প্রধানমন্ত্রীরদপ্তর
azadi ka amrit mahotsav

গুজরাটের কেভাডিয়ায় রাষ্ট্রীয় একতা দিবস অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী শ্রী নরেন্দ্র মোদী ভাষণ দিয়েছেন

Posted On: 31 OCT 2025 12:05PM by PIB Kolkata

নতুন দিল্লি, ৩১ অক্টোবর, ২০২৫ 

 


প্রধানমন্ত্রী শ্রী নরেন্দ্র মোদী আজ গুজরাটের কেভাডিয়ায় রাষ্ট্রীয় একতা দিবস উপলক্ষ্যে আয়োজিত অনুষ্ঠানে বক্তব্য রেখেছেন। সর্দার প্যাটেলের ১৫০ তম জন্মবার্ষিকীকে ঐতিহাসিক এক অধ্যায় বলে অভিহিত করে তিনি বলেন, আজ সকালে একতা নগরে এক আধ্যাত্মিক পরিবেশ সৃষ্টি হয়েছে। সর্দার প্যাটেলের পদতলে বিপুল এই জনসমাগমের মধ্য দিয়ে দেশ এক মহান ব্যক্তিত্বকে স্মরণ করছে। দেশজুড়ে একতার দৌড় আয়োজন করা হয়েছে। কোটি কোটি উৎসাহী ভারতবাসী এই উদ্যোগে সামিল হয়েছেন। এর মধ্য দিয়ে নতুন ভারত গড়ার সংকল্প অনুভূত হচ্ছে। এই একইস্থানে গতকাল আয়োজিত এক অনুষ্ঠানের প্রসঙ্গ উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, এর মধ্য দিয়ে অতীতের ঐতিহ্য, বর্তমানের শ্রম ও শৌর্য্য এবং ভবিষ্যতের সাফল্য অনুভূত হচ্ছে। তিনি জানান, সর্দার প্যাটেলের ১৫০ তম জন্মবার্ষিকী উপলক্ষ্যে একটি স্মারক ডাক টিকিট ও মুদ্রা প্রকাশিত হয়েছে। রাষ্ট্রীয় একতা দিবস এবং সর্দার প্যাটেলের জন্মজয়ন্তীতে প্রধানমন্ত্রী দেশের ১৪০ কোটি নাগরিকদের শুভেচ্ছা জানিয়েছেন। 

প্রধানমন্ত্রী বলেন, সর্দার প্যাটেল বিশ্বাস করতেন, ইতিহাস লিখে সময় নষ্ট করার প্রয়োজন নেই, বরং এমন কিছু কাজ করতে হবে যা ইতিহাস রচনা করবে। সর্দার প্যাটেলের গৃহীত নীতি ও সিদ্ধান্ত ইতিহাসের নতুন অধ্যায় রচনা করেছে। স্বাধীনতার পর ৫৫০টি রাজন্যশাসিত অঞ্চলের ভারতভুক্তির প্রসঙ্গ তিনি উল্লেখ করেন। সর্দার প্যাটেলের ভাবনা থেকেই ‘এক ভারত শ্রেষ্ঠ ভারত’-এর ধারণা তৈরি হয়েছে। আর তাই, সর্দার প্যাটেলের জন্মবার্ষিকী জাতীয় ঐক্যের উৎসবে পরিণত হয়েছে। ১৪০ কোটি দেশবাসী যেমন ১৫ অগাস্ট স্বাধীনতা দিবস এবং ২৬ জানুয়ারি সাধারণতন্ত্র দিবস উদযাপন করেন, ঠিক একইভাবে তাঁরা একতা দিবসকেও উদযাপন করছেন। দেশের ঐক্যকে শক্তিশালী করতে কোটি কোটি ভারতবাসী শপথ গ্রহণ করেছেন। একতা নগর, একতা মল এবং একতা উদ্যান - সেই ঐক্যেরই প্রতীক হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে। 

শ্রী মোদী বলেন, “যে কাজগুলি দেশের একতাকে দুর্বল করে সেগুলি প্রত্যেক নাগরিকের এড়িয়ে চলা উচিত”। প্রত্যেক দেশবাসীর জন্য একতা দিবসের এই বার্তা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। সর্দার প্যাটেল দেশের সার্বভৌমত্বকে সর্বদাই অগ্রাধিকার দিতেন। অথচ সর্দারের প্রয়াণের পর পরবর্তী সরকারগুলি দেশের সার্বভৌমত্বের বিষয়ে যথাযথ গুরুত্ব দেয়নি। তিনি বলেন, যে ভুল কাশ্মীরে করা হয়েছে, সেটি উত্তর-পূর্বেও করা হয়েছে। দেশের বিভিন্ন অংশে মাওবাদী কার্যকলাপ ভারতের সার্বভৌমত্বের কাছে সঙ্কটের কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছিল। সর্দারের নীতি অনুসরণ না করে সেই সময়ের সরকারগুলি মেরুদণ্ডহীন কিছু সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে, পরবর্তীতে যার ফল ভোগ করতে হয়েছে গোটা দেশকে হিংসা এবং রক্তপাতের মাধ্যমে। 

প্রধানমন্ত্রী বলেন, বর্তমান যুব সম্প্রদায় হয়তো জানেন না, সর্দার প্যাটেলের কাশ্মীর সম্পর্কে ভাবনার কথা। তিনি সম্পূর্ণ কাশ্মীরকে ভারতে অন্তর্ভুক্ত করতে চেয়েছিলেন, যেভাবে তিনি রাজন্যশাসিত বাকি রাজ্যগুলিকে অন্তর্ভুক্ত করেছিলেন। অথচ তদানীন্তন প্রধানমন্ত্রী, বল্লভভাই প্যাটেলের সেই ইচ্ছা পূরণ করতে দেননি। সেই সময়ে কাশ্মীর পৃথক এক সংবিধান এবং প্রতীকের মাধ্যমে আলাদা ছিল। তৎকালীন শাসক দলের ভ্রান্ত নীতির কারণেই দীর্ঘ কয়েক দশক ধরে কাশ্মীরে অস্থির অবস্থা বিরাজ করেছে। তাদের দুর্বল নীতির কারণেই কাশ্মীরের একটি অংশ পাকিস্তান দখল করে রেখেছে এবং পাকিস্তান সন্ত্রাসবাদীদের মদত জুগিয়েছে। সেই ভ্রান্ত পদক্ষেপের কড়া মাশুল দেশ এবং কাশ্মীরকে দিতে হয়েছে। সেই সময়ে সরকার জঙ্গিবাদের কাছে মাথা নত করেছে।  
 
শ্রী মোদী বর্তমান বিরোধী দলের বিরুদ্ধে সর্দার প্যাটেলের পরিকল্পনাকে অগ্রাহ্য করার অভিযোগ করেন। ২০১৪ সালে সর্দার প্যাটেলের আদর্শে অনুপ্রাণিত হতে দেশ প্রত্যক্ষ করেছে, আজ কাশ্মীর সংবিধানের ৩৭০ ধারার শিকল থেকে নিজেকে মুক্ত করে দেশের মূল স্রোতে ফিরে এসেছে। পাকিস্তান এবং সন্ত্রাসবাদের মূল চক্রীরা ভারতের ক্ষমতা উপলব্ধি করতে পেরেছে। অপারেশন সিন্দুরের প্রসঙ্গ উল্লেখ করে তিনি বলেন, সারা বিশ্ব উপলব্ধি করতে পেরেছে, কেউ যদি ভারতকে চ্যালেঞ্জ করে তাহলে শত্রুর বেষ্টনীতে ঢুকে ভারতে তাতে আঘাত হানবে। ভারতের শত্রুদের কাছে একটি স্পষ্ট বার্তা পৌঁছেছে – “এই ভারত হল লৌহমানব সর্দার প্যাটেলের ভারত, যে তার নিরাপত্তা ও সম্মানের সঙ্গে কখনো আপোষ করবে না”।  

প্রধানমন্ত্রী বলেন, “জাতীয় নিরাপত্তার প্রেক্ষিতে গত ১১ বছরে ভারতের সব থেকে সাফল্য হল নকশাল – মাওবাদের মেরুদণ্ড ভেঙে দেওয়া”। ২০১৪ সালের আগে নকশাল – মাওবাদী গোষ্ঠীগুলি ভারতের প্রাণকেন্দ্রে তাদের নিজস্ব নিয়ম বলবৎ করেছিল। ওই অঞ্চলগুলিতে দেশের সংবিধান চলতো না। পুলিশ প্রশাসন অকেজো ছিল। নকশালরা খোলাখুলিভাবে তাদের নির্দেশ জারি করতো। সড়ক নির্মাণে বাধা দিতো, স্কুল-কলেজ-হাসপাতালে বোমা ছুড়তো। প্রশাসন তাদের কাছে অসহায় ছিল। 

শ্রী মোদী বলেন, “২০১৪ সালের পর থেকে আমাদের সরকার নকশাল – মাওবাদী জঙ্গিদের বিরুদ্ধে আক্রমনাত্মক নীতি অবলম্বন করে”। শহরাঞ্চলের নকশাল সমর্থকরাও এক ঘরে হয়ে পড়ে। আদর্শের যুদ্ধে জয়ী হয়ে নকশালদের বিভিন্ন ঘাঁটি থেকে তাদের সরিয়ে দেওয়া হয়। আজ সারা দেশ এর প্রভাব উপলব্ধি করতে পারছে। ২০১৪ সালের আগে দেশের ১২৫টি জেলায় মাওবাদী জঙ্গিরা সক্রিয় ছিল। আজ সেই সংখ্যা কমে ১১তে পৌঁছেছে। মাত্র ৩টি জেলায় নকশাল প্রভাব সব থেকে বেশি। সর্দার প্যাটেলের উপস্থিতিতে একতা নগরে দাঁড়িয়ে প্রধানমন্ত্রী জানান, ভারতকে নকশাল – মাও সমস্যা থেকে সম্পূর্ণ মুক্ত করা হবে। 

প্রধানমন্ত্রী বলেন, দেশে ঐক্য এবং অভ্যন্তরীণ নিরাপত্তা বর্তমানে অনুপ্রবেশকারীদের কারণে সঙ্কটের সম্মুখীন। দীর্ঘদিন ধরে বিদেশী অনুপ্রবেশকারীরা দেশে ঢুকেছে। তারা এদেশের নাগরিকদের সম্পদ কুক্ষিগত করেছে। জনবিন্যাসে পরিবর্তন ঘটিয়েছে। পূর্ববর্তী সরকারগুলি এরকম একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে চোখ বন্ধ করে ছিল। ভোট ব্যাঙ্কের রাজনীতির কারণে তারা জাতীয় নিরাপত্তার সঙ্গে আপোষ করে। প্রথমবারের মতো দেশ এইসব চ্যালেঞ্জের বিরুদ্ধে সক্রিয় হয়েছে। দিল্লির লালকেল্লার প্রাকার থেকে তিনি ডেমোগ্র্যাফি মিশনের ঘোষণা করেন। অথচ দুর্ভাগ্যের বিষয় সেই সময়ে কেউ কেউ জাতীয় স্বার্থকে উপেক্ষা করে নিজের ব্যক্তিগত স্বার্থ চরিতার্থ করার জন্য তার বিরোধিতা করে। যারা এই অনুপ্রবেশকারীদের অধিকার দেওয়ার জন্য সচেষ্ট তারা আসলে এক রাজনৈতিক যুদ্ধে নেমেছে। দেশের নিরাপত্তা এবং পরিচিতি আজ সঙ্কটে। প্রতিটি নাগরিক সমস্যার সম্মুখীন, তাই একতা দিবসে দেশের প্রত্যেক অনুপ্রবেশকারীকে বহিষ্কারের জন্য তিনি সংকল্পবদ্ধ হওয়ার আহ্বান জানান। 
 
শ্রী মোদী বলেন, যে কোনো গণতন্ত্রে জাতীয় ঐক্যের অর্থ হলো বৈচিত্র্যের ভাবনাকে শ্রদ্ধা জানানো। যে কোনো গণতান্ত্রিক ব্যবস্থায় বিভিন্ন মতবাদ গ্রহণযোগ্য। ব্যক্তিগত বিদ্বেষের সেখানে কোনো স্থান নেই। স্বাধীনতার পর যাদের কাঁধে দেশকে নেতৃত্ব দেওয়ার দায়িত্ব অর্পণ করা হয়েছিল, তারা ‘আমরা জনসাধারণ’-এই ভাবনাকে অগ্রাহ্য করে। বিভিন্ন সংগঠন এবং ব্যক্তি বিশেষের পৃথক আদর্শকে তখন অবজ্ঞা করা হয়। রাজনৈতিক অস্পৃশ্যতা প্রাতিষ্ঠানিক রূপ পায়। পূর্ববর্তী সরকারগুলি সর্দার প্যাটেল এবং তার ভাবনাকে তার জীবদ্দশায় অগ্রাহ্য করে। বাবাসাহেব আম্বেদকরকেও একই সমস্যায় পড়তে হয়। ডঃ রামমনোহর লোহিয়া এবং জয়প্রকাশ নারায়ণের মতো নেতাকেও একই পরিস্থিতির শিকার হতে হয়। এবছর রাষ্ট্রীয় স্বয়ংসেবক সংঘের শতবার্ষিকী পালিত হচ্ছে। অথচ এই সংগঠনকেও নানা ষড়যন্ত্রের শিকার হতে হয়েছে। একটি রাজনৈতিক দল এবং একটি পরিবারের বাইরে যাঁরা ছিলেন তাঁদের সবাইকে একঘরে করে রাখা হতো।     

শ্রী মোদী বলেন, রাজনৈতিক অস্পৃশ্যতায় দেশ বিভক্ত ছিল। সেই পরিস্থিতির অবসান ঘটানো হয়েছে। সর্দার প্যাটেলের স্মরণে স্ট্যাচু অফ ইউনিটি তৈরি করা হয়েছে। বাবাসাহেব আম্বেদকরের স্মরণে পঞ্চতীর্থ নির্মিত হয়েছে। বাবাসাহেবের বাসভবন এবং দিল্লিতে মহাপরিনির্বান স্থল পূর্ববর্তী সরকারের সময়কালে অবহেলিত ছিল। আজ এই স্থানগুলি ঐতিহাসিক স্মারক হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে। পূর্ববর্তী সরকারগুলির সময়ে মাত্র একজন প্রধানমন্ত্রীকে নিয়েই একটি সংগ্রহশালা ছিল। অথচ বর্তমানে আমাদের সরকার প্রত্যেক প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রীকে শ্রদ্ধা নিবেদন করে একটি সংগ্রহশালা নির্মাণ করেছে। কর্পুরী ঠাকুরকে ভারতরত্নে সম্মানিত করা হয়েছে। বর্তমান বিরোধী দলের জন্য যিনি সারা জীবন অতিবাহিত করেছেন, সেই প্রণব মুখোপাধ্যায়কে তাঁর দল সম্মান জানিয়েছে। মুলায়ম সিং যাদবের মতো বিরোধী আদর্শে থাকা নেতাকেও তাঁরা পদ্ম সম্মানে ভূষিত করেছেন। এই সিদ্ধান্তগুলি থেকে এটি স্পষ্ট যে জাতীয় ঐক্যের ভাবনায় রাজনৈতিক মতোপার্থক্যের উর্ধ্বে উঠে তাঁর সরকার সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে। অপারেশন সিন্দুরের আগে সর্বদলীয় বৈঠক ডাকা হয়েছিল। এর মধ্য দিয়ে অন্তর্ভুক্তিমূলক উদ্যোগ প্রতিফলিত। 

শ্রী মোদী বলেন, “রাজনৈতিক স্বার্থ চরিতার্থ করতে জাতীয় ঐক্যের উপর আঘাত হানা আসলে ঔপনিবেশিক মানসিকতার প্রতিফলন”। বর্তমান বিরোধী রাজনৈতিক দল ব্রিটিশদের থেকে উত্তরাধিকার সূত্রে খালি ক্ষমতাই দখল করেনি, তাদের চিন্তাধারাও গ্রহণ করেছিল। দিন কয়েক পর জাতীয় স্তোত্র বন্দেমাতরম্-এর ১৫০ বছর পূর্তি হবে। প্রধানমন্ত্রী বলেন, ১৯০৫ সালে ব্রিটিশরা যখন বঙ্গভঙ্গ করেছিল, তখন সেই সিদ্ধান্তের প্রতিবাদ ধ্বনিত হয়েছিল বন্দে মাতরম্-এর মধ্য দিয়ে, যা আসলে ঐক্যের প্রতিফলন। ব্রিটিশরা বন্দেমাতরম্ ধ্বনি নিষিদ্ধ করতে উদ্যোগী হয়। কিন্তু তাদের সেই উদ্যোগ কার্যকর করা যায়নি। অথচ, বর্তমান বিরোধী দল যখন ক্ষমতায় ছিল তখন তারা সেই কাজটি করে দেখিয়েছিল। ধর্মীয় কারণ দেখিয়ে তারা বন্দেমাতরম্-এর একটি অংশকে বাদ দিয়ে দেয়। আজ বন্দেমাতরম-এর একটি অংশ রাখার পেছনে প্রধানমন্ত্রী বর্তমান বিরোধী দলকে দায়ী করেন। তিনি বলেন, দেশভাগের মূল বীজ বপণ করা হয়েছিল এর মধ্য দিয়েই। তারা যদি এই ভুলটি না করতো তাহলে আজ ভারতের মানচিত্র হয়তো আলাদা হতো।   

প্রধানমন্ত্রী বলেন, সেই সময়ের ক্ষমতাসীন দলের ব্যক্তিরা দীর্ঘদিন ধরে ঔপনিবেশিক ভাবধারাকে বহন করে এসেছেন। ঔপনিবেশিক সময়কালের বিভিন্ন প্রতীক ব্যবহার করা হতো। তার সরকার ক্ষমতায় আসার পর ভারতীয় নৌ বাহিনীর প্রতীক পরিবর্তন করে। এই উদ্যোগের অঙ্গ হিসেবে রাজপথের নাম পরিবর্তন করে কর্তব্য পথ করা হয়। আন্দামানের সেলুলার জেল ছিল স্বদেশী আন্দোলনে অংশগ্রহণ করা বিপ্লবীদের আত্মত্যাগের প্রতীক। মোরারজি দেশাই সরকার সেলুলার জেলকে জাতীয় স্মারকে উন্নীত করেছিলেন। এর দীর্ঘদিন পর সম্প্রতি আন্দামানের দ্বীপগুলির নাম পরিবর্তন করা হয়। এতদিন ওই দ্বীপগুলি ব্রিটিশ নামে পরিচিত ছিল। বর্তমানে নেতাজী সুভাষচন্দ্র বসুকে সম্মান জানিয়ে একটি দ্বীপের নাম পরিবর্তন করা হয়েছে। পরমবীর চক্র সম্মানে ভূষিতদের নাম অনুসারে বিভিন্ন দ্বীপের নামকরণ করা হয়েছে। নতুন দিল্লির ইন্ডিয়া গেটে নেতাজী সুভাষের মুর্তি বসানো হয়েছে।  

শ্রী মোদী বলেন, ঔপনিবেশিক মানসিকতার কারণেই আগে যেসব সৈন্য দেশের জন্য আত্মোৎসর্গ করতেন তাঁদের যথাযথভাবে সম্মান জানানো হতো না। তাঁর সরকার জাতীয় যুদ্ধ স্মারক গড়ে তুলেছে। দেশের নিরাপত্তা রক্ষায় পুলিশ, বিএসএফ, আইটিবিপি, সিআইএসএফ, সিআরপিএফ-এর মতো নিরাপত্তা বাহিনীর সদস্যরা বহু ক্ষেত্রে প্রাণ বিসর্জন দিয়েছেন। অথচ, তাঁদের বীরত্বকে স্বীকৃতি দেওয়া হয়নি। তাঁর সরকার পুলিশ স্মারক নির্মাণের মাধ্যমে সেই শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন করেছে। “দেশ এখন ঔপনিবেশিক সময়কালের সমস্ত চিহ্ন মুছে ফেলছে। যাঁরা দেশের জন্য প্রাণবিসর্জন দিয়েছেন, তাঁদের ‘দেশ প্রথম’ ভাবনায় আগে সম্মান জানানো হচ্ছে”।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, রাষ্ট্র এবং সমাজের অস্তিত্বের মাধ্যমেই একতার ভিত গড়ে ওঠে। দেশের অখণ্ডতা সুরক্ষিত থাকে। উন্নত ভারত গড়তে হলে যারা দেশের ঐক্যকে বিনষ্ট করতে চায়, তাদের সমস্ত ষড়যন্ত্রকে পরাজিত করতে হবে। দেশ জাতীয় ঐক্য বজায় রাখতে সক্রিয়ভাবে সবরকমের ব্যবস্থা গ্রহণ করেছে। 

শ্রী মোদী বলেন, ভারতের ঐক্য চারটি স্তম্ভের উপর দাঁড়িয়ে আছে। প্রথমটি হল সাংস্কৃতিক ঐক্য। হাজার হাজার বছর ধরে এক ঐক্যবদ্ধ চেতনায় ভারতের সংস্কৃতি লালিত হয়েছে। ১২টি জ্যোতির্লিঙ্গ, ৭টি পবিত্র শহর, ৪টি ধাম, ৫০টির বেশি শক্তি পীঠ এবং তীর্থ যাত্রা করার মতো ঐতিহ্য এদেশকে প্রাণবন্ত এবং সক্রিয় করে তুলেছে। সৌরাষ্ট্র তামিল সঙ্গমম এবং কাশী তামিল সঙ্গমমের মতো উদ্যোগগুলি এই ঐক্যের চেতনাকে আরও শক্তিশালী করেছে। আন্তর্জাতিক যোগ দিবসের মাধ্যমে ভারতের যোগবিজ্ঞান নতুন বিশ্বের স্বীকৃতি পেয়েছে। যোগ মানুষের মধ্যে সেতুবন্ধ গড়ে তুলেছে।  

ভারতের একতার দ্বিতীয় স্তম্ভটি হল ভাষাগত ঐক্য। এদেশের শত শত ভাষা এবং উপভাষা রাষ্ট্রের মুক্ত ও সৃজনশীল নীতির প্রতিফলন। ভারতে কোনো সম্প্রদায় বা কর্তৃপক্ষ অন্যের উপর একটি ভাষা চাপিয়ে দেয় না। একারণে ভারত ভাষাগত বৈচিত্র্যের নিরিখে সব থেকে সমৃদ্ধ রাষ্ট্র। বিভিন্ন ভারতীয় ভাষার সঙ্গীত দেশের পরিচিতিকে আরও শক্তিশালী করেছে। এদেশে প্রতিটি ভাষাকে জাতীয় ভাষার মর্যাদা দেওয়া হয়। বিশ্বের প্রাচীনতম ভাষাগুলির মধ্যে একটি হলো তামিল, যা এদেশের ভাষা। সংস্কৃত আরেকটি প্রাচীন ভাষা যা জ্ঞান সম্পদের ভাণ্ডার। প্রত্যেক ভারতীয় ভাষার অনন্য সাহিত্য ও সংস্কৃতি স্বীকৃতি লাভ করেছে। তাঁর সরকার এই ভাষাগুলির প্রসারে সক্রিয়। এদেশের শিশুরা যাতে তাদের মাতৃভাষায় পড়াশুনা করে, প্রধানমন্ত্রী তার জন্য সকলের কাছে আবেদন করেছেন। আর এইভাবে ভাষা ঐক্যের বন্ধন গড়ে তুলেছে। এটি একদিনের কাজ নয়। এই কাজে সামিল হয়েছেন প্রত্যেকে।   

ভারতের ঐক্যের তৃতীয় স্তম্ভ হল বৈষম্যহীন উন্নয়ন। শ্রী মোদী বলেন, দারিদ্র ও অসাম্য হলো যে কোনো সামাজিক ব্যবস্থায় সব থেকে বড় চ্যালেঞ্জ। সর্দার প্যাটেল দারিদ্র দূরীকরণে দীর্ঘমেয়াদী পরিকল্পনা করেছিলেন। ১৯৪৭ সালের ১০ বছর আগে যদি ভারত স্বাধীন হতো, সর্দার প্যাটেল বলেছিলেন তাহলে দেশ তাঁর আমলে খাদ্য সঙ্কট থেকে বেরিয়ে আসতে পারতো। সর্দার প্যাটেল বিশ্বাস করতেন, রাজন্যশাসিত অঞ্চলগুলিকে যেমন ভারতে অন্তর্বুক্ত করা হয়েছে, একইভাবে তিনি দেশের খাদ্য সঙ্কটকেও দূর করতে পারতেন। তাঁর সরকার সর্দার প্যাটেলের অসমাপ্ত কাজকে বাস্তবায়িত করতে পারছে বলে প্রধানমন্ত্রী সন্তোষপ্রকাশ করেন। গত এক দশকে ২৫ কোটি নাগরিক দারিদ্রের নাগপাশ থেকে মুক্ত হয়েছেন। লক্ষ লক্ষ দরিদ্র পরিবার বাড়ি পেয়েছেন, প্রত্যেক বাড়িতে বিশুদ্ধ পানীয় জল পৌঁছে দেওয়া হচ্ছে। বিনামূল্যে স্বাস্থ্য পরিষেবার ব্যবস্থা করা হয়েছে। প্রত্যেক দেশবাসী যাতে মর্যাদার সঙ্গে জীবনযাপন করতে পারেন, তা নিশ্চিত করা হচ্ছে। এর জন্য গৃহীত নীতি বৈষম্য ও দুর্নীতি মুক্ত হওয়ায় তা জাতীয় ঐক্যকে শক্তিশালী করেছে। 

জাতীয় ঐক্যের চতুর্থ স্তম্ভ হিসেবে তিনি যোগাযোগ ব্যবস্থাকে উল্লেখ করেন। প্রধানমন্ত্রী বলেন, দেশজুড়ে রেকর্ড সংখ্যক মহাসড়ক ও এক্সপ্রেসওয়ে নির্মিত হচ্ছে। বন্দে ভারত এবং নমো ভারতের মতো ট্রেনগুলি ভারতীয় রেলে পরিবর্তন এনেছে। বর্তমানে দেশের ছোট ছোট শহরগুলিতেও বিমানবন্দর গড়ে উঠেছে। প্রধানমন্ত্রী বলেন, অত্যাধুনিক পরিকাঠামো গড়ে ওঠায় ভারত সম্পর্কে বিশ্বের ভাবনায় পরিবর্তন এসেছে। উত্তর-দক্ষিণ ও পূর্ব-পশ্চিমের মধ্যে দূরত্ব হ্রাস পেয়েছে। মানুষ এখন সহজেই পর্যটন কিংবা ব্যবসাবাণিজ্যের কাজে এক রাজ্য থেকে অন্য রাজ্যে যেতে পারছে। মানুষের সঙ্গে মানুষের যোগাযোগ এবং সাংস্কৃতিক বিনিময়ের এক নতুন যুগের সূচনা হয়েছে, যাকে ডিজিটাল যোগাযোগ ব্যবস্থা আরও শক্তিশালী করেছে।

শ্রী মোদী বলেন, সর্দার প্যাটেল দেশ সেবা করে সব থেকে আনন্দ পেতেন। তাঁর ভাবনা অনুসরণ করে দেশের প্রত্যেক নাগরিককে একই পথে চলার অনুরোধ জানান তিনি। তিনি বলেন, ভারত মাতার জন্য কাজ করার মধ্য দিয়ে প্রত্যেক ভারতবাসী দেশ সেবা করবেন। যখন ১৪০ কোটি দেশবাসী ঐক্যবদ্ধ হবেন, তখন চলার পথে দাঁড়িয়ে থাকা পাহাড়কেও রাস্তা করে দিতে হবে। যখন একই ধ্বনি সকলের কণ্ঠে ধ্বনিত হবে তখন দেশ সাফল্যের দিকে এগিয়ে যাবে। তিনি সকলকে ঐক্যবদ্ধ থাকার সংকল্প গ্রহণ করতে আহ্বান জানান। এর মধ্য দিয়েই সর্দার প্যাটেলকে যথাযথভাবে শ্রদ্ধা জানানো সম্ভব হবে। ‘এক ভারত শ্রেষ্ঠ ভারত’-এর ধারণাকে আরও শক্তিশালী করা যাবে এবং একটি উন্নত ও আত্মনির্ভর ভারত গড়ে তোলা সম্ভব হবে বলে তিনি প্রত্যয় ব্যক্ত করেন। এই ভাবনায় শ্রী মোদী আরও একবার সর্দার প্যাটেলের চরণতলে শ্রদ্ধা নিবেদন করেন।

 


SC/CB/SKD


(Release ID: 2184877) Visitor Counter : 3