প্রধানমন্ত্রীরদপ্তর

প্রধানমন্ত্রী অটল সুড়ঙ্গ জাতির উদ্দেশ্যে উৎসর্গ করেছেন

Posted On: 03 OCT 2020 1:05PM by PIB Kolkata
নয়াদিল্লী, ৩ অক্টোবর, ২০২০
 
 
 
    প্রধানমন্ত্রী শ্রী নরেন্দ্র মোদী আজ মানালির দক্ষিণ পোর্টালে মহা সড়কের ওপর নির্মিত বিশ্বের দীর্ঘতম সুড়ঙ্গ- অটল সুড়ঙ্গ জাতির উদ্দেশ্যে উৎসর্গ করেছেন।
 
 মানালির সঙ্গে লাহুল-স্পিতি উপত্যকার সারা বছর ধরে যোগাযোগ নিশ্চিত করার জন্য ৯.০২ কিলোমিটার দীর্ঘ  এই সুড়ঙ্গ তৈরি করা হয়েছে। এর আগে প্রতি বছর প্রায় ৬ মাস প্রবল তুষারপাতের কারণে এই উপত্যকা বিচ্ছিন্ন থাকতো। 
 
    এই সুড়ঙ্গটি হিমালয়ের পীরপঞ্জল অঞ্চলে অত্যাধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহার করে তৈরি করা হয়েছে। সমুদ্রতল থেকে ৩ হাজার মিটার বা ১০ হাজার ফুট উঁচুতে এই সুড়ঙ্গ অবস্থিত।
 
    এই সুড়ঙ্গ মানালি এবং লে-র মধ্যে ৪৬ কিলোমিটার সড়কপথে দূরত্ব কমিয়ে দেবে। যারফলে ৪-৫ ঘন্টা সময় বাঁচে।
 
    অটল সুড়ঙ্গে অত্যাধুনিক ইলেক্ট্রো-মেকানিক্যাল ব্যবস্থা রাখা হয়েছে যার সাহায্যে তীর্যকভাবে বায়ু চলাচল, নজরদারি ব্যবস্থার নিয়ন্ত্রণ, সুড়ঙ্গের অভ্যন্তরে কি ঘটছে সে সংক্রান্ত তথ্য প্রাপ্তি, সুপারভাইজারি কন্ট্রোল অ্যান্ড ডেটা অ্যাকুইজিশন পদ্ধতিতে অগ্নি নির্বাপক ব্যবস্থাপনা এবং সুড়ঙ্গ আলোকিত করার যথাযথ ব্যবস্থা রাখা হয়েছে। 
 
    প্রধানমন্ত্রী এদিন দক্ষিণ পোর্টাল থেকে উত্তর পোর্টাল পর্যন্ত সুড়ঙ্গ পথে যাত্রা করেন। মূল সুড়ঙ্গের মধ্যে নির্মিত জরুরি ব্যবস্থাপনা সম্পর্কিত বিষয়গুলিও পরিদর্শন করেন। এদিন তিনি ‘অটল সুড়ঙ্গ নির্মাণ কৌশল’ শীর্ষক এক চিত্র প্রদর্শনীও ঘুরে দেখেন।
 
    প্রধানমন্ত্রী তাঁর ভাষণে এই দিনটিকে ঐতিহাসিক বলে অভিহিত করেন, কারণ এটি কেবল প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী অটল বিহারী বাজপেয়ীর স্বপ্নকেই বাস্তব রূপ দেয়নি, এই অঞ্চলের কোটি কোটি মানুষের ইচ্ছা ও স্বপ্নকেও পূরণ করেছে।
 
    তিনি বলেন, অটল সুড়ঙ্গ হিমাচলপ্রদেশের বৃহৎ অংশের পাশাপাশি নতুন কেন্দ্রশাসিত অঞ্চল হিসেবে লে-লাদাখের জীবনযাত্রায় পরিবর্তন আনবে এবং মানালি ও কৈলাঙের মধ্যে দূরত্বের সময় ৩ থেকে ৪ ঘন্টা কমিয়ে আনবে। 
 
    তিনি বলেন এখন হিমাচলপ্রদেশ ও লে-লাদাখ দেশের বাকি অংশের সঙ্গে সবসময় যুক্ত থাকবে এবং এই অঞ্চলে দ্রুত আর্থিক বিকাশ সম্ভবপর হবে।
 
    প্রধানমন্ত্রী বলেন, এই অঞ্চলের কৃষিজাত, উদ্যানজাত ফসল  খুব সহজেই রাজধানী দিল্লী ও অন্যান্য বাজারে পাঠানো যাবে। এমনকি এই অঞ্চলের যুবরাও খুব সহজেই অন্যান্য  জায়গায় পৌঁছাতে পারবেন।
 
    প্রধানমন্ত্রী বলেন, সীমান্ত সংযোগকারী প্রকল্পগুলিতে নিয়মিত সুরক্ষা বাহিনী পাঠানো নিশ্চিত করা এবং টহল দেওয়ার ক্ষেত্রে এই সুড়ঙ্গ বিশেষ সাহায্য করবে।
 
    প্রধানমন্ত্রী এই স্বপ্ন বাস্তবায়নের জন্য যে সকল ইঞ্জিনিয়ার, প্রযুক্তিবিদ ও শ্রমিকরা তাদের জীবন ঝুঁকি নিয়ে কাজ করেছেন তাঁদের কর্মকান্ডের উচ্ছ্বসিত প্রশংসা করেন।
 
    তিনি বলেন, অটল সুড়ঙ্গ ভারতের সীমান্ত পরিকাঠামো ক্ষেত্রে নতুন শক্তি যোগাবে এবং এটি বিশ্বমানের সীমান্ত সংযোগের ক্ষেত্রে উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত হয়ে থাকবে। তিনি বলেন, সীমান্ত অঞ্চলের পরিকাঠামোগত উন্নতি ও সার্বিক উন্নয়নের দীর্ঘদিনের চাহিদা থাকা সত্ত্বেও কয়েক দশক ধরে কোন অগ্রগতি ছাড়াই কেবলমাত্র পরিকল্পনা করা হয়েছিল। 
 
    প্রধানমন্ত্রী বলেন, ২০০২ সালে অটলজী এই সুড়ঙ্গের জন্য সংযোগকারী রাস্তা নির্মাণের ভিত্তি প্রস্তর স্থাপন করেছিলেন। তিনি বলেন, অটলজীর সরকারের পরে এই কাজটি এতটাই অবহেলিত হয়েছে যে ১৩০০ মিটার  অর্থাৎ  ১.৫ কিলোমিটারেরও কম সুড়ঙ্গ পথ নির্মিত হয়েছে ২০১৩-১৪ সাল পর্যন্ত। অর্থাৎ প্রতি বছর প্রায় ৩০০ মিটার করে এই সড়ক নির্মাণের কাজ হয়েছিল সেইসময়।
 
    বিশেষজ্ঞরা তখন ব্যাখ্যা করে জানিয়েছিলেন যে এই গতিতে কাজ অব্যাহত থাকলে ২০৪০ সাল নাগাদ এই সুড়ঙ্গ নির্মাণের কাজ শেষ হতে পারে।
 
    প্রধানমন্ত্রী বলেন, সরকার তখন এই প্রকল্পের কাজ দ্রুত সম্পন্ন করতে উদ্যোগ নেন এবং প্রতি বছর ১ হাজার ৪০০ মিটার করে সড়ক নির্মাণের কাজ এগিয়ে নিয়ে যায়। তিনি বলেন, প্রকল্পটি যেখানে শেষ হওয়ার জন্য যেখানে আনুমানিক ২৬ বছর ধরা হয়েছিল সেই কাজ ৬ বছরের মধ্যেই সম্পন্ন করা হয়েছে।
 
    তিনি বলেন, অর্থনৈতিক ও সামাজিকভাবে যখন দেশে অগ্রগতির প্রয়োজন তখন পরিকাঠামোগত ক্ষেত্রে দ্রুতগতিতে উন্নতিও দরকার। শ্রী মোদী বলেন এক্ষেত্রে দেশের অগ্রগতির জন্য নিরবচ্ছিন্ন রাজনৈতিক ইচ্ছাশক্তি ও প্রতিশ্রুতিবদ্ধ হওয়া প্রয়োজন। 
 
    তিনি বলেন, এই ধরণের গুরুত্বপূর্ণ ও বড় পরিকাঠামোগত প্রকল্পের কাজ শেষ করার ক্ষেত্রে বিলম্ব হওয়া মানে আথিক ক্ষতি এবং মানুষকে অর্থনৈতিক ও সামাজিক সুবিধা থেকে বঞ্চিত করা। 
 
    তিনি বলেন, ২০০৫ সালে যখন এই সুড়ঙ্গ নির্মাণের কাজ শুরু হয় তখন তারজন্য আনুমানিক ৯০০ কোটি টাকা ব্যয় বরাদ্দ করা হয়েছিল। কিন্তু এই কাজে লাগাতার বিলম্ব হওয়ার কারণে এখন প্রায় ৩ গুন বেশি অর্থাৎ ৩ হাজার ২০০ কোটি টাকা ব্যয়ে প্রকল্পের কাজ শেষ করা হয়েছে। 
 
    প্রধানমন্ত্রী বলেন, অনেকগুলি গুরুত্বপূর্ণ প্রকল্পের মধ্যে অন্যতম হল অটল প্রকল্পক।
 
    বিমান বাহিনী বিমান ওঠানামার জন্য দীর্ঘদিন দাবি জানালেও দৌলতবেগ ওল্ডি বিমান ঘাঁটির কাজ ৪০ থেকে ৪৫ বছর ধরে অসম্পূর্ণ অবস্থায় রয়ে গেছে। কৌশলগত দিক থেকে লাদাখে বিমান ওঠা-নামার ক্ষেত্রে এই বিমান ঘাঁটি নির্মাণ প্রকল্পের কাজ বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ।
 
    তিনি বলেন, বগিবেল সেতু নির্মাণের কাজও অটলজী সরকারের সময় শুরু হয়েছিল। কিন্তু পরে এটির কাজ আর এগোয়নি। ব্রিজটি অরুণাচল এবং উত্তরপূর্ণ অঞ্চলের মধ্যে মূল সংযোগকারী সেতু। তিনি বলেন, ২০১৪ সালের পরে এই কাজে অভূতপূর্ব গতি আসে এবং প্রায় ২ বছর আগে অটলজীর জন্মদিনে এই সেতুর উদ্বোধন করা হয়।
 
    তিনি বলেন, বিহারের মিথিলায় প্রধান ২টি অঞ্চলকে যুক্ত করার জন্য অটলজী কোশী মহাসেতুর ভিত্তি প্রস্তর স্থাপন করেছিলেন। ২০১৪ সালের পর সরকার কোশী মহাসেতুর কাজ ত্বরান্তিত করে এবং কয়েক সপ্তাহ আগে এই সেতু উদ্বোধন করা হয়।
 
    প্রধানমন্ত্রী বলেন, পরিস্থিতি এখন পাল্টে গেছে এবং গত ৬ বছরে সীমান্ত পরিকাঠামো, রাস্তাঘাট, সেতু বা সুড়ঙ্গ নির্মাণ যাই হোকনা কেন পুরো গতিতে কাজ চলছে। 
 
    প্রধানমন্ত্রী বলেন, দেশের সুরক্ষা বাহিনীর প্রয়োজনকে সরকার সর্বাধিক গুরুত্ব দিয়েছে। তবে এই বিষয়টি নিয়ে আগে আপোষ করা হলেও এখন দেশের সুরক্ষা বাহিনীর স্বার্থকেই সর্বাধিক গুরুত্ব দেওয়া হয়। 
 
    এক পদ এক পেনশন প্রকল্প বাস্তবায়ন, আধুনিক যুদ্ধ বিমান কেনা, অস্ত্র, আধুনিক রাইফেল্স, বুলেট প্রুফ জ্যাকেট, তীব্র শীত থেকে রক্ষা পাওয়ার জন্য সরঞ্জাম ইত্যাদি কেনার ক্ষেত্রে সরকার একাধিক উদ্যোগ নিয়েছে। পূর্ববর্তী সরকারের রাজনৈতিক সদিচ্ছার অভাবে এই বিষয়গুলি নিয়ে ভাবনা-চিন্তা করা হতোনা। কিন্তু আজ দেশে পরিস্থিতি পাল্টেছে। 
 
    প্রধানমন্ত্রী বলেন, প্রতিরক্ষা সরঞ্জাম উৎপাদন ক্ষেত্রে প্রত্যক্ষ বিদেশী বিনিয়োগের নিয়মে শিথিল করার মতো বড় ধরণের সংস্কার করা হয়েছে যাতে দেশের অভ্যন্তরে আধুনিক অস্ত্রশস্ত্র তৈরি করা যায়।
 
    শ্রী মোদী বলেন, প্রতিরক্ষা বাহিনীর প্রয়োজন অনুসারে চিফ অফ ডিফেন্স স্টাফের পদ তৈরি করা হয়েছে এবং সেনাবাহিনীর প্রয়োজন অনুযায়ী অস্ত্র কেনা ও উৎপাদন উভয় ক্ষেত্রে সমন্বয় বজায় রাখতে সংস্কার করা হয়েছে।
 
তিনি আরও বলেন, ভারতকে বিশ্বমানের করে তুলতে দেশে পরিকাঠামো আর্থিক এবং কৌশলগত সম্ভাবনা ক্ষেত্রে উন্নতি সাধন প্রয়োজন।
 
প্রধানমন্ত্রী জানান, অটল সুড়ঙ্গটি হল দেশেকে আত্মনির্ভর হিসেবে গড়ে তোলার সংকল্পে এক উজ্জ্বল উদাহরণ।
 
 
 
 
CG/SS/NS

(Release ID: 1661324) Visitor Counter : 293