প্রধানমন্ত্রীরদপ্তর

পঞ্চায়েতীরাজ দিবস উপলক্ষ্যে দেশের বিভিন্ন প্রান্তে গ্রাম প্রধানদের সঙ্গে প্রধানমন্ত্রীর বার্তালাপ

Posted On: 24 APR 2020 6:00PM by PIB Kolkata

নতুন দিল্লি, ২৪ এপ্রিল, ২০২০

 

 

নমস্কার !!

আপনাদের সবাইকে পঞ্চায়েতীরাজ দিবস উপলক্ষ্যে অনেক অনেক শুভেচ্ছা জানাই বন্ধুগণ। করোনা বিশ্বব্যাপী মহামারী, সত্যিই আমাদের সকলের কাজ করার পদ্ধতি বদলে দিয়েছে। আগে আমরা যে কোনো কর্মসূচীতে মুখোমুখি মিলিত হতাম, এখন সেই কর্মসূচী ভিডিও কনফারেন্সিং-এর মাধ্যমে করা হচ্ছে।

এই সময় সারা দেশের লক্ষ লক্ষ পঞ্চায়েত প্রধান এবং পঞ্চায়েত সদস্য প্রযুক্তির মাধ্যমে যুক্ত হয়েছেন। আপনাদের সবাইকে অনেক অনেক অভিনন্দন !!  আজ অনেক পঞ্চায়েত ভালো ভালো কাজের জন্য পুরস্কারও পেয়েছেন। পুরস্কার বিজেতা সমস্ত পঞ্চায়েত ও জনপ্রতিনিধিদের অনেক অনেক শুভেচ্ছা।

বন্ধুগণ, পঞ্চায়েতীরাজ দিবসে আমাদের গ্রাম পর্যন্ত সুশাসন পৌঁছে দেওয়ার সংকল্পকে পুনরুচ্চারণের সুযোগ আসে। আর এই করোনা সঙ্কটের সময়ে এই সংকল্পের প্রাসঙ্গিকতা আরো বৃদ্ধি পেয়েছে। এটা সত্য যে করোনা মহামারী, আমাদের জন্য অনেক সমস্যা নিয়ে এসেছে।

কিন্তু এর থেকে বড় কথা হল এই মহামারী আমাদের একটি নতুন শিক্ষা দিয়েছে, নতুন বার্তাও দিয়েছে। আজ এই কর্মসূচীর মাধ্যমে আমি দেশের প্রত্যেক নাগরিক, গ্রাম ও শহর নির্বিশেষে, সকলকে একটি বার্তা দিতে চাই।

বন্ধুরা, করোনা সঙ্কট আমাদের যে সবচাইতে বড় বার্তা দিয়েছে, যে সবচাইতে বড় শিক্ষা দিয়েছে, সেটি হল আমাদের স্বনির্ভর হতে হবে।

গ্রাম,  নিজস্ব স্তরে, নিজস্ব মৌলিক প্রয়োজন সাধনের জন্য স্বনির্ভর হোক। জেলা, নিজের মতো, রাজ্য নিজের মতো, এবং এভাবে গোটা দেশ কেমন করে স্বনির্ভর হয়ে উঠবে, নিজস্ব প্রয়োজনগুলি পূরণের জন্য আমাদের বাইরের মুখাপ্রেক্ষী যেন না হতে হয়, এখন এটাই প্রয়োজন হয়ে উঠেছে।

ভারতে এই ভাবনা অনেক শতাব্দী ধরে চলে আসছে। কিন্তু আজ পরিবর্তিত পরিস্থিতি আমাদের আরেকবার মনে করিয়ে দিচ্ছে যে, স্বনির্ভর হতে হবে। এক্ষেত্রে আমাদের দেশের গ্রাম পঞ্চায়েতগুলির অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রয়েছে।

শক্তিশালী পঞ্চায়েত আত্মনির্ভর গ্রামের ভিত্তি স্বরূপ। সে জন্যে পঞ্চায়েত ব্যবস্থা যত শক্তিশালী হবে, গণতন্ত্র তত মজবুত হবে। আর ততটাই সমাজের শেষ প্রান্তে দাঁড়িয়ে থাকা ব্যক্তিটি পর্যন্ত উন্নয়নের সুফল পৌঁছবে।

বন্ধুগণ, এই ভাবনা নিয়েই সরকার, পঞ্চায়েতীরাজ সংশ্লিষ্ট ব্যবস্থাগুলিকে, পরিকাঠামোকে আধুনিক করে তোলার জন্য নিরন্তর কাজ করে চলেছে। ৫ - ৬ বছর আগে পর্যন্ত এমন সময় ছিল, যখন দেশের ১০০টিরও কম পঞ্চায়েত ব্রডব্যান্ড নেটওয়ার্কের সঙ্গে যুক্ত ছিল। এখন ১ লক্ষ ২৫ হাজারের বেশি গ্রাম পঞ্চায়েতে ব্রডব্যান্ড পৌঁছে গেছে।

শুধু তাই নয়, গ্রামে গ্রামে কমনসার্ভিস সেন্টারের সংখ্যাও ৩ লক্ষ অতিক্রম করেছে।

সরকার, ভারতেই মোবাইল ফোন উত্পাদনের যে অভিযান শুরু করেছিল, তার ফলে আজ গ্রামে গ্রামে সুলভ মূল্যে স্মার্টফোন পৌঁছে গেছে। আজ যে এত বড়ভাবে ভিডিও কনফারেন্স হচ্ছে, তার পেছনে এ সব প্রচেষ্টার অবদান রয়েছে।

বন্ধুগণ, গ্রামের পরিকাঠামো শক্তিশালী করতে, শহর ও গ্রামের দূরত্ব কম করতে, আজ সরকার দুটো বড় প্রকল্প শুরু করেছে। একটু আগেই আপনারা একটি ভিডিও ফ্লিমে দেখেছেন, একটি e-গ্রাম স্বরাজ পোর্টাল আর তার অ্যাপ উদ্বোধন করা হয়েছে। আর দ্বিতীয়টি হল, স্বামীত্ব  যোজনার শুভ সূচনা।

e-গ্রাম স্বরাজ অর্থাৎ সিমপ্লিফাইড ওয়ার্কবেসড অ্যাকাউন্টিং অ্যাপ্লিকেশন ফর পঞ্চায়েতীরাজ, এটি এক প্রকার গ্রাম পঞ্চায়েতগুলিকে সম্পূর্ণ ডিজিটাইজেশন করার লক্ষ্যে একটি বড় পদক্ষেপ। এটি ভবিষ্যতে গ্রাম পঞ্চায়েতের নানা কাজের হিসেব রাখার ‘সিঙ্গেল প্লাটফর্ম’ হয়ে উঠবে। এখন আর আপনাদের ভিন্ন  ভিন্ন অ্যাপ্লিকেশনের মাধ্যমে ভিন্ন  ভিন্ন কাজ করার প্রয়োজন হবে না।

এখন যেমন বললাম, এই পোর্টালে, এই অ্যাপে, পঞ্চায়েতের উন্নয়ন কর্মসূচীগুলির বিররণ থেকে শুরু করে সেজন্যে নির্ধারিত তহবিল এবং তার খরচ সংক্রান্ত যাবতীয় তথ্য থাকবে। এর মাধ্যমে এখন যে কোনো ব্যক্তি নিজের গ্রাম পঞ্চায়েতে কী কী কাজ, কেমনভাবে চলছে তার খোঁজ নিতে পারবেন।

এর মাধ্যমে গ্রাম পঞ্চায়েতগুলির আর্থিক লেনদেনে স্বচ্ছতা আসবে। রেকর্ড রাখার কাজও অনেক বেশি সহজ হবে। আর প্রকল্পগুলির পরিকল্পনা থেকে শুরু করে সম্পূর্ণ হওয়া পর্যন্ত গোটা প্রক্রিয়া ত্বরান্বিত হবে। আপনারা কল্পনা করতে পারেন, e-গ্রাম স্বরাজ পোর্টালের মাধ্যমে আপনারা সবাই কত বড় শক্তি পেতে যাচ্ছেন।

বন্ধুগণ, গ্রামগুলিতে সম্পত্তির মালিকানা নিয়ে কত ধরণের বিবাদ হয়, সে সম্পর্কে আপনারা খুব ভালো ভাবেই জানেন। স্বামীত্ব যোজনা এই বিবাদ নিরশণে একটি প্রচেষ্টা। এই প্রকল্পের মাধ্যমে দেশের সমস্ত গ্রামের বাসস্থানগুলিকে ড্রোনের মাধ্যমে মানচিত্রায়ণ করা হবে। এর পর গ্রামের জনগণকে তাদের সম্পত্তির একটি মালিকানা প্রমাণপত্র বা ‘টাইটেল ডিড’ প্রদান করা হবে।

স্বামীত্ব যোজনার মাধ্যমে গ্রামের মানুষেরা অনেক উপকৃত হবেন। আগে এই সম্পত্তির মালিকানা নিয়ে যত ভ্রান্তি ছিল, সব দূরীভূত হবে। দ্বিতীয়ত এর মাধ্যমে গ্রামের উন্নয়ন প্রকল্পগুলির উন্নত পরিকল্পনা রচনায় আরো সুবিধা হবে। এর আরেকটি লাভ হল, এর মাধ্যমে শহরের মতো গ্রামে গ্রামে ব্যাঙ্ক থেকে ঋণ পাওয়ার পথ আরো সুগম হবে।

বন্ধুগণ, এখন উত্তরপ্রদেশ, মহারাষ্ট্র, কর্ণাটক, হরিয়ানা, মধ্যপ্রদেশ এবং উত্তরাখন্ড এই ৬টি রাজ্যে এই প্রকল্প পরীক্ষামূলকভাবে চালু করা হচ্ছে। এ থেকে যে অভিজ্ঞতা হবে, যেখানে ত্রুটি শুধরাতে হবে, সংস্কার করতে হবে – এই সমস্ত সংস্কারের পরই এই প্রকল্পকে গোটা দেশে চালু করা হবে।

বন্ধুগণ, কখনও কখনও আমার মনে হয় যে জীবনে আমরা কতটা সত্যিকারের শিক্ষা পেয়েছি তার পরীক্ষা, সঙ্কটের সময়ই হয়। নিরাপদ পরিবেশে, সুরক্ষিত আবহে, সত্যিকারের শিক্ষা, সত্যিকারের সামর্থ্ সম্পর্কে বোঝা যায় না। এই করোনা সঙ্কট দেখিয়ে দিয়েছে, যে দেশের গ্রামে গ্রামে বসবাসকারী মানুষেরা হয়তো বড় বড় এবং নামী বিশ্ববিদ্যালয় থেকে শিক্ষা পান নি, কিন্তু তারা এই সঙ্কটকালে নিজেদের শিষ্টাচার এবং পারম্পরিক শিক্ষার পরিচয় দিয়েছেন।

গ্রাম থেকে যে সব তথ্য আসছে, তা বড় বড় বিদ্বানদের প্রেরণা যোগাচ্ছে। আমার বন্ধুরা, এ কাজ আপনারা করেছেন, গ্রামের প্রত্যেক ব্যক্তি করেছেন, আমার আদিবাসী ভাই – বোন, মাঠে ময়দানে কাজ করা, ফসল কাটা এবং চারা রোপনে ব্যস্ত বন্ধুগণ, আপনারা এই দেশকে প্রেরণা যোগানোর কাজ করেছেন।

আপনারা সবাই বিশ্বকে মন্ত্র দিয়েছেন – দুই গজ দূরত্ব রাখতে হবে। অর্থাৎ একজন মানুষ থেকে আর একজন মানুষের দূরত্ব দুই গজ হতে হবে। গ্রামে গ্রামে এই মন্ত্র পালনের লক্ষ্য দেওয়া হচ্ছে। দুই গজ দূরত্ব, অর্থাৎ সামাজিক দূরত্ব বজায় রেখে আপনারা করোনা ভাইরাসকেও নিজেদের থেকে দূরে রাখছেন, কোনো সম্ভব্য সংক্রমণ থেকে নিজেদের বাঁচাচ্ছেন। আপনাদের এই প্রচেষ্টা নিয়ে আজ সারা বিশ্বে আলোচনা হচ্ছে - ভারত কিভাবে করোনা প্রতিরোধ করছে। 

বন্ধুগণ, এত বড় সঙ্কট এসেছে, এত বড় বিশ্বব্যাপী মহামারী এসেছে, কিন্তু এই ২ – ৩ মাসে আমরা এটা দেখেছি, যে ভারতের জনগণ সীমিত সাধ্য ও সম্পদ নিয়ে অনেক কঠিন পরিস্থিতির সামনে না ঝুঁকে এর বিরুদ্ধে লড়াই করছে। এটা সত্যি, যে অনেক বাধা আসছে, অনেক কষ্ট হচ্ছে, কিন্তু শপথের সামর্থ্য দেখিয়ে নতুন প্রাণশক্তি নিয়ে নতুন নতুন উপায় খুঁজে দেশকে বাঁচানোর আর দেশকে এগিয়ে যাওয়ার নিরন্তর চেষ্টা করে যাচ্ছেন।

বন্ধুগণ, এই পরিস্থিতিতে গ্রামগুলিতে কী হচ্ছে, তা আমি ভিন্ন ভিন্ন মাধ্যমে নিয়মিত খোঁজ রাখছি। আজ আমি আপনাদের মধ্যে কয়েকজন বন্ধুর কাছ থেকে করোনা সংক্রমণ প্রতিরোধের অভিজ্ঞতার বর্ণনা এবং আপনাদের পরামর্শ শুনতে চাই। তাহলে আসুন, এই আলোচনার প্রক্রিয়া শুরু করি, আমাকে বলা হয়েছে, যে প্রথম জম্মু-কাশ্মীর থেকে শুরু হবে।

মহম্মদ ইকবাল, জম্মু-কাশ্মীরের বারামুলা থেকে যুক্ত হচ্ছেন, তিনি ব্লক, পঞ্চায়েত নারবাওয়ের চেয়ারম্যান। ইকবালজী নমস্কার,

ইকবালজী, আপনাদের ব্লকে করোনার বিরুদ্ধে লড়াই কিভাবে চলছে। আপনারা ‘দুই গজ দূরত্ব’ এবং পরিবেশ পরিচ্ছন্ন রাখতে কী কী করছেন ?

ইকবাল – নমস্কার স্যার, আমি জম্মু-কাশ্মীরের ব্লক, নারবাও থেকে আপনাকে অত্যন্ত হার্দিক অভিনন্দন জানাই। আজ এই উপলক্ষ্যে আমাদের পঞ্চায়েত দিবস উপলক্ষ্যে শুভেচ্ছা জানাই। স্যার, আমরা এসময় নারবাওয়ে কিভাবে করোনা ভাইরাসের বিরুদ্ধে লড়ছি – আপনি যে আদেশ দিয়েছেন, যেভাবে লকডাউনের নির্দেশ দিয়েছেন, তৃণমূল স্তরে আমরা তা ১০০ ভাগ পালন করছি। সেজন্যে আমরা আগে থেকে প্রস্তুতি নিয়েছিলাম, যখন আপনি শুরুতে একদিনের লকডাউন করেছিলেন। সেদিন আমরা ব্লক লেভেলের মেডিকেল অফিসার, আমাদের আইসিডিএস, আমাদের পঞ্চায়েত থেকে একটি নির্দেশ জারি করি। বিডিসি অফিসে আমরা একটি মিটিং করি, সেই মিটিং-এ আমরা তিনটি বিভাগকে; আশাকর্মী, আইসিডিএস কর্মী এবং পঞ্চায়েত পিআরআই সদস্যদের প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করি। আমরা তাদেরকে করোনা প্রতিরোধী নানা ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য নির্দেশ দিই। তাদেরকে আমরা ব্লক এলাকার বাড়িতে বাড়িতে পাঠাই।

আমি বাস্তব ঘটনা বলছি – আমাদের ব্লকে এমন কোনো বাড়ি নেই, যেখানে আমাদের টিম অর্থাৎ আমাদের পিআরআই স্বাস্থ্য এবং আইসিডিএস কর্মীরা যান নি। তাঁরা প্রতিটি বাড়িতে গিয়ে প্রত্যেক মানুষকে সচেতন করেছেন। কিভাবে করোনা ভাইরাস থেকে নিরাপদ থাকা যেতে পারে। আমাদের ব্লকে এখন পর্যন্ত শুধু একটি পজিটিভ কেস এসেছে। কিন্তু তার সবথেকে বড় কারণ হল তিনি যেখানে থাকেন, সেখানে এখনও পঞ্চায়েত স্থাপিত হয় নি। ফলে সেখানে আমাদের পঞ্চায়েত সদস্যরা ছিলেন না এবং আমরা এই ব্যক্তি সম্পর্কে জানতে পারি নি।

কিন্তু বাকি যত গ্রাম রয়েছে, আমাদের জেলায় আর যত ব্লক রয়েছে, জেলা প্রশাসন এবং স্বাস্থ্য বিভাগের সহায়তায় আমরা প্রতিটি বাড়িতে প্রত্যেক ব্যক্তির ‘ট্রাভেল হিস্ট্রি’ জেনে তাদেরকে চিহ্নিত করেছি, কোয়ারান্টাইন করেছি, কাউকে কাউকে হোম কোয়ারান্টাইন করেছি এবং সেখানে পিআরআই-রা নিয়মিত ২৪  ৭ ঘন্টা শিফটে ডিউটি করছেন। যাতে এই হোম কোয়ারান্টাইন সফল হয়। আমাদের জেলা প্রশাসন যে রকম নির্দেশ দিয়েছে, তা পালনে যত কঠোর হওয়া প্রয়োজন, লকডাউন সফল করতে আমাদের পিআরআই-রা সেটা করছে। তাঁরা ডিউটি রোস্টার বানিয়ে স্বেচ্ছাসেবকদের সঙ্গে নিয়ে পথে থেকে লকডাউন সফল করেছে। আমরা এলাকার জনগণকে দুটো বার্তা দিয়েছি, প্রথমটি হল – ‘সবাইকে সম্মান করবে, সবাইকে সন্দেহ করবে’। দ্বিতীয় বার্তা হল – ‘বাড়িতে থাকুন, নিরাপদ থাকুন’। এই দুটো বার্তার ফলে আজ আমাদের ব্লকে ৯৯ শতাংশ পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রয়েছে স্যার। ধন্যবাদ স্যার।

প্রধানমন্ত্রীজী – আপনার কথা শুনে মনে হচ্ছিল, যে আপনি নিজে নিয়মিত ক্ষেত্র সমীক্ষা করেন। নিজে গ্রামে গ্রামে যান, তার ফলে আপনি এত সহজে বিষয়টি বুঝতে পেরেছেন এবং আপনার এলাকার মানব সম্পদ উন্নয়ন থেকে শুরু করে লকডাউনের নিয়ম পালন পর্যন্ত সব কিছু ভালোভাবে সম্পন্ন করেছেন। আমার দৃঢ় বিশ্বাস, ‘দুই গজ দূরত্ব’ এই মন্ত্রকে আপনারা গ্রামে গ্রামে, বাড়িতে বাড়িতে এবং সমগ্র জম্মু-কাশ্মীরে সুন্দরভাবে ছড়িয়ে দিচ্ছেন। আমি আপনাকে অভিনন্দন জানাই, খুব ভালো কাজ করেছেন এবং আপনার ব্লকের সমস্ত নাগরিকদেরও আমার পক্ষ থেকে অনেক অনেক শুভেচ্ছা জানাই। এটি রমজানের মাস, আপনারা যে পরিশ্রম করেছেন, তার ফলে রমজানের উত্সবও আপনার এলাকার নাগরিকরা খুব ভালোভাবে পালন করতে পারবেন। আপনারা সত্যি সত্যি অনেক বড় কাজ করেছেন।

আসুন, জম্মু-কাশ্মীরের পর আমরা সোজা দক্ষিণে চলে যাই – কর্ণাটকে।

কর্ণাটকের চিক্কাবালাপুর থেকে আমাদের সঙ্গে শ্রী নবীন কুমার যুক্ত হচ্ছেন।

আমাদের গ্রাম পঞ্চায়েতের পক্ষ থেকে দেশের প্রধান সেবককে নমস্কার।

প্রধানমন্ত্রী – আজকাল আমার গ্রাম প্রধানদের সঙ্গে কথা বলার সৌভাগ্য হয় আবার বিশ্বের বড় বড় দেশের রাষ্ট্রপ্রধানদের সঙ্গেও কথা বলার সুযোগ হয়।

নবীন কুমার – থ্যাঙ্ক ইউ স্যার, আমাদের গ্রাম পঞ্চায়েতে কেউ করোনা সংক্রমিত হয় নি। আর ১৪ জনকে আমরা হোম কোয়ারান্টাইনে রেখেছি। তাদেরকে পঞ্চায়েত থেকেই জল, দুধ, সব্জি এবং অন্যান্য রেশনের ব্যবস্থা করা হচ্ছে। আশাকর্মীগণ, স্বাস্থ্য বিভাগের আধিকারিকগণ এবং পঞ্চায়েতের সমস্ত সদস্য ও কর্মচারীদের নিয়ে একটি টাস্কফোর্স গঠন করা হয়েছে। প্রত্যেক সপ্তাহে ২ – ৪ বার বৈঠক ডেকে কিভাবে করোনা প্রতিরোধ করবো, তার জন্যে কি কি চেষ্টা করতে পারি, তা নিয়ে আলাপ আলোচনা হয়। আইইসি, সোশ্যাল ডিসট্যান্সিং এবং স্যানিটেশনের কাজ ভালোভাবে চলছে।

চারটি প্রকল্প – প্রধানমন্ত্রী গরীব কল্যাণ যোজনা, প্রধানমন্ত্রী কিষাণ সম্মান যোজনা, উজ্জ্বলা যোজনা এবং পেনশন যোজনার মাধ্যমে আমাদের পঞ্চায়েতের ৫০০০ হাজারেরও বেশি সুবিধাভোগীর লাভ হয়েছে।

এলাকার যুবকদের উদ্দীপিত করে গ্রাম পুলিশ গঠন করা হয়েছে। পঞ্চায়েতের সীমায় চেকপোষ্ট লাগিয়ে এই গ্রাম পুলিশেরা কাজ করছেন। তাদের মাধ্যমে মানুষের অবাধ যাতায়াত রোধ করা সম্ভব হয়েছে। এর ফলে করোনাকে এক রাজ্য থেকে অন্য রাজ্যে পৌঁছতে দেওয়া হচ্ছে। ব্যক্তি এবং সামগ্রিক পরিচ্ছন্নতা সম্পর্কে সর্বত্র খুব ভালোভাবে আইইসি হয়েছে এবং পরিচ্ছন্ন করা হয়েছে।

লকডাউনের ফলে মহারাষ্ট্র থেকে ফিরে আসা ১৭০ -জনেরও বেশি শ্রমিকদের আমরা একটা পাঠশালায় রেখেছি। তাঁদের সকলের আহার, জল এবং ওষুধের ব্যবস্থা করা হয়েছে। আর আমরা তাঁদেরকেও কোনো না কোনো কাজে ব্যস্ত রাখছি।

ফল ও সব্জির জন্যে একটি বাজারের ব্যবস্থা করা হয়েছে। সেজন্য কৃষকদের কোনো আর্থিক লোকশান হচ্ছে না। তাদের আর্থিক অবস্থা এবং মনোবল বৃদ্ধি করা হয়েছে। বাড়িতে বাড়িতে যাদের ওষুধের দরকার, আমরা ডাক্তারদের থেকে ওষুধ এনে তাদের বাড়ি বাড়ি পৌঁছে দিচ্ছি।

মহাত্মা গান্ধী রাষ্ট্রীয় উদ্যোগ যোজনার মাধ্যমে পঞ্চায়েতের শ্রমিক ও কৃষকদের ব্যক্তিগত শ্রম এবং জল সংরক্ষণের কর্মসূচীতে অংশ গ্রহণের সুযোগ করে দিচ্ছি। এতেও গ্রাম পঞ্চায়েতে মানুষদের মনোবল বৃদ্ধি পাচ্ছে।

প্রধানমন্ত্রীজী – নবীনজী, আপনাদের গ্রামের জনসংখ্যা কত?

নবীনজী – ৮৫০০ স্যার।

প্রধানমন্ত্রীজী – অর্থাৎ বড় গ্রাম। আপনি কত বছর ধরে গ্রামপ্রধান রয়েছেন ?

নবীনজী – প্রথমবার স্যার।

প্রধানমন্ত্রীজী – প্রথমবার হয়েছেন ?  কিন্তু আপনি অনেক কাজ করছেন। আর অত্যন্ত সুচারুভাবে করছেন, পরিকল্পনামাফিক করছেন। গ্রামবাসী আপনার কথা শোনে ?

নবীনজী – ইয়েস স্যার।

প্রধানমন্ত্রীজী – শোনে। আসুন আমার পক্ষ থেকে আপনাকে এবং আপনার গ্রামকে এত ভালো কাজ করার জন্য এবং সমস্ত প্রকল্পকে জনগণের কাছে পৌঁছে দেবার জন্য, আর্থিক প্রগতিকে এত সুন্দরভাবে সঞ্চালনার জন্য আমি, প্রকৃত অর্থে আপনার নেতৃত্ব, আপনার এধরণের দূরদৃষ্টি, আর গ্রামের শক্তি কেমন হয়, তা দেখানোর জন্যে আপনাদের সবাইকে শুভেচ্ছা জানাই।

আসুন, আমরা বিহারের দিকে এগোই।

বিহারের জাহানাবাদ জেলার ঘরনিয়া গ্রাম পঞ্চায়েতের প্রধান শ্রী অজয় সিং যাদব, আমাদের সঙ্গে যুক্ত হচ্ছেন। অজয়জী নমস্কার।

অজয়জী – নমস্কার স্যারজী। আমি অজয় সিং যাদব, বিহারের ঘরনীয়া গ্রাম পঞ্চায়েতের প্রধান। আমাদের পঞ্চায়েতের পক্ষ থেকে আপনাকে হার্দিক অভিনন্দন ও প্রণাম জানাই।

প্রধানমন্ত্রীজী – নমস্কার জী।

অজয়জী – স্যার, আমরা লকডাউনে ২২ তারিখ থেকে বন্দী। তার পর থেকে ৪ দিন ধরে নিজে গ্রাম পঞ্চায়েতের বিভিন্ন এলাকায় ঘুরে প্রচার করেছি। বলেছি, যে লকডাউন পালন করতে হবে। সামাজিক দূরত্ব  বজায় রাখতে হবে। কমপক্ষে ৬ ফুট দূরত্ব –

প্রধানমন্ত্রীজী – অজয়জী, মানুষকে বোঝান, ‘দুই গজ দূরত্ব’

অজয়জী – ‘দুই গজ দূরত্ব’ স্যার ?

প্রধানমন্ত্রীজী – হ্যাঁ!

 অজয়জী – গ্রামের সর্বত্র ব্লিচিং পাউডার ছড়িয়েছি। বাড়িতে বাড়িতে গিয়ে আশাকর্মী ও পঞ্চায়েত সদস্যরা এবং আমি নিজে প্রত্যেক বাড়িতে সাবান দিয়েছি স্যার। শরীর এবং হাত ধোয়ার পদ্ধতি শিখিয়েছি। খাওয়ার ১ ঘন্টা আগে থেকেই হাত ধোবেন এবং সচেতন থাকবেন। হোম কোয়ারান্টাইনে ১৮জনকে রাখা হয়েছে স্যার। তাঁদেরকেও পঞ্চায়েতে পক্ষ থেকে নানা পরিষেবা প্রদান করা হচ্ছে। স্যার, ৩০ শয্যা বিশিষ্ট একটি হোম কোয়ারান্টাইন সেন্টার বানিয়েছি। সেখানেও খাওয়া – দাওয়ার ব্যবস্থা করেছি। এএনএম এবং চৌকিদারদের ডিউটি লাগিয়েছি স্যার। আমরা ৪৫ জনের একটি গ্রামরক্ষা দল তৈরি করেছি স্যার। সমস্ত গ্রামের  প্রবেশ ও প্রস্থান পথে বাঁশের বেড়া লাগিয়ে গ্রামে বাইরের কারোর আসা – যাওয়া নিয়ন্ত্রণে রেখেছি। যাদের  জরুরী প্রয়োজন রয়েছেন, তারাই বাইরে যাবেন। যেমন ইমার্জেন্সি কোনো ওষুধ আনার জন্য। আর স্বাস্থ্য বিভাগের পক্ষ থেকে চিকিত্সক ও স্বাস্থ্যকর্মীরা সপ্তাহে ২ বার আসছে স্যার। পঞ্চায়েতে আমরা জনগণের পরিষেবা সুনিশ্চিত করতে সমস্ত জনপ্রতিনিধিরা প্রত্যেক ৩ দিনে একবার করে বৈঠকে বসছি। ৫ – ১০ জন পঞ্চায়েত সদস্য পঞ্চায়েত প্রধান এবং পঞ্চায়েত কর্মীরা একসঙ্গে বসে আলোচনা করছি।

প্রধানমন্ত্রীজী – আচ্ছা, অজয়জী, আপনাদের পঞ্চায়েতেও অনেক প্রবাসী বন্ধু অন্যান্য শহর থেকে ফিরে এসেছেন হয়তো। যারা ফিরতে পারেন নি, তারা হয়তো আসতে চেয়েছেন।

অজয়জী – হ্যাঁ স্যার। ফিরতে তো চানই। কিন্তু আমরা তাদের আসতে মানা করেছি। বলেছি ওখানেই থাকুন। লকডাউন খুললে চলে আসবেন। এখন এলে তাদের ১৪ দিন একটি স্কুলে রাখতে হবে। তাঁরা তা শুনে বলেন, না মুখিয়াজী, আমরা এখন বাইরে থাকবো। যখন খুলবে তখন আসবো। ১৪ দিন বন্দী থাকতে চাই না।

প্রধানমন্ত্রীজী – তার মানে সবাই আপনার কথা শোনে।

অজয়জী – হ্যাঁ, শোন স্যার।

প্রধানমন্ত্রীজী – ঠিক আছে। আপনারা সবাই নিরাপদ থাকুন। যারা শহরে আছেন, তাঁরাও নিরাপদে থাকুন। তাঁদেরকে শান্ত রাখুন। আপনি অবশ্যই তাঁদের সঙ্গে নিয়মিত ফোনে কথা বলবেন। শহরে থেকে তাঁদের বেশি মন খারাপ হয়, বাড়ির কথা মনে পড়ে, মা – বাবার কথা মনে পড়ে এটা স্বাভাবিক। কিন্তু এই সময়ে যদি গ্রাম থেকে তাঁদের সঙ্গে ফোনে কথা বলা হয় তাতে, তাদের মন হালকা হয়। আর আজ যেসব কাজ করছেন, সেজন্যে অভিনন্দন জানাই।

আসুন, আমরা এখন উত্তরপ্রদেশের বস্তির একটি গ্রাম পঞ্চায়েতে যাই। বস্তির নক্তিদেহী গ্রাম পঞ্চায়েতের গ্রাম-প্রধান ভগিনী বর্ষা সিং আমাদের সঙ্গে যুক্ত হচ্ছেন। বর্ষাজী নমস্কার।

বর্ষাজী – নমস্কার স্যার। আমি, আমাদের গ্রাম পঞ্চায়েতবাসীর পক্ষ থেকে আপনাকে নমস্তে জানাই। আর পঞ্চায়েতীরাজ দিবসে হার্দিক শুভকামনা জানাই।

প্রধানমন্ত্রীজী – বস্তিতে ঠিকভাবে লকডাউন পালন হচ্ছে ?

বর্ষাজী – স্যার, আমার গ্রামে সম্পূর্ণরূপে লকডাউন পালন হচ্ছে। আর আমি, আশাবোনেদের, অঙ্গনওয়াড়ীবোনেদের এবং এএনএম-দের সঙ্গে নিয়ে মানুষের বাড়িতে বাড়িতে গিয়ে সচেতন করছি যে, লকডাউন পালন করতে হবে, সোশ্যাল ডিস্ট্যান্সিং পালন করতে হবে এবং বাড়িতে থাকতে হবে।

প্রধানমন্ত্রীজী – আপনি কতদিন ধরে প্রধানের দায়িত্বে রয়েছে ?

বর্ষাজী – স্যার, আমি এই প্রথম গ্রাম প্রধান হয় নি। এর আগেও আমি প্রধানের দায়িত্ব পালন করেছি।

প্রধানমন্ত্রীজী – যখন কেন্দ্রীয় সরকারের প্রকল্পগুলি রচনা করা হয়েছে- পিএম গরীব কল্যাণ যোজনা, পিএম কিষাণ সম্মান নিধি, এগুলি কার্যকর হয়েছে। আপনারা ওখানে কিভাবে এগুলি বাস্তবায়িত করছেন ?

বর্ষাজী – স্যার, আমাদের পঞ্চায়েতে উজ্জ্বলা যোজনার অন্তর্গত যে ২৫ জন সুবিধাভোগী রয়েছেন। কিষাণ সম্মান নিধির ১৫৫ জন সুবিধাভোগী রয়েছেন। পিএম গরীব কল্যাণ যোজনায় ১০ জন রয়েছে। আর জনধন যোজনার সুবিধাভোগী রয়েছেন ৫০ জন।

প্রধানমন্ত্রীজী – জনগণের অভিজ্ঞতা কি ? তারা কি খুশী ?

বর্ষাজী – স্যার, মানুষ খুবই সন্তুষ্ট। আপনার লকডাউনের নির্দেশ খুব ভালো ভাবে পালন করছেন এবং নিজেদের অত্যন্ত নিরাপদ অনুভব করছেন। তাদের ভাবনা হল, আমরা বাড়িতে থাকলেই নিরাপদ থাকবো। কারণ করোনা ভাইরাস একটি এমন সংক্রমণ যার কোনো সঠিক চিকিত্সা নেই। ব্যস, তার একটাই চিকিত্সা, যা আমাদের বাড়িতেই থাকতে হবে, নিরাপদ থাকতে হবে। সামাজিক দূরত্ব – দুই গজের দূরত্ব বজায় রাখতে হবে। বাড়িতেও পরস্পরের মধ্যে দূরত্ব বজায় রাখছেন।

প্রধানমন্ত্রীজী – দেখুন, করোনা ভাইরাস অত্যন্ত বিচিত্র ভাইরাস। কিন্তু তার একটা বৈশিষ্ট আছে। সে নিজে থেকে কারোর বাড়িতে যায় না, নিজে থেকে কোথাও যায় না। আপনারা যদি তাকে ডেকে আনেন, তাকে নিতে যান, তবেই সে আপনার সঙ্গে বাড়িতে গিয়ে ঢুকবে। আর একবার ঢুকলে সে বাড়িতে কাউকে ছাড়বে না। আর সেজন্যে দুই গজের দূরত্ব এই মন্ত্র গুঞ্জরিত হতে থাকা উচিত। দুই গজের দূরত্ব বজায় রেখে কথা বলবেন, দুই গজের দূরত্ব বজায় রেখে দাঁড়াবেন। সবসময় দুই গজের দূরত্ব নিশ্চিত করবেন। যেমন আমরা ছাতা মাথায় দিই – আমি যদি ছাতা মাথায় দিই, আর আমার পাশের জন যদি ছাতা মাথায় দেন, তাহলে নিজে থেকেই দুই গজের দূরত্ব তৈরী হয়ে যায়। আর এই দূরত্ব যদি বজায় রাখেন, তাহলে এই সঙ্কট থেকে মুক্ত থাকতে পারেন।

আমার খুব ভালো লেগেছে, যে আপনাদের গ্রামগুলিতে আগে যেমন বলা হত, দিল্লি ১ টাকা পাঠালে ১৫ পয়সা পৌছোয়। আর আজকাল ১ টাকা পাঠালে তার ১০০ পয়সাই সুবিধাভোগীর ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টে জমা হয়। এই পুরো টাকা যখন তাদের অ্যাকাউন্টে জমা হয়, তখন গ্রামবাসীর কেমন লাগে।

বর্ষাজী – গ্রামের মানুষ খুব সন্তুষ্ট স্যার।

প্রধানমন্ত্রীজী – কী বলেন তারা ?

বর্ষাজী – বলেন, যখন থেকে এ সরকার এসেছে, তখন থেকে সমস্ত ক্ষেত্রে আমরা ভালোভাবে সব সুবিধা পাচ্ছি।

প্রধানমন্ত্রীজী – চলুন, বর্ষাজী, আপনি খুব ভালো কাজ করছেন। হ্যাঁ কি যেন বলছিলেন আপনি ?

বর্ষীজী – স্যার, গ্রামে এই আলোচনা হচ্ছে, এই করোনার মতো বিশ্বব্যাপী সংক্রমণের সময় আপনার মতো প্রধানমন্ত্রী না থাকলে দেশটার যে কি হতো। স্যার, যে দিকেই যাই সব জায়গায় এই আলোচনা হচ্ছে, আমরা নিজেরাও নিজেদের মধ্যে এই আলোচনা করি।

প্রধানমন্ত্রীজী – ব্যাস, বর্ষাজী, দুই গজের দূরত্ব। এই দুই গজের দূরত্বই আমাদের সবাইকে বাঁচাবে। যাইহোক, গ্রামের মানুষ সন্তুষ্ট রয়েছে, শুনে আমার খুব ভালো লেগেছে। কারণ সরকার আর জনগণের মধ্যে যখন বিশ্বাসের সম্পর্ক থাকে, তখন আমরা যত বড় সঙ্কটই আসুক না কেন, আমরা তা অতিক্রম করতে পারি। আর এই সময় আমরা যে লড়াই জিতছি, তার মূল কারণও হল বিশ্বাস। বিশ্বাসই সব থেকে বড় শক্তি। নিজের উপর বিশ্বাস, ব্যবস্থার উপর বিশ্বাস রেখে আমাদের ভাবতে হবে যে এই সঙ্কট থেকে বেরিয়ে আসতে হবে।

আসুন। এখন পাঞ্জাবের দিকে যাই। পাঞ্জাবের পাঠানকোট জেলার হাড়া গ্রাম পঞ্চায়েতের গ্রাম প্রধান ভগিনী পল্লবী ঠাকুর আমাদের মধ্যে হাজির হয়েছেন। নমস্কার পল্লবীজী।

পল্লবীজী – নমস্কার স্যার। আপনাকে আমার পক্ষ থেকে এবং আমার গোটা পঞ্চায়েতের পক্ষ থেকে হার্দিক অভিনন্দন জানাই। আমি হাড়া গ্রাম পঞ্চায়েতের প্রধান। এটি অত্যন্ত পিছিয়ে পড়া এবং সীমান্তবর্তী এলাকা। তো স্যার, এখন যেমন করোনা ভাইরাসের বিরুদ্ধে লড়াই চলছে। এই লড়াইয়ে আমাদের গ্রামের প্রত্যেক গ্রামবাসী এবং বিশেষ করে যুবক – যুবতীরা খুব সহযোগিতা করছেন। আপনার নির্দেশাবলী অক্ষরে অক্ষরে পালন করে, তারা বাড়িতে থাকছেন। সংক্রমণ প্রতিরোধের জন্যে আমাদের গ্রাম পঞ্চায়েতে খুব ভালো ব্যবস্থা করা হয়েছে। আমাদের পঞ্চায়েতের দু’দিকের প্রবেশপথেই বাঁশ দিয়ে পথ অবরোধ করা হয়েছে। সেখানে আমিও যাই, আর আমার গ্রামের যত পঞ্চায়েত সদস্যরা রয়েছেন, তাঁরাও যান। আমাদের গ্রামের যুবক বন্ধুরা সেখানে পাহাড়া দিচ্ছেন। যাতে গ্রামের কেউ জরুরী প্রয়োজন ছাড়া বাইরে যেতে না পারে। আর অন্য গ্রামের কেউ না আসতে পারে। তাছাড়া আমরা বাড়িতে বাড়িতে গিয়ে জনগণকে এই বিষয়ে সচেতন করছি। এমনিতে তো স্যার, ২২ তারিখে যখন লকডাউন শুরু হল, আমাদের পাঞ্জাব সরকারের পক্ষ থেকে সেদিনই ৩১ তারিখ পর্যন্ত লকডাউন ঘোষণা করে দেওয়া হয়েছিল। অনেকে তখন আগে থেকেই বাড়িতে লকডাউনে ছিলেন। আমরা পঞ্চায়েত থেকে বাড়িতে বাড়িতে গিয়ে মানুষকে বুঝিয়ে ছিলাম, যাতে সবাই বাড়িতে থাকেন। সবাই যাতে বাড়িতে থাকেন এবং দূরত্ব বজায় রাখেন, সময়ে সময়ে হাত ধোওন এবং নাক, মুখ, চোখে হাত দেওয়া থেকে বিরত থাকেন।

তো স্যার, এখন আমাদের পাঞ্জাবে ফসল কাটার সময় চলছে। সব থেকে বেশি এদিকে লক্ষ্য রাখতে হবে, পাঞ্জাব সরকারের পক্ষ থেকেও নির্দেশাবলী জারি করা হয়েছে। মানুষকে কী কী পালন করতে হবে। যেমন, ফসল কাটার সময় পরস্পরের থেকে দুই মিটারের দূরত্বে বসতে হবে। আপনারা যদি, ফসল কাটার সময় বার বার হাত ধুতে পারেন, সেজন্যে কিছু বিশেষ ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। ফসল কাটার পর তা কিভাবে বাজারজাত করা হবে, সেদিকে লক্ষ্য রেখে ৪ – ৫ টি গ্রাম মিলিয়ে একটি মান্ডি চালু করা হয়েছে। সেখানে কী হবে ? কৃষকরা আগে হলোগ্রাম স্লিপ নেবেন, তার পরেই মান্ডিতে যেতে পারবেন। হলোগ্রাম স্লিপ হাতে থাকলেই তারা বাজারে যেতে পারবেন। একটি ট্রাক্টরে শুধু ৫০ কুইন্টাল গম মান্ডিতে নিয়ে যেতে পারবেন। প্রত্যেক ট্রাক্টরে  একজন ড্রাইভার, আর একজন সহায়ক থাকতে পারবেন। তাঁরাও যাতে নিজেদের মধ্যে সামাজিক দূরত্ব বজায় থাকে সেটা সুনিশ্চিত করবেন।

প্রধানমন্ত্রীজী – পল্লবীজী, আপনি এতো সুন্দর করে বলেছেন, আমি, সব থেকে বেশি আপনাকে অভিনন্দন জানাই। আপনি এতো সুন্দরভাবে, এতো বড় সঙ্কটের সময় নিজের গ্রামকে সামলেছেন। আর গ্রামের মানুষ খুবই আপনাকে মানে। আপনার কথা শোনে। আপনার কথা ঠিক, কৃষকদের সুস্থ্ থাকা অত্যন্ত প্রয়োজনীয়। কারণ তাঁরাই আমাদের অন্নদাতা এবং নিস্বার্থভাবে সমগ্র দেশবাসীর খাদ্য যোগান। এই কৃষক এবং পশুপালক বন্ধুরাই লকডাউনের সময় দেশবাসীর প্রয়োজনীয় শস্য, দুধ, ফল ইত্যাদির ঘাটতি হতে দেয়নি। আমি, তাঁদের এই সাহসের ভুরি ভুরি প্রশংসা করি। হ্যাঁ, এই প্রশংসার পাশাপাশি, আপনাদের সকলের প্রতি আমার একটি আবেদন, পাঞ্জাব হোক, কিংবা হরিয়ানা, দেশের কৃষকরা.... আর পল্লবীজী আমার মনে হয়, পাঠানকোট, গুরুদাসপুর-এর মতো অঞ্চলগুলিতে আমি যখন সংগঠনের কাজ করতাম, তখন গুরুদাসপুর এলাকার অনেক মা-বোনেদের সঙ্গে পরিচিতি হয়েছিল। তাঁরা সব সময় আমাকে বলতেন, আমাদের নবীন প্রজন্মকে ড্রাগ ইত্যাদি নেশা থেকে বাঁচান। তারা অনেক দুঃচিন্তা করতেন, এটাও যে একটা কাজ, আমাদের এই ধরিত্রীমাকে বাঁচানো, আমাদের কৃষকদের উজ্জ্বল ভবিষ্যতের জন্যে, আমাদের দেশের নাগরিকদের, উন্নত স্বাস্থ্যের জন্য আমাদের পরবর্তী প্রজন্ম যেন, দূর্বলতার শিকার না হয়, তা দেখার জন্য আমাদের গ্রামে গ্রামে কৃষকদের বুঝতে হবে, যাতে ইউরিয়ার ব্যবহার কম করেন। ইউরিয়া থেকে অনেক সমস্যা হচ্ছে। ইউরিয়া আমাদের মাটি ও জলে অনেক বিপরীত প্রভাব ফেলছে।

আর সেজন্যে পল্লবীজী, আপনার মতো গ্রাম প্রধান, গ্রামবাসীদের বোঝান যে ভাই, এখন গ্রামে ১০ বস্তা ইউরিয়া এলে, সেটাকে কমিয়ে ৫ বস্তা করতে হবে। আর যদি এখন ১০০ বস্তা আসে, তাহলে ৫০ বস্তা করতে হবে, অর্ধেক করে দিতে হবে। আপনারা দেখবেন, এতে অর্থ সাশ্রয় হবে। আর আমাদের পৃথিবী মাও বাঁচবে।

আমি চাইবো, যখন পঞ্জাবের কৃষকদের সঙ্গে কথা হচ্ছে এবং পল্লবীর মতো গ্রাম প্রধানদের সঙ্গে কথা হচ্ছে, আমার পূর্ণ বিশ্বাস, আপনি এই কাজ করতে পারবেন। আমার পক্ষ থেকে আপনাকে অনেক অনেক শুভেচ্ছা।

আসুন, আমরা মহারাষ্ট্রের দিকে যাই। মেদন করওয়াড়ী গ্রাম পঞ্চায়েতের প্রধান ভগিনী প্রিয়াঙ্কা, আমাদের সঙ্গে জুড়েছেন। প্রিয়াঙ্কাজী নমস্কার।

প্রিয়াঙ্কাজী – নমস্কার, স্যার।

প্রধানমন্ত্রীজী – বলুন, প্রিয়াঙ্কাজী।

প্রিয়াঙ্কাজী –  স্যার, আপনি যখন থেকে লকডাউন নির্দেশ দিয়েছেন, তারপর থেকে, ২৬ তারিখ থেকে সোডিয়াম হাইপোক্লোরাইড দিয়ে গোটা গ্রাম স্যানিটাইজ করেছি। তারপর আমরা যেখানে বেশি মানুষের যাতায়াত হয়, সেরকম দুই জায়গায় স্যানিটাইজার টার্নেল বানিয়েছি। সেখানে, স্যানিটাইজার সৈনিক মোতায়েন করা হয়েছে। আমরা বাড়িতে বাড়িতে সাবান বিতরণ করেছি। তারপর যখন, স্কিল ইন্ডিয়া প্রকল্পের অধীনে মহিলাদের সেলাইয়ের প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়, সেই মহিলাদের আমরা মাস্ক তৈরি করার কাজ দিয়েছি। যে সেল্ফ হেল্প গ্রুপ, তাঁদেরকে প্রশিক্ষণ দিচ্ছে, তাঁরা এভাবে ৫০০০ হাজার মাস্ক তৈরি করেছে। আমরা, এই মাস্কগুলি সারা গ্রামে বাড়িতে বাড়িতে বিতরণ করেছি। পাশাপাশি, আমাদের এলাকা, আধাশহর এলাকা। পাশেই শিল্পাঞ্চল রয়েছে। সেখান থেকে যাঁরা আমাদের দিকে হাঁটতে আসেন, তাঁদের জন্য নির্দিষ্ট সময় নির্ধারণ করে দিয়েছি। অন্য সময়, আমরা রাস্তার আলো নিভিয়ে দিয়েছে। সোশ্যাল ডিস্ট্যান্সিং বজায় রাখার ক্ষেত্রে এই পদ্ধতি খুব কার্যকরী প্রমাণিত হয়েছে।

এর সঙ্গে আমাদের এলাকার দোকানগুলির সামনে একটি করে গোল দাগ দিয়ে আমরা সোশ্যাল ডিস্ট্যান্সিং বজায় রাখতে সফল হয়েছি। পাশাপাশি মুদির দোকান ও সব্জির দোকানে আমরা একদিন অন্তর বিক্রি চালু করেছি। তার মানে ৩ দিন মুদির দোকান খোলা থাকবে আর ৩ দিন সব্জির দোকান। এভাবে আমরা, জনগণের আসা – যাওয়া নিয়ন্ত্রণ করতে অনেকটা সফল হয়েছি।

এর সঙ্গে যে হাউজিং সোসাইটিগুলি রয়েছে, সেগুলির সঙ্গে কৃষকদের সমন্বয় সাধন করে একটি পিএমসি-র মাধ্যমে স্বেচ্ছাসেবক নিয়োগ করে, সেখানকার সব্জি এবং শস্য হাউজিং সোসাইটিতে পৌঁছনোর কাজ করেছি। এতে কৃষকদের খুব লাভ হয়েছে। পাশাপাশি আমরা, মহিলা সুরক্ষা এবং মহিলাদের স্বাস্থ্যের কথা মাথায় রেখে আমাদের গ্রামে ৭০০০ স্যানিটারি ন্যাপকিন, আশাকর্মীদের মাধ্যমে পুরো গ্রামে বিতরণ করেছি। প্রত্যেক মহিলা ও যুবতিকে আমরা ন্যাপকিন দিয়েছি। পাশাপাশি আমরা হোম কোয়ারান্টাইন চালু করেছি। যাতে কাউকে সন্দেহ হলে, আমরা তাদের হোম কোয়ারান্টাইনে রাখতে পারি। এতে আমাদের অনেক সুবিধা হয়েছে। আমরা পরে আর একবার গ্রামকে স্যানিটাইজ করেছি। যখন আপনি, লকডাউনের সময় বৃদ্ধি করলেন। এই সব উপায়ের মাধ্যমে সোশ্যাল ডিস্ট্যান্সিং বজায় রাখার ফলে খুব লাভ হয়েছে।

প্রধানমন্ত্রীজী – প্রিয়াঙ্কাজী, এতদিনে হয়তো গ্রামের মানুষ খুব ক্লান্ত হয়ে পড়েছেন। মানুষের হয়তো রাগ হচ্ছে, এই মোদীজী কেমন মানুষ, এতদিন ধরে ঘরে বন্ধ করে রেখেছে।

প্রিয়াঙ্কাজী – হ্যাঁ, তাঁদের বাড়িতে থাকার অভ্যাস নেই। সেজন্য গ্রামবাসীরা ক্লান্ত হয়ে পড়েছেন। কিন্তু তাঁরা জানেন, আমাদের দেশের প্রধানমন্ত্রী যা করছেন, তা আমাদের স্বাস্থ্যের কথা ভেবে করছেন, আমাদের দেশের জন্যে করছেন। এটা তাঁরা বোঝেন।

প্রধানমন্ত্রীজী – আপনাদের গ্রামের জনসংখ্যা কত প্রিয়াঙ্কাজী ?

প্রিয়াঙ্কাজী –  ৫০,০০০।

প্রধানমন্ত্রীজী – আমি মনে করি, খামার বাড়িগুলিতে উত্পন্ন ফসল, ভারত সরকারকে খুব সাহায্য করছে। এই উত্পাদন যত বৃদ্ধি পাবে, আপনাদের গ্রামের কৃষকরা ততবেশি উপকৃত হবেন।

সেরকমই ই-নাম। ই-নাম প্রযুক্তির মাধ্যমে দেশের প্রত্যেক প্রান্তে বসবাসকারী আমাদের কৃষকরা ভালো বাজার পেতে পারেন। আর এখন কৃষক ভরসা করতে শুরু করেছে। আর আপনার মতো শিক্ষিত গ্রাম প্রধান থাকলে, আমি মনে করি, যে আধুনিক ব্যবস্থাগুলি আপনারা নিজেদের গ্রামেও নিয়ে আসতে পারেন।

সেরকমই গর্ভমেন্ট ই-মার্কেট প্লেস পোর্টালে আপনাদের গ্রামের মহিলাদের সাশ্রয়ী গোষ্ঠী, ছোট ছোট শিল্পদ্যোগীরা যা উত্পাদন করেন, তা সরাসরি ভারত সরকার, বিক্রি করতে পারবে। এতে কোনো দরপত্রের প্রয়োজন পড়বে না। কোনো কমিশন দিতে হবে না। সরাসরি GM পোর্টালে আবেদন করুন। আপনার মতো লেখাপড়া জানা প্রধান যেহেতু রয়েছেন, একটি ভালো গোষ্ঠী তৈরি করে প্রযুক্তির মাধ্যমে আপনার গ্রামের বোনেদের উত্সাহ যোগাতে পারেন। যাতে তাঁরা যা উত্পাদন করেন, সেটি সঠিক বাজার পায়, অন্যান্য পরিষেবাও পায়। 

হ্যাঁ, প্রিয়াঙ্কাজী আপনি কিছু বলছিলেন-

প্রিয়াঙ্কাজী – যেভাবে আপনি গোটা দেশ, সমগ্র বিশ্বকে পথ দেখাচ্ছেন, যে করোনার সঙ্কটে কিভাবে মোকাবিলা করা যায়, তা আমি কিছু কবিতার পংতিতে বলতে চাইবো।

প্রধানমন্ত্রীজী – অবশ্যই বলুন।

প্রিয়াঙ্কাজী – চেষ্টা চলছে এবং সাহস অটল,/  মাথা বিশ্বের আকাশে উঁচু হচ্ছে।/

      আমি কাউকে বিশ্বাস করি না, আমি পরিশ্রমকে বিশ্বাস করি,/ একদিন এই পরিস্থিতি বদলাবেই।

প্রধানমন্ত্রীজী – চলুন বাঃ বাঃ আপনার শব্দগুলিতে অনেক বিশ্বাস রয়েছে। এটা দেশের ভাবনার প্রতিবিম্ব। আমার পক্ষ থেকে অনেক শুভেচ্ছা।

আসুন, আমরা পূর্বের দিকে যাই। আসামের কাছাড় জেলার ছোট দুধপাতিল গ্রাম পঞ্চায়েতের প্রধান, রণজিৎ সরকার আমাদের সঙ্গে রয়েছেন। রণজিৎজী নমস্কার।

রণজিৎজী – নমস্কার স্যার। সবার আগে আমি আসাম রাজ্যের পক্ষ থেকে লকডাউন সম্পর্কে জনগণের বক্তব্য তুলে ধরতে চাই।

প্রধানমন্ত্রীজী – চলুন অনেক হয়েছে, আসামের মানুষ হয়তো ভীষণ রেগে আছেন। কারণ আমি তাদের বিহুর মতো বড় আনন্দ উত্সব, লকডাউন ঘোষণা করে মাটি করে দিয়েছি। এবার করোনার ফলে অত্যন্ত সীমিত স্তরে বিহু পালন করা হয়েছে। করোনার বিরুদ্ধে দেশের এই লড়াইয়ে আসামের জনগণের এই সংযম অত্যন্ত প্রশংসনীয়। আসামে তো আমি দেখছি, আমাদের গ্রামের বোনেরা গামছা দিয়ে মাস্ক তৈরির কাজ করছেন। যে স্বাস্থ্যকর্মীরা পরীক্ষা করতে যান, তাঁদের সাহায্য করার জন্য আপনার পঞ্চায়েত কী করছে ?

রণজিৎজী – লকডাউন, আপনি যে সিদ্ধান্ত নিয়েছেন, খুব ভালো কাজ করেছেন স্যার, দেশকে বাঁচানোর জন্যে কাজ করেছেন। পিএম স্যার আমাদের পঞ্চায়েত চেষ্টা করছে, যাতে আমাদের গ্রামগুলিকে করোনা থেকে সম্পূর্ণ নিরাপদ রাখা যায়। বাইরে থেকে যারাই আসছেন, তাদের ওপর নজর রাখা হচ্ছে। আমাদের গ্রামগুলিতে আশাকর্মী এবং অন্যান্য স্বাস্থ্যকর্মীদের দল নিয়মিত পর্যবেক্ষণে আসছেন। এই স্বাস্থ্যকর্মীদের দলকে বাড়িতে বাড়িতে পৌঁছে দেওয়া এবং প্রয়োজনীয় তথ্য সংগ্রহে আমাদের পঞ্চায়েতের টিম, সম্পূর্ণ সাহায্য করে চলেছে। আপনারা, ডাক্তার এবং অন্যান্য স্বাস্থ্যকর্মীদের সুরক্ষার জন্য যে আইন প্রণয়ন করেছেন, সেজন্য গোটা পঞ্চায়েতের পক্ষ থেকে আমি আপনাকে কৃতজ্ঞতা জানাতে চাই। এটার খুব প্রয়োজন ছিল। আমাদের পঞ্চায়েত, সেই মানুষদের খুব সাহায্য করছে, যাদের হাতে এখন কোনো কাজ নেই। কেন্দ্র এবং রাজ্য সরকারের পক্ষ থেকে যত সাহায্য পাঠানো হচ্ছে, সব দ্রুত গতিতে মানুষের কাছে পৌঁছে দেওয়া হচ্ছে।

প্রধানমন্ত্রীজী – রণজিৎজী, আপনি খুব সুন্দরভাবে কথাগুলি বললেন। আমি আপনাকে শুভেচ্ছা জানাই। সমস্ত আসামবাসীদের আমার পক্ষ থেকে শুভেচ্ছা। আপনাকে অনেক অনেক ধন্যবাদ। এটা খুব ভালো কথা রণজিৎজী, আপনাকে এবং আপনার টিমকে এখন অনেক কাজ করতে হবে। আপনি যে স্বাস্থ্যকর্মীদের নিরাপত্তার জন্যে নতুন আইনের প্রসঙ্গ তুলেছেন, আমি চাইবো, যাতে কখনো এই আইন প্রয়োগ না করতে হয়। আমাদের করোনা যোদ্ধাদের নিজেরে মতো করে কাজ করতে দিতে হবে। তাদের সম্মান জানাতে হবে। কারণ তারা নিজেদের জন্যে নয়, আমাদের জন্যে মাঠে নেমেছেন।

বন্ধুগণ, আপনার সঙ্গে এই যে সার্থক বার্তালাপ হলো, তা শুধু আমি নই। দেশের যত নাগরিক আপনাদের শুনছেন, প্রত্যেকেরই হয়তো ভালো লেগেছে। তাঁদের মনে হয়তো একটি নতুন বিশ্বাস জন্ম নিয়েছে। যে দূর-দূরান্তের গ্রামে আমাদের জনগণ কিভাবে দেশকে সামলে রেখেছেন। দেশের উজ্জ্বল ভবিষ্যতের জন্য কিভাবে আপ্রাণ কাজ করছেন। আরো সময় থাকলে, সবার কথা শুনতে পেলে কত আনন্দ পেতাম, কত নতুন নতুন তথ্য পেতাম। কিন্তু আজ যখন লক্ষ লক্ষ পঞ্চায়েত সদস্য ও অসংখ্য পঞ্চায়েত প্রধান আমার সামনে রয়েছেন, তাঁরা এই প্রযুক্তির মাধ্যমে আমার সঙ্গে যুক্ত হয়েছেন, আপনাদের সকলের কথা আমি শুনতে না পেলেও যে কয়েকজন গ্রাম প্রধান, তাঁদের অভিজ্ঞতার কথা বললেন, তা থেকে একপ্রকার আপনাদের ভাবনা ফুটে উঠেছে। কিন্তু তার পরেও আপনাদের মধ্যে কেউ কেউ যদি বিশেষ কোনো প্রচেষ্টা করে থাকেন, বিশেষ কোনো প্রয়োগের মাধ্যমে গ্রামকে বাঁচিয়ে থাকেন, তারা আমাকে অবশ্যই লিখে পাঠাবেন। আমার খুব ভালো লাগবে।

আপনারা সবাই এই কঠিন পরিস্থিতিতে গ্রামগুলির জীবনকে সুরক্ষিত এবং সহজ করে তুলতে নেতৃত্ব দিচ্ছেন, নিজেদের দায়িত্ব পালন করছেন। আমরা সবাই শুনেছি, ছোটবেলা থেকে শুনে আসছি, মহাত্মা গান্ধী একটি কথা বার বার বলতেন, যে ‘আমার স্বরাজের কল্পনার ভিত্তি হল গ্রাম স্বরাজ’।

সেই জন্যে গ্রাম পঞ্চায়েতগুলি আমাদের গণতন্ত্রের ঐক্যবদ্ধ শক্তির কেন্দ্র। আমাদের গণতান্ত্রিক ঐক্যবদ্ধতার এটি সব চাইতে বড় শক্তিশালী কেন্দ্র। আর আমাদের শাস্ত্রে বলা হয়েছে,-“ সঙ্ঘমূলম মহাবলম”, অর্থাৎ সংগঠন বা ঐক্যবদ্ধতাই বড় বড় শক্তির কেন্দ্র।

আর সেজন্যে আজকের পরিস্থিতিতে দেশকে এগিয়ে যাওয়ার সূচনা, দেশকে আত্মনির্ভর করার সূচনা, গ্রামের সামগ্রিক শক্তি থেকেই শুরু হবে, আপনাদের সকলের ঐক্যবদ্ধতা থেকেই সম্ভব হবে।

এই প্রচেষ্টাগুলির মাঝে আমাদের মনে রাখতে হবে, যে কোনো কারোর অবহেলা সম্পূর্ণ গ্রামকে বিপদে ফেলতে পারে। সেজন্যে সামান্যতম ফাঁকির অবকাশ নেই।

গ্রামে গ্রামে স্যানিটাইজেশন থেকে শুরু করে শহর থেকে ফিরে আসা মানুষদের আলাদাভাবে রাখার জন্যে এত কম সময়ে কোয়ারান্টাইন সেন্টারের ব্যবস্থা করা প্রত্যেক ব্যক্তির খাওয়া – দাওয়ার ব্যবস্থা করার কথা ভাবা, কিংবা সাধারণ মানুষকে সচেতন করা, এই সব কাজ আমাদের নিরন্তর - ক্লান্তিহীনভাবে চালিয়ে যেতে হবে। আর আমাদের জম্মু-কাশ্মীরের বন্ধু ইকবালজী যেমন বলেছেন, সকলকে সম্মান করুন, সন্দেহ করুন! আমি মনে করি, গ্রামের বয়স্ক মানুষ দিব্যাঙ্গজন এবং অসুস্থদের অগ্রাধিকার দিতে হবে। তাঁদের কোনো সমস্যা হলে আগে আপনাদের কাছে আসবে। সেজন্যে আগে থেকেই তাঁদের সমস্যা সমাধানের ব্যবস্থা পঞ্চায়েত প্রধান ও সদস্যদের করে রাখতে হবে। আমাদের মনে রাখতে হবে, যে শারীরিক দূরত্ব, দুই গজের দূরত্ব, এই মন্ত্র ভুললে চলবে না। গ্রামে গ্রামে বাড়িতে বাড়িতে পাড়ায় পাড়ায় দুই গজের দূরত্ব – এই শারীরিক দূরত্ব পাশাপাশি মুখে মাস্ক, খুব দামি কেনার দরকার নেই। গামছা বাঁধলেও চলবে। কিন্তু নিয়মিত ঢেকে রাখতে হবে। হাতগুলিকে বার বার সাবান দিয়ে ধুতে হবে। আগামী দিনে আমাদের জন্যে এই রোগ থেকে বাঁচার এটাই বড় পথ, এটাই একমাত্র ওষুধ।

আমাদের নিরাপত্তা এবং পরিচ্ছন্নতার দিকে বেশি নজর দিতে হবে। কারণ গ্রীষ্ম এবং বর্ষা ঋতুতে অনেক ধরণের অসুখের বিপদ বেড়ে যায়। আর আমাদের বর্ষা আসার সময় হয়ে গেছে। সচেতন থাকতে হবে, বর্ষা এলে এই সংক্রমণ বৃদ্ধির সম্ভাবনা বাড়বে। সেই জন্য আমাদের অত্যন্ত সতর্ক থেকে নিজেদের গ্রামকে বাঁচাতে হবে।

সেই জন্য অত্যন্ত সতর্ক থেকে আমাদের গ্রামগুলি বাঁচাতে হবে।

বন্ধুগণ, আমাদের অতীতের অভিজ্ঞতা বলে যে, অসুস্থতা এবং তার চিকিত্সা সম্পর্কে ভুল তথ্যের কারণে আমাদের রোগ প্রতিরোধে অনেক সমস্যা দেখা দেয়, অনেক সময় নষ্ট হয়। এবার আমাদের এমন হতে দেওয়া চলবে না। আমাদের সব ধরণের ভ্রম থেকে জনগণকে বের করে আনতে হবে।

প্রত্যেক পরিবারের কাছে সঠিক তথ্য পৌঁছে দিতে হবে। তা সে প্রতিরোধের উপায় হোক, কিংবা চিকিত্সার। সেজন্যে আপনাদের ছোট ছোট দল তৈরি করে, যেমন আমরা শুনেছি, গ্রাম প্রধানরা বলেছেন, তাঁরা গ্রামে ছোট ছোট দল বানিয়ে আলাদা আলাদা কাজের জন্যে মানুষকে সংগঠিত করেছে। এই দলগুলি সচেতনতা অভিযানকে ত্বরান্বিত করেছে। আশাকর্মী, এএনম, অঙ্গনওয়াড়ী কর্মীদের সঙ্গে নিয়ে আমাদের সেল্ফ হেল্প গ্রুপগুলির বোনেরা, যুব সংস্থাগুলির, প্রাক্তন সৈনিকরা এবং অন্যান্য সংগঠনের অনেক মানুষ, যার মধ্যে ধর্মীয়, সামাজিক, সাংস্কৃতিক সংগঠনগুলি রয়েছেন। প্রত্যেকের সাহায্য নিতে হবে। প্রত্যেককে জুড়তে হবে।

বন্ধুগণ, আমি সোশ্যাল মিডিয়াতে দেখছিলাম, কিছু মানুষ অন্যদের খাদ্যাভ্যাস নিয়ে নানা ধরণের সমালোচনা করেন। এর মাধ্যমেও অনেক গুজব তৈরি হয়। এ থেকে আমাদের সতর্ক থাকতে হবে। আমরা যাই খাই না কেন, খুব ভালোভাবে ধুয়ে রান্না করে খেতে হবে। এই বার্তা আমাদের গ্রামে গ্রামে ছড়িয়ে দিতে হবে। আর হ্যাঁ, গ্রামে গ্রামে অনেক ভালো পরম্পরা থাকে, সেগুলিকে আমাদের আরো উত্সাহ যোগাতে হবে। যেমন আমাদের দেশে আয়ুর্বেদিক কাড়া পানের প্রচলন রয়েছে। অনেক ধরণের মশলা মিশিয়ে এটি তৈরি করা হয়। এর পাশাপাশি আমরা যদি নিয়মিত রূপে যোগ, প্রাণায়াম করি, তাহলে নিশ্চিতরূপে আমাদের লাভই হবে। এগুলি কোনো অসুখের চিকিত্সা নয়। কিন্তু এগুলি আমাদের শরীরকে অসুখের বিরুদ্ধে লড়তে শক্তি যোগায়, সক্ষম করে তোলে। আয়ুষ মন্ত্রকের পক্ষ থেকে এই ধরণের কিছু নির্দেশাবলীও জারি করা হয়েছে। আর আমি চাইবো সমস্ত গ্রামপ্রধানরা আয়ুষ মন্ত্রকের ওয়েবসাইটে যান। সেখানে অনেক নির্দেশাবলী রয়েছে। আপনাদের গ্রামে সেগুলি প্রয়োগ করুন।

আরেকটি বিষয়, যা আপনাদের সবাইকে লক্ষ্য রাখতে হবে, এই যে আরোগ্য সেতু মোবাইল অ্যাপ, আমি সম্প্রতি টিভিতে একজন অভিনেতাকে বলতে শুনেছি, তিনি এই আরোগ্য সেতু মোবাইল অ্যাপকে বডিগার্ড বলেছেন। এই মোবাইল অ্যাপ, করোনার বিরুদ্ধে লড়াইয়ের ক্ষেত্রে অত্যন্ত কার্যকর।

এই অ্যাপ, আপনাদের মোবাইলে থাকলে আপনারা জানতে পারবেন, যে আপনাদের গ্রামে যে এসেছেন, তিনি এমন কোনো এলাকা থেকে এসেছেন কি না, যেখানে করোনা সংক্রমণ হয়েছে। আপনাদের নিজেদের নিরাপত্তার জন্যে, আপনাদের গ্রামের নিরাপত্তার জন্যে, আপনার প্রতিবেশীদের সুরক্ষার জন্যে আপনারা যদি নিজেদের মোবাইলে এই আরোগ্য সেতু অ্যাপ ডাউনলোড করেন, গ্রামের অন্য সবাইকেও করান, তাহলে দীর্ঘকাল এটি আপনার বডিগার্ডের কাজ করবে।

আমি দেশের সমস্ত পঞ্চায়েত প্রতিনিধিদের অনুরোধ জানাবো, যে আপনারা সবাই নিজেদের গ্রামের প্রত্যেক সদস্যের মোবাইল ফোনে আরোগ্য সেতু অ্যাপটি ডাউনলোড করান। এটি এক প্রকার আমাদের সুরক্ষার সেতু।

বন্ধুগণ, আমাদের সরকার, দেশের গ্রামীণ এলাকায় বসবাসকারী ভাই ও বোনেদের স্বাস্থ্যকে সব সময়ই অগ্রাধিকার দিয়েছে। আপনাদের প্রতিটি প্রয়োজনীয়তা বুঝে সরকার নিয়মিত কাজ করছে।

আগে টীকাকরণ নিয়ে অনেক সমস্যা হত। আমাদের সরকার, শুধু প্রতিষেধক টীকার সংখ্যা বাড়ায় নি, টীকাকরণে অভিযানকে দূর দূরান্তের অঞ্চলগুলিতে পৌঁছে দিয়েছে। আগে গর্ভবতী মহিলা এবং নবজাত শিশুদের অপুষ্টির সমস্যা অত্যন্ত প্রকট ছিল। আমরা পিএম মাতৃবন্দনা যোজনার মাধ্যমে সরাসরি মহিলাদের ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টে টাকা পাঠানো শুরু করি। যাতে তা  অপুষ্টির বিরুদ্ধে লড়াইয়ে সহায়ক হয়।

আগে শৌচালয়ে কি পরিস্থিতি ছিল, তা আপনারা সবাই জানেন। গ্রামে গ্রামে প্রত্যেকের বাড়িতে শৌচালয় না থাকায় কত ধরণের রোগ ছড়াতো, আমরা চেষ্টা করছি, যাতে গ্রামের দরিদ্র থেকে দরিদ্রতম ব্যক্তি উন্নত স্বাস্থ্য পরিষেবা পান। আয়ুষ্মান ভারত প্রকল্প, গ্রামের গরিবদের জন্যে আর্শীবাদস্বরূপ হয়ে উঠেছে। এর মাধ্যমে এখন পর্যন্ত প্রায় ১ কোটি গরীব রোগী হাসপাতালে বিনামূল্যে চিকিত্সা পরিষেবা পেয়েছেন। এই প্রকল্প গ্রামীণ এলাকাগুলিতে যেখানে তেমন হাসপাতাল ছিল না, সেই অঞ্চলগুলিতে হাসপাতাল গড়ে তুলেছে। সরকার, সারা দেশে গ্রামগুলিতে প্রায় দেড় লক্ষ হেলথ এন্ড ওয়েলনেস সেন্টার গড়ে তোলার কাজ দ্রুতগতিতে এগিয়ে নিয়ে চলেছে। এই স্বাস্থ্যকেন্দ্রগুলিতে অনেক কঠিন রোগের পরীক্ষার সুবিধা চালু হয়েছে।

আগে থেকে এসব উদ্যোগ নেওয়ার মাধ্যমে আমরা আজ আমাদের গ্রামগুলিকে করোনার বিরুদ্ধে লড়াইয়ে গুরুত্বপূর্ণ পালনের জন্য প্রস্তুত রাখতে পেরেছি। আমার বিশ্বাস, যে আপনারা সবাই নিজেদের সামগ্রিক প্রচেষ্টার মাধ্যমে, ঐক্যবদ্ধতার মাধ্যমে নিজেদের সঙ্কল্প শক্তি দিয়ে করোনাকে অবশ্যই পরাস্ত করবেন।

এই বিশ্বাস নিয়ে আরেকবার সমস্ত বন্ধুদের এই গুরুত্বপূর্ণ পঞ্চায়েতীরাজ দিবসের শুভেচ্ছা জানাই। আপনাদের, আপনাদের পরিবারের সবার, আপনাদের গ্রামের প্রত্যেক নাগরিকের উন্নত স্বাস্থ্য কামনা করি। আরেকবার আপনারা সময় বের করে, নিজেদের অনেক কথা আমাকে শুনিয়েছেন, অনেক নতুন তথ্য জানতে পেরেছি। আপনাদের আত্মবিশ্বাসকে অনুভব করেছি।

আমি আরেকবার আপনাদের সবাইকে অনেক অনেক ধন্যবাদ জানাই।

নমস্কার !!

 

 

CG/SB/SFS



(Release ID: 1631091) Visitor Counter : 934