প্রধানমন্ত্রীরদপ্তর
azadi ka amrit mahotsav

ভুটানের রাজার জন্মদিবস উদযাপন সমারোহে প্রধানমন্ত্রীর ভাষণের বঙ্গানুবাদ

Posted On: 11 NOV 2025 1:53PM by PIB Kolkata

নয়াদিল্লি, ১১ নভেম্বর, ২০২৫

 

ভুটানের মহামহিম অধিপতি,

মহামহিম চতুর্থ মহীপতি,

রাজ পরিবারের মাননীয় সদস্যবৃন্দ,

ভুটানের প্রধানমন্ত্রী,

অন্য অভ্যাগতবৃন্দ,

আমার ভুটানের ভাই ও বোনেরা !

ভালো আছেন তো !

ভুটান, ভুটানের রাজ পরিবার এবং বিশ্বের শান্তি ও সুস্থিতির প্রতি যাঁরা আস্থাশীল তাঁদের কাছে আজকের দিনটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। 

শতকের পর শতক ধরে ভারত এবং ভুটান গভীর আধ্যাত্মিক এবং সংস্কৃতি বন্ধনে আবদ্ধ। সেজন্যই এই সমারোহে যোগদান ভারতের এবং আমার কর্তব্যের মধ্যে পড়ে। 

কিন্তু আজ আমি এখানে এসেছি ভারাক্রান্ত হৃদয় নিয়ে। দিল্লিতে গতকাল যে ভয়াবহ ঘটনা ঘটেছে তাতে আমরা সকলেই গভীরভাবে ব্যাথিত। ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারগুলির বেদনা অনুভব করি আমি। সারা দেশ এই শোকের সময় তাঁদের পাশে আছে। 

ওই ঘটনার বিষয়ে আমি সংশ্লিষ্ট সব সংস্থা এবং আধিকারিকদের সঙ্গে গত রাতে কথা বলেছি। সব দিক খতিয়ে দেখা হচ্ছে এবং প্রাপ্ত তথ্য বিশ্লেষণ করা হচ্ছে।

আমাদের গোয়েন্দা সংস্থাগুলি এই ষড়যন্ত্রের উৎস খুঁজে বের করবেই। যারা এর পিছনে আছে, তারা ছাড়া পাবে না। 

এই ঘটনার জন্য দায়ী প্রত্যেককেই বিচারের মুখোমুখি দাঁড় করানো হবে। 


বন্ধুরা,

আজ আমরা গুরু পদ্মসম্ভবের আশীর্বাদ নিয়ে বিশ্বশান্তি প্রার্থনা উৎসব উপলক্ষে সমবেত হয়েছি। আর ভগবান বুদ্ধের পিপরাওয়া দেহাবশেষও জনসমক্ষে রাখা হয়েছে। পাশাপাশি উদযাপিত হচ্ছে ভুটানের মহামহিম চতুর্থ ভূপতির ৭০-তম জন্ম দিবস। 

এই অনুষ্ঠান এবং আপনাদের মূল্যবান উপস্থিতি ভারত এবং ভুটানের দৃঢ় বন্ধনকে তুলে ধরে। 

বন্ধুরা,

ভারতে আমরা পূর্বসূরীদের কাছ থেকে "वसुधैव कुटुंबकम” -এর মন্ত্র শিখেছি- যার অর্থ সারা বিশ্ব একই পরিবার।

আমরা বলি “सर्वे भवंतु सुखिन” :,  যার অর্থ, বিশ্বে প্রত্যেকে সুখী হোক।

আমরা বলি-

द्यौः शान्तिः
अन्तरिक्षम् शान्तिः
पृथिवी शान्तिः
आपः शान्तिः
ओषधयः शान्तिः

অর্থাৎ, বিশ্ব চরাচরে শান্তি বিরাজ করুক, অন্তরীক্ষে, মহাকাশে, ধরিত্রীতে, জলে, ঔষধে, উদ্ভিদে এবং জীবন্ত যাবতীয় সত্ত্বায়। এই আদর্শকে সামনে রেখে আমরা আজ ভুটানে বিশ্ব শান্তি প্রার্থনা উৎসবে যোগ দিয়েছি। 

আজ সারা বিশ্বের প্রাজ্ঞজনেরা বিশ্ব শান্তির প্রার্থনায় রত। এরই মধ্যে রয়েছে ১৪০ কোটি ভারতীয়ের প্রার্থনা। 

অনেকেই হয়তো জানেন না, যে আমার জন্মস্থান ভাদনগর বৌদ্ধ ঐতিহ্য ও পরম্পরার অন্যতম কেন্দ্র। আর আমার কর্মস্থল বারাণসী বৌদ্ধ প্রজ্ঞার বিচ্ছুরণ স্থল। সেজন্যই এই সমারোহে যোগদান আমার কাছে বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ। আমি প্রার্থনা করি, যে শান্তির প্রদীপের আলো ভুটান এবং সারা বিশ্বের প্রতিটি গৃহকে আলোকিত করুক। 

বন্ধুরা,

ভুটানের চতুর্থ অধিপতির জীবনে প্রজ্ঞা, সারল্য, সাহসিকতা এবং দেশের প্রতি নিঃস্বার্থ সেবার আদর্শ প্রতিফলিত। 

মাত্র ১৬ বছর বয়েসে তিনি তুলে নিয়েছেন গুরুদায়িত্ব। পিতৃসুলভ স্নেহে দুরদর্শিতার সঙ্গে এগিয়ে নিয়ে গেছেন এই দেশকে। তাঁর ৩৪ বছরের শাসনকালে ভুটানের ঐতিহ্য এবং বিকাশের ধারা একইসঙ্গে সমৃদ্ধ হয়েছে। 

ভুটানে গণতান্ত্রিক প্রণালী স্থাপনে এবং সীমান্ত অঞ্চলে শান্তি প্রতিষ্ঠায় তিনি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছেন। 

আপনারা এনেছেন “গ্রস ন্যাশনাল হ্যাপিনেস”-এর ধারনা। আজ তা সারা বিশ্বে বিকাশের পরিমাপে ব্যবহৃত হয়। আপনারা দেখিয়েছেন যে জাতি গঠন শুধুমাত্র জিডিপি-র বিষয় নয়, এর সঙ্গে মানব সভ্যতার সামগ্রিক কল্যাণ ওতপ্রোতভাবে জড়িত। 

বন্ধুরা,

মহামহিম সম্রাট ভারত এবং ভুটানের মৈত্রীর বন্ধন শক্তিশালী করতে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রেখেছেন। তাঁর নির্মিত ভিত্তির ওপর আমাদের দু-দেশের বন্ধুত্ব আরও সুদৃঢ় হবে। 

ভারতবাসীর পক্ষ থেকে আমি মহামহিম সম্রাটকে আন্তরিক শুভেচ্ছা জানাই এবং তাঁর সুস্থ জীবন ও দীর্ঘায়ু কামনা করি। 

বন্ধুরা,

ভারত ও ভুটান শুধুমাত্র সীমান্তরেখা নয়, সংস্কৃতিগত দিক থেকেও সংযুক্ত। মূল্যবোধ, সংবেদনশীলতা, শান্তি এবং সমৃদ্ধি আমাদের সম্পর্কের মূল ভিত্তি। 

২০১৪-য় প্রধানমন্ত্রী হওয়ার পর আমার প্রথম বিদেশ সফরে গন্তব্য ছিল ভুটান। আজও সেই সময়ের স্মৃতি আমায় স্পর্শ করে। ভারত এবং ভুটানের সম্পর্ক গভীর ও শক্তিশালী। সঙ্কটের প্রহরে আমরা পরস্পরের পাশে দাঁড়িয়েছি, বিভিন্ন চ্যালেঞ্জের মোকাবিলা করেছি একসঙ্গে। আজ আমরা এগিয়ে চলেছি বিকাশ ও সমৃদ্ধির দিশায় এবং এই বন্ধন সুদৃঢ়তর হয়ে চলেছে। 

মহামহিম সম্রাট ভুটানকে নতুন উচ্চতায় নিয়ে চলেছেন। ভারত এবং ভুটানের পারস্পরিক আস্থা ও বিকাশকেন্দ্রিক অংশীদারিত্ব এই অঞ্চলের সামনে উদাহরণস্বরূপ।  

বন্ধুরা,

আজ আমাদের এই বিকাশ যাত্রাকে আরও শক্তিশালী করছে শক্তি ও জ্বালানি ক্ষেত্রে অংশীদারিত্ব। ভারত-ভুটান জলবিদ্যুৎ অংশীদারিত্বেরও সূচনা হয়েছে মহামহিম চতুর্থ সম্রাটের নেতৃত্বে। 

মহামহিম চতুর্থ সম্রাট এবং মহামহিম পঞ্চম সম্রাট ধারাবাহিক বিকাশের ধারনাকে পুষ্ট করেছেন- যা পরিবেশ সংরক্ষণের সহায়ক। সেজন্যই ভুটান হয়ে উঠেছে বিশ্বের প্রথম ‘কার্বন নেগেটিভ’ দেশ। এই সাফল্য অনন্য। মাথা পিছু পুনর্নবীকরণযোগ্য শক্তি ব্যবহারের ক্ষেত্রেও ভুটান বিশ্বের প্রথম সারির দেশগুলির মধ্যে রয়েছে। 

বন্ধুরা,

ভুটানে ১০০% বিদ্যুতই উৎপাদিত হয় পুনর্নবীকরণযোগ্য উৎস থেকে। সেই ধারাকে আরও এগিয়ে নিয়ে যেতে আজ আরও একটি গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ নেওয়া হচ্ছে। সূচনা হচ্ছে ১০০০ মেগাওয়াটের একটি নতুন জলবিদ্যুৎ প্রকল্পের। এর সুবাদে ভুটানে জলবিদ্যুৎ উৎপাদন ক্ষমতা ৪০% বৃদ্ধি পাবে। এছাড়াও দীর্ঘদিন থমকে থাকা আরও একটি জলবিদ্যুৎ প্রকল্পের কাজ আবার শুরু হয়েছে। 

আমাদের অংশীদারিত্ব কেবলমাত্র জলবিদ্যুৎ ক্ষেত্রেই সীমায়িত নয়। সৌরশক্তি ক্ষেত্রেও আমরা গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ নিচ্ছি। এ বিষয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয়গুলিতে আজ সহমতে পৌঁছেছি আমরা। 

বন্ধুরা,

আজ জ্বালানি সংক্রান্ত সহযোগিতার পাশাপাশি আমরা ভারত ও ভুটানের সংযোগ নিবিড়তর করাতেও উদ্যোগী হয়েছি। 

আমরা সকলেই জানি : 

সংযোগ সুযোগের সৃষ্টি করে

এবং সুযোগ সমৃদ্ধির বাহক। 

এই বিষয়টিকে মাথায় রেখেই গেলেফু এবং সামৎসে-কে ভারতের বিস্তৃত রেল প্রণালীর সঙ্গে সংযুক্ত করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। এই প্রকল্প রূপায়িত হলে ভুটানের শিল্প জগৎ এবং কৃষক সমাজের পক্ষে ভারতের বিশাল বাজারে প্রবেশ করা আরও সহজ হবে। 

বন্ধুরা,

রেল ও সড়ক সংযোগের পাশাপাশি আমরা সীমান্ত এলাকায় পরিকাঠামোর বিকাশেও অগ্রাধিকার দিচ্ছি। 

গেলেফু মাইন্ডফুলনেস সিটি-র ক্ষেত্রে মহামহিমের দৃষ্টিভঙ্গীতে ভারতের পূর্ণ সমর্থন রয়েছে। আমি আর একটি গুরুত্বপূর্ণ ঘোষণা করতে চাই। অদূর ভবিষ্যতে ভারত গেলেফুর কাছে অভিবাসন চৌকি গড়ে তুলবে- যার ফলে পর্যটক এবং লগ্নিকারীদের যাতায়াত আরও সহজ হবে। 

বন্ধুরা,

ভারত এবং ভুটানের সমৃদ্ধি পরস্পরের ওপর নিবিড়ভাবে নির্ভরশীল। সেজন্যই গত বছর ভারত সরকার ভুটানের পঞ্চবার্ষিকী পরিকল্পনা বাবদ ১০,০০০ কোটি টাকা দেওয়ার কথা ঘোষণা করেছে। এই অর্থ সড়ক থেকে কৃষি, অর্থায়ন থেকে স্বাস্থ্য পরিচর্যা প্রভৃতি ক্ষেত্রে ব্যবহার করা হবে। ভুটানের মানুষের জীবনযাপন হয়ে উঠবে সহজতর। 

অতীতে ভারত ভুটানের মানুষের জন্য নিত্য ব্যবহার্য পণ্যের ধারাবাহিক সরবরাহ নিশ্চিত করায় একাধিক পদক্ষেপ নিয়েছে। 

এখন, ইউপিআই লেনদেন পরিষেবারও সংস্থান করা হয়েছে এখানে। আমরা নিশ্চিত করতে চাই, যাতে ভুটানের নাগরিকরা ভারত সফরের সময় ইউপিআই-এর সুবিধা পান। 

বন্ধুরা,

ভারত এবং ভুটানের শক্তিশালী অংশীদারিত্বে সবচেয়ে উপকৃত বর্গগুলির মধ্যে রয়েছে তরুণ প্রজন্ম। মহামহিম দেশের সেবা, স্বেচ্ছাভিত্তিক কর্মসূচি এবং উদ্ভাবনার ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ উদ্যোগ নিয়েছেন। তরুণ প্রজন্মের ক্ষমতায়ন এবং তাদের প্রযুক্তি ব্যবহারে দক্ষ করে তোলায় তাঁর উদ্যোগ যুবক-যুবতীদের উদ্বুদ্ধ করছে। 

শিক্ষা, উদ্ভাবনা, দক্ষতায়ন, ক্রীড়া, মহাকাশ এবং সাংস্কৃতিক ক্ষেত্রে ভারত এবং ভুটানের তরুণ প্রজন্মের মধ্যে সহয়োগিতার পরিসর ক্রমবর্ধমান। আজ আমাদের তরুণ-তরুণীরা কৃত্রিম উপগ্রহ তৈরিতেও একযোগে কাজ করছে। এই বিষয়টি দুটি দেশের কাছে অত্যন্ত গর্বের। 

বন্ধুরা,

ভারত-ভুটান মৈত্রীর দৃঢ়তম ভিত্তিগুলির একটি হল, অভিন্ন আধ্যাত্মিক ঐতিহ্য। মাত্র ২ মাস আগে রাজগীরে উদ্বোধন হয়েছে রয়্যাল ভুটানিজ টেম্পল-এর। এই ধরনের উদ্যোগ ভারতের অন্যান্য অঞ্চলেও নেওয়া হচ্ছে। 

ভুটানের মানুষ বারাণসীতে তাঁদের দেশের একটি মন্দির এবং অতিথিশালার বিষয়ে আগ্রহ প্রকাশ করেছেন। এজন্য প্রয়োজনীয় জমির সংস্থান করছে ভারত সরকার। এই মন্দিরগুলি দু-দেশের সাংস্কৃতিক বন্ধনকে আরও শক্তিশালী করবে। 

বন্ধুরা,

ভারত এবং ভুটান শান্তি, সমৃদ্ধি এবং বিকাশের পথে আরও এগিয়ে চলুক- এমনটাই প্রার্থনা করি আমি। আমাদের রক্ষক এবং আলোকবর্তিকা হয়ে থাকুক ভগবান বুদ্ধ এবং গুরু রিনপোচে-র আশীর্বাদ। 

আপনাদের সকলকে আন্তরিক ধন্যবাদ

অনেক ধন্যবাদ ! ! !

প্রধানমন্ত্রীর মূল ভাষণটি ছিল হিন্দিতে। 

 


SC/AC/NS….  


(Release ID: 2189146) Visitor Counter : 4