য সব দেশবাসীর মন্ত্রের মতো গ্রহণ করা উচিতআর সম্পূর্ণ নিষ্ঠা ও সমর্পণের সঙ্গে দেশের সমৃদ্ধির জন্য কাজ করা উচিত। আমি চাইব যে দেশ ও সমাজের হিতকে  সবকিছুর ঊর্ধ্বে রাখার চিন্তার সঙ্গে সব দেশবাসী ভারতকে প্রগতির পথে নিয়ে যেতে ঐক্য বদ্ধ হবেন।

আমার প্রিয় দেশবাসী,

২৩  আমি এখানে বিশেষভাবে প্রশংসা জানাতে চাই সশস্ত্র সেনাদলেরযারা আমাদের স্বাধীনতা রক্ষা রক্ষা করেছেন এবং প্রয়োজনে হাসিমুখে আত্মত্যাগ করেছেন। আমি সমস্ত প্রবাসী ভারতীয়েরও প্রশংসা করছি। যে দেশেই তাঁরা বাস করুনসেখানেই দেশের ভাবমূর্তি উজ্জ্বল রেখেছেন।

২৪  আমি আর একবার পঁচাত্তরতম স্বাধীনতা দিবসের পূর্ব সন্ধ্যায় সবাইকে অভিনন্দন জানাই। পঁচাত্তর বর্ষ পালনের সময় সহজেই মনে আসে দু হাজার সাতচল্লিশ সালে যখন আমরা স্বাধীনতার শতবর্ষ উদযাপন করব তখনকার শক্তিশালীসমৃদ্ধ ও শান্তিপূর্ণ ভারতের ছবি।

২৫  আমাদের সমস্ত দেশবাসী কোভিড অতিমারির প্রকোপ থেকে মুক্ত হবেন এবং সুখ ও সমৃদ্ধির পথে এগিয়ে যাবেন আমি সেই শুভ কামনা জানাই  । 

     আর একবার আপনাদের সবাইকে শুভ কামনা জানাই।

     ধন্যবাদ,

     জয় হিন্দ!

 

CG/CB/



(Release ID: 1745931) Visitor Counter : 682