প্রধানমন্ত্রীরদপ্তর
জি৭ আউটরিচ সেশনে (জুন ১৭, ২০২৫) জ্বালানি- নিরাপত্তা বিষয়ে প্রধানমন্ত্রীর ভাষণের বাংলা অনুবাদ
Posted On:
18 JUN 2025 2:42PM by PIB Kolkata
নয়াদিল্লি, ১৮ই জুন, ২০২৫
প্রধানমন্ত্রী কার্নি,
মহামান্যগণ,
নমস্কার!
জি-৭ শীর্ষ সম্মেলনে আমন্ত্রণ জানানোর জন্য এবং উষ্ণ অভ্যর্থনা দেওয়ার জন্য আমি প্রধানমন্ত্রী কার্নিকে আমার কৃতজ্ঞতা জানাই। জি-৭ গোষ্ঠীর ৫০ বছর পূর্তির এই ঐতিহাসিক মুহূর্তে আমি আমাদের সকল বন্ধুদের অভিনন্দন জানাই।
বন্ধুগণ,
আমাদের ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্য জ্বালানি নিরাপত্তা নিশ্চিত করা সবচেয়ে বড় কঠিন পরিস্থিতিগুলি মোকাবিলা করার মধ্যে অন্যতম। আমরা এটিকে শুধু প্রধান অগ্রাধিকার হিসেবেই দেখি না, বরং আমাদের নাগরিকদের প্রতি একটি দায়িত্ব হিসেবেও বিবেচনা করি। সহজলভ্যতা, সুলভ মূল্য, ক্রয়ক্ষমতা এবং গ্রহণযোগ্যতার মৌলিক নীতিগুলোর ওপর ভিত্তি করে ভারত অন্তর্ভুক্তিমূলক উন্নয়নের পথ বেছে নিয়েছে।
আজ ভারতে প্রায় সব বাড়িতেই বিদ্যুৎ সংযোগ রয়েছে। ভারতে প্রতি ইউনিট বিদ্যুতের খরচ বিশ্বের মধ্যে অন্যতম সর্বনিম্ন। বিশ্বের দ্রুততম বর্ধনশীল প্রধান অর্থনীতি হওয়া সত্ত্বেও, ভারত তার প্যারিস চুক্তি নির্ধারিত সময়ের আগেই সম্পন্ন করেছে। আমরা ২০৭০ সালের মধ্যে নেট জিরোর লক্ষ্যমাত্রার দিকেও দ্রুত এগিয়ে চলেছি। বর্তমানে, আমাদের মোট ক্ষমতার প্রায় ৫০% পুনর্নবীকরণযোগ্য শক্তি থেকে আসে।
আমরা ২০৩০ সালের মধ্যে ৫০০ গিগাওয়াট পুনর্নবীকরণযোগ্য শক্তির লক্ষ্যমাত্রার দিকে দ্রুত এগিয়ে চলেছি। পরিচ্ছন্ন শক্তির জন্য আমরা গ্রিন হাইড্রোজেন, পারমাণবিক শক্তি এবং ইথানল মিশ্রণের উপর জোর দিচ্ছি। আমরা বিশ্বের সব দেশকে একটি সবুজ ও সুস্থায়ী ভবিষ্যতের দিকে এগিয়ে যাওয়ার জন্য অনুপ্রাণিত করছি।
বন্ধুগণ,
সব দেশের একইসঙ্গে জ্বালানি পরিবর্তন করার পথে এগিয়ে যাওয়া অত্যন্ত জরুরি। আমাদের এগোতে হবে এই চেতনা নিয়ে -“আমি নয়, আমরা।” দুর্ভাগ্যজনকভাবে, গ্লোবাল সাউথের দেশগুলোতেই অনিশ্চয়তা ও সংঘাতের সর্বাধিক প্রভাব পড়ছে। বিশ্বের যেখানেই উত্তেজনা সৃষ্টি হোক না কেন, খাদ্য, জ্বালানি, সার ও আর্থিক সংকটে সবার আগে আক্রান্ত হয় এই দেশগুলি।
জনসাধারণ, সম্পদ, উৎপাদন ও পরিবহন - সবই প্রভাবিত হয়। গ্লোবাল সাউথের অগ্রাধিকার ও উদ্বেগগুলিকে বিশ্বমঞ্চে তুলে ধরা ভারতের দায়িত্ব বলে আমরা মনে করি। আমরা বিশ্বাস করি, যতদিন কোনো না কোনোভাবে এই দ্বিচারিতা চলতে থাকবে, মানবজাতির সুস্থায়ী ও অন্তর্ভুক্তিমূলক উন্নয়ন ধরাছোঁয়ার বাইরেই থেকে যাবে।
বন্ধুগণ,
আমি আপনাদের দৃষ্টি আকর্ষণ করতে চাই আরেকটি গুরুতর বিষয়ে - সন্ত্রাসবাদ। সন্ত্রাসবাদের ক্ষেত্রে কোনো দ্বিচারিতা থাকা উচিত নয়। সম্প্রতি ভারত একটি নৃশংস ও কাপুরুষোচিত সন্ত্রাসবাদী হামলার মুখোমুখি হয়েছে।
২২শে এপ্রিল যে সন্ত্রাসবাদী হামলাটি ঘটেছিল, তা শুধু পহলগামকে আঘাত করেনি, বরং প্রতিটি ভারতীয়ের আত্মা, পরিচয় ও মর্যাদার উপর সরাসরি আঘাত এনেছে। এটি ছিল সমগ্র মানবতার উপর আক্রমণ। যারা এই হামলাকে সবচেয়ে কঠোর ভাষায় নিন্দা করেছেন এবং আন্তরিক সমবেদনা জানিয়েছেন, তাঁদের প্রতি আমার গভীর কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করছি।
বন্ধুগণ,
সন্ত্রাসবাদ হল মানবজাতির শত্রু। এটি গণতান্ত্রিক মূল্যবোধ ধারণকারী সকল জাতির বিরোধী। সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে ঐক্যবদ্ধ থাকা খুবই অপরিহার্য। দুর্ভাগ্যবশত, আমাদের নিজেদের প্রতিবেশী দেশই সন্ত্রাসবাদের প্রজনন ক্ষেত্র হয়ে উঠেছে। বিশ্ব শান্তি ও সমৃদ্ধির স্বার্থে, আমাদের চিন্তা-ভাবনা এবং নীতি অত্যন্ত স্পষ্ট হতে হবে - যে দেশ সন্ত্রাসবাদকে সমর্থন করে, তাকে অবশ্যই জবাবদিহি করতে হবে এবং এর মূল্য দিতে বাধ্য করতে হবে।
দুর্ভাগ্যবশত, বাস্তবতা সম্পূর্ণ বিপরীত। একদিকে, আমরা আমাদের নিজেদের পছন্দ এবং স্বার্থের ভিত্তিতে বিভিন্নরকমের নিষেধাজ্ঞা আরোপ করি,অন্যদিকে, যেসব দেশ প্রকাশ্যে সন্ত্রাসবাদকে সমর্থন করে, তারা পুরস্কৃত হতে থাকে। এই প্রেক্ষাপটে, আমি এই সভায় উপস্থিত আপনাদের সবার সামনে কিছু গুরুতর প্রশ্ন রাখতে চাই।
আমরা কি সত্যিই সন্ত্রাসবাদ মোকাবিলায় আন্তরিকভাবে ইচ্ছুক? সন্ত্রাসবাদ আমাদের নিজেদের দরজায় আঘাত না করা পর্যন্ত কি আমরা এর আসল অর্থ বুঝব না? যারা সন্ত্রাস ছড়ায় আর যারা এর শিকার হয়, তাদের কি একই পাল্লায় মাপা যায়? আমাদের আন্তর্জাতিক প্রতিষ্ঠানগুলি কি তাদের বিশ্বাসযোগ্যতা হারানোর ঝুঁকিতে রয়েছে?
যদি আমরা আজ মানবতাবিরোধী এই সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে দৃষ্টান্তমূলক পদক্ষেপ না নিই, তাহলে ইতিহাস আমাদের কখনো ক্ষমা করবে না। ব্যক্তিগত স্বার্থের জন্য সন্ত্রাসবাদের দিকে চোখ বন্ধ করে থাকা, অথবা সন্ত্রাস বা সন্ত্রাসবাদীদের সমর্থন করা, সমগ্র মানবজাতির সঙ্গে বিশ্বাসঘাতকতা।
বন্ধুগণ,
ভারত সর্বদা নিজের স্বার্থের ঊর্ধ্বে উঠে মানবজাতির কল্যাণে কাজ করেছে। ভবিষ্যতেও আমরা সব বিষয়ে জি-৭ -এর সঙ্গে আলোচনা এবং সহযোগিতা চালিয়ে যাব।
বন্ধুগণ,
আমি প্রযুক্তি,এআই এবং শক্তি এই বিষয়গুলি নিয়ে কিছু কথা বলতে চাই। নিঃসন্দেহে, এআই সমস্ত ক্ষেত্রে দক্ষতা বৃদ্ধি এবং উদ্ভাবনকে উৎসাহিত করার জন্য একটি শক্তিশালী মাধ্যম হিসেবে আবির্ভূত হচ্ছে। তবে, এআই নিজেই একটি অত্যন্ত শক্তি-নির্ভর প্রযুক্তি। এআই ডেটা সেন্টার দ্বারা চালিত ক্রমবর্ধমান শক্তি খরচ এবং আজকের প্রযুক্তি-নির্ভর সমাজগুলির ক্রমবর্ধমান জ্বালানির চাহিদা কেবল পুনর্নবীকরণযোগ্য শক্তির উৎস দিয়েই সুস্থায়ী ভাবে মেটানো সম্ভব।
সাশ্রয়ী, নির্ভরযোগ্য এবং সুস্থায়ী শক্তি নিশ্চিত করা ভারতের জন্য একটি প্রধান অগ্রাধিকার। এটি অর্জনের জন্য, আমরা সৌরশক্তি এবং ক্ষুদ্র মডিউলার চুল্লির উপর মনোযোগ দিচ্ছি। আমরা স্মার্ট গ্রিড, শক্তি সঞ্চয় ব্যবস্থা এবং গ্রীন এনার্জি করিডরও তৈরি করছি, যাতে পুনর্নবীকরণযোগ্য শক্তি উৎপাদনকে চাহিদার কেন্দ্রগুলির সঙ্গে যুক্ত করা যায়।
বন্ধুগণ,
ভারতে, আমাদের সমস্ত প্রচেষ্টা মানব-কেন্দ্রিক পদ্ধতির উপর ভিত্তি করে গড়ে উঠেছে। আমরা বিশ্বাস করি যে যেকোনো প্রযুক্তির আসল মূল্য তার সেই ক্ষমতায় নিহিত, যা দিয়ে এটি সমাজের একেবারে শেষ ব্যক্তির কাছেও পৌঁছতে পারে। গ্লোবাল সাউথের কাউকেই পিছিয়ে রাখা উচিত নয়। উদাহরণস্বরূপ, যদি আমরা একটি এআই - চালিত আবহাওয়ার পূর্বাভাস সংক্রান্ত অ্যাপ তৈরি করি, তবে এর প্রকৃত সাফল্য তখনই হবে যখন এটি আমার দেশের কোনো ছোট গ্রামের কৃষক বা জেলেকে উপকৃত করবে।
ভারতে, আমরা 'ভাষিণী' নামে একটি এআই - ভিত্তিক ভাষার অ্যাপ তৈরি করেছি, যাতে প্রত্যন্ত গ্রামের একজন মানুষও বিশ্বের অন্যান্য ভাষার সঙ্গে যুক্ত হতে পারে এবং সমগ্র বিশ্বের কথোপকথনের অংশ হতে পারে। আমরা প্রযুক্তির ক্ষেত্রে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করতে পেরেছি এবং ডিজিটাল পাবলিক প্রযুক্তির মাধ্যমে আমাদের অর্থনীতি ও সাধারণ মানুষের ক্ষমতা বৃদ্ধি করেছি।
আন্তর্জাতিক স্তরেও, আমাদের অবশ্যই মানবতা কেন্দ্রিক দৃষ্টিভঙ্গি গ্রহণ করতে হবে। এআই - এর সম্ভাবনা এবং উপযোগিতা সম্পর্কে সকলেই অবগত। তবে, আমাদের আসল উদ্যেশ্য এআই - এর ক্ষমতা বা কার্যকারিতা নয়, বরং এটি নিশ্চিত করা যেন এআই সরঞ্জামগুলি মানুষের মর্যাদা এবং ক্ষমতাকে বৃদ্ধি করে।
বন্ধুগণ,
অন্তর্ভুক্তিমূলক, সক্ষম এবং দায়িত্বশীল কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার ভিত্তি হলো সমৃদ্ধ তথ্যভান্ডার। ভারতের বহুমুখী জীবনযাপন, নানাবিধ ভাষা এবং বিস্তৃত ভৌগোলিক বৈচিত্র্য একে সমৃদ্ধশালী তথ্যের অন্যতম মূল্যবান ও শক্তিশালী উৎসে পরিণত করেছে। ভারতের বৈচিত্র্যের মানদণ্ডে তৈরি ও পরীক্ষিত এআই মডেলগুলি তাই সমগ্র বিশ্বের জন্য অত্যন্ত প্রাসঙ্গিক ও কার্যকর হবে।
ভারতে, আমরা একটি শক্তিশালী তথ্য ক্ষমতায়ন এবং সুরক্ষা কাঠামো গড়ে তোলার উপর জোর দিয়েছি। এর পাশাপাশি, ভারতের কাছে একটি বিশাল প্রতিভা রয়েছে যা তার পরিসর, দক্ষতা, বৈচিত্র্য এবং গণতান্ত্রিক মূল্যবোধের প্রতি অঙ্গীকারের মাধ্যমে এআই ক্ষেত্রে আন্তর্জাতিক প্রচেষ্টায় উল্লেখযোগ্যভাবে অবদান রাখতে পারে।
বন্ধুগণ,
এআই বিষয়ে আমি কিছু পরামর্শ দিতে চাই। প্রথমত, আমাদের আন্তর্জাতিক স্তরে এমন একটি শাসনব্যবস্থার জন্য কাজ করতে হবে যা এআই সম্পর্কিত উদ্বেগগুলিকে মোকাবিলা করার পাশাপাশি উদ্ভাবনকে উৎসাহিত করে। তবেই আমরা এআই-কে সমগ্র বিশ্বের মঙ্গলের একটি শক্তি হিসেবে পরিণত করতে পারব। দ্বিতীয়ত, এআই - এর যুগে, গুরুত্বপূর্ণ খনিজ এবং প্রযুক্তির ক্ষেত্রে সকলের সহযোগিতা অত্যন্ত জরুরি।
আমাদেরকে অবশ্যই তাদের সরবরাহ শৃঙ্খলটিকে সুরক্ষিত এবং শক্তিশালী করার উপর জোর দিতে হবে। আমাদের এটাও নিশ্চিত করতে হবে যে কোনো দেশ যেন সেগুলিকে শুধুমাত্র নিজেদের স্বার্থে বা অস্ত্র হিসেবে ব্যবহার না করে। তৃতীয়ত, ডিপফেক একটি বড় উদ্বেগের কারণ, কারণ এটি সমাজে ব্যাপক বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করতে পারে। অতএব, এআই দ্বারা তৈরি বিষয়বস্তু অবশ্যই স্পষ্টভাবে ওয়াটারমার্ক করা উচিত অথবা একটি সুস্পষ্ট ঘোষণাপত্র দিয়ে প্রকাশ করা উচিত।
বন্ধুগণ,
গত শতাব্দীতে আমরা শক্তি নিয়ে প্রতিযোগিতা দেখেছি। এই শতাব্দীতে আমাদের সকলের প্রযুক্তির ক্ষেত্রে সহযোগিতা প্রদান করতে হবে। আমাদের 'সবকা সাথ, সবকা বিকাশ, সবকা বিশ্বাস, ঔর সবকা প্রয়াস', অর্থাৎ ভারত যে জনগণ, পৃথিবী এবং প্রগতির আহ্বান জানিয়েছে, সেই নির্দেশক নীতি নিয়ে এগিয়ে যেতে হবে। এই ভাবনা নিয়ে, আমি আগামী বছর ভারতে অনুষ্ঠিত হতে যাওয়া এআই ইমপ্যাক্ট সামিটে আপনাদের সকলকে আন্তরিকতার সঙ্গে আমন্ত্রণ জানাচ্ছি।
আপনাদের অনেক ধন্যবাদ।
SC/AS....
(Release ID: 2159779)
Visitor Counter : 8
Read this release in:
English
,
Urdu
,
Hindi
,
Marathi
,
Assamese
,
Punjabi
,
Gujarati
,
Odia
,
Tamil
,
Telugu
,
Kannada
,
Malayalam