প্রধানমন্ত্রীরদপ্তর

উত্তরপ্রদেশের বারাণসীতে দেব দীপাবলি মহোৎসবে প্রধানমন্ত্রীর ভাষণ

Posted On: 30 NOV 2020 9:50PM by PIB Kolkata

নয়াদিল্লি, ৩০ নভেম্বর, ২০২০

 

হর হর মহাদেব! হর হর মহাদেব! হর হর মহাদেব!

 

কাশী কোতোয়ালের জয়! মা অন্নপূর্ণার জয়! মা গঙ্গার জয়!

 

জো বলে সো নিহাল, সৎ শ্রী অকাল! নমো বুদ্ধায়!

 

সমস্ত কাশীবাসীকে, সকল দেশবাসীকে কার্ত্তিক পূর্ণিমা এবং দেব দীপাবলি উপলক্ষ্যে আন্তরিক শুভকামনা জানাই। সবাইকে গুরু নানক দেবজির প্রকাশ পর্ব উপলক্ষ্যে অনেক অনেক শুভেচ্ছা জানাই।

 

উত্তরপ্রদেশের জনপ্রিয় মুখ্যমন্ত্রী যোগী আদিত্যনাথজি, সংসদে আমার সহকর্মী শ্রী রাধামোহন সিং-জি, উত্তরপ্রদেশ সরকারের মাননীয় মন্ত্রী ভাই আশুতোষজি, রবীন্দ্র জয়সওয়ালজি, নীলকন্ঠ তিওয়ারিজি, প্রদেশ ভারতীয় জনতা পার্টির অধ্যক্ষ ভাই স্বতন্ত্রদেব সিং-জি, উত্তরপ্রদেশ বিধানসভার বিধায়ক সৌরভ শ্রীবাস্তবজি, বিধান পরিষদের সদস্য ভাই অশোক ধাওয়ানজি, স্থানীয় ভারতীয় জনতা পার্টির কর্মকর্তা মহেশচন্দ শ্রীবাস্তবজি, বিদ্যাসাগর রায়জি, অন্যান্য মাননীয় ব্যক্তিগণ এবং আমার কাশীর প্রিয় ভাই ও বোনেরা,

 

নারায়ণের বিশেষ মাস হিসেবে পরিগণিত পুণ্য কার্ত্তিক মাসকে আমরা কাশীর মানুষ কতিকি পুনওয়াসী বলি। আর এই পুনওয়াসী উপলক্ষে অনাদিকাল ধরে গঙ্গায় ডুব দিয়ে স্নান করি আর তারপর দান-ধ্যান করে পুণ্য অর্জন করি। এই সময়ে দানের পুণ্যের মহত্ত্ব অসাধারণ। অনেক বছর ধরে শ্রদ্ধালু মানুষেরা কেউ পঞ্চগঙ্গা ঘাটে, আবার কেউ দশাশ্বমেধ শীতলা ঘাটে ডুব দিয়ে এসে দান-ধ্যান করেন। গোটা গঙ্গার তীরে গদৌলিয়া এবং হরসুন্দরী, জ্ঞানবাপী ধর্মশালায় জনসমাগমে পরিপূর্ণ। একদিন এখানে পণ্ডিত রামকিঙ্কর মহারাজ গোটা কার্ত্তিক মাস বাবা বিশ্বনাথের রামকথা পাঠ করে শোনাতেন। দেশের প্রত্যেক প্রান্ত থেকে মানুষ তাঁর পাঠে রামকথা ও তার ব্যাখ্যা শুনতে আসতেন।

 

করোনাকাল অনেক কিছু বদলে দিলেও কাশীর এই প্রাণশক্তি, কাশীর এই ভক্তি, এই শক্তি কেউ কোনদিন বদলাতে পারবে না। কাকভোর থেকে কাশীবাসী স্নান, ধ্যান এবং দানে ব্যস্ত থাকেন। এই নিজস্ব জীবনশৈলিতেই কাশী তেমনই জীবন্ত, কাশীর গলিগুলি তেমনই প্রাণশক্তিতে পরিপূর্ণ। কাশীর ঘাটগুলি তেমনই দিব্যমান। এটাই তো আমার অবিনাশী কাশী মহানগরী।

 

বন্ধুগণ,

 

মা গঙ্গার সান্নিধ্যে কাশী আলোর উৎসব পালন করছে আর আমাকেও মহাদেবের আশীর্বাদে এই প্রকাশ গঙ্গায় ডুব দেওয়ার সৌভাগ্য প্রদান করেছে। আজকের দিনে আমি কাশীর ছয় লেন বিশিষ্ট হাইওয়ে উদ্বোধন অনুষ্ঠানে উপস্থিত থাকার সুযোগ পেয়েছি। সন্ধ্যায় এখানে এই দিব্য দেব দীপাবলি দর্শন করতে পারছি। এখানে আসার আগে কাশী বিশ্বনাথ করিডরেও যাওয়ার সৌভাগ্য হয়েছে। আর আজ রাতেই সারনাথে লেজার শো-র সাক্ষী হব। আমি একে মহাদেবের আশীর্বাদ আর আপামর কাশীবাসীর বিশেষ আশীর্বাদ বলে মনে করি।

 

বন্ধুগণ,

 

কাশীর জন্য আরেকটি বিশেষ সুযোগ। আপনারা হয়তো শুনেছেন, গতকাল 'মন কি বাত' অনুষ্ঠানে আমি এ বিষয়ে বলেছি। আর একটু আগেই যোগীজিও মহা উৎসাহে একথাটি আরেকবার আপনাদের সামনে বলেছেন। ১০০ বছরেরও বেশি সময় আগে মা অন্নপূর্ণার যে মূর্তিটি কাশী থেকে চুরি হয়ে গিয়েছিল, সেটি এখন আবার কাশীতে ফিরে আসছে। মা অন্নপূর্ণা আরেকবার তাঁর নিজের শহরে ফিরে আসছেন। কাশীর জন্য এটি অত্যন্ত সৌভাগ্যের কথা। আমাদের দেব-দেবীদের এই প্রাচীন মূর্তিগুলি আমাদের আস্থার প্রতীকের পাশাপাশি আমাদের অমূল্য ঐতিহ্যও বটে। একথাও সত্যি যে, এত প্রচেষ্টা যদি আগে করা হত, তাহলে এরকম আরও কত মূর্তি অনেক আগেই দেশবাসী ফেরত পেতেন। কিন্তু কিছু মানুষের ভাবনা-চিন্তা অন্যরকম ছিল। আমাদের জন্য পরম্পরার অর্থ হল দেশের ঐতিহ্য ও সম্পদ। কিন্তু কিছু মানুষের জন্য পরম্পরার অর্থ হল নিজেদের পরিবার এবং তাঁদের পরিবারের সুনাম। আমাদের জন্য পরম্পরার মানে হল আমাদের সংস্কৃতি, আমাদের আস্থা, আমাদের মূল্যবোধ! তাঁদের জন্য পরম্পরার অর্থ হল নিজেদের মূর্তি, নিজেদের পরিবারের সদস্যদের মূর্তি। সেজন্য তাঁদের লক্ষ্য ছিল পরিবারের ঐতিহ্যকে বাঁচিয়ে রাখা, আর আমাদের লক্ষ্য হল দেশের ঐতিহ্য রক্ষা, তাকে সংরক্ষণ করা। আমার কাশীবাসী বন্ধুরা বলুন, আমি কি সঠিক পথে চলছি না? আমি কি ঠিক কাজ করছি না? দেখুন, আপনাদের আশীর্বাদেই এসব কিছু হচ্ছে। আজ যখন কাশীর ঐতিহ্য ফিরে আসছে, তখন এমনও মনে হচ্ছে যেন কাশী মা অন্নপূর্ণার আগমনের বার্তা শুনে সেজেগুজে অপেক্ষা করছে।

 

বন্ধুগণ,

 

লক্ষ লক্ষ প্রদীপ প্রজ্জ্বলনে কাশীর ৮৪টি ঘাট একসঙ্গে ঝলমল করে ওঠার দৃশ্য অত্যন্ত অদ্ভূত। গঙ্গার ঢেউয়ে এই আলোকমালা, এই আলোর বিচ্ছুরণ আরও অলৌকিক হয়ে উঠছে। আর এর সাক্ষী কারা? দেখুন না। এমন মনে হচ্ছে যে আজকের এই পূর্ণিমায় দেব দীপাবলি পালন করতে কাশী নগরে মহাদেবের কপালে বিরাজমান চন্দ্রমার মতো জ্বলজ্বল করছে। কাশীর মহিমা এমনই অতুলনীয়। আমাদের শাস্ত্রে বলা হয়েছে - ‘কাশ্যং হি কাশতে কাশী সর্বপ্রকাশিকা’, অর্থাৎ কাশী তো আত্মজ্ঞানে আলোকিত হয়ে ওঠে। সেজন্য কাশী গোটা বিশ্বকে, সমগ্র মানবজাতির জন্য আলোকবর্তিকা ও পথপ্রদর্শক। প্রত্যেক যুগে কাশীর মানুষ এই বিশেষ আলোর সঙ্গে যুক্ত হয়েছেন, কোনও না কোন মহাপুরুষের তপস্যা আর কাশী গোটা বিশ্বকে পথ দেখিয়ে গেছে। আজ আমরা যে দেব দীপাবলি দর্শন করছি, তার প্রেরণাও শুরুতে পঞ্চগঙ্গা ঘাটে স্বয়ং আদি শঙ্করাচার্যজি শুরু করেছিলেন। তারপর অহল্যাবাঈ হোলকারজি এই পরম্পরাকে এগিয়ে নিয়ে গেছেন। পঞ্চগঙ্গা ঘাটে অহল্যাবাঈ হোলকারজি দ্বারা স্থাপিত এক হাজার দীপের আলোকস্তম্ভ আজও সেই পরম্পরার সাক্ষী।

 

বন্ধুগণ,

 

কথিত আছে, যখন ত্রিপুরাসুর নামক দৈত্য গোটা বিশ্বকে ভীত-সন্ত্রস্ত করে তুলেছিল, ভগবান শিব কার্ত্তিক পূর্ণিমার দিনই তাকে বধ করেছিলেন। আতঙ্ক, অত্যাচার এবং অন্ধকারের এই অবসানে দেবতারা মহাদেবের নগরীতে এসে প্রদীপ জ্বালিয়েছিলেন। দীপাবলি পালন করেছিলেন। দেব-দেবীদের এই দীপাবলিই দেব দীপাবলি। কিন্তু এই দেবতা কারা? এই দেবতারা তো আজও আছেন। আজও বেনারসে তাঁরা দীপাবলি পালন করেন। আমাদের মহান সন্ন্যাসীরা লিখে গেছেন,

 “লোক বেদহ বিদিত বারাণসী কি বড়াঈ,

বাসী নর-নারী ঈস-অম্বিকা-স্বরূপ হ্যাঁয়”

অর্থাৎ, কাশীর জনগণই দেবস্বরূপ। কাশীর জনগণই তো দেবী এবং শিবের স্বরূপ। সেজন্য এই ৮৪ ঘাটে এই লক্ষ লক্ষ প্রদীপ আজও দেবতারাই জ্বালাচ্ছেন। দেবতারাই এই আলোকমালা সাজাচ্ছেন। আজ এই প্রদীপগুলি সেই আরাধ্যদের জন্যও প্রজ্জ্বলিত হচ্ছে যাঁরা দেশের জন্য তাঁদের প্রাণ ত্যাগ করেছেন, যাঁরা জন্মভূমির জন্য আত্মবলিদান দিয়েছেন। কাশীর এই ভাবনা, দেব দীপাবলির এই দিকটি নিয়ে ভাবলে প্রত্যেকেই ভারাক্রান্ত হয়ে ওঠেন। এই অবসরে আমি দেশের সুরক্ষায় শহীদ হওয়া, নিজেদের জীবন-যৌবন উৎসর্গ করা, নিজেদের স্বপ্নকে ভারতমাতার চরণে সমর্পণ করে দেওয়া সুপুত্রদের প্রণাম জানাই।

 

বন্ধুগণ,

 

আজও দেশের সীমান্তে যে কোনও অনুপ্রবেশ, যে কোনও সাম্রাজ্যবাদী শক্তির দুঃসাহস কিংবা দেশের ভেতর দেশের ঐক্য ও সংহতি ধ্বংস করার সমস্ত ষড়যন্ত্রকে নস্যাৎ করে দিচ্ছেন এই সদা জাগ্রত অতন্দ্র প্রহরারত আমাদের সৈনিক ও পুলিশ ভাই-বোনেরা। কিন্তু এর পাশাপাশি দেশে এখন দারিদ্র্য, অন্যায় এবং বৈষম্যের অন্ধকারের বিরুদ্ধেও পরিবর্তনের আকাঙ্ক্ষা নিয়ে প্রদীপ জ্বালানো হচ্ছে। আজ গরীবদের তাঁদের নিজের জেলায়, নিজের গ্রামে কর্মসংস্থান প্রদানের জন্য প্রধানমন্ত্রী রোজগার অভিযান চালু হয়েছে। আজ গ্রামে গ্রামে স্বামীত্ব যোজনার মাধ্যমে সাধারণ মানুষকে তাঁদের বাড়ি ও জমির ওপর আইনি অধিকার প্রদান করা হচ্ছে। আজ কৃষকদের দালালদের খপ্পর থেকে এবং শোষকের কবল থেকে মুক্তি প্রদান করা হচ্ছে। আজ ঠেলাওয়ালা, রেলপথের দু'পাশে পসরা সাজানো ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীদের সাহায্যের জন্য, তাঁদের মূলধন দেওয়ার জন্য ব্যাঙ্কগুলি এগিয়ে আসছে। কিছুদিন আগেই আমি স্বনিধি যোজনার সুবিধাভোগীদের সঙ্গে কথা বলেছিলাম এই কাশীতেই। পাশাপাশি, আজ আত্মনির্ভর অভিযান জনপ্রিয় হচ্ছে। এই অভিযানের মাধ্যমে দেশবাসী লোকাল পণ্যের জন্য ভোকাল হচ্ছেন। আপনারা কী বলেন, হচ্ছেন কি হচ্ছেন না? সব সময় মনে রাখেন কি ভুলে যান? আমি বলব ‘ভোকাল ফর!’ আপনারা আমার সঙ্গে বলবেন ‘লোকাল!’ বলবেন না? বলবেন তো?

ভোকাল ফর – লোকাল! ভোকাল ফর – লোকাল!

এবারের উৎসব, এবারের দীপাবলি যেভাবে পালন করা হয়েছে, যেভাবে দেশের মানুষ স্থানীয় পণ্যকে স্থানীয় উপহার কেনার পাশাপাশি স্থানীয় পণ্য ব্যবহার করে এই উৎসব পালন করেছেন, সেটা অত্যন্ত প্রেরণাদায়ী ঘটনা। কিন্তু এই ‘ভোকাল ফর লোকাল’ শুধু উৎসবের জন্যই আমাদের জীবনের অংশ হয়ে ওঠা উচিৎ নয়, এই প্রচেষ্টার মাধ্যমে আমাদের উৎসবগুলি আজ আরেকবার দরিদ্র জনগণের সেবার মাধ্যম হয়ে উঠছে।

 

বন্ধুগণ,

 

গুরু নানক দেবজি তাঁর সমগ্র জীবন দরিদ্র, শোষিত, বঞ্চিত মানুষের সেবায় সমর্পণ করে গেছেন। কাশীর সঙ্গে তো গুরু নানক দেবজির আত্মিক সম্পর্ক রয়েছে। তিনি একটা দীর্ঘ সময় কাশীতে কাটিয়েছেন। কাশীর গুরুবাগ গুরুদ্বার তাঁর সেই ঐতিহাসিক সফরের সাক্ষী। যখন গুরু নানক দেবজি এখানে এসেছিলেন আর কাশীবাসী মানুষকে জীবনের নতুন পথ দেখিয়েছিলেন, আজ আমরা সংস্কারের কথা বলি, কিন্তু সমাজ এবং ব্যবস্থায় সংস্কারের অনেক বড় প্রতীক ছিলেন স্বয়ং গুরু নানক দেবজি। আর আমরা এটাও দেখেছি, যখনই সমাজের হিতে, রাষ্ট্রের হিতে পরিবর্তন আসে, তখন অজান্তেই অনেক বিরোধের স্বর উচ্চকিত হয়। কিন্তু যখন সেই সংস্কারগুলির সার্থকতা সামনে দেখা যায়, সেই সংস্কারগুলি ফলপ্রসূ হয়ে উঠতে থাকে। তখন সবকিছু ঠিক হয়ে যায়। এই শিক্ষা আমরা গুরু নানক দেবজির জীবন থেকে পেয়েছি।

 

বন্ধুগণ,

 

আমরা সরকারের দায়িত্ব নেওয়ার পর কাশীর জন্য যখন উন্নয়নের কাজ শুরু হয়েছিল, বিরোধীরা শুধুই বিরোধিতার জন্য তখনও বিরোধিতা করেছিলেন। আপনারাই বলুন করেছিলেন কিনা? আপনাদের অবশ্যই হয়তো মনে আছে যে কাশীবাসী যখন ঠিক করেছিল যে বাবার দরবার পর্যন্ত বিশ্বনাথ করিডর নির্মিত হবে, দিব্যতা এবং সৌন্দর্য্যের পাশাপাশি, শ্রদ্ধালুদের সুবিধাও অনেক বাড়বে, অনেক নতুন নতুন আধুনিক পরিষেবা যুক্ত হবে, তখনও বিরোধীরা এই সংস্কার নিয়ে অনেক আওয়াজ তুলেছিলেন। অনেক বিরোধিতা প্রদর্শনও করেছিল। কিন্তু আজ বাবা বিশ্বনাথের কৃপায় কাশীর গৌরব পুনরুজ্জীবিত হয়ে উঠছে। অনেক শতাব্দী আগে বাবার দরবারের সঙ্গে, কাশী বিশ্বনাথ মন্দিরের সঙ্গে মা গঙ্গার যে প্রত্যক্ষ সম্পর্ক ছিল, সেটি আরেকবার প্রতিষ্ঠিত হচ্ছে।

 

বন্ধুগণ,

 

সৎ ভাবনা নিয়ে যখন ভালো কাজ করা হয়, তখন যত বিরোধিতাই থাকুক না কেন, সেই কাজ অবশ্যই বাস্তবায়িত হয়। এক্ষেত্রে অযোধ্যায় শ্রীরাম মন্দির নির্মাণের থেকে বড় উদাহরণ আর কী হতে পারে! অনেক দশক ধরে এই পবিত্র কর্মকে ঝুলিয়ে রেখে মানুষকে বিভ্রান্ত করার জন্য কতরকম চেষ্টাই না হয়েছে! কিভাবে মানুষের মনে ভয় সৃষ্টি করা হয়েছিল! কিন্তু যখন ভগবান রাম নিজেই চেয়েছেন, তখন মন্দিরও তৈরি হচ্ছে!

 

বন্ধুগণ,

 

অযোধ্যা, কাশী এবং প্রয়াগ – এই অঞ্চল আজ আধ্যাত্মিকতার পাশাপাশি পর্যটনের অপার সম্ভাবনা নিয়ে নিজেকে আরও সুন্দর করে সাজিয়ে তুলছে। অযোধ্যায় যত দ্রুতগতিতে উন্নয়ন হচ্ছে, প্রয়াগরাজে যেভাবে পরিবেশ-বান্ধব কুম্ভ মেলার আয়োজন সম্ভব হয়েছে, আর আজ কাশী যেভাবে উন্নয়নের পথে এগিয়ে চলেছে, এসব দেখে আজ সারা পৃথিবী থেকে পর্যটকরা এই অঞ্চলগুলিতে আসার জন্য এবং ঘুরে দেখার জন্য মুখিয়ে আছেন। বেনারসে কাশী বিশ্বনাথ মন্দির এলাকার পাশাপাশি, দুর্গাকুণ্ডের মতো সনাতন ধর্মের মাহাত্ম্য সম্বলিত কেন্দ্রগুলির উন্নয়ন করা হচ্ছে। অন্যান্য মন্দিরগুলির পরিক্রমা পথও সংস্কার করা হচ্ছে। ঘাটগুলির সৌন্দর্যায়ন দ্রুতগতিতে সম্পন্ন হয়েছে। এর ফলে, ‘সুবহ-এ-বেনারস’ অর্থাৎ, বারাণসীর ঊষাকালকে আরেকবার অলৌকিক আভা প্রদান করেছে। মা গঙ্গার জলও এখন নির্মলতর হয়ে উঠছে। এটাই তো প্রাচীন কাশীর আধুনিক সনাতন সংস্করণ। এটাই বেনারসকে সর্বদা 'বানিয়ে' রাখার 'রস' – সঞ্জীবিত রাখার রস।

 

বন্ধুগণ,

 

এখান থেকে আমি ভগবান বুদ্ধের তীর্থ সারনাথে যাব। সারনাথের সন্ধ্যাকে আরও আকর্ষনীয় করার জন্য, পর্যটনকে উজ্জীবিত করার জন্য এবং লোকশিক্ষার জন্যও আপনারা সকলে সুদীর্ঘকাল ধরে যে দাবি জানিয়ে আসছিলেন, সেটি আজ বাস্তবায়িত হতে চলেছে। লেজার শো-র মাধ্যমে এখন ভগবান বুদ্ধের করুণা, দয়া এবং অহিংসার বার্তা মূর্ত হয়ে উঠবে। এই বার্তা আজ আরও প্রাসঙ্গিক যখন গোটা বিশ্বের মানুষ হিংসা, অশান্তি এবং সন্ত্রাসের ভয়ে দুশ্চিন্তাগ্রস্থ। ভগবান বুদ্ধ বলতেন,

ন হি বেরেন বেরানি সম্মন্তী ধ কুদাচন

অবে রেন হি সম্মন্তী এস ধম্বো সনন্তনো

 অর্থাৎ, শত্রুতার মাধ্যমে কখনও শত্রুকে শান্ত করা যায় না, বন্ধুত্বের মাধ্যমে শত্রুকে শান্ত করা যায়। দেব দীপাবলির মাধ্যমে দেবত্বের পরিচয় করানো কাশীরও এটাই বার্তা যে আমাদের মন যেন এই দীপগুলির মতোই ঝলমলিয়ে ওঠে, সবকিছুকে যেন আমরা ইতিবাচকভাবে গ্রহণ করতে পারি, উন্নয়নের পথ যেন প্রশস্ত হয়। গোটা বিশ্বকে করুণা ও দয়াভাবের মাধ্যমে নিজের মধ্যে সমাহিত করতে পারি, আমার বিশ্বাস যে কাশী থেকে নির্গত এই বার্তা, আলোকের এই প্রাণশক্তি গোটা দেশের সঙ্কল্পগুলিকে বাস্তবায়িত করবে। দেশবাসী আত্মনির্ভর ভারতের যে যাত্রা শুরু করেছেন, ১৩০ কোটি ভারতবাসীর শক্তিতে আমরা সেটাকে বাস্তবায়িত করব।

 

আমার প্রিয় কাশীবাসী, এই শুভেচ্ছাগুলি জানিয়ে আপনাদের সবাইকে আরেকবার দেব দীপাবলি এবং এই আলোর উৎসবের অনেক অনেক শুভকামনা জানাই। করোনার ফলে সবার জন্য যে নিয়ম নির্ধারিত হয়েছে, সেগুলি পালন করতে হয়। সেজন্য আগে যেরকম ঘন ঘন আপনাদের মাঝে আসতাম, এখন সেরকম পারছি না। এবার অনেক দিন পর এলাম। মাঝে এতটা সময় চলে গেছে। আমি অনেক টান অনুভব করতাম। মনে হত যেন কিছু হারিয়ে ফেলেছি। মনে হত কতদিন আপনাদের দেখিনি। আজ এখানে এসে আমার মন এত আনন্দে ভরে উঠেছে, আপনাদের দেখতে পেয়েছি, মন প্রাণশক্তিতে ভরপুর হয়ে উঠেছে। কিন্তু আমি আপনাদের জানাই, শারীরিকভাবে আসতে না পারলেও আমি এই করোনার সঙ্কটকালে একদিনের জন্যও আপনাদের থেকে দূরে ছিলাম না। করোনা সংক্রমণ কিভাবে বাড়ছে?  হাসপাতালগুলির কী অবস্থা? সামাজিক সংস্থাগুলি কিভাবে কাজ করছে? কোনও গরীব মানুষ খালি পেটে ঘুমোচ্ছেন কিনা? - এই সমস্ত কিছুর খোঁজখবর আমি নিয়মিত নিয়েছি। আর বন্ধুগণ, যখন যেরকম প্রয়োজন হয়েছে, মনের মধ্যে সেবা ভাব নিয়ে মা অন্নপূর্ণার এই মাটির মানুষদের জন্য কাজ করে গেছি। কাউকে খালি পেটে থাকতে দিইনি। কাউকে বিনা চিকিৎসায় মরতে দিইনি। সেজন্য আমি এই সেবা ভাব নিয়ে এই গোটা সময়টা বিগত ৭-৮ মাস ধরে নিরন্তর দেশের প্রত্যেক প্রান্তের মানুষের জন্য বিশেষ করে গরীব মানুষের জন্য তটস্থ ছিলাম। আর এই কাজগুলি সমানভাবে কাশীতেও হয়েছে। আপনারাও একই রকম সেবাভাব নিয়ে নরনারায়ণের সেবা করেছেন; সেজন্য আজ আমি অত্যন্ত আনন্দিত। আজ এতদিন পর এই সেবা ভাব নিয়ে কাজ করার জন্য আরেকবার মা গঙ্গার তীরে দাঁড়িয়ে আপনাদের সবাইকে প্রণাম জানাই। আপনাদের সেবা ভাবকে প্রণাম জানাই। আপনারা দরিদ্র থেকে দরিদ্রতম মানুষদের জন্য যে ভাবনা-চিন্তা করেছেন, তাঁদের যেভাবে সেবা করেছেন, তা আমার মন ছুঁয়ে গেছে।  আমি আপনাদের যতই সেবা করি না কেন তা কম পড়বে! আমি আপনাদের আশ্বস্ত করতে চাই যে আমার পক্ষ থেকে আপনাদের সেবায় কখনও কোনও ত্রুটি থাকতে দেব না।

 

আমার জন্য আজকের এই উৎসব একটি গর্বের উৎসব, গৌরবের উৎসব। আজ এই আলো ঝলমল আবহে আপনাদের মাঝে আসার সুযোগ পেয়েছি। করোনাকে পরাস্ত করে আমরা উন্নয়নের পথে দ্রুতগতিতে এগিয়ে যাব, মা গঙ্গার ধারার মতো অবিরাম বয়ে যাব। কোনরকম বাধা-সঙ্কটের পরোয়া না করে শতাব্দীর পর শতাব্দীকাল ধরে মা গঙ্গা যেমন প্রবাহিত, আমাদের উন্নয়নের ধারাও তেমনই অব্যাহত থাকবে - এই বিশ্বাস নিয়ে আজ আমি এখান থেকে দিল্লি ফিরে যাব। আমি আরেকবার আপনাদের সবাইকে হৃদয় থেকে কৃতজ্ঞতা জানাতে চাই।

 

জয় কাশী, জয় ভারতমাতা।

 

হর হর মহাদেব!

 

***

 

 

CG/SB/DM


(Release ID: 1678395) Visitor Counter : 263