প্রধানমন্ত্রীরদপ্তর
azadi ka amrit mahotsav

নতুন দিল্লিতে এনডিটিভি ওয়ার্ল্ড সামিট ২০২৫-এ প্রধানমন্ত্রী শ্রী নরেন্দ্র মোদীর ভাষণ

प्रविष्टि तिथि: 17 OCT 2025 10:13PM by PIB Kolkata

নয়াদিল্লি, ১৭ অক্টোবর, ২০২৫

 

প্রধানমন্ত্রী শ্রী নরেন্দ্র মোদী আজ নতুন দিল্লিতে এনডিটিভি ওয়ার্ল্ড সামিট ২০২৫-এ ভাষণ দেন। সভায় উপস্থিত বিশিষ্ট ব্যক্তিদের স্বাগত জানান প্রধানমন্ত্রী। দেশের নাগরিকদের দীপাবলির শুভেচ্ছা জানিয়ে শ্রী মোদী বলেন, এনডিটিভি ওয়ার্ল্ড সামিট উৎসবমুখর পরিবেশের মধ্যে অনুষ্ঠিত হচ্ছে। সামিটের মূল আলোচ্য "অপ্রতিরোধ্য ভারত"-এর প্রশংসা করেন। তাঁর কথায়, বিষয়টি যথার্থ। কারণ, আজকের ভারত থামতে চায় না।

 প্রধানমন্ত্রী দৃঢ়তার সঙ্গে বলেন, "ভারত থামবে না, থামবে না, ১৪০ কোটি ভারতীয় একসঙ্গে দ্রুত এগিয়ে চলেছে।"

প্রধানমন্ত্রী বলেন, আজকের দুনিয়া বিভিন্ন বিভিন্ন বাধাবিপত্তির মুখোমুখি। এই পরিস্থিতিতে "অপ্রতিরোধ্য ভারত" নিয়ে আলোচনা যথার্থ ও সময়োপযোগী। তিনি ১১ বছর আগের পরিস্থিতির সঙ্গে বর্তমানের তুলনা তুলে ধরেন। 
২০১৪-এর আগের সময়কার পরিস্থিতি টেনে আনেন প্রধানমন্ত্রী। 

ভারত কীভাবে বিশ্বব্যাপী প্রতিকূল পরিস্থিতি মোকাবিলা করবে, কতদিন দেশ নীতিগত পঙ্গুত্বে আটকে থাকবে এবং কখন বড়মাপের কেলেঙ্কারির যুগ শেষ হয়, এইসব নানা বিষয় তাঁর ভাষণে উঠে আসে।

২০১৪ সালের আগে নারী নিরাপত্তা এবং সন্ত্রাসবাদীদের স্লিপার সেলের বাড়বাড়ন্ত নিয়ে 
উদ্বেগ প্রকাশ করেন শ্রী মোদী। 
সেই সময় দেশের নাগরিক এবং বিশ্বের মানুষ ভেবেছিলেন,  সঙ্কটের জালে আটকে থাকা ভারত আর ঘুরে দাঁড়াতে পারবে না। প্রধানমন্ত্রী জোর দিয়ে বলেন যে, গত ১১ বছরে ভারত সমস্ত সংশয় দূর করতে পেরেছে এবং প্রতিটি চ্যালেঞ্জ কাটিয়ে উঠেছে। 

তিনি বলেন যে,  "ভঙ্গুর পাঁচ"-এর অংশীদার হয়েও ভারত আজ বিশ্বের শীর্ষ পাঁচটি অর্থনীতির দেশের একটি হয়ে উঠেছে।  মুদ্রাস্ফীতির হার এখন দুই শতাংশের নীচে। অন্যদিকে, অগ্রগতির হার সাত শতাংশ ছাড়িয়ে গিয়েছে। "চিপস থেকে জাহাজ পর্যন্ত, আত্মনির্ভর ভারতের আত্মবিশ্বাস সর্বত্র স্পষ্ট", প্রধানমন্ত্রী জোর দিয়ে বলেন যে সন্ত্রাসবাদী হামলার পরে ভারত আর নীরব থাকবে না; বরং, সার্জিক্যাল স্ট্রাইক, বিমান হামলা এবং সিঁদুরের মতো অভিযানের মাধ্যমে নির্ণায়ক জবাব দেওয়া হবে। 

কোভিড-১৯ অতিমারীর কথা স্মরণ করে তিনি বলেন যে, এত বিশাল জনসংখ্যার একটি দেশ কীভাবে এত বড় সংকট থেকে রক্ষা পাবে, তা নিয়ে বিশ্বজুড়ে জল্পনা তৈরি হয়েছিল। প্রধানমন্ত্রী বলেন যে, ভারত প্রতিটি জল্পনাকে ভুল প্রমাণিত করেছে। তিনি উল্লেখ করেন যে, ভারত এই সঙ্কটের মধ্যেই দ্রুত নিজস্ব টিকা তৈরি করেছে, রেকর্ড ও দ্রুততম সময়ে তা প্রয়োগ করেছে এবং সঙ্কট কাটিয়ে দ্রুততম বিকাশশীল প্রধান অর্থনীতির দেশ হিসেবে আত্মপ্রকাশ করেছে।  

প্রধানমন্ত্রী বলেন, কোভিড-১৯ এর প্রভাব পুরোপুরি কাটিয়ে ওঠার আগেই বিশ্বের বিভিন্ন অংশে সংঘাত শুরু হয়ে যায়।  যুদ্ধের খবরাখবর শিরোনামে উঠে আসে।  তিনি বলেন যে, আবারও ভারতের  সম্ভাবনা অগ্রগতি নিয়ে প্রশ্ন উঠতে থাকে।   শ্রী মোদী আশ্বস্ত করে বলেন যে,  ভারত আবারও সমস্ত জল্পনাকে মিথ্যা প্রমাণ করেছে এবং দ্রুততম বিকাশশীল প্রধান অর্থনীতির দেশ হিসেবে এগিয়ে চলেছে। গত তিন বছরে, ভারতের গড় অগ্রগতির হার  ৭.৮ শতাংশে দাঁড়িয়েছে, যা অভূতপূর্ব এবং অপ্রত্যাশিত। 
তিনি জানান, দুই দিন আগে প্রকাশিত পণ্য রপ্তানির তথ্যে দেখা গেছে যে, আগের বছরের তুলনায় প্রায় ৭ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছে। গত বছর, ভারত প্রায় ৪.৫ লক্ষ কোটি টাকার কৃষি রপ্তানি করেছে। 

 আইএমএফ-ও ভারতের ঊর্ধ্বমুখী অগ্রগতির ইঙ্গিত দিয়েছে।  প্রধানমন্ত্রী বলেন, মাত্র কয়েকদিন আগে, গুগল ভারতের এআই খাতে ১৫ বিলিয়ন ডলার বিনিয়োগের কথা ঘোষণা করেছে। তিনি আরও বলেন যে, পরিবেশ-বান্ধব শক্তি এবং সেমিকন্ডাক্টর ক্ষেত্রেও উল্লেখযোগ্য বিনিয়োগ করা হচ্ছে।

প্রধানমন্ত্রী বলেন,
"আজ ভারতের অগ্রগতি বিশ্বব্যাপী সুযোগ তৈরি করছে।" সাম্প্রতিক ইএফটিএ বাণিজ্য চুক্তিকে একটি প্রধান দৃষ্টান্ত হিসেবে উল্লেখ করে বলেন, এর মাধ্যমে ইউরোপীয় দেশগুলি ভারতে ১০০ বিলিয়ন ডলারের বিনিয়োগের প্রতিশ্রুতি দিয়েছে। তিনি বলেন যে, এর ফলে বৃহৎ পরিসরে কর্মসংস্থানের সৃষ্টি হবে। যুক্তরাজ্যের প্রধানমন্ত্রী এবং তাঁর ঘনিষ্ঠ বন্ধু, মহামান্য মিঃ কেইর স্টারমেরের সর্বকালের বৃহত্তম ব্যবসায়িক প্রতিনিধিদল নিয়ে সাম্প্রতিক সফরের কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন,
বিশ্ব যে ভারত বড় ধরনের সম্ভাবনার আঁচ পাচ্ছে, এটি তার প্রতিফলন। তিনি বলেন,  জি-৭  দেশগুলির সঙ্গে ভারতের বাণিজ্য ৬০ শতাংশেরও বেশি বৃদ্ধি পেয়েছে। তাঁর মতে, "বিশ্ব এখন ভারতকে একটি নির্ভরযোগ্য, দায়িত্বশীল এবং সহনশীল অংশীদার হিসেবে দেখছে।" শ্রী মোদী আশ্বস্ত করে বলেন যে, ইলেকট্রনিক্স থেকে ওষুধ,  অটোমোবাইল থেকে মোবাইল উৎপাদন, সবক্ষেত্রে ভারতে বড় বিনিয়োগের একটি ঢেউ আসছে। 

 শ্রী মোদী জোর দিয়ে বলেন যে, ভারত শতাব্দীর পর শতাব্দী ধরে অজানা পথে চলার সাহস দেখিয়েছে। সাধু, বিজ্ঞানী এবং নাবিকরা ধারাবাহিকভাবে দেখিয়েছেন যে, "প্রথম পদক্ষেপ" রূপান্তরের সূচনা করে। প্রযুক্তি, মহামারী চলাকালীন টিকা তৈরি, দক্ষ লোকবল, ফিনটেক বা পরিবেশ উপযোগী শক্তি ক্ষেত্রে, ভারত প্রতিটি ঝুঁকিকে সংস্কারে, প্রতিটি সংস্কারকে সুস্থিতিশীলতায় এবং প্রতিটি সুস্থিতিশীলতাকে বিপ্লবে রূপান্তরিত করেছে। প্রধানমন্ত্রী আইএমএফ প্রধানের সাম্প্রতিক মন্তব্য তুলে ধরেন, যিনি ভারতের সংস্কারের সাহসিকতা সম্পর্কে অত্যন্ত উৎসাহ প্রকাশ করেছিলেন। তিনি একটি উদাহরণ ভাগ করে নিয়ে বলেন,  ব্যাপকহারে ডিজিটাল পরিচয় প্রদানের বাস্তবতা  নিয়ে গোটা বিশ্ব সংশয় প্রকাশ করেছিল। কিন্তু ভারত আবার তাদের ভুল প্রমাণিত করেছে। আজ, বিশ্বের ডিজিটাল লেনদেনের ৫০ শতাংশ ভারতে হয়ে থাকে এবং ভারতের ইউপিআই বিশ্বব্যাপী ডিজিটাল লেনদেন ব্যবস্থায় আধিপত্য বিস্তার করছে। শ্রী মোদী জোর দিয়ে বলেন যে, প্রতিটি ভবিষ্যদ্বাণী এবং মূল্যায়নকে ছাপিয়ে যাওয়া আজ ভারতের নির্ণায়ক বৈশিষ্ট্য হয়ে উঠেছে  এবং সেই কারণেই ভারত অপ্রতিরোধ্য।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, ভারতের সাফল্যের পিছনে আসল শক্তি হল দেশবাসী। নাগরিকরা তাঁদের সম্ভাবনাকে পুরোপুরি তখনই উপলব্ধি করতে পারেন,  যখন সরকার তাঁদের ওপর কোনও চাপ প্রয়োগ বা তাঁদের জীবনে কোনও হস্তক্ষেপ করে না।  তিনি বলেন যে, অতিরিক্ত সরকারি নিয়ন্ত্রণ বাধা হিসেবে কাজ করে, অন্যদিকে বৃহত্তর গণতন্ত্রীকরণ অগ্রগতিকে ত্বরান্বিত করে। 

 স্বাধীনতার পর ৬০ বছর দেশ শাসন করা বিরোধী দলের সমালোচনা করে শ্রী মোদী বলেন, বিগত ১১ বছর ধরে, তার সরকার নীতি ও প্রক্রিয়া উভয়েরই গণতন্ত্রীকরণের উপর জোর দিয়েছে, যা অপ্রতিরোধ্য ভারতের উত্থানের পিছনে একটি গুরুত্বপূর্ণ কারণ দেখা দিয়েছে।

ব্যাঙ্কিং ক্ষেত্র নিয়ে
তিনি বলেন যে, একসময়
দরিদ্ররা ব্যাঙ্কের দরজায় যেতেও ভয় পেত। এর ফলে, ২০১৪ সাল পর্যন্ত ভারতের অর্ধেকেরও বেশি  মানুষের কোনও ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্ট ছিল না। শ্রী মোদী স্পষ্ট করে বলেন যে, দেশে ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টের অভাব ছিল না, দেশের জনসংখ্যার একটি বড় অংশ ব্যাঙ্কিং সুবিধা থেকে বঞ্চিত ছিলেন এবং বাজার থেকে উচ্চ সুদে ঋণ নিতে বাধ্য হতেন, প্রায়ই তাঁদের বাড়িঘর এবং জমি বন্ধক রাখতে বাধ্য হতেন।

দেশকে অতিরিক্ত আমলাতান্ত্রিকতা থেকে মুক্ত করা অত্যন্ত জরুরি এবং তাঁর সরকার সফলভাবে এটি অর্জন করেছে বলে উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী ব্যাঙ্কিং ক্ষেত্রের গণতন্ত্রীকরণ এবং সংস্কারের কথা তুলে ধরেন। এর মধ্যে রয়েছে, ৫০ কোটিরও বেশি জন ধন অ্যাকাউন্ট খোলা। আজ ভারতের প্রতিটি গ্রামে কমপক্ষে একটি ব্যাঙ্কিং সুবিধা রয়েছে। শ্রী মোদী বলেন যে, ডিজিটাল লেনদেন ভারতকে গোটা বিশ্বে সবচেয়ে আর্থিকভাবে অন্তর্ভুক্তিমূলক দেশগুলির মধ্যে একটি করে তুলেছে। তিনি বিরোধী দলের নেতৃত্বাধীন ব্যাঙ্ক জাতীয়করণের সমালোচনা করে বলেন যে,  ব্যাঙ্কগুলিতে এনপিএ-র পাহাড় তৈরি হয়েছে এবং তাঁর সরকারের গণতন্ত্রীকরণের কারণে ব্যাঙ্কগুলি রেকর্ড লাভ ঘরে তুলতে পারছে।  গত ১১ বছরে মহিলা স্বনির্ভর গোষ্ঠী, ক্ষুদ্র কৃষক, গবাদি পশু পালনকারী, মৎস্যজীবী, পথ বিক্রেতা এবং বিশ্বকর্মা অংশীদারদের ব্যাঙ্ক গ্যারান্টি ছাড়াই লক্ষ লক্ষ কোটি টাকার ঋণ প্রদান করা হয়েছে।

প্রধানমন্ত্রী পেট্রোলিয়াম ও গ্যাস ক্ষেত্রকে রূপান্তরের আরেকটি উদাহরণ হিসেবে উল্লেখ করেন। তিনি বলেন যে, ২০১৪ সালের আগে আমলাতান্ত্রিক মানসিকতার অধীনে, বিরোধী সরকার জ্বালানি ভর্তুকি বৃদ্ধি এড়াতে রাত ৮-টা থেকে সকাল ৮-টা পর্যন্ত পেট্রোল পাম্প বন্ধ রাখার প্রস্তুতি নিচ্ছিল। বিপরীতে তিনি বর্তমান পরিস্থিতি তুলে ধরে বলেন, এখন পেট্রোল পাম্পগুলি কোনও বিধিনিষেধ ছাড়াই চব্বিশ ঘন্টা কাজ করে। প্রধানমন্ত্রী জোর দিয়ে বলেন যে, ভারত এখন বিকল্প জ্বালানি এবং বৈদ্যুতিক যানের অভূতপূর্ব বিনিয়োগ করা হচ্ছে।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, বিরোধী দলের আমলে গ্যাস সংযোগ পেতেও সংসদ সদস্যদের কাছ থেকে সুপারিশপত্রের প্রয়োজন হত। বিপরীতে তাঁর সরকার ১০ কোটিরও বেশি দরিদ্র পরিবারকে বিনামূল্যে গ্যাস সংযোগ প্রদান করেছে বলে মন্তব্য করেন তিনি। 

প্রধানমন্ত্রী বলেন,  আমলাতান্ত্রিক চিন্তাভাবনার কারণে বিরোধীরা রাষ্ট্রায়ত্ত  (পিএসইউ) ক্ষেত্রকে অচল করে দিয়েছিল, অন্যদিকে, নিজেরা আরামে বিশ্রাম নিচ্ছিলেন। 
প্রধানমন্ত্রী বলেন, তাঁর সরকার এই পদ্ধতি পরিবর্তন করেছে। আজ, এলআইসি এবং এসবিআই-এর মতো প্রধান পিএসইউ লাভের ক্ষেত্রে নতুন রেকর্ড স্থাপন করছে।

প্রধানমন্ত্রী জোর দিয়ে বলেন, যে  সরকারি নীতিগুলি যখন আমলাতন্ত্রীকরণের পরিবর্তে গণতন্ত্রীকরণের উপর ভিত্তি করে তৈরি হয়, তখন নাগরিকদের মনোবল বৃদ্ধি পায়। তিনি বিরোধী দলের বারবার "গরিবি হটাও" স্লোগান দেওয়ার সমালোচনা করে জোরের সঙ্গে বলেছেন, তাঁদের শাসনামলে দারিদ্র্য হ্রাস পায়নি। পাল্টা তিনি বলেন যে, তাঁর সরকারের গণতান্ত্রিক পদ্ধতি গত এগারো বছরে ২৫ কোটি দরিদ্র নাগরিককে দারিদ্র্য থেকে মুক্ত করেছে। তিনি বলেন, এই কারণেই জাতি বর্তমান সরকারের উপর আস্থা রাখে এবং কেন ভারত আজ অপ্রতিরোধ্য, তাও স্পষ্ট।

শ্রী মোদী আশ্বস্ত করে বলেন যে, ভারতে এখন এমন একটি সরকার রয়েছে, যা দরিদ্র ও বঞ্চিতদের সেবা করার জন্য নিবেদিতপ্রাণ, যারা পিছিয়ে পড়া সম্প্রদায়কে অগ্রাধিকার দেয় এবং তাঁদের জীবন উন্নত করার জন্য পূর্ণ সংবেদনশীলতার সঙ্গে কাজ করে।  উদাহরণ হিসেবে, তিনি বিএসএনএল-এর মেড-ইন-ইন্ডিয়া ৪জি স্ট্যাকের সাম্প্রতিক উদ্বোধনের কথা উল্লেখ করে এটিকে একটি উল্লেখযোগ্য জাতীয় সাফল্য হিসেবে অভিহিত করেন। তিনি গর্বের সঙ্গে বলেন যে, ভারত এখন বিশ্বের শীর্ষ পাঁচটি দেশের মধ্যে রয়েছে, যাদের দেশীয়ভাবে  তৈরি ৪জি স্ট্যাক রয়েছে। প্রধানমন্ত্রী উল্লেখ করেন যে, বিএসএনএল, একসময়  অবহেলিত একটি রাষ্ট্রায়ত্ত ক্ষেত্রের সংস্থা ছিল। এখন সেটি নতুন মাইলফলক অর্জন করছে। তিনি আরও বলেন যে, ৪জি স্ট্যাক চালু হওয়ার সাথে সাথে একই দিনে বিএসএনএল প্রায় এক লক্ষ ৪জি মোবাইল টাওয়ার সক্রিয় করেছে। ফলস্বরূপ, প্রত্যন্ত বন এবং পাহাড়ি অঞ্চলে বসবাসকারী লক্ষ লক্ষ মানুষ - যে অঞ্চলগুলি আগে উচ্চ-গতির ইন্টারনেটের স্পর্শ পায়নি - এখন দ্রুত ইন্টারনেট পরিষেবা পাচ্ছে।

 শ্রী মোদী আরও বলেন যে, যখন উন্নত সুযোগ-সুবিধা প্রত্যন্ত অঞ্চলে পৌঁছায়, তখন তা জীবনকে বদলে দেয়। ই-সঞ্জীবনীর উদাহরণ তুলে ধরে, কীভাবে দূরবর্তী পাহাড়ি অঞ্চলে বসবাসকারী একটি পরিবার, যারা খারাপ আবহাওয়ার কারণে অসুস্থ সদস্যকে ডাক্তারের কাছে নিয়ে যেতে পারছিল না, তারা এখন উচ্চ-গতির সংযোগ-ভিত্তিক ই-সঞ্জীবনী পরিষেবার মাধ্যমে চিকিৎসা সংক্রান্ত পরামর্শের কথা তুলে ধরেন প্রধানমন্ত্রী।  আরও ব্যাখ্যা করে শ্রী মোদী বলেন যে, ই-সঞ্জীবনী অ্যাপের মাধ্যমে, প্রত্যন্ত অঞ্চলের রোগীরা তাঁদের ফোন থেকে সরাসরি বিশেষজ্ঞ ডাক্তারদের সাথে যোগাযোগ করতে পারেন। তিনি জানান যে, ই-সঞ্জীবনীর মাধ্যমে ইতিমধ্যেই ৪২ কোটিরও বেশি ওপিডি পরামর্শের সুবিধা দেওয়া হয়েছে। তাঁর ভাষণের এই দিনেই শ্রী মোদী বলেন যে, সারা দেশে এক লক্ষেরও বেশি মানুষ প্ল্যাটফর্মের মাধ্যমে সহায়তা পেয়েছেন। প্রধানমন্ত্রী জোর দিয়ে বলেন যে ই-সঞ্জীবনী কেবল একটি পরিষেবা নয় - এটি আস্থার প্রতীক,  সঙ্কটের সময়ে যার সাহায্য পাওয়া যাবে।

শ্রী মোদী দৃঢ়তার সঙ্গে বলেন যে, গণতন্ত্র এবং সংবিধানের প্রতি প্রতিশ্রুতিবদ্ধ একটি সংবেদনশীল সরকার এমন সিদ্ধান্ত নেয় এবং নীতি প্রণয়ন করে, যা নাগরিকদের জীবনযাত্রায় স্বাচ্ছন্দ্য এবং আর্থিক সঞ্চয়কে অগ্রাধিকার দেয়। তিনি উল্লেখ করেন যে, ২০১৪ সালের আগে ১ জিবি ডেটার দাম ছিল ৩০০ টাকা, সেখানে এখন মাত্র ১০ টাকা, যার ফলে প্রতিটি ভারতীয়ের বার্ষিক হাজার হাজার টাকা সাশ্রয় হচ্ছে। আয়ুষ্মান ভারত প্রকল্পের মাধ্যমে দরিদ্র রোগীরা ১.২৫ লক্ষ কোটি টাকা সাশ্রয়ের কথা উল্লেখ করেন তিনি। প্রধানমন্ত্রী জন ঔষধি কেন্দ্রগুলিতে ওষুধ ৮০ শতাংশ ছাড়ে পাওয়া যাচ্ছে, যার ফলে প্রায় ৪০,০০০ কোটি টাকা সাশ্রয় হচ্ছে। এছাড়াও, হার্ট স্টেন্টের দাম কমানোর ফলে দরিদ্র ও মধ্যবিত্ত পরিবারগুলির বার্ষিক ১২,০০০ কোটি টাকা সাশ্রয় সম্ভব হয়েছে।

সৎ করদাতারা তাঁর সরকারের সংস্কারের ফলে সরাসরি উপকৃত হয়েছেন বলে জোর দিয়ে প্রধানমন্ত্রী আয়কর এবং জিএসটি উভয় ক্ষেত্রেই উল্লেখযোগ্য হ্রাসের কথা তুলে ধরেন। তিনি উল্লেখ করেন যে, এই বছর ১২ লক্ষ টাকা পর্যন্ত আয় করমুক্ত করা হয়েছে। তিনি উল্লেখ করেন যে জিএসটি বচত উৎসব বর্তমানে পুরোদমে চলছে এবং সাম্প্রতিক বিক্রয় পূর্ববর্তী সমস্ত রেকর্ড ভেঙে দিয়েছে। প্রধানমন্ত্রী নিশ্চিত করেন যে, আয়কর এবং জিএসটি-র ক্ষেত্রে গৃহীত পদক্ষেপ ভারতীয় নাগরিকদের বার্ষিক প্রায় ২.৫ লক্ষ কোটি টাকা সাশ্রয় করবে।

শ্রী মোদী বলেন, অপারেশন সিঁদুরের জন্য জাতীয় ও আন্তর্জাতিক স্তরে ব্যাপক প্রশংসা মিলেছে। নকশাল এবং মাওবাদীদের হিংসার কথা তুলে ধরে তিনি বলেন,  এটি শুধুমাত্র একটি প্রধান নিরাপত্তা উদ্বেগের বিষয় নয়,  ভারতের যুব সমাজের ভবিষ্যতও এর সঙ্গে গভীরভাবে জড়িত।  সন্ত্রাসবাদ এবং ৩৭০ ধারা নিয়ে ব্যাপক বিতর্ক চলাকালীন, শ্রী মোদী বলেছিলেন, শহুরে নকশালরা গুরুত্বপূর্ণ প্রতিষ্ঠানগুলি দখল করে এবং মাওবাদী হিংসা নিয়ে কথাবার্তা আটকানোর জন্য সক্রিয়ভাবে কাজ করে। তিনি উল্লেখ করেন যে, সম্প্রতি, মাওবাদী সন্ত্রাসবাদের শিকার বেশ কয়েকজন দিল্লিতে এসেছিলেন। প্রধানমন্ত্রী ভারতের প্রায় প্রতিটি প্রধান রাজ্যে একসময় যে ভয়াবহ পরিস্থিতি বিরাজ করছিল, সেই পরিস্থিতি তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী বলেন, সেখানে নকশাল ও মাওবাদী হিংসা গভীরভাবে শিকড় গেড়েছিল। তিনি বলেন, সারা দেশে সংবিধান থাকা সত্ত্বেও  রেড করিডোরের নাম বলার মতো কেউ ছিল না। সরকার নির্বাচিত হত, কিন্তু সেই অঞ্চলগুলিতে তাদের কোনও প্রকৃত কর্তৃত্ব ছিল না। 

গত ৫০-৫৫ বছরে মাওবাদী সন্ত্রাসবাদের ধ্বংসাত্মক প্রভাব তুলে ধরে শ্রী মোদী জোর দিয়ে বলেন যে, নিরাপত্তা কর্মী-সহ হাজার হাজার মানুষ প্রাণ হারিয়েছেন। নকশালরা স্কুল ও হাসপাতাল নির্মাণে বাধা সৃষ্টি করেছে।  ফলস্বরূপ, দেশের একটি বিশাল অঞ্চল এবং জনসংখ্যার একটি বড় অংশ কয়েক দশক ধরে উন্নয়ন থেকে বঞ্চিত ছিল। শ্রী মোদী জোর দিয়ে বলেন যে, এই দীর্ঘ অবহেলা উপজাতি সম্প্রদায় এবং দলিত ভাইবোনদের উপর  প্রভাব ফেলেছে।

প্রধানমন্ত্রী সরকারের প্রচেষ্টার ফলাফল তুলে ধরেন: ১১ বছর আগে, ১২৫-টিরও বেশি জেলা মাওবাদী হিংসার শিকার হলেও, আজ সেই সংখ্যা মাত্র ১১-টি জেলায় নেমে এসেছে। এর মধ্যে মাত্র তিনটি জেলাই অত্যন্ত নকশাল-প্রভাবিত।

শ্রী মোদী বলেন, গত এক দশকে হাজার হাজার নকশাল আত্মসমর্পণ করেছেন, গত ৭৫ ঘন্টার একটি সাম্প্রতিক পরিসংখ্যান ভাগ করে নিয়েছেন। মোট ৩০৩ জন নকশালবাদী অস্ত্র সহ আত্মসমর্পণ করেছেন। তিনি আরও বলেন যে, এঁরা সাধারণ বিদ্রোহী ছিলেন না - কয়েকজনের জন্য ১ কোটি, ১৫ লক্ষ বা ৫ লক্ষ টাকার পুরস্কার মূল্য ধার্য করা হয়েছিল এবং তাদের কাছ থেকে বিপুল পরিমাণ অস্ত্র উদ্ধার করা হয়েছে। প্রধানমন্ত্রী জানান, এই ধরনের ব্যক্তিরা এখন উন্নয়নের মূলধারায় ফিরে আসছেন এবং  প্রকাশ্যে স্বীকার করছেন যে, তাঁরা ভুল পথে ছিলেন। তিনি জোর দিয়ে বলেন যে, এঁরা এখন ভারতের সংবিধানের প্রতি আস্থা রেখে এগিয়ে যাচ্ছে।

ছত্তিশগড়ের বস্তার থেকে একসময় নিয়মিতভাবে বিভিন্ন ঘটনা সংবাদের শিরোনামে আসত। এখন প্রধানমন্ত্রী সেখানে রূপান্তরের কথা তুলে ধরেন। তিনি উল্লেখ করেন যে, আজ বস্তারের উপজাতি যুবকরা শান্তি ও অগ্রগতির প্রতীক বস্তার অলিম্পিকের আয়োজন করছে। তিনি বলেন যে,  মাওবাদী সন্ত্রাসবাদ থেকে মুক্ত অঞ্চলগুলি নব আনন্দে এই দীপাবলি উদযাপন করবে। 

শ্রী মোদী দেশবাসীকে আশ্বস্ত করে বলেন যে, সেই দিন খুব বেশি দূরে নয়, যখন ভারত নকশালবাদ এবং মাওবাদী হিংসা থেকে সম্পূর্ণ মুক্ত হবে। তিনি আরও বলেন,  এটি তাঁদের সরকারের গ্যারান্টি।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, "একটি উন্নত দেশ হওয়ার দিকে ভারতের যাত্রা শুধুমাত্র অগ্রগতির সাধনা নয়; উন্নয়নকে মর্যাদার সাথে হাত মিলিয়ে চলতে হবে, যেখানে গতি নাগরিকদের প্রতি শ্রদ্ধার সাথে মিলে যায় এবং উদ্ভাবন কেবল দক্ষতার জন্য নয়, সেইসঙ্গে থাকতে হবে করুণা ও সহমর্মিতা।"  এই দৃষ্টিভঙ্গিকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার ক্ষেত্রে এনডিটিভি ওয়ার্ল্ড সামিটের মতো প্ল্যাটফর্মের গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকার কথা স্বীকার করে তিনি ভাষণ শেষ করেন।  

অনুষ্ঠানে শ্রীলঙ্কার প্রধানমন্ত্রী, মহামান্য ডঃ হরিণী অমরসূর্য, অস্ট্রেলিয়ার প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী মহামান্য টনি অ্যাবট, ব্রিটেনের প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী মহামান্য ঋষি সুনক সহ অন্যান্য বিশিষ্ট ব্যক্তিবর্গ উপস্থিত ছিলেন।
******
 
SSS/MP/DM


(रिलीज़ आईडी: 2180778) आगंतुक पटल : 22
इस विज्ञप्ति को इन भाषाओं में पढ़ें: English , Urdu , Marathi , हिन्दी , Assamese , Manipuri , Punjabi , Gujarati , Odia , Odia , Tamil , Telugu , Kannada , Malayalam