প্রধানমন্ত্রীরদপ্তর
নতুন দিল্লিতে জ্ঞান ভারতম নিয়ে আন্তর্জাতিক সম্মেলনে ভাষণ প্রধানমন্ত্রীর
Posted On:
12 SEP 2025 8:11PM by PIB Kolkata
নয়াদিল্লি, ১২ সেপ্টেম্বর, ২০২৫
নতুন দিল্লির বিজ্ঞান ভবনে আজ জ্ঞান ভারতম নিয়ে এক আন্তর্জাতিক সম্মেলনে ভাষণ দেন প্রধানমন্ত্রী শ্রী নরেন্দ্র মোদী। তাঁর ভাষণে শ্রী মোদী ভারতের সোনালি অতীতের পুনর্জাগরণের কথা উল্লেখ করেন। এ প্রসঙ্গে কয়েকদিন আগে ঘোষণা করা জ্ঞান ভারতম মিশনের কথাও উল্লেখ করেন তিনি।
বিজ্ঞানের ক্ষেত্রে ভারতের অতীত ঐতিহ্য এবং পরম্পরার কথা তুলে ধরে শ্রী মোদী বলেন, জ্ঞান ভারতমের মাধ্যমে এইসব পরম্পরাকে ডিজিটালে রূপান্তরিত করা হচ্ছে। প্রধানমন্ত্রী বলেন, ভারতের মানুষ বড় বড় গ্রন্থাগার গড়ে তুলেছিলেন, যেগুলি এক সময় আন্তর্জাতিক জ্ঞানের কেন্দ্র হয়ে উঠেছিল। ইতিহাসের এক নিষ্ঠুর অধ্যায়ে ভারতের লক্ষ লক্ষ পাণ্ডুলিপি ধ্বংস হয়ে যাওয়ার কথা উল্লেখ করে শ্রী মোদী বলেন, এইসব পাণ্ডুলিপি হল জ্ঞান, বিজ্ঞান, পঠনপাঠন এবং শিক্ষার প্রতি আমাদের পূর্বপুরুষদের গভীর নিষ্ঠার সাক্ষ্য। তিনি বলেন, “ভারতের জ্ঞান পরম্পরা আজও সমৃদ্ধ রয়েছে। কারণ সংরক্ষণ, উদ্ভাবন, সংযোজন এবং অভিযোজন – এই চারটি মূল স্তম্ভের ওপর ভিত্তি করে তা গড়ে উঠেছিল।” এ প্রসঙ্গে তিনি বেদের ভূমিকার কথা উল্লেখ করেন।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ভারতের নিজস্ব সাংস্কৃতিক সত্তা রয়েছে। তিনি আরও বলেন, ভারতের ইতিহাস শুধুমাত্র রাজতান্ত্রিক জয় এবং পরাজয় নয়, সময়ের সঙ্গে সঙ্গে অনেক কিছু বদলে গেলেও, হিমালয় থেকে ভারত মহাসাগর পর্যন্ত ভারত একই রয়ে গিয়েছে। শ্রী মোদী বলেন, ভারত হল একটি জীবন্ত ধারা, যা ভাবনাচিন্তা, আদর্শ এবং মূল্যবোধের মাধ্যমে গড়ে উঠেছে। কৌটিল্যের অর্থশাস্ত্র ভারতের রাষ্ট্রবিজ্ঞান এবং অর্থনীতিকে গভীরভাবে বুঝতে সাহায্য করেছে বলে মন্তব্য করেন তিনি। প্রধানমন্ত্রী বলেন, ভারতের পাণ্ডুলিপিগুলিতে মানুষের গোটা উন্নয়ন যাত্রার পদচিহ্ন নিহিত রয়েছে। এইসব পাণ্ডুলিপিতে চিকিৎসাশাস্ত্র, শিল্পকলা, জ্যোতির্বিজ্ঞান, স্থাপত্য সহ সব কিছুই স্থান পেয়েছে।
তিনি ভারতের হাতে থাকা অসংখ্য পাণ্ডুলিপির কথা উল্লেখ করে এগুলিকে জাতীয় গর্ব হিসেবে চিহ্নিত করেন। এ প্রসঙ্গে প্রধানমন্ত্রী তাঁর সাম্প্রতিক কুয়েত সফরের কথা উল্লেখ করে বলেন, সেখানে এক ব্যক্তির সঙ্গে তাঁর সাক্ষাৎ হয়েছিল, যাঁর কাছে রয়েছে ভারতের ঐতিহাসিক নথিপত্রের বিস্তৃত সংগ্রহ। এগুলিতে প্রাচীনকালে ভারতের সামুদ্রিক বাণিজ্য পথের উল্লেখ রয়েছে। এই ধরনের পাণ্ডুলিপিগুলিকে অমূল্য সম্পদ হিসেবে চিহ্নিত করে সেগুলির সংরক্ষণের ওপর জোর দেন প্রধানমন্ত্রী। শ্রী মোদী বলেন, “ভারত আজ গোটা বিশ্বের আস্থা অর্জন করেছে। আজ বিশ্বের বিভিন্ন দেশ সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যকে রক্ষা এবং সম্মান প্রদর্শনের ক্ষেত্রে ভারতকে যথার্থ জায়গা হিসেবে মনে করে।”
তিনি বলেন, অতীতে চুরি যাওয়া ভারতীয় মূর্তিগুলির কয়েকটিকে দেশে ফেরানো সম্ভব হয়েছে। কিন্তু এখন শয়ে শয়ে প্রাচীন মূর্তি প্রত্যর্পণ করা হচ্ছে।
কোনওরকম সহানুভূতি নয়, ভারত এগুলিকে মর্যাদার সঙ্গে সংরক্ষিত করতে পারবে, এই আস্থা থেকেই এই প্রত্যর্পণ করা হচ্ছে। শ্রী মোদী বলেন, ভারত গর্বের সঙ্গে বিশ্বের সামনে এই ঐতিহ্যকে তুলে ধরার প্রস্তুতি নিচ্ছে। এই মহান উদ্যোগে জ্ঞান ভারতম মিশন এক গুরুত্বপূর্ণ অংশ হয়ে উঠতে চলেছে বলে মন্তব্য করেন তিনি। এ প্রসঙ্গে তিনি কাশী নগরী প্রচারিণী সভা, কলকাতার এশিয়াটিক সোসাইটি, উদয়পুরের ‘ধারোহর’, গুজরাটের কোবার আচার্য শ্রী কৌলাশসুরি জ্ঞান মন্দির, হরিদ্বারের পতঞ্জলি, পুণের ভান্ডারকার ওরিয়েন্টাল রিসার্চ ইনস্টিটিউট এবং তাঞ্জাভুরের সরস্বতী মহল লাইব্রেরির কথা উল্লেখ করেন। তিনি জানান, এই ধরনের শত শত প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে এ পর্যন্ত ১০ লক্ষের বেশি পাণ্ডুলিপিকে ডিজিটালে রূপান্তরিত করা হয়েছে।
শ্রী মোদী বলেন, বহু নাগরিক তাঁদের পরিবারের ঐতিহ্য দেশের জন্য তুলে দিতে এগিয়ে এসেছেন এবং এ ধরনের নাগরিক ও প্রতিষ্ঠানের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন প্রধানমন্ত্রী। তিনি বলেন, চিনা পরিব্রাজক হিউয়েন সাঙ যখন ভারতে এসেছিলেন, তখন তিনি ৬০০-র বেশি পাণ্ডুলিপি সঙ্গে করে নিয়ে গিয়েছিলেন। শ্রী মোদী আরও বলেন, বহু ভারতীয় পাণ্ডুলিপি চিন হয়ে জাপানে পৌঁছে গিয়েছিল। জি-২০ সম্মেলনের সময় সাংস্কৃতিক মত বিনিময়ের কথা উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, শত শত বছরের ঐতিহ্যের অধিকারী বিভিন্ন দেশ ভারতের সঙ্গে সক্রিয়ভাবে হাত মিলিয়েছে। শ্রী মোদী থাইল্যান্ড ও ভিয়েতনামের বিশ্ববিদ্যালয়ের সঙ্গে মউ স্বাক্ষরের কথা উল্লেখ করে বলেন, এই দেশগুলির স্কলারদের প্রাচীন পাণ্ডুলিপিকে ডিজিটালে রূপান্তরিত করার প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়েছে। এই উদ্যোগের ফলে পালি, লান্না ও ছাম ভাষায় লেখা বেশ কিছু পাণ্ডুলিপিকে ডিজিটালে পরিণত করা সম্ভব হয়েছে।
জ্ঞান ভারতম মিশন গবেষণা ও উদ্ভাবনের ক্ষেত্রে এক নতুন জগৎ খুলে দেবে বলে মন্তব্য করেন প্রধানমন্ত্রী। শ্রী মোদী বলেন, আন্তর্জাতিক সংস্কৃতি এবং সৃজনশীল শিল্পের আনুমানিক মূল্য হল ২.৫ ট্রিলিয়ন ডলার। তিনি বলেন, পাণ্ডুলিপিগুলির ডিজিটাল সংস্করণ এই শিল্পে এক উন্নত শৃঙ্খল গড়ে তুলবে। প্রযুক্তি-চালিত উদ্ভাবনকে এক নতুন দিশা দেখাতে এই পাণ্ডুলিপিগুলি এক বিশাল তথ্যভাণ্ডার হিসেবে কাজ করবে। সেইসঙ্গে, প্রযুক্তির ক্ষেত্রে তরুণদের জন্য নতুন সম্ভাবনা সৃষ্টি করবে। পাশাপাশি, গবেষণা ক্ষেত্রেও নতুন দিগন্ত খুলে যাবে বলে মন্তব্য করেন তিনি।
ডিজিটালে রূপান্তরিত এইসব পাণ্ডুলিপি যথার্থভাবে চর্চা করার জন্য কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার মতো উন্নত প্রযুক্তির ব্যবহারের ওপর জোর দিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, এর মাধ্যমে প্রাচীন পাণ্ডুলিপিগুলিকে আরও গভীরভাবে জানা সম্ভব হবে।
জ্ঞান ভারতম মিশনে সামিল হওয়া এবং সক্রিয়ভাবে অংশগ্রহণের জন্য দেশের তরুণদের কাছে আবেদন জানিয়ে শ্রী মোদী বলেন, এর ফলে প্রযুক্তির মাধ্যমে অতীতকে অন্বেষণ করার কাজ আরও ত্বরান্বিত হবে। এই লক্ষ্যে নতুন উদ্যোগ গ্রহণের জন্য দেশের বিশ্ববিদ্যালয় এবং প্রতিষ্ঠানগুলির কাছে আবেদন জানান প্রধানমন্ত্রী। স্বদেশীর চেতনা এবং আত্মনির্ভর ভারতের অঙ্গীকার নিয়ে গোটা দেশের এগিয়ে যাওয়ার কথা উল্লেখ করে শ্রী মোদী বলেন, এই মিশন হল সেই জাতীয় চেতনার একটি বর্ধিত অংশ। জ্ঞান ভারতম মিশন এক নতুন অধ্যায়ের সূচনা করবে বলে আশা প্রকাশ করেন প্রধানমন্ত্রী।
অনুষ্ঠানে কেন্দ্রীয় মন্ত্রী শ্রী গজেন্দ্র সিং শেখাওয়াত, শ্রী রাও ইন্দরজিৎ সিং সহ বিশিষ্ট ব্যক্তিবর্গ উপস্থিত ছিলেন।
SC/MP/DM
(Release ID: 2166433)
Read this release in:
Odia
,
Telugu
,
English
,
Urdu
,
Marathi
,
Hindi
,
Manipuri
,
Assamese
,
Punjabi
,
Gujarati
,
Tamil
,
Kannada
,
Malayalam