প্রধানমন্ত্রীরদপ্তর
জাতীয় স্তোত্র “বন্দে মাতরম”-এর ১৫০ তম বার্ষিকী সারা বছর ধরে উদযাপনের উদ্বোধন উপলক্ষ্যে আয়োজিত অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রীর ভাষণ
Posted On:
07 NOV 2025 2:01PM by PIB Kolkata
নতুন দিল্লি, ৭ নভেম্বর ২০২৫
বন্দে মাতরম!
বন্দে মাতরম!
বন্দে মাতরম!
বন্দে মাতরম, এই শব্দ দুটি হল এক মন্ত্র, শক্তির উৎস, এক সংকল্প, এক স্বপ্ন। বন্দে মাতরমের মাধ্যমে ভারতমাতাকে আমরা আরাধনা করি। এই শব্দ সময়ের সরণী বেয়ে আমাদের ইতিহাসের কাছে পৌঁছে দেয়, আমাদের আত্মপ্রত্যয়কে জাগ্রত করে। ভবিষ্যতে কোন স্বপ্ন পূরণের সংকল্প থাকলে তা বাস্তবায়নের শক্তি যোগায়। এর উচ্চারণের মধ্য দিয়ে এমন কোন লক্ষ্য নেই যা ভারতবাসী অর্জন করতে পারবে না।
বন্ধুগণ,
বন্দে মাতরম গেয়ে ওঠার সময় আমাদের মধ্যে যে আবেগ সঞ্চারিত হয় তা অভূতপূর্ব। বহু কন্ঠে এক সুর, এক ভাব, এক রোমাঞ্চ, এক তরঙ্গ, এক শক্তি আমাদের সকলের হৃদয়কে উদ্বেলিত করে তোলে। পুরো পরিবেশকে বদলে দেয়। আমি যখন আমার বক্তব্য রাখছি তখন এই মঞ্চে উপস্থিত রয়েছেন মন্ত্রিসভায় আমার সহকর্মী গজেন্দ্র সিং শেখওয়াত জি, দিল্লির উপরাজ্যপাল ভি কে সাকসেনা জি, মুখ্যমন্ত্রী রেখা গুপ্তা জি সহ অন্যান্য বিশিষ্ট জনেরা।
ভাই ও বোনেরা,
আজ দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে লক্ষ লক্ষ মানুষ যুক্ত হয়েছেন, আমি তাঁদের সবার উদ্দেশে বন্দে মাতরম বলে সকলকে শুভেচ্ছা জানাচ্ছি। আজ ৭ নভেম্বর একটি ঐতিহাসিক দিন। আজকের দিনে আমরা বন্দে মাতরমের ১৫০ তম বর্ষপূর্তি উপলক্ষে বিরাট এক উৎসবে সামিল হয়েছি। এই পবিত্র মুহূর্ত আমাদের সকলকে নতুন শক্তি ও অনুপ্রেরণা যুগিয়েছে। এই ঐতিহাসিক দিনের স্মরণে বন্দে মাতরমকে নিয়ে একটি বিশেষ মুদ্রা ও ডাক টিকিট প্রকাশ করা হয়েছে। আজ এই দিনে আমি ভারতমাতার মহান সন্তানদের, যাঁরা বন্দে মাতরম ধ্বনিতে উদ্বুদ্ধ হয়ে তাঁদের জীবন উৎসর্গ করেছেন – সকলকে প্রণাম জানাই। একই সঙ্গে প্রত্যেক দেশবাসীকে এই উপলক্ষে অভিনন্দন জানাই।
বন্ধুগণ,
প্রত্যেক গান এবং কবিতার একটি নিজস্ব ভাবনা থাকে, বার্তা থাকে। বন্দে মাতরমের মূল ভাবনা কী ? মূল ভাবনা হল ভারত – ভারতমাতা। ভারতের সম্পর্কে যে শাশ্বত ভাবনা রয়েছে তা মানব জাতির শুরুর দিন থেকেই একটি মাত্রা পেয়েছে। বিভিন্ন যুগের কথা আমরা পড়েছি। বিভিন্ন যুগে নতুন নতুন রাষ্ট্র তৈরি হয়েছে, নতুন নতুন শক্তি দেশ শাসন করেছে, নতুন সভ্যতা গড়ে উঠেছে, সেই সভ্যতার উত্থান হয়েছে, অনেক সভ্যতার পতন হয়েছে, বিশ্বের ইতিহাস ও ভূগোলের পরিবর্তন হয়েছে – ভারত এগুলির সবকিছুরই সাক্ষী থেকেছে। মানব জাতির এই অনন্ত যাত্রায় সময়ের থেকে আমরা অনেক কিছু শিখেছি। আমাদের সভ্যতার মূল্যবোধ এবং আদর্শের ভিত্তিতে গড়ে উঠেছে। আমাদের পূর্বপুরুষ, ঋষি-মুনি, আমাদের শিক্ষক গুরুরা, আমাদের সাংস্কৃতিক পরিচয় তৈরি করেছেন। শক্তি এবং নীতির মধ্যে ভারসাম্য বজায় রাখার শিক্ষা দিয়েছে। আর এর থেকেই ভারত অতীতের বিভিন্ন সঙ্কট থেকে বেরিয়ে এসে অমরত্ব লাভ করেছে।
ভাই ও বোনেরা,
ভারতের আদর্শই এই দেশকে এগিয়ে চলতে সাহায্য করেছে। ব্যক্তি বিশেষে স্বাধীন সত্ত্বা পরিবর্তনশীল বিশ্বের থেকে আলাদা — সেই বিষয়ে আমরা সচেতন হয়েছি। এর মধ্য দিয়ে যা রচিত হয়েছে, তা আমাদের হৃদয়ের অন্তস্থল থেকে বেরিয়ে এসেছে, আমাদের অনুভব এবং সংবেদনশীলতার সঙ্গে একাত্ম হয়েছে, এই অসীম ভাবনার থেকেই বন্দে মাতরমের সৃষ্টি হয়েছে। আর তাই পরাধীনতার সময়কালে বন্দে মাতরম এক সংকল্পের প্রতীক হয়ে উঠেছে। সেই সংকল্প হল ভারতের স্বাধীনতা। ভারতমাতার হাত থেকে পরাধীনতার শৃঙ্খল ভেঙে দিতে তাঁর সন্তানরা সংকল্প গ্রহণ করেছিলেন, এর মধ্য দিয়ে তাঁদের নিজেদের ভবিষ্যৎ তাঁরা গড়ে তুলেছেন।
বন্ধুগণ,
কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর একবার বলেছিলেন – “বঙ্কিম চন্দ্রের আনন্দমঠ শুধুমাত্র একটি উপন্যাস নয়, এটি স্বাধীন ভারতের স্বপ্ন”। আপনারা দেখুন আনন্দমঠ-এ বন্দে মাতরমের প্রসঙ্গ, তার এক একটি পংক্তি, বঙ্কিম বাবুর এক একটি শব্দের গভীর অর্থ রয়েছে, যা ওই শব্দের মধ্যে নিহিত। এই গান পরাধীনতার সময়ে রচনা করা অত্যন্ত জরুরী ছিল। কিন্তু তার শব্দগুলি পরাধীনতার সময়কালে সীমাবদ্ধ ছিল না। এই শব্দ হয়তো দাসত্বের স্মৃতি থেকে আমাদের মুক্তি দিয়েছে। কিন্তু বন্দে মাতরম সকল সময়ের জন্যই সমান তাৎপর্যপূর্ণ। এই গান শাশ্বত। বন্দে মাতরম-এর প্রথম লাইন – “সুজলাং সুফলাং মলয়জ– শীতলাং, শস্যশ্যামলাং মাতরম” অর্থাৎ আমাদের সুজলা, সুফলা মাতৃভূমিকে আমরা প্রণাম জানাই। যে মাতৃভূমি প্রকৃতির আশীর্বাদপুষ্ট।
বন্ধুগণ,
ভারতের এই পরিচিতি হাজার হাজার বছর ধরে গড়ে উঠেছে। এখানকার নদী, পাহাড়, বন, গাছপালা, উর্বর মৃত্তিকা— যে মাটি সোনা ফলায় সেই দেশের সমৃদ্ধির কথা সারা বিশ্ব যুগ যুগ ধরে শুনে এসেছে। কয়েক শতাব্দী আগেও ভারতের মোট অভ্যন্তরীণ উৎপাদন সারা পৃথিবীর মোট অভ্যন্তরীণ উৎপাদনের ২৫ শতাংশ ছিল।
কিন্তু ভাই ও বোনেরা,
বঙ্কিমবাবু যখন বন্দে মাতরম রচনা করেছিলেন, সেই সময় ভারত তার স্বর্ণযুগ থেকে অনেক পিছিয়ে ছিল। বিদেশী হানাদারদের আক্রমণে এবং ব্রিটিশদের শোষণের নীতির কারণে আমাদের দেশ দারিদ্র্য ও ক্ষুধার নাগপাশে আবদ্ধ হয়েছিল। ধ্বংস, দুঃখ ও বেদনার সেই সময়কালে সবকিছু যখন শেষ হয়ে যাচ্ছিল, সেই মুহূর্ত বঙ্কিমবাবু সমৃদ্ধ এক ভারত গড়ার ডাক দেন। কারণ, তিনি বিশ্বাস করতেন পরিস্থিতি যত প্রতিকূলই হোক না কেন, ভারত আবারও স্বর্ণযুগে ফিরে আসবে। আর তাই তিনি আহ্বান করলেন - বন্দে মাতরম।
বন্ধুগণ,
পরাধীনতার সেই সময়কালে ভারতকে যখন পিছিয়ে পড়া এক দেশ হিসেবে দেখানো হতো, ব্রিটিশরা তাদের দেশ শাসনের পক্ষে নানা যুক্তি তুলে ধরতেন, তখন এই গানের প্রথম পংক্তি সেই অপপ্রচারকে ভেঙে গুড়িয়ে দিয়েছিল। তাই বন্দে মাতরম শুধু স্বাধীনতার সংগীত হয়ে ওঠেনি, এই গান কোটি কোটি দেশবাসীকে স্বাধীন ভারতের ‘সুজলাং সুফলাং’-এর স্বপ্নও দেখিয়েছে।
বন্ধুগণ,
আজ বন্দে মাতরম গানের অনবদ্য যাত্রা এবং তার প্রভাবের বিষয়ে জানার এক সুযোগ আমাদের সামনে উপস্থিত হয়েছে। ১৮৭৫ সালে বঙ্গদর্শনে “বন্দে মাতরম” যখন বঙ্কিমবাবু প্রকাশ করেন, তখন কারও কারও মনে হয়েছিল এটি নিছকই একটি গান। কিন্তু দ্রুত বন্দে মাতরম ভারতের স্বাধীনতা আন্দোলনের এবং দেশের লক্ষ লক্ষ মানুষের আওয়াজ হয়ে উঠলো। এই শব্দ প্রত্যেক বিপ্লবীর মুখে মুখে ঘুরত, যা আসলে দেশবাসীর মনের ভাবনা। আপনারা দেখতে পাবেন, স্বাধীনতা আন্দোলনের প্রতিটি অধ্যায়ে বন্দে মাতরম রয়েছে। ১৮৯৬ সালে বিশ্ব কবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর কলকাতা অধিবেশনে বন্দে মাতরম গেয়েছিলেন। ১৯০৫ সালে বঙ্গভঙ্গ হয়। ব্রিটিশরা সেই সময় বিভাজনের এক ভয়াবহ পরীক্ষা-নিরীক্ষা চালিয়েছিল। কিন্তু বন্দে মাতরম তাদের সমস্ত পরিকল্পনার বিরুদ্ধে শক্তিশালী অবস্থান গ্রহণ করে। বঙ্গভঙ্গের বিরুদ্ধে প্রতিটি মুহূর্তেএকটি আওয়াজই উঠেছিল : বন্দে মাতরম।
বন্ধুগণ,
বরিশাল সম্মেলনে যখন বিক্ষোভকারীদের ওপর গুলি চালানো হয়েছিল, তখন তাঁদের মুখে ছিল একই শব্দ : বন্দে মাতরম! বীর সাভারকারের মতো স্বাধীনতা সংগ্রামী, যাঁরা ভারতের বাইরে দেশের স্বাধীনতার জন্য কাজ করছিলেন, তাঁরা যখন পরস্পরের সঙ্গে দেখা করতেন তখন বন্দে মাতরম বলে অভিবাদন গ্রহণ করতেন। বহু বিপ্লবী ফাঁসির মঞ্চে দাঁড়িয়ে বন্দে মাতরম বলতেন। এই বৃহৎ দেশে এরকম অনেক ঘটনা রয়েছে, ইতিহাসে এরকম অনেক দিন আছে যেখানে এই বৃহৎ দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে আলাদা আলাদা ভাষা-ভাষী মানুষ তাঁদের আন্দোলনের সময় যে অভিন্ন ধ্বনি দিয়েছিলেন সেই ধ্বনি হল – বন্দে মাতরম।
তাই, ভাই ও বোনেরা,
১৯২৭ সালে মহাত্মা গান্ধী বলেছিলেন, “বন্দে মাতরম আমাদের কাছে সমগ্র ভারতেরই চিত্র তুলে ধরেছে।” ঋষি অরবিন্দ বলেছিলেন, বন্দে মাতরম একটি গান নয়, এটি এক মন্ত্র। যে মন্ত্র আমাদের আত্মপ্রত্যয়কে জাগ্রত করে। ভিকাজি কামা যে ভারতীয় পতাকার নকশা তৈরি করেছিলেন তার মধ্যে লেখাছিল “বন্দে মাতরম”।
বন্ধুগণ,
আমাদের জাতীয় পতাকা বিভিন্ন সময়ে পরিবর্তিত হয়েছে। তবে, আজ পর্যন্ত যখনই জাতীয় পতাকা উত্তোলন করা হয়েছে, আমরা সমস্বরে বলে উঠেছি : ভারতমাতার জয়! বন্দে মাতরম! আর তাই আজ যখন আমরা জাতীয় স্তোত্রের ১৫০তম বর্ষ উদযাপন করছি, তখন আমরা দেশের সেই নায়কদের শ্রদ্ধা জানাই, যাঁরা বন্দে মাতরম উচ্চারণ করে ফাঁসির মঞ্চে প্রাণ দিয়েছেন, যাঁরা বেত্রাঘাত সহ্য করেও বন্দে মাতরম বলে গেছেন। যাঁরা বরফাবৃত অঞ্চলে দাঁড়িয়ে বন্দে মাতরম বলেছেন।
বন্ধুগণ,
আজ আমরা ১৪০ কোটি দেশবাসী সেই সব অজানা ব্যক্তিদের শ্রদ্ধা জানাই, যাঁরা দেশের জন্য প্রাণ বিসর্জন দিয়েছেন। তাঁরা যখন প্রাণ বিসর্জন দিয়েছেন, তখন তাঁদের কন্ঠে ছিল বন্দে মাতরম ধ্বনি, যদিও তাঁদের সকলের নাম ইতিহাসের পাতায় লেখা নেই।
বন্ধুগণ,
বেদ আমাদের শিখিয়েছে – “মাতা ভূমি:, পুত্রোহম পৃথিব্যাঃ” অর্থাৎ এই পৃথিবী আমাদের মা, এই দেশ আমাদের মা, আমরা তার সন্তান। বৈদিক যুগ থেকে এদেশের মানুষ দেশকে মাতৃজ্ঞানে পুজো করেছে। বৈদিক ভাবনা থেকেই বন্দে মাতরম স্বাধীনতা সংগ্রামে নতুন চেতনার সঞ্চার ঘটিয়েছে।
বন্ধুগণ,
যারা মনে করেন রাষ্ট্র হল একটি ভূরাজনৈতিক পরিচিতি মাত্র, তারা দেশকে মা বলে ভাবতে নাও পারেন। কিন্তু ভারতের পরিস্থিতি পৃথক। ভারত যেমন আমাদের মা, আবার ভারত আমাদের প্রতিপালকও। সন্তান যখন সঙ্কটের সম্মুখীন হয়, তখন মা তাকে সেই সঙ্কট থেকে মুক্ত করে। আর তাই, বন্দে মাতরম-এ লেখা আছে – অবলা কেন মা এত বলে। বহুবল-ধারিণীং নমামি তারিণীং রিপুদল-বারিণীং মাতরম।। বন্দে মাতরম-এর অর্থ ভারতমাতা, যিনি অপার শক্তির অধিকারী, তিনি আপনাদের সকল সঙ্কট থেকে মুক্ত করেন, আমাদের শত্রুকে নিধন করেন। দেশকে মা হিসেবে গণ্য করা এবং মাকে শক্তি রূপে বিবেচনা করার মধ্য দিয়ে আমাদের স্বাধীনতা আন্দোলনে নারী-পুরুষ নির্বিশেষে সামিল হয়েছিলেন। সেই সময় আমরা সেই ভারতের স্বপ্ন দেখেছি, যে ভারত গঠনের সময় নারীশক্তি সর্বাগ্রে থাকবে।
বন্ধুগণ,
বন্দে মাতরম স্বাধীনতার সঙ্গীত ছাড়াও কীভাবে সেই স্বাধীনতাকে রক্ষা করা যাবে, সেই বিষয়েও আমাদের অনুপ্রাণিত করেছে। বঙ্কিমবাবুর মূল গানে লেখা ছিল - ত্বং হি দুর্গা দশপ্রহরণধারিণী
কমলা কমল-দলবিহারিণী
বাণী বিদ্যাদায়িণী
নমামি ত্বাং
নমামি কমলাম্
অমলাং অতুলাম্
সুজলাং সুফলাং
মাতরম্
অর্থাৎ ভারতমাতা হলেন সরস্বতী, যিনি আমাদের জ্ঞান দেন, ভারতমাতা হলেন লক্ষ্মী, যিনি আমাদের সমৃদ্ধি দেন এবং ভারতমাতা হলেন দুর্গা, যাঁর হাতে অস্ত্রশস্ত্র রয়েছে। আমাদের এমন এক দেশ গড়তে হবে, যে দেশ জ্ঞান, বিজ্ঞান ও প্রযুক্তিতে শীর্ষে থাকবে। জাতীয় নিরাপত্তায় স্বনির্ভর থাকবে।
বন্ধুগণ,
বিগত বছরগুলিতে সারা বিশ্ব ভারতের উত্থান প্রত্যক্ষ করেছে। আমরা বিজ্ঞান ও প্রযুক্তিতে অপ্রতিরোধ্য গতিতে এগিয়ে চলেছি। বিশ্ব অর্থনীতিতে পঞ্চম বৃহত্তম অর্থনীতি হিসেবে আমরা আত্মপ্রকাশ করেছি। যখন শত্রুরা সন্ত্রাসবাদের মাধ্যমে ভারতের সুরক্ষা ও সম্মানের ওপর আঘাত হেনেছে, তখন সারা বিশ্ব প্রত্যক্ষ করেছে নতুন ভারত কমলা এবং বিমলার মাধ্যমে মানবজাতিকে যেমন সেবা করে, আবার জঙ্গিবাদ ধ্বংস করতে ‘দশ প্রহরণ-ধারিনী দুর্গা’ হয়ে ওঠে।
বন্ধুগণ,
বন্দে মাতরম সম্পর্কে আর একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় নিয়ে আলোচনা করা যায়। স্বাধীনতা আন্দোলনে বন্দে মাতরম সারা দেশকে পথ দেখিয়েছিল। অথচ দুর্ভাগ্যজনকভাবে ১৯৩৭ সালে বন্দে মাতরম-এর একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ তার আত্মা থেকে পৃথক করে দেওয়া হয়েছিল। বন্দে মাতরমকে ছিঁড়ে ফেলা হয়েছে, তাকে দু-টুকরো করা হয়েছে। বন্দে মাতরম-এর এই বিভাজনের মধ্য দিয়ে আসলে দেশ ভাঙার বীজ বপণ করা হয়েছে। রাষ্ট্র নির্মাণের এই মহা মন্ত্রের সঙ্গে কি অন্যায় করা হয়নি? বর্তমান প্রজন্মের কাছে এটি বোঝা অত্যন্ত জরুরী। কারণ, এই বিভেদকামী ভাবনা আজও দেশের কাছে বড় চ্যালেঞ্জ।
বন্ধুগণ,
আমরা এই শতাব্দীকে ভারতের শতাব্দী হিসেবে গড়ে তুলছি। ভারতের ১৪০ কোটি নাগরিক আমাদের শক্তি। আমাদের লক্ষ্য পূরণে নিজেদের ওপর আস্থা রাখতে হবে। যারা আমাদের বিভ্রান্ত করার চেষ্টা করবেন, আমাদের মনে নেতিবাচক প্রভাব বিস্তারে উদ্যোগী হবে তাদের আমরা মোকাবিলা করবো। এক্ষেত্রে আনন্দমঠের সেই ঘটনাটি আমাদের স্মরণ করতে হবে। আনন্দমঠে সনাতন ভবানন্দ যখন বন্দে মাতরম গাইছিলেন, তখন উপন্যাসের আরেকজন চরিত্র তার সঙ্গে তর্ক শুরু করে। সে বলে, তুমি একা কী করতে পারবে? তখন বন্দে মাতরম থেকে অনুপ্রেরণা পাওয়া যায় যেখানে আমরা দেখতে পাই যে মায়ের কোটি কোটি পুত্র-কন্যা রয়েছে, তাদের সেই হাত কি দুর্বল হতে পারে? আজ ভারতমাতার ১৪০ কোটি সন্তান। তাদের ২৮০ কোটি হাত রয়েছে। এই হাতগুলির মধ্যে ৬০ শতাংশের বেশি হাত যুবসম্প্রদায়ের। আমাদের এই জনবিন্যাসই আমাদের সম্পদ, এটি ভারত মাতার শক্তি। তাই আমাদের কাছে কোন লক্ষ্য পূরণ অসম্ভব হবে কেন? বন্দে মাতরমের মূল স্বপ্ন কেন আমরা পূরণ করতে পারবো না?
বন্ধুগণ,
আজ আত্মনির্ভর ভারতের স্বপ্ন পূরণের জন্য মেক ইন ইন্ডিয়া-র উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। ২০৪৭ সালের মধ্যে উন্নত ভারত গড়ে তোলার যে পরিকল্পনা আমরা করেছি, তখন সেই লক্ষ্য পূরণের জন্য আমাদের নতুন শক্তিতে এগিয়ে যেতে হবে, প্রত্যেক দেশবাসী বলে উঠবেন – বন্দে মাতরম! আজ চাঁদের দক্ষিণ মেরুতে প্রথম যে দেশটি পৌঁছেছে সেটি হল ভারত। যখন মহাকাশে প্রত্যন্ত অঞ্চলে নতুন ভারতের আওয়াজ শোনা যায়, তখন প্রত্যেক দেশবাসী বলে ওঠেন, বন্দে মাতরম! আজ আমাদের মেয়েরা মহাকাশ প্রযুক্তি থেকে খেলাধুলো সর্বত্র বিরাজ করছেন, তাঁরা যুদ্ধ বিমান চালাচ্ছেন, তখন প্রত্যেক দেশবাসী গর্বের সঙ্গে বলে ওঠেন বন্দে মাতরম!
বন্ধুগণ,
আমাদের সেনাবাহিনীর সদস্যদের জন্য আজ থেকে ১১ বছর আগে এই দিনে এক পদ এক পেনশন ব্যবস্থার সূচনা হয়। আমাদের বাহিনী শত্রুপক্ষের অশুভ পরিকল্পনাকে ধ্বংস করে, জঙ্গিবাদ ও নকশালবাদের মেরুদণ্ডকে ভেঙে চুরমার করে। আজ মাওবাদীদের আতঙ্ক থেকে আমাদের নিরাপত্তাবাহিনী যখন দেশকে মুক্ত করে তখন তাঁরা একটি ধ্বনিতে অনুপ্রাণিত হন, তা হল - বন্দে মাতরম!
বন্ধুগণ,
ভারতমাতাকে আরাধনা করার এই মানসিকতার মধ্য দিয়েই উন্নত ভারত গড়ার স্বপ্ন আমরা দেখতে পাই। ভারতমাতার কোটি কোটি সন্তান এই বন্দে মাতরম ধ্বনিতে অনুপ্রাণিত হয়ে অমৃতযাত্রায় সামিল হবেন – সেই আস্থা আমার রয়েছে। আরও একবার আমি বন্দে মাতরম-এর ১৫০তম বর্ষপূর্তিতে দেশবাসীকে শুভেচ্ছা জানাই। দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে আপনারা যুক্ত হয়েছে, তার জন্য আন্তরিক অভিনন্দন জানাই। আসুন আপনারা সকলে আমার সঙ্গে দু-হাত তুলে জোর গলায় বলুন -
বন্দে মাতরম! বন্দে মাতরম!
বন্দে মাতরম! বন্দে মাতরম!
বন্দে মাতরম! বন্দে মাতরম!
বন্দে মাতরম! বন্দে মাতরম!
বন্দে মাতরম! বন্দে মাতরম!
অনেক অনেক ধন্যবাদ!
(প্রধানমন্ত্রীর মূল ভাষণটি ছিল হিন্দিতে)
SC/CB/AS
(Release ID: 2187801)
Visitor Counter : 8