প্রধানমন্ত্রীরদপ্তর
azadi ka amrit mahotsav

নতুন দিল্লির ভারত মণ্ডপমে বিকশিত ভারত যুব নেতা সংলাপ ২০২৫-এ প্রধানমন্ত্রীর ভাষণ

Posted On: 12 JAN 2025 7:08PM by PIB Kolkata

নয়াদিল্লি, ১২ জানুয়ারী ২০২৫

 

ভারত মাতা কি জয়!

ভারত মাতা কি জয়!

ভারত মাতা কি জয়!

কেন্দ্রীয় মন্ত্রিসভায় আমার সহকর্মী শ্রী মনসুখ মাণ্ডবিয়া জি, ধর্মেন্দ্র প্রধান জি, জয়ন্ত চৌধুরী জি, রক্ষা খাডসে জি, সংসদ সদস্যবৃন্দ, অন্যান্য গণ্যমান্য ব্যক্তিবর্গ এবং দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে এখানে উপস্থিত আমার যুব বন্ধুদের প্রতি আমার প্রণাম!

আজ ভারতের যুবশক্তির উদ্দীপনায় এই ভারত মণ্ডপমও শক্তিতে ভরপুর হয়ে আলোকোজ্জ্বল হয়ে উঠেছে। আজ সমগ্র দেশ স্বামী বিবেকানন্দকে স্মরণ করছে এবং তাঁকে শ্রদ্ধাঞ্জলি জানাচ্ছে। দেশের যুবসমাজের প্রতি স্বামী বিবেকানন্দের ছিল অগাধ বিশ্বাস। স্বামীজি বলেছিলেন – নতুন প্রজন্মের ওপর আমার আস্থা ও বিশ্বাস আছে। তিনি বলেছিলেন, আমার কর্মীরা নতুন প্রজন্ম থেকে আসবে, তারা সিংহের মতো প্রতিটি সমস্যার সমাধান খুঁজে নেবে।

আর বিবেকানন্দের যেমন তোমাদের ওপরে বিশ্বাস ছিল, আমিও তেমনই বিশ্বাস রাখি স্বামীজির ওপর, তাঁর প্রতিটি কথার ওপর। ভারতের যুবসমাজের জন্য তিনি যা ভেবেছিলেন এবং যা বলেছেন, তার ওপর আমার অগাধ বিশ্বাস আছে। সত্যিই, যদি আজ স্বামী বিবেকানন্দ জীবিত থাকতেন, তবে তিনি একবিংশ শতাব্দীর যুবসমাজের এই জাগ্রত শক্তি দেখে আপ্লুত হতেন, তোমাদের সক্রিয় প্রচেষ্টা দেখে তিনি ভারতকে নতুন আত্মবিশ্বাস, নতুন শক্তিতে ভরিয়ে তুলতেন এবং নতুন স্বপ্নের বীজ বপন করতেন।

বন্ধুগণ,

সময়ের চক্রটা দেখুন – এই ভারত মণ্ডপমেই পৃথিবীর মহান ব্যক্তিরা একত্রিত হয়েছিলেন এবং আলোচনা করেছিলেন যে পৃথিবীর ভবিষ্যৎ কেমন হওয়া উচিত। আমার সৌভাগ্য যে সেই একই ভারত মণ্ডপমে আমার দেশের যুবসমাজ আগামী ২৫ বছরে ভারতের ভবিষ্যৎ কেমন হবে তার একটি রূপরেখা তৈরি করছে।

বন্ধুগণ,

কয়েক মাস আগে আমার বাসভবনে আমি কয়েকজন যুব ক্রীড়াবিদের সঙ্গে দেখা করেছিলাম এবং তাদের সঙ্গে আড্ডা দিচ্ছিলাম। তখন এক জন ক্রীড়াবিদ দাঁড়িয়ে বললেন— “মোদীজি, হয়তো আপনি বিশ্বের জন্য একজন ভালো প্রধানমন্ত্রী, বিশ্ব আপনাকে পিএম (PM) বলে জানে, কিন্তু আমাদের হৃদয়ে আপনি আমাদের পরম মিত্র (PM)।”

বন্ধুগণ,

এই অনুভূতি আমার দেশের প্রতিটি যুবক-যুবতীর ক্ষেত্রে সমানভাবে প্রযোজ্য। আপনাদের সবার সঙ্গেও আমার বন্ধুত্বের বন্ধন রয়েছে। আর বন্ধুত্বের সবচেয়ে শক্তিশালী বন্ধন হলো বিশ্বাস। আমি আপনাদের ওপর গভীর আস্থা রাখি। এই বিশ্বাসই আমাকে মাই ভারত গড়ে তুলতে অনুপ্রাণিত করেছে। এই বিশ্বাসের ভিত্তিতেই বিকশিত ভারত যুব নেতা সংলাপ-এর এই মঞ্চ গড়ে উঠেছে। আমার বিশ্বাস হলো— ভারতের যুবশক্তিই ভারতকে খুব শিগগিরই উন্নত দেশের মর্যাদায় প্রতিষ্ঠিত করবে।

বন্ধুগণ,

যাঁরা শুধু সংখ্যা গোনেন তাঁরা হয়তো ভাবেন এই লক্ষ্য অর্জন খুবই কঠিন। কিন্তু আমার আত্মা বলে, আপনাদের আত্মবিশ্বাসও বলে, যে লক্ষ্য অবশ্যই বড়, কিন্তু তা অসম্ভব নয়। কোটি কোটি যুবকের বাহু যখন উন্নয়নের রথের চাকা সামনে এগিয়ে নিয়ে যাবে, তখন আমরা নিঃসন্দেহে আমাদের লক্ষ্য অর্জনে সফল হব।

বন্ধুগণ,

কথায় আছে— ইতিহাস আমাদের শিক্ষা দেয় এবং একই সঙ্গে আমাদের অনুপ্রাণিতও করে। পৃথিবীতে এমন বহু উদাহরণ আছে, যখন একটি দেশ, একটি সমাজ বা একটি গোষ্ঠী বড় বড় স্বপ্ন এবং দৃঢ় সংকল্প নিয়ে একটি নির্দিষ্ট পথে এগিয়ে চলা শুরু করেছিল। তারা একসঙ্গে পথ চলা শুরু করেছিল এবং কখনোই লক্ষ্যকে বিস্মৃত না হয়ে সামনে এগিয়ে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছিল। ইতিহাস সাক্ষী যে, তারা তাদের স্বপ্নকে বাস্তবায়িত করার জন্য সর্বতোভাবে চেষ্টা করেছে এবং শেষ পর্যন্ত তা অর্জন করেছে।

আপনাদের অনেকেই হয়তো জানেন, ১৯৩০ সালে— অর্থাৎ প্রায় একশো বছর আগে— আমেরিকা এক ভয়াবহ অর্থনৈতিক সংকটে নিমজ্জিত হয়েছিল। কিন্তু পরবর্তীতে আমেরিকার জনগণ দৃঢ় সংকল্প নিল যে, তাদের এই সংকট থেকে বেরিয়ে আসতেই হবে এবং দ্রুত গতিতে এগিয়ে যেতে হবে। তারা নতুন পথ বেছে নিয়েছিল, এবং শুধু যে আমেরিকা সেই সংকট থেকে বেরিয়ে এল তাই নয়, বরং একশো বছরেরও কম সময়ে উন্নতির গতি বহুগুণ বাড়িয়ে তুলল।

একসময় সিঙ্গাপুর ছিল একদম পিছিয়ে পড়া একটি জায়গা, প্রায় একটি ছোট জেলেদের গ্রাম। জীবনের মৌলিক প্রয়োজনীয় সুবিধাগুলিও সেখানে পাওয়া যেত না। কিন্তু সিঙ্গাপুর সঠিক নেতৃত্ব পেল, এবং জনগণ মিলিতভাবে সিদ্ধান্ত নিল যে, তারা তাদের দেশকে একটি উন্নত দেশে পরিণত করবে। তারা শৃঙ্খলাবদ্ধ জীবনধারা গ্রহণ করল এবং সামষ্টিকতার মূল্যবোধকে অনুসরণ করল। আর কয়েক বছরের মধ্যেই সিঙ্গাপুর বিশ্বমানের আর্থিক ও বাণিজ্যিক কেন্দ্র হিসেবে আত্মপ্রকাশ করল।

এমন উদাহরণ পৃথিবীর বিভিন্ন প্রান্তে আছে। আমাদের দেশ ভারতেও বহু উদাহরণ রয়েছে। ভারতীয় জনগণ যখন স্বাধীনতার সংকল্প গ্রহণ করেছিল, তখন ব্রিটিশ সাম্রাজ্যের শক্তি বা ক্ষমতার কোনো অভাব ছিল না। কিন্তু সমগ্র দেশ একত্রিত হল, স্বাধীনতার স্বপ্ন জেগে উঠল, স্বাধীনতা অর্জনের জন্য সংগ্রাম শুরু হল, প্রাণ উৎসর্গের জন্য লাখো মানুষ এগিয়ে এল— আর শেষ পর্যন্ত ভারত স্বাধীনতা অর্জন করল।

বন্ধুগণ,

স্বাধীনতার পর দেশে এক সময় খাদ্য সংকট দেখা দিয়েছিল। আমাদের দেশের কৃষকরা এক সংকল্প নিয়েছিল এবং ভারতকে খাদ্য সংকট থেকে মুক্ত করেছিল। যখন আপনারা জন্মগ্রহণও করেননি, তখন পিএল–৪৮০ নামের গম আসত, আর সেই গমের চালান আসা বড় একটা ঘটনা বলে গণ্য হত। কিন্তু সেই সংকট থেকেও আমরা বেরিয়ে এসেছি। বড় স্বপ্ন দেখা, বড় সংকল্প নেওয়া এবং নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে তা পূরন করা— এটি অসম্ভব নয়।

যে কোনো দেশের অগ্রগতির জন্য পবড় লক্ষ্য স্থির করতেই হবে। যারা ভাবে— "ওহে বন্ধু, থাক না যেমন আছে, চলে যাক এভাবেই, চিন্তার কি আছে, মানুষ না খেয়ে মরছে না তো, চলুক এভাবেই"— তারা শুধু চারপাশে ঘোরাফেরা করে বেড়ায়, কিন্তু জীবন্ত দেহ হলেও তারা প্রায় মৃতদেহের মতো। লক্ষ্য ছাড়া জীবন কখনোই বাঁচতে পারে না, বন্ধু। অনেক সময় মনে হয় যদি জীবনের কোনো অমৃত থাকে, তবে সেটি হল লক্ষ্য, যা জীবনের শক্তি যোগায়। যখন আমাদের সামনে একটি বড় লক্ষ্য থাকে, তখন আমরা সেই লক্ষ্য পূরণে আমাদের সমস্ত শক্তি নিয়োজিত করি। আজকের ভারতও তাই করছে।

বন্ধুগণ,

গত দশ বছরে আমরা সাফল্যের বহু উদাহরণ প্রত্যক্ষ করেছি। আমরা ভারতীয়রা সংকল্প নিয়েছিলাম যে খোলা জায়গা শৌচমুক্ত হতে হবে। মাত্র ৬০ মাসে ৬০ কোটি মানুষ খোলা জায়গায় শৌচ থেকে মুক্তি পেল। প্রতিটি পরিবারকে ব্যাংক অ্যাকাউন্ট দেওয়া ভারতের লক্ষ্য ছিল। আজ প্রায় প্রতিটি পরিবার ব্যাংকিং সেবার সঙ্গে যুক্ত। গরিব মহিলাদের রান্নাঘর ধোঁয়ামুক্ত করার প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল ভারত। আমরা ১০ কোটিরও বেশি গ্যাস সংযোগ প্রদান করে সেই সংকল্প পূর্ণ করেছি।

আজ ভারত নির্ধারিত সময়ের আগেই বহু ক্ষেত্রে তার লক্ষ্য অর্জন করছে। নিশ্চয়ই আপনাদের মনে আছে করোনা সময়ের কথা। বিশ্বজুড়ে টিকা নিয়ে উদ্বেগ ছিল। বলা হচ্ছিল করোনা ভ্যাকসিন তৈরি করতে বহু বছর লাগবে। কিন্তু ভারতীয় বিজ্ঞানীরা সময়ের আগেই ভ্যাকসিন তৈরি করে দেখিয়ে দিলেন। আগে কিছু বিশেষজ্ঞ বলেছিলেন, ভারতের প্রতিটি মানুষকে টিকা দিতে ৩, ৪ বা ৫ বছরও লাগতে পারে। কিন্তু আমরা বিশ্বের সর্ববৃহৎ টিকাকরণ অভিযান চালিয়ে অতি অল্প সময়ে সবার কাছে টিকা পৌঁছে দিয়েছি। আজ বিশ্ব ভারতের এই সাফল্য দেখছে।

সবুজ শক্তির প্রসঙ্গেও আমরা জি–২০–তে এক বড় প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলাম। ভারতই বিশ্বের প্রথম দেশ, যে প্যারিস চুক্তির প্রতিশ্রুতি পূরণ করেছে, আর সেটিও নির্ধারিত সময়ের কত আগে? ৯ বছর আগে। এখন ভারত ২০৩০ সালের মধ্যে পেট্রোলে ২০ শতাংশ ইথানল মেশানোর লক্ষ্য স্থির করেছে। আমরা ইতিমধ্যেই সেই লক্ষ্য ২০৩০ সালের আগেই অর্জনের পথে, হয়তো খুব শিগগিরই তা বাস্তবায়িত হবে।

ভারতের প্রতিটি সাফল্য, দৃঢ় সংকল্পে অর্জিত প্রতিটি সাফল্যের উদাহরণ আমাদের সকলের জন্য প্রেরণা। এই সাফল্যই আমাদের উন্নত ভারতের লক্ষ্য পূরণের প্রতি আরও অঙ্গীকারবদ্ধ করে, এবং লক্ষ্যপূরণের পথে আমাদের অগ্রগতি আরও দ্রুততর করে।

বন্ধুগণ,

এই উন্নয়নের যাত্রায় আমরা কখনো ভুলে যেতে পারি না যে বড় বড় লক্ষ্য নির্ধারণ করা এবং তা অর্জন করা কেবলমাত্র সরকারের দায়িত্ব নয়; দেশের প্রতিটি নাগরিকের একত্রিত প্রচেষ্টার মাধ্যমেই একটি বৃহৎ লক্ষ্য পূর্ণ করা সম্ভব। আর এর জন্য আমাদের দিক নির্ধারণ করতে হবে। আজ সকাল থেকে আপনাদের উপস্থাপনা দেখছিলাম, মাঝেমধ্যে কথা বলছিলাম— তখনও আমি উল্লেখ করেছি যে এই পুরো প্রক্রিয়ার সঙ্গে লক্ষ লক্ষ মানুষ জড়িত। অর্থাৎ উন্নত ভারতের মালিকানা কেবল মোদীর নয়, এটি আপনাদেরও।

“বিকশিত ভারত যুব নেতা সংলাপ” এই প্রক্রিয়ার এক উজ্জ্বল উদাহরণ। এটি এমন এক উদ্যোগ, যা তরুণ-তরুণীদের নেতৃত্বে পরিচালিত হচ্ছে। বর্তমানে এই কর্মসূচির সঙ্গে যুক্ত তরুণ-তরুণী— আপনারা সকলে উন্নত ভারতের লক্ষ্যকে নিজের লক্ষ্য হিসেবে গ্রহণ করেছেন। এর প্রতিফলন দেখা যায় সদ্য প্রকাশিত রচনা সংকলনেও। আমি যে ১০টি উপস্থাপনা দেখেছি, সেখানেও তার আভাস স্পষ্ট। এই উপস্থাপনাগুলি সত্যিই বিস্ময়কর। আমার দেশের যুবসমাজ কত দ্রুত এগিয়ে যাচ্ছে, তা দেখে আমার হৃদয় গর্বে ভরে ওঠে।

এতে স্পষ্ট বোঝা যায় যে দেশ যে প্রতিবন্ধকতার মুখোমুখি, সে সম্পর্কে আপনাদের ধারণা কতটা গভীর। আপনাদের প্রস্তাবিত সমাধানে বাস্তবতার ছোঁয়া রয়েছে, অভিজ্ঞতার প্রতিফলন রয়েছে, প্রতিটি কথায় রয়েছে মাটির গন্ধ। চার দেয়ালের ঘরে বসে নয়, ভারতের তরুণ-তরুণীরা তাদের চিন্তার দিগন্ত প্রসারিত করেছে আকাশেরও ওপারে। গত রাতে আপনাদের মধ্যে কয়েকজন আমাকে যে ভিডিও পাঠিয়েছিলেন, সেগুলোও আমি দেখেছি। আমি বিভিন্ন বিশেষজ্ঞের মতামত শুনেছি, যাঁদের সঙ্গে আপনারা সরাসরি আলোচনা করেছেন।

ভারতের তরুণদের ভাবনা, যুব নেতৃত্ব সংলাপের প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে আলোচনার পর যে পরামর্শ উঠে এসেছে— সেই পরামর্শগুলো এখন দেশের নীতির অংশ হয়ে উঠবে এবং উন্নত ভারত–এর পথ নির্ধারণ করবে। এর জন্য দেশের তরুণ প্রজন্মকে আমি আন্তরিক অভিনন্দন জানাই।

বন্ধুগণ,

লালকেল্লা থেকে আমি এক লক্ষ নতুন যুবককে রাজনীতিতে নিয়ে আসার কথা বলেছি। আপনাদের দেওয়া পরামর্শ বাস্তবায়নের জন্য রাজনীতিও এক গুরুত্বপূর্ণ মাধ্যম হতে পারে। আমার বিশ্বাস, আপনাদের মধ্যে বহু যুবক-যুবতী রাজনীতিতে সক্রিয়ভাবে অংশগ্রহণ করবে।

বন্ধুগণ,

আজ আপনাদের সঙ্গে আলোচনার সময় আমরা উন্নত ভারতের একটি বৃহৎ চিত্রও দেখতে পেয়েছি। আমরা কেমন ভারত চাই? কেমন ধরনের উন্নত ভারত দেখতে চাই? উন্নত ভারত মানে এমন এক ভারত—যা হবে অর্থনৈতিক, কৌশলগত, সামাজিক ও সাংস্কৃতিকভাবে শক্তিশালী। যেখানে অর্থনীতি যেমন দ্রুত বৃদ্ধি পাবে, তেমনি পরিবেশ বিজ্ঞানও সমৃদ্ধ হবে। যেখানে থাকবে উত্তম শিক্ষার সুযোগ, উন্নত আয়ের সুযোগ এবং বিশ্বের সবচেয়ে বড় দক্ষ যুবশক্তি। এমন এক ভারত, যেখানে যুবক-যুবতীদের স্বপ্নপূরণের জন্য থাকবে উন্মুক্ত পরিসর।

কিন্তু বন্ধুগণ,

শুধু কথা বললেই কি আমরা উন্নত হব? আপনাদের মতে কি তাই সম্ভব? নাকি আমরা ঘরে ফিরে শুধু “উন্নত ভারত, উন্নত ভারত” ধ্বনি তুলব? আমাদের প্রতিটি সিদ্ধান্তের একমাত্র মাপকাঠি হতে হবে— উন্নত ভারত। আমাদের প্রতিটি পদক্ষেপের দিকনির্দেশ হতে হবে— উন্নত ভারত। আমাদের নীতি-নির্ধারণের অন্তর্নিহিত ভাব হতে হবে— উন্নত ভারত। তখন পৃথিবীর কোনো শক্তিই আমাদের উন্নত ভারত গড়ার যাত্রায় বাধা হয়ে দাঁড়াতে পারবে না।

প্রতিটি দেশের ইতিহাসে এমন এক সময় আসে, যখন সে এক কোয়ান্টাম জাম্প দিতে পারে। ভারতের জন্য সেই সুবর্ণ সুযোগ এখন এসেছে। বহু আগেই লালকেল্লা থেকে আমি বলেছিলাম— “এই সময়ই আমাদের সঠিক সময়।” আজ পৃথিবীর বহু বড় দেশে প্রবীণ জনগোষ্ঠীর সংখ্যা দ্রুত বৃদ্ধি পাচ্ছে, অথচ আগামী বহু দশক ধরে ভারত বিশ্বের সর্বকনিষ্ঠ দেশ থাকবে। বড় বড় আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলি বলছে— শুধুমাত্র যুবশক্তিই ভারতের জিডিপিতে বিরাট বৃদ্ধি নিশ্চিত করতে পারে।

আমাদের যুবশক্তির প্রতি দেশের মহান চিন্তাবিদরা যে অপার আস্থা প্রকাশ করেছেন, তার উদাহরণ ইতিহাসওে রয়েছে। মহর্ষি অরবিন্দ বলেছিলেন— ভবিষ্যতের শক্তি আজকের যুবসমাজের হাতে নিহিত। গুরুদেব রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর বলেছিলেন— যুবক-যুবতীদের স্বপ্ন দেখতে হবে এবং সেই স্বপ্ন পূরণে জীবন উৎসর্গ করতে হবে। হোমি জাহাঙ্গীর ভাবা বলেছিলেন— নতুন প্রজন্মকে নতুন নতুন পরীক্ষা-নিরীক্ষা চালিয়ে যেতে হবে, কারণ প্রকৃত উদ্ভাবন কেবল তরুণ শক্তির দ্বারাই সম্ভব।

আজ যদি চারিদিকে তাকাই, দেখি বিশ্বের বহু বৃহৎ কোম্পানি ভারতীয় তরুণ-তরুণীদের হাতেই পরিচালিত হচ্ছে। ভারতীয় যুবসমাজের সম্ভাবনায় গোটা বিশ্ব অভিভূত। আমাদের সামনে রয়েছে ২৫ বছরের এক সুবর্ণ সময়কাল—যা অমৃতকাল। আমি পূর্ণ আত্মবিশ্বাসে বলছি, ভারতের যুবশক্তি অবশ্যই একটি উন্নত ভারতের স্বপ্ন বাস্তবায়িত করবে।

গত ১০ বছরে ভারতের যুবসমাজ দেশকে বিশ্বের শীর্ষ তিনটি স্টার্টআপ শক্তিধর দেশের অন্যতম হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করেছে। গত ১০ বছরে ভারতের যুবক-যুবতীরা দেশকে উৎপাদন ক্ষেত্রে বিরাট উচ্চতায় নিয়ে গেছে। মাত্র ১০ বছরের মধ্যেই তারা বিশ্বমঞ্চে ডিজিটাল ইন্ডিয়া–র পতাকা উড়িয়েছে। একইভাবে, ক্রীড়া ক্ষেত্রেও গত এক দশকে ভারতের যুবসমাজ দেশকে বহু উচ্চতায় পৌঁছে দিয়েছে। যখন আমার দেশের যুবক-যুবতীরা অসম্ভবকে সম্ভব করে তুলতে সক্ষম হয়েছে, তখন উন্নত ভারত গঠনও অবশ্যই সম্ভব হবে।

বন্ধুগণ,

আমাদের সরকারও আজকের যুবসমাজের ক্ষমতা বৃদ্ধির জন্য পূর্ণ উদ্যমে কাজ করছে। আজকের ভারতে প্রতি সপ্তাহে একটি নতুন বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠিত হচ্ছে, প্রতিদিন একটি নতুন আইটিআই গড়ে উঠছে। প্রতি তিন দিনে একটি অটল টিঙ্কারিং ল্যাব চালু হচ্ছে। প্রতিদিন দু’টি নতুন কলেজ প্রতিষ্ঠিত হচ্ছে। বর্তমানে দেশে ২৩টি আইআইটি রয়েছে। মাত্র এক দশকে ট্রিপল আইটির সংখ্যা ৯ থেকে বেড়ে হয়েছে ২৫, আইআইএম-এর সংখ্যা ১৩ থেকে ২১-এ পৌঁছেছে। গত ১০ বছরে এইমস-এর সংখ্যা তিনগুণ বৃদ্ধি পেয়েছে এবং মেডিকেল কলেজের সংখ্যাও প্রায় দ্বিগুণ হয়েছে। আজ আমাদের স্কুল, কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়ের সংখ্যা হোক বা মান—প্রত্যেক স্তরে উৎকৃষ্ট ফলাফল দিচ্ছে। ২০১৪ সাল পর্যন্ত ভারতের মাত্র ৯টি উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠান কিউ. এস. র‍্যাঙ্কিং–এ স্থান পেয়েছিল। আজ সেই সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ৪৬-এ। ভারতের শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলির এই ক্রমবর্ধমান শক্তিই এক উন্নত ভারতের প্রধান ভিত্তি।

বন্ধুগণ,

অনেকে হয়তো মনে করতে পারেন যে ২০৪৭ সাল এখনো অনেক দূরে, তাই এখন থেকেই কেন কাজ শুরু করতে হবে? কিন্তু আমাদের সেই মানসিকতা থেকে বেরিয়ে আসতে হবে। উন্নত ভারতের যাত্রায় আমাদের প্রতিদিন নতুন নতুন লক্ষ্য নির্ধারণ করতে হবে এবং তা অর্জন করতে হবে। ভারত বিশ্বের তৃতীয় বৃহত্তম অর্থনীতি হবে—এই লক্ষ্য অর্জনের দিন আর বেশি দূরে নয়। গত ১০ বছরে দেশ ২৫ কোটি মানুষকে দারিদ্র্য থেকে মুক্ত করেছে। আমরা যে গতিতে এগোচ্ছি, সেই দিনও দূরে নয় যেদিন গোটা ভারত দারিদ্র্যমুক্ত হবে। এই দশকের শেষ নাগাদ ভারত ৫০০ গিগাওয়াট নবীকরণযোগ্য শক্তি উৎপাদনের লক্ষ্য নিয়েছে। আমাদের রেল ২০৩০ সালের মধ্যে কার্বন নির্গমন শূণ্য  করার লক্ষ্য নিয়েছে।

বন্ধুগণ,

আগামী দশকে অলিম্পিক আয়োজন করাও আমাদের অন্যতম বড় লক্ষ্য। এর জন্য দেশ প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। মহাকাশ শক্তি হিসেবেও ভারত দ্রুত অগ্রসর হচ্ছে। ২০৩৫ সালের মধ্যে মহাকাশে নিজেদের স্পেস স্টেশন স্থাপনের লক্ষ্যে আমরা কাজ করছি। গোটা বিশ্ব চন্দ্রযানের সাফল্য প্রত্যক্ষ করেছে। এখন পূর্ণ গতিতে প্রস্তুতি চলছে গগনযান–এর। তবে এর বাইরেও আমাদের চিন্তা করতে হবে—আমাদের লক্ষ্য হওয়া উচিত একদিন ভারতকে চাঁদে অবতরণ করানো। এমন বহু লক্ষ্য পূরণ করলেই আমরা ২০৪৭ সালের মধ্যে উন্নত ভারতের লক্ষ্য অর্জন করতে সক্ষম হব।

বন্ধুরা,

যখন আমরা প্রগতিশীল অর্থনীতির পরিসংখ্যানের কথা বলি, তখন কিছু মানুষ ভাবতে পারে—এতে আমাদের দৈনন্দিন জীবনে কী প্রভাব পড়ে। সত্য হলো, অর্থনীতি বৃদ্ধিপ্রাপ্ত হলে জীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রে ইতিবাচক প্রভাব পড়ে। ভারত এই শতকের প্রথম দশকে এক ট্রিলিয়ন ডলারের অর্থনীতিতে পরিণত হয়েছিল—আমি একবিংশ শতকের প্রথম দশকের কথা বলছি। তখন অর্থনীতির পরিসর ছোট ছিল, ফলে ভারতের কৃষি বাজেট কয়েক হাজার কোটি টাকা ছিল। ভারতের অভ্যন্তরীণ বাজেট এক লাখ কোটি টাকারও কম। সেই সময় দেশের অবস্থা কী ছিল? তখন বেশিরভাগ গ্রাম সড়কের সুবিধা থেকে বঞ্চিত, বিদ্যুতের সুবিধা থেকে বঞ্চিত, জাতীয় মহাসড়ক ও রেলের অবস্থা অত্যন্ত দুর্বল ছিল। ভারতের এক বিশাল অংশে বিদ্যুৎ এবং জলের মতো মৌলিক সুবিধার অভাব ছিল।

বন্ধুরা,

অল্প সময় পরে ভারত দুই ট্রিলিয়ন ডলারের অর্থনীতিতে পরিণত হয়। সেই সময় ভারতের অভ্যন্তরীণ বাজেট ২ লাখ কোটি টাকারও কম ছিল। কিন্তু রাস্তাঘাট, রেল, বিমানবন্দর, খাল, দরিদ্র্যদের জন্য তৈরি বাড়ি, স্কুল, হাসপাতাল—এসবের উন্নয়ন আগের তুলনায় বৃদ্ধি পেতে শুরু করে। এরপর ভারত দ্রুত গতিতে তিন ট্রিলিয়ন ডলারের অর্থনীতিতে পৌঁছায়। বিমানবন্দরের সংখ্যা দ্বিগুণ হয়, দেশজুড়ে আধুনিক রেল চালু হয়, বুলেট ট্রেনের স্বপ্ন বাস্তবায়িত হতে শুরু করে। ভারতে বিশ্বের মধ্যে সবচেয়ে দ্রুত ৫জি রোলআউট হয়েছে। ব্রডব্যান্ড ইন্টারনেট দেশজুড়ে হাজার হাজার গ্রাম পঞ্চায়েতের কাছে পৌঁছাতে শুরু করে। ৩ লাখেরও বেশি গ্রামে রাস্তা হয়েছে, ২৩ লাখ কোটি টাকার মুদ্রা ঋণ যুবক-যুবতীদের প্রদান করা হয়েছে। বিনামূল্যে চিকিৎসার জন্য বিশ্বের বৃহত্তম আয়োজন “আয়ুষ্মান ভারত” চালু করা হয়েছে। কৃষকের ব্যাংক একাউন্টে প্রতি বছর হাজার হাজার কোটি টাকা তৎক্ষণাৎ জমা দেওয়ার ব্যবস্থা করা হয়েছে। দরিদ্র মানুষের জন্য নির্মাণ করা হয়েছে ৪ কোটি পাকা বাড়ি। অর্থাৎ অর্থনীতি যত বড় হয়েছে, উন্নয়নমূলক কাজের গতি তত বৃদ্ধি পেয়েছে, আরও সুযোগ সৃষ্টি হয়েছে। প্রতিটি খাতে, সমাজের প্রতিটি শ্রেণীর জন্য দেশের ব্যয়ক্ষমতা সমানভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে।

বন্ধুরা,

আজ ভারতের অর্থনীতি প্রায় ৪ ট্রিলিয়ন ডলার। এর ফলে ভারতের শক্তিও বহুগুণ বৃদ্ধি পেয়েছে। ২০১৪ সালের মোট অভ্যন্তরীণ বাজেটের তুলনায় আজ ভারতে শুধুমাত্র রেলের জন্য আরও বেশি অর্থ ব্যয় করা হয়েছে। রেল, রাস্তা এবং বিমানবন্দর নির্মাণে খরচ করা হয়েছে। আজ ভারতের অভ্যন্তরীণ বাজেট ১০ বছরের আগের তুলনায় প্রায় ছয়গুণ বেশি, ১১ লাখ কোটি টাকারও বেশি এবং আজ ভারতের পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে এর ফলাফল স্পষ্টভাবে দেখা যাচ্ছে। এই ভারত মণ্ডপমও এর একটি সুন্দর নিদর্শন। । আগেও এই প্রগতি ময়দানে মেলা বসেছিল এবং দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে মানুষ এসেছিল, তাঁবু লাগানো হয়েছিল, কিন্তু আজ এই সবকিছুকে স্থায়ী করা হয়েছে।

বন্ধুরা,

এখন আমরা অত্যন্ত দ্রুত গতিতে ৫ ট্রিলিয়ন ডলারের অর্থনীতির দিকে এগোচ্ছি। কল্পনা করুন, যখন আমরা ৫ ট্রিলিয়ন ডলারের সীমায় পৌঁছাব, তখন উন্নয়নের পরিসর কত বড় হবে, সুযোগ এবং সুবিধার সম্প্রসারণ কতটা বিস্তৃত হবে। ভারত এই স্তরে থেমে থাকতে পারে না। আগামী দশকের শেষের দিকে ভারত ১০ ট্রিলিয়ন ডলারের সীমাও অতিক্রম করবে।

ভাবুন, এই বৃদ্ধি প্রাপ্ত অর্থনীতিতে আপনার কেরিয়ার এগোবার সঙ্গে সঙ্গে আপনার জন্য কত নতুন সুযোগ তৈরি হবে। ভাবুন, ২০৪৭ সালে আপনার বয়স কত হবে, আপনার পরিবার এবং জীবনের জন্য কোন কোন ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে। যখন আপনি প্রায় ৪০–৫০ বছরের বয়সের হবেন, আপনার জীবনের একটি গুরুত্বপূর্ণ পর্যায়ে, আর দেশও উন্নতির পথে থাকবে, তখন সবচেয়ে বেশি লাভ কার হবে? আজকের যুবক-যুবতীই সবচেয়ে বেশি লাভবান হবেন। এজন্যই আমি পূর্ণ বিশ্বাসের সঙ্গে বলছি—আপনাদের প্রজন্ম শুধু দেশের ইতিহাসে সর্ববৃহৎ পরিবর্তন আনবে না, সেই পরিবর্তনের সবচেয়ে বড় উপকারভোগীও হবেন।

এই যাত্রায় আমাদের একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় মনে রাখতে হবে—আমরা আমাদের আরামদায়ক জীবনযাত্রায় আটকে থাকব না। এই পরিস্থিতি অত্যন্ত বিপদজনক। এগিয়ে যেতে হলে নিজের আরামদায়ক জীবনযাত্রা থেকে বের হয়ে ঝুঁকি নেওয়া অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এই যুবনেতা সংলাপে যুবক-যুবতীরা ঠিক তাই করেছেন, নিজের আরামদায়ক জীবনযাত্রা থেকে বের হয়ে অংশগ্রহণ করেছেন। এই জীবনমন্ত্রই আপনাদেরকে সফলতার নতুন উচ্চতায় নিয়ে যাবে।

বন্ধুরা,

আজকের অনুষ্ঠান, বিকশিত ভারত যুব নেতা সংলাপ, ভারতের ভবিষ্যতের রূপরেখা নির্ধারণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে। আপনি যে শক্তি, উৎসাহ এবং নিষ্ঠার সঙ্গে এই সংকল্প গ্রহণ করেছেন, তা সত্যিই প্রশংসনীয়। উন্নত ভারতের জন্য আপনাদের ধারণাগুলি মূল্যবান, উৎকৃষ্ট এবং শ্রেষ্ঠ। এখন এই ধারণাগুলো দেশজুড়ে ছড়িয়ে দিতে হবে—প্রতিটি জেলা, গ্রাম, গলি এবং স্থানীয় অঞ্চলের যুবক-যুবতীদের সঙ্গে এই ধারণাগুলি সংযুক্ত করতে হবে। ২০৪৭ সালের মধ্যে আমরা ভারতকে একটি উন্নত রাষ্ট্রে রূপান্তরিত করব। এই সংকল্পের জন্য আমাদের জীবন উৎসর্গ করতে হবে।

বন্ধুরা,

পুনরায় ভারতের সমস্ত যুবক-যুবতীকে জাতীয় যুব দিবসের আন্তরিক শুভেচ্ছা। এই সংকল্পকে সফল করতে, আপনাদের অবিরাম প্রচেষ্টা চালাতে হবে। আমরা তখনই সাফল্য অর্জন করব। আমার শুভেচ্ছা সবসময় আপনাদের সঙ্গে আছে। আসুন একসাথে বলি—

ভারত মাতা কি জয়!
ভারত মাতা কি জয়!
ভারত মাতা কি জয়!

বন্দে মাতরম!
বন্দে মাতরম!
বন্দে মাতরম!
বন্দে মাতরম!
বন্দে মাতরম!

অসংখ্য ধন্যবাদ।

 


SC/PK.....


(Release ID: 2160418) Visitor Counter : 10