প্রধানমন্ত্রীরদপ্তর
azadi ka amrit mahotsav

সংবিধান গৃহীত হওয়ার ৭৫ বছর পূর্তিতে লোকসভায় বিশেষ আলোচনায় প্রধানমন্ত্রীর ভাষণের বঙ্গানুবাদ

Posted On: 14 DEC 2024 11:28PM by PIB Kolkata

নয়াদিল্লি, ১৪ ডিসেম্বর, ২০২৪

 

মাননীয় অধ্যক্ষ মহোদয়, 
বিশ্বের সমস্ত গণতন্ত্র প্রিয় মানুষ এবং আমার প্রিয় দেশবাসীর কাছে এটা গভীর গর্বের মুহুর্ত। অত্যন্ত গর্বের সঙ্গে গণতন্ত্রের উৎসব উদযাপনের এটা এক উপলক্ষ্য। সংবিধানের অধীন ৭৫ বছরের যাত্রাকাল এক স্মরণীয় বিষয়। আমাদের সংবিধান নির্মাতারা আমাদের এগিয়ে চলার পথ করে দিয়েছেন। সংসদের পক্ষ থেকেও উদযাপনের এই সুযোগ করে দেওয়ায় প্রকৃতই আনন্দের। মাননীয় সদস্য বৃন্দকে আমার কৃতজ্ঞতা জানাচ্ছি। 

মাননীয় অধ্যক্ষ মহোদয়, 
সংবিধানের ৭৫ বছর উদযাপন কোনও সাধারণ বিষয় নয়। ভারতের স্বাধীনতা লাভের সময় দেশের ভবিষ্যত নিয়ে অনেক ভৌতিক অনুমান ভিড় করেছিল। কিন্তু ভারতীয় সংবিধান সেই সমস্ত আশঙ্কাকে নস্যাত করে দিয়ে আমাদেরকে সঠিক পথে চালিত করেছে। পঁচাত্তর বছর ধরে ভারতের নাগরিক সংবিধান নির্মাতাদের দিশাদর্শকে সম্মান জানিয়েছেন এবং যেকোনও পরীক্ষার মুখেই তাঁরা তাঁদের সহিষ্ণুতার পরিচয় দিয়েছেন।

মাননীয় অধ্যক্ষ মহোদয়, 
সংবিধান নির্মাতারা বিশ্বাস করতেন, ভারতের জন্ম ১৯৪৭ বা গণতন্ত্রের যাত্রার সূচনা ১৯৫০ সালেই হয়নি। তাঁরা ভারতের সুপ্রাচীন ঐতিহ্য এবং সংস্কৃতির মহত্মতা সম্পর্কে ওয়াকিবহাল ছিলেন। যার সময়কাল কয়েক হাজার বছর প্রাচীন। এই বিষয়টি মাথায় রেখেই তাঁরা নতুন করে এর ওপরে স্থাপত্য রচনা করেছেন। 

মাননীয় অধ্যক্ষ মহোদয়, 
আমি এই সভায় তিন মহান দূরদর্শী বিষয় উথ্থাপন করতে চাই। প্রথমজন রাজর্ষি পুরষোত্তম দাস ট্যান্ডন যিনি সংবিধান সভায় বিতর্কে বলেছিলেন, বেশ কয়েক শতাব্দী পর আমাদের দেশ অনুরূপ বৈঠকে পুনরায় মিলিত হয়েছে। এই সমাবেশ আমাকে গরিমাময় অতীতের কথা স্মরণ করিয়ে দিচ্ছে যখন আমরা স্বাধীন ছিলাম, যখন বিদ্যান মানুষেরা দেশের সবথেকে জরুরি বিষয় নিয়ে আলোচনায় মিলিত হতেন। 

দ্বিতীয় ব্যক্তি হলেন, ডক্টর রাধাকৃষ্ণান। তিনি ছিলেন সংবিধান সভার সদস্য।  তাঁর বক্তব্য ছিল, প্রজাতান্ত্রিক এই ব্যবস্থা এই মহান রাষ্ট্রের কাছে নতুন কিছু নয়। ইতিহাসের উষা লগ্ন থেকেই তা চলে আসছে। 

তৃতীয় ব্যক্তি হলেন, বাবা সাহেব আম্বেদকর। তিনি ঘোষণা করেছিলেন, গণতন্ত্র ভারতের কাছে কোনও বিজাতীয় ধারণা নয়। এমন এক সময় ছিল যখন বহু প্রজাতন্ত্র এই ভূমিতে সমৃদ্ধ ছিল। 

মাননীয় অধ্যক্ষ মহোদয়, 
গণতন্ত্রে কাঠামো নির্মাণ এদেশের মহিলাদের সমৃদ্ধ অবদানকেও প্রত্যক্ষ করেছেন। সংবিধান সভায় ১৫ জন মহিলা সদস্যা ছিলেন। যাদের সক্রিয় ভূমিকা তাদের মৌলিক প্রেক্ষাপটে বিতর্ককে সমৃদ্ধ করেছে। এইসব মহিলারা সমাজের বিভিন্ন ক্ষেত্র থেকে এসেছিলেন। সংবিধান নির্মাণে তাদের মূল্যবান পরামর্শ গভীর রেখাপাত করেছে। অন্য অনেক দেশে মহিলাদের অধিকার প্রদানে যেখানে কয়েক দশক লেগে গেছে ভারতে সংবিধান নির্মাণের সূচনা পর্বে তাদের ভোটাধিকার সুনিশ্চিত করা হয়েছিল। 

মাননীয় অধ্যক্ষ মহোদয়, 
সাম্প্রতিক জি-২০ শিখর সম্মেলনে সংবিধানের গভীর ভাবাদর্শকে আমরা তুলে ধরেছি। ভারতের পৌরোহিত্যে বিশ্বে মহিলা পরিচালিত উন্নয়নের ধারণার সূত্রপাত ঘটিয়েছি। এছাড়াও সব সংসদ সদস্য মিলে সর্বসম্মতভাবে নারী শক্তি বন্দন অধিনিয়ম চালু করেছে। ভারতীয় গণতন্ত্রে যা মহিলাদের অংশগ্রহণের বৃহত্তর ক্ষেত্র গড়ে তুলবে। 

মাননীয় অধ্যক্ষ মহোদয়, 
সংবিধানের ৭৫ বছর উদযাপনে আজ প্রতিটি উদ্যোগের কেন্দ্রস্থলে রয়েছেন মহিলারা। এটা এক ঐতিহাসিক মাইলফলক যা একজন আদিবাসী নারী ভারতের রাষ্ট্রপতি। আমাদের সংবিধানের মূল ভাবধারার এটাই প্রকৃত সাক্ষ্য প্রমাণ। 

মাননীয় অধ্যক্ষ মহোদয়, 
এই সভায় মহিলা সদস্যের সংখ্যা এবং তাদের অবদানের সংখ্যা ক্রমশই বৃদ্ধি পাচ্ছে। মন্ত্রিসভাতেও তাদের অংশগ্রহণ বাড়ছে। আজ সামাজিক ক্ষেত্র, রাজনীতি, ক্রীড়া, শিক্ষা বা সৃষ্টিশীল ক্ষেত্রে সমস্ত জায়গাতে মহিলাদের অবদান আমাদের কাছে গর্বের বিষয়। 

মাননীয় অধ্যক্ষ মহোদয়, 
ভারত অভূতপূর্ব গতিতে নতুন দিশাপথে এগিয়ে চলেছে। কিছুদিনের মধ্যেই ভারত বিশ্বের তৃতীয় বৃহত্তম অর্থনীতির দেশ হয়ে উঠবে। এর পাশাপাশি, ১৪০ কোটি ভারতীয়ের সংকল্প স্বাধীনতার ১০০ বছর উদযাপনে ভারতকে আমরা উন্নত দেশ হিসেবে গড়ে তুলব। 

মাননীয় অধ্যক্ষ মহোদয়, 
আমি অত্যন্ত বেদনার সঙ্গে বলছি, সংবিধান নির্মাতাদের মনেপ্রাণে ঐক্য থাকলেও এই ঐক্যবোধ পরবর্তীকালে আত্মপরতায় আক্রান্ত হয়েছে। বৈচিত্র্যের মধ্যে ঐক্য সবসময় ভারতের শক্তি হিসেবে পরিগণিত হয়েছে। অথচ দুর্ভাগ্যক্রমে ঔপনিবেশিক দাসত্বের মানসিকতা বশে ভারতের কল্যাণকে অনেকের প্রশংসা থেকে বিরত থেকেছে। তারা বিশ্বাস করত ভারতের জন্মই হয়েছে ১৯৪৭ সালে। বৈচিত্র্যের মধ্যে অমিত শক্তিকে দেখতে তারা ভুলে গেছে। বরং সামাজিক অনৈক্যের বীজ বপন করে দেশের ঐক্যকে তারা বিঘ্নিত করছেন। 

মাননীয় অধ্যক্ষ মহোদয়, 
বৈচিত্র্যের এই উদযাপনকে আমরা আমাদের জীবনের অনন্য অঙ্গ করে তুলতে পারলে বাবা সাহেব আম্বেদকরের প্রতি প্রকৃত শ্রদ্ধা প্রদর্শন করা হবে। 

মাননীয় অধ্যক্ষ মহোদয়, 
বিগত ১০ বছর ধরে দেশের মানুষের সেবা করার সুযোগ আমাদের দেওয়া হয়েছে। সিদ্ধান্ত ও নীতিগত বিষয়ের পর্যালোচনায় আমরা সবসময় ভারতের ঐক্যকে শক্তিশালী করার লক্ষ্যে কাজ করেছে। উদাহরণস্বরূপ সংবিধানের ৩৭০ নম্বর ধারা জাতীয় ঐক্যের পক্ষে এক বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছিল। জাতীয় ঐক্য রক্ষার স্বার্থে সেই ধারা বিলোপকে আমরা অগ্রাধিকার দিয়েছি।  

মাননীয় অধ্যক্ষ মহোদয়, 
অর্থনৈতিক অগ্রগতির ক্ষেত্রে ভারত বিশ্ব বিনিয়োগের আকর্ষণীয় কেন্দ্রস্থল হয়ে ওঠেছে। এই অনুকূল পরিবেশ গড়ে তুলতে নানা সংস্কারের প্রয়োজন হয়েছে। উল্লেখযোগ্য সংস্কার হল, জিএসটি চালু। এক্ষেত্রে উদ্যোগ গ্রহণের জন্য বিগত সরকারের কৃতিত্ব প্রাপ্য। আমাদের সময়কালে এই উদ্যমকে আমরা আরও এগিয়ে নিয়ে গেছি। এক দেশ, এক কর ব্যবস্থার ধারণা অগ্রবর্তী জায়গা পেয়েছে। 

মাননীয় অধ্যক্ষ মহোদয়, 
রেশন কার্ড দরিদ্রদের কাছে এক গুরুত্বপূর্ণ নথি। অথচ অতীতে কোনও দরিদ্র ব্যক্তিকে এর সুযোগ পেতে এক রাজ্য থেকে অন্য রাজ্য ঘুরে বেড়াতে হতো। আমাদের এই বিরাট দেশে এলাকা বিভিন্ন হলেও প্রত্যেক মানুষের সম অধিকার রয়েছে। এই ঐক্যবোধকে শক্তিশালী করতে এক দেশ এক রেশন ব্যবস্থা আমরা চালু করেছি। 

মাননীয় অধ্যক্ষ মহোদয়, 
সাধারণ নাগরিক বিশেষত দরিদ্রদের ক্ষেত্রে নিখরচায় স্বাস্থ্য পরিষেবা দারিদ্র্যের সঙ্গে লড়াই করার তাদের শক্তি গড়ে দেয়। তারা যেখানেই থাকুন না কেন তাদের স্বাস্থ্য পরিষেবার সুযোগ তাদের কাছে পৌঁছোনো দরকার। এক দেশ, এক স্বাস্থ্য কার্ড আমরা চালু করেছি। আজ বিহারের কোনও প্রান্তিক গ্রামের মানুষ পুণেতে কাজ করতে গিয়ে অসুস্থ হয়ে পড়লেও আয়ুষ্মান কার্ডের সৌজন্যে দ্রুত স্বাস্থ্য পরিষেবার সুযোগ গ্রহণ করতে পারেন। 

মাননীয় অধ্যক্ষ মহোদয়, 
এমন উদাহরণ দেওয়াই যায় এক জায়গায় বিদ্যুৎ রয়েছে, অন্যত্র অন্ধকারে নিমজ্জিত। অতীতে সরকারের আমলে এই জাতীয় বিদ্যুৎ সংকট আন্তর্জাতিক হেডলাইন হতো। আমরা সেসব দিন প্রত্যক্ষ করেছি। কিন্তু আমরা এক দেশ, এক গ্রীড ব্যবস্থা চালু করেছি, যাতে ভারতের সর্বত্র বিদ্যুৎ পৌঁছোচ্ছে, কোনও এলাকা আর অন্ধকারে পড়ে নেই। 

মাননীয় অধ্যক্ষ মহোদয়, 
সামাজিক বৈষম্যের কারণে আমাদের দেশের পরিকাঠামোকে দীর্ঘদিন ধরে ভুগতে হয়েছে। জাতীয় ঐক্যকে শক্তিশালী করতে সমতাপূর্ণ উন্নয়নকে আমরা অগ্রাধিকার দিয়েছি, তা সে উত্তর-পশ্চিম, জম্মু-কাশ্মীর, হিমালয় সন্নিহিত এলাকা বা মরুভূমি অঞ্চল যাই হোক না কেন সর্বত্রই বৈষম্যকে দূরে ঠেলে ফেলতে পরিকাঠামো ক্ষেত্রকে আমরা শক্তিশালী করে তুলেছি। 

মাননীয় অধ্যক্ষ মহোদয়, 
ভারতের ডিজিটাল ইন্ডিয়া উদ্যোগ বিশ্ব সাফল্যের কীর্তি রচনা করেছে। প্রযুক্তির গণতন্ত্রীকরণ ঘটিয়ে সংবিধান নির্মাতাদের দৃষ্টিভঙ্গিকে আমরা মর্যাদা দিয়েছি। সেইসঙ্গে ভারতের ঐক্যকে শক্তিশালী করতে প্রত্যেক পঞ্চায়েত স্তরে অপটিক্যাল ফাইবার সংযোগ স্থান করেছি। 

মাননীয় অধ্যক্ষ মহোদয়, 
ঐক্যকে গুরুত্ব দেওয়ার পাশাপাশি, তাঁকে আরও শক্তিশালী করতে মাতৃভাষাকে স্বীকৃতি আরও এক উল্লেখযোগ্য দিক। মাতৃভাষাকে অবদমিত করে কোনও দেশ কখনও এগোতে পারেনা। নতুন শিক্ষানীতি মাতৃভাষাকে প্রাধান্য দিয়েছে। আজ গরীব পরিবারের সন্তানও নিজের ভাষায় পড়াশোনা করে ডাক্তার, ইঞ্জিনিয়ার হওয়ার স্বপ্ন দেখতে পারেন। এর পাশাপাশি অনেক ভারতীয় ভাষাকে আমরা ধ্রুপদী ভাষার মর্যাদা দিয়েছি। তরুণ সম্প্রদায়ের মধ্যে ঐক্য ও সাংস্কৃতিক সচেতনা গড়ে তুলতে এক ভারত, শ্রেষ্ঠ ভারত অভিযানের সূচনা করা হয়েছে। প্রতিষ্ঠানগত উদ্যোগের ক্ষেত্রে এপ্রসঙ্গে কাশি-তামিল সঙ্গমম এবং তেলগু কাশি সঙ্গমম-এর কথা উল্লেখ করা যায়। 


মাননীয় অধ্যক্ষ মহোদয়, 
সংবিধানের ৭৫ বছর উদযাপনকালে ২৫ বছর, ৫০ বছর ও ৬০ বছরের মাইলফলক নিয়েও আলোচনার তাৎপর্য রয়েছে। এই ২৫ বছর পূর্তিতে দেশ অন্ধকারাচ্ছন্ন সময়কে প্রত্যক্ষ করেছে। জরুরী অবস্থা লাগু করে সমস্ত সাংবিধানিক ব্যবস্থাকে অচল করে দেওয়া হয়েছিল। সাধারণ মানুষের অধিকারকে কেড়ে নিয়ে সারাদেশকে কারাগারে রূপান্তরিত করা হয়েছিল।   

মাননীয় অধ্যক্ষ মহোদয়, 
প্রধানমন্ত্রী অটল বিহারী বাজপেয়ীর নেতৃত্বে দেশ সংবিধানের ৫০ বছর উদযাপন করেছে। জন জীবনকে উৎসাহিত করতে এবং ঐক্যের ভাবধারা গড়ে তুলতে জন অংশগ্রহণ এবং জনসহযোগিতার ক্ষেত্রকে গড়ে তুলেছিলেন তিনি। এই সময়ে আমার মুখ্যমন্ত্রী হওয়ার সৌভাগ্য হয়। সংবিধানের ৬০ বছর পূর্তি গুজরাটে বিপুল উৎসাহে উদযাপিত হয়েছিল। 

মাননীয় অধ্যক্ষ মহোদয়, 
আমাদের দেশের ইতিহাসে উথ্থান-পতন, বাধা, চ্যালেঞ্জ নানা সময় পরিলক্ষিত হয়েছে। এতসত্ত্বেও সংবিধানের প্রতি ন্যায়নিষ্ঠ থাকায় দেশের মানুষের প্রতি আমি আমার কৃতজ্ঞতা জানাচ্ছি। 

মাননীয় অধ্যক্ষ মহোদয়, 
ব্যক্তিগত অভিযোগের কোনও ইচ্ছা আমার নেই। তাহলেও দেশের সামনে প্রকৃত সত্য তুলে ধরা দরকার। কংগ্রেস দলের একটি পরিবার দেশের সংবিধানকে ভূলুন্ঠিত করতে কোনও চেষ্টার কসুর করেননি। স্বাধীনতার ৭৫ বছরে এই দল ৫৫ বছর ধরে দেশ শাসন করেছে। দেশের মানুষের প্রকৃত সত্য জানার অধিকার রয়েছে। তাদের নীতিহীনতা এবং ক্ষতিকারক কাজকর্ম সংবিধানের ক্ষতি করেছে। 

মাননীয় অধ্যক্ষ মহোদয়,
১৯৫১-তে এই অসংসদীয় আইন কারোর নজর এড়ায়নি। ১৯৫১ সালে নির্বাচিত সরকার ক্ষমতায় আসার আগে অন্তর্বতী ব্যবস্থা সংবিদান সংশোধনের এক অধ্যাদেশ নিয়ে আসে যাতে মত প্রকাশের স্বাধীনতা বিঘ্নিত হয়। তবে এটা উল্লেখের বিষয় এটা গণতান্ত্রিকভাবে নির্বাচিত কোনও প্রধানমন্ত্রীর সিদ্ধান্ত ছিল না। 

মাননীয় অধ্যক্ষ মহোদয়, 
সংবিধান সংশোধনে কংগ্রেস দল নানাবিধ চেষ্টার কোনও কসুর করেনি। নিজেদের রাজনৈতিক স্বার্থসিদ্ধি করতে সংবিধানকে তারা সেইপথে চালিত করেছে। ছদশকে ৭৫ বার সংবিধান সংশোধন করেছে তারা। দেশের প্রথম প্রধানমন্ত্রী সংবিদানের অপব্যবহারে এই বীজ বপন করেছিল যা পরবর্তীকালে অন্য প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধীও করেছিলেন। ১৯৭১ সালে সংবিধান সংশোধনের মাধ্যমে সুপ্রীম কোর্টের সিদ্ধান্তকে বাতিল করে দেওয়া হয়েছিল। এতে বিচার ব্যবস্থার ডানা ভেঙে দেওয়া হয়েছিল। ১৯৭১-এ প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধী এই ঘটনা ঘটিয়েছিলেন। দেশের নিরাপরাধ মানুষদের ওপর পুলিশ দিয়ে বর্বরোচিত অত্যাচার করা হয়েছিল। সংবিধানের মূল ভাবাদর্শকে তারা এককথায় ছিন্নভিন্ন করে দিয়েছিল। 

মাননীয় অধ্যক্ষ মহোদয়, 
সংবিধানকে অমর্যাদা করার এই ব্যবস্থা রাজীব গান্ধীর সময়েও থামেনি, তার সময়কালে সংবিধানে আরও একবার আঘাত আসে। শাহাবানু মামলায় সুপ্রীম কোর্টের রায়কে অমর্যাদা করা হয়। প্রবীণ মহিলার ন্যায্য অধিকার সুপ্রীম কোর্টের রায়ে প্রতিষ্ঠিত হলেও রাজীব গান্ধীর সরকার সাংবিধানিক গুরুত্বকে অমর্যাদা করে ভোটব্যাঙ্কের রাজনীতিকে অগ্রাধিকার দেন। আইন প্রণয়ন করে এই রায়কে নস্যাৎ করে দেওয়া হয়। 

মাননীয় অধ্যক্ষ মহোদয়, 
এই অন্যায় সেখানেই থেমে থাকেনি। পরবর্তী প্রজন্মের নেতৃত্বের ক্ষেত্রেও তা স্পষ্ট প্রতিফলিত হয়। মনোমোহন সিং জী তার বইয়ে লিখেছেন, দলের সভাপতির মতকে আমায় গ্রহণ করতে হয়েছে। কারণ, সরকার দলের প্রতি ন্যায়নিষ্ঠ। পরবর্তীকালেও আমরা দেখেছি, মন্ত্রিসভার গৃহীত কোনও প্রস্তাবকে সাংবাদিকদের সামনে ঔদ্ধত্যের বশে কেউ ছিঁড়ে ফেলেছে। এটাও সংবিধানের অমর্যাদার সামিল। কেউ যদি মন্ত্রিসভার কোনও সিদ্ধান্তকে এইরকমভাবে বাতিল করে দিতে পারেন তাহলে ব্যবস্থা কীভাবে চলছিল তা সহজেই অনুমেয়। 

মাননীয় অধ্যক্ষ মহোদয়, 
কংগ্রেস দল বারংবার সংবিধানের অমর্যাদা করেছে। সংবিধানের ৩৭০ নম্বর ধারা সকলের কাছে পরিচিত হলেও ৩৫এ ধারাটি সম্বন্ধে সকলে সেভাবে পরিচিত নয়। সংসদে তা কোনওরকমভাবে পেশ না করেও দেশের ওপর চাপিয়ে দেওয়া হয়েছে। এই ধারা বলে সংসদীয় অনুমোদন ছাড়াই রাষ্ট্রপতির জারি করা এক আদেশ মোতাবেক ধারা ৩৫-এ বলবত করা হয়। এই ধারা যদি বলবত না করা হত তাহলে জম্মু-কাশ্মীরের পরিস্থিতি এতটা খারাপ হতো না। 

মাননীয় অধ্যক্ষ মহোদয়, 
বাবা সাহেব আম্বেদকরের প্রতি আজ আমরা সকলে শ্রদ্ধাজ্ঞাপন করছি, আমাদের মনে তাদের বিশেষ জায়গা রয়েছে। তার অবদান ছাড়া আমাদের এই অগ্রগতি সম্ভত হতো না। আম্বেদকরকে নিয়ে এই তিক্ততার বাতাবরণ আমি আর গভীর করতে চাইছি না। অটলজীর শাসনকালে বাবা সাহেব আম্বেদকরের সম্মানে একটি স্মৃতিশৌধ স্থাপনের সিদ্ধান্ত হয়েছিল। দুর্ভাগ্যবশত ইউপিএ শাসনকালের ১০ বছরে সেই উদ্যোগ এগোয়নি। আমরা আলিপুর রোডে বাবা সাহেব আম্বেদকার স্মারক নির্মাণের কাজ সম্পন্ন করেছি। 
   
মাননীয় অধ্যক্ষ মহোদয়, 
২০১৫ সালে আমাদের সরকার শাসন ক্ষমতায় আসার পর জনপথের সামনে আম্বেদকর ইন্টারন্যাশনাল সেন্টার স্থাপনের প্রস্তাবকে আমরা বাস্তবায়িত করেছি। অথচ এই প্রস্তাব নেওয়া হয়েছিল চন্দ্রশেখর-এর শাসন ক্ষমতায় থাকাকালীন। আম্বেদকরকে ভারত রত্ন দেওয়ার সিদ্ধান্তও কংগ্রেস শাসনক্ষমতা থেকে সরে যাওয়ার পরেই বাস্তবায়িত হয়েছে। 

মাননীয় অধ্যক্ষ মহোদয়, 
সমাজে অবহেলিত সম্প্রদায়ের উন্নয়ন কল্পে বাবা সাহেব আম্বেদকরের দৃষ্টিভঙ্গি কার্যকর করার ক্ষেত্রে নানা বাধা এসেছে। তিনি বিশ্বাস করতেন দেশের সর্বাত্মক বিকাশের ক্ষেত্রে কোনও সম্প্রদায় বা এলাকা পিছিয়ে থাকলে চলবে না। এদিকে তাকিয়েই সংরক্ষণ ব্যবস্থার প্রবর্তন করেন তিনি। যদিও ভোটব্যাঙ্কের রাজনীতি এর মূল ভাবধারাকে লঘু করে। রাজনীতি নির্ভর স্বজন-পোষণ করতে গিয়ে তফশিলি জাতি আদিবাসী এবং অনগ্রসর সম্প্রদায়ের ক্ষতি করা হয়। মন্ডল কমিশনের রিপোর্ট যা এই বৈষম্যকে নিরসন করতে চেয়েছিল। দশকের পর দশক ধরে তার রূপায়িত হয়নি। কংগ্রেস ক্ষমতা থেকে সরার পরেই অন্য অনগ্রসর সম্প্রদায় সংরক্ষণের মর্যাদা পায়। 

মাননীয় অধ্যক্ষ মহোদয়, 
কংগ্রেস দল ক্ষমতায় থাকার লিপ্সায় এবং ভোটব্যাঙ্কের রাজনীতি করতে গিয়ে ধর্মের ভিত্তিতে সংরক্ষণ চালু করে যা সংবিধানের মূল স্পৃহার বিরুদ্ধে। আমি এপ্রসঙ্গে অভিন্ন দেওয়ানি বিধি প্রসঙ্গ নিয়ে আলোচনা করতে চাই। সংবিধান সভার তা নজরে পড়েনি তা নয়। এনিয়ে বিস্তারিত আলোচনাও হয়েছিল। প্রবল বিতর্কের পরে সিদ্ধান্ত হয়েছিল পরবর্তীকালে যে সরকার ক্ষমতায় আসবে তারা এব্যাপারে সিদ্ধান্ত নেবে। 

মাননীয় অধ্যক্ষ মহোদয়, 
সংবিধানের বিষয়টি কংগ্রেস দলের মুখে মানায় না। তারা নিজেদের অভ্যন্তরীণ সংবিধানকেই মর্যাদা দেয় না। অধিকার তন্ত্র এবং রাজশাসন তাদের মর্জায় রয়েছে। মোট ১২টি প্রাদেশিক কংগ্রেস কমিটি সর্দার প্যাটেলকে প্রধানমন্ত্রী হওয়ার কথা বলেছিলেন। একটি কমিটিও নেহেরুকে সমর্থন করেনি। গণতন্ত্রের প্রতি নিষ্ঠার অভাবেই নিজেদের দলীয় সংবিধানকে তারা অমর্যাদা করেছে এবং সর্দার প্যাটেলকে দূরে ঠেলে দেওয়া হয়েছে। যে দল নিজেদের সংবিধানকেই তুলে ধরতে পারে না তারা দেশের সংবিধানের প্রতি মর্যাদা দেখাবে কিভাবে। 

মাননীয় অধ্যক্ষ মহোদয়, 
২০১৪ সালে দেশসেবার দায়িত্বভার অর্পিত হয় এনডিএ-র ওপরে। বিগত ১০ বছরে আমরাও সংবিধান সংশোধন করেছি। কিন্তু তা করা হয়েছে দেশের ঐক্যের স্বার্থে। ওবিসি কমিশনকে সাংবিধানিক মর্যাদা দেওয়া হয়েছে। আমরা সংবিধান সংশোধন করেছি মহিলাদের ক্ষমতায়নের দিকে তাকিয়ে। মহিলাদের ক্ষমতায়নকে যে দল ৪০ বছর ধরে আটকে রেখেছিল তারাই আজ তাদের অনুরূপ ভূমিকায় অবতীর্ণ। এতে তারা কেবলমাত্র মহিলাদেরই অমর্যাদা করছে তা নয়, তাদের পথপ্রদর্শকদেরও অমর্যাদা করছে। 

মাননীয় অধ্যক্ষ মহোদয়, 
সমস্ত ভারত জুড়ে সংবিধান যাতে অনুরূপভাবে কার্যকরী হতে পারে সেদিকে তাকিয়ে আমরা ৩৭০ ধারার বিলোপ ঘটিয়েছি। সুপ্রীমকোর্টও এই সিদ্ধান্তকে স্বীকৃতি জানিয়েছি।   
    
মাননীয় অধ্যক্ষ মহোদয়, 
ভারতীয় গণতন্ত্রের গরিমা রক্ষায় এবং সাংবিধানিক দায়বদ্ধতা পূরণে এটা কি আমাদের উচিত নয় যে বংশ পরম্পরায় রাজনীতির ঘেড়াটোপ থেকে ভারতীয় সংবিধানকে মুক্ত করা, পরিবার কেন্দ্রিক রাজনীতি কেবল একটি পরিবারকে ঘিরেই আবর্তিত হচ্ছে, প্রতিভাবান যুব সম্প্রদায়কে উৎসাহিত করতে প্রত্যেক রাজনৈতিক দলের উচিত রাজনীতির মঞ্চে তাদেরকে আমন্ত্রণ জানানো। লালকেল্লার প্রাকার থেকে আমি বারংবার একথা বলেছি। আমার লক্ষ্য হল, এক লক্ষ যুবককে রাজনীতির আঙিনায় নিয়ে আসা। এমন যুব সম্প্রদায় যাদের কোনও পারিবারিক রাজনৈতিক সম্পর্ক নেই। আমরা সংবিধানের ৭৫ বছর উদযাপনে আসুন এই লক্ষ্যে অবতীর্ণ হই। 

মাননীয় অধ্যক্ষ মহোদয়, 
আমাদের ঐতিহ্য নিহিত রয়েছে আমাদের ধর্মে, আমাদের দায়িত্ববোধ ও কর্তব্যে, মহাত্মা গান্ধী স্বয়ং একথা বলেছিলেন। আমরা যদি আমাদের মৌলিক দায়িত্ব পালনে সকলে একনিষ্ঠ হতে পারি তাহলে কোনওকিছুই উন্নত ভারত গড়ার পথে বাধা হবে না। 

মাননীয় অধ্যক্ষ মহোদয়, 
সংবিধানের প্রতি ন্যায়নিষ্ঠ থেকেই ভবিষ্যতে ভারতের জন্য আমি ১১টি প্রস্তাব এই মহতি সভায় উথ্থাপন করছি। 
১) প্রথম প্রস্তাব হল, নাগরিক বা সরকার তার দায়িত্ব পালন করছে কিনা, 
২) প্রত্যেক এলাকা ও সম্প্রদায় সবকা সাথ সবকা বিকাশ উন্নয়নের ভাবধারায় উপকৃত কিনা।
৩) দুর্নীতির প্রতি কোনওরকম সহিষ্ণুতা দেখানো চলবে না, দুর্নীতিগ্রস্থ মানুষেরও সমাজে স্থান নেই। 
৪) দেশের নাগরিকদের আইনের প্রতি, ঐতিহ্যের প্রতি শ্রদ্ধাশীল হতে হবে। 
৫) দাসত্বের মনোভাব কাটিয়ে ওঠে আমাদের ঐতিহ্যকে নিয়ে আমাদের গর্ব করতে হবে। 
৬) বংশানুক্রমিক শাসন থেকে দেশের রাজনীতিকে মুক্ত করতে হবে। 
৭) সংবিধানের প্রতি শ্রদ্ধাশীল হতে হবে, তাকে কোনওভাবেই রাজনৈতিক স্বার্থ চরিতার্থ করার হাতিয়ার করা যাবে না। 
৮) সংবিধানের ভাবাদর্শকে তুলে ধরে সংরক্ষণের সুবিধা ন্যায্য শ্রেণীকে দিতে হবে। ধর্মের ভিত্তিতে সংরক্ষণের চেষ্টাকে বন্ধ করতে হবে। 
৯) মহিলাচালিত উন্নয়নে ভারতকে বিশ্বের দৃষ্টান্ত হয়ে উঠতে হবে। 
১০) রাজ্যগুলির উন্নয়নের মধ্যে দিয়ে দেশের উন্নয়ন সাধিত হবে, অগ্রগতির পথে এটাই হবে আমাদের মন্ত্র।
১১) এক ভারত শ্রেষ্ঠ ভারতের লক্ষ্যকে সর্বোচ্চ মর্যাদা দিতে হবে। 
    
মাননীয় অধ্যক্ষ মহোদয়,
দেশের ১৪০ কোটি মানুষের শক্তির প্রতি আমি শ্রদ্ধাশীল। যে শক্তির অন্তর্গত যুবশক্তি এবং নারীশক্তি। এই কারণবশত ২০৪৭-এ দেশ যখন স্বাধীনতার ১০০ বছর উদযাপন করবে আমরা বিকশিত ভারতের উদযাপন করব। এই সংকল্প নিয়েই আমরা এগিয়ে যাবো। আরও একবার সকলকে এই পবিত্র লক্ষ্যে এগিয়ে যেতে সকলকে আমি আমার শুভেচ্ছা জানাই মাননীয় অধ্যক্ষ মহোদয়     আমার বলার সময় বাড়িয়ে দেওয়ার জন্য তাঁকেও আমি ধন্যবাদ জানাচ্ছি। 

আপনাদের সকলকে অনেক অনেক ধন্যবাদ।। 

 

SSS/ AB /AG

 


(Release ID: 2177400) Visitor Counter : 6