প্রধানমন্ত্রীরদপ্তর

আন্তর্জাতিক বিনিয়োগকারীদের ভার্চুয়াল গোল টেবিল বৈঠকে পৌরোহিত্য করেছেন প্রধানমন্ত্রী

Posted On: 05 NOV 2020 8:50PM by PIB Kolkata

নতুনদিল্লি, ৫ নভেম্বর, ২০২০ 

 

প্রধানমন্ত্রী শ্রী নরেন্দ্র মোদী আজ আন্তর্জাতিক বিনিয়োগকারীদের ভার্চ্যুয়াল গোল টেবিল বৈঠকে পৌরোহিত্য করেছেন। 

বৈঠকে প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, এ বছর ভারত আন্তর্জাতিক মহামারীর বিরুদ্ধে সাহসের সঙ্গে লড়াই করেছে। সারা বিশ্ব দেখেছে ভারতের জাতীয় চরিত্র। সারা বিশ্ব ভারতের প্রকৃত শক্তিও দেখেছে। ভারত সফলভাবে তার  দায়িত্ববোধ, সহানুভূতি, জাতীয় ঐক্যের ভাবনার প্রতিফলন ঘটিয়েছে, যার মাধ্যমে ভারতের পরিচিতি প্রকাশ পেয়েছে। 

তিনি বলেছেন,  ভারত এই মহামারীর মধ্যেও ভাইরাসের বিরুদ্ধে লড়াই কিংবা আর্থিক স্থিরতাকে নিশ্চিত করার ক্ষেত্রে  তার ভূমিকা দেখিয়েছে । এই দৃঢ়তার মাধ্যমে আমাদের ব্যবস্থার শক্তি, আমাদের জনসাধারণের সমর্থন ও আমাদের সরকারের নীতির স্থায়িত্ব প্রতিফলিত হয়েছে।  

শ্রী মোদী বলেছেন, আমরা নতুন এক ভারত গড়ে তুলছি যেখানে পুরনো ব্যবস্থাগুলিকে সরিয়ে ফেলা হচ্ছে। ভারতের আত্মনির্ভর হওয়ার যে চাহিদা ౼ তার মাধ্যমে শুধুমাত্র একটি সুপরিকল্পিত অর্থনৈতিক কৌশলই গ্রহণ করা হচ্ছে না, এই কৌশলের মাধ্যমে দেশের ব্যবসা-বাণিজ্যের ক্ষমতা,  কর্মীদের দক্ষতা ভারতকে আন্তর্জাতিক স্তরে উৎপাদন ক্ষেত্রের চালিকাশক্তিতে পরিণত করছে। এই কৌশলের মাধ্যমে  প্রযুক্তি ক্ষেত্রে ভারত দক্ষতা প্রয়োগ করে আন্তর্জাতিক উদ্ভাবন কেন্দ্রে পরিণত হচ্ছে। বিশ্বের উন্নয়নে অবদান রাখার জন্য আমরা আমাদের মানবসম্পদ এবং তাদের মেধাকে ব্যবহার করছি। 

 

তিনি বলেছেন, আজ বিনিয়োগকারীরা সেইসব প্রতিষ্ঠানের দিকে ঝুঁকছেন যেগুলি পরিবেশগত, সামাজিক এবং পরিচালন ক্ষেত্রে যথেষ্ট দক্ষ। ভারতে ইতিমধ্যেই সেই ব্যবস্থা রয়েছে এবং এ দেশের প্রতিষ্ঠানগুলি এ ব্যাপারে যথেষ্ট অগ্রণী। ভারত বিশ্বাস করে, পরিবেশগত, সামাজিক ও পরিচালনগত উন্নতির পথ অনুসরণ করতে হবে। 

প্রধানমন্ত্রী জানিয়েছেন যে ভারত বিনিয়োগদের কাছে গণতান্ত্রিক, জনবিন্যাসগত এবং বৈচিত্র্যপূর্ণ চাহিদার সুযোগ দিচ্ছে। তিনি বলেছেন “ আমাদের বৈচিত্র্যের সুযোগ আপনারা ব্যবহার করতে পারবেন যার মাধ্যমে আপনারা একটি বাজারের মধ্যে অনেকগুলি বাজার পাবেন। বিভিন্ন ধরনের চাহিদা পাওয়া যাবে। এ দেশে নানা ধরনের আবহাওয়া পাবেন এবং বিভিন্ন স্তরের উন্নয়ন পাবেন।“     

তিনি ব্যাখ্যা করে বলেছেন, সরকার কিভাবে বিভিন্ন সমস্যার  দীর্ঘমেয়াদি এবং স্থিতিশীল সমাধান করতে উদ্যোগী হয়েছে । এর মধ্যে বিনিয়োগকারীদের চাহিদাগুলি  রয়েছে ౼ বিশ্বাস অর্জন, যার মাধ্যমে সবথেকে ভালো এবং নিরাপদ দীর্ঘস্থায়ী লাভ তারা তুলতে পারেন।  তিনি সরকারের কিছু উদ্যোগের কথা জানান যার সাহায্যে উৎপাদন ক্ষেত্রের সম্ভাবনা বৃদ্ধি পায় ও সহজে ব্যবসা করার পরিবেশ গড়ে ওঠে। 

শ্রী মোদী বলেছেন, “আমরা পণ্য ও পরিষেবা করের মাধ্যেম 'এক দেশ এক কর ব্যবস্থা' চালু করেছি। আমাদের দেশে কর্পোরেট করের হার যথেষ্ট কম। নতুন নতুন উৎপাদনের ক্ষেত্রে আমরা উৎসাহের জন্য বিভিন্ন উদ্যোগ নিয়েছি। আয়কর মূল্যায়নের ক্ষেত্রে স্বয়ংক্রিয় ব্যবস্থা চালু করেছি। শ্রমিকদের কল্যাণ এবং কর্মসংস্থান সৃষ্টিকারীদের সহজে ব্যবসা করার জন্য সুষম কিছু নতুন শ্রম আইন চালু করা হয়েছে। উৎপাদন-ভিত্তিক উৎসাহ প্রকল্প বেশ কিছু নির্দিষ্ট ক্ষেত্রে আনা হয়েছে। এছাড়া, বিনিয়োগকারীদের জন্য প্রাতিষ্ঠানিক কিছু সুবিধার ব্যবস্থাও করা হয়েছে।“ 

 প্রধানমন্ত্রী এই প্রসঙ্গে ভারতের জাতীয় পরিকাঠামো ক্ষেত্রে ১.৫লক্ষ কোটি মার্কিন ডলারের সমতুল অর্থ বিনিয়োগের উচ্চাকাঙ্খী পরিকল্পনার কথা জানিয়েছেন। দ্রুত আর্থিক বিকাশ ও দেশ থেকে দারিদ্র দূরীকরণের জন্য আর্থ সামাজিক ক্ষেত্রে পরিকাঠামোর নানা পরিকল্পনার কথা তিনি জানান। তিনি বলেছেন, দেশে,  মহাসড়ক, রেলপথ, মেট্রো রেল, জলপথ এবং বিমানবন্দর গড়ে তোলার মাধ্যমে ব্যাপক পরিকাঠামো তৈরির কাজ চলছে।  নব্য-মধ্যবিত্তদের জন্য স্বল্প মূল্যে লক্ষ লক্ষ বাড়ি তৈরি করা হচ্ছে।  শুধুমাত্র বড় বড় শহরগুলিতেই নয়, ছোট ছোট শহর এবং জনপদেও বিনিয়োগের তিনি আহ্বান জানিয়েছেন। ছোট ধরনের শহরগুলির উন্নয়নের জন্য বেশ কিছু প্রকল্প দ্রুত বাস্তবায়ন করা হচ্ছে।  

তিনি আর্থিক ক্ষেত্রে সর্বাঙ্গীণ কৌশল গ্রহণের বিষয়ে বিস্তারিত জানিয়েছেন। ব্যাঙ্কিং ক্ষেত্রের  সংস্কারের মতো  গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয়েছে। আর্থিক বাজারকে মজবুত করা হয়েছে। আন্তর্জাতিক আর্থিক পরিষেবা কেন্দ্রে অভিন্ন কর্তৃপক্ষের ব্যবস্থা করা হয়েছে। প্রত্যক্ষ বিদেশি বিনিয়োগের ক্ষেত্রে অত্যন্ত খোলামেলা ব্যবস্থা করা হয়েছে। বিদেশি বিনিয়োগের জন্য আকর্ষণীয় কর ব্যবস্থা গড়ে তোলা হয়েছে। পরিকাঠামো বিনিয়োগ ট্রাস্ট এবং রিয়েল এস্টেট বিনিয়োগ ট্রাস্টের মতো স্থিতিশীল নীতির মাধ্যমে বিনিয়োগ ক্ষেত্রকে আরও আকর্ষণীয় করে তোলা হয়েছে। ঋণ খেলাপি আইন বাস্তবায়ন করা হয়েছে। প্রত্যক্ষ সুবিধা হস্তান্তরের মাধ্যমে আর্থিক ক্ষমতায়ন নিশ্চিত করা হয়েছে। রুপে কার্ড এবং ভীম -ইউপিআই-এর মাধ্যমে আর্থিক ক্ষেত্রে প্রযুক্তি-ভিত্তিক লেনদেনের ব্যবস্থা করা হয়েছে।

বৈঠকে অংশগ্রহনকারীদের তিনি জানিয়েছেন, উদ্ভাবনের জন্য নানা উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। সরকারের নীতি এবং সংস্কারের কেন্দ্রে রয়েছে ডিজিটাল ব্যবস্থা বলে তিনি মন্তব্য করেছেন। । ভারতে নতুন উদ্যোগ সবথেকে বেশি পরিমাণে গড়ে উঠছে এবং দ্রুতগতিতে উন্নয়নের কাজ চলেছে।  বেসরকারি উদ্যোগকে সাহায্য করার জন্য  সরকার একগুচ্ছ পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে।  ভারতের প্রতিটি ক্ষেত্রে - উৎপাদন, পরিকাঠামো, প্রযুক্তি, কৃষি, আর্থিক ক্ষেত্র, স্বাস্থ্য ও শিক্ষার মতো সামাজিক ক্ষেত্রে আজ সংস্কার আনা হচ্ছে। 

কৃষিক্ষেত্রে  সম্প্রতি বিভিন্ন  সংস্কারের কথা উল্লেখ করে শ্রী মোদী জানিয়েছেন,  এর ফলে ভারতের দেশের কৃষকদের সঙ্গে অংশীদারিত্ব গড়ে তোলার সুযোগ তৈরি হয়েছে। প্রযুক্তি ও অত্যাধুনিক ব্যবস্থাপনার মাধ্যমে ভারত খুব শীঘ্রই কৃষিক্ষেত্রে রপ্তানিকারক কেন্দ্রে পরিণত হবে। জাতীয় শিক্ষানীতির মাধ্যমে এ দেশে বিদেশি বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাম্পাস গড়ে তোলা সম্ভব হবে। জাতীয় ডিজিটাল স্বাস্থ্য মিশনের মাধ্যমে আর্থিক ক্ষেত্রে প্রযুক্তির ব্যবহার করা সম্ভব হবে। ভবিষ্যতের বিষয়ে আন্তর্জাতিক বিনিয়োগকারী সম্প্রদায় তাঁদের আস্থা প্রকাশ করায় প্রধানমন্ত্রী সন্তোষ প্রকাশ করেছেন। বিগত পাঁচ মাসে গত বছরের তুলনায় ১৩ শতাংশ বেশি প্রত্যক্ষ বিদেশি বিনিয়োগ হয়েছে।  

তিনি জানিয়েছেন, বিনিয়োগকারীরা  যদি আস্থার সঙ্গে তাঁদের লভ্যাংশ ফেরত পেতে চান , গণতান্ত্রিক ব্যবস্থা,  স্থিতাবস্থা , স্থিতিশীল জায়গায় উন্নয়ন এবং পরিবেশ-বান্ধব উদ্যোগ গড়ে তুলতে চান, সেক্ষেত্রে ভারতই হল  সেই জায়গা। আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রে আর্থিক পুনরুজ্জীবনে ভারতের বিকাশ অনুঘটকের কাজ করবে। প্রধানমন্ত্রী বলেছেন ভারতের যে কোনও সাফল্য আন্তর্জাতিক স্তরে উন্নয়নের ক্ষেত্রে প্রভাব বিস্তার করবে। শক্তিশালী ও প্রাণবন্ত এক ভারত বিশ্বের অর্থনৈতিক ব্যবস্থার স্থিতিশীলতাকে নিশ্চিত করবে।  আন্তর্জাতিক উন্নয়নের পুনরুজ্জীবনের ক্ষেত্রে চালিকাশক্তি হয়ে ওঠার জন্য ভারতের যা যা করণীয়  সেগুলিই করা হবে বলে তিনি আশ্বাস দিয়েছেন।   

বৈঠকের পর সিপিপি ইনভেস্টমেন্টসের সভাপতি ও মূখ্য কার্যনির্বাহী আধিকারিক মিঃ মার্ক মাচিন বলেছেন, “ ২০২০-র আন্তর্জাতিক বিনিয়োগকারীদের ভার্চ্যুয়াল গোল টেবিল বৈঠকটি অত্যন্ত ফলপ্রসূ ও সহায়ক। ভারতীয় অর্থনীতির বিষয়ে সরকারের পরিকল্পনা এবং ভারতে আন্তর্জাতিক প্রতিষ্ঠানগুলির বিনিয়োগকে ত্বরান্বিত করতে আমরা স্পষ্ট ধারণা পেয়েছি। আমাদের সুদুরপ্রসারী বিবিয়োগের কৌশল তৈরিতে, ক্রম বর্ধমান বাজারের ক্ষেত্রে ভারত আমাদের কাছে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। পরিকাঠামো, শিল্প ও উপভোক্তাদের জন্য আমাদের বিনিয়োগকে আমরা আরো বাড়াতে আগ্রহী।“ 

ক্যাশে দ্য দেপট এত প্লেসমেন্ট দ্যু কিউবেকের (সিডিপিকিউ)  সভাপতি ও মূখ্য কার্যনির্বাহী আধিকারিক মিঃ চার্লস এমন্ড ভারতের বিষয়ে বলতে গিয়ে জানিয়েছেন, “ সিডিপিকিউ-এর জন্য ভারত একটি গুরুত্বপূর্ণ বাজার। পূণর্নবীকরণ, লজিস্টিক, আর্থিক ও প্রযুক্তি নির্ভর পরিষেবায় আমরা কোটি কোটি অর্থ বিনিয়োগ করেছি। আগামী দিনে আমরা আমাদের উপস্থিতি আরো বাড়াতে চাই। এই গোল টেবিল বৈঠকের আয়োজন করার জন্য আমি প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী ও তাঁর সরকারকে আন্তরিকভাবে ধন্যবাদ জানাতে চাই। এখানে ভারতের জন্য শক্তিশালী অর্থনীতি গড়ে তুলতে আন্তর্জাতিক বিনিয়োগকারী ও ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠানের নেতৃবৃন্দ তাঁদের সুযোগের বিষয়ে আলোচনা করেছেন।“ 

মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের টিচার রিটায়ারমেন্ট সিস্টেম অফ টেক্সাসের মূখ্য বিনিয়োগকারী আধিকারিক  মিঃ জোস আউবে ভারত সম্পর্কে তাঁর ধারণা ও গোল টেবিল বৈঠকে অংশ গ্রহণের বিষয়ে  বলেছেন, “২০২০-র আন্তর্জাতিক বিনিয়োগকারীদের ভার্চ্যুয়াল গোল টেবিল বৈঠকটিতে যোগ দিতে পেরে আমি অত্যন্ত আনন্দিত। বিকাশশীল অর্থনীতি ও বাজারের সুবিধা পাওয়ার জন্য পেনশন তহবিলের বিনিয়োগকারীরা তাঁদের মূলধনের অনেকটা পরিমাণ চিহ্নিত করেন। ভারত কাঠামোগত সংস্কারের যে উদ্যোগ নিয়েছে, তার ফলে ভবিষ্যতে উচ্চ হারে বিকাশের ক্ষেত্রে একটি দৃঢ় ভিত গড়ে উঠছে। “ 

 

CG/CB



(Release ID: 1670586) Visitor Counter : 228