প্রধানমন্ত্রীরদপ্তর
azadi ka amrit mahotsav

রাষ্ট্রপতির অভিভাষণের উপর কৃতজ্ঞতা প্রস্তাবের জবাবে রাজ্যসভায় মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্য

Posted On: 06 FEB 2025 8:49PM by PIB Kolkata

নতুন দিল্লি, ৬ ফেব্রুয়ারি, ২০২৫

 

মাননীয় চেয়ারম্যান মহাশয়,

মাননীয়া রাষ্ট্রপতি মহাশয়া তাঁর ভাষণে ভরসা দিয়েছেন—ভারতের অর্জনসমূহ, বিশ্বের ভারতের প্রতি প্রত্যাশা এবং ‘বিকশিত ভারত’ গঠনের লক্ষ্যে সাধারণ মানুষের আত্মবিশ্বাস জাগ্রত করার দৃঢ় প্রত্যয় নিয়ে। তিনি দেশের ভবিষ্যৎ দিকনির্দেশনাও তুলে ধরেছেন। মাননীয়া রাষ্ট্রপতির এই বক্তব্য যেমন অনুপ্রেরণাদায়ী, তেমনি তা প্রভাবশালীও বটে, যা আমাদের ভবিষ্যৎ কর্মপন্থার জন্য পথপ্রদর্শক হয়ে থাকবে। তাঁর ভাষণের জন্য আমি তাঁকে ধন্যবাদ জানাতে এসেছি।

মাননীয় চেয়ারম্যান মহাশয়,

এই ধন্যবাদ প্রস্তাব সমৃদ্ধ করতে ৭০ জনেরও বেশি মাননীয় সাংসদ তাঁদের মূল্যবান মতামত ব্যক্ত করেছেন। শাসকদল ও বিরোধী উভয় দিক থেকেই আলোচনা হয়েছে। প্রত্যেকে রাষ্ট্রপতির বক্তব্যের ব্যাখ্যা নিজেদের মতো করে দিয়েছেন এবং ‘সবকা সাথ, সবকা বিকাশ’ প্রসঙ্গও তুলেছেন। আমি বুঝতে পারি না, এর মধ্যে অসুবিধা কোথায়। ‘সবকা সাথ, সবকা বিকাশ’ আমাদের সকলের সমবেত দায়িত্ব, আর সেই কারণেই দেশের মানুষ আমাদের এখানে বসার সুযোগ দিয়েছেন। কিন্তু কংগ্রেসের প্রসঙ্গে বলব—ওদের কাছ থেকে ‘সবকা সাথ, সবকা বিকাশ’ প্রত্যাশা করা ভুল হবে। এটা তাঁদের চিন্তার বাইরে, বোধের বাইরে, তাঁদের রূপরেখায় খাপ খায় না। কারণ তাঁদের বিশাল দল আজ একটি মাত্র পরিবারের সেবায় নিবেদিত হয়ে পড়েছে। তাই তাঁদের কাছে ‘সবকা সাথ, সবকা বিকাশ’ কখনও সম্ভব নয়।

মাননীয় চেয়ারম্যান মহাশয়,

কংগ্রেস একটি রাজনৈতিক মডেল দাঁড় করিয়েছিল, যেখানে মিথ্যা, প্রতারণা, দুর্নীতি, পক্ষপাত এবং তোষণ—সবকিছুরই মিশ্রণ ছিল। যেখানে এ সব কিছু মিশে থাকে, সেখানে ‘সবকা সাথ’ আসতে পারে না।

মাননীয় চেয়ারম্যান মহাশয়,

কংগ্রেস মডেলের মূল নীতি ছিল ‘ফ্যামিলি ফার্স্ট’। তাই তাঁদের নীতি, আদর্শ, ভাষণ ও আচরণ—সবই সেই এক জিনিসের সুরক্ষাকে কেন্দ্র করে ছিল। ২০১৪ সালের পর দেশ আমাদের সেবা করার সুযোগ দিয়েছে। আমি কৃতজ্ঞ, যে দেশের মানুষ টানা তৃতীয়বার আমাদের এই দায়িত্ব অর্পণ করেছেন। এত বৃহৎ দেশ, শক্তিশালী গণতন্ত্র, সক্রিয় গণমাধ্যম ও মতপ্রকাশের স্বাধীনতার পরিবেশের মাঝেও দেশ আমাদের বারবার নির্বাচিত করেছে। কারণ দেশের মানুষ আমাদের উন্নয়ন মডেলকে বিচার করেছেন, বুঝেছেন এবং সমর্থন করেছেন। আমাদের মডেল যদি একটি শব্দে বলতে হয়, তবে তা হবে ‘Nation First’। এই মহান ভাবনা ও একাগ্র নিষ্ঠাকে কেন্দ্র করে আমরা নীতি, কর্মসূচি, ভাষণ ও আচরণকে নিয়েছি এবং এটাকেই দেশের সেবার মানদণ্ড করেছি।

মাননীয় চেয়ারম্যান মহাশয়, আমি গর্বের সঙ্গে বলছি—পাঁচ-ছয় দশক ধরে দেশ কখনও বিকল্প মডেল দেখেনি। কিন্তু ২০১৪ সালের পর দেশ নতুন মডেল দেখেছে—বিকল্প দৃষ্টিভঙ্গি কেমন হয়, কীভাবে অগ্রাধিকার স্থির হয়, শাসনব্যবস্থার ধরন কেমন হওয়া উচিত। এই নতুন মডেল তোষণ নয়, সন্তুষ্টিতে বিশ্বাস করে। কংগ্রেস আমলে তোষণই সর্বত্র ছড়িয়ে ছিল; সেটাই ছিল তাঁদের রাজনৈতিক অস্ত্র। দুর্নীতির মাধ্যমে রাজনীতি, জাতীয় স্বার্থ এবং অন্য সবকিছুকে কাজে লাগিয়ে তাঁরা নিজেদেরই সুবিধা বিধান করেছেন। তাঁদের পদ্ধতি ছিল—কিছুটা সুবিধা প্রান্তিক মানুষকে দিয়ে, বাকিদের বঞ্চিত রাখা; আর নির্বাচনের সময়ে গিয়ে আবার প্রতিশ্রুতি দেওয়া—“ওরা পেয়েছে, হয়তো তোমরাও পাবে।” এভাবে ভাঁওতাবাজি করে, মানুষকে অন্ধকারে রেখে, ভোট পাওয়ার আশায় রাজনীতি চালিয়ে গেছেন।

মাননীয় চেয়ারম্যান মহাশয়,

আমাদের প্রচেষ্টা হচ্ছে—ভারত যেন তার সব সম্পদের সর্বোত্তম ব্যবহার করে। দেশের কাছে যে সময় আছে, তা নষ্ট না করে প্রতিটি মুহূর্তকে জাতির অগ্রগতি ও সাধারণ মানুষের কল্যাণে কাজে লাগানো। সেই কারণেই আমরা স্যাচুরেশন অ্যাপ্রোচ গ্রহণ করেছি—অর্থাৎ পরিকল্পনাগুলো যাদের জন্য, তাঁদের কাছে যেন শতভাগ পৌঁছায়। অতীতে যা চলত—কিছু দেওয়া, বাকিদের বঞ্চিত রাখা—আমরা সেই প্রথা ভেঙেছি। বরং স্যাচুরেশন অ্যাপ্রোচ অনুসরণ করে নিশ্চিত করেছি, যে প্রত্যেক প্রাপ্য ব্যক্তি পূর্ণ সুবিধা পান। গত এক দশকে আমরা ‘সবকা সাথ, সবকা বিকাশ’ মন্ত্রকে বাস্তবে রূপ দিয়েছি, আর তার ফলাফল আজ দেশের প্রতিটি স্তরে ইতিবাচক পরিবর্তন হিসেবে দেখা যাচ্ছে। আমাদের শাসনের মূল মন্ত্র এটাই—‘সবকা সাথ, সবকা বিকাশ’।

মাননীয় চেয়ারম্যান মহাশয়, দলিত ও আদিবাসীদের মর্যাদা ও সুরক্ষা রক্ষায় আমাদের সরকার দৃঢ় পদক্ষেপ নিয়েছে—এসসি/এসটি আইনকে শক্তিশালী করেছে এবং আরও সংহত করেছে, যাতে তাঁদের নিরাপত্তা নিশ্চিত হয়।

মাননীয় চেয়ারম্যান মহাশয়,
আজ ইচ্ছাকৃতভাবে জাতপাতের বিষ ছড়ানোর চেষ্টা চলছে। অথচ গত তিন দশক ধরে দুই কক্ষের ওবিসি সাংসদরা, সব দলের সাংসদরা চাইছিলেন ওবিসি কমিশনকে সাংবিধানিক মর্যাদা দেওয়া হোক। কিন্তু তাঁদের দাবি বারবার প্রত্যাখ্যাত হয়েছে, কারণ তখন তা হয়তো কারও রাজনৈতিক স্বার্থের সঙ্গে খাপ খায়নি। তোষণের রাজনীতিতে ও ফ্যামিলি ফার্স্ট নীতিতে, এ ধরনের উদ্যোগ তাঁদের রাজনৈতিক লক্ষ্যকে সাহায্য করত না।

মাননীয় চেয়ারম্যান মহাশয়,
আজ আমি গর্বের সঙ্গে বলছি, আমরা একসঙ্গে সেই ওবিসি সমাজের আশা পূরণ করেছি, যারা তিন দশক ধরে এই দাবি করছিলেন। বারবার যেটি অস্বীকৃত ও উপেক্ষিত হয়েছে, সেই সাংবিধানিক মর্যাদা আমরা ওবিসি কমিশনকে দিয়েছি। আর শুধু তাঁদের দাবি মেটানো নয়, তাঁদের মর্যাদা ও সম্মানও আমাদের কাছে সমান গুরুত্বপূর্ণ। আমরা বিশ্বাস করি—এই দেশের ১৪০ কোটি নাগরিকই ‘জনতা জনার্দন’—এবং আমরা সেই মনোভাব নিয়েই তাঁদের সেবায় নিয়োজিত আছি।

মাননীয় চেয়ারম্যান মহাশয়,
আমাদের দেশে যখনই সংরক্ষণের প্রসঙ্গ উঠেছে, তখনই বিষয়টি সত্যকে স্বীকার করে, সুস্থ ও সমাধানমুখী মানসিকতা দিয়ে দেখা হয়নি। বরং দেশে বিভাজন সৃষ্টি, উত্তেজনা বাড়ানো এবং ভিন্ন ভিন্ন গোষ্ঠীর মধ্যে বৈরিতা তৈরির চেষ্টা হয়েছে। স্বাধীনতার পর থেকেই এটাই চলে আসছে। প্রথমবার, আমাদের সরকার ‘সবকা সাথ, সবকা বিকাশ’ মন্ত্রে অনুপ্রাণিত হয়ে সাধারণ শ্রেণির অর্থনৈতিকভাবে দুর্বল জনগোষ্ঠীর জন্য ১০ শতাংশ সংরক্ষণ দিয়েছে। এই পদক্ষেপটি নেওয়া হয়েছিল কোনও উত্তেজনা সৃষ্টি না করে, কাউকে প্রাপ্য থেকে না বঞ্চিত করে। যখন এই সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়, তখন এসসি, এসটি এবং ওবিসি সমাজের মানুষও স্বাগত জানিয়েছিলেন। কারও কোনও অস্বস্তি হয়নি, কারণ এত বড় একটি সিদ্ধান্ত ‘সবকা সাথ, সবকা বিকাশ’–এর ভাবনায় নেওয়া হয়েছিল। তাই শান্তিপূর্ণভাবে, স্বাস্থ্যকর পরিবেশে গোটা দেশ এই সিদ্ধান্তকে মেনে নিয়েছিল।
মাননীয় চেয়ারম্যান মহাশয়,
আমাদের দেশে ‘দিব্যাঙ্গ’ –দের বিষয়ে কখনও যথাযথ মনোযোগ দেওয়া হয়নি। কিন্তু যখন আমরা ‘সবকা সাথ, সবকা বিকাশ’ মন্ত্রকে সামনে রাখি, তখন দিব্যাঙ্গ ব্যক্তিরাও তো সেই ‘সব’–এর অন্তর্ভুক্ত। তখনই তাঁদের জন্যও সংরক্ষণ সম্প্রসারিত করা হয়েছে এবং তাঁদের সুবিধা নিশ্চিত করতে মিশন মোডে কাজ করা হয়েছে। বহু কল্যাণমূলক কর্মসূচি রূপায়িত করা হয়েছে দিব্যাঙ্গদের জন্য, এবং শুধু ঘোষণা নয়—তার বাস্তবায়নও নিশ্চিত করা হয়েছে। তাছাড়া, মাননীয় চেয়ারম্যান মহাশয়, আমরা আইনগত ও বৈধ উপায়ে তৃতীয়লিঙ্গ সম্প্রদায়ের অধিকার রক্ষায় পদক্ষেপ নিয়েছি। তাঁদের অধিকার যেন স্বীকৃত ও সুরক্ষিত থাকে, সেই ব্যবস্থা করেছি। এভাবেই আমরা ‘সবকা সাথ, সবকা বিকাশ’–এর বাস্তব রূপ দেখিয়েছি, সমাজের প্রান্তিক অংশগুলোর প্রতি সংবেদনশীলতা প্রদর্শনের মাধ্যমে।
মাননীয় চেয়ারম্যান মহাশয়,
ভারতের উন্নয়নের অভিযাত্রায় ‘নারী শক্তি’–র অবদান অস্বীকার করার উপায় নেই। তবে তাঁদের সুযোগ দেওয়া হলে, সিদ্ধান্ত গ্রহণে ভূমিকা রাখার সুযোগ দিলে, দেশের অগ্রগতি আরও দ্রুত হবে। এই ভাবনা থেকেই আমরা, এই সংসদের সহযোগিতায়, এক ঐতিহাসিক সিদ্ধান্ত নিয়েছি। আমরা এই দেশের নাগরিক হিসেবে গর্ব করতে পারি—এই নতুন সংসদের প্রথম সিদ্ধান্তই হলো ‘নারী শক্তি বন্দন অধিনিয়ম’। এই নতুন সংসদের সূচনা আমরা অন্যভাবেও করতে পারতাম, যেমন অতীতে নিজেদের প্রশংসা কুড়োতে ব্যবহার করা হয়েছে। কিন্তু আমরা বেছে নিয়েছি মাতৃশক্তিকে প্রণাম করে সংসদের কাজ শুরু করার পথ। মাতৃশক্তির আশীর্বাদ নিয়েই এই সংসদ তার কাজ শুরু করেছে।
মাননীয় চেয়ারম্যান মহাশয়,
ইতিহাসে চোখ রাখলে দেখা যায়—কংগ্রেসের বাবাসাহেব আম্বেদকরের প্রতি প্রবল বিদ্বেষ ছিল। তাঁরা সর্বদা তাঁর প্রতি নেতিবাচক মনোভাব পোষণ করেছেন। সব নথিই আজও প্রমাণ দেয়। দু’বার বাবাসাহেবকে নির্বাচনে হারানোর চেষ্টা হয়েছে। অথচ তাঁর অসাধারণ অবদানের পরও তাঁকে ভারতরত্ন দেওয়ার যোগ্য বলে কংগ্রেস কখনও মনে করেনি।
মাননীয় চেয়ারম্যান মহাশয়,
আজও সত্য এটাই—বাবাসাহেবকে কংগ্রেস ভারতরত্ন দেওয়ার যোগ্য মনে করেনি। অথচ দেশের মানুষ, সর্বস্তরের সমাজ, তাঁর ভাবনা ও আদর্শকে শ্রদ্ধা জানিয়েছে। ফলত আজ বাধ্য হয়ে কংগ্রেসকেও ‘জয় ভীম’ বলতে হয়। কিন্তু তাঁদের মুখ শুকিয়ে আসে, মন থেকে বলতে পারেন না। এই কংগ্রেস এতটাই রং বদলাতে ওস্তাদ হয়ে গেছে যে মুহূর্তে মুহূর্তে মুখোশ পাল্টে নিচ্ছে।

মাননীয় চেয়ারম্যান মহাশয়,
কংগ্রেসকে লক্ষ্য করলে দেখা যাবে—আমাদের মূল মন্ত্র সবসময়ই ছিল ‘সবকা সাথ, সবকা বিকাশ’, আর তাঁদের নীতি ছিল অন্যদের সাফল্য খাটো করা। তাই তাঁরা বারবার সরকারকে অস্থির করেছে। যে রাজনৈতিক দলই সরকার গঠন করুক, কংগ্রেসের লক্ষ্য ছিল সেটিকে দুর্বল করা। এই ধারা আজও অব্যাহত, এবং লোকসভা নির্বাচনের পর যাঁরা তাঁদের সঙ্গে ছিলেন, তাঁরাও দূরে সরে যাচ্ছেন—কারণ তাঁরা বুঝে গেছেন কংগ্রেসের সঙ্গ মানেই নিজেদেরও ধ্বংস ডেকে আনা। এই নীতির ফলেই আজ দেশের প্রাচীনতম দল, যে দল স্বাধীনতা আন্দোলনের অংশ ছিল, সে আজ এই করুণ পরিণতিতে পৌঁছেছে। তাঁরা অন্যদের লাইন ছোট করতে করতে নিজেদের লাইন বাড়ানোর চেষ্টা করেননি। আমি বিনা মূল্যে তাঁদের একটা উপদেশ দিচ্ছি—নিজেদের লাইন বড় করুন, দেশ আপনাদেরও সুযোগ দেবে।
মাননীয় চেয়ারম্যান মহাশয়,
বাবাসাহেব এসসি ও এসটি সমাজের সমস্যাগুলি গভীরভাবে অনুধাবন করেছিলেন। তিনি নিজে সেই দুঃখভোগ করেছেন। তাই তাঁর মধ্যে ছিল বেদনা, যন্ত্রণা ও সমাজকল্যাণে একাগ্রতা। বাবাসাহেব একটি সুস্পষ্ট রূপরেখা দিয়েছিলেন—এসসি ও এসটি সমাজের অর্থনৈতিক উন্নয়নের। তাঁর এক গুরুত্বপূর্ণ বক্তব্য আমি উদ্ধৃত করছি। তিনি বলেছিলেন: “ভারত কৃষিভিত্তিক দেশ হলেও, দলিতদের জন্য কৃষিই জীবিকার প্রধান উৎস হতে পারে না।” তিনি এর যুক্তিও দিয়েছিলেন। প্রথমত, তাঁদের পক্ষে জমি কেনা আর্থিকভাবে সম্ভব ছিল না। এমনকি টাকাও থাকলে জমি কেনার সুযোগ মেলেনি। তিনি বিশ্লেষণ করে বলেছিলেন—দলিত, আদিবাসী ও প্রান্তিক সমাজের অবিচার ও দুঃখ দূর করার উপায় হলো শিল্পায়ন। বাবাসাহেব শিল্পায়নের প্রবল সমর্থক ছিলেন, কারণ তিনি দেখেছিলেন এটাই দক্ষতা-ভিত্তিক কর্মসংস্থান ও উদ্যোক্তা হওয়ার সুযোগ এনে দিতে পারে, যা অর্থনৈতিক আত্মনির্ভরতার পথ। কিন্তু কয়েক দশক স্বাধীনতার পরও কংগ্রেস, ক্ষমতায় থাকার সুযোগ থাকা সত্ত্বেও, বাবাসাহেবের দৃষ্টিভঙ্গিকে কখনও গুরুত্ব দেয়নি। তাঁর ভাবনাকে প্রত্যাখ্যান করেছে এবং এসসি ও এসটি সমাজের আর্থিক দারিদ্র্য দূর করার বদলে সমস্যাকে আরও বাড়িয়েছে।
মাননীয় চেয়ারম্যান মহাশয়,
২০১৪ সালে আমাদের সরকার এই দৃষ্টিভঙ্গি পাল্টে দিয়েছে। আমরা অগ্রাধিকার দিয়েছি স্কিল ডেভেলপমেন্ট, ফিনান্সিয়াল ইনক্লুশন ও শিল্পোন্নয়নকে। আমরা চালু করেছি প্রধানমন্ত্রী বিশ্বকর্মা যোজনা—যাদের ছাড়া সমাজের কাঠামোই অসম্ভব, তাঁদের জন্য। লৌহকার, কুম্ভকার, স্বর্ণকারসহ গ্রামীণ সমাজের ঐতিহ্যবাহী কারিগরদের জন্য আমরা প্রথমবার নজর দিয়েছি। তাঁদের প্রশিক্ষণ, প্রযুক্তিগত উন্নতি, নতুন সরঞ্জাম, ডিজাইন সহায়তা, আর্থিক সহায়তা, বাজারে প্রবেশাধিকার—সবকিছুতে সহায়তা করেছি। এতদিন উপেক্ষিত এই সমাজের জন্য আমরা বিশেষ উদ্যোগ নিয়েছি।
মাননীয় চেয়ারম্যান মহাশয়,
আমরা মুদ্রা যোজনা চালু করেছি—মুদ্রা যোজনার মাধ্যমে আমরা প্রতিটি কারিগর, প্রতিটি সম্প্রদায়কে শক্তিশালী করার প্রয়াস নিয়েছি, এবং বাবাসাহেব যে স্বপ্ন দেখেছিলেন তা পূরণের দিকে এগিয়েছি।
মাননীয় চেয়ারম্যান মহাশয়,
যাঁদের কথা কেউ শোনেনি, যাঁদের কখনও গুরুত্ব দেওয়া হয়নি—তাঁদের খোঁজখবর রাখছেন মোদী। গরিব ও প্রান্তিক মানুষের কল্যাণই আমাদের সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার। এ বছরের বাজেটে আমরা ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র খাতের প্রতি দৃষ্টি দিয়েছি—যেমন চামড়া শিল্প, পাদুকা শিল্প প্রভৃতি—যা সবচেয়ে বেশি উপকার করবে দরিদ্র ও বঞ্চিত সম্প্রদায়ের। উদাহরণ হিসেবে খেলনার কথা বলা যায়। খেলনা তৈরির সঙ্গে যুক্ত আছেন এ ধরনের প্রান্তিক সম্প্রদায়ের মানুষরাই। আমরা তাঁদের দিকে বিশেষ নজর দিয়েছি। বহু গরিব পরিবারকে নানাভাবে সহায়তা দেওয়া হয়েছে। ফলও সুস্পষ্ট—বহু বছর ধরে আমরা খেলনা আমদানির অভ্যাসে আটকে ছিলাম, কিন্তু আজ আমরা তিনগুণ বেশি খেলনা রপ্তানি করছি। এর সুফল পাচ্ছেন সমাজের সেই সব অবহেলিত মানুষরা, যাঁরা দীর্ঘদিন কষ্টের মধ্যে জীবন কাটাচ্ছিলেন।
মাননীয় চেয়ারম্যান মহাশয়,
আমাদের দেশে এক বৃহৎ মৎস্যজীবী সম্প্রদায় রয়েছে। তাঁদের জন্য আমরা শুধু আলাদা একটি মন্ত্রকই গঠন করিনি, কৃষকদের মতো তাঁদেরও দিয়েছি কিষান ক্রেডিট কার্ড–এর সুবিধা। এই সুযোগ দেওয়া হয়েছে, আলাদা মন্ত্রক গঠিত হয়েছে, প্রায় ৪০ হাজার কোটি টাকার প্রকল্প অনুমোদিত হয়েছে। আমরা মাছচাষ খাতকে বিশেষ গুরুত্ব দিয়েছি, আর তার ফল সুস্পষ্ট—আমাদের মাছ উৎপাদন দ্বিগুণ হয়েছে, রপ্তানিও দ্বিগুণ হয়েছে। সরাসরি উপকৃত হচ্ছেন আমাদের মৎস্যজীবী ভাই-বোনেরা। সমাজের সবচেয়ে প্রান্তিক অংশের প্রতি বেশি অগ্রাধিকার দিয়েই আমরা তাঁদের কল্যাণে কাজ করেছি।

মাননীয় চেয়ারম্যান মহাশয়,
আজকাল অনেকে জাতপাতের বিষ ছড়াতে ব্যস্ত। অথচ আমাদের আদিবাসী সমাজের ভেতরে রয়েছে নানা স্তর। কিছু গোষ্ঠী খুবই ক্ষুদ্র, ২০০-৩০০টি স্থানে ছড়িয়ে রয়েছে সারা দেশে, জনসংখ্যাও খুব কম। এঁরা এতটাই উপেক্ষিত যে তাঁদের অবস্থা দেখলে হৃদয় ভেঙে যায়। আমি সৌভাগ্যবান যে মাননীয়া রাষ্ট্রপতির কাছ থেকে এ বিষয়ে দিকনির্দেশনা পেয়েছি, কারণ তিনি নিজে এ সম্প্রদায়ের খুব কাছের মানুষ। আদিবাসী সমাজের মধ্যে কিছু গোষ্ঠী একেবারেই দারিদ্র্যপীড়িত অবস্থায় রয়েছে। তাঁদের কল্যাণ নিশ্চিত করার লক্ষ্যেই আমরা চালু করেছি প্রধানমন্ত্রী জন মন যোজনা, ২৪ হাজার কোটি টাকার বরাদ্দ দিয়ে। যাতে এঁরা প্রথমে অন্য আদিবাসী সম্প্রদায়ের সমকক্ষ হতে পারেন, তারপর গোটা সমাজের সামগ্রিক উন্নতির সঙ্গে তাল মেলাতে পারেন। এ দিকেই আমরা কাজ করছি।

মাননীয় চেয়ারম্যান মহাশয়,
আমরা সমাজের বিভিন্ন অংশের কথা বিবেচনায় নিয়েছি। তবে দেশের কিছু এলাকা পিছিয়ে থেকেছে, যেমন সীমান্তবর্তী গ্রাম। এই গ্রামগুলোকে ‘পিছিয়ে পড়া গ্রাম’ বা ‘শেষ গ্রাম’ বলা হতো। আমরা প্রথম মনস্তাত্ত্বিক পরিবর্তন এনেছি। আমরা ভেবেছি—যাঁরা সীমান্তে থাকেন, যাঁরা সূর্যের প্রথম ও শেষ আলো পান, তাঁদেরই প্রথমে আসা উচিত। তাই আমরা ‘শেষ গ্রাম’–কে বলেছি ‘প্রথম গ্রাম’। উন্নয়নের অগ্রাধিকারে এনে বিশেষ পরিকল্পনা করেছি। এ প্রতিশ্রুতির গুরুত্ব বোঝাতে আমি আমার মন্ত্রিসভার সহকর্মীদের সেখানে পাঠিয়েছি—মাইনাস ১৫ ডিগ্রির মতো ঠান্ডায়ও তাঁরা গ্রামে ২৪ ঘণ্টা কাটিয়েছেন, গ্রামীণদের সমস্যাকে কাছ থেকে দেখেছেন। এমনকি স্বাধীনতা দিবস ও প্রজাতন্ত্র দিবসের মতো উপলক্ষেও আমরা ওই সীমান্ত গ্রামের প্রধানদের আমন্ত্রণ জানাই, তাঁদের রাষ্ট্রপতির আতিথেয়তায় সম্বর্ধনা দিয়ে সম্মানিত করা হয়। কারণ আমাদের লক্ষ্যই হলো ‘সবকা সাথ, সবকা বিকাশ’। যাঁদের এখনও সাহায্যের প্রয়োজন, তাঁদের খুঁজে বের করে দ্রুত পৌঁছনোই আমাদের দায়িত্ব।
মাননীয় চেয়ারম্যান মহাশয়,
ভাইব্র্যান্ট ভিলেজ প্রোগ্রাম দেশের নিরাপত্তার ক্ষেত্রেও বিশেষভাবে উপকারী প্রমাণিত হচ্ছে। আমরা একে আরও বেশি গুরুত্ব দিচ্ছি।
মাননীয় চেয়ারম্যান মহাশয়,
প্রজাতন্ত্রের ৭৫তম বর্ষে রাষ্ট্রপতি তাঁর ভাষণে আমাদের আহ্বান জানিয়েছিলেন সংবিধান প্রণেতাদের কাছ থেকে প্রেরণা নিতে। আজ আমি গর্বের সঙ্গে বলতে পারি—আমরা সংবিধান প্রণেতাদের ভাবনার প্রতি শ্রদ্ধা রেখে, সেই প্রেরণা নিয়েই এগোচ্ছি। অনেকে হয়তো প্রশ্ন করেন—ইউসিসি (ইউনিফর্ম সিভিল কোড) কী? কিন্তু যাঁরা সংবিধান সভার আলোচনা পড়েছেন, তাঁরা বুঝবেন—আমরা আসলে সেই ভাবনাকেই বাস্তব রূপ দেওয়ার চেষ্টা করছি। রাজনৈতিক বাধা থাকলেও আমরা সংবিধান প্রণেতাদের চেতনাতেই বাঁচি, তাই সাহস ও প্রতিশ্রুতি নিয়ে এগোচ্ছি।
মাননীয় চেয়ারম্যান মহাশয়,
আমাদের উচিত ছিল সংবিধান প্রণেতাদের প্রতি শ্রদ্ধা জানানো এবং তাঁদের প্রতিটি কথায় প্রেরণা খোঁজা। কিন্তু দুঃখের সঙ্গে বলতে হচ্ছে—কংগ্রেস স্বাধীনতার পরই সংবিধান প্রণেতাদের ভাবনাকে ভেঙে দিয়েছে। ভাবুন একবার—দেশে তখনও নির্বাচিত সরকার গঠিত হয়নি, অস্থায়ী ব্যবস্থা চলছিল নির্বাচনের আগ পর্যন্ত। সেই অস্থায়ী ব্যবস্থাতেই দায়িত্বে থাকা ব্যক্তি সংবিধানে সংশোধন করে ফেললেন। যদি নির্বাচিত সরকার থাকত, তা হলে বিষয়টি কিছুটা বোধগম্য হতো। কিন্তু অপেক্ষা পর্যন্ত করা হয়নি। তাঁরা কী করলেন? বাকস্বাধীনতা চূর্ণ করলেন, সংবাদপত্র ও গণমাধ্যমের স্বাধীনতায় বাধা দিলেন। অথচ বিশ্বজুড়ে নিজেদের ‘ডেমোক্র্যাট’ বলে পরিচয় দিলেন, যখন দেশের গণতন্ত্রের মৌলিক স্তম্ভকে ভেঙে দেওয়া হচ্ছিল। এটি ছিল সংবিধানের আত্মার প্রতি সম্পূর্ণ অবমাননা।
মাননীয় চেয়ারম্যান মহাশয়,
দেশের প্রথম সরকার গঠিত হয়েছিল প্রধানমন্ত্রী জওহরলাল নেহরুর নেতৃত্বে। তাঁর আমলেই মুম্বাইতে শ্রমিক ধর্মঘট হয়েছিল। তখন প্রখ্যাত গীতিকার মজরুহ সুলতানপুরী একটি কবিতা লিখেছিলেন— ‘কমনওয়েলথ কা দাস হ্যায়’। কেবল এই কবিতাটি গাওয়ার অপরাধে, নেহরু দেশের অন্যতম শ্রেষ্ঠ কবিকে জেলে পাঠিয়েছিলেন। প্রখ্যাত অভিনেতা বলরাজ সাহনিও শুধুমাত্র একটি শোভাযাত্রায় অংশগ্রহণ করার জন্য গ্রেপ্তার হয়ে জেলে গিয়েছিলেন।
মাননীয় চেয়ারম্যান মহাশয়,
লতা মঙ্গেশকরজির ভাই হৃদয়নাথ মঙ্গেশকরজি একবার বীর সাভারকরের ওপর একটি কবিতা সুরারোপ করে অল ইন্ডিয়া রেডিওতে পরিবেশনের পরিকল্পনা করেছিলেন। কেবল এই কারণেই হৃদয়নাথ মঙ্গেশকরজিকে চিরকালের জন্য অল ইন্ডিয়া রেডিও থেকে নিষিদ্ধ করা হয়েছিল।
মাননীয় চেয়ারম্যান মহাশয়,
এরপর দেশ জরুরি অবস্থার কালও দেখেছে। সংবিধানকে পদদলিত করা হয়েছিল, সংবিধানের আত্মাকে রক্তাক্ত করা হয়েছিল—কেবল ক্ষমতার লালসায়। দেশ সে কথা জানে। জরুরি অবস্থার সময় প্রখ্যাত চলচ্চিত্র অভিনেতা দেব আনন্দজিকে প্রকাশ্যে জরুরি অবস্থাকে সমর্থন করতে বলা হয়েছিল। দেব আনন্দজি স্পষ্টভাবে সমর্থন করতে অস্বীকার করেছিলেন, এবং সাহস দেখিয়েছিলেন। ফলত, দেব আনন্দজির সব ছবি দূরদর্শনে নিষিদ্ধ করা হয়েছিল।

মাননীয় চেয়ারম্যান মহাশয়,
যাঁরা সংবিধানের কথা বলেন, তাঁরা বহু বছর ধরে সেটিকে নিজেদের পকেটে বন্দি করে রেখেছেন, আর এটাই তার পরিণতি—তাঁরা সংবিধানকে সম্মান করেননি।
মাননীয় চেয়ারম্যান মহাশয়,
কিশোর কুমারজি কংগ্রেসের হয়ে গান গাইতে অস্বীকার করেছিলেন। এই একটি অপরাধের কারণে কিশোর কুমারের সব গান অল ইন্ডিয়া রেডিওতে নিষিদ্ধ করা হয়েছিল।
মাননীয় চেয়ারম্যান মহাশয়,
আমি জরুরি অবস্থার সেই দিনগুলো ভুলতে পারি না, হয়তো সেই ছবিগুলো আজও জীবন্ত। যারা গণতন্ত্র, মানব মর্যাদা নিয়ে বক্তৃতা দেন, বড় বড় কথা বলেন … জরুরি অবস্থার সময় দেশের মহান নেতা জর্জ ফার্নান্ডেজ-সহ বহু নেতাকে হাতকড়া ও শেকলে বেঁধে নিয়ে যাওয়া হয়েছিল। সংসদের সদস্য, জনপ্রিয় নেতাদের হাতকড়া ও শিকলে জড়ানো হয়েছিল। সংবিধানের কথা তাঁদের মুখে মানায় না।
মাননীয় চেয়ারম্যান মহাশয়,
ক্ষমতার লোভে, রাজপরিবারের ঔদ্ধত্যে এই দেশের কোটি কোটি পরিবার ধ্বংস হয়েছিল, গোটা দেশকে কারাগারে পরিণত করা হয়েছিল। দীর্ঘ সংগ্রামের পর, যারা নিজেদের অজেয় ভাবত, তাঁদের জনগণের শক্তির সামনে মাথা নোয়াতে হয়েছিল। জনগণের বলেই জরুরি অবস্থা উঠে গিয়েছিল। এটাই ভারতবর্ষের মানুষের শিরায় প্রবাহিত গণতন্ত্রের শক্তি। আমাদের মাননীয় খাড়গেজি বারবার অসাধারণ কবিতা পড়েন এবং তাতে আনন্দ পান, এবং চেয়ারম্যান মহাশয়, আপনিও সেটি উপভোগ করেন। আমি কোথাও একটি শের পড়েছিলাম—
"तमाशा करने वाले को क्या खबर,
हमने कितने तूफानों को पार कर दिया जलाया है"
(“যে কেবল প্রদর্শনী করে, সে কী জানে? আমরা কত ঝড়ঝাপটা পেরিয়ে প্রদীপ জ্বালিয়ে রেখেছি।” )
মাননীয় চেয়ারম্যান মহাশয়,
আমি আমাদের শ্রদ্ধেয় খাড়গেজিকে গভীর সম্মান করি। তিনি প্রবীণ নেতা, এবং তাঁকে আমি সবসময় সম্মান দিয়ে যাব। এমন দীর্ঘ জনজীবন মোটেই ছোট কৃতিত্ব নয়। এই দেশে শারদ পওয়ার হোন, খাড়গেজি হোন, কিংবা এখানে বসে থাকা দেবগৌডাজি—তাঁরা তাঁদের জীবনে অসাধারণ কৃতিত্ব অর্জন করেছেন। খাড়গেজি, এসব কথা আপনি আপনার বাড়িতে শুনবেন না, আমি বলছি। এবারে আমি দেখলাম খাড়গেজি কবিতা পড়ছিলেন। কিন্তু তিনি যে কথাগুলি বলছিলেন, আপনি সঠিকভাবেই ধরেছিলেন—যখন আপনি জিজ্ঞেস করলেন, “এই কবিতাটা কোথাকার?” তখন তিনি জানতেন, চেয়ারম্যান মহাশয়। তিনি জানতেন কখন সেই কবিতা লেখা হয়েছিল। ভিতরে কংগ্রেসের অবস্থা এতটাই বেদনাদায়ক ছিল, কিন্তু এমন পরিস্থিতি যে তাঁরা মুখ খুলতে পারছিলেন না। তাই তিনি ভেবেছিলেন, এটাই ভালো প্ল্যাটফর্ম, এবং এখানেই তাঁর মনের কথা প্রকাশ করেছেন। সেই কারণেই নীরজের কবিতার মাধ্যমে তিনি এখানে কংগ্রেসের অবস্থা তুলে ধরেছেন।
মাননীয় চেয়ারম্যান মহাশয়,
আজ আমি খাড়গেজির সঙ্গে কবি নীরজজির কয়েকটি লাইন ভাগ করে নিতে চাই। এই লাইনগুলি নীরজজি কংগ্রেস সরকারের আমলে লিখেছিলেন। তিনি লিখেছিলেন—
"হ্যাঁ, অনেক আঁধার আছে, এখন সূর্য উঠা উচিত। যেভাবেই হোক, ঋতুর পরিবর্তন হওয়া উচিত।"
এই কবিতা তিনি কংগ্রেস আমলে লিখেছিলেন। ১৯৭০ সালে, যখন কংগ্রেস সর্বত্র ক্ষমতায়, তখন নীরজজির আরেকটি কাব্যগ্রন্থ প্রকাশিত হয়েছিল— ‘ফির দীপ জলেগা’। হরিওমজি এ বিষয়ে অবগত। সেই সময় তাঁর কাব্যগ্রন্থ ভীষণ জনপ্রিয় হয়েছিল। ‘ফির দীপ জলেগা’ কাব্যে তিনি লিখেছিলেন—
"আমার দেশ হতাশ হয়ো না, আবার প্রদীপ জ্বলবে, আঁধার কেটে যাবে।"
এবং আমাদের সৌভাগ্য, আমাদের প্রেরণা, অটল বিহারি বাজপেয়িজিও চল্লিশ বছর আগে বলেছিলেন—
"সূর্য উঠবে, আঁধার কেটে যাবে, পদ্ম ফুটবে।"
নীরজজি যা বলেছিলেন, কংগ্রেসের সময়ে সূর্য তাদের জন্যই আলো দিত, কিন্তু দেশ বহু দশক অন্ধকারে ডুবে ছিল।
মাননীয় চেয়ারম্যান মহাশয়,
দরিদ্রদের ক্ষমতায়নের জন্য আমাদের সরকার যে কাজ করেছে, তা আগে কখনও হয়নি। আমাদের নীতি গঠন করা হয়েছে গরিবকে শক্তিশালী করা এবং তাকে দারিদ্র্য থেকে মুক্ত করার লক্ষ্যে। আমি আমার দেশের দরিদ্র মানুষের সামর্থ্যের উপর পূর্ণ আস্থা রাখি। সুযোগ দেওয়া হলে তারা যেকোনো চ্যালেঞ্জ অতিক্রম করতে পারে। আর দরিদ্ররা তা প্রমাণ করেছেন।
সরকারি প্রকল্পের সুফল পেয়ে এবং সুযোগ কাজে লাগিয়ে ২৫ কোটি মানুষ দারিদ্র্যের শৃঙ্খল ভেঙে বেরিয়ে এসেছেন। ২৫ কোটি মানুষকে দারিদ্র্যমুক্ত করা আমাদের জন্য গর্বের বিষয়। যারা দারিদ্র্য থেকে মুক্ত হয়েছে, তারা কঠোর পরিশ্রম, সরকারের উপর বিশ্বাস এবং সরকারি প্রকল্পকে ভরসা করে তা অর্জন করেছে। আজ তাদের অনেকেই দারিদ্র‍্য থেকে উঠে দেশের নতুন মধ্যবিত্ত শ্রেণিতে যোগ দিয়েছেন।
মাননীয় চেয়ারম্যান মহাশয়,
আমার সরকার নবমধ্যবিত্ত ও মধ্যবিত্ত শ্রেণির পাশে অটলভাবে দাঁড়িয়েছে। তাদের আকাঙ্ক্ষাই আজ দেশের চালিকাশক্তি, জাতির নতুন শক্তি এবং উন্নয়নের সবচেয়ে বড় ভিত্তি। আমরা মধ্যবিত্ত ও নবমধ্যবিত্ত শ্রেণির সক্ষমতা বৃদ্ধির দিকে বিশেষ গুরুত্ব দিয়েছি।

এবারের বাজেটে আমরা মধ্যবিত্তের করের বোঝা কার্যত শূন্যে নামিয়ে এনেছি। ২০১৩ সালে ২ লক্ষ টাকা পর্যন্ত আয় করমুক্ত ছিল। আজ আমরা সেটিকে ১২ লক্ষ টাকায় উন্নীত করেছি। ৭০ বছরের ঊর্ধ্বে যেকোনো নাগরিক, যে-ই হোন না কেন, আজ আয়ুষ্মান প্রকল্পের সুবিধা পাচ্ছেন। আর এর সবচেয়ে বেশি উপকার পাচ্ছেন মধ্যবিত্ত শ্রেণির প্রবীণরা।
মাননীয় চেয়ারম্যান মহাশয়,
আমরা দেশে ৪ কোটি বাড়ি নির্মাণ করেছি এবং আমাদের সহনাগরিকদের প্রদান করেছি। এর মধ্যে এক কোটিরও বেশি বাড়ি শহরে নির্মিত হয়েছে। আগে বাড়ি ক্রেতারা ভয়ঙ্কর প্রতারণার শিকার হতেন, তাদের সুরক্ষা দেওয়া ছিল অত্যন্ত জরুরি। এই সংসদেই আমরা পাশ করেছি রেরা আইন, যা মধ্যবিত্তের আবাসনের স্বপ্ন পূরণের অন্যতম হাতিয়ার হয়ে উঠেছে।
এবারের বাজেটে স্বামীহ উদ্যোগ চালু করা হয়েছে, যা বিশেষভাবে সেইসব হাউসিং প্রকল্পগুলির দিকে দৃষ্টি দিচ্ছে যেগুলি বছরের পর বছর বিলম্বিত হয়ে আছে, যেখানে মধ্যবিত্তের অর্থ আটকে আছে। এ উদ্দেশ্যে ১৫,০০০ কোটি টাকা বরাদ্দ করা হয়েছে, যাতে এই প্রকল্পগুলি সম্পূর্ণ হয় এবং মধ্যবিত্তের স্বপ্নপূরণ হয়।
মাননীয় চেয়ারম্যান মহাশয়,
আজ যে স্টার্ট-আপ বিপ্লব গোটা বিশ্ব দেখছে এবং যা গভীর প্রভাব ফেলছে, তার চালিকাশক্তি মূলত মধ্যবিত্তের তরুণ উদ্যোক্তারা। আজ বিশ্ব ভারতকে নতুন দৃষ্টিতে দেখছে। জি২০ বৈঠক যখন দেশের ৫০-৬০টি শহরে অনুষ্ঠিত হয়েছিল, তখন যারা ভাবত ভারত মানেই দিল্লি, মুম্বাই, বেঙ্গালুরু—তাদের চোখ খুলে গেছে।
আজ ভারতের পর্যটনে বিশ্ব আকর্ষণ বেড়েছে। পর্যটন যত বাড়ছে, ততই ব্যবসার নতুন সুযোগ তৈরি হচ্ছে, যার সবচেয়ে বড় উপকারভোগী হচ্ছে আমাদের মধ্যবিত্ত শ্রেণি। তাদের জন্য নতুন আয়ের পথ সৃষ্টি হচ্ছে।
মাননীয় চেয়ারম্যান মহাশয়,
আজ আমাদের মধ্যবিত্ত আত্মবিশ্বাসে পরিপূর্ণ। এ এক অভূতপূর্ব শক্তি, যা দেশকে ভিতর থেকেই বলীয়ান করছে। আমি সম্পূর্ণ বিশ্বাস করি—ভারতের মধ্যবিত্ত এখন ‘বিকশিত ভারত’ গড়ার লক্ষ্যে আমাদের সঙ্গে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে হাঁটছে।
মাননীয় চেয়ারম্যান মহাশয়,
দেশের যুবসমাজই ‘বিকশিত ভারত’ গঠনে সবচেয়ে বড় ভূমিকা নেবে। আমরা ডেমোগ্রাফিক ডিভিডেন্ড–এর উপর জোর দিচ্ছি। আজ যে ছাত্রছাত্রীরা স্কুল-কলেজে পড়ছে, তারাই ‘বিকশিত ভারতের’ সবচেয়ে বড় উপকারভোগী হবে। তারা বড় হওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই দেশের উন্নয়নযাত্রা এগিয়ে চলবে।
গত ১০ বছরে আমরা একটি সুপরিকল্পিত কৌশল অনুসারে এই ভিত্তিকে শক্তিশালী করার কাজ করেছি। কয়েক দশকের মধ্যে প্রথমবার আমরা একটি নতুন জাতীয় শিক্ষা নীতি প্রবর্তন করেছি। আগে কখনও ২১শ শতকের উপযোগী শিক্ষাব্যবস্থা নিয়ে সুস্পষ্ট পরিকল্পনা হয়নি। তিন দশক পর আমরা নতুন জাতীয় শিক্ষা নীতি নিয়ে এসেছি।
এই নীতির আওতায় অনেক উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে, যার মধ্যে অন্যতম হলো পিএম-শ্রী স্কুলস। ইতিমধ্যেই প্রায় ১০ থেকে ১২ হাজার পিএম-শ্রী স্কুল প্রতিষ্ঠিত হয়েছে, এবং ভবিষ্যতে আরও প্রতিষ্ঠার দিকে আমরা এগোচ্ছি।
মাননীয় চেয়ারম্যান মহাশয়,
আমাদের এক গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত ছিল শিক্ষানীতিতে পরিবর্তন আনা। আমরা মাতৃভাষায় শিক্ষা ও পরীক্ষার উপর জোর দিয়েছি। স্বাধীনতার পরও সমাজের কিছু ক্ষেত্রে ঔপনিবেশিক মানসিকতার ছাপ রয়ে গিয়েছিল, আর তার অন্যতম ছিল ভাষা। মাতৃভাষার উপর ভয়ঙ্কর অবিচার করা হয়েছিল, গরিব, দলিত, আদিবাসী ও প্রান্তিক সম্প্রদায়ের শিশুরা ভাষাজ্ঞানের অভাবে বড় বাধার সম্মুখীন হতো। এটি তাদের প্রতি বিরাট অবিচার ছিল।
“সবকা সাথ, সবকা বিকাশ”–এর মন্ত্র আমাকে শান্তিতে ঘুমোতে দিত না। তাই দেশে মাতৃভাষায় শিক্ষার গুরুত্বের উপর আমি বিশেষ জোর দিয়েছি। আমি চাই শিশুরা যেন মাতৃভাষায় ডাক্তার ও ইঞ্জিনিয়ার হতে পারে। যারা ইংরেজি শেখার সুযোগ পাননি, তাদের সম্ভাবনাকে আমরা সীমাবদ্ধ করতে পারি না।
এই পরিবর্তনের ফলে আজ গরিব পরিবার কিংবা বিধবা মায়ের সন্তানও ডাক্তার-ইঞ্জিনিয়ার হওয়ার স্বপ্ন দেখতে পারছে। আদিবাসী যুবকদের জন্য আমরা একলব্য মডেল স্কুলের পরিধি বাড়িয়েছি। দশ বছর আগে যেখানে প্রায় ১৫০টি একলব্য স্কুল ছিল, আজ তা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৪৭০-এ, এবং আরও ২০০টি একলব্য স্কুল খোলার পরিকল্পনা চলছে।
মাননীয় চেয়ারম্যান মহাশয়,
আমরা সেনা স্কুলগুলিতেও বড় সংস্কার এনেছি। আগে যেখানে কন্যাদের জন্য এই স্কুলের দরজা বন্ধ ছিল, আজ তা খুলে দেওয়া হয়েছে। আপনি নিজে সেনা স্কুলের ছাত্র ছিলেন বলে জানেন, এই প্রতিষ্ঠানগুলির গুরুত্ব ও সম্ভাবনা কতখানি। এখন দেশের কন্যারাও এই সুযোগ পাচ্ছে। শত শত কন্যাশিশু আজ দেশপ্রেমে ভরা পরিবেশে শিক্ষা নিচ্ছে, এবং জাতির জন্য বাঁচার চেতনা তাদের মধ্যে গড়ে উঠছে।
মাননীয় চেয়ারম্যান মহাশয়,
এনসিসি দেশের যুবকদের গড়ে তুলতে অসাধারণ ভূমিকা পালন করে। যারা এনসিসির সঙ্গে যুক্ত থেকেছেন, তারা জানেন—জীবনের সেই বয়সে এটি ব্যক্তিত্ব বিকাশ, সর্বাঙ্গীণ উন্নয়ন ও অভিজ্ঞতা সঞ্চয়ের এক সোনালি সুযোগ। গত কয়েক বছরে এনসিসির বিস্তার নজিরবিহীন। ২০১৪ সালের আগে ক্যাডেট সংখ্যা ছিল প্রায় ১৪ লাখ। আজ তা বেড়ে ২০ লাখ ছাড়িয়েছে।

মাননীয় চেয়ারম্যান মহাশয়,
দেশের যুবকদের মধ্যে নতুন কিছু করার উদ্দীপনা, শক্তি ও ইচ্ছাশক্তি স্পষ্ট দেখা যাচ্ছে। স্বচ্ছ ভারত অভিযান শুরু করার পর আমি দেখেছি, আজও অনেক যুব সংগঠন শহরের কোণায় কোণায় স্বেচ্ছায় পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতার কাজ করছে। কেউ বস্তিতে শিক্ষা বিস্তারে কাজ করছে, কেউ অন্য সামাজিক কর্মকাণ্ডে যুক্ত।
এই উদ্যম দেখে আমরা ভেবেছি—যুবকদের সুযোগ দেওয়া উচিত। সেজন্য আমরা মাইভারত আন্দোলন শুরু করেছি। মাই ইয়ুথ ভারত, মাইভারত! আজ ১.৫ কোটিরও বেশি তরুণ এতে নিবন্ধিত হয়ে জাতীয় ইস্যুতে আলোচনা করছে, সচেতনতা বাড়াচ্ছে, সক্রিয়ভাবে অংশ নিচ্ছে। তারা আর কারও উপর নির্ভর করছে না—নিজেদের উদ্যোগে বড় কাজ সম্পন্ন করছে।
মাননীয় চেয়ারম্যান মহাশয়,
খেলাধুলার ক্ষেত্র কেবল খেলোয়াড় তৈরি করে না, বরং ক্রীড়াসুলভ মানসিকতাও গড়ে তোলে। খেলাধুলা প্রসারিত দেশে এই মানসিকতা স্বাভাবিকভাবে বেড়ে ওঠে।
আমরা খেলাধুলায় প্রতিভা বিকাশের নানা পদক্ষেপ নিয়েছি। অবকাঠামো থেকে আর্থিক সহায়তা—অভূতপূর্ব সহযোগিতা দিয়েছি। টপস (Target Olympic Podium Scheme) এবং খেলো ইন্ডিয়া কর্মসূচি দেশের ক্রীড়া ব্যবস্থা পুরোপুরি বদলে দিতে সক্ষম। এর প্রভাব ইতিমধ্যেই আমরা দেখছি। গত এক দশকে প্রতিটি আন্তর্জাতিক প্রতিযোগিতায় ভারত তার শক্তি প্রমাণ করেছে। আমাদের কন্যারাও সমান সাফল্য দেখাচ্ছে, বিশ্বে ভারতের ক্ষমতা তুলে ধরছে।
মাননীয় চেয়ারম্যান মহাশয়,
একটি দেশ উন্নয়নশীল থেকে উন্নত হওয়ার যাত্রায় কল্যাণমূলক কার্যক্রম যতটা গুরুত্বপূর্ণ, অবকাঠামো ততটাই মূলভিত্তি। অবকাঠামো সময়মতো সম্পূর্ণ হওয়া জরুরি। দেরি হলে পরিকল্পনা থাকলেও দেশ উপকৃত হয় না, করদাতাদের অর্থ অপচয় হয়।
কংগ্রেস আমলে এই দেরি ও বাধার সংস্কৃতি রাজনৈতিক সংস্কৃতিতে পরিণত হয়েছিল। কোন প্রকল্প এগোবে, কোনটা আটকে যাবে—সবই রাজনৈতিক স্বার্থে নির্ধারিত হতো। “সবকা সাথ, সবকা বিকাশ” এর মন্ত্র ছিল না। এই সংস্কৃতি থেকে দেশকে মুক্ত করতে আমরা প্রগতি প্ল্যাটফর্ম চালু করেছি। এর মাধ্যমে আমি নিজে অবকাঠামো প্রকল্প পর্যবেক্ষণ করি, নিয়মিত পর্যালোচনা করি, এমনকি ড্রোনের মাধ্যমে ভিডিও রেকর্ডিং ও লাইভ যোগাযোগও করি।
১৯ লক্ষ কোটি টাকার প্রকল্প বছরের পর বছর আটকে ছিল। অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয় আমাদের প্রগতি উদ্যোগ নিয়ে ইতিবাচক প্রতিবেদন দিয়েছে এবং প্রস্তাব করেছে যে অন্যান্য উন্নয়নশীল দেশও এর থেকে শিক্ষা নিতে পারে।
উদাহরণ হিসেবে বলি—
উত্তরপ্রদেশের সারিউ ক্যানাল প্রকল্প, অনুমোদিত হয়েছিল ১৯৭২ সালে, কিন্তু ৫০ বছর আটকে থেকে আমরা ২০২১ সালে সম্পন্ন করেছি।
জম্মু ও কাশ্মীরের উধমপুর-শ্রীনগর-বারামুলা রেললাইন, অনুমোদিত হয়েছিল ১৯৯৪ সালে, তিন দশক পরে ২০২৫ সালে আমরা শেষ করেছি।
ওড়িশার হরিদাসপুর-প্যারাদ্বীপ রেললাইন, অনুমোদিত হয়েছিল ১৯৯৬ সালে, আমাদের আমলে ২০১৯ সালে শেষ হয়েছে।
আসামের বোগিবিল সেতু, অনুমোদিত হয়েছিল ১৯৯৮ সালে, সম্পন্ন হয়েছে ২০১৮ সালে।
এমন শত শত উদাহরণ আছে।
মাননীয় চেয়ারম্যান মহাশয়,
আজকের যুবসমাজকে বুঝতে হবে কেন তাদের বাবা-মায়েদের এত কষ্ট সহ্য করতে হয়েছে। কেন দেশ পিছিয়ে পড়েছিল। যদি গত দশকে আমরা ডিজিটাল ইন্ডিয়া শুরু না করতাম, তাহলে আজকের সুবিধাগুলি পেতে আরও বহু বছর অপেক্ষা করতে হতো।
আজ বিশ্বে সবচেয়ে দ্রুত ৫জি বিস্তার ঘটছে আমাদের দেশে। অথচ কম্পিউটার, মোবাইল, এটিএম, টিকা—সবকিছু বিশ্বে অনেক আগে এসেছিল, কিন্তু ভারতে পৌঁছতে লেগেছে দশক। এর কারণ ছিল কংগ্রেসের আঁকড়ে ধরা লাইসেন্স-পারমিট রাজ।
কম্পিউটার আমদানি করতে লাইসেন্স লাগত, এমনকি ঘর বানাতে সিমেন্ট চাইলে অনুমতি নিতে হতো। বিয়ে বা উৎসবে চিনি পেতে লাইসেন্স লাগত। গ্যাস সিলিন্ডার এমপিদের কুপনের মাধ্যমে দেওয়া হতো, টেলিফোন পেতে লাইন দিতে হতো বছরের পর বছর।
এ সময়কালে বিশ্ব ভারতীয় অর্থনীতির সর্বনিম্ন বৃদ্ধির হারকে “হিন্দু রেট অব গ্রোথ” বলে অপমান করেছিল। প্রকৃতপক্ষে, এটি ছিল সরকারের ব্যর্থতা, দুর্নীতি ও অযোগ্যতার প্রতীক।
মাননীয় চেয়ারম্যান মহাশয়,
কিন্তু ভারতের ইতিহাস বলে—আমরা সবসময় উন্মুক্ত অর্থনীতি ও মুক্ত বাণিজ্যের পথে বিশ্বাস করেছি। ভারতীয় ব্যবসায়ীরা শতাব্দী আগে দূরদেশে বাণিজ্যে যেতেন। কিন্তু কংগ্রেস আমলে এই সংস্কৃতি ধ্বংস হয়েছিল।
আজ বিশ্ব ভারতের অর্থনৈতিক শক্তিকে স্বীকৃতি দিচ্ছে। আজ মেক ইন ইন্ডিয়া, পিএলআই স্কিম, এফডিআই সংস্কার এর ফলে ভারত বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহত্তম মোবাইল উৎপাদক হয়েছে। আগে আমদানি করতাম, আজ আমরা রপ্তানিকারক।
আজ প্রতিরক্ষা ক্ষেত্রেও ভারত পরিচিত। গত ১০ বছরে আমাদের প্রতিরক্ষা রপ্তানি ১০ গুণ বেড়েছে।
মাননীয় চেয়ারম্যান মহাশয়,
ভারতে সোলার মডিউল উৎপাদনও ১০ গুণ বৃদ্ধি পেয়েছে। আজ আমাদের দেশ বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহত্তম ইস্পাত উৎপাদক। গত ১০ বছরে যন্ত্রপাতি ও ইলেকট্রনিক্স রপ্তানি দ্রুত বৃদ্ধি পেয়েছে। গত দশকে ভারতের খেলনার রপ্তানি তিন গুণেরও বেশি হয়েছে। কৃষি-রাসায়নিক পণ্যের রপ্তানিও এই সময়ে বেড়েছে। করোনা মহামারির সময়ে আমরা ১৫০টিরও বেশি দেশে ভ্যাকসিন ও ওষুধ সরবরাহ করেছি—মেড ইন ইন্ডিয়া। আমাদের আয়ুর্বেদিক ও ভেষজ পণ্যের রপ্তানি দ্রুত বৃদ্ধি পেয়েছে এবং ক্রমশ বৃদ্ধি পাচ্ছে।
মাননীয় চেয়ারম্যান মহাশয়,
যদি কংগ্রেস খাদির জন্য কিছু গুরুত্বপূর্ণ কাজ করত, আমি ভাবতাম স্বাধীনতা সংগ্রামের কোনো প্রেরণাকে তারা বহন করছে। কিন্তু তারা সেটিও করেনি। প্রথমবারের মতো খাদি ও গ্রামীণ শিল্পের টার্নওভার দেড় লক্ষ কোটি টাকা ছাড়িয়েছে। গত ১০ বছরে এর উৎপাদন চারগুণ বৃদ্ধি পেয়েছে। এই সমস্ত উৎপাদনের বড় সুবিধা গেছে আমাদের এমএসএমই খাতে, যার ফলে দেশে বিপুল কর্মসংস্থানের সৃষ্টি হয়েছে।
মাননীয় চেয়ারম্যান মহাশয়,
আমরা সবাই জনগণের প্রতিনিধি। আমরা জনগণের সেবক। একজন জননেতার কাছে জাতির মিশন, সমাজের মিশনই সবকিছু, আর সেবার অঙ্গীকার নিয়ে কাজ করাই প্রতিটি জননেতার কর্তব্য।
মাননীয় চেয়ারম্যান মহাশয়,
সমগ্র জাতির প্রত্যাশা, আমরা যেন উন্নত ভারত গড়ার অভিযানে কোনো খামতি না রাখি। এটি আমাদের সম্মিলিত দায়িত্ব। এটি কোনো সরকার বা ব্যক্তির সংকল্প নয়, এটি ভারতের ১৪০ কোটি নাগরিকের সংকল্প। আর চেয়ারম্যান মহাশয়, আমার কথা লিখে রাখুন—যারা নিজেদের উন্নত ভারত এর সংকল্প থেকে দূরে রাখবে, জাতি তাদের দূরে সরিয়ে রাখবে। সবাইকে যোগ দিতে হবে; বাইরে থাকা চলবে না, কারণ ভারতের মধ্যবিত্ত ও যুবসমাজ সর্বশক্তি দিয়ে দেশকে এগিয়ে নিতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।
মাননীয় চেয়ারম্যান মহাশয়,
জাতি যখন উন্নয়নের পথে অগ্রসর হচ্ছে এবং নতুন উচ্চতায় পৌঁছাচ্ছে, তখন আমাদের ভূমিকা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠেছে। গণতন্ত্রে বিরোধিতা স্বাভাবিক। নীতির সমালোচনা করাও গণতন্ত্রের দায়িত্ব। কিন্তু চরম বিরোধিতা, অতিরিক্ত হতাশাবাদ, নিজের পথ দীর্ঘ করতে গিয়ে অন্যের পথ সংক্ষিপ্ত করার চেষ্টা—এসব উন্নত ভারত এর পথে অন্তরায় হয়ে দাঁড়ায়।
আমাদের এই প্রবণতা থেকে মুক্ত হতে হবে, আত্মসমালোচনা করতে হবে, অবিরত। আমি নিশ্চিত, আজ এই সভায় হওয়া আলোচনার সেরা ভাবনাগুলি আমাদের পথ দেখাবে, আমাদের আত্মমনন চলতে থাকবে। আমরা রাষ্ট্রপতির ভাষণ থেকে শক্তি সঞ্চয় করব।
আবারও, আমি রাষ্ট্রপতিকে আন্তরিক কৃতজ্ঞতা জানাই, এবং সংসদের সমস্ত মাননীয় সদস্যদের প্রতিও কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করছি।
অশেষ ধন্যবাদ!


SC/TM


(Release ID: 2160251) Visitor Counter : 9