প্রধানমন্ত্রীরদপ্তর

বিদেশে ভারতীয় মিশনগুলির প্রধান এবং সংশ্লিষ্ট শিল্প ও বাণিজ্য ক্ষেত্রের প্রধানদের সঙ্গে বার্তালাপের সময় প্রধানমন্ত্রীর ভাষণ

Posted On: 06 AUG 2021 10:30PM by PIB Kolkata

নয়াদিল্লি, ৬ আগস্ট, ২০২১

নমস্কার,
কেন্দ্রীয় মন্ত্রিসভায় আমার সকল সহযোগীবৃন্দ, সারা পৃথিবীতে সেবারত রাষ্ট্রদূতগণ, হাইকমিশনারগণ, কেন্দ্র ও রাজ্য সরকারের সমস্ত আধিকারিকগণ, ভিন্ন ভিন্ন এক্সপোর্ট কাউন্সিল এবং চেম্বার অফ কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির সকল নেতাগণ, ভদ্রমহিলা ও ভদ্রমহোদয়গণ!
এই সময় স্বাধীনতার অমৃত মহোৎসবের সময়। এই সময় স্বাধীনতার ৭৫তম বর্ষে নিজেদের স্বাধীনতা উদযাপনের তো বটেই ভবিষ্যতের ভারতের জন্য একটি দূরদৃষ্টিসম্পন্ন স্পষ্ট ভাবনা আর রোডম্যাপ রচনার সুযোগও এনে দিয়েছে। এতে আমাদের রপ্তানির উচ্চাকাঙ্ক্ষাগুলি আর তার মধ্যে আপনাদের মতো সমস্ত বন্ধুদের অংশগ্রহণ, উদ্যোগ, অবদান অনেক বড়। আজ যে আন্তর্জাতিক মানের অনুষ্ঠান হচ্ছে, আমি মনে করি আমরা সবাই আর এখানে যাঁরা আমার সামনে রয়েছেন, তাঁরা এই বিষয়গুলি সম্পর্কে খুব ভালোভাবেই পরিচিত। আজ ফিজিক্যাল, প্রযুক্তিগত এবং ফিনান্সিয়াল কানেক্টিভিটির কারণে বিশ্ব প্রতিদিন আরও ছোট হচ্ছে। এক্ষেত্রে আমাদের রপ্তানি সম্প্রসারণের জন্য সারা পৃথিবীতে নতুন নতুন সম্ভাবনা তৈরি হচ্ছে। আর আমি মনে করি যে, আপনারা সবাই আমার থেকে এক্ষেত্রে অনেক বেশি অভিজ্ঞতাসম্পন্ন ও পারদর্শী। আমি আপনাদের সবাইকে আজ এই উদ্যোগের জন্য আর এভাবে উভয় পক্ষের মধ্যে বার্তালাপের সুযোগ করে দেওয়ার জন্য অভিনন্দন জানাই। আপনারা সবাই রপ্তানি নিয়ে আমাদের উচ্চাকাঙ্ক্ষী লক্ষ্যসাধনের জন্য যে উদ্দীপনা, ইতিবাচকতা এবং দায়িত্ববোধ দেখিয়েছেন তা অত্যন্ত প্রশংসনীয়।
বন্ধুগণ,
অতীতে যখন অর্থনীতিতে আমাদের অংশীদারিত্ব সবচাইতে বেশি ছিল, তখন আমাদের দেশের সেই সোনালী সময়ের সবচাইতে বড় অনুঘটক ছিল শক্তিশালী বাণিজ্য এবং রপ্তানি। বিশ্বের প্রায় সমস্ত মহাদেশের সঙ্গে আমাদের বাণিজ্য সম্পর্ক ছিল, আর সেই বাণিজ্য পথগুলি আজও রয়েছে। আজ যখন আমরা আন্তর্জাতিক অর্থনীতিতে আমাদের সেই পুরনো অংশীদারিত্ব ফিরিয়ে আনার চেষ্টা করছি, তখনও আমাদের রপ্তানির ভূমিকা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। কোভিড-উত্তর সময়ে আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রে যখন আন্তর্জাতিক সরবরাহ শৃঙ্খল নিয়ে ব্যাপক বিতর্ক রয়েছে, তখন আমাদের নতুন পরিসর থেকে সুযোগ নেওয়ার জন্য সম্পূর্ণ শক্তি প্রয়োগ করতে হবে। আপনারা সবাই জানেন যে এই সময় আমাদের রপ্তানি দেশের জিডিপি-র প্রায় ২০ শতাংশ। আমাদের অর্থনীতির আকার, আমাদের সম্ভাবনা, আমাদের শিল্প উৎপাদন এবং পরিষেবা শিল্পের ভিত্তিকে ভালো করে দেখলে বোঝা যায় যে এতে অনেক বৃদ্ধির সম্ভাবনা রয়েছে। এক্ষেত্রে আজ যখন দেশ আত্মনির্ভর ভারত মিশন নিয়ে এগিয়ে চলেছে তখন এর একটা লক্ষ্য রপ্তানিতে আন্তর্জাতিক সরবরাহ শৃঙ্খলে ভারতের অংশীদারিত্বকে অনেকগুণ বৃদ্ধি করাও। আর সেজন্য আজ আমাদের এটা সুনিশ্চিত করতে হবে যে আন্তর্জাতিক চাহিদা অনুসারে যাতে আমাদের অ্যাক্সেস থাকে, যাতে আমাদের ব্যবসা নিজেকে অনেক বড় করে তুলতে পারে, অনেক বেশি সম্প্রসারিত হতে পারে। আমাদের শিল্প জগতকেও শ্রেষ্ঠ প্রযুক্তির দিকে যেতে হবে, উদ্ভাবনে জোর দিতে হবে আর গবেষণা ও উন্নয়নে অংশীদারিত্ব বাড়াতেই হবে। আন্তর্জাতিক মূল্য শৃঙ্খলে আমাদের অংশীদারিত্ব এ পথে এগোলেই বৃদ্ধি পাবে। প্রতিযোগিতা এবং উৎকর্ষকে উৎসাহিত করে আমাদের প্রতিটি ক্ষেত্রে আন্তর্জাতিক মানের চ্যাম্পিয়ন তৈরি করতে হবে।
বন্ধুগণ,
রপ্তানি বৃদ্ধির জন্য চারটি ক্ষেত্র অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। প্রথমত, দেশে শিল্পসামগ্রী উৎপাদন কয়েকগুণ বাড়াতে হবে আর তা উৎকর্ষগতভাবে প্রতিযোগিতামূলক হতে হবে। যেভাবে বন্ধুরা বললেন যে আজ বিশ্বে একটা এমন শ্রেণী গড়ে উঠেছে যাঁরা মূল্য থেকে বেশি করে উৎকর্ষকে গুরুত্ব দেন। সেজন্য আমাদের উৎকর্ষের দিকটিকে গুরুত্ব দিতেই হবে। দ্বিতীয়ত, যানবাহন ব্যবস্থায় পণ্য পরিবহনের সমস্যাগুলি দূর করতে হবে। এর মধ্যে রাজ্য সরকার এবং কেন্দ্রীয় সরকারের পাশাপাশি এতে যত বেসরকারি অংশীদার রয়েছে সবাইকে নিজেদের ভূমিকা পালন করতে হবে। তৃতীয়ত, রপ্তানির ক্ষেত্রে সরকারের সঙ্গে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে এগিয়ে যেতে হবে। যদি কোনও রাজ্য সরকার এতে যুক্ত না থাকে, বিভিন্ন রাজ্যে যে ধরনের বিশেষজ্ঞ কাউন্সিল রয়েছে তারা যদি ইনভল্ভ না থাকে, কিন্তু সেই রাজ্যের কোনও ব্যবসায়ী যদি নিজের মতো করে রপ্তানি করতে চান, তাহলে তিনি আইসোলেটেড হয়ে পড়বেন। এক্ষেত্রে আমাদের যে পরিণাম চাই সেটা আমরা পাব না। আমাদের সবাইকে একসঙ্গে মিলেমিশে চেষ্টা করতে হবে। আর চতুর্থ ফ্যাক্টরটি যা আজকের এই অনুষ্ঠানের সঙ্গে ওতোপ্রতোভাবে জড়িত, তা হল, ভারতীয় পণ্যের জন্য আন্তর্জাতিক বাজার। এই চারটি ফ্যাক্টর একসঙ্গে হলে তবেই ভারতের লোকাল পণ্য গ্লোবাল হয়ে উঠবে। তখনই ‘মেক ইন ইন্ডিয়া ফর দ্য ওয়ার্ল্ড’-এর লক্ষ্যকে আমরা আরও ভালোভাবে অর্জন করতে পারব।
বন্ধুগণ,
আজ দেশে যে সরকার রয়েছে, রাজ্যগুলিতে যে সরকার রয়েছে, তাঁরা বাণিজ্য বিশ্বের প্রয়োজনীয়তা বুঝে এগিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করছেন। আত্মনির্ভর ভারত এই অভিযানের মাধ্যমে বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে অনেক ছাড় দেওয়া হয়েছে। এর ফলে অর্থনৈতিক গতিবিধিকে সুচারুরূপে পরিচালনা করা সহজ হয়েছে। ৩ লক্ষ কোটি টাকার ইমার্জেন্সি ক্রেডিট লাইন গ্যারান্টি স্কিমের মাধ্যমে অতিক্ষুদ্র, ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্প এবং অন্যান্য প্রভাবিত ক্ষেত্রগুলি স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলেছে। রিকভারি এবং গ্রোথকে উৎসাহিত করার জন্য সম্প্রতি ১.৫ লক্ষ কোটি টাকা মঞ্জুর করা হয়েছে।
বন্ধুগণ,
প্রোডাকশন লিঙ্কড ইনসেন্টিভ স্কিম থেকে আমাদের শিল্প উৎপাদনের ক্ষেত্রে শুধু পরিমাণ বৃদ্ধিই নয়, আন্তর্জাতিক মানের উৎকর্ষ ও দক্ষতার স্তর বৃদ্ধির ক্ষেত্রে অনেক সুবিধা হবে। এর ফলে, আত্মনির্ভর ভারতের ‘মেড ইন ইন্ডিয়া’র নতুন ইকো-সিস্টেম বিকশিত করতে অনেক সুবিধা হবে, আরও উন্নত হবে। দেশ শিল্প উৎপাদন এবং রপ্তানির ক্ষেত্রে নতুন নতুন গ্লোবাল চ্যাম্পিয়ন পাবে। মোবাইল ফোন বাণিজ্যের ক্ষেত্রে আমরা এর প্রভাব অনুভবও করতে পারছি। সাত বছর আগে আমরা প্রায় ৮ বিলিয়ন মার্কিন ডলারের মোবাইল ফোন আমদানি করতাম এখন তা হ্রাস পেয়ে ২ বিলিয়ন ডলার হয়ে গেছে। বুঝুন, ৮ বিলিয়ন থেকে ২ বিলিয়ন। আর সাত বছর আগে ভারত ০.৩ বিলিয়ন ডলারের মোবাইল ফোন রপ্তানি করত। এখন তা বৃদ্ধি পেয়ে ৩ বিলিয়ন ডলারের বেশি হয়ে গেছে।
বন্ধুগণ,
শিল্প উৎপাদন এবং রপ্তানির সঙ্গে যুক্ত আরেকটি সমস্যা সমাধানের দিকেও সরকার জোর দিচ্ছে। দেশে পণ্য পরিবহনের সময় এবং মূল্য কম করতে হবে এটা কেন্দ্র এবং রাজ্য উভয় সরকারেরই অগ্রাধিকার রয়েছে এবং থাকাও উচিৎ। সেজন্য যে কোনও নীতিগত সিদ্ধান্ত থেকে শুরু করে পরিকাঠামো নির্মাণ -প্রতিটি স্তরে আমাদের আরও দ্রুতগতিতে কাজ করে যেতে হবে। আজ আমরা মাল্টি-মডেল কানেক্টিভিটির দিকে দ্রুতগতিতে এগিয়ে চলেছি।
বন্ধুগণ,
এখন আমরা শুনলাম বাংলাদেশ তাদের অভিজ্ঞতা থেকে জানিয়েছে যে এখন রেলপথে পণ্য যাওয়া শুরু করেছে। হঠাৎ করেই এই রেলপথে পণ্য পরিবহণ অনেকটা বৃদ্ধি পেয়েছে। বন্ধুগণ, কেন্দ্রীয় সরকারের পক্ষ থেকে নিরন্তর চেষ্টা করা হচ্ছে, দেশে অতিমারীর প্রভাবকে ন্যূনতম করে দেওয়ার নানা উপায় খোঁজা হচ্ছে। আমরা সম্পূর্ণভাবে ভাইরাস সংক্রমণকে নিয়ন্ত্রণে রাখতে চাই। দেশে আজ টিকাকরণের কাজ দ্রুতগতিতে এগিয়ে চলেছে। দেশবাসী এবং শিল্প জগতের সমস্ত প্রয়োজন ও সমস্যা দূর করার জন্য প্রতিটি সম্ভাব্য পদক্ষেপ নেওয়া হচ্ছে। বিগত সময়ে করা প্রচেষ্টাগুলির ফলও আজ আপনারাই অনুভব করতে পারছেন। আমাদের শিল্প জগৎ নিজেদের ব্যবসাকে এই সময়ের মধ্যে অনেক উদ্ভাবনকে আপন করে নিয়েছে। নতুন নতুন চ্যালেঞ্জকে নিজেদের মতো করে গড়ে তুলেছে। শিল্প জগৎও দেশকে মেডিকেল ইমার্জেন্সি সামলে বেরিয়ে আসা এবং উন্নয়নকে পুনরুদ্ধার করার ক্ষেত্রে ইতিবাচক ভূমিকা পালন করেছে। এটাই কারণ যে আজ ড্রাগস এবং ফার্মাসিউটিক্যালস-এর পাশাপাশি কৃষিক্ষেত্রেও আমাদের বিশেষজ্ঞরা নতুন স্তরে পৌঁছেছেন। আজ আমাদের অর্থনীতিতে শুধু পুনরুদ্ধারই নয়, বরং হাই গ্রোথকে নিয়েও ইতিবাচক লক্ষণ দেখাচ্ছে। বিশ্বের অনেক বড় অর্থনীতিতে দ্রুতগতিতে রিকভার করার সঙ্কেত আসছে। সেজন্য রপ্তানি থেকে শুরু করে বড় বড় লক্ষ্য নির্ধারণ করা এবং সেগুলি হাসিল করার জন্য আমি মনে করি এটাই সবচাইতে ভালো সময়। সেজন্য সরকার প্রত্যেক স্তরে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিতে রাজি। সম্প্রতি সরকার রপ্তানি নিয়ে একটি বড় সিদ্ধান্ত নিয়েছে। এই সিদ্ধান্তের ফলে আমাদের রপ্তানিকারকদের ইনস্যুরেন্স কভার রূপে প্রায় ৮৮ কোটি টাকা পাবে। এরকম এক্সপোর্ট ইনসেন্টিভসকে রেশনালাইজ করার ফলে এক্সপোর্ট নিয়ে একটি বড় সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থা ক্লায়েন্ট। একে গড়ে তোলার ফলেও আমাদের রপ্তানি আরও শক্তিশালী হয়ে উঠবে।
বন্ধুগণ,
বিশ্বের ভিন্ন ভিন্ন দেশে ব্যবসা করা আমাদের রপ্তানিকারকরা খুব ভালোভাবেই জানেন যে স্থৈর্য্যের কত বড় প্রভাব হয়। ভারত রেট্রোস্পেক্টিভ ট্যাক্সেশন থেকে মুক্তির যে সিদ্ধান্ত নিয়েছে তা আমাদের দায়বদ্ধতার পরিচায়ক। অটল নীতির দৃঢ়তাকে তুলে ধরে। এটা সমস্ত বিনিয়োগকারীদের কাছে স্পষ্ট বার্তা দেয় যে এগিয়ে যেতে থাকা ভারত শুধুই সম্ভাবনাগুলির দরজা খুলে দিচ্ছে না, পাশাপাশি ভারতের নির্ণায়ক সরকার তার প্রতিশ্রুতিগুলি পালনেরও ইচ্ছাশক্তি রাখে।
বন্ধুগণ,
রপ্তানির সঙ্গে যুক্ত আমাদের যত লক্ষ্য রয়েছে, আমাদের যত সংস্কার রয়েছে সেগুলিতে দেশের প্রতিটি রাজ্যের খুব বড় অংশীদারিত্ব রয়েছে। বিনিয়োগ থেকে শুরু করে ‘ইজ অফ ডুয়িং বিজনেস’ এবং লাস্ট মাইল ইনফ্রাস্ট্রাকচার – প্রতিটি ক্ষেত্রেই প্রত্যেক রাজ্যের ভূমিকা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। রপ্তানি হোক কিংবা বিনিয়োগ, এগুলিকে বৃদ্ধির জন্য রেগুলেটরি বার্ডেন ন্যূনতম করতে কেন্দ্রীয় সরকার রাজ্যগুলির সঙ্গে মিলেমিশে কাজ করছে। রাজ্যগুলিতে এক্সপোর্ট হাব গড়ে তুলতে একটি স্বাস্থ্যকর প্রতিযোগিতাকে উৎসাহ দেওয়া হচ্ছে। প্রত্যেক জেলায় কোনও একটি পণ্যকে গুরুত্ব দেওয়ার জন্য রাজ্যগুলিকে উৎসাহিত করা হচ্ছে।
বন্ধুগণ,
বিনিয়োগ থেকে শুরু করে আমাদের উচ্চাকাঙ্ক্ষাপূর্ণ লক্ষ্যসাধনকে একটি সার্বিক এবং বিস্তারিত অ্যাকশন প্ল্যানের মাধ্যমেই অর্জন করা যেতে পারে। আমাদের বর্তমান রপ্তানিকেও আরও দ্রুত করতে হবে আর নতুন পণ্যের জন্য বাজারের গন্তব্য প্রস্তুত করার জন্য কাজ করতে হবে। আর আমি আপনাদের কিছু পরামর্শও দিতে চাইব। আমাদের যে মিশনগুলি রয়েছে তাঁরাও এক্ষেত্রে সিদ্ধান্ত নিতে পারে যে আজ যে দেশে তাঁরা রয়েছেন, সেগুলি যদি খুব ছোট দেশ হয়, তাহলে আমি সেগুলি নিয়ে কথা বলছি না। কিন্তু বড় দেশগুলিতে মনে করুন তিনটি জায়গায় ভারতের পণ্য যাচ্ছে, তিনটি গন্তব্য। স্বাধীনতার ৭৫ বছর উপলক্ষে কি আমরা সেই দেশগুলিতে পাঁচটি নতুন গন্তব্য যুক্ত করতে পারি? যে জায়গাগুলিতে ভারত থেকে কোনও না কোনও পণ্য আসে, চাহিদা রয়েছে, আমি মনে করি এটা আপনারা করতে পারবেন। আমাদের মিশনগুলি কি স্বাধীনতার ৭৫ বছর পূর্তি উপলক্ষে এই লক্ষ্য রাখতে পারেন যে আমাদের দেশ থেকে যে ন্যূনতম পণ্যগুলি এখন এই দেশগুলিতে যাচ্ছে, তার বাইরে নতুন ৭৫টি পণ্যকে আমরা অন্যান্য দেশে রপ্তানি করতে পারি? এই ৭৫টি পণ্যকে আমরা যে দেশে মিশন রূপে কাজ করছি সেখানে নিয়ে যাব। তেমনই সেসব দেশে যে ভারতীয় ডায়াস্পোরা আমরা দেখেছি, বিগত সাত বছরে অনেক সক্রিয় হয়ে উঠেছেন। এক প্রকার তাঁরা আপনাদের সঙ্গে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে কাজ করছেন। আমরা যদি এই প্রবাসী ও ভারতীয় বংশোদ্ভূতদের কয়েকটি গোষ্ঠী তৈরি করি, আর স্বাধীনতার ৭৫তম বর্ষে তাঁরা যে রাজ্য থেকে গেছেন সেই রাজ্যগুলির সঙ্গে একটি বিষয়ের রপ্তানি বিষয়ক ভার্চুয়াল সামিট করতে পারি? যেমন মনে করুন, বিহার সরকার একটি ভার্চ্যুয়াল সামিট আয়োজন করল। তার সঙ্গে কেন্দ্রীয় সরকারও থাকবে। বিহার থেকে যত পণ্য রপ্তানি হয়, সেই রপ্তানিকারকরাও এতে থাকবেন। আর সেই দেশগুলিতে বসবাসকারী প্রবাসী বিহারবাসীরা বা বিহারবাসীদের বংশোদ্ভূতরা এই ভার্চ্যুয়াল সামিটে যুক্ত হলেন। তাঁরা সকলে মিলে আলোচনা করে ঠিক করলেন যে বিহারের আর কোন কোন পণ্য ওই বিশেষ দেশে যেতে পারে! আমি মনে করি, প্রবাসী ও ভারতীয় বংশোদ্ভূতদের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট রাজ্যের আবেগের সম্পর্ক রয়েছে। তাঁরা এক্ষেত্রে মার্কেটিং-এর জন্য ব্র্যান্ডিং-এ অনেক বড় সাহায্য করতে পারেন। আর এভাবেই আমাদের পণ্যগুলি দ্রুতগতিতে সারা পৃথিবীতে ছড়িয়ে পড়তে পারে। তেমনই রাজ্য সরকারগুলিও এ ধরনের সিদ্ধান্ত নিতে পারে যে আমাদের রাজ্যের পাঁচটি কিংবা ১০টি এরকম অগ্রাধিকারসম্পন্ন পণ্যকে রপ্তানির জন্য বেছে নেব আর বিশ্বের ন্যূনতম ৭৫টি দেশে আমার রাজ্যের কিছু না কিছু পণ্য রপ্তানি করব। এ ধরনের লক্ষ্য রাজ্যগুলি ঠিক করতে পারে। অর্থাৎ আমরা স্বাধীনতার ৭৫ বছরে বিশ্বের বিভিন্ন দেশে আমাদের পণ্য পৌঁছে দিতে নতুন নতুন পদ্ধতি বেছে নিয়ে সম্পূর্ণরূপে প্রোঅ্যাক্টিভলি চেষ্টা করে যেতে পারি। আমাদের কিছু পণ্য তো এরকম হবে যেগুলি সম্পর্কে বিশ্ববাসী জানেই না। এখন যেমন ভারত এত সস্তায় এলইডি বাল্ব উৎপাদন করছে যে বিশ্ব উষ্ণায়ন নিয়ে দুশ্চিন্তাগ্রস্ত বিশ্বের বিভিন্ন দেশে শক্তি সংরক্ষণের অনুকূল এই এলইডি বাল্ব আমরা রপ্তানি করতে পারি। অনেক সুলভে সরবরাহ করতে পারি। আমরা এভাবে বিশ্ব উষ্ণায়ন রুখতে মানবতার সপক্ষে একটি বড় পদক্ষেপ নেব। আর ভারত পৃথিবীতে অনেক বড় বাজারও পেয়ে যাবে - এরকম অনেক বিষয় রয়েছে! আমি এরকম উদাহরণই দিয়েছি। আমরা অনেক কিছু করতে পারি। এখন আমাদের প্রায় অর্ধেক রপ্তানি মাত্র চারটি বড় বড় গন্তব্যে যায়। তেমনই আমাদের প্রায় ৬০ শতাংশ রপ্তানি, ইঞ্জিনিয়ারিং পণ্য, জেমস অ্যান্ড জুয়েলারি, পেট্রোলিয়াম এবং রাসায়নিক পণ্য আর ঔষধির সঙ্গে যুক্ত। আমি মনে করি যে এত বড় বিশাল দেশ, এত বৈচিত্র্যময় দেশ, এত বেশি অতুলনীয় পণ্যের দেশ, এসব কিভাবে বিশ্ববাসীর হাতে পৌঁছে দেওয়া যায় তা নিয়ে আপনাদের ভাবনাচিন্তা করতে হবে। আমাদের যত ত্রুটি রয়েছে সেগুলি দূর করতে হবে। আর মিলেমিশে পথ খুঁজতে হবে। সবাই একসঙ্গে মিলেই আমাদের এই পরিস্থিতিকে পাল্টাতে হবে। আমাদের নতুন গন্তব্যও খুঁজে বের করতে হবে। খনি, কয়লা, প্রতিরক্ষা, রেলওয়ের মতো ক্ষেত্রগুলিকে খুললে আমাদের আন্ত্রেপ্রেনারদের রপ্তানি বৃদ্ধির জন্যও নতুন সুযোগ উঠে আসছে। আমরা কি এই নতুন ক্ষেত্রগুলির জন্য ভবিষ্যৎমুখী রণকৌশল তৈরি করতে পারি?
বন্ধুগণ,
আজ এই অনুষ্ঠানে উপস্থিত আমাদের রাষ্ট্রদূতগণ, বিদেশ মন্ত্রকের প্রতিনিধিত্বকারী আধিকারিকগণকে আমি আরেকটি অনুরোধ করব। আপনারা যে দেশেই ভারতের প্রতিনিধিত্ব করছেন, সেই দেশের প্রয়োজনগুলিকে আপনারা খুব ভালোভাবেই বোঝেন। সে দেশে কোন জিনিসের বেশি চাহিদা, ভারতের কোন ক্ষেত্র থেকে সেই চাহিদা পূরণ সম্ভব, তা আপনারাই ভালোভাবে বলতে পারবেন। আর বিগত সাত বছরে আমরা একটি নতুন প্রয়োগ করেছি যে, যেসব দেশের মিশনের ব্যক্তিরা ভারতে আসেন -  তাঁদেরকে আমরা বিভিন্ন রাজ্যে পাঠাই। রাজ্য সরকারের সঙ্গে তাঁদেরকে ২-৩টি বার্তালাপ করাই যাতে সে রাজ্যগুলি থেকে তাঁরা নিজেদের দেশে কিছু জিনিস নিয়ে যেতে পারেন। এই কাজ যথারীতি চলছে। এক্ষেত্রে ভারতের রপ্তানিকারকদের জন্য, এখানের কমার্স-ইন্ডাস্ট্রির জন্য আপনারা সকলে একটি অত্যন্ত শক্তিশালী সেতুর ভূমিকা পালন করছেন। আমি চাই যে ভিন্ন ভিন্ন দেশে যে ইন্ডিয়া হাউজ রয়েছে তাঁরাও ভারতের শিল্প উৎপাদন ক্ষমতারও প্রতিনিধি হয়ে উঠুন। নানা সময়ে আপনারা ভারতকে সেখানকার পরিস্থিতি সম্পর্কে অ্যালার্ট করতে থাকুন। গাইড করতে থাকলে এর দ্বারা সার্বিক রপ্তানি বৃদ্ধি সুনিশ্চিত হবে। আমি বাণিজ্য মন্ত্রককে বলব যে তাঁরাও এ ধরনের ব্যবস্থা গড়ে তুলুন, যাতে আমাদের রপ্তানি এবং আমাদের মিশনের মধ্যে নিরন্তর সম্পর্ক বজায় থাকে, আর আমি এটা স্বীকার করি যে আজ এই ভার্চ্যুয়াল ব্যবস্থার ফলে এই বিষয়গুলি অত্যন্ত দ্রুতগতিতে ও সহজভাবে আমরা করতে পারব। আগে ট্র্যাভেল করা, মিটিং করা – এসব কিছু করা খুব কঠিন ছিল। কিন্তু করোনার পর বাই অ্যান্ড লার্জ এটা সারা পৃথিবীতে একটা ব্যবস্থা রূপে স্বীকৃত হচ্ছে। আমি মনে করি এই ভার্চ্যুয়াল হ্যাবিটকে এতটা বাড়িয়ে দেওয়া উচিৎ যাতে আমাদের এ ধরনের অল পার্টি, সংশ্লিষ্ট সকলের উদ্যোগ অনেক বেশি নির্ণায়ক হয়ে ওঠে।
বন্ধুগণ,
আমাদের রপ্তানিকারকদের থেকে আমাদের অর্থনীতি যাতে বেশি লাভবান হয় তা সুনিশ্চিত করতে আমাদের দেশের মধ্যেই সিমলেস এবং উচ্চমানের সরবরাহ শৃঙ্খল গড়ে তুলতে হবে। এর জন্য আমাদের একটি নতুন সম্পর্ক, নতুন অংশীদারিত্ব গড়ে তোলার প্রয়োজন রয়েছে। আমি সমস্ত রপ্তানিকারকদের অনুরোধ জানাই যে তাঁরা আমাদের অতিক্ষুদ্র, ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্পোদ্যোগগুলি, আমাদের কৃষক, আমাদের মৎস্যজীবীদের সঙ্গে অংশীদারিত্বকে শক্তিশালী করেন। আমাদের স্টার্ট-আপকে প্রোমোট করেন। আমাদের রেকর্ড পরিমাণ রপ্তানিকারক হবেন যাঁরা আজ স্টার্ট-আপের বিশ্বে আমাদের নবীন প্রজন্মের সামনে একটি বড় বিশ্ব তুলে ধরতে পারেন, যে বিশ্বকে নবীন প্রজন্ম চেনে না, তাঁর সঙ্গে পরিচিত হতে হবে। সম্ভব হলে একদিন আমরা বাণিজ্য মন্ত্রকের উদ্যোগে এ ধরনের কাজ করতে পারি। আমাদের স্টার্ট-আপগুলি এবং আমাদের রপ্তানিকারকরা আমাদের বিনিয়োগকারীদের সঙ্গে বাণিজ্য মন্ত্রক একটি জয়েন্ট ওয়ার্কশপ করতে পারে। এতে আমরা পরস্পরের শক্তি সম্পর্কে অবহিত হব। বিশ্বের বাজার সম্পর্কেও পরিচিত হব। এমনও হতে পারে যে আমরা এই কর্মশালা থেকে অনেক নতুন পথ খুঁজে পেলাম। আমাদের উচিৎ তাঁদেরকে সমর্থন করা। যতটা সম্ভব উৎকর্ষ এবং দক্ষতা আমরা আমাদের ওষুধ উৎপাদন এবং টিকা উৎপাদনের ক্ষেত্রে গোটা বিশ্বে পরাক্রম দেখিয়েছি, প্রযুক্তির উন্নত ব্যবহারের মাধ্যমে আমরা আমাদের উৎকর্ষ কিভাবে বাড়াতে পারি তার আরেকটি উদাহরণ হল আমাদের মধু উৎপাদন ক্ষেত্র। আমি একটা ছোট্ট উদাহরণ এজন্য দিচ্ছি -  ছোট ছোট জিনিসের মধ্যেও কত বড় শক্তি রয়েছে সেটা বোঝাতে। সেজন্য আমি আপনাদের সামনে মধুর উদাহরণ তুলে ধরছি। মধুর উৎকর্ষ সুনিশ্চিত করতে আন্তর্জাতিক বাজারে তার পরিচিতি গড়ে তোলার জন্য অনিবার্য পদক্ষেপ নিতে হত। আমরা মধুকে টেস্টিং-এর জন্য প্রযুক্তি-নির্ভর একটি নতুন টেস্ট চালু করেছি। এমন ফল পাওয়া গেছে যে, গত বছর আমরা প্রায় ৯৭ মিলিয়ন মার্কিন ডলার মূল্যের মধু রপ্তানি করেছি। আমরা কি এভাবে খাদ্য প্রক্রিয়াকরণ, ফল এবং মৎস্যচাষের ক্ষেত্রেও নতুন নতুন উদ্ভাবন করতে পারি? আজ বিশ্বে হলিস্টিক হেলথ কেয়ারের আবহ গড়ে উঠেছে। ‘ব্যাক টু বেসিক্স’-এর আবহ গড়ে উঠেছে। আমাদের যোগ-এর ফলে ভারতের দিকে এই বিষয়ে লক্ষ্য রাখার একটা কারণ দেখা যাচ্ছে। এক্ষেত্রে আমাদের জৈব চাষজাত পণ্য যত রয়েছে সেগুলির বিশ্বে একটি বড় বাজার তৈরি করার সম্ভাবনা রয়েছে। আমাদেরও দেশে জৈব বিষয় নিয়ে কিভাবে এগিয়ে যাব তা নিয়ে ভাবনাচিন্তা করার সময় এসেছে।
বন্ধুগণ,
এই সময় ‘ব্র্যান্ড ইন্ডিয়া’র জন্য নতুন লক্ষ্য নিয়ে নতুন যাত্রা শুরু করতে হবে। এই সময় আমাদের জন্য উৎকর্ষ এবং বিশ্বাসযোগ্যতার নতুন পরিচয় গড়ে তুলতে হবে। আমাদের এমন চেষ্টা করতে হবে যাতে বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্তে ভারতের উচ্চ মূল্য সংযোজিত পণ্য রপ্তানি করা যায়। সেজন্য আমাদের মূল্য সংযোজনের দিকে জোর দিতে হবে। আমাদের প্রতিটি নিরন্তর মূল্য সংযোজনের মাধ্যমে এগিয়ে নিয়ে যেতে হবে যাতে সেই পণ্য সম্পর্কে একটি স্বাভাবিক চাহিদা তৈরি হয়। এটা আমাদের চেষ্টা করে যেতে হবে। আমি শিল্প জগতকে, সমস্ত রপ্তানিকারকদেরও আশ্বস্ত করছি যে, সরকার আপনাদের সমস্ত রকমের সমর্থন দেবে। আসুন, আমরা আত্মনির্ভর ভারতের, বৈভবশালী ভারতের সঙ্কল্পকে সবাই মিলে একসঙ্গে বাস্তবায়িত করি। আপনাদের সবাইকে আমার অনেক অনেক শুভেচ্ছা। এক সপ্তাহ পর সারা পৃথিবীতে আমাদের মিশন আর ভারতেও আমাদের ১৫ আগস্ট পালন করব। স্বাধীনতার অমৃত মহোৎসবের নিয়মমাফিক সূত্রপাতও হয়ে যাবে। আমি চাই যে আমাদের জন্য প্রেরণার কারণ হয়ে ওঠা উচিৎ। বিশ্বে প্রভাব সৃষ্টিকারী সম্ভাবনাময় পণ্যগুলিকে বিশ্ববাসীর হাতে পৌঁছে দেওয়ার জন্য স্বাধীনতার ৭৫তম বর্ষে আপনাদের এই উদ্যোগ খুব বড় প্রেরণার উৎস। আর ২০২৭-এ, দেশ যখন স্বাধীনতার ১০০ বছর পূর্তি পালন করবে তখন এই ২৫ বছর আমাদের জন্য অত্যন্ত মূল্যবান সময়। আমাদের একটি মুহূর্তও নষ্ট করলে চলবে না। এখন থেকেই একটা রোডম্যাপ নিয়ে এগিয়ে যেতে হবে। আর আমার দৃঢ় বিশ্বাস আজকের কথাবার্তা থেকে আমরা সবাই এই সঙ্কল্প পরিপূর্ণ করব, অতিক্রমও করব। এই বিশ্বাস নিয়েই আমি আপনাদের সবাইকে আরও আরও শুভকামনা জানাই। ধন্যবাদ।

CG/SB/DM

 


(Release ID: 1743780) Visitor Counter : 1451