প্রধানমন্ত্রীরদপ্তর

কোভিড-১৯ সংক্রমণ নিয়ে মুখ্যমন্ত্রীদের সঙ্গে ভার্চ্যুয়াল বৈঠকে প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্য

Posted On: 24 NOV 2020 6:54PM by PIB Kolkata

নয়াদিল্লি, ২৪ নভেম্বর, ২০২০

 

সবার আগে আমি সমস্ত মাননীয় মুখ্যমন্ত্রীদের প্রতি কৃতজ্ঞতা জানাই আপানারা সময় বের করে এই বৈঠকে এসেছেন এবং অত্যন্ত গুরুত্ব সহকারে নিজেদের বক্তব্য রেখেছেন। আপনাদের প্রতি আমার অনুরোধ এতক্ষণ পর্যন্ত যা কিছু আলোচনা হয়েছে, আমরা যতটা সাফল্য অর্জন করতে পেরেছি; তার মধ্যে সমস্ত রাজ্যের অবদান রয়েছে, আধিকারিক পর্যায়ে প্রত্যেকের অবদান রয়েছে। সমগ্র বিশ্বের অভিজ্ঞতাগুলি আমরা বিনিময় করেছি কিন্তু তবুও মুখ্যমন্ত্রীদের একটি বিশেষ অভিজ্ঞতা থাকে।

সামাজিক জীবনে যাঁরা দীর্ঘকাল কাজ করেন, তাঁদের একটি বিশেষ দৃষ্টিকোণ তৈরি হয়। সেজন্য এই বিষয়গুলিতে আপনাদের পরামর্শ আমার জন্য অত্যন্ত মূল্যবান। আপনাদের প্রতি অনুরোধ, সম্ভব হলে আপনাদের লিখিত পরামর্শ যত দ্রুত সম্ভব আমাকে পাঠান। আজ যেমন অনেকে অনেক গুরুত্বপূর্ণ বিষয় তুলে ধরেছেন, এটা হওয়া উচিৎ, সেটা হওয়া উচিৎ – এর থেকে বেশি করে আপনারা আমাকে পরামর্শ দিন। সেই পরামর্শগুলি হাতে পেলে আমাদের রণকৌশল রচনায় অনেক সুবিধা হবে। আর এই রণকৌশল আমরা কারোর ওপর চাপিয়ে দিতে চাই না। কেন্দ্রীয় সরকার সিদ্ধান্ত নেবে আমরা এটা  করব, আর রাজ্য সরকারকেও বাধ্য হয়ে সেগুলি পালন করতে হবে এমন নয়। আমাদের সবাইকে মিলেমিশে এই লড়াই এগিয়ে নিয়ে যেতে হবে এবং সেজন্য প্রত্যেক মাননীয় মুখ্যমন্ত্রীর উল্লেখ করা প্রতিটি বিষয়ের অত্যন্ত গুরুত্ব রয়েছে।

করোনা সংক্রমণ নিয়ে যতগুলি প্রেজেন্টেশন হয়েছে সেগুলি থেকেও অনেক তথ্য উঠে এসেছে। আজ আমি এই বৈঠকের আগে কয়েকজন মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে কথা বলেছি যাঁদের রাজ্যে পরিস্থিতি একটু খারাপ। যেখানে ভ্যাক্সিনের প্রশ্ন উঠছে, ভ্যাক্সিনের পরিস্থিতি এবং তার সরবরাহ নিয়ে কিছু আলোচনা হয়েছে। মিডিয়ায় যে ধরনের আলাপ-আলোচনা হয় সেরকম নয়, এখানে অনেক গুরুত্ব দিয়ে আলোচনা হয়েছে। আমাদের এই বিষয়গুলিকে অথেন্টিক্যালি এগিয়ে নিয়ে যেতে হবে, কারণ আমরা প্রত্যেকেই একটা সিস্টেমের অংশ। কিন্তু তবুও অনেক চিত্র স্পষ্ট হয়েছে।

একটা সময় ছিল যখন আমাদের সকলের সামনে একটি অজানা শক্তির বিরুদ্ধে লড়াইয়ের চ্যালেঞ্জ ছিল। কিন্তু দেশের সংগঠিত প্রচেষ্টার ফলে এই সমস্যার বিরুদ্ধে আমরা কড়া প্রতিরোধ গড়ে তুলেছি। ফলে, লোকসান ন্যূনতম হয়েছে।

আজ সুস্থতার হার এবং মৃত্যু হার উভয় ক্ষেত্রেই ভারত বিশ্বের অধিকাংশ দেশের তুলনায় অনেক বেশি সামলে থাকা অবস্থায় রয়েছে। আমাদের সকলের প্রচেষ্টায় দেশে টেস্টিং থেকে শুরু করে চিকিৎসা পর্যন্ত একটি বড় নেটওয়ার্ক আজ অত্যন্ত দক্ষতার সঙ্গে কাজ করছে। এই নেটওয়ার্কটিকে লাগাতার বিস্তারিত করা হচ্ছে।

পিএম কেয়ার্স-এর মাধ্যমে অক্সিজেন এবং ভেন্টিলেটর জোগানের দিকে বিশেষ জোর দেওয়া হয়েছে।  চেষ্টা করা হচ্ছে যাতে মেডিকেল কলেজ এবং জেলা হাসপাতালগুলিকে অক্সিজেন জেনারেশনের ক্ষেত্রে আত্মনির্ভর করে তোলা যায়। সেজন্য এখন ১৬০টিরও বেশি নতুন অক্সিজেন প্ল্যান্টের নির্মাণ প্রক্রিয়া যথারীতি শুরু হয়ে গেছে। উৎপাদনও কোনও কোনও জায়গায় শুরু হয়েছে। পিএম কেয়ার্স তহবিল থেকে দেশের ভিন্ন ভিন্ন হাসপাতালে হাজার হাজার নতুন ভেন্টিলেটরের জোগানও সুনিশ্চিত করা হয়েছে। ভেন্টিলেটর কেনার জন্য পিএম কেয়ার্স ফান্ড থেকে ইতিমধ্যেই ২ ০০০ কোটি টাকা মঞ্জুর করা হয়েছে।

 

বন্ধুগণ,

করোনার মোকাবিলায় বিগত ৮-১০ মাসের অভিজ্ঞতার পর দেশের কাছে এখন পর্যাপ্ত তথ্য রয়েছে। করোনা ব্যবস্থাপনার ক্ষেত্রেও একটি ব্যাপক অভিজ্ঞতা রয়েছে। পরবর্তী রণনীতি রচনার সময় আমাদের বিগত কয়েক মাসে দেশের জনগণ, আমাদের সমাজ কিভাবে সাড়া দিয়েছে, কিভাবে প্রতিক্রিয়া জানিয়েছে, এই বিষয়গুলি আমাদের আরও নিবিড়ভাবে বুঝতে হবে। দেখুন, করোনার সঙ্কটকালে ভারতের জনগণের ব্যবহারও একরকম ভিন্ন ভিন্ন পর্যায়ে ভিন্ন রকমের ছিল এবং অঞ্চলভেদেও ভিন্ন রকমের ছিল।

যেমন, প্রথম পর্যায়ে সকলের মনে একটা ভয় ছিল, আতঙ্ক ছিল। কেউই বুঝতে পারছিল না যে তাঁ কী হতে পারে! গোটা বিশ্বের পরিস্থিতি দেখে সবাই ঘাবড়ে যাচ্ছিল। প্রত্যেকেই আতঙ্কগ্রস্ত ছিল এবং সেই হিসেবেই সবাই প্রতিক্রিয়া দেখাচ্ছিল। আমরা দেখেছি যে গোড়ার দিকে বেশ কিছু আত্মহত্যার ঘটনাও ঘটেছে। যখনই জেনেছে তাঁর করোনা হয়েছে, কেউ কেউ আত্মহত্যা করে নিয়েছে।

এরপর ধীরে ধীরে দ্বিতীয় পর্যায় শুরু হয়। দ্বিতীয় পর্যায়ে মানুষের মনে ভয়ের পাশাপাশি অন্যদের প্রতি সন্দেহ বাড়ে। তাদের মনে হয় যে অমুকের করোনা হয়েছে মানে খুবই মারাত্মক ব্যাপার, তাকে তাড়াও। এমনকি বাড়ির মানুষের প্রতিও অনেকের মনে ঘৃণার আবহ গড়ে ওঠে। এই রোগের ফলে সমাজ থেকে বিচ্ছিন্ন হওয়ার ভয়ে অন্য ধরনের আতঙ্কে ভুগতে শুরু করে। এর ফলে করোনা হলেও অনেকে সংক্রমণকে লুকোনো শুরু করে। তাদের মনে হয় যে বলা উচিৎ নয়, নাহলে সমাজ থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ব। তারপর তারা ধীরে ধীরে বুঝতে শুরু করে এই আতঙ্ক থেকে বেরিয়ে আসে।

তারপর আসে তৃতীয় পর্যায়। তৃতীয় পর্যায়ে মানুষ অনেকটাই সামলে ওঠে। এখন সংক্রমণকে স্বীকার করতে শুরু করে এবং ঘোষণাও করতে শুরু করে - আমার এই অবস্থা, আমি আইসোলেশনে থাকছি, নিজেকে কোয়ারেন্টাইনে রাখছি ইত্যাদি। অর্থাৎ, এক ধরনের সচেতনতার ফলে একে অন্যকে আরও সচেতন করে তুলতে শুরু করে।

দেখুন, আপনারাও হয়তো লক্ষ্য করেছেন যে অধিকাংশ নাগরিক এই বিষয়টিকে সচেতনভাবে গুরুত্ব দিতে শুরু করে এবং সতর্কও থাকতে শুরু করে। আর এই তৃতীয় পর্যায়ের পরেই আমরা এখন চতুর্থ পর্যায়ে পৌঁছেছি যখন করোনা থেকে সুস্থতার হার বৃদ্ধি পেয়েছে এবং জনগণের মনে হচ্ছে যে এই ভাইরাস তেমন লোকসান করতে পারছে না, বা ভাইরাসটি দুর্বল হয়ে পড়েছে। অনেকে এটাও ভাবতে শুরু করে - যদি অসুস্থ হয়েও পড়ি, তাহলে সুস্থও হয়ে যাব!

এই ভাবনা থেকেই শুরু হয় গাফিলতি। এই গাফিলতির পর্যায়টি অনেক ব্যাপক হয়ে পড়ে। আর সেজন্য আমি উৎসবের মরশুমের গোড়াতেই বিশেষ করে, জাতির উদ্দেশে বার্তা দিয়ে সকলের কাছে হাত জোড় করে প্রার্থনা করেছিলাম, - ঢিলে দেবেন না!  কারণ, এখনও কোন ভ্যাক্সিন আসেনি, এখনও কোন নির্দিষ্ট ওষুধ আবিষ্কৃত হয়নি। একটাই পথ বাকি আছে, আমরা প্রত্যেকে কিভাবে নিজেদের পরস্পরের কাছ থেকে বাঁচাব এবং আমরা যেসব ভুল করেছি সেগুলিও এক একটি বিপদে পরিণত হয়েছি এবং আমরা গাফিলতি করতে শুরু করেছি।

এই চতুর্থ পর্যায়ে আমাদের জনগণকে আরেকবার করোনার মারাত্মক প্রভাব সম্পর্কে সচেতন করে তুলতে হবে। আমাদের ভ্যাক্সিন নিয়ে মাথা গরম করলে চলবে না। এ কাজ যাঁদের করার তাঁরা করছেন। আমাদের শারীরিক দূরত্ব এবং ব্যক্তিগত ও সামাজিক পরিচ্ছন্নতা বজায় রেখে করোনা প্রতিরোধকেই অগ্রাধিকার দিতে হবে। আমাদের যে কোনও পরিস্থিতিতে ঢিলে দিলে চলবে না। হ্যাঁ, গোড়ার দিকে কিছু বাধা-নিষেধ অবশ্যই আরোপ করতে হয়েছিল যাতে আমাদের প্রতিরোধী চিকিৎসা ও আনুষঙ্গিক ব্যবস্থাগুলিকে বিকশিত করে তুলতে পারি। পাশাপাশি, জনগণকে করোনার বিরুদ্ধে লড়াইয়ে ঐক্যবদ্ধ করে তুলতে পারি। এখন আমাদের কাছে টিম প্রস্তুত আছে। জনগণও প্রস্তুত আছে। সবাই যদি সচেষ্ট থাকেন, তাহলে পরিস্থিতি আরও সামলানো যেতে পারে। যে নিয়মাবলী আমরা প্রস্তুত করেছি, সেগুলিকে যথাযথভাবে বাস্তবায়িত করতে হবে। আর আমাদের এই বাধা-নিষেধ পেরিয়ে কেউ যেন বিপদ ঢেকে না আনেন তা নিয়ে অবশ্যই ভাবতে হবে এবং প্রতিরোধ করতে হবে।

বিপর্যয়ের গভীর সমুদ্র থেকে বেড়িয়ে আমরা এখন কিনারার দিকে এগিয়ে চলেছি। আমাদের সকলের সঙ্গে যেন তেমনটা না হয় যেমনটি পুরনো একটি কবিতায় লেখা আছে। কবিতাটি হল -

“আমাদের নৌকাও

সেখানেই ডুবেছে, যেখানে জল কম ছিল।"

এই পরিস্থিতি আমাদের যেন না হয়।

 

বন্ধুগণ,

আজ আমরা দেখতে পাচ্ছি, সারা পৃথিবীতে যে দেশগুলিতে করোনা সবচাইতে বেশি হ্রাস পেয়েছিল, সেখানে আবার দ্রুতগতিতে সংক্রমণ ছড়াচ্ছে। আপনাদের সম্পূর্ণ চার্ট তুলে ধরেছি। আমাদের দেশেও কয়েকটি রাজ্যে এই প্রবণতা অত্যন্ত চিন্তাজনক। সেজন্য আমাদের সবাইকে শাসন এবং প্রশাসনকেও আগের থেকে অনেক বেশি সচেতন, অনেক বেশি সতর্ক থাকার প্রয়োজন রয়েছে। আমাদের সংক্রমণকে হ্রাস করানোর জন্য নিজেদের প্রচেষ্টাকে আরকটু গতিশীল করতে হবে। টেস্টিং থেকে শুরু করে কনফারমেশন, কন্ট্যাক্ট ট্রেসিং এবং সংশ্লিষ্ট তথ্যকে সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার দিয়ে আমাদের নিরন্তর কাজ করে যেতে হবে। করোনা পজিটিভিটি রেটকে ৫ শতাংশের পরিধির মধ্যে আনতে হবে, আর আমি মনে করি ছোট ছোট ক্ষেত্রে লক্ষ্য স্থির করে কাজ করতে হবে - অমুক জায়গায় কেন বেশি বৃদ্ধি পেয়েছে? অমুক জায়গায় কেন মাঝারি বৃদ্ধি পেয়েছে? অমুক জায়গায় কেন দু'জন রোগী বেড়েছে? রাজ্য পর্যায়ে আলোচনা করার বদলে স্থানীয় স্তরে যে যে অঞ্চলে করোনা ছড়াচ্ছে, সেই অঞ্চলগুলিকে নিয়ে আমাদের আলাদা করে বিশ্লেষণ করতে হবে। তাহলেই হয়তো আমরা দ্রুত সমস্যার মোকাবিলা করতে পারব।

দ্বিতীয়ত, আমরা সবাই অনুভব করেছি যে দেশে আরটি-পিসিআর-এর অনুপাত বাড়াতে হবে। যে বাড়িগুলিতে আইসোলেটেড রোগী আছে, তাদের মনিটরিং আরও উন্নত পদ্ধতিতে করতে হবে। আপনারাও জানেন , যদি সামান্য গাফিলতি করা হয়, তাহলে রোগীর পরিস্থিতি মারাত্মক হয়ে উঠতে পারে। আর মারাত্মক পরিস্থিতিতে হাসপাতালে নিয়ে গেলে অনেক সময় তাঁর জীবন রক্ষা সম্ভব নাও হতে পারে। যে গ্রাম এবং কমিউনিটি পর্যায়ে স্বাস্থ্যকেন্দ্রগুলি আছে তাদেরকেও আমাদের করোনা মোকাবিলায় আরও ক্ষমতায়িত করে তুলতে হবে। গ্রামের চারপাশের পরিকাঠামো উন্নয়ন করতে হবে। অক্সিজেনের যোগান পর্যাপ্ত রাখতে হবে। এই বিষয়গুলিতে নজর দিলে আমরা আরও ভালোভাবে করোনার বিরুদ্ধে লড়াই করতে পারব। আমাদের লক্ষ্য হওয়া উচিৎ মৃত্যু হারকে ১ শতাংশের নিচে নিয়ে আসা। আর তা সম্ভব হবে যেভাবে আমি বলেছি, ছোট ছোট এলাকাগুলিকে স্বতন্ত্রভাবে দেখতে হবে। একজনের মৃত্যু হলেও সেটি কেন হল সেদিকে লক্ষ্য দিতে হবে। তাহলেই আমরা পরিস্থিতিকে সামলাতে পারব। আর সব থেকে বড় কথা, সচেতনতা অভিযানে যেন কোনরকম ঢিলেমি না দেওয়া হয়। করোনার বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তুলতে প্রয়োজনীয় বার্তা পাঠানোর জন্য সমাজকে একজোট করে রাখতে হবে। যেমন কিছুদিন আগে প্রতিটি সংগঠন, প্রত্যেক প্রভাবশালী ব্যক্তিকে আমরা একাজে লাগিয়েছিলাম। তাঁদের আরেকবার সক্রিয় করে তুলতে হবে।

 

বন্ধুগণ,

আপনারা খুব ভালোভাবেই জানেন, করোনার ভ্যাক্সিন নিয়ে আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রে এবং জাতীয় ক্ষেত্রে কী ধরনের খবর সংবাদমাধ্যমে আসছে! আজ বিশ্বে এবং দেশের গবেষণা ক্ষেত্রে প্রকৃত পরিস্থিত কি তা নিয়ে আজকের প্রেজেন্টেশনে আপনাদের সম্পূর্ণ বিস্তারিত বলা হয়েছে। ভ্যাক্সিন গবেষণার কাজ প্রায় শেষ পর্যায়ে রয়েছে। ভারত সরকার এক্ষেত্রে প্রত্যেক ভ্যাক্সিনের অগ্রগতির দিকে সুক্ষ্মভাবে নজর রেখেছে। প্রত্যেকের সঙ্গে সম্পর্ক গড়ে তোলা হয়েছে। আর এখনও ঠিক করা সম্ভব হয়নি যে ভ্যাক্সিনের একটা ডোজ হবে, দুটি ডোজ না তিনটি ডোজ হবে। এখন এটাও ঠিক করা যায়নি যে ভ্যাক্সিনের দাম কত হবে এবং কিভাবে সেই দাম নির্ধারণ করা হবে।

অর্থাৎ, এখনও এই সমস্ত প্রশ্নের কোনও জবাব আমাদের কাছে নেই। কারণ, যাঁরা গবেষণার মাধ্যমে এগুলি তৈরি করছেন আর তাদেরকে যাঁরা অর্থ জোগাচ্ছেন, বিশ্বের বিভিন্ন কর্পোরেট সংস্থা তাদের মধ্যেও প্রতিযোগিতা রয়েছে। বিশ্বের বিভিন্ন দেশের নিজস্ব কূটনৈতিক স্বার্থও রয়েছে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার বিভিন্ন আদেশের জন্যও আমাদের অপেক্ষা করতে হয়। তাঁদের মাধ্যমে আমরা আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রেও এই বিষয়ে আলাপ-আলোচনা জারি রেখেছি। আমাদের ভারতীয় গবেষক এবং ওষুধ প্রস্তুতকারকদের সঙ্গেও নিয়মিত যোগাযোগ রয়েছে। তাছাড়া বিভিন্ন গ্লোবাল রেগুলেটর, অন্যান্য দেশের সরকার, বহুজাতিক প্রতিষ্ঠান এবং আন্তর্জাতিক ওষুধ কোম্পানিগুলির সঙ্গেও যতটা সম্ভব সম্পর্ক বৃদ্ধির চেষ্টা করা হচ্ছে, যাকে বলে রিয়েল টাইম কমিউনিকেশন! এর জন্য সার্বিক প্রচেষ্টার মাধ্যমে ধীরে ধীরে একটি কার্যকরী ব্যবস্থা গড়ে উঠেছে।

 

বন্ধুগণ,

করোনার বিরুদ্ধে আমাদের লড়াইয়ের মাধ্যমে আমরা গোড়া থেকেই প্রত্যেক দেশবাসীর জীবন বাঁচানোকে সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার দিয়েছি। এখন ভ্যাক্সিন আসার পরও আমাদের অগ্রাধিকার এটাই হবে যাতে সবাইকে করোনা ভ্যাক্সিন দেওয়া যায়। এক্ষেত্রে কোনও বিবাদকে প্রশ্রয় দেওয়া যায় না। কিন্তু করোনার ভ্যাক্সিন-সংশ্লিষ্ট ভারতবাসীর অভিযান আমাদের প্রত্যেক নাগরিকের জন্য এক ধরনের জাতীয় দায়িত্বের মতো। এত বড় টিকাকরণ অভিযান যাতে সহজে শৃঙ্খলাবদ্ধভাবে এবং সুদূরপ্রসারী প্রভাব নিয়ে দীর্ঘকাল ধরে চালিয়ে যাওয়া যেতে পারে, সেজন্য আমাদের সকলকে, কেন্দ্রীয় সরকার, রাজ্য সরকার, স্থানীয় প্রশাসনগুলি এবং প্রত্যেক সংগঠনকে ঐক্যবদ্ধ হয়ে সংহতি রেখে একটি টিম রূপে কাজ করতে হবে।

 

বন্ধুগণ,

ভ্যাক্সিন নিয়ে ভারতের এমন অভিজ্ঞতা রয়েছে যা বিশ্বের অনেক বড় দেশের নেই। আমাদের দেশে এমন ব্যবস্থা রয়েছে যাতে আমরা ভ্যাক্সিন দেওয়ার ক্ষেত্রে যত গতিতে কাজ করতে পারি, ততটাই নিরাপত্তা সুনিশ্চিত করতে পারি। করোনা ভ্যাক্সিনের ক্ষেত্রেও আমরা সমস্ত রকম বৈজ্ঞানিক পরীক্ষা-নিরীক্ষার পরই আমাদের নাগরিকদের শরীরে ভ্যাক্সিন দেওয়ার অনুমতি দিতে পারি। ভ্যাক্সিন সরবরাহ কিভাবে কার্যকর করা হবে তা নিয়ে সমস্ত রাজ্যের সঙ্গে মিলেমিশে তালিকা তৈরি করা হচ্ছে।

আমাদের দেশে ভ্যাক্সিন অগ্রাধিকারের ভিত্তিতে কাদেরকে আগে দেওয়া হবে তা সমস্ত রাজ্যের সঙ্গে মিলে একটি খসড়া তৈরি করা হয়েছে। সেই খসড়া আপনাদের সামনে রয়েছে। এক্ষেত্রে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার কী কী নির্দেশ রয়েছে সেটাও আমরা আপনাদের সামনে রেখেছি, কিন্তু তবুও এই সিদ্ধান্ত আমরা সবাই মিলেমিশে নেব। প্রত্যেক রাজ্যের পরামর্শকেই সর্বাধিক গুরুত্ব দেওয়া হবে, কারণ তারা জানেন তাদের রাজ্যে কিভাবে টিকা দিলে ভালো হয়। প্রত্যেক রাজ্যের জন্য অতিরিক্ত কোল্ড চেন স্টোরেজেরও প্রয়োজন হবে।

আমার মনে হয়, রাজ্যগুলির এখন এইসব চিন্তা মাথায় রেখে টিকাদান অভিযান কিভাবে সম্পাদন করবেন সেই প্রস্তুতি শুরু করে দেওয়া উচিৎ। কোথায় কোথায় টিকাদান কেন্দ্র হবে, তার প্যারামিটার কী হবে তা নিয়ে তথ্য প্রত্যেক বিভাগের কাছে চলে গেছে। কিন্তু এগুলিকে বাস্তবায়িত করার জন্য আমাদের প্রস্তুত থাকতে হবে। আর প্রয়োজন পড়লে অতিরিক্ত সরবরাহ সুনিশ্চিত করা হবে। আর এর বিস্তারিত পরিকল্পনা অতি দ্রুত রাজ্য সরকারগুলির সঙ্গে মিলে ঠিক করে নেওয়া হবে। এক্ষেত্রে আমাদের রাজ্যগুলি এবং কেন্দ্রীয় সরকারের টিম একসঙ্গে মিলেমিশে কাজ করছে।

কেন্দ্রীয় সরকার রাজ্যগুলির কাছে কিছুদিন আগে যে রাজ্যস্তরে স্টিয়ারিং কমিটি এবং রাজ্য ও জেলাস্তরে টাস্ক ফোর্স গড়ে তোলার অনুরোধ জানিয়েছে। আর আমি চাই যে ব্লক লেভেলেও আমরা যত দ্রুত ব্যবস্থা চালু করতে পারব, তত তাড়াতাড়ি সুনির্দিষ্ট ব্যক্তিদের চিহ্নিত করে তাঁদের ওপর দায়িত্ব দিতে পারব। সেই কমিটিগুলির নিয়মিত বৈঠক হবে, তাঁদের প্রশিক্ষণ হবে, তাঁদের তদারকি হবে, আর অনলাইন প্রশিক্ষণ তো এখনই শুরু হতে পারে। আমাদের দৈনন্দিন কাজের সঙ্গে করোনার বিরুদ্ধে লড়াই জারি রেখে যত দ্রুত সম্ভব একটি ব্যবস্থা গড়ে তুলতে হবে - এটা আমার অনুরোধ!

আপনারা যেসব প্রশ্ন তুলেছেন, যেমন কোন ভ্যাক্সিনের কতটা দাম, এই প্রশ্নগুলির উত্তর আমরা ঠিকভাবে জানিনা। দুটি ভারতীয় ভ্যাক্সিনও এখন অন্তিম পর্যায়ে রয়েছে। কিন্তু তারা প্রত্যেকেই বাইরের টিমের সঙ্গে মিলেমিশে কাজ করছে। ভারতের বাইরে যেসব ভ্যাকসিন প্রস্তুত হচ্ছে, তাদের উৎপাদনের ক্ষেত্রেও ভারতীয় কোম্পানিগুলির সঙ্গে মিলেমিশে উৎপাদনের প্রক্রিয়া নিয়ে কথাবার্তা চলছে। কিন্তু এই সমস্ত বিষয়ে আমরা জানি যে মনে করুন, ২০ বছর আগে কোনও ওষুধ জনপ্রিয় হয়েছে এবং ২০ বছর ধরে লক্ষ লক্ষ মানুষ সেটি ব্যবহার করেছে এবং সেটি জনপ্রিয়ও হয়েছে। কিন্তু কিছু মানুষের শরীরে সেই ওষুধ খেলে রিঅ্যাকশন হয়, আজও হয়, ২০ বছর পরেও হয়। এটা তো হতেই পারে! কাজেই যে কোনও সিদ্ধান্তকে বৈজ্ঞানিক দাড়ি-পাল্লায় মাপা উচিৎ। যাঁরা এই সিদ্ধান্ত নেবেন, সেই কর্তৃপক্ষের শংসাপত্রের ব্যবস্থা গড়ে তুলতে হবে।

আমরা সমাজ জীবনে অনেক কিছু চিন্তা করি। কিন্তু আমরা জানি যে আমরা সবাই বৈজ্ঞানিক নই। আমাদের সমস্ত বিষয়ে বিশেষ জ্ঞান নেই। সেজন্য আমাদের বিশ্বে যে ব্যবস্থার মাধ্যমে কোনও স্বীকৃত ওষুধ আসে, সেই ব্যবস্থাকে স্বীকার করতে হবে। আর তা স্বীকার করেই আমরা এগিয়ে যাব। কিন্তু আপনাদের অনুরোধ করব, ভ্যাক্সিন নিয়ে আপনাদের মনে যে বিশেষ পরিকল্পনা রয়েছে, কিভাবে আপনারা এর সরবরাহকে প্রত্যেক মানুষের উপকারে পৌঁছে দেবেন, সেই বিস্তারিত পরিকল্পনা লিখে যত দ্রুত সম্ভব আমাদের কাছে পাঠান। তাতে আমাদের সিদ্ধান্ত নিতে অনেক সুবিধা হবে। সেই সিদ্ধান্তে আপনাদের ভাবনাচিন্তার শক্তি যুক্ত হবে। রাজ্যগুলির অভিজ্ঞতাকে আমি অত্যন্ত গুরুত্ব দিই কারণ রাজ্যগুলিকেই এই টিকাকরণ অভিযানকে বাস্তবায়িত করতে হবে। আর আমি চাই যে আপনারা সকলেই এক্ষেত্রে সক্রিয় অংশগ্রহণের মাধ্যমে এই অভিযানকে সাফল্যমণ্ডিত করে তুলবেন। এটা আমার আপনাদের প্রতি প্রত্যাশা।

কিন্তু আমি আগেই বলেছি, ভ্যাক্সিন আমাদের হাতে এলে কিভাবে টিকাকরণ অভিযান সম্পাদিত হবে সেই পরিকল্পনা নিজের জায়গায় রয়েছে। সে কাজ তো আমরা করবই। কিন্তু করোনার বিরুদ্ধে লড়াই একটুও যেন ঢিলে না পড়ে। সামান্য গাফিলতি থাকা উচিৎ নয়। এটাই আমার আপনাদের সকলের প্রতি অনুরোধ।

আজ তামিলনাড়ু ও পুদুচেরির মুখ্যমন্ত্রীদের সঙ্গে কথা বলার সৌভাগ্য হল। অন্ধ্রপ্রদেশের মুখ্যমন্ত্রীকে সকালে ফোন করতে পারিনি। আমাদের দেশের পূর্ব সমুদ্রতটে একটি ঘূর্নিঝড় সক্রিয় হয়েছে। আগামীকাল হয়তো তামিলনাড়ু, পুদুচেরি এবং অন্ধ্রপ্রদেশের কিছুটা অংশ এর দ্বারা বিধ্বস্ত হবে। কেন্দ্রীয় সরকারের সমস্ত টিম সেই বিপর্যয় মোকাবিলায় প্রস্তুত। তাঁরা সেখানে পৌঁছে গেছেন।

আমি আজ দু'জন মাননীয় মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে কথা বলেছি। এই বৈঠকের পর আমি অন্ধ্রপ্রদেশের মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে কথা বলব। কিন্তু সকলের জন্যই কেন্দ্রীয় সরকার ও রাজ্য সরকার মিলেমিশে ওই অঞ্চল থেকে মানুষদের সরিয়ে আনাটাই অগ্রাধিকার হিসেবে বিবেচিত হবে। কারণ, মানুষের জীবন বাঁচানোকে আমরা অগ্রাধিকার দেব।

আরেকবার আমি আপনাদের সকলকে কৃতজ্ঞতা জানাই। কারণ, আপনারা সবাই সময় বের করে এই বৈঠকে এসেছেন। কিন্তু আপনাদের প্রতি অনুরোধ রাখব, যত দ্রুত সম্ভব আমাকে সমস্ত তথ্য ও উপদেশ পাঠান।

ধন্যবাদ!

 ***

 

 

CG/SB/DM


(Release ID: 1676183)